এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • গৌরব বিশ্বাস | 340112.77.7845.90 | ০৭ জুন ২০১৮ ২০:০১375597
  • ছবিঃ A Death In The Gunj
    পরিচালক- কঙ্কণা সেনশর্মা
    গল্প- মুকুল শর্মা
    ক্যামেরা- শীর্ষ রায়
    ছবির সময়কাল- ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট
    .............................................................
    পুরুষ কাকে বলে? আপনি নিশ্চই বলবেন, যে দেহে শিশ্ন ও অন্ডকোশ বর্তমান, সে পুরুষ। আপনার উত্তর বায়োলজিক্যালি এক্কেবারে সঠিক। তবে, আমারা মানুষরা অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় নিজেদের উন্নততর মনে করি, কারণ আমাদের এক সুগঠিত সমাজ রয়েছে। তাই মানুষের ক্ষেত্রে পুরুষের সংজ্ঞা নির্ধারন করে সমাজ। সমাজ শিখিয়েছে, যে ছেলেটি ডাকাবুকো, স্মার্ট, ড্যাশিং, কথায় কথায় যার পেশী শক্তির আস্ফালন, যে লাফ মেরে চলন্ত ট্রেনে ওঠে, স্যাৎ করে চলন্ত বাস থেকে নামতে পারে, প্যাকেট প্যাকেট সিগারেটের ধোয়ায় যে ধূমায়িত, যার সুঠাম চেহারার প্রতি নারীরা লালায়িত হয়, যে দশটা প্রেম এগারটা ব্রেক আপ করতে পারে তাতে তার হৃদয় এতটুকু টস্কায় না সেইই হল পুরুষ। সমাজ পুরুষকে সুপার হিউম্যান বানিয়ে ছাড়ে। তার দুঃখ পেতে নেই, কষ্ট থাকতে নেই। কারণ পুরুষের হৃদয় থাকতে নেই। ‘মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা’।
    অথচ যে ছেলেটির পাখির কিচির মিচির ভাল লাগে, বাতাসের শব্দ শোনে, কবিতা লেখে, আধ বুড়ো বয়সেও ‘গালিভার্স ট্রাভেলস’ পড়ে, কুকুর ছানাদের আদর করে, বাচ্চাদের সাথে খেলা করে, নিজের মনের কথা লিখে রাখে ডাইরিতে, রাতে ভূতের ভয় পায়, আপনি অপমান করলে তার ভেজা চোখ দুটি নীরবে প্রতিবাদ জানায়, যাকে বকে-ধমকে বেশ ব্যোমকে দেওয়া যায়, মেয়েরা যাকে পাত্তাও দেয় না এমন ছেলেকে পুরুষ বলা যায় না। ‘ভালো ছেলে’ বলা যেতে পারে, কিংবা ডাকা যেতে পারে ‘সুটু’ বলে।
    এ ছবির প্রধান চরিত্র সুটু। ছবির বাকি পুরুষ চরিত্র, বিক্রম, ব্রায়েনের তুলনায় বড় আনস্মার্ট একটি নাম।
    ছবির প্রেক্ষাপট সত্তরের দশক। বছর শেষের ছুটি কাটাতে, এক বাঙালি পরিবার এসে উপস্থিত হয় রাঁচির ছোট্ট মফঃস্বল বন-পাহাড়ে ঘেরা ম্যাকলাস্কিগঞ্জে। সুটু এদের কাজিন। সুটুও এদের সাথে বেড়াতে আসে সেখানে। বিক্রম ( রণবীর সোরে ) ও মিমি ( কল্কী কোচলিন) অবশ্য এ পরিবারের অংশ নয়। তারা পারিবারিক বন্ধু। বিক্রম ও মিমির কোনো এককালে বেশ জমাটি এক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিক্রম এখন বিবাহিত। সুটুর বংশ পরিচয় তেমন স্পষ্ট উল্লেখ নেই ছবিতে। তবে বাকি চরিত্রদের কথপোকথনে আন্দাজ করা যায়, অনুপমা বক্সী ( তনুজা ) সুটুর মাসি। সুটু পিতৃহীন। বিধবা মা আর সে থাকে আসানসোলে। আর্থিক অবস্থাও বেশ নিম্নগামী। সে স্নাতকোত্তরের ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করেছে, যদিও সেকথা সে বেমালুম চেপে গেছে সবার কাছে। এভাবেই গল্প এগোতে থাকে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের আলসে মাখানো দিন-রাত্তিরের মতোই। চলতে থাকে, বছর শেষের বছর শেষের আমোদ প্রমোদ। পার্টি-মদ-মাংসের সেলিব্রেশন। আর আসর জমাবার জন্য ডাক পড়ে সুটুর। কারণ তাকে নিয়ে একটু মজা করা যায়, তার সাথে রগড় করা যায়, খিল্লি করা যায়। নকল প্ল্যানচেটের আসরে তাকে মিডিয়াম বানিয়ে কি অনায়াসেই তার মৃত্যু কামনা করা যায়! পৌরুষের হাতে মনুষ্যত্বের মৃত্যু পূর্বনির্ধারিত হয়ে যায়।
    বাড়ির বাগানের বিশাল বিশাল গাছ গুলোর গুড়িতে খোদাই করা থাকে পরিবারে প্রত্যেকের নাম। থাকে না শুধু সুটুর নাম। সুটু জিওমেট্রি বক্সের প্লাস্টিকের সেই ত্রিভূজখানা। থাকলেও হয়, না থাকলেও বিশেষ কিছু এসে যায় না। কাটা কম্পাসের মতো, পাতার নরম শরীরে ছ্যাদা করবার পুরুষোচিত অহংকার তার নেই। এই সুটুকে আমি-আপনি প্রত্যেকেই চিনি। স্কুলের যে ছেলেটির কাছ থেকে আপনি টিফিন কেড়ে নিতেন আর ছেলেটি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকত ভ্যাবলা হয়ে, সেই ছেলেটিই সুটু। লাস্ট বেঞ্চের যে ছেলেটা ক্লাস চলাকালীন কাটাকুটি খেলে আর টিচার তার উপর হাতের সুখ করেন, সেই ছেলেটিই সুটু। রাস্তায় যে লোকটিকে ধাক্কা দিলে “ না ,না দাদা ঠিক আছে’ বলে একমুখ দেঁতো হাসি হাসেন , সেই লোকটিই সুটু। এই সুটুদের বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায়। তাকে দিয়ে বাড়ির কাজ করানো যায়। সে খেতে বসলে তাকে উঠিয়ে নিজে বসে পড়া যায়। তাকে ভূতের ভয় দেখানো যায়। এমনকি তাকে ব্যবহার করা যায় নিজের শারীরিক চাহিদা পূরণেও। এ ছবিতে যেমনটি করেছে, মিমি। বোকা সুটু তাকে ভেবেছিল প্রেম। ব্যস, চাহিদা পূরণ হলেই তাকে পুড়ে যাওয়া সিগারেটের ফিল্টারের মতো, কালি শেষ হওয়া পেনের মতো আঙ্গুলের এক ছোট্ট টোকায় দূর করে দেওয়া যায়। তবে সুটুরও মাঝে মাঝে রাগ হয় । যেদিন কবাডির আসরে দন্ত নখর যুক্ত পৌরুষ তাকে রক্তাক্ত করেছিল, সেদিন তার রাগ হয়েছিল বটে। সে রাগের বহিপ্রকাশ ঘটেছিল বড় ছেলে মানুষি ভাবে। একটা ডেয়ো পিঁপড়েকে সে আতসকাঁচের আলোয় পুড়িয়ে মেরেছিল। সুটুর ‘ছেলে মানুষ’ থেকে পুরুষ হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টার সাক্ষী ছিল ছোট্ট তানি। সুটু কাকার কষ্ট সেইই একমাত্র অনুভব করত। নাঃ, এ ছবিতে সুটুকে প্রতিবাদের ভাষা শেখাতে কোনো ভীনগ্রহী অ্যাং আসেনি। বাস্তবে, বঙ্কুবাবুর অসহায়তা দেখে আমরা উল্লাস অনুভব করি। এও একধরনের sadistic pleasure। তবে, সুটু প্রতিবাদী হয়েছিল নিজেই। যেদিন, তার একমাত্র সম্বল, ছোট্ট তানিও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, সেদিন সে হাতে তুলে নিয়েছিল বন্দুক। তাক করেছিল পৌরুষ নামের সামাজিক শ্বাপদের দিকে। বেছে নিয়েছিল আত্মহননের কার্তুজ। তারপর, ফায়ার...।
    কঙ্কনা সেন শর্মার অভিনয় মুগ্ধ করেছিল বহু আগেই। তাঁর প্রথম পরিচালনা আমায় হতবাক করল। তাঁর গল্পের উপস্থাপনাকে যোগ্য সংগত জুগিয়েছে, শীর্ষ রায়ের ক্যামেরা। ম্যাকলাস্কিগঞ্জ হয়ে উঠেছে ছবির মতো সুন্দর। ছুটি কাটাতে আসা বাঙালী পরিবারের প্রত্যকেটি ডিটেইলিং, সুটুর অসহায় মুখরেখা নিখুত হয়ে ধরা পড়েছে তাঁর ক্যামেরায়। সাগর দেশাইয়ের সুর আলাদা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রত্যেক অভিনেতা অভিনেত্রী তাঁদের চরিত্রে যথাযথ। সুটুর মাসি-মেসোর চরিত্রে তনুজা- ওমপুরী। এদুই বর্ষীয়ানের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলবার নেই। এছবি, সম্ভবত ওমপুরীর শেষ ছবি। আর সুটুর চরিত্রে বিক্রম মেসির জাদু, লিওলেনের ড্রিবলিংয়ের মতোই সাবলীল। রূপোলি পর্দার সুপার স্টারদের মাচোগিরি অনেক তো হল। এবার বরং অভিনয় দেখি। একটা ভালো গল্প শুনি।

  • Du | 237812.58.450112.185 | ০৮ জুন ২০১৮ ০১:৩৫375598
  • দেখবো সুযোগ পেলে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন