এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • উদয়নীল ভট্টাচার্য

    Udaynil Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৭ অক্টোবর ২০১৭ | ২১৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Udaynil Bhattacharya | ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ২৩:৩৬368478
  • -চুবাইছিলি কেনে?
    -চুবাইনি তো বিবিজান, স্কুবাইছিলাম, ইয়ে জলতলে ভ্রমণ।
    -সাতপাক উল্টোপাক জানা আছে?
    -সাতপাক উল্টোপাক?
    -ডিভোর্স , বিবাহ বিচ্ছেদ (পাশ থেকে উৎসাহীরা)
    -ইয়ে হ্যাঁ।
    -দ্বিতীয় পাক কি?
    - স্ত্রী কে সমস্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করা।
    - আর পঞ্চম পাক?
    -যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি ।
    -সেটা কি হয়েছিল?
    - ইয়ে না মানে...
    -উমম, এর পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে , হাত বেঁধে, কোনো মাস্ক না দিয়ে জলের ভেতর ছেড়ে দিয়ে আয়।
    আর আমি তলিয়ে যেতে থাকি। দমবন্ধ হয়ে যেতে থাকে। তারপর ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসি। দেখি গিন্নী আর ছেলে বিন্দাস ঘুমোচ্ছে। ঘড়িতে সাড়ে তিনটে বাজে। ছ'টা বাজলে যেতে হবে নিমো বলে একটা ডাইভ সাইটে। এটা হ্যাভলকে।কাল রাতে টিমমেট Sandeep Kanjila আর Sabyasachi Mukherjee আমার সমস্ত অজুহাত ক্যান্সেল করে দিয়েছে। বলেছিলাম শ্বাসকষ্ট হয়, বাতিল।বললাম পয়সা নেই, বলল আমরা দিচ্ছি।শেষে নাকে ফোঁড়া আর দাঁতে পায়োরিয়া বলেও ছাড়ান পাওয়া গেল না, কারণ আমার পুত্রের অতি উৎসাহ, সঙ্গে তাদের ছেলেমেয়েরা। এদিকে নেটও নেই যে স্কুবা ডাইভিং কিভাবে ফ্যাটাল হতে পারে এ বিষয়ে চাড্ডি রেফারেন্স টানব। তবে টিম আন্দামানের মহিলা যাত্রীরা খুবই সন্দিগ্ধ ছিলেনে যে ব্যাপারটা আদৌ আরামদায়ক হবে কিনা, আর আমার গিন্নী একবারে নেতিবাচক।
    আস্তে আস্তে জেলার, ফাঁসুড়ে মানে টিমমেটরা সব ঘুম থেকে উঠল। আমাকে চান করিয়ে পোশাক পরিয়ে দেওয়া হল। আসলে স্কুবার পোশাক নানারকমের হয় । ভেজা, শুকনো,আধা শুকনো এমনকি গরম জল সহনীয়। আমাদেরটা ছিল ভেজা গোছের।পাশে দেখলাম অক্সিজেন সিলিন্ডার। তুলতে মালুম হল কিতনা ভারী হয় বেটারা। আর এই পরে নীচে মানে... । জীবনানন্দ মনে পড়তে লাগল,
    আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
    হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শংখচিল শালিখের বেশে,
    হয়তো জলের মাছ হয়ে এই কার্তিকের রাইটার্সের দেশে
    -চলুন।
    দেখি মেয়েদের মত লম্বা চুল একটা সরু লোক ডুবুরীর পোশাক পরে দাঁড়ায়ে আছে। এরা সব মায়ানমার রক্তজ।এর পর যে ক'টা সাইটে ঘুরেছি আশেপাশে , সমস্ত স্কুবা ডাইভার প্রশিক্ষককে বার্মীজ বা ব্রহ্মদেশীয়ই দেখেছি। আন্দামানে বাঙ্গালী বা তামিল সংখ্যাগুরু হওয়া সত্ত্বেও।
    -ইয়ে সিলিন্ডার?
    -ও আমরা নিয়ে যাব।
    -ইয়ে ফাঁসিকাঠটা কোথায়?
    -কি?
    -না মানে এখানে কোনো ডাক্তার নেই?
    -ফর্ম ফিলাপ তো করেছেন যে আপনার হার্টের, ফুসফুসের, রক্তচাপের কোনো অসুখ নেই।
    -না মানে কোনোদিন টেস্ট করিনি।একবার উদুরী, একবার কামলা আরেকবার ন্যাবা....
    -চলুন চলুন।
    দেখলাম আমার গিন্নী আর ওদের গিন্নীরা বাদ দিয়ে সব বীরদর্পে এগিয়ে গেল ফাঁসিকাঠের দিকে। দুভাগে যেতে হবে। ন'জন মেম্বার পাঁচে আর চারে।
    আমি আর ছেলে প্রথম গ্রুপে আর গিন্নী দ্বিতীয় গ্রুপে। ইস কি দুর্ভাগ্য আমার ওরা কেমন গ্রুপে গ্রুপে শহীদ হবে আমরা আলাদা। কেন যে কাল এত ডাবের শাঁস খেতে গেলাম আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল।পাড়ে গিন্নী বসা আর আমি আর ছেলে নেমে যাচ্ছি জলে। সঙ্গে সন্দীপ, সন্দীপের পো গিন্নী আর আমার পো। আমার পো'কে অনেক বোঝানো হয়েছে বাচ্চারা জলের নীচে নট এলাউড, কিন্তু সে বেটা প্রশিক্ষকদের বুঝিয়েছে তাঁর দশ পেরিয়ে গেছে, ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলতে পারে তো ওয়াটার একাউন্ট কি দোষ করল? তারাও অমনি বেওসা বিবেচনা করে 'ঠিক ঠিক' শব্দে এনকোর দিয়েছে।
    এর মধ্যে চাদ্দিকে ফোঁসফোঁস আওয়াজ। আমি চমকে উঠে সাপ খুঁজতে আরম্ভ করলাম। ওমা দেখি সিলিন্ডার থেকে বাতাস পুরে বাওয়েন্সি জ্যাকেট ফোলাচ্ছে, সিলিন্ডার ওর সাথেই বাঁধা। ওই জ্যাকেটে বাতাস কম বেশি করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
    ট্রেনিং শুরূ হল জ্যাকেট পরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।শরীরে এঁটে দেওয়া হল ডাইভিং গিয়ারের বাকিটুকু।রেগুলেটর, সুইমফিন, মাস্ক সবকিছু। দম যেন আরো বন্ধ হয়ে আসছে।নাক দিয়ে আর নিশ্বাস নেওয়া যাবে না।এরিক,যে
    আমাদের ট্রেনার সে তখন বোঝাতে শুরু করেছে অক্সিজেন রেগুলেটর মুখে দিয়া কেমনে নিশ্বাস নিতি হয়।
    এবং আমি ফেল করতে শুরু করলাম। বাতাস যেন কম।যদি এটা খুলে যায়। যদি জেমস বণ্ডের থান্ডারবলের মত চাইনীজরা এসে গ্যাস পাইপটা কেটে দেয়, ওরা তো ইন্দিরা পয়েন্ট অব্ধি এসেই গেছে। শ্বাসকষ্ট বাড়তেই লাগল। বললাম কিন্তু বার্মীজরা পাত্তাই দেয়না।উল্টে আমাকে উলটে দিয়ে বাওয়েন্সি জ্যাকেটে প্লবতা বাড়িয়ে টানতে টানতে নিয়ে চলল গভীর সমুদ্রে।আমি সব আশা ছেড়ে দিয়েছি।নিজের প্রিয়জনদের মুখ, ফেসবুক হোয়াটসএপের ভার্চুয়াল বন্ধুদের মুখ, শেষ রোদটুক্‌, আকাশ, দেখতে দেখতে চললাম প্যালারামের মত।
    হঠাৎ ওরা ফাঁসিকাঠের লিভার টানল মানে আমাকে উলটে দিয়ে bc (বাওয়েন্সি জ্যাকেট) ভারী করে দিল। ডুব দেরে মন কালী বলে আমি চোখ বুজলাম।
    কে ও? ওরা কারা? ওই যে সারি সারি নীল আর হলুদ মাছের দল।নাম তো জানিনা ওই বড় কালো মাছটার , আরে জেব্রার মত ওটা কি মাছ? সরু ছুঁচের মত ঠোঁট নিয়ে মার্চ করে চলেছে ওরাই বা কোন মাছ? আরে ওটা তো সি এনিমোন , দিব্য নাড়িয়ে যাচ্ছে শুঁড় আর মাঝে খেলা করছে সেই ক্লাউন ফিশ দুটো।ওরাই তো ছিল ফাইন্ডিং নিমোতে।আরে ওদের তো চিনি মিষ্টি ঠোঁটের মাছ আর ওরা তো ব্যাট ফিশ।কিন্তু কালো গোদা মাছটা সেদিন মিউজিয়ামে দেখলাম আহা কি নাম গো? মোরে না? আরে ওই পুচকে ছোড়া দুটো কারা? আরে এতো আমার আর সন্দীপের পো, দিব্য হাত নাড়তে নাড়তে চলে যাচ্ছে গভীরে। তাহলে? তাহলে বেঁচে আছি? ডাবের শাঁস খেয়ে যে শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল সেটা তাহলে মনে? জয়বাবা সমুদ্রেশ্বর...। কি যেন সাইন বলেছিল ওরা? আরো নীচে যাওয়ার ইচ্ছে হলে? ইয়েস বুড়ো আঙ্গুল উল্টাইয়া নিচে দেখাইতে হইবে। চালাও পানসী বরুণকাকার বাড়ি। সামনে ও কে ফটো তুলছে? না প্রোফাইলটা ঠিক করতে হবে একটু বাঁদিক নিই। শরবতে কি দিয়েছিলেন বলুন তো মগনবাবু? বেশ চাঙ্গা লাগছে।ওটা কি তাহলে? সি বেড? নামো নামো। দাদা একটু ফিনটা খুলে দেবেন। মর্নিং ওয়াকটা করে নিতাম। বলছিলাম এখানে সুলভ শৌচালয় নেই? সকালে তাড়াহুড়োতে পটিটা ঠিক মত...।
    এ কী টানছেন কেন? আরে দাঁড়ান না সবে তো এলাম।কোরাল গুলোতে হাত দিই, মাছগুলোকে আদর করি। ও মানা হাত দেওয়া মানা? তাহলে যেতে হবে বলছেন? মাত্র কুড়ি মিনিট? চলুন তাহলে...
    ফিরে আসতে আসতে ভাবছিলাম যা কিছু নিজের অভিজ্ঞতায় অজানা তাই ভয়ের, আচ্ছা মৃত্যুও কি এমনই সুন্দর?

    আন্দামানুষ-১
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন