এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আমাজন অভিযান রিভিউ

    Ankur Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ | ২২৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ankur Chakraborty | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ২০:০৬371213
  • "আহা যা দেখিলাম জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না!" কমলেশ্বর মুখার্জির "আমাজন অভিযান" দেখে ঠিক এটাই মনে হল।

    শঙ্করকে গ্রামের গুরুমশাই হিসেবে না দেখালে যেন ঠিক গল্পের শুরুটা হচ্ছিল না। সেই গুরুমশাই আবার "কোনান ডয়েলের লস্ট ওয়ার্ল্ড" পড়ে তার মধ্যে কালোচিতা দেখতে পায়! তার ওপর সিবিএসই সুলভ চেহারার বাচ্চা ছেলেমেয়গুলোকে জোর করে গ্রামবাংলার ছেলেমেয়ে বানাতেই হতো। আর গ্রামের খোকাখুকি মানেই মেমসাহেব দেখলে মোটরগাড়ির পিছনে ছুটবেই ছুটবে। সে ছুটুক গিয়ে। কিন্তু একটা সার্ডিনিয়ার মেম,যে ব্রাজিলে বড় হয়েছে,সে চোস্ত বাংলা বলে গেল? মেম-বৌ নয়তো?
    এইসব ভাবার ঘোর কাটতে না কাটতেই হাজির হলেন মেম-বৌয়ের বাবা বব ক্রিস্ট এর কুম্ভের মেলায় হারানো ভাই, যিনি আগেরবার আমাজন অভিযানে গিয়ে এমন ব্যর্থ হলেন যে মদে চুর হয়েও পিয়ানো বাজান কবির সুমনের মত। তিনজনে মিলে বেরোলেন আমাজনের জঙ্গলে। কিন্তু জঙ্গল কোথায়? সেন্ট্রাল পার্কে মনে হয় এর চেয়ে বেশি গাছপালা আছে। জঙ্গলের আদিবাসীদের মধ্যে থেকে কিকরে তারা ডুবুরির পোশাক পেলেন,বা ডুবুরির হেলমেটগুলো জল থেকে উঠতেই কোথায় উধাও হল সেটা সম্ভবত ভেঙ্কটেশ বাবুই জানেন। তাছাড়া আমাজন নদীর নীচে প্রবাল প্রাচীর(!!!!) পেরিয়ে কত সহজেই পুরোনো জাহাজ থেকে অতিপ্রাচীন মানচিত্র (শঙ্করের কাছে কিন্তু 1915 সালেও 2017 সালের মানচিত্র আছে, সুতরাং সে সম্ভবত ভবিষ্যৎ দেখতে জানে) সহজেই পাওয়া যায়,এই ফিল্ম থেকেই শেখা সম্ভব। একটা বিপদসঙ্কুল জঙ্গলের অভিযানে একটা নৌকোয় তিনজনই ঘুমিয়ে পড়ে কি করে? আর ভালো কথা, শঙ্কর কিন্তু ইতালীয় অভিযাত্রীর সাথে বাংলায় কথা বলে এবং আদিবাসীদের সাথে ইংরেজিতে। দ্বিতীয় বব ক্রিস্ট মারা গেলেন আনাকন্ডার "বিষে" (তার যে বিষ আছে সেটাই জানতাম না) এবং জঙ্গলে একটা প্রাণী আরেকটা প্রাণীকে মেরেছে,তার জন্য প্রতিশোধ নিতে হবেই শঙ্করকে। যেন আনাকন্ডা নয়,প্রেম চোপড়া গোছের ভিলেন মেরেছে। তাও তার জন্য ফাঁদ পেতে শঙ্কর তাকে ধনঞ্জয়ের মত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারল? (কৌশিক সেন,অনির্বান ভটচাজ আর মিমিকে দিয়ে আরেকটা সিনেমা বা যাত্রা নামিয়ে দিন,প্লিজ। নাম দেবেন "আমি দিয়েছি আনাকন্ডার ফাঁসি") প্রত্যন্ত জঙ্গলের আদিবাসীদের থেকে ডিঙি নৌকা ধারে পাওয়া যায় একদম চকচকে পালিশ করা সেগুন কাঠের তৈরি, তাতে আবার লোহার তৈরি নোঙরও আছে। মনে রাখবেন। মনে রাখবেন যে কালো চিতা একাকী থাকলেও শিকার করে ছয়জন দল বেঁধে। এবং কুয়াশা না দেখা গেলেও ভেবে নেবেন যে কুয়াশা আছে এবং তাতে শরীর অবসন্ন না হলেও ঘুম এসে যাবেই। ওহ হ্যাঁ, জাগুয়ার কিন্তু মাথার বদলে আজকাল মুখে থাবা মেরে পালিয়ে যায়। জঙ্গলে থাকা জনবসতি এলাকার রাবার খামারে যেতে গেলেও কিন্তু কাঠের ঝুলন্ত সেতু পার হতেই হবে,এবং সেই সেতু সেদিনই ভাঙবেই ভাঙবে।
    এবং অবশ্যই নায়ক নায়িকা এলডোরাডো খুঁজে পাবে এবং সেখানে কি করে গ্রীক পোশাক পরিহিত সাদা চামড়ার আমাজন যোদ্ধা রমণীরা আসবে,সেটা কমলেশ্বর বাবুই ভালো বলতে পারবেন।
    আর যে ধাঁধার মারফৎ এলডোরাডো খুঁজে পাওয়া গেল,সেটা স্প্যানিশ থেকে ইংরেজিতে তর্জমা করা গেলেও,বাংলায় কেন গেল না,জানি না। না কি ধরে নেওয়াই যায় যে এই ছবি যারা দেখবে, তারা সবাইই ইংরেজি জানেন বা বোঝেন।
    সবশেষে মধুরেন সমপয়েৎ, কেবল একটা জিৎ গাঙ্গুলির ঝিনচ্যাক গান গুঁজে দিলেই শঙ্কর আর আনার বিচ্ছেদ বিরহের মাঝেও ষোলকলা পূর্ন হয়ে যেত।

    সবশেষে,এই যদি বিভূতিভূষনের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হয়,তাহলে বিভূতিভূষনও সেটা গ্রহণে অস্বীকৃত হবেন। আর কমলেশ্বর মুখার্জি তো বেশ ভালো পরিচালক বলেই জানি(মেঘে ঢাকা তারা তো দারুন) তিনি অভিনয়ও মন্দ করেন না। তাহলে কি দরকার সস্তা পাব্লিসিটির মোহে ভেঙ্কটেশ ব্যানারের তলায় এইসব বানানোর। হ্যাঁ, যারা খিল্লি নিতে যাবে,তাদের পয়সা উসুল হবে,এটা ঠিক। যেমন আমার হয়েছে।
    আর দেবকে নিয়ে কিছু বলার নেই, সে তার উচ্চারণ বা অভিনয় কোনটাই শোধরাবে না,এটা ভেবেই দর্শকদের উচিত তাকে দেখতে যাওয়া বা না যাওয়া। খুব বাজে এনিমেশনের আনাকন্ডার অভিনয়ও দেবের থেকে উঁচু মাপের। আর লাবনী সরকার একটা দৃশ্যের কাশির জন্যই পরের বারের অস্কার পাচ্ছেন।

    (বি.দ্র: দল বেঁধে এই ফিল্ম দেখতে যান। এক গেলে ভুগবেন। দল বেঁধে গেলে কিন্তু খিল্লি নিতে ভুলবেন না)
  • শঙ্খ | 126.206.220.177 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ২৩:১৫371214
  • খ্যাক খ্যাক।

    আমি একটা এপিলোগ লিখে দিঃ (অংকুর বাবুর থেকে আগাম ক্ষমা প্রার্থনা করে রাখলাম)

    আগে উইকি দিয়ে দিঃ গ্রীক মিথোলজি অনুযায়ী 'অ্যামাজনস' রা একটা মহিলা-যোদ্ধা জাতি। এর অনেক মিথোলজিকাল গল্প, ব্যাখ্যা ইত্যাদি আছে, একদম হাতের কাছে ওয়ান্ডার ওম্যান দেখে নিলেও কিছুটা আইডিয়া হয়েই যাবে। যেটা গুরুত্বপূর্ণ, এদের উপস্থিতি ছিল মূলতঃ ঐ গ্রীস, তুর্কি মানে মূলতঃ ইয়োরোপের মধ্যেই।

    এবারে আসুন গল্পেঃ

    ডাক্তারবাবু সিনেমা বানাচ্ছেন আমাদের থুড়ি, আমাদের নির্বাচিত সাংসদের টাকায়। শিখন্ডী ভেংকটেশ ও আছে, জিএসটি ফাঁকি দেবার জন্য সিএ চাই। ডাক্তারবাবুর ঘাড়ে খুব বেশি মাথা নেই যে খোকাবাবুর আবদার উপেক্ষা করেন। শিবায় দেখে খোকার শখ হয়েছে তারও সফেদ হিরোইন চাই, তাকে দিয়ে বাংলা বলাতে হয়েছে, মেলা হ্যাপা। সিনেমা শেষের দিকে, পোস্ট-প্রোডাকসনে চলে গেছে মাল, এমন সময়ে তিনটে সিনেমা বেরোলো।

    খোকার কিন্তু জীবনে একটাই আক্ষেপ, জাতে ওঠা যাচ্ছে না। ওদিকে ইন্ডাস্ট্রির দুম্বাদা সারাজীবন চোয়ালের পেলভিস দুলিয়ে কাটিয়ে দিল, অন্তর্জলী যাত্রার আগে সেও মুখে একটু আঁতেলদের হিসি চায়। খোকা যেহেতু এখন নতুন মহানায়ক, তাই তারও একটা মরাল দায়িত্ব আছে এব্যাপারে। সে ঐ তিনটে সিনেমা দেখে ফেলে, কেননা আঁতেলরা এই সব সিনেমা দেখে আহাউহু করছে।

    প্রথম সিনেমা সে দ্যাখে বাহুবলী টু। ধারে বা ভারে এর কয়েক আলোকবর্ষ দূর দিয়ে গেলেও, কিকরে এর ঘাড়ে পা দিতে হবে সেটা সে ভাবে। যদিও সে জানে তার দল লোকের চোখে বা পেছনে গজাল দিয়ে কিকরে উন্নয়ন দেখাতে হয় সে ব্যাপারে ইস্ট জর্জিয়া থেকে পিএইচডি করে এসেছে, সুতরাং সে বেশি টেনশান নেয় না।

    পরের সিনেমা সে দ্যাখে ওয়ান্ডার ওম্যান। খোকা অবোধ আনন্দে দ্যাখে এখানেও লোকজন আমাজন আমাজন করছে। এটা সে ডটপেন দিয়ে হাতের তালুতে লিখে নেয়।

    তারপরে আসে শেষ সিনেমাঃ ধনঞ্জয়। এই সিনেমার দুঃশীলবাবু জৈবনে নকশাল ছিলেন, পরে পেটে হাওয়াই চটির একটি মোক্ষম লাথি খেয়ে বোধোদয় হয়, দ্রুত নিজের বংশপরিচয়ে বংশদন্ড দিয়ে খোকাদের বাসে উঠে পড়েন। তারপরে অবিশ্যি মা শেতলাকে ট্রিবিউট দিয়ে তাঁর কানা ভাঙ্গা থালা অদৃশ্য হয় এবং কাজ, মোহিনী সবই জুটতে শুরু করে।
    মুসকিল হল, দুঃশীলবাবু সেইযে দেখলেন 'ট্রিবিউট' দেবার মহিমা, এরপর থেকে তাঁর টেস্টিসে ট্রিবিউটাইটিস হয়ে যায়। তিনি লুসি নামের সেই অস্ট্রালোপিথেকাস থেকে শুরু করে রায়বাবু কাউকে বাদ দেন না। শুধু দক্ষিণী 'বই' গুলো বাদ দেন। ওর জন্য তাজ-বাজ অনেকে আছে। মা শেতলা বলে দিয়েছে, সবাই মিলে করে খাও, একা খেলে হবে না।

    খোকা দুঃশীলকে ধরে। কাকা, এবারে কাকে কাকে তিবিউত দিলে? কাকা বলে প্রথমেই জানাই, আমি কিন্তু রায়বাবু ঘরানার পরিচালক। পোস্টারে ট্রিবিউট দিয়েছি একটা সার্বিয়ার সিনেমাকে, সে তুই বসে দেখতে পারবি না, ওসব আমাদের রেডবুল, চড়ামব্রতর লাইনের জিনিস। আর স্ক্রিপ্টে ট্রিবিউট দিয়েছি কি একটা উল্টোপাল্টা প্রতিষ্ঠানের বইকে, ব্যাটাদের ঠেক আছে ঠিকানা নেই, সুতরাং রেশনকার্ড লাগবে না, তাই মা শেতলার চাপ নেই।

    খোকা বলে কাকা, তুমি ঘুঘুমাল আমিও বিষমাল। তুমি দুনিয়াকে তিবিউত দাও, আমি শালা তোমাকেই তিবিউত দেবো।

    ডাক্তারবাবুকে ঘুম থেকে তুলে এনে খোকা তিনটে আইডিয়া বলে। এক, আমাদের বইয়ের নামে আমাজন আছে, কিন্তু চিয়ার লীডার গুলো নেই কেন? এই ইন্জিরি বইটাতে যেরম দ্যাখালো। এদের আইপিএল থেকে তুলে এনে ঢোকাও। দুই, সাপকে মারছো বিষ দিয়ে? এ শালা পাবলিকে খাবে না, বরং ফাঁসি দিয়ে মারো। ফাঁসির কি টিআরপি সেটা আগের সরকার দেখিয়ে দিয়ে গেছে, সুতরাং বিষ আউট, ফাঁসি ইন। কাকাকেও তিবিউত দেওয়া যাবে। আর তিন নম্বর নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না, আমি সামলে নেবো।

    ডাক্তারবাবু প্রথমে ভাবছিলেন বেশি রাতে ভূরিভোজের পরে কার্মোজাইম খাওয়া হয়নি বলে পেট ফেঁপে দুঃস্বপ্ন দেখছেন। মুখ ফসকে এটা বলেও ফেলেন, সঙ্গে সঙ্গে খোকা সেটাকেও ক্যাচ করে নেয় এবং সিনেমায় গুঁজে দিতে হুকুম দেয়।

    ডাক্তারবাবু একটু পঢ়িলিখি আদমী, ইওরোপীয়ান আমাজনস দের সাউথ আমেরিকায় আনাটা কতটা হাস্যকর হবে সেটা হয়ত তিনি জানতেন, হয়ত জানতেন না, কিন্তু সর্বোপরি তিনি বিচক্ষণ লোক, বাংলায় করে খেতে গেলে কুমীরের সঙ্গে বিবাদ চলে না। এবং টাকা ঢালছে গৌরীসেন, সুতরাং তিনি লাস্ট মোমেন্টে সিনেমার গায়ে ফরমায়েসি পুলটিশ মেরে দ্যান। সাথে সদ্যলব্ধ জ্ঞান থেকে পাওয়া কুমীরকেও পোস্টারে ঢুকিয়ে দেন, সে সিনেমায় থাকুক বা না থাকুক।

    সবশেষে খোকা একটা সাইনবোর্ডে লিখে দেয়, মাননীয় মা শেতলার আন্তরিক শুভেচ্ছায় এবং সাংসদের ঘোঁটাল ত্রাণতহবিলের অর্থ সাহায্যে এই সিনেমার পোস্টার বাহুবলী টুর পোস্টারের চেয়েও বড় করে বানানো হল। দু একজন বিরিয়ানি লোভী সাংবাদিককেও ডেকে একটা করে প্যাকেট দিয়ে জিনিসটা পরের দিনের বিনোদনের পাতায় ছাপাতে বলে।
    ঘটনাচক্রে প্রিয়াংকা পাড়ুকোনের মান্থলি পেড পাবলিসিটির চেক ক্লিয়ার না হওয়ায় কন্টেন্ট কম পড়ছিল, তাই সম্পাদক একটু গাঁইগুঁই করলেও শেষ অবধি অনুমতি দেন।

    তারপরে কি হইলো, সেটা অলরেডি ওপরে পড়ে নিয়েছেন। অত্যুৎসাহী পাঠক আবার শুরু থেকে শুরু করতে পারেন।

    *******
    ব্যাস এই হল ড্রেসিংরুমের গুল্পো। জুমলাও বলতে পারেন। শুধুমাত্র মনে রাখবেন, সব চরিত্র কাল্পনিক। কোন ব্যক্তি বা ঘটনার সঙ্গে মিল পাওয়া গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়। ;)
  • Ruchira | 109.67.23.127 | ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৮371215
  • যদিও অফ টপিক, তাও জানতে চাই, আচ্ছা সেই মেম বৌএর কি হল? সকলে মিলিয়া কি টাহাকে ডুরে ঠেলিয়া ডিল?
  • aranya | 83.197.98.233 | ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪২371216
  • 'কিন্তু জঙ্গল কোথায়? সেন্ট্রাল পার্কে মনে হয় এর চেয়ে বেশি গাছপালা আছে'

    - জঙ্গল -টাও ঠিক মত দেখায় নি !!
  • Atoz | 161.141.85.8 | ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৫:০৭371217
  • সেই মেম-বৌ এখন র‌্যাশোঘুল্লা আর ডর্বেশ খাইয়া আনন্দে অভিভূত হইয়া বলিতেছেন, "ক্বী খ্বাইলাম, ঝন্মো ঝন্মাটরেও ভুলিভো ণা।" ঃ-)
  • রৌহিন | 233.223.141.197 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ২৩:২২371218
  • এপিলোগটা অ্যানালোগের থেকে বেশী বড় হয়ে গেছে।

    তবে অঙ্কুরের একটা জায়গা আনজাস্টিফায়েড লাগল - জঙ্গল এবং লোকেশন কিন্তু আমার দিব্যি লেগেছে - যদিও সেটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই দিব্যি লাগার মত। এত কাঁচা কাজ কমলেশ্বরের দেখে বেশ অবাকই লাগছিল।

    তবে দেবের (শ্বেতলানারও) অভিনয়ে একটা ব্যপার আছে - আমার ক্লাস সিক্সে পড়া ছেলেও বলল দেব একটুও অ্যাক্টিং করতে পারে না। এই সার্বজনীন রেপুটেশন মহানায়ক ছাড়া পাওয়া মুশকিল। চাঁদের পাহাড়ে বুনিপ আর এখানে অ্যানাকোন্ডা - ফাঁদ টাদ বাহ্য ব্যপার - স্রেফ দেবের বাজে অভিনয় দেখে মরে গেল এরা।

    জঙ্গলে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতি এত প্রতিশোধস্পৃহা নিয়ে কেউ অভিযাত্রী হয় কী করে এটা কমলবাবুই বলুন -
  • S | 126.206.220.131 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১১371219
  • জঙ্গল ব্যাপারটা আমারও বেশ ঠিকই লেগেছে। গল্প নেই। অভিনয় আশাও করিনি। কাঁচা অ্যানিমেশন। নায়িকাটি খুব কিউট।
  • প্রদোষ ভট্টাচার্য্য | 154.48.225.103 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ১০:৩৫371220
  • অ্যামাজন অভিযান
    যা যা নির্দ্বিধায় ভালো বলতে পারি সেগুলোর কথা আগে ব’লে নি ঃ নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী অতি মনোরম। বিদেশিনী নায়িকা বেশ মিষ্টি। তাঁর সঙ্গে শঙ্করের মার আদান-প্রদান অত্যন্ত উপভোগ্য। এবার যে ব্যাপারগুলো নিয়ে মনে খটকা রয়ে গেছে ঃ
    • লস্ট ওয়ার্ল্ড
    শঙ্কর পাহাড়ে উঠছে, এমন সময় তাকে তেড়ে এলো কালো প্যান্থার। শঙ্কর ছুটে পালাতে পালাতে পাহাড় থেকে পড়লো হ্রদে। সেখানে তিন দিক থেকে তাকে তাক করে জল কেটে আসতে লাগলো তিনটে কুমীর। হ্যাঁ, নিন্দুকরা যাই বলুন, ছবিতে কুমীর আছে, সে পোস্টারের মতো নাই হোক! এমন সময় ‘চাঁদের পাহাড়ে’র ফর্মুলা মেনে শঙ্করের ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমরা দেখলাম সে ‘লস্ট ওয়ার্ল্ড’ বইটি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিল। উপন্যাসটি অনেকদিন আগে পড়েছি, কিন্তু তাতে প্যান্থার বা কুমীর আছে কিনা মনে পড়ছে না। যে ‘লস্ট ওয়ার্ল্ড’ পড়ে ঘুমোবে, তার তো ডাইনোসরের স্বপ্নই দেখা উচিৎ, নয় কি? যদি পরিচালক অ্যামাজনের কথা ভেবে ওই বইটি এখানে ঢুকিয়ে থাকেন – উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট অ্যামাজনের জঙ্গলে এক মালভূমি – তাহ’লেও স্বপ্নের সঙ্গে কিন্তু তাকে মেলানো গেল না।
    • শঙ্করের মাতৃভক্তি
    হঠাৎ প্রথম মহাযুদ্ধের সঙ্গে স্বদেশী আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে দেখানো হ’লো যে দুটোর কোনটাই গল্পের ওপর কোন প্রভাব ফেলবেনা! তাহলে এগুলোর উত্থাপন কেন? শঙ্কর শুধু স্বদেশী আন্দোলনকেই যে উপেক্ষা করলো তা নয়, তদুপরি বৃদ্ধা, অসুস্থ, বিধবা মাকে দিব্যি ‘টা টা’ করে বিদেশে পাড়ি দিলো! ঠিক কি বার্তা দিতে চাইলেন কাহিনীকার-পরিচালক? বিশেষ ক’রে বিদায়ের মুহূর্তে মাকে কষ্টের সঙ্গে কাশতে দেখিয়ে?
    • লতার সেতু
    শঙ্কর ও তার দুই বিদেশী সঙ্গী একটি বিপজ্জনক লতার সেতু দিয়ে একটি খাদ পার হ’বেন। শঙ্কর বুদ্ধিমান ছেলে, সে আরম্ভেই বলছে যে ওই সেতু দিয়ে পার হওয়া মোটেই ঠিক হ’বে না। কিন্তু না, সাহেব বললেন, ওখান দিয়েই পেরোতে হ’বে। এবং তৎক্ষণাৎ নিজের মেয়েকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “যা, তুই আগে যা!” জিয়ো নারীবাদভিত্তিক সাম্যবাদ! সঠিক জায়গায় ‘লেডিজ ফার্স্ট’! না, বড্ড বেশী কদর দিয়ে ফেলেছি সাহেব বাপকে! মেয়ে তার ঘোড়া নিয়ে খানিকটা এগোতেই দেখি বাপ এবং শঙ্কর তাদের ঘোড়াদুটি নিয়ে সেতুর ওপর! মানে পরিচালক ‘এক্সাইটমেন্ট জেনারেট’ করতে হ’বে তাই যেনতেনপ্রকারেণ সেতুটি ছেঁড়ার ব্যবস্থা করবেনই, তাতে চরিত্রগুলোকে দিয়ে যতই নির্বোধ-সুলভ আচরণ করাতে হো’ক না কেন! একটা দুর্বল সেতু দিয়ে যদি তিনটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ আর তিনটি ঘোড়া একসঙ্গে পার হ’বার চেষ্টা করে, তবে সেটা না ছিঁড়লেই অবাক হ’বার কথা! তবে দর্শক মুগ্ধ। যখন শঙ্কর ও সাহেব সেতু ছিঁড়ে পাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়ল, জনৈকা ব’লে উঠলেন, “ওঃ বাংলা ছবি হলিউডের পর্যায় উঠে গেছে!”
    • ঈল মাছের ছোঁয়া
    নদীর যেখানে সাহেবের জাহাজডুবি হয়েছিল ঠিক সেইখানে এসে শঙ্কর ডুব দেবার আগে সাহেব তাকে সাবধান করলেন যে জায়গাটি পিরান্হা মাছ আর কেম্যানদের বিচরণ ক্ষেত্র। কিন্তু ছবির বাজেট ও শঙ্করের প্রতি মায়া ক’রে এরা কেউই দেখা দিল না। তাহলে এদের উল্লেখ কেন? মাঝখান থেকে নায়ককে বিদ্যুতের ছ্যাঁকা মেরে গেল ঈল। আর সাহেব এতটাই বিহ্বল হয়ে পড়লেন যে জলের তলায় আহত মেয়ের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে শঙ্করের মুখে মুখ লাগিয়ে, তারপর তার বুকে ঘুসি মেরে তিনি তখন বাঙালী নায়ককে বাঁচাতেই ব্যস্ত! প্রথমে লতার সেতুতে মেয়েকে এগিয়ে দেওয়া তারপর এই কাণ্ড! মেয়ে অভিযানে বেরোবার আগে মদ্যপ বাপকে যে দু’কথা শুনিয়ে দিয়েছিল, তার এই পরিণতি হ’বে সে কি ভেবেছিল!
    • অ্যানাকোন্ডা
    ‘চাঁদের পাহাড়’এ দেব বুনিপ মেরেছিল। সজ্ঞানেই ‘দেব’ বললাম। অন্যত্রও বলেছি যে বিভূতিভূষণের শঙ্কর বুনিপকে চাক্ষুষই ক’রে নি, মারা তো দূরের কথা। অতএব এবার সে অ্যানাকোন্ডা মারবে। ছবির প্রথমদিকে জঙ্গলের মধ্যে বাড়ীতেই স্টোর থেকে মদ আনতে গিয়ে একটি মেয়ে জাগুয়ারের শিকার হয়। এর পরেও এবার নদীর ধারে ভাঙা বাড়ীতে ঢোকার পর দিব্বি বাপ আর দেব অ্যানাকে নদীতে জল আনতে একা ছেড়ে দেয়। বাপ না হয় মেয়ে পটল তুললেই খুশী, কিন্তু নায়ক? সেখানে প্রথমে জল থেকে অ্যানাকোন্ডা উঁকি মারে। তারপর অ্যানার চিৎকার শুনে দেব ছুটে গিয়ে দেখে গাছ থেকে অ্যানাকোন্ডা অ্যানাকে তাক করছে। রিভলভার ছুঁড়ে মেয়েটিকে টেনে বাড়ীতে ঢুকিয়ে দুজন দেখে যে আর একটা অ্যানাকোন্ডা বাপকে পাকিয়ে ধরে গেলার উপক্রম করছে। হলিউডের বাজেট না থাকায় অ্যানাকোন্ডা বাপকে পুরো গিলে আর উগরে দিল না, তার মাথাটা মুখে নিয়ে আবার তাকে ফেলে দিয়ে গেল। বাপ শেষ।
    এবার সেই ‘চাঁদের পাহাড়’এর টেমপ্লেট মেনে দেবের প্রতিশোধ পর্ব। কিন্তু বুনিপ যেখানে একটাই ছিল, সেখানে এ গল্পে তো একাধিক অ্যানাকোন্ডা! তা কি ক’রে দেব জানবে যে কোনটা অ্যানাকে তাক করেছিল আর কোনটা তার বাপকে গেলার চেষ্টা ক’রেও গেলেনি? তারপর গাছের ডাল কেটে ছুঁচলো ক’রা হ’ল, কোন এক দারুণ বিষাক্ত ব্যাঙের বিষ যোগাড় ক’রা হ’ল (বিষহীন সাপ মারতে বিষাক্ত ব্যাঙের আইডিয়াটা মন্দ নয়!)। কিন্তু সাপটাকে মারার সময় এসব কিছুরই ব্যবহার দেখা গেল না! দেব আর অ্যানা মিলে অ্যানাকোন্ডাকে গাছে দড়ি দিয়ে পেঁচাতেই ইঙ্গিত ক’রা হ’ল যে ব্যাটার পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটেছে! তা সেটাই বাপকে গেলবার চেষ্টা ক’রে থাকুক বা না থাকুক!

    আর সামান্যই কিছু কথা বাকী। শেষের খানিকটা, মানে এল ডোরাডোতে পৌঁছনোর আগের কিছুটা অংশ একটু সংক্ষেপিত হ’লে ভালো হ’ত, ‘চাঁদের পাহাড়’এর শেষের দিকে দেবের একলা-একলা চর্কির পাক খাওয়াটাও এই রকম অতি দীর্ঘ লেগেছিল।
    ‘চাঁদের পাহাড়’এ আসল সিংহ আর হাতী দেখানো সম্ভব হয়েছিল, ছবিটি দক্ষিণ আফ্রিকায় তোলা ব’লে। দক্ষিণ আমেরিকায় পরিচালক বাধ্য হয়েই সি জি আই নির্ভর, কিন্তু সি জি আই মোটেই উন্নতমানের নয়! দেব জাগুয়ার মারার পর পড়ে থাকা জন্তুটিকে টম ও জেরি কার্টুনের চিঁড়েচ্যাপটা টমের মতোই লেগেছে। অ্যানাকোন্ডাও একমাত্র বাপকে গেলার সময় ছাড়া খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এল ডোরাডোর কালো বাঘগুলোও তথৈবচ।

    অ্যানার গলায় ভ্যাম্পায়ার বাদুড় কামড় বসালেও পরের দিন সকালে তার কন্ঠদেশ অক্ষত। দেবও জাগুয়ারের সঙ্গে কুস্তি ক’রে, কিন্তু তার গায়ে আঁচড়ের দাগটুকু থাকে না!
    সবশেষে বলব যে সত্যিই ভালো বাংলা অ্যাডভেঞ্চারের ছবি করার পথ সৃজিত আর কমলেশ্বর কিন্তু অনেকটা প্রশস্ত করে দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে ‘চাঁদের পাহাড়’এরও আগে লেখা হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘যকের ধন’ উপন্যাসের একটা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য চিত্রায়ন দেখেছি। আশায় রইলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন