এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • লেখা: বাংলা গল্প "স্বপ্ন"

    Supratim Roy Chaudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৭ নভেম্বর ২০১৭ | ৩১৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Supratim Roy Chaudhury | ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৯:২১370387
  • এক।।
    রিনরিন শব্দে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো অতুল। সোফাটা দামি হলেও বসে আরাম পাচ্ছিল না। জড়সড় হয়ে কোনার দিক ঘেঁষে বসেছিল। মাথা তুলে দেখল একজন আর্দালি মতন লোক একটা ট্রলি ঠেলে নিয়ে আসছে। রথীকান্ত মল্লিক হৈ হৈ করে উঠলেন “There you are everybody. Drinks এসে গেছে” ট্রলির উপর কিছু কাঁচের গ্লাসে দুতিন রকমের পানীয়, তার মধ্যে বরফের টুকরো। তাতেই রিনরিন শব্দটা হচ্ছে। আর ছোট ছোট প্লেটে কয়েক রকমের খাবারদাবার। ছোটবড় কাঁটাচামচ। আর একপাশে একটা ছোট কাপে অতুলের চা। এতসব ব্যবস্থা দেখে আরও গুটিয়ে গেল অতুল। খাবারদাবার কাঁটাচামচ মানেই তো নানান সহবৎ এর ব্যপার।
    “নিন নিন, সবাই হাত লাগান। অতুল, তুমি শুধু চা খাবে? তুমি করেই বলছি। একটা ড্রিঙ্ক ট্রাই করবে না? আমাদের রফিক কিন্তু ইভিনিং ককটেলগুলো দারুন বানায়” আর্দালির নামই বোধহয় রফিক। সে ট্রে থেকে চোখ তুলে গম্ভীরভাবে অতুলের দিকে তাকাল। অতুল আরএকটু পিছনে সিঁটিয়ে গিয়ে বলল, “না না। ঠিক আছে। শুধু চা”
    রথীকান্ত মল্লিক বরফওয়ালা কাট্গ্লাসের সোনালি পানীয়টা তুলে নিয়ে আরাম করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললেন, “বেশ। আমার আবার সন্ধ্য়ার দিকে একটু স্কচ না হলে… রিনি, অতুলকে একটু চা-টা বানিয়ে দাও না”
    রথীকান্তবাবুর স্ত্রী রিনি চায়ের কাপটা টেনে নিয়ে বললেন, “কটা suger cubes দেব? তুমি creamer নেবে তো?” অতুল ঢোঁক গিলে তাড়াতাড়ি বলল, না না, ওসব লাগবে না। “ও, raw চা?” বলে কাপটা ওর দিকে এগিয়ে দিলেন তিনি। অতুল কাপটা নিয়ে একটা ছোট চুমুক দিয়ে কাপটা ধরে সোজা হয়ে বসল। দুধচিনি দিয়ে চা খাবার অভ্য়েস, raw চা তেতো লাগছে।
    অতুলের বাঁদিকে একটা দোলনা-মতন বেতের চেয়ার থেকে কুহেলি বলল, “মা, আমার সাঙ্গ্রিয়া টা একটু দেবে?” রিনিদেবী একটা খুব সুন্দর গ্লাসে একটা হালকা সোনালী রঙের ড্রিঙ্ক কুহেলীর দিকে এগিয়ে দিলেন। পাশ থেকে রথীকান্ত বাবু বললেন, “অমোল, রফিক কিন্তু এটা একটা unique জিনিস বানায়। কাঁচা আমের সাংগ্রিয়া। এ জিনিস আর কোথাও পাবে না। একটা ট্রাই করো” রথীকান্তবাবুর বাঁপাশে বসা খুব হ্যান্ডসাম ভদ্রলোক এতক্ষন একটু আধটু যা বলছিলেন ইংরিজিতেই বলছিলেন। এবারে পরিস্কার বাংলায় বলে উঠলেন, “তাই নাকি। very interesting. never had it before, দেখি তো ট্রাই করে“ বলে ঝুঁকে টেবিল থেকে আর একটা একই রকম গ্লাস তুলে নিলেন।
    সবাই যে যার ড্রিংক নিয়ে বসে পড়তে হঠাৎ ঘরটা যেন একটু চুপচাপ হয়ে গেল। কুহেলীর দোলনাটা থেকে শুধু ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ। অতুল চায়ের কাপ থেকে চোখ তুলে দেখল, অমোল, সেই হ্য়ান্ডসাম ভদ্রলোক মুখে একটা মৃদু হাসি নিয়ে তার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছেন। ভাবটা যেন, তুমি কে ভাই। কিছু একটা বলতে হয়। অতুল একটু ঢোঁক গিলে বলল, “আপনাকে দেখে বুঝতে পারি নি আপনি বাঙ্গালী।“ অমোলবাবু ভুঁরু নাচিয়ে কৌতুকের সঙ্গে বললেন, “আপনি ঠিক ধরেছেন। আমি বাঙ্গালি নই।“ অতুল বুঝতে পারল না ভদ্রলোক ঠাট্টা করছেন কি না। বোকার মতন রথীকান্তবাবুর দিকে তাকাতেই তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, “অমোলের সাথে তোমার ভাল করে আলাপ করিয়ে দেওয়া হয় নি। ওর পুরে নাম অমোল ধীলোন ওরা আসলে পাঞ্জাবের লোক। তবে ও ছোটবেলা থেকেই কলকাতায় বড় হয়েছে। তুমি বোধহয় ওর বাবা সুনীল ধীলোনের নাম শুনেছ। উনি কংরেসের বড় লিডার। পশ্চিমবঙ্গের কংরেস পার্টির সাথে দিল্লীর হাই কমান্ডের যত coordination সেটা ওঁর through দিয়েই হয়। আর আমাদের অমোল তো অল্প বয়সেই পলিটিক্সে rising start” অমোলবাবু অসাধারণ সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বললেন “আরে তেমন কিছু না। Mr. মল্লিক একটু বাড়িয়ে বললেন। তা আপনি বুঝি ওনার business এর সাথে জড়িত?” অতুল মাথা নামিয়ে বলল “না না, আমি business এর কিছুই জানি না।“ কুহেলী এতক্ষন চুপ করে শুনছিল। হাতের গ্লাসটা টেবিলে রেখে বলল, “অতুল আমার batchmate। আমাদের কলেজেই পড়ে। Pharma না?” অতুল মাথা নেড়ে সায় দিল। অমোলবাবু মুখে কিছু বললেন না, কিন্তু ওঁর চোখের প্রশ্নচিহ্নটা গেল না। কুহেলীর মা রিনিদেবী হেসে বললেন “অতুল ভারি ভাল ছেলে। ওর কাছে আমার অনেক ঋণ। ও কুহুকে দরকারের সময় খুব হেল্প করেছে। তাই কুহুকে বললাম জোর করে হলেও ধরে আনতে আজ”। রিনিদেবীর গলার স্বরে কিছু একটা ছিল, অমোলবাবু নড়েচড়ে বসলেন। বললেন “একটা story আছে বলে মনে হচ্ছে?” রিনিদেবী জবাব না দিয়ে কুহেলীর দিকে তাকালেন। রথীকান্তবাবু একটু থেমে বললেন “তোমাকে বলা হয় নি আগে। গত মাসের কথা। কুহুর একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল” অমোলবাবু একটু চমকে উঠে বললেন, সেকি! “হ্য়াঁ, একটা পার্টীর মতন ছিল রাত করে। এক বন্ধুর সাথে ফিরছিল। ওর বন্ধু বোধহয় একটু buzzed ছিল। ওর বন্ধুই ড্রাইভ করছিল। তা ওদের গাড়ির ভালমতন অ্যাকসিডেন্ট হয়। একটা ল্যাম্পপোষ্টের সাথে ধাক্কা লাগে। ওর বন্ধু impact এ unconscious হয়ে যায়। যদিও he later recovered, he was completely knocked out at that time । অত রাতে এই কান্ড হওয়ায় কুহু তো খুব প্য়ানিক করছিল। ওর কাছে ফোন ছিল না। সে সময় অতুল ওদের স্পট করে। খুব ঠান্ডা মাথায় ও পুরো ব্য়াপারটা handle করে ও। পুলিশের গাড়ি থামিয়ে তাদের হেল্প নিয়ে অ্য়াম্বুলেন্সে করে ওদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমাকে খবর দেয়। ও সেদিন না থাকলে কি যে হত ভাবতেই ভয় লাগে” অতুল তাড়াতাড়ি লজ্জা পেয়ে বলে উঠল, “না না। উনি কিন্তু বাড়িয়ে বলছেন। আমি incidentally ওখানে গিয়ে পরায় দরকারের সময় একটু হেল্প করে দিয়েছি শুধু। সে তো সবাই করে” অমোলবাবু উঠে বসেছিলেন। শুনে আবার সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললেন, “অতুলবাবু, I like your modesty, কিন্তু বিপদের সময় আপনি যে মাথা ঠান্ডা করে problem solve করেছেন সেটা কিন্তু সকলে পারে না” রথীকান্তবাবু বললেন, “exactly! একদম ঠিক বলেছ অমোল”
    তারপর আলোচনাটা একটু অন্য়দিকে ঘুরে গেল। রথীকান্তবাবু অমোলকে পলিটিক্স নিয়ে কি একটা জিগ্গেস করায় ওনারা দুজনে তাই নিয়ে কথা বলতে লাগলেন। অতুলও আর কথাবার্তা চালাতে হবে না বলে নিশ্চিন্ত হয়ে বসল। রিনিদেবী ওনাদের আলোচনা শুনছিলেন বটে, কিন্তু পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিল যে পলিটিক্সে ওনার তেমন উৎসাহ নেই। কুহেলীও বোধহয় বেশ বোর হচ্ছিল। খানিক্ষন পরে কথার মধ্য়ে ফাঁক পেয়ে রিনিদেবী জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা কুহু, তোর নতুন psychology ক্লাস শুরু হয়েছে না? Interesting কিছু পড়াচ্ছে?” কুহেলী বলল, “হ্যাঁ, আমাদের Dreams নিয়ে পড়াচ্ছে। দারুন interesting সব theory।” অমোলবাবু কথা থামিয়ে কুহেলীর দিকে ঘুরে বললেন, “ স্বপ্ন নিয়ে psychologyর থিওরি আছে নাকি?” কুহেলীকে দেখে মনে হল হঠাৎ করে center of attraction হওয়াটা ও বেশ enjoy করছে। একটু নাটকীয় ভাবে হাত নেড়ে বলল, “ বাবা, তোমার কি মনে হয়? আমরা স্বপ্ন দেখি কেন?” রথীকান্তবাবু একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, “ইয়ে, কেন মানে, ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্ন দেখি”। কুহেলী বলল, “ভেবে দেখ, স্বপ্ন দেখাটা জরুরী কেন। In fact, ঘুমানোটাই বা জরুরী কেন আমাদের পক্ষে? যে কোন প্রানী ঘুমিয়ে থাকার সময় সবচেয়ে vulnerable to its predators। তা সত্ত্বেও কোটি কোটি বছর ধরে evolution ঘুম আর স্বপ্নকে ধরে রেখেছে কেন?” কুহেলী সবার মুখের দিকে একবার করে চাইলো যেন ক্লাসের পড়া ধরছে। অমোলবাবু একটু হেসে বললেন, “স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচবে কি করে।” কুহেলী বলল, “আপনি বোধহয় philosophically বললেন। কিন্তু maybe not too far from the truth. According to some theory, ঘুম হচ্ছে আমাদের ব্রেইনের স্মৃতি, চিন্তা এইসব process করার সময়। আর আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে ব্রেইনের বিভিন্ন কাল্পনিক পরিস্থিতি তৈরি করে practice করার সময় যাতে কি করে ভবিষ্য়তে কি করে সমস্য়ার মোকাবিলা করা যায়” “Simulation Exercise?” অমোলবাবু বলে উঠলেন। রিনিদেবী বড় করে হেসে বললেন, বাব্বা, এত কিছু? আমার তো ঘুমের পর স্বপ্ন দেখেছি কি না মনেই থাকে না।” “আমার থাকে”। সবকটা চোখ হঠাৎ ঘুরে অতুলের দিকে পড়ল। অতুল বুঝল, কথাটা ও মুখ ফস্কে বলে ফেলেছে। রিনিদেবীর দিকে তাকিয়ে, একটু গলা পরিস্কার করে বলল, “না, বলছিলাম আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখলে ঘুম থেকে উঠে সেটা স্পষ্ট মনে থাকে।” কুহেলী অতুলের দিকে তাকিয়ে বেশ উৎসাহ নিয়ে প্রশ্ন করল, “ তোমার স্বপ্নগুলো খুব interesting হয় বুঝি?” অতুল বলল, “না, মানে interesting কি না জানি না, কিন্তু স্বপ্নগুলো খুব জ্যান্ত হয়”। রথীকান্তবাবু এতক্ষন শুনছিলেন অতুলের কথা। এবারে একটু অবাক হয়ে বললেন, “জ্য়ান্ত মানে?” অতুল একটু থতমত খেয়ে বলল, “ঠিক বোঝাতে পারবো কিনা জানি না। স্বপ্নের মধ্য়ে আমি চলে ফিরে বেড়াতে পারি নিজের ইচ্ছে মতন। হয়তো ঠিক বোঝাতে পারছি না, আমার স্বপ্ন দেখার ব্য়াপারটা অনেকটা ভিডিও গেম খেলার মতন। স্বপ্নের মধ্য়েও আমার মনে হয় আমি জেগে আছি। তাই জেগে ওঠার পরও আমার সব খুঁটিনাটি মনে থাকে। অন্য়দের কেমন অভিজ্ঞতা হয় জানি না। আমার এই স্বপ্নের ব্য়াপাকটা যে একটু অদ্ভুত সেটা আমি জানি”। কুহেলী এতক্ষন চোখ গোলগোল করে অতুলের কথা শুনছিল। তড়াক্ করে লাফিয়ে উঠে বলল, “Lucid Dreaming!! তুমি সত্য়ি বলছ?” অতুল ঘাবড়ে গিয়ে আমতা আমতা করে বলল, “না মিথ্য়া বলব কেন!” রথীকান্তবাবু কুহেলীকে লাফিয়ে উঠতে দেখে বললেন, “সে কি রে! এরকম সত্য়ি হয় নাকি? এ সত্য়ি বলছে?” কুহেলী অতুলের একদম মুখোমুখি বসে বড় বড় চোখে চেয়ে বলল, “Fedrik Van Eeden” অতুল অবাক হয়ে বলল, “সে কে?” কুহেলী বাবার দিকে ঘুরে বলল, “French psychiatrist। 1913 সালে প্রথম বলেছিলেন Lucid Dreams এর কথা। খুব rare কিছু মানুষ আছে যারা স্বপ্নের মধ্য়ে “জেগে” উঠতে পারে, স্বপ্নের মধ্য়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। Lab এ scientifically prove করা গেছে। আমি শুধু বইতেই পড়েছি। সত্য়ি সত্য়ি কাউকে দেখব যে Lucid Dreaming করতে পারে, বিশ্বাসই হচ্ছে না”। অতুল এবারে সত্য়ি সত্য়িই একটু ঘাবড়ে গেল। স্বপ্নের কথাটা মুখ ফস্কে বলে ফেলেছে। ব্য়াপারটা যে এদিকে গড়াবে ভাবে নি। এই Lucid Dream না কি, আগে কখনো শোনে নি অতুল। কুহেলী psychology পড়ে ঠিকই, কিন্তু এমন ভাব করছে যেন সব জেনে গেছে। অমোলবাবু একটু গলা খাঁকরি দিয়ে বললেন, “কুহেলী, তুমি যে বললে Lab এ Scientifically prove করা যায় সেটা কি করে সম্ভব? একজন মানুষ স্বপ্নের মধ্য়ে কি করছে সেটা আমরা কি করে জানব?” কুহেলী একটু গম্ভীর হয়ে বলল, “স্বপ্নে কি ঘটছে তা জানা যায় না ঠিকই, কিন্তু প্রমান করা যায় যে the person is conscious। স্বপ্নের সময় চোখের পাতা বন্ধ থাকলেও চোখের পাতার নিচে eye movement হয়। REM Sleep এর নাম শুনেছেন তো? Rapid Eye Movement। Fredrik তার experiment এর সময় তার Subject কে বলে রেখেছিলেন যে স্বপ্নের মধ্য়ে জেগে উঠলে চোখের movement এ pre-determined signal দেবে, যেমন ডান-বাঁ-ডান। তাঁর subject সেটা করে দেখিয়েছে”। অমোলবাবু বললেন, “হুঁ, বুঝলাম। কিন্তু সে লোক যে জেগে ওঠে নি তার কি প্রমান?” কুহেলী এবার একটু জোর দিয়ে বলল, “এই experiment পরে replicate করা হয়েছে। EEG brain scan করে প্রমান করে হয়েছে যে subject গভীর ঘুমে ছিল। এই নিয়ে অনেক research হয়েছে সারা পৃথিবী জুড়ে। আপনি internet এ Lucid Dreams search করলেই দেখতে পাবেন”। অমোলবাবু মজা করে হাত তুলে বললেন, “মানছি মানছি, you made your point”। রথীকান্তবাবু মন দিয়ে এদের কথা শুনছিলেন। বললেন, “আমাদের অতুলের মধ্য়ে এরকম rare ability আছে, ভাবাই যায় না। তোমার ব্য়াপারটা পরে ভাল করে শুনব। কিন্তু আমার একটু অমোলের সাথে business নিয়ে কথা আছে। তোমরা বস। আমরা একটু ওঘর থেকে দরকারি কথা সেরে আসি। চলো অমোল” বলে তিনি উঠে পড়লেন। অমোলবাবুও উঠে অতুলের দিকে একটা সুন্দর করে হেসে বললেন, “very nice to meet you অতুলবাবু” বলে রথীকান্তবাবুর সাথে চলে গেলেন। অতুলও একটু পরে উসখুস করে বলল, “আমিও তাহলে এবারে উঠি?” কুহেলী বাধা দিয়ে বলল, “সে কি, তুমি চলে যাবে? আমি তোমার স্বপ্নের ব্য়াপারটা detail এ শুনব বলে বসে আছি”। অতুল কিন্তু কিন্তু করে বলল, “মানে আটটা বেজে গেছে, আমাকে আবার জোকা অব্দি যেতে হবে”। রিনিদেবী বললেন, “কুহু, ছেলেমানুষি করিস না। আজ ওকে যেতে দে। পরে একদিন না হয় সময় করে এসে তোর সঙ্গে ভাল করে গল্প করে যাবে”। কুহু একটু চিন্তা করে বলল, “ঠিক আছে। তাহলে রবিবার চলে এস। পরের রবিবার তো আমরা বাড়িতেই থাকছি। তুমি দুপুর বেলা এই দুটো তিনটে নাগাদ চলে এসো না?” অতুল একটু কিন্তু কিন্তু করছিল। এমনিতে ওর অন্য় কোথাও যাবার নেই। কিন্তু এই বড়লোকেদের বাড়ীতে ও খুব একটা স্বস্তিবোধ করছে না। রিনিদেবী একটু জোর দিয়ে বললেন, “হ্য়াঁ হ্যাঁ, চলে এসো”। অতুল অগত্য়া রাজী হয়ে বেরিয়ে এলো। বাসস্টপে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল কুহেলী কিসব বলছিল। মাথাটা তখনো ভোঁ ভোঁ করছে। Rare ability না কিসব। ওর এই স্বপ্ন দেখার ব্য়াপারটা একটু অদ্ভুত সেটা অতুল অনেকদিন থেকেই জানে। কিন্তু তা নিয়ে এতদিন খুব একটা মাথা ঘামায় নি। এখন কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগল। কিসব Lucid Dreams বলছিল। Library তে দেখতে হবে কিছু বই টই পাওয়া যায় নাকি।

    দুই।।
    রবিবার দুপুরে কুহেলীদের বাড়ি বেশ তাড়াতাড়ি পৌছে গেল অতুল। জোকা থেকে গল্ফগ্রীনের দিকের একটা বাস পেয়ে গেল। আর রবিবার দুপুরের রাস্তা বেশ ফাঁকাই ছিল। কুহেলি অতুলের জন্য অপেক্ষা করে ছিল ওর ঘরে। বাড়ি ঢুকতেই একজন চাকর টাইপের মহিলা ওকে কুহেলির ঘর দেখিয়ে দিলো। কুহেলী অতুলকে দেখেই লাফিয়ে উঠলো “তুমি এসে গেছো? তোমার জন্যই বসে ছিলাম। আমি তোমার ব্যাপারটা আমার প্রফেসর আর ক্লাসের কয়েকজনকে বলেছি। কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না” অতুলও একটু আধটু পড়াশুনো করেছে এই কয়েকদিনে। কুহেলির সঙ্গে ব্যাপারটা আলোচনা করবে বলেই এসেছিলো কিন্তু কুহেলির কথা শুনে একটু চুপসে গেলো। ও ব্যাপারটা নিয়ে যে রকম সকলকে বলে বেড়াচ্ছে নিজেকে কেমন যেন একটা গিনিপিগ গিনিপিগ লাগছে। অতুল বললো কুহেলি আমি কিন্তু সবসময়ে ওরকম স্বপ্ন দেখি না। বেশিরভাগ সময়ই আর পাঁচজনের মতন স্বপ্ন দেখে ভুলে যাই। শুধু মাঝে মাঝে তুমি যেটাকে বললে lucid dream সেটা হয়” কুহেলি উঠে এসে অতুলের পাশে এসে বললো “হ্যাঁ একটু details এ বলো তো। কত frequently তোমার lucid dream হয়?” অতুল বললো “মোটামুটি rarely বলা যেতে পারে। কখনো কখনো মাসে একবার দুবার আবার হয়তো কখনো বছরে একবার। কি থেকে যে হয় জানি না”। কুহেলি একটা কাগজে note নিচ্ছিলো। তাতে অতুলের অস্বস্তিটা আরো বাড়লো।কুহেলি বললো “অতুল, describe করো তো এই lucid dreams এর সময়ে তোমার এক্সপেরিয়েন্স তা কেমন? আমি বইতে পরেছি ঠিকই কিন্তু ভালো করে বুঝতে পারি নি” অতুল একটু চিন্তা করে বলতে শুরু করল, ”দেখি, explain করার চেষ্টা করছি। এমনি সময় যখন স্বপ্ন দেখি সেটা একটা out of body experience এর মতন। মানে তুমি যেন একজন observer। একটা movie দেখছো। Movie টার উপর তোমার কোন control নেই। তাই তো? কিন্তু আমি যখন lucid dream এর মধ্য়ে ঢুকে যাই তখন আমার মনে হয় আমি যেন হঠাৎ করে স্বপ্নের মধ্য়েই জেগে উঠলাম। কেমন এক ঝটকায় যেন আমার normal sensation গুলো ফিরে আসে দেহের মধ্য়ে। হঠাৎ করে পায়ের তলায় মাটি, মাথার চুলের মধ্য়ে দিয়ে বাতাস বয়ে যাওয়া, এসব একদম normally feel করতে শুরু করি। ধর, তুমি স্বপ্নে দেখলে একটা দরজা। তার knobটা যখন ধরছি আমি হাতের মুঠোয় solid door knob টা একদম feel করতে পারছি। সব খুঁটিনাটি একদম real। অন্য় সময় সেটা হয় না”। কুহেলী মন দিয়ে শুনছিল। জিজ্ঞেস করল, “হঠাৎ করেই এটা চালু হয়?” “হ্য়াঁ, সাধারনত তার একটু আগে একটা feeling হয়। মনে হয় কেমন হাতের পাতা ঝিঁঝিঁ ধরতে চালু করে আর কেমন কানের তালা ছেড়ে গেলে যেমন লাগে সেরকম হয়। তারপরই..” কুহেলী বলল, “heightened sensation ফিরে আসে?” “হ্য়াঁ, আবার সবসময়ই যে তা হয় তেমন নয়। কখনো কখনো হয়ত তখন ঘুমটা ভেঙ্গে যায় বা আবার গভীর ঘুমে চলে যাই। কিন্তু যখন lucid dream চালু হয় তার আগে আমি বুঝতে পারি”। “আর তুমি যে বললে you get control over your dream, সেটা কি ব্য়াপার?” অতুল মুখটা রুমাল দিয়ে মুছে বলল, “হ্য়াঁ, সেটাই আসল ব্য়াপার। এমনি সময় স্বপ্নের মধ্য়ে কি ঘটছে তাতে আমার কোন হাত থাকে না। কিন্তু যখন lucid dream এ চলে যাই তখন যেন real life এর মতন আমি আমার স্বপ্ন explore করতে পারি। যেমন ধর আমি দেখলাম সামনে একটা ঘর। আমি ইচ্ছে করলে হেঁটে গিয়ে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে দেখতে পারি ঘরে কি আছে। আবার ইচ্ছে করলে তা না করে জানালা দিয়ে উঁকি দিতে পারি। হয়ত ঠিক বোঝাতে পারছি না।” কুহেলী বলল, “মনে হয় বুঝতে পারছি। It is like you are making conscious decisions in your dream। তুমি যে সেদিন video game এর কথা বলেছিলে এখন সেটা বুঝতে পারছি। তুমি একটা movie দেখেছ Inception বলে?” অতুল মাথা নেড়ে বলল “না” কুহেলী মৃদু হেসে বলল “সময় পেলে দেখে নিও। মুভিটা যতটা গাঁজাখুরি ভেবেছিলাম এখন দেখছি ততটা নয়।” দরজা খুলে রিনিদেবি একটা আর্দালি টাইপের লোক নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। লোকটার সাথে কিছু খাবারের বাটি আর প্লেট। রিনিদেবি বললেন “তোমরা একটু snacks খেতে খেতে গল্প কর। আর অতুল, শোন। তুমি যাবার আগে কুহুর বাবার সাথে একটু দেখা করে যেও। ওঁর তোমাকে কি যেন বলার আছে।” রিনিদেবি চলে যাবার পর একটা বাটি তুলে দেখল যে মাছের চপ দিয়েছে। মাছের চপ অতুল ভালই বাসে, গন্ধটাও দারুন। কিন্তু রথীকান্তবাবুর সঙ্গে দেখা করতে হবে শুনে মনটা একটু গুটিয়ে গেল। আবার কি বলবে রে বাবা। রবিবার আবার এসেছি বলে রাগ করবে না তো? কুহেলী খেতে খেতে চুপ করে ভাবছিল। এবার বাটিটা নামিয়ে প্রশ্ন করলো “আচ্ছা তোমার স্বপ্নগুলো কি নিয়ে দেখো?” অতুল এতক্ষণ এই ভয়টাই করছিলো যে কুহেলী একসময় না একসময় এটা জানতে চাইবে। অতুল প্রথমে ভেবেছিল কুহেলী জানতে চাইলে এড়িয়ে যাবে বা পুরো সত্যিটা বলবে না। পরে ভাবলো যে এর আগে কোনদিন কারুর সাথে এই নিয়ে কথা বলে নি। নিজের মনেই ব্যাপারটা চেপে রেখেছে। কুহেলী যদি নিজে থেকেই ব্যাপারটা জানতে চায়, বললে হয়ত মনটা হালকা হবে। তাছাড়া ওর চেনাশোনা psychologist প্রফেসর আছে। কি জানি হয়ত তার কাছ থেকে জেনে কিছু বলতে পারবে। একটু ইতস্তত করে বলল, “না মানে আমার এমনিতে স্বপ্নগুলো স্বাভাবিকই। মানে আর পাঁচটা লোকে যেমন দেখে তেমনই। কিন্তু lucid dream গুলো একটু অন্যরকম” কুহেলী বোধহয় সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরেছিল যে interesting কিছু ব্যাপার আছে। notebook এর পাতা উল্টে একটু উত্তেজিত গলায় বলল “ অন্যরকম মানে কিরকম? কোনো বিশেষ pattern আছে?” “ না, pattern ঠিক নয়। একটার সাথে একটার কোনো মিল নেই। কিন্তু কি বলব, স্বপ্নগুলো ঠিক peaceful নয়।” “peaceful নয় মানে? Violent?” অতুল মাথা নামিয়ে বললো “তুমি তো জানো আমার life একেবারে uneventful। আমি সাতে পাঁচে থাকি না। কিন্তু কোনো অদ্ভুত কারনে, কেন জানি না, আমার lucid dream গুলোয় কিছু না কিছু খারাপ ব্যাপার থাকে । খুন জখম। আরো অন্য কিছু। এ নিয়ে আমি বহুদিন অনেক ভেবেছি। কিন্তু কোনো কিনারা করতে পারি নি।” কুহেলী একটু অবাক গলায় বলল “তোমার স্বপ্নের সেসব violance তোমার জীবনের কোন কিছুর সাথে related?” অতুল মাথা নেড়ে বলল “একেবারেই নয়। একটা স্বপ্নের সাথে আর একটা স্বপ্নের কোনো মিল নেই । আর আমার জীবনের কিছু নিয়ে তো নয়ই। অদ্ভুত অদ্ভুত সব জিনিস, অদ্ভুত সব জায়গা। যেখানে আমি কোনদিন যাই নি। অনেকটা যেন আমি অন্য কারুর স্বপ্ন দেখছি। কুহেলী একটু ভেবে বলল “violent বললে, কিরকম মানে একটা উদাহরন দিতে পারবে?” এই প্রশ্নটাই এড়াবার চেষ্টা করছিল অতুল। প্রশ্নটার মুখোমুখি হয়ে আর মুখ দিয়ে কথা বেরোলো না অনেক্ষণ। বেশ অনেক্ষণ চুপ করে থাকতে দেখে কুহেলীও আঁচ করলো যে কিছু একটা অপ্রীতিকর ব্যাপার। ঘরের নিস্তব্ধতা প্রায় অস্বস্তিকর অবস্থায় পৌছে যেতে দেখে বাধ্য হয়ে অতুল মুখ খুলল। মাথা নিচু করে খুব মৃদু গলায় বলল, “একবার দেখেছিলাম একটা বড় ছুরি দিয়ে একটা লোককে আমি কুপিয়ে মারছি। আর একবার দেখেছিলাম একটা ঘরে তিনজন মানুষ, তার একজন একটা ছোট শিশু। আমি তাদের ঘরে বন্ধ করে দরজায় তালা দিয়ে রান্নাঘরে এসে জানালার পর্দায় আগুন ধরিয়ে দিলাম। তারপর গ্যাস খুলে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। সেই আগুনের তাপ আর বন্ধ দরজার পিছনের চিৎকার আমি আজ শুনতে পাই।” অতুলের গলা শুকিয়ে গেছিল। একটু চুপ করে জল খেলো। কুহেলীর মুখ হাঁ হয়ে গেছে ততক্ষণে। জলের গ্লাসটা নামিয়ে রেখে অতুল আবার শুরু করলো। খুব কষ্ট করে, খুব ধীরে ধীরে বলতে লাগলো, “কুহেলী, তোমাকে বলি নি, সেদিন তোমাদের বাড়ি থেকে ফিরে আমি রাতে আবার একটা lucid dream দেখি। জীবনে প্রথমবার এরকম বিভৎস স্বপ্ন দেখলাম। কেমন যেন একটা বিদেশী জায়গা। থাইল্যান্ড বা ওরকম কোনো জায়গা হবে। একটা বড় হোটেলের মধ্যে আমি। অনেক লোক। একটা dance floor। নিওন সাইন দপ দপ করছে। Green Lotus। চোখ ঝলসানো আলো। আমার আসেপাশে কতগুলো মেয়ে। খুব কম বয়স মেয়েগুলোর। তাদের সাথে আমি নাচছি। কান ফাটা মিউজিক। নেশায় আমার পা টলছে। চারিদিকটা কিরকম ধোঁয়া ধোঁয়া। তারপর ওদের মধ্যে দুজন মেয়ে কে নিয়ে আমি একটা রুম এ গেলাম। ভীষণ অল্প বয়স মেয়ে দুটোর। রুমে নিয়নের তীব্র আলো মাথার মধ্যে যেন শলা ঢোকাচ্ছে। সাদা সাদা গুড়ো কি একটা ড্রাগ আমি নাক দিয়ে টেনে নিলাম। আমার হাতে, সারা গায়ে কিরকম একটা পাশব ক্ষিদে। আমি ঝাঁপিয়ে পরলাম ওদের উপর। আমি .. ওদের চিৎকার, রক্ত আমার নখে .. আমি...” অতুলের গলা দিয়ে আর আওয়াজ বেরোলো না। ঘামে অতুলের জামা ভিজে গেছে। মুখের রক্ত সরে গেছে। মাথা নিচু করে শিউরে শিউরে উঠছে অতুল। কুহেলীর অবস্থাও প্রায় এক রকম। মুখে জমাট বিস্ময় নিয়ে অবাক চোখে অতুলের দিকে তাকিয়ে। হাতের নোটবুকটা খসে পরেছে। বহুক্ষণ দুজনের কেউই কথা বলতে পারল না। বেশ কিছুক্ষণ পর অতুল চোখ তুলে তাকালো। কুহেলীর মুখ তখন ফ্যাকাসে। অতুল দেখল কুহেলী এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অতুল আর্ত গলায় বলে উঠলো “জানি, আমার মনের মধ্যে হয়ত কোনো পাপ জমে আছে। তাই বোধয় আমি এইসব স্বপ্ন দেখি। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি জীবনে কোনদিন কারুর কোনো ক্ষতি করি নি। আমি কোনদিন violance এর ধারেকাছেও যাই নি। এসব শুধু স্বপ্ন আর কিছুই নয়। আমি খারাপ লোক নই কুহেলী, বিশ্বাস কর” কুহেলী সম্বিত ফিরে পেয়ে হাতের নোটবুক বন্ধ করে উঠে গিয়ে টেবিলের উপর দেখে দিল। তারপর ঘুরে দাড়িয়ে বলল “দেখ অতুল, আমি জানি না তুমি কেন এরকম স্বপ্ন দেখ। তবে একটা কথা বলতে পারি যদি কেউ এরকম violance বা criminal কাজের স্বপ্ন দেখে তবে এটা মোটেই প্রমান হয় না যে সে criminal। স্বপ্ন টা স্বপ্নই। তা সে এমনি স্বপ্নই হোক আর lucid dreams ই হোক। In fact, আমি পড়েছি যে নিরীহ nonviolent লোক violance এর স্বপ্ন দেখে কারন তারা violance নিয়ে sub-concious এ খুব বিচলিত থাকে। তাই স্বপ্নে violance ঘুরে ফিরে আসে। হয়ত তোমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই”। অতুল খানিক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে তারপর বলল “ঠিক বলেছো। খারাপ স্বপ্ন দেখলেই খারাপ লোক হয় না। জানো, আমি এর আগে ভয়ে কাউকে আমার স্বপ্নের কথা বলি নি। তোমাকেই প্রথম বললাম। তুমি please আর কাউকে বলো না”। কুহেলী বলল “Sorry, আসলে আমায় একদম expect করি নি যে তুমি এরকম স্বপ্নের কথা বলবে। তাই একটু shocked হয়ে গেছিলাম। ঠিক আছে, আমি কাউকে বলব না। কিন্তু তোমার case টা আগে যতটা ভেবেছিলাম তার থেকে অনেক বেশি interesting। আমার professor কে তোমার কথা বলেছি। তিনি তোমার সাথে কথা বলতে চান। তার কাছে তোমাকে একদিন নিয়ে যাব। তুমি please না করো না।” অতুল প্রায় নিশ্বাস বন্ধ করে কুহেলির কথা শুনছিল। একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বলল, “আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলবে। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার খুব ভয় আছে, জানো? তুমি হয়ত ঠিক বলছ, এর সাথে real life এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু স্বপ্নে এত real মনে হয় যে কি বলব। তুমি যখন বলছ তোমার professor এর সাথে দেখা করি। দেখি উনি হয়ত বলতে পারবেন আমার সমস্যাটা কি”। কুহেলী বলল “সমস্যা বলে ধরে নিচ্ছো কেন? professor মিত্র শনিবার করে ওর office এ ফ্রি থাকেন। আমাকে বলেছেন তোমাকে যেন নিয়ে আসি” অতুল উঠে দাড়িয়ে বলল “ঠিক আছে, তুমি যখন বলছ তখন যাব। তবে আমি এখন উঠি। যাবার আগে তোমার বাবার সাথে দেখা করে যেতে হবে।” কুহেলীও উঠে দাড়িয়ে বলল “হ্যাঁ, চল। তোমাকে drawing রুম এ নিয়ে যাচ্ছি।”
    বসার ঘরটা আগের দিন কেরকম দেখে গেছিল সেরকমই সাজানো গোছানো। অতুলকে বসিয়ে রেখে কুহেলী ভেতরে চলে গেল। বেশিক্ষণ বসতে হলো না। একটু পরেই রথীকান্তবাবু ঢুকলেন। অতুল উঠে দাড়িয়েছিল দেখে বললেন, “আরে বসো বসো। চা কফি কিছু দিয়েছে তোমাকে?” অতুল বসে বলল “হ্যাঁ, খেয়েছি ওঘরে।”
    “তা তুমি এসে ভালো করেছ, বুঝলে। রবিবার দিনটা কুহু বাড়িতে বসে বোর হয়। আর আমার তোমার সাথে একটা কথা ছিল। দেখা হয়ে গেল।” অতুল কিছু না বলে অপেক্ষা করতে লাগলো রথীকান্তবাবু কি প্রসঙ্গ তোলেন। রথীকান্তবাবু একটু থেমে বললেন,”তা কুহুর সাথে গল্প হলো? সেই স্বপ্ন নিয়ে বুঝি” রথীকান্তবাবুর গলায় কিছু একটা ছিল যাতে অতুলের মনে হলো যে উনি অন্য ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চান। কিন্তু ইতস্তত করছেন। অতুল বলল, “হ্যাঁ, কুহেলীর সাথে কথা হলো। কিন্তু আপনি বোধহয় অন্য কিছু নিয়ে কথা বলবেন ভাবছিলেন।” রথিকান্তবাবু হঠাৎ একটু সোজা হয়ে বসে দরজার দিকে একবার দেখে নিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ, একটা ব্যাপার নিয়ে তোমার সাথে কথা ছিল” স্বপ্নের প্রসঙ্গটা না তোলায় অতুল একটু স্বস্তি বোধ করলো। কিন্তু অন্য কি নিয়ে কথা থাকতে পারে ভেবে পেল না। রথীকান্তবাবু উঠে ওর পাশের সোফায় বসে বললেন, “আসলে তোমাকে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে” অতুল ভারী অবাক হয়ে বলল, “ আপনার কাজ! আমি করে দেব?” রথীকান্তবাবু গলা একটু নামিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি। তবে ব্যাপারটা একটু গোপনীয়” অতুল বলল “কি ব্যাপার বলুন তো?” “বলছি। তোমার সঙ্গে সেদিন অমোলের আলাপ হলো তো।” অতুল বলল, “হ্যাঁ, খুব ভালো ভদ্রলোক” “হ্যাঁ, তোমাকে বললাম না অমোল লোকাল কংগ্রেস পার্টির সঙ্গে জড়িত? আসলে আমার কোম্পানির একটা নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কথা চলছে।পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটা জেলায় অনেকগুলো স্কুল খোলার কথা। এই গ্রামের দিকে। বুঝেছ? কেন্দ্রসরকার থেকে কিছু ফান্ড যাবে আর রাজ্যসরকারও কিছু দেবে। আর কিছুটা capital আমাদের মতন বেসরকারী কোম্পানির। তা কেন্দ্রীয় সরকারর ব্যাপারটা অমোলের মাধ্যমেই হবে এরকম প্ল্য়ান। এই নিয়েই আগের দিন ওর সঙ্গে কথা হচ্ছিল” এইটুকু বলে রথীকান্তবাবু থামলেন। অতুল বুঝলো না এসব কথা তিনি ওকে বলছেন কেন। রথীকান্তবাবু অতুলের প্রশ্নটা আঁচ করে বললেন,”তুমি ভাবছ এর মধ্যে তোমাকে টানছি কেন। তাই তো? আসলে কি হয়েছে জানো, অমোলের সঙ্গে আমার এই প্রজেক্টটা করার খুবই ইচ্ছা। কিন্তু আমি কিছু গুজব শুনছি যে অমোলের সাথে কিছু questionable লোকের যোগাযোগ আছে। কিছুই না, politics এ থাকলে লোকজন এরকম একটু বাজে গুজব ছড়ায়। আমি মোটেও বিশাস করি না। তবু কি জানো তো, কোম্পানির খাতিরেই একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে হয়। নাম-কা-ওয়াস্তে একটা এনকয়ারী, বুঝলে না?” অতুল একটু ইতস্তত করে বলল, “আমাকে কি করতে হবে?” “কিছুই না, তোমাকে কালকে দুপুরে কফিহাউসে একবার যেতে হবে। যে খবর এসেছে তা হলো কাল দুটো থেকে তিনটের মধ্যে অমোল কফিহাউসে কয়েকজন লোকের সাথে দেখা করবে। অমোল এমনিতেই কফিহাউসে মাঝে মাঝে আসে। সেরকমই হয়ত। শুধু আমার কাছে খবর এসেছে বলে একটু দেখতে হবে। আমার লোকই পাঠাতে পারতাম। কিন্তু আমার লোকদের সবাইকে অমোল চেনে। বুঝতেই পারছ। তা তুমি তো ওদিকেই যাওয়া আসা কর। তুমি ওই সময়টা কফিহাউসে গিয়ে একটু বসবে। অমোল এলে একটু চোখ রাখবে। পরে আমাকে এসে একটু জানিয়ে দেবে, অমোল কারুর সাথে দেখা করেছিল কি না, করলে তাদের কিরকম দেখতে। এই আর কি” অতুল বলল “অমোলবাবু যদি আমাকে দেখতে পেয়ে যান?” রথীকান্তবাবু বললেন “খুব সম্ভবত অমোল তোমাকে দেখতে পাবে না। দেখলেও চিনতে পারবে না। মাত্র একটুক্ষনের জন্য তোমার সাথে আলাপ। আর চিনতে পারলেও কি, তুমি কফিহাউসে যেতেই পারো। তুমি তো ওইদিকেই কলেজে যাও। দেখো কাজটা সামান্য, কিন্তু তুমি পারিশ্রমিক পাবে” অতুল তাড়াতাড়ি বলল, “না না, ছি: ছি:, কি বলছেন” রথীকান্তবাবু অতুলের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন “আমার কাজ নয়, কোম্পানির হয়ে করছ কাজটা। এইরকম কাজে ঘন্টাপ্রতি হাজার করে দুই হাজার টাকা তোমার পাওনা হয়। তা তুমি সেটা নেবে না কেন? ওসব ছাড়। তুমি কালকে দুপুরে কফিহাউসে পৌছে যাও। তারপর বিকালে ফিরে এসে আমাকে ফোন করে জানিও কি দেখলে। আর আমি তোমার বাড়িতে চেক পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেব। আমার এখানের ফোন নম্বর জানো তো?” অতুল ঘাড় নেড়ে বলল “আচ্ছা আমি তাহলে উঠি। বাড়ি যেতে হবে” রথীকান্তবাবু উঠে দাড়িয়ে বললেন “সাবধানে যেও। আর কালকে ফোন করতে ভুলো না”
    অতুল কুহেলিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসস্টপের দিকে হাঁটা দিল। কুহেলী স্বপ্নের ব্যাপারে যা বলল সেটা নিয়ে ভাবার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু কুহেলীর বাবা অমোল বাবুর উপর spying করার যে কাজটা দিলেন সেটা শুধু মাথার মধ্যে ঘুরছে। কি করতে হবে বা কেন তেমন খোলসা করে বললেন না। অতুলের কেন জানি মনে হচ্ছিল রথীকান্তবাবু পুরো ব্যাপারটা বললেন না। কিছু একটা লুকিয়ে গেলেন। বাস এসে গেছিল। দৌড়ে বাসে উঠে পড়ল অতুল। রবিবার বলে বাস টা ফাঁকাই ছিল একটু। একটা সিটএ বসে অতুল ভাবলো, “যাক গে, কালকে বিকালে একটা ফোন করে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। দুহাজার টাকা পাওয়া যাবে। তাই বা মন্দ কি।

    তিন।।
    অতুল অমোলবাবুকে দেখতে পেল প্রায় ঘন্টা খানেক বসে থাকার পর। আর কিছু করার না থাকায় বসে বসে একটা বই উল্টে পাল্টে দেখছিল কফি খেতে খেতে। হঠাৎ চোখ তুলে দেখে অমোলবাবু আর একজন বেশ ভালো জামাকাপড় পরা লোকের সাথে কথা বলছেন কয়েকটা টেবিল দুরে। দেখেই চোখ নামিয়ে নিল অতুল। অমোলবাবুর সাথে চোখাচুখি হলে মুশকিল। রথীকান্তবাবুর খবর তাহলে মিথ্যে নয়। অতুল ভেবেছিল এমনি ভুয়ো খবর যাচাই করতে এসে ঘন্টা কয়েক কফিহাউসে কাটিয়ে দুইহাজার টাকা পেয়ে যাবে। অমোলবাবু যে সত্যি সত্যি এসে হাজির হবেন ভাবতে পারে নি। অতুল মাথা নামিয়ে মন দিয়ে বই পড়তে লাগলো না দেখার ভান করে। কিন্তু একেবারই না দেখে উপায় নেই। অমোলবাবু এসেই যখন পড়েছেন তখন সাথের লোকটার বর্ণনা রথীকান্তবাবুকে দিতেই হবে। অগত্যা অতুল খুব সাবধানে বইয়ের ফাঁক থেকে চোখ তুলে তাকাবার চেষ্টা করলো। বার দুয়েক দেখার পর মিনিট পনের বাদে তৃতীয়বার চোখ তুলে তাকাতেই অতুল সোজা হয়ে বসল। দেখল, অমোলবাবু সরাসরি ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন। ফ্যাকাসে মুখে অতুল হাসার চেষ্টা করল। অমলবাবু ঝুঁকে সাথের ভদ্রলোককে কি একটা বলে উঠে এসে সোজা অতুলের টেবিলে চলে এলেন। চেয়ার টেনে অতুলের উল্টোদিকে বসে বললেন “অতুলবাবু যে! কেমন আছেন?” উত্তরে অতুল কিছু জবাব না দিয়ে বোকা বোকা হাসলো। অমোলবাবু বললেন “তা আপনি এখানে?” “না, আমার কলেজ কাছেই, তাই মাঝে মাঝে এখানে আসি” “আমি এখানে বসলাম, আপনি আবার কাউকে expect করছিলেন না তো?” অতুল তাড়াতাড়ি বলল “না, না, আমি একাই বসে আছি” অমোলবাবু বড় করে হেসে বললেন “আপনার সাথে তো সপ্তাহ দুয়েক আগে আলাপ হলো Mr মল্লিকের ওখানে, তাই না? তারপর আপনার সাথে আর Mr মল্লিকের দেখা হয়েছে?” অতুল ঢোঁক গিলে বলল “কই না তো” অমোলবাবু একটা বাঁকা হাসি দিয়ে অতুলের চোখে চোখ দেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে টেবিলের উপর আঙ্গুলের টোকা দিতে লাগলেন কিছু না বলে। অতুল কিছু না বুঝতে পেরে ঘামতে লাগলো। অমোলবাবু হঠাৎ সামনের দিকে ঝুঁকে এসে খুব ঠান্ডা গলায় বললেন “অতুলবাবু, আপনি এখানে আমার উপর চোখ রাখতে এসেছিলেন, তাই না?” অতুল তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বলল “কই না তো! কি যা তা বলছেন?” অমোলবাবু হো হো করে হেসে বললেন “আরে বসুন বসুন! কোথায় যাচ্ছেন?” তারপর গলা নামিয়ে বললেন “আপনি এখানে এতক্ষণ একা একা বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিন কাপ কফিও খেয়ে ফেলেছেন। ঠিক কি না? আর আপনি যে গতকাল রথীকান্তর বাড়িতে গিয়েছিলেন সে খবরও আমার কাছে আছে। সুতরাং, আপনারা কি বলেন না, দুয়ে দুয়ে চার করতে অসুবিধা হলো না” অতুল কাঁদো কাঁদো গলায় বলল “অমোলবাবু, বিশ্বাস করুন...” অমোলবাবু থামিয়ে দিয়ে বললেন “আরে, ঘাবড়াবেন না। কোই বাত নেহী। আর একটা কফি খাবেন?” অতুল ঘাড় নেড়ে বলল না। “আসলে কি জানেন, রথীকান্তকে আপনি যা ভাবছেন তিনি তা নন। আপনাকে তো উনি বলেছেন যে আমার উপর চোখ রাখতে আর ওনাকে খবর পাঠাতে, তাই তো? আসল ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি একটা decoy” অতুল অবাক হয়ে বলল “decoy?” অমোলবাবু নিচু গলা ষড়যন্ত্রের সুরে বললেন “টোপ বোঝেন? টোপ? আপনি একটা টোপ। রথীকান্ত জানে আপনাকে দেখেই আমি চিনতে পারব আর বুঝতে পারব যে আপনি আমাকে spy করছেন। আর সেটা বুঝেই আমি আপনাকে চার্জ করব। আপনাকে নিয়ে busy হয়ে যাব। আর সেই সুযোগে রথীকান্তর আসল লোক আমার পার্টনারকে approach করবে” অতুল অবাক “আসল লোক,মানে?” অমোলবাবু ভুরু নাচিয়ে বললেন “সাবধানে আপনার ডানদিকে তাকান। ওই সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতি পরে লোকটা বসে থাকতে দেখছেন? আপনি লক্ষ্য করেন নি, ওই লোকটা আপনারও আগে থেকে এসে বসে আছে। ও রথীকান্তর লোক। ওর আমার পার্টনারকে encounter করার কথা” অতুল ভয় পেয়ে বলল “encounter মানে?” অমোলবাবু বললেন “না, না, আর কিছু নয়। ওকে approch করে ভয় টয় দেখিয়ে ভাঙিয়ে নেবার বা খবর আদায় করার চেষ্টা করবে। এই আর কি” অতুল বলল “তাহলে?” অমোলবাবু বললেন “আমার পার্টনার পুরো প্লান জানে। He disappeared long time ago। ওকে ধরতেই পারবে না” অতুল দেখল সত্যিই লোকটা আর নেই। অতুল ঢোঁক গিলে বলল “তাহলে আমি যাই?” অমোলবাবু চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে মধুর হেসে বললেন “আসুন। সাবধানে যাবেন। আর বুঝতেই তো পারছেন it is a very complicated matter। এর মধ্যে আপনি ভালোমানুষ নিশ্চই আর ভবিষ্যতে মাথা গলাবেন না। সোজা বাড়ি চলে যান। ভয় পাবেন না। আর রথীকান্তকে ফোন করার দরকার নেই। ঠিক তো? যান” বলে অমোলবাবু ঘুরে বেরিয়ে গেলেন। অতুল খানিক্ষণ হাঁ করে দাড়িয়ে থেকে কফিহাউস থেকে বেরিয়ে এলো। বাইরে এসে খেয়াল হলো, অতুলের গলা শুকয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে বাসস্টপের দিকে হাঁটা দিল অতুল।

    চার।।
    কুহেলী সেলফোনটা জোরে চেপে ধরে অন্য হাতে কান চাপা দিয়ে বলল, “কি? ভালো করে শুনতে পাচ্ছি না। এখানে খুব আওয়াজ। অতুল, আস্তে আস্তে বল। কে কাকে গুলি করেছে?” অতুল ক্যাম্পাসের বাইরে একটা ফোন বুথ থেকে ফোন করছিলো কুহেলীকে। উত্তেজিত গলায় চেঁচিয়ে কথা বলার জন্য বোধহয় কুহেলী ভালো করে ভুঝতে পারছিল না। অতুল আবার বলল “আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? আবার স্বপ্ন দেখেছি কাল রাতে। খুব খারাপ। দেখলাম আমি রিভলবার তুলে গুলি চালাচ্ছি রথীকান্তবাবুর দিকে। হ্যালো, কুহেলী?” ওপাশ থেকে কুহেলী খানিকটা শুনতে পেয়ে কিছুটা আন্দাজ করতে পারল অতুল কি বলছে। আবার স্বপ্ন দেখে প্রচন্ড উত্তেজিত। কুহেলী অতুলকে বলল মেডিকেল কলেজের ক্যান্টিনটায় দেখা করতে। মুখোমুখি কথা হবে।
    অতুল উল্টোদিকের চেয়ারটাতে বসতেই কুহেলী অবাক হয়ে বলল, “এ কি চেহারা হয়েছে তোমার। কি হয়েছে?” অতুলের চোখ লাল। রাত্রে বিশেষ ঘুম হয় নি। আবার দাড়িও কাটে নি। বলল “গত দু সপ্তাহে এই নিয়ে দুবার স্বপ্ন দেখলাম। এত ঘন ঘন এরকম আমার আগে কখনো হয় নি” কুহেলী বলল “ফোনে কি যেন বলছিলে স্বপ্নের কথা? কাকে যেন গুলি করেছ?” অতুল মাথার চুল খামচে ধরে একটুক্ষণ চুপ করে তারপর মুখ খুলল “হ্যাঁ, আমি স্বপ্ন দেখলাম আমি একটা রিভলভার দিয়ে গুলি করছি। কাকে জানো?রথীকান্তবাবু কে” কুহেলী চমকে উঠলো “কি বলছ তুমি?” অতুল মাথা নামিয়ে বলল, “হ্যাঁ, দেখালাম আমি রথীকান্তবাবুরকে গুলি করছি” কুহেলী ঘাবড়ে গেল অতুলের কথা শুনে। আগে বলেছে ঠিকই যে স্বপ্নের সাথে বাস্তবের সম্পর্ক নেই। কিন্তু বাবাকে গুলি করার স্বপ্ন দেখেছে অতুল। ব্যাপারটা সুবিধের ঠেকলো না কুহেলীর। দেখল অতুল বেশ ভেঙ্গে পরেছে। নিজের মনে বিড়বিড় করছে কি একটা। একটু সন্দেহের গলায় কুহেলী বলল “হঠাৎ এরকম কি হলো যে তুমি বাবাকে খুন করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলে? তোমার সাথে বাবা কয়েকদিন আগে কথা বলেছিল না?তোমাকে কি বাবা কিছু বলেছে?” অতুল খানিক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল “না, না, সেরকম কিছু নয়। উনি আমাকে অমোলবাবুর সাথে কালকে কফিহাউসে দেখা করতে বলেছিলেন। আমি কাল অমোলবাবুর সাথে দেখা করি। একটু কথা হয়। তারপর বাড়ি চলে আসি। এছাড়া আর কিছু নয়। সত্যি বলছি, এমন কিছু হয় নি যে রথীকান্তবাবুর উপর আমার কোনো আক্রোশ হবে” কুহেলী চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, “হ্যাঁ, বাবা অমোলবাবুর সাথে বিজনেস নিয়ে কি একটা কাজ করছে। লোকটাকে আমার তেমন ভালো লাগে না। কিন্তু তোমার এরকম কিছু sub-concious...” অতুল কুহেলীর কথার মাঝখানে বলে উঠলো “আমি তোমাকে বোঝাতে পারব কি না জানি না, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যে গুলি চালিয়েছে সে আমি নই” কুহেলী বলল “কি যা তা বলছ? এইমাত্র বললে যে তুমি স্বপ্ন দেখেছ তুমি বাবাকে গুলি করছ” অতুল একটু দমে গিয়ে বলল “হ্যাঁ, স্বপ্নে দেখলাম আমিই গুলি চালাচ্ছি, কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি বাঁহাতে রিভলভারটা তুললাম। দেখ, আমি তো left handed নই। আমি বাঁ হাতে বন্দুক তুলব কেন” কুহেলী জিজ্ঞেস করলো “আর কি দেখলে স্বপ্নে? গুলি ছোড়ার পর কি হলো” অতুল বলল “রাত্রিবেলা, অন্ধকার মতন। আমি হাতঘড়িটা দেখলাম। একটা গাড়ি এসে দাড়ালো। রথীকান্তবাবু নামলেন। আমি রিভলভার তুললাম। আর গুলির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল” কুহেলী বলল “ও এটা তোমার এমনি স্বপ্ন। Not one of your lucid dreams?” অতুল মাথা নেড়ে বলল “না”। কুহেলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “দ্যাখো অতুল, তুমি যা বললে এর থেকে বিশেষ কিছু বোঝার উপায় নেই। I don’t think there is much to worry about at this point। যদি এটা significant কিছু হয় তাহলে আমার ধারনা তুমি আবার দেখবে এই স্বপ্নটা। May be you will go into one of your lucid dreams। তখন আমরা এটার ব্যাপারে আরও কিছু জানতে পারব।ততক্ষণ ঘাবড়াবার কিছু নেই।তুমি বরং বাড়ি চলে যাও। You look very tiered। আমারও একটা ক্লাস আছে একটু পরে” কুহেলীর কথা শুনে অতুল আস্তে আস্তে উঠে পড়ল।

    ঘাড়ের পিছনটা কিছুক্ষণ ধরে কিরকম সিরসির করছিলো। আর কানের মধ্যে একটা ভোঁ ভোঁ শব্দ। হঠাৎ কানটা ছেড়ে দিয়েই কেঁপে টান টান হয়ে দাড়ালো অতুল। ঠান্ডা হাওয়ায় গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। বাতাসে হিম। চারিদিক অন্ধকার। দুরে শুধু একটা ল্যাম্পপোস্ট এর আলো মিটমিট করছে। বাতাসের ঝাপটায় বাসি রজনীগন্ধার গন্ধ নাকে এসে গা গুলিয়ে দিল। অতুল আশপাশটা চেয়ে দেখল। এদিক ওদিক কিছু বেতের ঝুরি ছড়িয়ে আছে। আর ফুল পাতার আবর্জনা ঢাঁই করে রাখা। মাথা ঘুরিয়ে দেখার সময় কিরকম যেন অন্য রকম লাগছিল সবকিছু। যেন সে হঠাৎ করে বেশ খানিকটা লম্বা হয়ে গেছে অতুল। কোথাও যেন কিরকম একটা গলদ। মনের মধ্যে একটা অশান্তি হচ্ছে। কে যেন আসবে। রথীকান্তবাবু? ডান হাত তুলে ঘড়িটা দেখল অতুল। কিন্তু ডান হাতে তো ঘড়ি পরে না ও। সব কেমন যেন একটু আলাদা। চারপাশটা মাথা ঘুরিয়ে দেখল। সারি দিয়ে কয়েকটা ঘুমটি দোকান। কিছু মাচা করা। পিছনে কালো অন্ধকারে আবছা দেখা যাচ্ছে হাওড়া ব্রিজ। অতুল বুঝতে পারল জায়গাটা হাওড়া ব্রিজ এর শেষের ফুলের বাজারটা। কিন্তু রথীকান্ত আসছে না কেন? That bastard! চোয়াল রাগে শক্ত হয়ে গেল অতুলের। আমাকে double-cross করা? লোকটাকে খবর দেওয়া হয়েছে ঠিক দেড়টার সময় এখানে আসতে। লোভ এত রথীকান্তর, ঠিক আসবে। আবার ঘড়ি তুলে দেখল অতুল। ২৫ শে জুলাই। দেড়টা বাজতে আর এক মিনিট বাকি। একটা গাড়ির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এদিকেই আসছে। পা চালিয়ে সামনের মোড়টার দিকে এগিয়ে গেল অতুল। ওই আলোর কাছটায়। ওখানেই নিশ্চই গাড়ি থামাবে লোকটা। মোড়ের দোকানের সামনে একটা মাচার স্টল। তার আড়ালে দাঁড়লো অতুল। গাড়িটা এসে থেমেছে ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে। এইবার। অতুলের বা হাতটা পকেটে চলে গেল। ঠান্ডা ধাতব হাতল। রিভলভার। আর সময় নেই। কিন্তু এখনো একটা কাজ বাকি। সমস্ত ইচ্ছাশক্তি জড়ো করে শেষ মুহুর্তে বাঁদিকে মাথা ঘোরালো অতুল। ল্যাম্পপোস্ট এর আলোয় দোকানের শো রুমের কাঁচে অতুলের ছায়া পরেছে। খয়রী রঙের পাঞ্জাবি পরে ।। কিন্তু মুখ? এত অতুল নয়.. এ তো .. অমোল ধীলোন! হঠাত ডানদিকে দরজার আওয়াজ হলো। রথীকান্তবাবু নামলেন। রিভলভার শুদ্ধ হাত পকেট থেকে বেরিয়ে এলো। চিৎকার। ধরমর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসলো অতুল। ঘামে সারা গা ভুজে সপসপ করছে। বুঝলো চিৎকারটা ওই করেছে নিজের অজান্তে। নাকে এখনো বাসী রজনীগন্ধার দুর্গন্ধ লেগে আছে।

    Dr. মিত্র চশমাটা খুলে কাঁচ মুছতে মুছতে বললেন “I haven’t heard of anyting like this before। This is impossible।” অতুল উত্তেজিত গলায় বলল “Impossible কি বলছেন! বিশ্বাস করুন আমি সত্যি বলছি। অমোল ধীলনের স্বপ্ন আমি দেখেছি” কুহেলী অধৈর্য গলায় বলল “আমি বুঝতে পারছি না, এটা কি করে বিশ্বাস করা যায়। কেউ অন্য কারুর স্বপ্ন দেখবে কি করে?” অতুল প্রায় মরিয়া হয়ে বলল “বলছি না আমি নিজের চোখে আমার reflection দেখেছি। সেটা আমি নই। অমোল ধীলন। বলছি না, lucid dream এ আমি যা দেখি আমি কিছু ভুলি না। তাছাড়া তোমাকে বলেছিলাম আমি left handed নই। জানো কে left handed? অমোল ধীলন। সব মিলে যাচ্ছে। বলছি না এটা একটা feelings যে আমি আমি নই। Sombody else। Dr. মিত্র, আপনি এরকম কোন কেস আগে শোনেন নি? এটা কি সত্যিই impossible?” Dr. মিত্র একদৃষ্টিতে অতুলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। বললেন “অতুল, তোমার lucid dream এর কথা শুনে আমি কুহেলিকে বলেছিলাম তোমার সাথে কথা বলব। কিন্তু সত্যি বলছি, তোমার কথা যদি সত্যি হয়, শুধু আমি কেন, খুব সম্ভবত তোমার মতন কেসের কথা কেউ কখনো আগে শোনে নি” অতুল হতাশ হয়ে বলল “তাহলে?” Dr. মিত্র ঝুঁকে অতুলের হাত ধরে চাপা উত্তেজনার গলায় বললেন, “We are well beyond established science, my friend। সুতরাং আমি জোর দিয়ে কিছু বলতে পারি না। কিন্তু আমার একটা wild speculation আছে। Hunch বলতে পারো। আচ্ছা, তার আগে একটা কথা বল তো? ভালো করে চিন্তা করে বলো। তুমি যে সব violent স্বপ্ন দেখো বললে সেগুলো কি স্বপ্নই, না কোনদিন সেগুলো বাস্তবেও ঘটেছে?” অতুল একটু ভেবে বলল “এমনিতে আমার ধারণা ওগুলো স্বপ্নই। কিন্তু আগে দুবার একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়েছিল। একবার আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম আমি একজনকে মারছি গলা টিপে। তার কয়েকদিন পরে আমাদের পাশের পাড়ায় একজন খুন হয়। গলা টিপে। যে মারা যায় তাকে আমি চিনতাম না। কিন্তু ছবি দেখেছি। সেই লোক, যাকে আমি স্বপ্নে দেখেছি। আর একবার। সেটা খবরের কাগজে পড়ি। ঠিক যেরকম স্বপ্ন দেখেছিলাম সেরকম ভাবে একটা murder হয়েছে। আমি প্রথমে বেশ ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু পরে ভেবেছিলাম এটা coincidence। কেন Dr. মিত্র? আপনি কি বলছেন আমার স্বপ্নের মধ্যে কোনো বিশেষ ক্ষমতা আছে? ভবিষ্যতবাণী?” Dr. মিত্র মাথার চুলে আঙ্গুল চালাতে চালাতে বললেন, “অতুল, তুমি যে last caseটার কথা বললে এটা কি সম্ভব যে তুমি খুনির সংস্পর্শে এসেছিলে কখনো?” অতুল একটু চিন্তা করে বলল “হতে পারে। খবরে পরেছিলাম লোকটা কলেজ স্ট্রিট এ কাজ করত। আমার তখন ওই অঞ্চলে বেশ যাতায়াত ছিল” Dr মিত্র লাফিয়ে উঠলেন “Oh my god! This can’t be! না অতুল, ভবিষ্যতবানী করা সম্ভব নয় কোনভাবেই। আমি unscientific কিছুতে বিশ্বাস করি না। কিন্তু তুমি যদি সত্যি বলে থাক তাহলে I have a theroy যা অবিস্বাস্য় হলেও হয়ত অসম্ভব নয়” কুহেলী বলল “What do you mean, sir? আপনি বলছেন এর কোনো scientific explanation আছে?” Dr. মিত্র ঘুরে দাড়িয়ে জিগ্গেস করলেন, “Have you heard of Mirror Neurons, কুহেলী?” কুহেলী মাথা নাড়ল। Dr. মিত্র বললেন “জানার কথাও নয়। এটা neuroscience এর জগতে একটা একেবারে নতুন আবিস্কার। আমি University of California, San Diego র Dr. V. S. Ramachandran এর সাথে অনেক দিনে কাজ করেছিলাম। তিনি এই বিষয়ে pioneer বলতে পারো। সেই সুবাদে আমি একটু আধটু জানি। এই কয়েক বছর আগে ২০১০ সালে মানুষের ব্রেন এ inferior frontal cortex, মানে ব্রেন এর সামনের দিকে কিছু special neuron আবিস্কার হয়। তার কিছুদিন আগে বাঁদরের ব্রেন এও এটা আবিস্কার হয়েছিল, কিন্তু মানুষের ব্রেনে এই neuron অনেক বেশি উন্নত। এই special neuron এর নাম mirror neuron। কুহেলী, তোমার কি কোনদিন এরকম হয়েছে যে তোমার সামনে কেউ হাতে ছ্যাঁকা খেলো আর তুমি লাফিয়ে উঠলে। এক মুহুর্তের জন্য তোমার মনে হলো যেন তোমার নিজের হাতে ছ্যাঁকা লাগলো।” কুহেলী বলল “হ্যাঁ, এরকম তো মাঝে মাঝেই হয়।” Dr মিত্র বললেন “বিজ্ঞান সন্দেহ করছে, এর জন্য দায়ী mirror neuron। Mirror neuron অদ্ভুত ক্ষমতায় অন্য মানুষের ব্রেন এর থেকে আবেগ, অনুভূতি, চিন্তা, motor actions তোমার ব্রেইনে এনে দেয়। অনেকটা telepathyর মতন। মানুষ হচ্ছে একমাত্র জন্তু যে অন্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চিন্তা করতে পারে। অনুভূতি আদান প্রদান করতে পারে। যাকে বলে empathy। এটা খুব বড় evolutionary advantage। এই কারণেই মানুষ অন্য জন্তুদের থেকে উন্নত” Dr মিত্র দম নেওয়ার জন্য থামলেন। সেই সুযোগে অতুল বলে উঠল, “কিন্তু এর সাথে আমার স্বপ্নের সম্পর্ক কি?” Dr মিত্র বসে পরে বললেন, “বলছি। দেখ আর সব কিছুর মতই এই mirror neuron বিভিন্ন মানুষের কম বেশি sensitive হয়। Neuroscientist দের ধারণা, mirror neuron ঠিক মতন কাজ না করলে এর থেকে autism হয় আর যারা phychopath হয় তাদেরও এই mirror নিউরনের সমস্যা থাকে। They don’t have empathy। আবার খুব rare কেস-এ দেখা গেছে কিছু মানুষের এই mirror neuron খুব sensitive হয়। Norway-র এক মহিলার এরকম একটা rare case। তিনি ঘর থেকে বেরোতে পারেন না, কারণ অন্য কাউকে দৌড়াতে বা পড়ে যেতে দেখলে তার mirror neuron এত active হয়ে যায় যে তার মাথা ঘুরতে থাকে। অতুল, তোমার মতন কেস আমি আগে কখনো শুনি নি কিন্তু আমার ধারণা your mirror neurons are also hyper-sensitive। তুমি গতকাল অমোলবাবুর সাথে দেখা করেছিলে বললে না? দেখ মানুষ যখন কোন extreme act করার plan করে তখন subconcious এ সেটা নিয়ে বার বার চিন্তা করতেই থাকে। হয়ত তোমার mirror neuron can catch those thoughts better than anyone else। হয়ত এটা অসম্ভব নয় যে অমোল ধীলন লোকটা সত্যিই একটা murder করতে চলেছে and you picked it up subconciously। তারপর সেটা তোমার স্বপ্নে ফুটে ওঠে। কুহেলী আর অতুল এতক্ষণ হাঁ করে শুনছিল। Dr মিত্র থামতেই কুহেলী বলল “Sir, এতো Science Fiction! এ কি বিশ্বাস করা সম্ভব? আমার তো মনে হয় এ স্বপ্নের কোনো মানে নেই” অতুল এতক্ষণ কিছু বলে নি। এবার মরিয়া হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল “এ সম্ভব কি অসম্ভব সেটা জানার একটাই উপায় আছে। আমি দেখেছি ঘড়িতে আজই রাত দেড়টার সময় ঘটনাটা ঘটতে চলেছে। জায়গাটা কোথায় সেটাও আমি বুঝতে পেরেছি। আমি আজ রাতে হাওড়া ব্রিজের কাছের ফুলের বাজারে রাত দেড়টা অব্দি দেখব। যদি কিছু না ঘটে তবে তো মিটেই গেল। কিন্তু আমার মন বলছে অমোলবাবু একটা কিছু করতে চলেছেন” Dr মিত্র বললেন “কি বলছ তুমি। এটা খুব রিস্কি হয়ে যাবে না? যদি সত্যি সত্যি ওখানে একটা murder হয়? আমার মনে হয় তোমাদের পুলিশে যাওয়া উচিত” অতুল মাথা নেড়ে বলল “কোনো লাভ নেই। পুলিশকে কি বলব, একটা স্বপ্ন দেখেছি? হেসে উড়িয়ে দেবে। আমাকে যেতেই হবে। এই রিস্কটা আমাকে নিতেই হবে” কুহেলী বলল “বেশ দেখা যাক। আমিও যাব” অতুল চমকে উঠে বলল “কি বলছ কুহেলী! এত রাতে তুমি ওখানে যাবে?” কুহেলী বলল “হ্যাঁ, আমার বাবাও যখন এই গল্পে জড়িত আছে তখন আমাকেও যেতে হবে। আমি বাড়িতে জানিয়ে দিচ্ছি আমি বন্ধুর বাড়িতে রাতে থাকছি। তুমিও ওখানে চল। একটার মধ্যে হাওড়া ব্রিজ পৌছাতে হবে” Dr মিত্র নার্ভাস গলায় বললেন “কুহেলী, be very careful!”

    কোনার দোকানটা চিনতে সময় লাগলো না অতুলের। সেই শোরুমের কাঁচ। উল্টো দিকে মাচার স্টল। এক পাশে ল্যাম্পপোস্ট। ল্যাম্পপোস্টের আলো সেইরকম মিটিমিটি করে জ্বলছে। বাকি জায়গাটা অন্ধকার মতন। দেড়টা বাজতে মিনিট পনেরো বাকি। অতুল আর কুহেলী পৌছেছে প্রায় মিনিট দশেক আগে। ঐ ল্যাম্প পোস্ট এড়িয়ে একটু দুরে একটা ফেলে রাখা ঠেলাগাড়ির পিছনে জায়গা করে নিয়েছে ওরা। ওখান থেকে দোকানটার দিকে চোখ রাখা যায়। অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। অতুল বার বার ঘড়ি দেখছিল। কুহেলী মুখে কিছু বলছে না কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে যে দেড়টা বাজলেই ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরী। একটা কুড়ি। অতুল ছটফট করতে লাগলো। একটা পঁচিশ। অতুলের উত্তেজনা কুহেলীর মধ্যেও ছড়িয়ে পরেছে। একটা সাতাশ। একটা আওয়াজ পেল ওরা। গাড়ি। এদিকেই আসছে। বাঁক ঘুরে একটা নীল রঙের গাড়ি ওদের ক্রস করলো। কুহেলী প্রায় লাফিয়ে উঠল “আমাদের গাড়ি”। অতুল কুহেলীর কাঁধ ধরে ওকে বসিয়ে দিল। গাড়িটা আস্তে হয়ে গিয়ে ঐ ল্যাম্পপোস্টের কাছে দাঁড়ালো। কুহেলী উত্তেজনায় অতুলের কাঁধ খামচে ধরেছে। অতুল কান খাড়া করে শুনতে পেল আবছা পায়ের আওয়াজ। এবারই... হঠাৎ কলার খামচে পিছন দিকে একটা টান অনুভব করলো অতুল। কুহেলী রুদ্ধশ্বাস গলায় বললো “অতুল, তুমি তোমার স্বপ্নের সেই হোটেল তার নাম green lotus বলেছিলে না?” অতুল অবাক হয়ে বলল “হ্যাঁ, থাইল্যান্ডে। কেন?” কুহেলী ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল “ঠিক করে মনে কর .. dream lotus নয় তো? I need to know! Now!” অতুল কুহেলীর মূর্তি দেখে ঘাবড়ে গেল। চোখ বুঁজে একটু মনে করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কুহেলী ঠিকই বলেছে “dream lotus”। কুহেলীর নখ অতুলের হাত খামচে ধরেছে “থাইল্যান্ড নয়, ইন্দোনেশিয়ায় বাবার হোটেল আছে dream lotus. তুমি যেদিন এলে সেদিনই বাবা ইন্দোনেশিয়ার ট্যুর থেকে ফিরল” কুহেলীর নখে অতুলের হাতে প্রচন্ড লাগছে। অতুল মরিয়া হয়ে বলল “কুহেলী আমি অমোলবাবুর পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি, আর সময় নেই। তোমার বাবাকে সাবধান করতে হবে” কুহেলী আস্তে আস্তে মাটিতে বসে পড়ল যেন পায়ের জোর হারিয়ে ফেলেছে “তার মানে তুমি স্বপ্নে যা দেখেছ সব সত্যি! বাবা ওই হোটেলে ...” অতুল প্রানপনে কুহেলী কে টেনে তোলার চেষ্টা করতে লাগলো। “আর সময় নেই! আর একদম সময় নেই কুহেলী!”

    পিছন থেকে কান ফাটানো গুলির শব্দ রাতের নিস্তব্ধতা চুরমার করে দিল।

    ---------ooooo---------
  • supratim | 141.107.159.46 | ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৫:০০370390
  • এই প্রথম গুরুচন্ডালিতে পোস্ট করলাম। লেখাটা পরে একটু মতামত জানালে খুবই খুশি হবে।
  • | ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ১৪:২৪370391
  • পড়লাম। অসম্ভব ইন্টারেস্টিং প্লট। আমার রীতিমত পছন্দ হয়েছে।
    দুটো কথা।
    ১) বানানের দিকে নজর দিন। বহুবার মনে হয়েছে দুত্তোর ছেড়ে দিই, এত্ত বিকট বানান আর পারছি না। পোস্ট করার আগে ভাল করে বানানে চোখ বুলান। হতে পারে হয়ত গুরুচন্ডা৯ ফর্ম্যাটে লিখেচেন বলে সমস্যা হয়েছে, কিন্তু প্লীজ্জ নজর দিন।
    ২) এই গল্পটা আরেকটা মাজাঘষা দরকার।

    লিখে যান। আগ্রহ নিয়ে পড়ব।
  • পাই | 24.139.221.129 | ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ১৪:৩৮370392
  • আমি পড়ছি।
  • T | 129.74.180.59 | ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ১৪:৪৯370393
  • মতামত দিই। আপনি কিছু কিছু শব্দ যদি ইংরেজি অক্ষরে না লিখে পুরোটাই বাংলাতে লেখেন, মানে বাংলা হরফে, তো পড়তে সুবিধে হয়। চোখে আটকায় না। প্লটটা অত্যন্ত প্রেডিক্টেবল। মিরর নিউরনের সাথে কারোর সাবকনশসাস মাইন্ড রিড করার কানেকশনটা খুব উইক লাগল।
  • dc | 132.174.121.75 | ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ১৬:১৯370394
  • খারাপ লাগলো না, তবে বড্ডো বেশী ইংরেজি ব্যাবহার হয়েছে। পুরোটা বাংলায় লিখলে মনে হয় আরো স্বচ্ছন্দে পড়া যেত। চুপ চুপি বলি, সাংরিয়া আমারও খুব প্রিয় ড্রিংক, আর আমিও অনেক সময়ে ওরকম ভিভিড স্বপ্ন দেখে সারা দিন সেটা নিয়ে ভাবি। তাই গল্পটা পড়তে খারাপ লাগেনি। তবে ভেবেছিলাম প্লট ট্যুইস্ট হিসেবে Fallen এর মতো কিছু একটা থাকবে, মানে এই ধরনের গল্পের শেষটা আরেকটু অন্যরকম করা যায় আরকি।
  • dc | 132.174.121.75 | ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ১৬:২২370395
  • মানে বলতে চাইছি গল্পের প্রেমিসটা যতোটা ভালো, শেষটা অতোটা নয়। রথীকান্ত একাই ডুবিয়ে দিয়েছে ঃ)
  • | ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ১৬:৪৯370396
  • *আরেকটা নয় আরেকটু। আরেকটু মাজাঘষা দরকার
  • Supratim | 141.107.159.143 | ২০ নভেম্বর ২০১৭ ২২:১৭370397
  • লেখাটা পড়ে মতামত দিলেন তাতে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আশা করি নি যে এতো ভালো ভালো লেখার ভিড়ে কেউ পড়ে দেখবে। যে যে কথা গুলো বললেন, অবশ্যই মনে রাখবো পরের লেখার সময়।
  • Supratim | 141.107.159.143 | ২০ নভেম্বর ২০১৭ ২২:২৩370388
  • "মিরর নিউরনের সাথে কারোর সাবকনশসাস মাইন্ড রিড করার কানেকশনটা খুব উইক লাগল।" - হ্যাঁ, ধরা পরে গেছি :) নাঃ, সাবকনশসাস মাইন্ড রিড করার কোনো সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা নেই, এই গল্পের খাতিরে একটু smoke and mirror আর কি
  • Du | 182.58.104.166 | ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩১370389
  • পড়ে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন