এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সাকিদা ও গণতন্ত্রের পঞ্চায়েত।

    Aditya Dhali লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৯ মে ২০১৮ | ১৮৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Aditya Dhali | ১৯ মে ২০১৮ ১৭:৩৮375717
  • সাকিদার সাথে ইদানিং আমার ভোরের ট্রেন ধরতে যাওয়ার সময় প্রায়ই দেখা হয়। কিন্তু যেদিন অনেকদিন পর আবার দেখা হল সেদিন আমি ভোরের ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি ফিরছিলাম। সাকিদা কানের কাছে একটা বড় ট্রানজিস্টার ধরে রাখে। সেটার আবার বড় অ্যান্টেনাও আছে। তাতে গান চলে না। কিন্তু সাকিদা গুনগুন করে গান করে। সাকিদার চ্যাপলিনের মত গোঁফ। তার মাথায় দেবানন্দের টুপি। সাকিদা পান খায়। সাকিদাকে প্রথম দেখেছিলাম যখন পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা ওকে গাছে বেঁধে মারছিল। সাকিদা অন্ধকারে ক্লাব থেকে চুরি করতে গিয়েছিল। ক্লাবে বলার মত সেরম কিছুই ছিলনা। কিছু শেষ হয়ে যাওয়া মদের বোতল, বিড়ির টুকরো, ফেটে যাওয়া ফুটবল, উইকেট দুটো, একটা সাইকেলের রিং, দুটো চেয়ার, একটা টেবিল ও একটি বহু পুরানো ছোট রঙিন টেলিভিশন। তার রিমোট হারিয়ে গেছে, কালার ও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সাকিদা ভর সন্ধ্যায় টালি সরিয়ে ক্লাবের মধ্যে নেমে ওই টেলিভিশন নিয়ে পালাতে চেয়েছিল। সাকিদার বাড়িতে ইলেক্ট্রিক নেই। এদিকে ওই টিভি বিক্রি করলেও কেউ কিনবে না। টালি সরিয়ে নিচে নামা যত সহজ ছিল টেলিভিশন সেটটা নিয়ে আবার ফিরে যাওয়া এককথায় অসম্ভব ছিল। তাও ভর সন্ধ্যায় যেখানে একটু রাত হলেই ক্লাবে লোকজন চলে আসবে। সাকিদা এসব কিছু ভাবেনি। ক্লাবের লোক যখন ক্লাবের মধ্যে ঢোকে তখন দেখে সাকি কোলে টেলিভিশন নিয়ে বসে আছে আর একটা করে সুইচ টিপছে আর চ্যানেল বদলানোর মত করে একের পর এক হিন্দি ছবির গান গেয়ে যাচ্ছে। ও হ্যাঁ সাকিদার চোখে তখন একটা বাচ্চাদের সানগ্লাস ছিল। ক্লাবের লোক ঢুকতেই সাকিদা জিজ্ঞেস করেছিল দিওয়ার কত নম্বরে হচ্ছে। ক্লাবের লোকজন এসব কিছু বোঝেনি। গাছের সাথে বেঁধে বেধড়ক মেরেছিল সাকিদাকে। সাকিদার কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না। ওর চুল গুলো কপালে নেমে এলেই ও চুল গুলোকে কায়দা করে সরিয়ে নিতেই ব্যস্ত ছিল। আমরা এই থেকে সকলেই ধরে নিয়েছিলাম যে সাকিদার মানসিক গোলযোগ আছে। সেটা সাকিদার থাকতেই পারে কারন সাকিদা টর্চের আলো জ্বেলে চাঁদ দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার ভোরের ট্রেন ধরার আগে অটোয় যে কালো মাসির (নামই কালো মাসি) সাথে দেখা হল যে ভোট দিতে না পারার জন্য রাগে গজগজ করছিল, কিংবা আমার অফিস কলিগ যখন এসে বলে যে তাদের ঘরের শিক্ষিত মহিলারা বুথে গিয়ে ফিরে আসে কারন তাদের ভোট পরে গেছে বলে কিংবা আমিই যখন দেখি এক ভোটারের দুবার করে ভোট পরে যাওয়া তখন সাকিদার কথা মনে পরে। কারন সাকিদার মানসিক গোলযোগ থাকতে পারে কিন্তু আমাদের নেই।
    সাকিদার সাথে দেখা হওয়ার এক রাত আগে যখন সন্ধার খবরে জানলাম যে সারা পশ্চিমবঙ্গে আগুন জ্বলছে তখন আমার ভোটের ডিউটি প্রায় শেষ। শুধু ভোট বাক্স পৌছে দেওয়া বাকি। আমায় কোন গণ্ডগোল সামলাতে হয়নি। কারন আমি গণ্ডগোল এড়াবার পথ নিয়ে নিয়েছিলাম। যে রাজকীয় টাকা খরচ করে সারা দেশ বা রাজ্য জুড়ে ভোট হয় তাতে গণতন্ত্র রক্ষা করা যায়না, কারন তার বহুই অযথা খরচ হয়। আর মাত্র ১৩০০ টাকার বিনিময়ে কেউ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনৈতিক মস্তানদের বিরুদ্ধে গিয়ে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে যাবে না। এই প্রক্রিয়া যেদিন থেকে ভোট শুরু হয়েছে সেদিন থেকে চলে আসছে তাই এটা বাস্তব যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ কথাটা এ দেশে একটা মিথের মত। যখন যে ক্ষমতায় থাকবে তখন সে তার মত করে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করাবে এটাই নিয়ম। এই নিয়ে যে যতই জ্ঞান দিক বা অতীতের তুলনা টেনে আনুক সবই কয়েনের এপিঠ আর ওপিঠ। শুধু সাকিদার মত কেউ হয়না। যে নির্বাচন কমিশনের কলার টেনে জিজ্ঞেস করবে শান্তিপূর্ণ ভোট কোথায় হয়? আমরা শুধু সংখ্যার হিসেব রাখি। আগের নির্বাচনের থেকে এবারে কিছু বেশি সংখ্যক লাশ পরেছে। এবারে দুজনকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছে। একজন ভোটকর্মি খুন হয়েছে। এটাই সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব। এর বাইরে কিছু হয়না। আর এটা যে ঘটবে তা আমরা সকলেই জানতাম। তাই আমাদের আর সাকিদার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সাকিদাও হয়ত জানত যে সে ওই টেলিভিশন বাইরে আনতে পারবে না, ধরা সে পরে যাবেই আর আমরাও জানতাম যতই কোর্ট অর্ডার দিক সমস্ত দায়ভার নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে, বা ওপর মহল থেকে ভোট করে নেওয়ার সুপারিশ আসুক, পুলিশি সুরক্ষা দেওয়া হোক, জনগণকে আশ্বস্ত করা হোক এরপরও পুরো ভোটের প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছু লাশের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে হবে। কিছু রক্ত গঙ্গা বইবেই। তাই সাকিদা আর আমাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আমরা দুজনেই মাথা নত করে মেনে নিয়েছিলাম এটাই হবে তাও আমরা তাতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। শুধু সাকিদার বুকের পাটা ছিল, সে কিছুক্ষন পর মার খাবে জেনেও জিজ্ঞেস করেছিল দিওয়ার কত নম্বরে হচ্ছে? আর আমরা চুপ করে ছিলাম। রাস্তায় দাড়িয়ে এসব নিয়ে না ভেবে উন্নয়ন দেখছিলাম। যে উন্নয়নের বলি কমপক্ষে ১৬টা জলজ্যান্ত মানুষ।।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন