এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Dipankar | 37.63.191.231 | ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ১৪:৩৪368475
  • মহানগরের মাল্টিস্ক্রীন প্রেক্ষাগৃহের আরামকেদারায় বসে সিনেমা দেখছিলাম। মনোরম গ্রামবাংলার সবুজ দৃশ্যপট। নানারকম পাখী আর পোকামাকড়ের ডাক। দুটি বালক পুকুরের পাড়ে বসে, বড়টি ছিপ ফেলে সেইদিকে তাকিয়ে, ছোটটি পুকুরে ঢিল ছুঁড়ছে আর নানারকম প্রশ্নবানে উত্তক্ত করছে দাদাকে। একেবারে সবুজ বাংলার প্রাণজুড়ানো বিজ্ঞাপন। গা টা আর একটু এলিয়ে দিলাম সোফায়। ধারের আসন হওয়ায় ডান পা টা বেশ অনেকটা ছড়িয়ে দেওয়া গেল। বউএর হাতে ধরা পপকর্ণের ডিবে থেকে এক খাবলা নিয়ে মুখে দিলাম। বেশ সুন্দর চিজের গন্ধওলা নোনতা স্বাদ জিভ দিয়ে নিয়ে গলার ভিতরে ঠেলতে যাচ্ছি -

    আটকে গেল!

    আর নামাতে পারছিনা গলার ভিতরে!

    গলার মধ্যে কেমন যেন দলা পাকিয়ে উঠছে সব কিছু!

    দাদা বলছে ভাইকে, মা কে বলে কিছু খাবার আনতে। সকাল থেকে কেউ কিছু খায়নি। ভাই বলছে, খেতে চাইলে মা মারবে। বাবা অসুস্থ। মা সারাদিন কাঁদছে আর বলছে বাবা আর বাঁচবেনা। দাদা তবু জোর করে বলছে, তুই আমার নাম করে বলগে যা, যদি কিছু খেতে দেয়।

    বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের "তালনবমী" পড়েছিলাম অনেকদিন আগেই। ভালই, যেমন ওনার আর সব গল্প হয়। কিন্তু এইভাবে ধাক্কা দেয়নি যেমন ভাবে "সহজপাঠের গপ্পো" দিয়ে গেল। সত্যজিতের "পথের পাঁচালি" অসাধারণ, পথপ্রদর্শক। কিন্তু মনে হয় "আম আঁটির ভেঁপু" থেকে সত্যজিৎ অনেক দৃশ্যপটের প্রেরণা পেয়েছেন। সেই তুলনায় "তালনবমী" নেহাত আড়াই পাতার গল্প। মূল গল্পে ছেলেদুটির বাবা যজমানী করে সংসার চালাত, অপুর বাবা হরিহরের মতই। 2017 সালের সিনেমায় খুব স্বাভাবিক লেগেছে যজমানের ভ্যানচালক হয়ে যাওয়া। ছেলেদুটি এবং তাদের মা - এই তিনজনে দেড় ঘন্টা জুড়ে সমস্ত মন ক্ষতবিক্ষত করে গেছে দর্শকের। পেটের খিদে যে কি সাংঘাতিক হতে পারে তা সুগার-প্রেশার-অম্বলে ভোগা নাগরিক জীবন জানতেই পারেনা। আর তাই দুটি বালকে খাদ্যের সন্ধান এফোঁড়ওফোঁড় করে আমাদের মন। এবং তার সাথে আছে ভালবাসা। মাঝেমাঝেই আমার মনে হয় প্রকৃত ভালবাসা একমাত্র সম্ভব শিশুবয়সেই। তখন মানুষের এত চাহিদা থাকেনা, স্বার্থ থাকেনা, ইগো থাকেনা, গর্ববোধ থাকেনা। শুধু থাকে ভালবাসা আর তজ্জনিত সুখ আর অভিমান। দুই ভাইয়ের ভালবাসা এই সিনেমার কিছু কিছু দৃশ্যে এমনভাবে নাড়া দিয়ে গেল যার তুলনীয় খুব কমই আছে। বিশেষ করে একটি দৃশ্য যেখানে ছোটু তার অভুক্ত দাদা গোপালকে দুটি পেয়ারা এনে দেয়, বলে সে খায়নি বলে মা খুব কাঁদছিল, এবং তারপর দাদা যখন পেয়ারায় কামড় বসায় তখন তার ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে তাকে আদর করে - সাম্প্রতিক সিনেমায় আমি এমন ভালবাসার অভিব্যক্তি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আরো একটি দৃশ্য মনের গভীরে দাগ কেটে গেল। গোপালের স্বপ্ন দেখার দৃশ্য, যখন সে মায়ের শাড়ি বুকের মধ্যে একটু একটু করে গুটিয়ে জড়িয়ে কাঁদছে, মা ট্রেন লাইনের দিকে ছুটে যাচ্ছে তখন। স্পষ্টতই সিনেমার এই দৃশ্য সত্যজিতের সেই বিখ্যাত অপু-দুর্গার রেলগাড়ি দেখার দৃশ্য থেকে অনুপ্রাণিত। কিন্তু ওই যে মায়ের শাড়ি জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়া এ আমার মনে এক স্মৃতিকে জাগিয়ে দিয়ে গেল। আমার ভাই যখন ছোট ছিল, মায়ের একটা শাড়ি ওকে ঘুমানোর সময় দিতে হত। পাশে মা না থাকলেও সেই শাড়ি জড়িয়ে ধরে ও অকাতরে ঘুমাতো। এরফলে মা কে ঘরের অন্যান্য কাজ করতে কোনদিন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। মজার ব্যাপার,ঘুমের মধ্যেও যদি শাড়িটা আস্তে করে টেনে সরিয়ে দিতাম, ও কেঁদে উঠত। মা ছুটে আসত তখন, আমাকে বকাঝকা করে আবার শাড়ি ধরিয়ে দিত ভাইয়ের হাতে। আবার সে ঘুমে কাদা।

    না, এই লেখাটি আলোচ্য সিনেমার কোন সমালোচনা বা আলোচনা কিছুই না। সিনেমার তেমন বোদ্ধা আমি নই। ভাললাগে, তাই সিনেমা দেখি। ভাললাগে, তাই বই পড়ি। ভাললাগে, তাই বেড়াতে যাই। "সহজপাঠের গপ্পো" আমার সেই ভাললাগার অনুভবে জায়গা করে নিয়েছে। ঠিক যেমন জায়গা করে নিয়েছিল বছরখানেক আগে দেখা আরেকটি সিনেমা, "আসা যাওয়ার মাঝে"।
  • aranya | 83.197.98.233 | ১০ অক্টোবর ২০১৭ ০৯:৩৮368476
  • টাচিং, দীপঙ্করের লেখা। ভালবাসার চেয়ে বড় আর কিছু নেই, তা আমরা ভুলে যাই..

    এই সিনেমাটার এত দারুণ সব রিভিউ/ফিডব্যাক পড়ছি, দেখতেই হবে
  • nabagata | 24.139.222.72 | ১০ অক্টোবর ২০১৭ ১০:১৬368477
  • দীপন্করের লেখাতে সহজ পাঠের গপ্পো র সঙ্গে আসা যাার মাঝে র তুলনায় ভালো লাগলো, কয়েক দিন আগে অন্য টৈ তে আমিও এই তুলনা করেছিলাম সত্যি অসাধারন দুটি সিনেমা
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন