এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পরিযায়ী কিংবা আমার ঘর সুব্রত চৌধুরী

    Subrata Chowdhury লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৫ মার্চ ২০১৭ | ২২১৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Subrata Chowdhury | ১৫ মার্চ ২০১৭ ২২:১১365139
  • পল স্টোনের সাথে আলাপ হয়েছিল জার্মানীর ব্রেমেন শহরে বছর পনের আগে। এই শহরটা জার্মানীর উত্তর- পূর্ব কোনে, উত্তর সাগরের কাছাকাছি। আর কি কি বিখ্যাত জিনিষ এই শহরে আছে জানি না, কিন্তু প্রথম আকর্ষন বেকস বিয়ারের কারখানা। প্রায় প্রত্যেক জার্মান শহরের নিজস্ব বিয়ার ব্র্যান্ড আছে, কিন্তু বেকস খুবই বিখ্যাত। মধ্যবয়স্ক পল পর্তুগাল থেকে এসেছিল আমাদেরই সাথে একটা মিটিং কাম ট্রেনিংয়ে। সাতদিন ব্রেমেনে কাটানোর পর একদা পূর্ব জার্মানীর লাইপজিগেও দিনচারেক একসাথেই ছিলাম।কখনো পর্তুগালের গল্প, কখনো বা দক্ষিন আফ্রিকা, কখনো সিংগাপুরের কথা বলছিল সে। আমি তো রীতিমত কনফিউসনের চুড়ান্ত পর্যায়ে, কি রে বাবা লোকটা কোনদেশী?
    ব্রেমেন থেকে লাইপজিগ যাওয়ার সময় আমার জার্মান কলিগ থমাসের গাড়ীর পিছনে পল আর আমি বসেছিলাম। থমাস যখন ২৫০ কিলোমিটার বেগে গাড়ী ছোটাচ্ছিলো তখন আমি বসে বসে পলের গল্প শুনলাম। জন্ম একদা রোডেশিয়া, বর্তমান জিম্বাওয়েতে।৭০ এর দশকে যখন গোরা চামড়া খেদাওয়ের পর্ব শুরু হয় ওই দেশে,পলের পরিবার কয়েকপুরুষের বাসস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। সাদাদের শতাব্দীব্যাপি শোষন ও নির্যাতনের খেসারত দিতে হয় ওদের। আশ্রয় জোটে দক্ষিন আফ্রিকায়। সেখানে পলের স্কুলজীবন কাটে, তারপর তার বাবা-মা ব্রিটিশ পাসপোর্টের দৌলতে ব্রিটেনেই চলে যান। পল চাকরী নিয়ে এদেশ ওদেশ ঘোরাঘুরি শুরু করে। সিংগাপুরে কাটিয়েছে বছর খানেক, আমেরিকায় কয়েক বছর, এমনকি বম্বেতেও কিছুদিন বাস করেছে। পূর্বপুরুষের দৌলতে ব্রিটিশ পাসপোর্টের অধিকারী হ'লেও ওই দেশটা তার পছন্দের না। কয়েক বছর হল তৃতীয় স্ত্রীর দেশ পর্তুগালের বাসিন্দা সে। আক্ষরিক অর্থে বিশ্ব নাগরিক।
    লাইপজিগে পলের সাথে ভালই কাটত, তার ঝুলির অজস্র গল্প শুনতাম। এক সন্ধ্যাবেলায় বিয়ারপানের আসর বসেছিল। জার্মানদের এই একটা ব্যাপার, সারাদিন জলপান করতে দেখি না, দিনের শেষে বিয়ার দিয়ে বোধ হয় সেই অভাবটা মিটিয়ে নেয়। পেটে যে কি করে এত বিয়ারের জায়গা হয় তা কোনো বিজ্ঞানে ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। এই দেখেই মহীনেরা গেয়েছিলেন, আমি যদি জার্মান হতাম বোতল বোতল বিয়ার খেতাম। আসরে বসে আমাদের এক জার্মান কলিগ সিগি বলে উঠলো, পুরনো দিনগুলোই ভাল ছিল। আমি কমিউনিস্ট জমানা শেষ করার আন্দোলনে ছিলাম। কিন্তু এখন বুঝি ভুল করেছি।
    কোন ও পূর্ব ইউরোপিয়র মুখ থেকে আগে বা পরে এই কথাটা শুনি নি। তাই কৌতুহলি হয়ে জিগগেস করলাম, কেন?
    উত্তর, ওই জমানায় সোস্যাল সিকিউরিটি ছিল, আজ এটা বড়ই হাল্কা।
    কথায় কথায় পলকে জিগগেস করলাম, তুমি তো গোটা পৃথিবী ঘুরেছ, এখন বল তোমার দেশ কোনটা।
    পল বলল, আমি ব্রিটিশ পাসপোর্ট এর মালিক, কাজেই ব্রিটেন আমার দেশ। না না, আমি পর্তুগালে বাস করি। ওটাই আমার দেশ।
    বললাম, অন্য দেশে চাকরী পেলে চলে যাবে তো সেটাই তোমার দেশ হবে?
    হঠাৎ আমি বললাম, আচ্ছা তোমার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় কোথায় মরতে চাও, কি বলবে?
    পলের চোখমুখ যেন কেমন হয়ে গেল, উত্তর দিল, ই ন্ত তো দিএ ইন ঔথ আফ্রি। আমার ছাত্রদীবন ওখানে কেটেছে, ওই দেশ আমায় তৈরী করেছে জীবনের লড়াইয়ের জন্য, ওখানে মরতে চাই। কিন্তু।।
    আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো বর্ধমান জেলার সেই সুন্দর গ্রামটা। পরিযায়ী পাখি নীড়ে ফিরতে চায়, নীড়টা হয়ত আজ আর নেই, গাছটা তো আছে।
    ***********
    আজ দিল্লী বাংলা বইমেলায় বাঙালী দ্বারা নির্বাসিত কবি তসলিমা নাসরিনকে দেখে এই ঘটনাটা মনে পড়ল।
  • Subrata Chowdhury | ১৫ মার্চ ২০১৭ ২২:১১365138
  • পল স্টোনের সাথে আলাপ হয়েছিল জার্মানীর ব্রেমেন শহরে বছর পনের আগে। এই শহরটা জার্মানীর উত্তর- পূর্ব কোনে, উত্তর সাগরের কাছাকাছি। আর কি কি বিখ্যাত জিনিষ এই শহরে আছে জানি না, কিন্তু প্রথম আকর্ষন বেকস বিয়ারের কারখানা। প্রায় প্রত্যেক জার্মান শহরের নিজস্ব বিয়ার ব্র্যান্ড আছে, কিন্তু বেকস খুবই বিখ্যাত। মধ্যবয়স্ক পল পর্তুগাল থেকে এসেছিল আমাদেরই সাথে একটা মিটিং কাম ট্রেনিংয়ে। সাতদিন ব্রেমেনে কাটানোর পর একদা পূর্ব জার্মানীর লাইপজিগেও দিনচারেক একসাথেই ছিলাম।কখনো পর্তুগালের গল্প, কখনো বা দক্ষিন আফ্রিকা, কখনো সিংগাপুরের কথা বলছিল সে। আমি তো রীতিমত কনফিউসনের চুড়ান্ত পর্যায়ে, কি রে বাবা লোকটা কোনদেশী?
    ব্রেমেন থেকে লাইপজিগ যাওয়ার সময় আমার জার্মান কলিগ থমাসের গাড়ীর পিছনে পল আর আমি বসেছিলাম। থমাস যখন ২৫০ কিলোমিটার বেগে গাড়ী ছোটাচ্ছিলো তখন আমি বসে বসে পলের গল্প শুনলাম। জন্ম একদা রোডেশিয়া, বর্তমান জিম্বাওয়েতে।৭০ এর দশকে যখন গোরা চামড়া খেদাওয়ের পর্ব শুরু হয় ওই দেশে,পলের পরিবার কয়েকপুরুষের বাসস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। সাদাদের শতাব্দীব্যাপি শোষন ও নির্যাতনের খেসারত দিতে হয় ওদের। আশ্রয় জোটে দক্ষিন আফ্রিকায়। সেখানে পলের স্কুলজীবন কাটে, তারপর তার বাবা-মা ব্রিটিশ পাসপোর্টের দৌলতে ব্রিটেনেই চলে যান। পল চাকরী নিয়ে এদেশ ওদেশ ঘোরাঘুরি শুরু করে। সিংগাপুরে কাটিয়েছে বছর খানেক, আমেরিকায় কয়েক বছর, এমনকি বম্বেতেও কিছুদিন বাস করেছে। পূর্বপুরুষের দৌলতে ব্রিটিশ পাসপোর্টের অধিকারী হ'লেও ওই দেশটা তার পছন্দের না। কয়েক বছর হল তৃতীয় স্ত্রীর দেশ পর্তুগালের বাসিন্দা সে। আক্ষরিক অর্থে বিশ্ব নাগরিক।
    লাইপজিগে পলের সাথে ভালই কাটত, তার ঝুলির অজস্র গল্প শুনতাম। এক সন্ধ্যাবেলায় বিয়ারপানের আসর বসেছিল। জার্মানদের এই একটা ব্যাপার, সারাদিন জলপান করতে দেখি না, দিনের শেষে বিয়ার দিয়ে বোধ হয় সেই অভাবটা মিটিয়ে নেয়। পেটে যে কি করে এত বিয়ারের জায়গা হয় তা কোনো বিজ্ঞানে ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। এই দেখেই মহীনেরা গেয়েছিলেন, আমি যদি জার্মান হতাম বোতল বোতল বিয়ার খেতাম। আসরে বসে আমাদের এক জার্মান কলিগ সিগি বলে উঠলো, পুরনো দিনগুলোই ভাল ছিল। আমি কমিউনিস্ট জমানা শেষ করার আন্দোলনে ছিলাম। কিন্তু এখন বুঝি ভুল করেছি।
    কোন ও পূর্ব ইউরোপিয়র মুখ থেকে আগে বা পরে এই কথাটা শুনি নি। তাই কৌতুহলি হয়ে জিগগেস করলাম, কেন?
    উত্তর, ওই জমানায় সোস্যাল সিকিউরিটি ছিল, আজ এটা বড়ই হাল্কা।
    কথায় কথায় পলকে জিগগেস করলাম, তুমি তো গোটা পৃথিবী ঘুরেছ, এখন বল তোমার দেশ কোনটা।
    পল বলল, আমি ব্রিটিশ পাসপোর্ট এর মালিক, কাজেই ব্রিটেন আমার দেশ। না না, আমি পর্তুগালে বাস করি। ওটাই আমার দেশ।
    বললাম, অন্য দেশে চাকরী পেলে চলে যাবে তো সেটাই তোমার দেশ হবে?
    হঠাৎ আমি বললাম, আচ্ছা তোমার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় কোথায় মরতে চাও, কি বলবে?
    পলের চোখমুখ যেন কেমন হয়ে গেল, উত্তর দিল, ই ন্ত তো দিএ ইন ঔথ আফ্রি। আমার ছাত্রদীবন ওখানে কেটেছে, ওই দেশ আমায় তৈরী করেছে জীবনের লড়াইয়ের জন্য, ওখানে মরতে চাই। কিন্তু।।
    আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো বর্ধমান জেলার সেই সুন্দর গ্রামটা। পরিযায়ী পাখি নীড়ে ফিরতে চায়, নীড়টা হয়ত আজ আর নেই, গাছটা তো আছে।
    ***********
    আজ দিল্লী বাংলা বইমেলায় বাঙালী দ্বারা নির্বাসিত কবি তসলিমা নাসরিনকে দেখে এই ঘটনাটা মনে পড়ল।
  • Subrata Chowdhury | ১৬ মার্চ ২০১৭ ১১:৫৪365140
  • দুটো ভুল আছে।

    ১ ব্রেমেন জারমানির উত্তর পশ্চিম কোনে
    ২ নামিবিয়া না জিম্বাওয়ে
  • S | 184.45.155.75 | ২১ মার্চ ২০১৭ ১৫:১৭365141
  • তুল্লাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন