এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • জল জঙ্গল জমিনের লড়াই

    Aditya Dhali লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৪ মে ২০১৮ | ১৮১৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Aditya Dhali | ২৪ মে ২০১৮ ১৩:৩৭375682
  • ২০১০ সালে যখন লাডা সিকাকাকে সাদা পোশাকের পুলিশ ও প্যারামিলিটারি এসে রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তখন যে সেটা সরকার পক্ষের মদতে হয়েছিল তা কিছুদিন বাদেই প্রমাণ হয়। আনঅফিসিয়াল কাস্টোডিতে তিনদিন রাখার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কোর্ট বিনা শর্তে তাকে মুক্তি দিয়েছিল। লাডা সিকাকা বাইরে এসে বলেছিল তাকে পুলিশ বাঁশ দিয়ে মেরে মেরে বলত স্বীকার করে নিতে যে সে মাওবাদী। লাডা করেনি। কারন লাডা যে দলকে নেতৃত্ব দিত তারা জল জঙ্গল জমিনের হয়ে লড়াই করত। বাস্তুসংস্থানের দিক থেকে একটা অত্যন্ত সংবেদনশীল গোটা পাহাড়কে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল। যে পাহাড়ের গর্ভে ধরে রাখা বক্সাইটকে খনন করার জন্য সরকার বিদেশী সংস্থাকে পার্মিশন অনেক আগেই দিয়ে দিচ্ছে। আসলে যে একটা জেলা, একটা অঞ্চল, একটা পাহাড়, একটা উপজাতিকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তাকে বিশেষ আমল দেয়নি সরকার। তাই গড়ে উঠেছিল নিয়মগিরি সুরক্ষা সমিতি। নিয়মগিরি বাঁচাতে তার বাসিন্দারাই গড়ে তুলেছিল এই সংগঠন। আর সরকার তাকে রোধ করার জন্য মাওবাদী সংগঠন বলে আখ্যা দিয়েছিল নিয়মগিরি সুরক্ষা সমিতিকে। পুলিশ ফোর্স দিয়ে তার নেতাদের ধরে নিয়ে আসা তাদের ওপর অত্যাচার করে তাদের স্বীকার করতে বাধ্য করা এসব কোনকিছু থেকেই পিছপা হয়নি রাষ্ট্র। কিন্তু এই লাডা সিকাকা যখন বিনা শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছিল তখন রাহুল গান্ধী স্বয়ং এসে তাকে বরমালা পড়িয়ে গিয়েছিল, আর ২০১৭ সালে সেই একই কায়দায় রাতের অন্ধকারে তার ভাইঝি কুনি শিকাকাকে যখন পুলিশ ধরে নিয়ে আসে তখন তাদের বক্তব্য ছিল কুনিও মাওবাদী কাজকর্মের সাথে যুক্ত। আর এই ঘটনা ঘটেছিল যখন সারা দেশ থেকে অ্যাক্টিভিস্টরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কে চিঠি লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছিল নিয়মগিরি সুরক্ষা সমিতিকে মাওবাদী সংগঠন বলে আখ্যা দেওয়ার জন্য। যে বেসরকারি সংগঠনকে সরকার খনন করার দায়িত্ব দিয়েছিল তারা বিশ্বব্যাপি খনন কাজ করার বিশাল সংস্থা। বেদান্ত। যে বেদান্ত গ্রুপ বিদেশী হয়েও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেস উভয়কেই ডোনেশনের নামে মোটা অংক দেয়। আর সংসদে বিজেপি এই আইন পাশ করে নেয় যে এবার থেকে বিদেশী সংস্থাও ডোনেশনের নামে রাজনৈতিক দলগুলোকে সাহায্য করতে পারবে। এই সেই বেদান্ত যাকে বাজপেয়ী সরকার কেন্দ্র সরকারের এক লাভজনক সংস্থাকে অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি করে দিয়েছিল কুখ্যাত বিলগ্নিকরনের সময়ে। এই বেদান্তই আলুমিনিয়াম শিল্পের জন্য যখন ওড়িশা সরকারের মাইনিং ডিপার্টমেন্ট এর মদতে নিয়মগিরি খুঁড়ে বক্সাইট বের করে পাহাড় কে ফাঁপা করে দিচ্ছিল তখনই লাডা সিকাকা, কুনি সিকাকারা জল জঙ্গল জমিন আগলে রাখার জন্য নিয়মগিরি সুরক্ষা সমিতি গড়ে তুলেছিল। নিজেদের বাসস্থানকে রক্ষা করার লড়াইতে নেমেছিল, পাহাড়কে আগলে রাখার লড়াইতে নেমেছিল। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এক রিপোর্টে জানিয়েছিল যে ২০১৪র নির্বাচনে বেদান্তই ছিল লিস্টের প্রথমে যারা বিদেশী সংস্থা হয়েও সবচেয়ে বেশী ডোনেশন দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোকে। অর্থের পরিমান প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এই সেই বেদান্ত যাদের ফ্রন্ট পেজ নিউজে মোদীবাবু আসেন বিজ্ঞাপনের মুখ হিসেবে। এই সেই বেদান্ত যাদের কপার কারখানার থেকে নিঃসৃত বর্জ্যপদার্থে নদীর জল দূষিত হচ্ছে, মানুষের দেহে ভয়ংকর রোগ দেখা দিচ্ছে এবং একটা গোটা প্রজন্ম বিকলাঙ্গ-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া দূষিত হচ্ছে। যে সমস্ত সন্তানরা মায়ের জরায়ু থেকে বেরিয়ে এসে পৃথিবীর আলো দেখছে তারা সুস্থভাবে জন্ম নিচ্ছেনা, মানুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী তুতিকরিন বা থুত্থুকুডি এরকমই এক ভয়ংকর পরিস্থিতির স্বীকার হচ্ছে ও আরো ভয়ংকরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যে কপার কারখানা থেকে দূষন ছড়াচ্ছে তার মালিক বেদান্ত। কারখানাকে মিউনিসিপালিটির পরিবেশ পর্ষদ সবুজ সিগনাল ও দেয়নি। ১৫ দিন ধরে কারখানা বন্ধ। এলাকাবাসীরা ১০০ দিন আগে বিক্ষোভ দেখিয়ে ধর্নায় বসেছিল এই কারখানাকে অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হোক এই দাবী নিয়ে। ১০০ দিন উপলক্ষে যখন তারা বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা শাসককে ঘেরাও করতে যাচ্ছিল তখন পুলিশ ও জনতার খণ্ডযুদ্ধে প্রায় ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। স্নাইপার দিয়ে লক্ষ্য করে করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সরকার বলেছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য গুলি চালানো বাধ্যতামূলক ছিল। ঠিক যেমন ভাবে নিয়মগিরি সুরক্ষা সমিতিকে মাওবাদী সংগঠন বলে আখ্যা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল তেমনিভাবেই থুত্থুকোডিতে মানুষের বিক্ষোভ মিছিলে গুলি করে ১৫ জনকে হত্যা করাও বাধ্যতামূলক ছিল।
    পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব থেকে সরকার অনেক আগেই হাত তুলে নিয়েছে। জাদুগোরাতে ইউরেনিয়াম খনন করে তার রেডিয়েশন এর প্রকোপ থেকে মানুষকে রক্ষা করার কোন দায়িত্ব সরকার দেখায়নি। অপর্যাপ্ত পরিমানে খনিজ সম্পদ খনন করে পরিবেশের যে ভারসাম্য নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে তাতে সিলমোহর সরকার লাগিয়ে দিচ্ছে। তাই প্ল্যাস্টিক বর্জন বা স্বচ্ছ ভারত অভিযানই যে একমাত্র পরিবেশ রক্ষা নয় তার প্রমান ১৫টা লাশ দিয়েছে। সরকার এই মৃত্যুকে সিলমোহর দিয়েছে। কিন্তু জল জমিন জঙ্গল নিয়ে মানুষের এই লড়াইকে কতদিন আটকানো যায়? এই প্রশ্নের উত্তর যত সহজ তার থেকেও বেশী সহজ আমাদের দুয়ারে যারা হাত জোড় করে ভোট চাইতে আসে তাদের মুখোশের আড়ালে মুখের অবয়ব।
  • h | 213.99.211.135 | ২৪ মে ২০১৮ ১৯:৫০375683
  • থ্যাংক্স।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ০৮ জুন ২০১৮ ০২:৫২375684
  • এইটা কেমন করে না পড়া রয়ে গেল? এখন পড়বো।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ১২ জুন ২০১৮ ২৩:০১375685
  • এই দ্যাখো, এটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এখন পেলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন