এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হঠাৎ সুনামি

    Rashmita Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৮৭ বার পঠিত
  • তায় ঘরটিকে অচেনা আগন্তুকের পক্ষে একটু বাসযোগ্য করতে গিয়েই দিনের এই বাকি সময়টুকু যেন এক লহমাতেই ফুরিয়ে গেল।এখন এই পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে রান্না করা তো দূর,ভাত বসাতে গিয়েও যেন মনে হচ্ছে,হাঁটুতে যেন কেউ ভারী পাথর বেঁধে দিয়েছে।সে মুড়ির টিন থেকে বাটিতে কিছুটা মুড়ি ঢেলে নিয়ে তাতে কিছুটা চানাচুর ঢেলে নিল।ক্ষুধার্ত পেটে সেটাই এক নিমেষে শেষ করে রান্নাঘরের আলো বন্ধ করে সে শোবার ঘরে এল।ঘরে ঢুকে সে দেখল,মশারির ভিতরে সারা শরীরখানিকে গুটুলি পাকিয়ে নিয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে কাদা হয়ে রয়েছে মেয়েটা।জামাকাপড় কেমন করে পরতে হয় এটাই বোধহয় মেয়েটা আজ পর্যন্ত শিখে উঠতে পারেনি।একমুখ মায়া ঢালা গভীর ঘুমে অবচেতন শরীরটির আনাচে কানাচে তাই বড়ো বেখাপ্পা ভাবেই উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে বিশ বর্ষীয়া তারুণ্যের উদ্দাম যৌবন।রাতুল একদৃষ্টে তিয়াসার মুখের দিকে চেয়ে রইল।অসহায় এই অপরিচিতার পরম নিশ্চিন্তের এই সুখনিদ্রা যেন রাতুলকেও কোনো একটা অব্যক্ত তৃপ্তির সাগরে ভাসিয়ে নিল।সে পরম মমতায় তিয়াসার কপালে তার হাতখানি রেখে দুই ভুরুর মাঝে একটা স্নেহ চুম্বন এঁকে দিল।তারপর মশারিটা ভালো করে গুঁজে দিয়ে নিজের জন্য মেঝেতে মাদুর পেতে চাদর আর বালিশ দিয়ে প্রতিদিনকার মতো নিজের বিছানা করে নিল।তারপর আলো নিভিয়ে সেও নিদ্রার সাগরে অস্তমিত হল।
    হঠাৎ মাঝরাতে সে অনুভব করল,কেউ যেন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে থরথর করে কাঁপছে।সে দারুণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।মেয়েটা তার বুকের মধ্যে সভয়ে মাথা গুঁজে একমনে "কি যেন বিড়বিড় করছে।রাতুল বুঝল কোনো কারণে বোধহয় মেয়েটা নিদারুণ ভয় পেয়ে গিয়েছে।সে সস্নেহে তিয়াসাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলতে লাগল,"কি হয়েছে মামন?কি দেখে ভয় পেলে?"
    তিয়াসা কাঁপা কাঁপা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,ও ও ওইদিকে কেউ আছে!আমি শব্দ পেয়েছি।আমার ভীষন ভয় করছে ...অজানা কোনো এক মূক আতঙ্কে থরোথরো তিয়াসা রাতুলার শার্টের কলারটা খামচে ধরে ওর বুকের মধ্যে তীব্রভাবে মাথাখানি গুঁজে দিয়ে সেখানেই যেন আত্মরক্ষা হেতু আপাদমস্তক ঢুকে যেতে চাইছে।রাতুল বুঝতে পারল ব্যাপারখানা কি হয়েছে।ওর রান্নাঘরে দিন রাত নির্বিশেষে বিড়ালের উৎপাত লেগেই থাকে।আর ঝনঝন শব্দে বাসনকোসন এদিক ওদিক হয়ে যাওয়াটাও একটা নিত্য রুটিনের মধ্যেই পড়ে।এই শব্দে এখন আর রাতুলের ঘুমের বিঘ্ন ঘটে না।সে এক ঘুমেই রাতকে সকাল করে।কিন্তু এই আনকোরা জায়গায় আতঙ্কে থরহরিকম্প এই মেয়েটি যেভাবে রাতুলকে আঁকড়ে ধরে কাঁপছে তাতে রাতুল বুঝল,তার এই যেমন খুশি ছন্নছাড়া জীবনটাকে অনির্দিষ্ট কিছুদিনের জন্য মুলতুবি রাখতে হবে।এখন তার অনেক দায়িত্ব। সে সস্নেহে তিয়াসার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল...কিচ্ছু হয়নি মামন...ও তো বেড়ালের আসার শব্দ...ও রোজ আসে...
    পরদিন থেকে রাতুলের রোজকার রুটিন একেবারে পালটে গেল আর পরিশ্রম একেবারে দ্বিগুণ হয়ে উঠল।সে কাকভোরে উঠে মুখহাত ধুয়ে সবার আগে জলখাবার বানিয়ে নেয়।তারপর তিয়াসাকে ঘুম থেকে তুলে ওকে মুখ হাত ধুইয়ে দিয়ে গলায় কাপড় বেঁধে খাইয়ে দেয়।তারপর নিজে চা জলখাবার খেয়ে নিয়ে তিয়াসার দুপুরের খাবার জন্য ভাত তরকারি রান্না করতে বসে।রান্নাটান্না সেরে সে তিয়াসাকে স্নান করাতে নিয়ে যায়।টিশার্ট আর ট্রাউজার পরিহিতা তিয়াসাকে ভালো করে জল ঢেলে স্নানটান করিয়ে গা মুছিয়ে সে কাচা টিশার্ট আর ট্রাউজার সমেত তিয়াসাকে শোবার ঘরে পাঠিয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়।এবার সে নিজে স্নান সেরে নিজের আর তিয়াসার সব জামাকাপড় কেচেধুয়ে মেলে দিয়ে শোবার ঘরে নক করে নিয়ে ঢোকে।তারপর তিয়াসার অপটু হাতে পরা টিশার্ট আর ট্রাউজার নিজে ঠিকঠাক করে দিয়ে তিয়াসার চুল আঁচড়ে দেয় সযত্নে।কপালে পরিয়ে দেয় টিপ।তারপর সে রান্না করে রাখা ভাত তরকারি তিয়াসার জন্য থালায় করে বেড়ে রেখে দিয়ে ঝুরি দিয়ে চাপা দিয়ে রেখে দেয়।এরপর সে নিজে অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হয়।বেরোনোর সময় তিয়াসাকে বাইরে একা না বেরোনোর জন্য সাবধানবাণী দিয়ে কপালে একটা স্নেহচুম্বন এঁকে দিয়ে অফিসে বেরিয়ে যায়।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিয়াসা ঘরে একাই থাকে।তবে এতে তিয়াসার কোনো অসুবিধা হয় না।কারণ রাতুলের ওই ছোট্ট ঘরটির ভিতরেই সে এমন ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে যেটা তাকে কোনোভাবে তার বাবা মায়ের স্নেহ ভালোবাসা আর যত্নের সমস্ত অভাব ভুলিয়ে দিয়েছে। আর তাছাড়া রাতুল অনেক রকমের খেলনা আর পুতুল কিনে এনে ঘরে রেখেছে  তিয়াসার জন্য।বাক্স থেকে ধুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করে রেখেছে বহুদিনের ব্যবহার না হওয়া পুরোনো টিভিটা।কেবলের মাধ্যমে ওই টিভিতে রাতুল চালু করে দিয়েছে তিয়াসার পছন্দের সব কার্টুন চ্যানেল।তিয়াসার এখন দিন কাটছে বেশ।রাতুল বেরিয়ে যাওয়ার পর সে বিছানায় সাজিয়ে নেয় খেলনা পুতুল আর টিভি খুলে চালিয়ে দেয় পছন্দের চ্যানেল।ঘরে রাখা থাকে নাড়ু বরফি।ইচ্ছেমতো সেগুলো নিয়ে খায়।দুপুরের পর থেকেই তার মধ্যে আরম্ভ হয়ে যায় এক অস্হির তোলপাড়। ক্রমশ যত বিকেল গড়ায়,তত সেটা যেন অসহ্য ঠেকে।সন্ধ্যার দিকে অবশেষে যেই কলিং বেলের শব্দটা হয় সাথে সাথে তিয়াসার ভিতরে যেন উচ্ছ্বাসের জলফড়িংগুলি কোরাসে গান গেয়ে ওঠে।সে লাফিয়ে...নেচে...ছুটে...একনিমেষে গিয়ে দরজা খুলেই বাচ্চা মেয়ের মতো জড়িয়ে ধরে রাতুলকে।রাতুলও যেন দুপুরের পর থেকেই অফিসের কাজে মন বসাতে পারে না কিছুতেই।মনটা শুধু পালাই পালাই করে।শুধু তার মনে হতে থাকে,এইসব অফিসের দায়িত্ব শেষ করে,বাস ট্রামের ঝক্কি পুইয়ে সে কখন ঘরে পৌঁছাতে পারবে।প্রায় দৌড়েই সে অফিস থেকে প্রতিদিন ঘরে আসে আর যখন কলিং বেল টেপার পরে একগাল মায়াভরা সরল সুমিষ্ট হাসি আর বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস নিয়ে দরজা খুলেই রাতুলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার মামন,তখন রাতুলের মনে হয়,ওর জীবনের ছিন্নবিনার সমস্ত তারগুলি জুড়ে গিয়ে বাজতে শুরু করেছে সপ্তসুরের যাদুমূর্ছনা।এইভাবে দিন যায়।


     

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন