এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • হে প্রেম, হে নৈঃশব্দ্য...

    অর্ঘ্য দীপ লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৪ মার্চ ২০১৮ | ১৮৩৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অর্ঘ্য দীপ | ০৪ মার্চ ২০১৮ ২২:৫৩373450
  • হে প্রেম, হে নৈঃশব্দ্য
    -------------------------------
    এক যে ছিল বোবা রাজকন্যা। নাম এলিসা। এই পৃথিবীতে তার নিজের বলতে কেউ ছিল না, কিছু ছিল না। না কোনও রাজপ্রাসাদ, না বাবা-মা, না আত্মীয়-পরিজন। বন্ধু বলতে ছিল জাইলস নামের এক ছবি-আঁকিয়ে বুড়ো। এলিসার ঠিক পাশের ফ্ল্যাটটাতে থাকত সে। আর ছিল জেল্ডা। এলিসার সহকর্মী। বাল্টিমোরের এক গোপন গবেষণাগারে সাফাইকর্মীর কাজ করতো ওরা। নোংরা, পূতিগন্ধময় পেচ্ছাপখানা অথবা রক্তক্লেদ-মাখা গবেষণা ঘরের মেঝেকে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে দেওয়াই ছিল ওদের প্রাত্যহিক কর্তব্য। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল একটা করে দিন। নিয়মে, নীরবে, নিস্তরঙ্গতায়।

    সময়টা আনুমানিক ১৯৬২ সাল। অ্যামেরিকা এবং সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে চলছে ঠান্ডা যুদ্ধ। হঠাৎই একদিন এলিসার সঙ্গে দেখা হল এক অদ্ভুতদর্শন প্রাণীর। সে উভচর, সে আদিম, সে হিংস্র। দক্ষিণ অ্যামেরিকার অজানা এক নদী থেকে বন্দী করে তাকে এই গবেষণাগারে নিয়ে এসেছেন জনৈক কর্ণেল রিচার্ড স্ট্রিকল্যান্ড। উদ্দেশ্যটা খুবই পরিস্কার। এই "অ্যাসেট"টিকে ব্যবহার করে রাশিয়ার সঙ্গে চলা স্পেস রেসে বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়া। প্রাণীটিকে ব্যবচ্ছেদ করে তার ফুসফুসের অনুপুঙ্খ কার্যপ্রণালী জানতে চান কর্ণেল স্ট্রিকল্যান্ড। সায় মিলেছে ওপরমহল থেকেও। এদিকে এলিসার যে মায়া পড়ে গেছে এই আশ্চর্য প্রাণীটির ওপর। সে-ও এলিসার মতোই ভাষাহীন, এলিসার মতোই এই পৃথিবীতে সে একা। এবং সব আদিম হিংস্রতার আড়ালে তার একটা মন আছে। তাই সে ভালোবাসা চিনতে পারে ঠিক। তাই সুরের মূর্চ্ছনা আনন্দিত করে তাকে। এলিসা চায় প্রাণীটিকে বাঁচাতে, তাকে ফিরিয়ে দিতে তার পরিচিত জগৎে...কিন্তু শেষ অবধি পেরে ওঠে কি?

    পরিচালক গিলেরমো ডেল টোরোর "দ্য শেপ অফ ওয়াটার" আসলে একটা বিষণ্ণ রূপকথা। যারা মিসফিট, যারা আলাদা, সমাজের ঠিক করে দেওয়া নিয়ম-কানুনের নিরিখে যাদের বাতিল করে দেওয়া হয়েছে...তাদের জন্য, শুধু তাদের জন্য ভারী আশ্চর্য একটা প্রেমের গল্প বলেছেন পরিচালক।

    অভিনয় এই ছবির সম্পদ। এলিসার চরিত্রে স্যালি হকিন্স অসামান্য। জীবনের প্রতিটা হাসি-কান্না-রাগ-অভিমানের এমন শব্দহীন প্রকাশকে তিনি করে তুলেছেন সহজ এবং অকৃত্রিম। কর্ণেল স্ট্রিকল্যান্ডের চরিত্রে মাইকেল শ্যাননের কথাও আলাদা করে বলতে হয়। তার নির্লিপ্ত ক্রুরতা ডেল টোরোর অন্য একটি ছবি প্যান'স ল্যাবিরিন্থের সেই অত্যাচারী নাৎসী অফিসার ক্যাপ্টেন ভিদালকে মনে পড়ায়। আসলে এভাবেই পরিচালক নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে এক মায়াময় রূপকথার জগৎকে মিশিয়ে দিয়েছেন বরাবর। উভচর প্রাণীটির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডগ জোন্স। প্যান'স ল্যাবিরিন্থে যিনি ফওনের চরিত্রটি করেছিলেন। এমন আশ্চর্য চরিত্রগুলোকে দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য অভিনয়ে যে বিশেষ মুন্সিয়ানার প্রয়োজন হয়, সেটা তার আছে। অন্যান্য চরিত্রে রিচার্ড জেনকিন্স, অক্টাভিয়া স্পেন্সার, মাইকেল স্টালবার্গ প্রমুখ অভিনেতারাও যথাযথ।

    দ্য শেপ অফ ওয়াটারের নেপথ্য সঙ্গীত ছবিটাকে অব্যর্থভাবে কম্পলিমেন্ট করে চলে আগাগোড়া। সঙ্গীত পরিচালক অ্যালেক্সান্দ্রে ডেস্পলার সুর দর্শককে সম্মোহিত করে। এবং একাত্ম করে দেয় গল্পের সঙ্গে।

    তবে হ্যাঁ, একথা সত্যি যে ছবিটাতে বেশ কিছু খামতিও রয়ে গেছে। আছে অসংলগ্নতা। লজিকাল গ্লিচ। ছবির এডিটিংও অনেক জায়গায় বেশ অ্যাবরাপ্ট মনে হয়েছে। কিন্তু সেই সবকিছুকে ছাপিয়ে এক অপার্থিব ভালোবাসার গল্প ছবিটাকে মহত্ত্বের পথে নিয়ে যায়।

    তাই দ্য শেপ অফ ওয়াটার নিয়ে লিখতে গিয়ে, সবশেষে জাইলসের বলা সেই কথাগুলোই আরও একবার বলতে ইচ্ছে করছে....

    But when I think of her - of Elisa - the only thing that comes to mind is a poem, whispered by someone in love, hundreds of years ago:
    "Unable to perceive the shape of You, I find You all around me.
    Your presence fills my eyes with Your love, it humbles my heart.
    For You are everywhere..."

    আমাদের প্রত্যেকের ভালোবাসাগুলোও যে আসলে এমনই জলের তৈরি অবয়বমাত্র, সে কখন কী রূপ নেয় সেকথা কে-ই বা বলতে পারে?
  • রুকু | 11.187.251.133 | ০৪ মার্চ ২০১৮ ২২:৫৮373451
  • স্যালি হকিনস..
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন