এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কেটে যাওয়া সুতো

    Swati
    অন্যান্য | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১১৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Swati | 127.194.33.146 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৬:১৮368991
  • পেটকাটি চাঁদিয়াল মোটেই চিনতাম না। আদতে চিনতাম না কোন ঘুড়ি-ই। এক সঙ্গে বড় হওয়া চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। দাদাভাই আমার থেকে দশ বছরের বড়। তাই প্রায় সবসময়-ই থাকতাম দুধ- ভাত হয়ে। ঘুড়ি ওড়ানো তেও তার ব্যত্যয় হত না। তাই ঘুড়ি যখন খেলিয়ে খেলিয়ে মধ্য-আকাশে, আশে পাশে চোরাগোপ্তা আক্রমণের ভয় নেই, তখন আমার হাতে দয়া করে তুলে দেওয়া হত লাটাই। টান টান সুতোর আগায় নির্ভার ভেসে থাকা ঘুড়ি। শুধু একটি সরু অথচ ধারালো সুতোর টানে সে বন্দী।

    প্রাক-বিশ্বকর্মা-পুজো প্রস্তুতি পর্ব ছিল বেশ জটিল। বিশেষ ভাল মনে নেই যদিও। তবে কাঁচের শিশি বোতল জড়ো করা হত। ভাদ্র মাসের গোড়া থেকেই শনি-রবি বার একটু বেলার দিকে হামানদিস্তার ঠং ঠং শব্দ উঠত বাড়িতে। কাঁচের গুঁড়ো তৈরি হচ্ছে, গুঁড়ো হওয়ার পরে তাকে নরম কাপড়ে চেলে মিহিন করতে হবে। নাঃ সেই বয়সে আমাকে হামানদিস্তায় হাত দিতে কেউ দিত না। তবে পাশে বসে থাকতে দিত সেই ঢের। মাঝে সাঝে টুকটাক ফাই ফরমাশ খাটতে ডাকলে তো আহা! টেপ ফ্রকের তো আর কলার হত না সে যুগে। আর কখনো-সখনো যখন কেউ ক্ষমাঘেন্না করে বলত "আয় কাঁচের গুঁড়ো ছাঁকার ন্যাকড়া টার কোণা ধরে বসবি আয়" - ওঃ জীবনটা সেদিন জীসাসের হেভেন- হেভেন লাগত। তারপর সেই কাঁচের গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি হত মাঞ্জা। সুতোর গায়ে পরতে পরতে লাগাতে হবে এবার রং বেরং এর মাঞ্জা। এই তৈরি হল ঘুড়ি কাটাকুটি যুদ্ধের আয়ুধ।

    না হয় হলেই প্রাণের বন্ধু, নিত্য ক্যারম খেলার সঙ্গী, অন্য বাড়ির ছাদ থেকে যখন তোমার ঘুড়ি উড়েছে, তখন তো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলতেই হবে। আর সত্যি বলতে কি যে কোন war-cry এর মত সেই এ ছাদ -ও ছাদ মিলিয়ে ওঠা সমবেত ভো-কাট্টা শব্দ শরীরে আড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়িয়ে দিত নিশ্চয়। যারা এই খেলার মূল হোতা, তার ব্যস্ত হয়ে পড়ত ঘুড়ি কাটতে, ঘুড়ি বাঁচাতে। আর সেই দুধু-ভাতু আমি অবাক হয়ে দেখতাম কেটে যাওয়া ঘুড়ি গুলি, তোমার ছাদেরই হোক বা আমার ছাদের, কেমন ভাসতে ভাসতে নেমে আসছে। কারোর ল্যাজে বাঁধা অল্প সুতো, কেউ বা অনেকটা সুতোর মালকিন। প্রথম যখন আকাশে ওঠে সবাই ছিল ঝকঝকে, নতুন - এখন কেউ গিয়ে পড়ল জলকাদায় - নেতিয়ে ভিজে চুপ্পুস, কেউ বা হাওয়ার টানে ছিঁড়ে ফরদাফাই, কেউ বা উড়তে উড়তে গিয়ে পড়লো অন্য কারোর হাতে, সেখান থেকে সোজা বাতিল কাগজের বান্ডিলে - কদর বোঝে এমন মানুষের হাতে পড়লে অবশ্য পেলেও পেতে পারে নতুন জীবন, নতুন সুতোর সওয়ারি হয়ে আবার আকাশ পাড়ি...

    তখন বুঝি নি, এখন বুঝি - এই তো জীবন কালিদা! ওই দেড় মিনিটের জীবন নিয়ে এত কচকচি!
  • অরিজিৎ গুহ | 57.15.15.26 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৬:২১368992
  • অফিসে প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে আলাদা আলাদা করে বিশ্বকর্মা পুজো হয়।আমাদের ডিপার্টমেন্ট ছড়ানো ছিটানো হলেও কেন্দ্রীয় ভাবে একটা জায়গায় করা হয়, কিন্তু সেখানে আমরা অনেকেই যেতে পারি না আমাদের স্টেশন ছেড়ে।যাদের সেদিন অফ ডিউটি থাকে তারা হয়ত যায়, কিন্তু ডিউটি থাকলে আমরা যেতে পারি না।এমার্জেন্সি বলে ২৪ ঘন্টাই আমাদের ম্যানিং রাখতে হয়।তাই আমরা নিজেদের মত করে আমাদের স্টেশনেই সেদিন একটা খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করি।সেই মত আজ রাতে স্টেশনে আমাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা।মাংস কেনার ভার পড়েছে আমার ওপর।পার্কসার্কাসের মাংস বিখ্যাত বলে আমাকেই মাংস কিনে নিয়ে যেতে হবে।সকালে মাংসের দোকানে গেছি, দেখি বিরাট লাইন।বাজারের কয়েকটা জায়গায় পুজো হচ্ছে দেখলাম। প্রায় প্রত্যেকেই নিজেদের কারখানার পুজোর জন্য মাংস নিতে এসেছে।মোটামুটি আমিই কম পরিমাণে নিচ্ছি।বাকি যারা নিচ্ছে কেউ কুড়ি কেজির কমে নিচ্ছে না।লাইনে দাঁড়ানো একজন ফোনে কাউকে বলছে পুজো হয়ে গেলেই যেন বিরিয়ানির মাল মশলা সব রেডি করে রাখে।মাংস এলেই যাতে সাথে সাথে বিরিয়ানির হাড়ি চড়িয়ে দেওয়া যায়।কোহিনূরের মাংস মোটামুটি সিরাজ আর্সালান জিশান সহ সব বড় বড় হোটেলেই সাপ্লাই হয়।সাদিক ভাইয়ের মাংস কাটার হাতও দারুণ।অবলীলায় এত ভিড় সামাল দিয়ে দিতে পারে। মাংস নিয়ে ফেরার পথেই বন্দি হলাম বন্ধুদের হাতে।পাড়ায় চাঁদা তুলতে বেরোতে হবে।পুজোর আর বেশি দেড়ি নেই।প্রথমে ইউনিস দর্জির দোকানে গেলাম।আগেরবার ২০০ টাকা চাঁদা ছিল।এবার বাড়াতে চাইলাম, বলল না বাবারা, বাজারের অবস্থা খুব খারাপ।আগের অ্যামাউন্টটাই রেখে দাও।বললাম, তোমরা পুরনো লোক, তোমরা যদি এরকম করো কি করে পুজোটা করি বলো তো।আমাদেরও তো অবস্থা খুব খারাপ।লোকজন নেই চাঁদা তোলার।তোমরাই তো দেখবে।এরকম খেজুরে গল্পের সাথেই বিল কাটা চলছে।আশেপাশের দু একজনকেও বিল কেটে দিলাম।ইউনুস ভাই বলল, আগেরবার কিন্তু ভোগ দিয়ে গেলে না।এবার দিয়ে যেও।খুব লজ্জা লাগল।আসলে অষ্টমির দিন এত ব্যস্ততা থাকে, সবাই ভোগ পেলো কিনা সেটা ঠিক মত দেখা আর হয়ে ওঠে না।সেটা তো আর বলা যায় না, উলটে বললাম, তোমাকে তো ভোগ দিয়ে যাব না।একদিনও প্যান্ডেলে দেখা পাওয়া যায় না, আগে প্যান্ডেলে আসবে তারপর ভোগ দেব।বলল, দোকান ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই।যে ছেলেটাকে রেখেছিলাম ও কাজ ছেড়ে চলে গেছে।কি করে যাই বলো তো।বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে, ভোগ নাহয় দিয়ে যাব, তবে দেখো যদি পারো তো এসো পুজোতে।হ্যা হ্যা, সময় পেলে নিশ্চয়ই যাব বাবারা।এই বলে উঠে এলাম।আরো অনেকগুলো জায়গায় যেতে হবে।এর মাঝেই দেখি পাশের গলির মুখে এবারও বিশ্বকর্মা পুজো হচ্ছে।এই গলিটার একটা বিশেষত্ব আছে।তার আগে অন্য একটা ঘটনা বলি।কদিন আগে অমিত শা এয়ারপোর্ট থেকে নেমে পার্ক সার্কাস ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময়, কিছু বিজেপির ছেলেপিলে সেভেন পয়েন্টে এসে ঝামেলা করে।উত্তেজনা তৈরি করার জন্যই ঝামেলাটা করা।পার্ক সার্কাসে নাকি জেহাদিরা অনেক অত্যাচার চালাচ্ছে।হিন্দুদের জোর দেখাতে হবে এখানে।প্রথমে পার্ক সার্কাসের তথাকথিত 'জেহাদি' রা কিছুই করে নি।চুপচাপ দেখে যাচ্ছিল।এরপর যখন রাস্তার গাড়ি বাইকে থামিয়ে ঝান্ডার লাঠি দিয়ে গাড়ির বনেটে আর বাইকের চাকায় মারতে মারতে শুরু করে তখন পাড়ার 'জেহাদি' ছেলেরা আসরে নামে।নামার পরই ওই তিরিশ পয়তিরিশ জন বীর হিন্দু যোদ্ধা পলায়ন করে।পাড়ার ছেলেদের বেশিরভাগই ছিল ওই গলির ছেলে যেখানে বিশ্বকর্মা পুজোটা হচ্ছে।ওই একই জায়গায় ঈদের সময় লাইট দিয়ে সাজিয়ে লাউড স্পিকার চালিয়ে গান বাজানো হয়, দরমা দিয়ে খাজা বাবার দরগা তৈরি করে খাজা বাবার 'পুজো' করা হয়।পাশেই শিব মন্দিরে রোজ সকালে শিবের মাথায় জল ঢালা হয় আর ওই গলির মুখেই আমাদের দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল।শিব মন্দিরটার পাশেই একটা ঝালাইয়ের দোকান আর পুরনো লোহা লক্কর আর ঝড়তি পড়তি মাল বিক্রির দোকান আছে।বিশ্বকর্মা পুজোটা ওরাই করে।পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিকেলের দিকে সবাই চার্জ আপ হয়ে সন্ধ্যে বেলা লাউড স্পিকার চালিয়ে নাচ আর গান শুরু হবে।যে সমস্ত জেহাদিরা সেদিন বিজেপির কজনকে শান্ত করেছিল, মূলত তারাই থাকবে ওই নাচা গানার পাবলিক।
    কেন লিখলাম এই কথাগুলো? এমনি এমনিই লিখতে ইছে হল তাই।এতদিন ধরে আছি, আগে কখনো এসব নিয়ে লিখতে হবে ভাবিই নি।আজ ইচ্ছে হল তাই লিখলাম।
  • Du | 7845.184.1256.215 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২২368993
  • হ্যাপি গনেশ চতুর্থীর চোটে তুমি চলে যাওনি তো একা একা বিশ্বকর্মা পুজো?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন