এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভীরুতা থেকে আন্দোলন বা মব লিঞ্চিং এবং মানববিবর্তন

    DP
    অন্যান্য | ২৪ জুলাই ২০১৮ | ৬৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • DP | 2345.110.784512.117 | ২৪ জুলাই ২০১৮ ২৩:৩২377221
  • বেশীরভাগ মানুষই সাধারনভাবে ভীতু হয়। এই ভয় অজানা যে কোন কিছুর প্রতি, নতুন কোন কিছুর প্রতি, অনিশ্চিত কোন কিছুর প্রতি থেকে পরিচিত নিয়মের উল্লঙ্খনের পরিণামের প্রতি। তাই মানুষ নতুন নিয়মকে ভয় পায়, প্রচলিত বিশ্বাস ভেঙে গেলে ভয় পায়, স্থীতাবস্থা বজায় না থাকলে ভয় পায়, নতুন যে কোন কিছুকে ভয় পায়। এই ভয় মানুষের সহজাত, মানব বিবর্তনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই ভয়ই মানুষকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। একবার নিজেকে কল্পনা করুন লক্ষ বছর আগের জঙ্গলে, যেখানে পদে পদে বিপদ। তা কোন হিংস্র জন্তুর আক্রমন, বিষাক্ত পতঙ্গের কামড়, দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, সর্পাঘাত বা বিষাক্ত কাঁটায় আহত হয়ে মৃত্যু। তাই এমনিতেই অতি ভালনারেবল মানুষকে সবসময়ই অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হয়েছে। বাতাসে ঘাসের নড়াচড়াকেও বাঘ সিংহের উপস্তিতি ভোবে পালাতে হয়েছে, সড়সড় শব্দ পেলেই চমকে উঠে তাকাতে হয়েছে। একই ভাবে এড়িয়ে চলতে হয়েছে অজানা ফল খাওয়া, অজানা পতঙ্গের সান্নিধ্য বা যেকোন অজানা অঞ্চল।
    কিন্তু মজার বিষয় হল মানব সভ্যতার অগ্রগতি আবার এর সম্পূর্ণ উল্টো প্রকরণযুক্ত। সভ্যতাকে তারাই এগিয়ে নিয়ে গেছে যারা এই ভীরুতার উর্দ্ধে উঠে অজানার মুখোমুখি হয়েছে। সাহসী ব্যক্তিরা তাই মানবসমাজে সফল হলে পূজীত, ব্যর্থ হলে নিন্দিত। আর যে কেউ সেই সাহসীকতার পথে পা বাড়ালে সে তিরষ্কৃত বা উপহাসীত। অতি প্রাচীনকালে যে লোকটি দাবানল থেকে পালানোর সময় থমকে দাঁড়িয়ে পরেছিল, সবার বারণ অগ্রাহ্য করে, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তুলে নিয়েছিল জ্বলন্ত কাঠ, সেই আগুনের ব্যবহার শিখিয়েছিল। কোন এক পাগল সারাদিন নুড়ি গড়িয়ে গড়িয়ে বহু উপহাস, শাস্তি সহ্য করে একদিন চাকা উপহার দিয়েছিল। এইভাবেই যুগে যুগে বহু মানুষ ছক ভাঙার সাহস দেখিয়েছে।
    এবার সাধারন ভীরু ব্যক্তিবর্গ সভ্যতার প্রবাহে টিকে রইল কি করে? তা হল সনাতন মেষপ্রবৃত্তির দ্বারা, যাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'ফলো দ্য লিডার'। এই মনোবৃত্তির বহু ভিডিও ইউটিউবে অনায়াসে পেয়ে যাবেন। ট্রেনে ভ্রমণ করতে করতে একজন যদি ব্যাগ থেকে বোতল বার করে জল খান, দেখা যায় সাথে সাথে আরও কয়েকজন একইভাবে ব্যাগ থেকে বোতল বার করেন। কয়েকজন বন্ধু মিলে বাইক নিয়ল বেড়িয়ে পরুন, প্রত্যেকে লাইন দিয়ে চলতে থাকুন, দেখবেন প্রত্যেকে একেবারে অবিকল প্রথম ব্যক্তির পথ অনুসরন করছে। আসলে এর মাধ্যমে একদিকে ঝুঁকিটা অন্যের ঘাড়ে যায়, আর নিজে নিশ্চিত হওয়া যায়। নিজের মস্তিষ্ককে বিশেষ পরিশ্রম করতে হয়না। এই ফলো দ্য লিডার বা নেতাকে অনুসরনের আরেকটা উদাহরন মব। দুর্ঘটনার পরে বিক্ষুব্ধ জনতার মাঝ থেকে কেউ ঘাতক ট্রাকের জানালায় ঢিল ছোড়েন আর সাথে সাথে শুরু হয় ভাঙচুর। আটককৃত ব্যক্তিকে কেউ হঠাৎই থাপ্পর মারেন, আর শুরু হয় গণধোলাই। এক্ষেত্রে পরিনাম সম্পর্কে আর কেউ ভাবেনা, কারন সবাই গোষ্ঠীর স্বিকৃত কাজের অনুসরন করছে। অর্থাৎ নিজের দলের নিশ্চিত আশ্রয়ে রয়েছে। এই কারনেই আপাত নীরিহ জনতা, যাদের কোনরকম অপরাধপ্রবণতাই নেই, তারাই একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরেও ফেলতে পারে।
    এবার পুনরায় আসি লিডার, বা নেতাদের কথায়। মানুষের এই মনোবৃত্তিকেই কাজে লাগায় তারা। মানুষকে নিজের দলে টানার সবথেকে সহজ উপায় হল তাদের এই মেষবৃত্তিকে সুনিপুনভাবে ব্যবহার করা। এর ফলে একটা ট্রেন্ড তৈরী হয়, এবং মানুষ দলে থাকার প্রবৃত্তির তারণায় সেদিকেই আসে। সভ্যতার অগ্রগতীর সাথে সাথে তাই সব দেশেই ঈশ্বরের সাথে কথা বলা ব্যক্তিদের দেখা পাওয়া যায়। নিজেদের নিয়ম কানুন, কার্যকলাপ সব কিছুকেই ঈশ্বরীয় নির্দেশ বলে চালানো হত একসময় এবং এখনও বহু জায়গাতেই হয়। কখনও তা হয় কোন এক বিশেষ আদর্শ, কখনও বিশ্বমানবতা, তালিকা কারৃযত অফুরান।
    এবার এ পর্যন্ত পড়ে অনেকেই ভাবছেন "আমি ওসব ধর্ম টর্ম মানিনা, আমি যুক্তিবাদী। আমাকে টুপি পড়ানো সহজ নয়।" কিন্তু বিষয় হল আপনি হয়ত অজান্তেই অজস্র টুপি পড়ে আছেন। যখন উপলব্ধি করছেন, তখন টুপির প্রয়েজনও ফুরিয়েছে। সরকারীভাবে নিষিদ্ধকরনের আগে, মানে বছর ছয়েক আগেও টিভিতে বিজ্ঞাপনে একটি মেয়েকে দেখা যেত, যে সবরকম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও স্রেফ কালো গায়ের রঙের জন্য চাকরি পাচ্ছেনা। তারপর বিশেষ কোন কোম্পানির ফেয়ারনেস ক্রিম মেখে ইন্টারভিউ দিতে ঢুকতেই কোন কিছু না দেখেই চাকরি বাঁধা! এই দেখে বহু মেয়ে ঐ ক্রিম মেখেছে তা সবার জানা, কিন্তু তাদের কেউ ভাবেনি যে দু টোন ফর্সা হলেও তার চেয়েও ফর্সা মেয়ে আছে। আবার সবাই মিলে এই ক্রিম মেখে দু টোন ফর্সা হলেও ফর্সার ক্রম সেই একই থাকবে। এটা ভাবতে না দেওয়াটাই লিডার তথা শাসকের কাজ। শাসক সর্বদা নতুন নতুন ট্রেন্ড তৈরী করে। ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখাটাও তেমনই একটা ট্রেন্ড, যে ট্রেন্ডে ভেসে সবাই মেনস্ট্রিমে থাকতে চায়। একইভাবে তৈরী করা হয় প্রতিবাদের ট্রেন্ড। ফেয়ারনেস ক্রিম নিয়েও এটাই করা হয়েছিল। প্রতিবাদকে মেনস্ট্রিম করে দিয়ে তখন এইসব অ্যাড সরানো হল। এখন তার জায়গায় এসেছে দূষণ থেকে ত্বককে বাঁচানোর প্রসাধনী। এরকম আসবে ও যাবে, কম করে ৭০% জনতা তা উপলব্ধীই করতে পারবেনা। সমাজব্যবস্থাই এরকম (অন্তত আমাদের দেশে) যেখানে যুক্তিবাদী, চিন্তাশীল ও সাহসী মননকে অঙ্কুরেই বিনাস করার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করা হয়। সৃষ্টিশীল শিশু তাই সমাজের চোখে সময় অপচয়কারী, প্রশ্ন করা শিশু অবাধ্য, নতুন চিন্তাপ্রণয়নকারী শিশু বাস্তববোধহীন, নির্বোধ। এই সমাজে ৯০% অবিভাবক মনে করেন "বাবা মা'র কথা শুনে চললে তবেই উন্নতি হবে"। অর্থাৎ তাঁরা ধরেই নেন যে তাঁরাই ঠিক, তাঁরাই সবকিছু জানেন, কারন তাঁরা গোষ্ঠী নির্ধারীত পথের বাইরে যাননি। আসলে সভ্যতার অগ্রগতীর পথে নিশ্চিত বলে কিছু হয়না। নিশ্চয়তার আশায় বসে থাকলে কেউ অনন্য হতে পারেনা। নিউটন, গ্যালিলিও থেকে শুরু করে আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং বা চাণক্য, শশাঙ্ক, নেতাজী, ভাগত সিংহ, ওয়াশিংটন, নেপোলিয়ন, লিংকন, রুজভেল্ট, বা এডিশন, স্টিভ জোবস, বিল গেটস, এরা কেউই নিশ্চয়তার লক্ষ্যে ছোটেননি। কারও কথা শুনে চলেননি, কারও নির্ধারীত পথে হাঁটেননি, কারও নির্দেশ অনুসরন করেননি। যে সন্তানকে ছোট থেকে কখনও প্রশ্ন করতে শেখাননি, তার কাছ থেকে যৌবনাবস্থায় দূর্নীতি বা সমাজের কুপ্রথার প্রতিবাদ আশা করা বৃথা। যাকে কখনও পুড়ে যাওয়ার ভয়ে আগুনের ধারে কাছে ঘেঁষতে দেননি, কামড়ের ভয়ে মৌমাছির চাকের ত্রিসীমানায় যেতে দেননি, আশা করবেননা সে যৌবনাবস্থায় কর্মস্থলে চলে আসা ঘুষের রাজত্বের প্রতিবাদ করবে। আসলে আপনি যেমন চেয়েছেন ঠিক তেমন হয়েছে, নিশ্চয়তার ঘেরাটোপ বেছে নিয়েছে। আর যে পারত সমাজকে বদলাতে তাকে মেরে ফেলেছেন।
  • DP | 2345.110.784512.117 | ২৪ জুলাই ২০১৮ ২৩:৩২377220
  • মব লিঞ্চিং নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু কিছুটা সময়াভাবে ও কিছুটা ল্যাদ খেয়ে পুরনো একটা জেনারেলাইজড লেখাই সামান্য মডিফাই করে দিলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন