এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পোষা ভূত ও ভয়াল তান্ত্রিকদের কথা - ৬

    Sudip Ghoshal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৯৭ বার পঠিত
  • | | | | | | |
    পিসেমশাই বললেন, লম্বা চুল হলে হিন্দু সমাজের একাংশে বিধান রয়েছে, সমস্ত শ্মশানযাত্রীকে মস্তক মুণ্ডন করতে হবে। যুক্তি হিসাবে বলা হয়, চুলের শিকড় পথেই আত্মা প্রবেশ করে শরীরে (হিন্দু ধর্ম মতে)। এদিকে প্রচলিত ধারণা, শ্মশানে ঘুরে বেড়ায় অনেক আত্মাই! তার মধ্যে কোন দুষ্ট আত্মা যদি শরীরে প্রবেশের চেষ্টা করে, তা রোধ করার জন্যই মস্তক মুণ্ডন! এই কুসংস্কার বাদ দিয়ে ব্যাপারটাকে দেখা যায় অন্য ভাবেও। মস্তক মুণ্ডনকে যদি মৃত ব্যক্তির প্রতি শেষ সম্মানজ্ঞাপন বলে ধরা হয়, তাহলেও সমস্যা রয়েছে। কেন না, যে সময় থেকে এই নিয়মের উদ্ভব, তখন নারী সন্ন্যাসিনী না হলে তার মস্তক মুণ্ডনের প্রশ্নই উঠত না। তাই নারীর শ্মশানে যাওয়ার প্রশ্নটি এই যুক্তিতে খারিজ হয়ে যায়!

    দুষ্ট আত্মাকে আকর্ষণ: এটা আরেকটা কুসংস্কার! পুরুষ মানুষ হোক বা আত্মা- সবাই না কি নারীকে দেখলেই আকর্ষিত হয়। বিশেষ করে কুমারী মেয়েকে দেখলে! বলা মুশকিল, ঠিক কী কারণে জন্ম নিয়েছিল এমন কুসংস্কার। বেশির ভাগ কুসংস্কার রটানোর ক্ষেত্রেই কিছু মন্দ উদ্দেশ্য থাকে। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যটা বোধহয় নারীকে গৃহবন্দি রাখা! তাকে বাইরের পৃথিবীতে স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করতে না দেওয়া! সেই জন্যই নারীর শ্মশানযাত্রার ব্যাপারে একটা দ্বিমত রয়েছে। অনেকে বলেন, বিবাহিতা নারীরা শ্মশানে যেতে পারেন। কিন্তু, কুমারীদের যাওয়া কখনই চলবে না! সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠবে- দুষ্ট আত্মা কি কুমারী আর বিবাহিতার তফাত করবে? করুক আর না-ই করুক- দীর্ঘ দিন ধরে এই বিশ্বাস লোকের মনে গেঁথে ছিল। এখনও যে নেই, তেমনটা জোর দিয়ে বলা যায় না।

    শেষ যাত্রার শান্তি: সব দেশেই সামাজিক প্রথা বলে, বিদায় দিতে হয় হাসিমুখে! সেটা সম্ভব না হলে নীরব থাকাই শ্রেয়। তা বিদায় নেওয়া ব্যক্তিটি জীবিত হোন বা মৃত! এদিকে ওই যে সামাজিক ধারণা- কোমল হৃদয়ের নারীরা আবেগ সংবরণ করতে পারেন না। বিশেষ করে প্রিয়জনের মৃত্যুতে তাদের চোখের জল বাধা মানে না। অন্য পিঠে লোকবিশ্বাস বলে, শেষযাত্রার সময় কেউ কান্নাকাটি করলে বিচলিত হয় আত্মা। তখন আর তার পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া হয়ে ওঠে না। মায়ায় আবদ্ধ হয়ে সে পৃথিবীতেই থেকে যায়। এবং, মুক্তি না পাওয়ার কষ্ট থেকে জীবিতের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এরকমটা যাতে না হয়, সেই জন্য না কি নারীদের শ্মশানে যাওয়া বারণ!

    অনেক দিন পর্যন্ত এই সমস্ত যুক্তিতে ভর দিয়ে চলেছে সমাজ। প্রিয়জনের অন্ত্যেষ্টিতে শ্মশানে যাননি নারীরা। এখন যদিও ছবিটা বদলেছে অনেকটাই। তবে তা শহরাঞ্চলেই! গ্রাম কিন্তু এখনও পুরনো, ক্ষয়ে আসা এই লোকাচার সঙ্গে করে পথ হাঁটছে। ছবিটা কি আদৌ বদলাবে? সেই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরও অনেক বছর। মহাদেব' নামটি শিবের অত্যন্ত প্রিয় হলেও 'রুদ্র', 'সর্ব', 'শর্ব', 'উগ্র' প্রতিটি নামই যেহেতু নারায়ণের দেওয়া; সেহেতু এই নামগুলোও শিবের ভূষণ, শিবের কাছে সম্মানের। এই সমস্ত নামের মাহাত্ম্য শিবের আচরণের সঙ্গে জুড়ে রইলো। রুদ্ররূপে শিব যেন আকাশপাতাল কাঁপানো ভীষণ কান্নার মতোই সংহারের এক মূর্তি। রাজা, মহারাজা, ধনী, দরিদ্র, পাপীতাপি, এমনকি দেবতারাও তাঁর সেই রুদ্ররূপের কোপ থেকে রক্ষা পান না, তাই তিনি এই রূপে পরমেশ্বর। 'উগ্র' নামেও তাঁর এই স্বভাবেরই প্রকাশ। আর 'সর্ব' ও 'শর্ব'- নাম দুটির মধ্যে আছে অগ্নির মতো মানুষের সমস্ত কর্মের অহংকার ছাই করে ফেলার ইঙ্গিত। তাই চিতার ছাইয়ের ওপর বসে মহাদেবের এই নামের জপ করেন কেউ, সাধনা করেন কেউ; তাহলে তিনি মহাদেবের প্রিয় হয়ে ওঠেন। আর যেখানে ভক্তের স্থান, সেখানেই ভগবানের বাস। তাই শ্মশানে চিতাভস্মের মাঝে মহাদেবেরও বাস ও বিহার। আসলে, মহাদেবের উদ্দিষ্ট চিতা বা শ্মশান শুধু লৌকিক অর্থেই সীমাবদ্ধ নয়, তা প্রতীকমাত্র। যে মানুষ বা ভক্ত তাঁর অন্তরের সমস্ত কামনা বাসনা, অহং ও আত্মপরবোধ পুড়িয়ে চিতার আগুনের মতো নষ্ট করে দিতে পারেন, তাঁর মধ্যেই মহাদেবের বাস। শিব পুরাণ মহাদেবের শ্মশান বাসের লৌকিক ও আধ্যাত্মিক-এই দুটো দিকই এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পিসেমশাই বললেন,  এসব কথা যেখানে সেখানে বলতে নেই। যে কোন সাধনা গোপনে করতে হয়। সেটা প

    ২২

    পিসেমশাই বলেন এখন  যেসব কথা বলব মন দিয়ে শুনবি। জিভ একটা কিন্তু কান দুটো। তাই কথা কম বলবি। শুনবি বেশে। তাহলে জীবনে সফল হবি, বুঝলি। নে চা আর ভুজিয়া লাও..  বিনা পয়সামে জ্ঞান নাহি মিলেগা..

    রতন আজকে চা আর মাটন চপ নিয়ে এলো। পিসেমশাই এর সব চলে। তান্ত্রিকের কোনো বাধা নেই। শবদেহ আর ভূত নিয়ে কারবার। আমি বললাম, মানে বলছিলাম লাল সরবত চলে পিসেমশাই।

    পিসেমশাই বললেন, জায়গা বিশেষে চলে। প্রয়োজনে চলে, তা না হলে নয়।

    আমার ভক্তি বেড়ে গেল পিসেমশাই এর কথায়। পিসেমশাই খাওয়ার পরে হাত ধুয়ে বললেন, বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করা হয়। আবার কিছু ধর্মে করা হয় না, যেমন ইসলাম বা ইহুদী ধর্মে। এসব ধর্মাবলম্বীদের মতে মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মা চিরস্থায়ীভাবে পরলোকগমন করে আর ইহলোকে ফিরে আসে না। 

    একবার একদল খুনি একটা বাড়ি ভাড়া করে বাসায় এল মালপত্তর নিয়ে। তারা বড়লোকের ছেলে। ফুর্তি করে আর ধর্ষণ করে মারে মেয়েদের।রতন বললো, এইসব পাপিদের নরকবাস হবে। পিসেমশায় বলছেন গল্পটা।তারা  নাকি পুরনো বাড়ি কিনে নতুন  করে বাস করছেন,অথবা নতুন ফ্ল্যাট তৈরি করেছেন। যাইহোক , আসল কথা, নতুন বাসস্থানটিতে এসে স্বস্তি পাচ্ছেন না কিছুতেই। কেন জানা নেই, বার বার মনে হচ্ছে কোথাও একটা ছায়া রয়েছে। তালে মিলছে না সব কিছু।এলোমেলো আ্যাবনর্মাল লাগছে সবকিছু।  ভূত বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ব্যাপারটা মোটেই অবহেলা করার মতো নয়। আপনার ভবনে ‘তেনা’দের আনাগোনা থাকতেই পারে।ভূতে বিশ্বাস করুন বা না-করুন, এমন কিছু অস্বস্তি রয়েছে, যার সর্বদা চটজলদি ব্যাখ্যা হয় না। তেমন কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে চেষ্টা করেছেন এক্সপার্ট ভূত গবেষকের মতো খ্যাতনামা পারলৌকিক বিশেষজ্ঞের দল । তারা জানাচ্ছেন, কয়েকটি বিশেষ দিকে নজর রাখাটা জরুরি এমন ক্ষেত্রে। তাদের বক্তব্য থেকে পাঁচটি বিষয় তুলে দেওয়া হল—হঠাৎই আপনার মনে হল, পিছন থেকে কেউ আপনার  পিঠ ধরে টান দিয়ে মজা করল। ফিরে দেখলেন, কেউ নেই। তন্ত্রমতে, এমন ক্ষেত্রে সাবধান। স্পর্শকারী রক্তমাংসের জীব না হতেও পারেন। যদি মনে হয় ঘরের টেবিল চেয়ার  নিজে থেকেই স্থান পরিবর্তন করছে, তা হলে ফালতু  ভয় পাবেন না। তিনি জানাচ্ছেন, এমন ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভৌতিক না-ও হতে পারে। নিজেই হয়তো সরিয়েছেন  টেবিলটা।  তার পরে ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু যদি তক্তা বা শোবার বিছানাটা  নাইনটি ডিগ্রী  ঘুরে যায় অথবা চেয়ার বিপরীতে বিরাজ করে, তবে ভাবার মত সমস্যা রয়েছে।আবার নতুন বাড়িতে ঢুকে  যদি শোনো সেখানে কেউ আগে মারা গিয়েছেন অথবা যে জমিতে বাড়ি করেছে কেউ সেটি আগে কবরখানা ছিল বা তার মালিক অপঘাতে মরেছে  তা হলে ভয় আছে।  পুত্রহারা গৌতমীকে তথাগত বা ভগবান বুদ্ধদেব বলেছিলেন এমন কোনও বাড়ি থেকে একমুঠো সরষে নিয়ে আসতে, যেখানে মৃত্যু,দুর্ঘটনা বা অশান্তি প্রবেশ করেনি। তার বক্তব্যও একই প্রকারের।  মৃত্যু বা সাংসারিক বিপদ একটা সাধারণ বিষয়। তা কোথাও ঘটে থাকলেই যে ভূত, প্রেত ঘুরবে বা ক্ষতি  করবে, এমন কোনও কথা নেই। পিসেমশাই বললেন, আজ এই পর্যন্ত থাকুক। বাকি বাত বাদমে বোলেগা। একসাথমে হজম নেহি হোগা। পিলাও চায়ে... পিসেমশাই বলেন এখন  যেসব কথা বলব মন দিয়ে শুনবি। জিভ একটা কিন্তু কান দুটো। তাই কথা কম বলবি। শুনবি বেশে। তাহলে জীবনে সফল হবি, বুঝলি। নে চা আর ভুজিয়া লাও..  বিনা পয়সামে জ্ঞান নাহি মিলেগা..

    রতন আজকে চা আর মাটন চপ নিয়ে এলো। পিসেমশাই এর সব চলে। তান্ত্রিকের কোনো বাধা নেই। শবদেহ আর ভূত নিয়ে কারবার। আমি বললাম, মানে বলছিলাম লাল সরবত চলে পিসেমশাই।

    পিসেমশাই বললেন, জায়গা বিশেষে চলে। প্রয়োজনে চলে, তা না হলে নয়।

    আমার ভক্তি বেড়ে গেল পিসেমশাই এর কথায়। পিসেমশাই খাওয়ার পরে হাত ধুয়ে বললেন, বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করা হয়। আবার কিছু ধর্মে করা হয় না, যেমন ইসলাম বা ইহুদী ধর্মে। এসব ধর্মাবলম্বীদের মতে মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মা চিরস্থায়ীভাবে পরলোকগমন করে আর ইহলোকে ফিরে আসে না। 

    একবার একদল খুনি একটা বাড়ি ভাড়া করে বাসায় এল মালপত্তর নিয়ে। তারা বড়লোকের ছেলে। ফুর্তি করে আর ধর্ষণ করে মারে মেয়েদের।রতন বললো, এইসব পাপিদের নরকবাস হবে। পিসেমশায় বলছেন গল্পটা।তারা  নাকি পুরনো বাড়ি কিনে নতুন  করে বাস করছেন,অথবা নতুন ফ্ল্যাট তৈরি করেছেন। যাইহোক , আসল কথা, নতুন বাসস্থানটিতে এসে স্বস্তি পাচ্ছেন না কিছুতেই। কেন জানা নেই, বার বার মনে হচ্ছে কোথাও একটা ছায়া রয়েছে। তালে মিলছে না সব কিছু।এলোমেলো আ্যাবনর্মাল লাগছে সবকিছু।  ভূত বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ব্যাপারটা মোটেই অবহেলা করার মতো নয়। আপনার ভবনে ‘তেনা’দের আনাগোনা থাকতেই পারে।ভূতে বিশ্বাস করুন বা না-করুন, এমন কিছু অস্বস্তি রয়েছে, যার সর্বদা চটজলদি ব্যাখ্যা হয় না। তেমন কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে চেষ্টা করেছেন এক্সপার্ট ভূত গবেষকের মতো খ্যাতনামা পারলৌকিক বিশেষজ্ঞের দল । তারা জানাচ্ছেন, কয়েকটি বিশেষ দিকে নজর রাখাটা জরুরি এমন ক্ষেত্রে। তাদের বক্তব্য থেকে পাঁচটি বিষয় তুলে দেওয়া হল—হঠাৎই আপনার মনে হল, পিছন থেকে কেউ আপনার  পিঠ ধরে টান দিয়ে মজা করল। ফিরে দেখলেন, কেউ নেই। তন্ত্রমতে, এমন ক্ষেত্রে সাবধান। স্পর্শকারী রক্তমাংসের জীব না হতেও পারেন। যদি মনে হয় ঘরের টেবিল চেয়ার  নিজে থেকেই স্থান পরিবর্তন করছে, তা হলে ফালতু  ভয় পাবেন না। তিনি জানাচ্ছেন, এমন ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভৌতিক না-ও হতে পারে। নিজেই হয়তো সরিয়েছেন  টেবিলটা।  তার পরে ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু যদি তক্তা বা শোবার বিছানাটা  নাইনটি ডিগ্রী  ঘুরে যায় অথবা চেয়ার বিপরীতে বিরাজ করে, তবে ভাবার মত সমস্যা রয়েছে।আবার নতুন বাড়িতে ঢুকে  যদি শোনো সেখানে কেউ আগে মারা গিয়েছেন অথবা যে জমিতে বাড়ি করেছে কেউ সেটি আগে কবরখানা ছিল বা তার মালিক অপঘাতে মরেছে  তা হলে ভয় আছে।  পুত্রহারা গৌতমীকে তথাগত বা ভগবান বুদ্ধদেব বলেছিলেন এমন কোনও বাড়ি থেকে একমুঠো সরষে নিয়ে আসতে, যেখানে মৃত্যু,দুর্ঘটনা বা অশান্তি প্রবেশ করেনি। তার বক্তব্যও একই প্রকারের।  মৃত্যু বা সাংসারিক বিপদ একটা সাধারণ বিষয়। তা কোথাও ঘটে থাকলেই যে ভূত, প্রেত ঘুরবে বা ক্ষতি  করবে, এমন কোনও কথা নেই। পিসেমশাই বললেন, আজ এই পর্যন্ত থাকুক। বাকি বাত বাদমে বোলেগা। একসাথমে হজম নেহি হোগা। পিলাও চায়ে... 

    ২৩

    পিসেমশাই বললেন,  তন্ত্র মন্ত্রে শুধু ভূত প্রেত তাড়ানো নয়, অনেক রোগও ভালো করা যায়। অনেকে এর সাহায্যে মানুষকে উচাটন মন্ত্রে ভিটেছাড়া করানো যায় এমনকি শারীরিক ক্ষতি করা যায়। একবার এক ফাঁসির আসামীর স্ত্রী এসে আমার পায়ে পড়ে বলে,  যেমন  করেই হোক আমার স্বামীকে বাঁচান। আমি প্রয়োজনে লক্ষ লক্ষ টাকা আপনাকে দেব। পিসেমশাই বললেন, এসব বলতে নেই। তোমার স্বামী দোষী হলে সাজা পাওয়া উচিত। তার স্ত্রী বললো আমার স্বামী কাউকে খুন করে নি। ওকে বাঁচান। পিসেমশাই বলেছিলেন,  তাহলে সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করো। ন্যায্য বিচার যাতে হয় তার ব্যবস্থা আমি করতে পারি। স্ত্রী খুশি হয়ে চলে গেলো। কারণ ও জানত ফাঁসি রদ হবেই। হয়েছিলোও তাই। বিচারক আসামীকে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন। পরে জানা যায় ওর স্বামীর উপর কেউ শত্রুতা করে ঝুটা ইলজাম চাপিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু ও দলে ছিলো। ওর বারণ খুনিরা শোনে নি। এক প্রত্যক্ষদর্শী একথা বলে। পিসেমশাই বললেন, সত্যের জন্য তন্ত্র সঙ্গ দেয়। যেসব তান্ত্রিক অপরের ক্ষতি করার চেষ্টা করে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় শেষজীবনে। পিসেমশাই আরও বললেন, তন্ত্র শাস্ত্রে বিভিন্ন ইষ্ট দেবতা আছেন। ব্যক্তি বিশেষে কেউ কালী, কেউ  মা তারা কেউ বা শ্মশান কালীর ইষ্ট করেন। এছাড়া অন্যান্য দেবীরাও আরাধ্যা হয়ে থাকেন। উক্ত সব শক্তি দেবীর দীর্ঘ তালিকা নথিবদ্ধ আছে। এই সাধন প্রণালীতে গুরু-শিষ্য পরম্পরা অতি জরুরি বিষয়। বিভিন্ন তন্ত্রে, যেমন পিচ্ছিলা তন্ত্র, বিশ্বসার তন্ত্র, কামাখ্যাতন্ত্র প্রভৃতিতে গুরুর লক্ষণ বিবৃত হয়েছে। তন্ত্র গুরুকে একধারে সত্যবাদী নির্ভীকহতে হয়। গুরুকে সর্বশাস্ত্র বিশারদ, নিপুণ, সর্ব শাস্ত্রজ্ঞ, মিষ্টভাষী, বিচক্ষণ,  কুলাচার বিশিষ্ট, সুদৃশ্য, জিতেন্দ্রিয়, সত্যবাদী ইত্যাদি গুণশীল হতে হবে।  আমি বললাম তাহলে শিষ্যের জন্যও নানা লক্ষণবিচার রয়েছে।শিষ্যের দীক্ষাকালে গুরু বীজমন্ত্র উপদেশ দেন। এই বীজমন্ত্র বিভিন্ন ইষ্ট দেবীর জন্য আলাদা আলাদা হয়। এই বীজমন্ত্রগুলি অতীব গোপন।  তাই তন্ত্রকারেরা তাদের গোপন রাখার জন্য বিভিন্ন  শব্দ ও তার নতুন অর্থ তৈরি করেছেন, তাই নয় পিসেমশাই।
    পিসেমশাই বললেন , হ্যাঁ, ঠিকই বলেছো। তবে এই সব শব্দের যে সব অর্থ করা হয় তা শুধুমাত্র  শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিরাই উদ্ধার করতে পারেন। একে আদিম  ঈশারাও বলা যায়।  যেমন বলে দিই মাকালী বীজমন্ত্র, 'বর্গাদ্যং বর্ণহিসংযুক্তং।  যে প্রতীকী শব্দটি তৈরি হলো তা হচ্ছে 'ক্রীং'। এইভাবে 'ভুবনেশ্বরী বীজমন্ত্র'হ্রীং', 'লক্ষ্মীবীজ' 'শ্রীং'। যুগ্ম বীজও আছে, যেমন 'তারাবীজ' 'হ্রীং স্ত্রীং হূ ফট' বা 'দুর্গাবীজ' 'ওঁ হ্রীং দূং দুর্গয়ৈ নমঃ'। এইটি অতি দীর্ঘ  তালিকা ও এখানে আলোচনার প্রয়োজন নেই।  এছাড়া এমন কিছু বীজ আছে যেগুলি বিশেষ বিশেষ ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।

    রতন বললো, তন্ত্রসাধনে 'গ্রহণ'-এও সিদ্ধিলাভ সম্ভব। হিন্দু শাস্ত্রে 'গ্রহণ' নিয়ে অনেক বিধি-নিষেধ প্রচলিত। এই গ্রহণ বলতে কি বুঝব। পিসেমশাই বললেন, তান্ত্রিক মতে, তান্ত্রিক সাধনার যাবতীয় সিদ্ধিলাভের উপযুক্ত সময় চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ। সমস্ত তান্ত্রিক তাঁদের মন্ত্র সাধনা এবং গুপ্ত সাধনায় সিদ্ধিলাভের জন্য বছর ভর গ্রহণের অপেক্ষায় থাকেন। তন্ত্র শাস্ত্রে এমন কিছু সাধনার উল্লেখ আছে, যাতে সিদ্ধি লাভ করতে গেলে প্রচুর পরিশ্রম আর কঠোর সাধনা করতে হয়। গ্রহণের সময় সেই সাধনায় বসলে অতি সহজে এবং অল্প সময়ে সাফল্য আসে।

    আমি বললাম এবার জেনে নিই, কী  সাফল্য পাওয়া যেতে পারে গ্রহণকাল থেকে,চাকরি বা ব্যবসায় উন্নতি চাইলে,  কিভাবে পুজো সারতে হয়। 

    পিসেমশাই  বললেন, গ্রহণের আগে স্নান সেরে পুজোর ঘরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে,তার সামনে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে, গ্রহণ শুরু হওয়ার পর  পুজো করতে হয়। গ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই মন্ত্র জপ করতে থাকে তান্ত্রিক। 'ওঁ শ্রীং হ্রীং শ্রীং কমলে কমলালয়ে প্রসীদ প্রসীদ শ্রীং হ্রীং শ্রীং কমলভ্যে নমঃ'। বাড়িতে আলাদা করে কোনও ঠাকুরঘর না থাকলে যে কোনও শান্ত, পবিত্র স্থানে ঘট প্রতিষ্ঠা করে পুজো করতে পারেন।মামলায় জয় লাভ করা সম্ভব যদি গ্রহণ শুরুর সময় বগলামুখী মন্ত্র এক লক্ষবার জপ করে গোটা হলুদ, হলুদ ফুল আর কেশর দিয়ে পুজো করার পর ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয় কেউ।

    রতন বলে আপনি বলেছিলেন এর আগে  একই সঙ্গে পুজোর পর একটি শিব রুদ্রাক্ষ শিবলিঙ্গের সামনে রাখতে হয়। গ্রহণ যতক্ষণ চলবে ততক্ষণ গোটা হলুদের মালা হাতে নিয়ে এই মন্ত্র জপ করতে হবে: 'ওঁ হ্রীং বগলামুখী সর্বদুষ্টানাং বাচং মুখং পদং স্তংভয় জিহ্বা কীলয় বুদ্ধি বিনাশায় হ্রীং ওঁ স্বাহা'।তন্ত্রের ভুল ব্যবহার থেকে মুক্তি পেতে চাইলে গ্রহণের সময় একটি জবা, বড়ো,  ডাব ও লঙ্কা নিয়ে নিজের শরীরের ওপর সাতবার বুলিয়ে বা ঘুরিয়ে দশটি লেবুটিকে  টুকরো করে কেটে ফেলতে হয়।  এবার সেই  টুকরোগুলি চৌরাস্তার চার দিকে ফেলে দিয়ে আসতে হয়।ভূ-লোকে জয় লাভের জন্য একটি বেদি রচনা করতে হয়।

    পিসেমশাই বললেন,  শ্রীদূর্গা  মহাগৌরী পার্বতী। তিনি বলেন, তাঁর যে ভক্ত তাঁকে স্মরণ করে এই মন্ত্র উচ্চারণ করবে, সে এই সংসারে জীবন সুখ-শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করবে। ধন-ধান্য এবং সমৃদ্ধির অভাব হবে না। এটি একটি গোপন পদ্ধতি । এই গোপনমন্ত্র পাঠ করলে মারণ, উচাটন , বশীকরণ  উদ্দেশের সিদ্ধি হয়।এই মন্ত্রটি হল-- ওং এং হ্লীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ ভিচ্চে। ওম গ্লৌং হুং ক্লীং জুং সঃ জ্বালয় জ্ব। বারবার সহস্রবার এই দুর্গা-মন্ত্র জপে দূর হবে সব বিপত্তি, বিপদ এবং অতিমারি।  মুস্কিল হচ্ছে আমরা অবিশ্বাসী চঞ্চল চরিত্রের লোক। এসবের জন্য একাগ্রতা প্রয়োজন। 

    রতন বললো, কেউ যদি  দুঃখ-দারিদ্র্যে জর্জরিত হয়, তার থেকে মুক্তির মন্ত্র আছে ?বা পারিবারিক কলহ রাতের ঘুম কেড়েছে তার মুক্তির উপায় কি?

    পিসেমশাই বললেন তারও উপায় আছে। তান্ত্রিক  আগমবাগীশের বই পড়লে সব জানতে পারবে। আভি কফি খাইয়ে  দাও। আউর মাটন চাপ ভি লানা... 

    ২৪

    পিসেমশাই আজ আমাদের বাড়িতে আছেন। তিনি সাদা কাপড় পড়েন সাদা পাঞ্জাবি আর সঙ্গে একটা পেল্লাই ঝোলা কাঁধে ঝোলানো থাকে। দাড়ি গোঁফ কামানো। মুখে অশ্লীল শব্দ লেগেই আছে। আর ঝোলাতে কি নেই।চটি থেকে চন্ডি, চয়নকরা ঝোলা । প্রয়োজনে একটা করে বের করেন আর জিজ্ঞেস করলে বলেন, এই ঝোলায় ভূত আছে। সঙ্গে মুখে লেগে থাকে রহস্যময় হাসি। রতন বলে, বেশি পিসেমশাইকে ঘাঁটাস না। কি বের করতে কি করে দেবে তখন সামলাতে পারবি না। কঙ্কালসার, মাংস গলে পড়ছে পুতিগন্ধময় ভূতের উচ্ছিষ্ট খান পিসেমশাই। সাধারণ লোক পারবে না। ওনাকে ওনার মত থাকতে দেওয়াই ভালো।

    পিসেমশাই বলেন আমাকে সাধু বলবি না। আমি সাধু নই। তোদের মত সাধারণ লোক। তবে আমাকে আলাদা বিছানা  দিস। আমার ঝোলার ভূত রাতে আসে। শোয় আমার পাশে। ওকে বিরক্ত করা যাবে না। আমার রক্ত হিম হয়ে নামে। আমার বাবা, মা পিসেমশাইকে ভক্তি করেন। বলেন, ওনার চরণধুলা বাড়িতে পড়লে সে বাড়ি পবিত্র হয়ে যাবে। আমরা সব জানি। তোরা তো কদিনের ছেলে। উনি সকলের পিসেমশাই । আট থেকে আশি সকলেই ওনাকে পিসেমশাই বলে ডাকে।উনি সকলের সঙ্গেই মেশেন।বেশি বেগরবাঁই করলে পিসেমশাই রেগে যান। এমনিতে ওনাকে রাগানো দুস্কর। পিসেমশাই বলেন, বহিরাগত আর্যদের বৈদিক ধর্মবিশ্বাসটি মূলত পুরুষতান্ত্রিক। পক্ষান্তরে পৃথিবীর অনার্যদের তান্ত্রিকের ভিত্তি হল  মাতৃতান্ত্রিক। তা ছাড়া আর্যদের বৈদিক মত হল ঋষিকেন্দ্রিক। তার মানে দার্শনিক তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল।

    আমার বাবা বললেন,  এ কারণে মানবকল্যাণে এর ভূমিকা প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ। অন্যদিকে তান্ত্রিকমত। বিজ্ঞান ভিত্তিক হওয়ায় জগৎসংসারে জীবজগতে এর প্রভাব প্রত্যক্ষ। পিসেমশাই বলেন, ঠিক এটি  একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিধান্ত,  দর্শনের মতে  সামগ্রিক দৃষ্টি এবং তন্ত্রমতের খন্ডিত, আদি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি একত্রিত হলেই সাধনা সম্পূর্ণ হয়। এ কারণেই বেদের হোম, পূজা সম্মিলিত ভাবে সনাতনধর্মকে একটি দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে। তন্ত্র থেকে তান্ত্রিকের আবির্ভাব । তন্ত্রের  উদ্দেশ্য হল এই তত্ত্বের সিদ্ধান্তকে জীবনের কর্মক্ষেত্রে রূপদান করা। কাজেই তন্ত্রের প্রচারের মাধ্যম আচরণ বা থিউরি নয়, প্র্যাকটিস। সবকিছুই তন্ত্র বই থেকে প্রাপ্ত পুরোনো আমলের সময় থেকে লেখা। সেগুলো নাড়াচাড়া করে নতুন কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছানো আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। 

    আমার মা বললেন, আপনার কাছে শুনেছি তন্ত্রে নারী জগত হল আদি অনাদির কারণ। তন্ত্রেবিদ্যার  উদ্ভব হয় প্রাচীন বাংলার মাতৃতান্ত্রিক ব্যাধের জীবনে  হয়েছিল বলেই এমনটাই ভাবা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। একটা তান্ত্রিকের বইয়ে লেখা পড়েছি, সোমধারা ক্ষরেদ যা তু ব্রহ্মরন্ধ্রাদ বরাননে।পীত্বানন্দময়ীং তাং য স এব মদ্যসাধকঃ"।।এর তাৎপর্যঃ হলো "হে পার্বতি! ব্রহ্মরন্ধ্র হইতে যে অমৃতধারা ক্ষরিত হয়, তাহা পান করিলে, লোকে আনন্দময় হয়, ইহারই নাম মদ্যসাধক"।

    আমার বাবা বললেন,  মাংস, মদ বা সুরা  সম্বন্ধে বলা হচ্ছে, "মা, রসনা শব্দের নামান্তর, বাক্য তদংশভূত, যে ব্যক্তি সতত উহা ভক্ষণ করে, তাহাকেই মাংসসাধক বলা যায়। মাংসসাধক ব্যক্তি প্রকৃত প্রস্তাবে বাক্যসংযমী মৌনাবলম্বী যোগী"। এরা মানুষের মাংসও খায়। এরা কি অঘোরী বাবা বলেও পরিচিত? 

     পিসেমশাই বলেন, শুধু এটুকুই লেখা নেই। শাস্ত্রে আছে এর  তাৎপর্য  প্রতীকী। "গঙ্গা-যমুনার মধ্যে দুইটি মৎস্য সতত চরিতেছে, যে ব্যক্তি এই দুইটি মৎস্য ভোজন করে, তাহার নাম মৎস্যসাধক। আধ্যাত্মিক মর্ম গঙ্গা ও যমুনা, ইড়া ও পিঙ্গলা; এই উভয়ের মধ্যে যে শ্বাস-প্রশ্বাস, তাহারাই দুইটি মৎস্য, যে ব্যক্তি এই মৎস্য ভক্ষণ করেন, অর্থাৎ প্রাণারামসাধক শ্বাস-প্রশ্বাস, রোধ করিয়া কুম্ভকের পুষ্টিসাধন করেন, তাঁহাকেই মৎস্যসাধক বলা যায়"।

    আমি বললাম, তাহলে এই সাধনায় মাছ, মাংস, নারী, মদ সবকিছুর প্রয়োজন আছে। 

    পিসেমশায় বললেন, ধারণা আরও পরিষ্ককার করতে হবে। এই সাধনা এইরকম। শাস্ত্র পড়ে পাবে "...শিরঃস্থিত সহস্রদল মহাপদ্মে মুদ্রিত কর্ণিকাভ্যন্তরে শুদ্ধ  আত্মার অবস্থিতি, যদিও ইহার তেজঃ, কিন্তু স্নিগ্ধতায় ইনি কোটি চন্দ্রতুল্য। এই পরম পদার্থ অতিশয় মনোহর এবং কুন্ডলিনীশক্তি সমন্বিত, যাঁহার এরূপ জ্ঞানের উদয় হয়, তিনিই প্রকৃত মুদ্রাসাধক হইতে পারেন"।মৈথুনতত্ত্ব সম্বন্ধে 'অতি জটিল' বিশেষণ আরোপ করা হয়েছে আগমসার গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে, মৈথুনসাধক পরমযোগী। কারণ তাঁরা "বায়ুরূপ লিঙ্গকে আঁধার শূন্যরূপ, জঙ্গুলে যোনিতে প্রবেশ করাইয়া কুম্ভকরূপ রমণে প্রবৃত্ত হইয়া থাকেন" কিন্তু বীর্যস্খলন হয় না। কাপুরুষের তন্ত্ররসাধনা হয় না। 

    আমার বাবা বললেন, আবার অন্য ঘরানার তন্ত্রে বলা হচ্ছে, "মৈথুনব্যাপার সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের কারণ, ইহা পরমতত্ত্ব বলিয়া শাস্ত্রে উক্ত হইয়াছে। মৈথুন ক্রিয়াতে সিদ্ধিলাভ ঘটে এবং তাহা হইলে সুদুর্লভ ব্রহ্মজ্ঞান হইয়া থাকে"।যে 'সাধারণ' লোকেরা তন্ত্রের প্রথম উদ্গাতা ছিল এবং ম-কার যাদের দৈনন্দিন জীবনের ছন্দ, তাদের প্রতি পুরোহিতশ্রেণীর আশংকা, "...সাধারণ লোকে উদ্দেশ্য ও প্রকৃত মর্ম বুঝিতে না পারিয়া তন্ত্রশাস্ত্র ও তন্ত্রোক্ত পঞ্চ-মকারের প্রতি ঘোরতর ঘৃণা ও অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন"। উল্লেখ্য, বৌদ্ধ বা ব্রাহ্মণ্য, উভয় ঘরানার তন্ত্রেরই আকর উৎস বিভিন্ন আগমশাস্ত্র। আগমশাস্ত্র বস্তুতঃ আদি প্রযুক্তি প্রকৌশলের গ্রন্থিত সংগ্রহ। খেটেখাওয়া শ্রমজীবী সাধারণ মানুষই আদিতে যাবতীয় আগমশাস্ত্র প্রণয়ন করেছিল। কালক্রমে এইসব ভৌতশাস্ত্র আধিদৈবিক অতীন্দ্রিয় কর্মকান্ডের রূপ পরিগ্রহ করে ইতরজনের নাগালের বাইরে চলে যায়। 'সাধারণ' জনগোষ্ঠীর নৈতিকতায় 'মৈথুন' কখনই 'কদর্য, কুৎসিত' বোধ হয়নি। এই বোধটি আর্যায়নের সঙ্গে এসেছিল। শাস্ত্রকার এভাবে ব্যাখ্যা করছেন, "...আপাততঃ মৈথুন ব্যাপারটি অশ্লীলরূপে প্রতীয়মান হইতেছে, কিন্তু নিবিষ্টচিত্তে অনুধাবন করিলে, তন্ত্রশাস্ত্রে ইহার কতদূর গূঢ়ভাব সন্নিবেশিত আছে তাহা বুঝা যাইতে পারে। যেরূপ পুরুষজাতি পুংঅঙ্গের সহকারিতায় স্ত্রীযোনিতে প্রচলিত মৈথুন কার্য করিয়া থাকে, সেইরূপ 'র' এই বর্ণে আকারের সাহায্যে 'ম' এই বর্ণ মিলিত হইয়া তারকব্রহ্ম রাম নামোচ্চারণ রূপে তান্ত্রিক অধ্যাত্ম-মৈথুন ক্রিয়া নিষ্পাদিত হইয়া থাকে"।শারীরিক মৈথুনের বিভিন্ন অঙ্গ, যেমন আলিঙ্গন, চুম্বন, শীৎকার, অনুলেপ, রমণ ও রেতোৎসর্গ - তেমনই আধ্যাত্মিক মৈথুন ও যোগক্রিয়ায় তার সমান্তরাল কৃত্য, সেখানে 'তত্ত্বাদিন্যাসের' নাম আলিঙ্গন, ধ্যানের নাম চুম্বন, আবাহনের নাম শীৎকার, নৈবেদ্যের নাম অনুলেপন, জপের নাম রমণ আর দক্ষিণান্তের নাম রেতঃপাতন। এই সাধনাটির নাম 'ষড়ঙ্গসাধন' এবং শিবের ইচ্ছায় একে 'অতীব গোপন' মোহর দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া "কলির জীব পঞ্চ ম-কারের মর্ম বুঝিতে পারিবে না বলিয়া কলিতে ইহা নিষিদ্ধ হইয়াছে"। অতএব ইতরজনের জন্য এইসব দর্শন অধরা হয়ে গেল এবং  তাদের হাতে শেষ পর্যন্ত চক ছাড়া আর কিছু থাকতে দিল না। শুদ্রজন ও নারী এই সব শাস্ত্র প্রণয়নের সময় একই ধরনের সম্মান লাভ করত। সাধনযোগিনী নির্বাচনের যে প্রথাপ্রকরণ  বর্ণিত হয়েছে, সেখানে নারীকে এক ধরনের  পণ্য হিসেবে বোধ হতে পারে। নামে নারীই 'শক্তি', কিন্তু শক্তি সাধনের সাধনসঙ্গিনীর যে সব লক্ষণ নির্দেশ করা হয়েছে, তার থেকে সম্মাননা বা অবমাননার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিছু উল্লেখ করা যায়। যেমন, সাধনসঙ্গিনী হিসেবে পদ্মিনী নারী শান্তিদায়িনী। সে হবে গৌরাঙ্গী, দীর্ঘকেশী, সর্বদা অমৃতভাষিণী ও রক্তনেত্রা। শঙ্খিণী নারী হয় মন্ত্রসিদ্ধকারী। সে হবে দীর্ঘাঙ্গী এবং নিখিল জনরঞ্জনকারিণী। এসবে মতান্তর থাকতে পারে। যে নারী নাগিনী গোত্রের, তার লক্ষণ হলো শূদ্র, খর্বা, নাতিদীর্ঘ, দীর্ঘকেশী, মধ্যপুষ্টা ও মৃদুভাষিণী। এরপর কৃষ্ণাঙ্গী, কৃশাঙ্গী, দন্তুরা, মদতাপিতা, হ্রস্বকেশী, দীর্ঘঘোণা, নিরন্তর নিষ্ঠুরবাদিনী, সদাক্রুদ্ধা, দীর্ঘদেহা,  নির্লজ্জা, হাস্যহীনা, নিদ্রালু ও বহুভক্ষিণী নারীকে ডাকিনী বলা হয়।শাক্তদের মধ্যে দুটি প্রধান সম্প্রদায়ের নাম পশু আচারী ও বীরাচারী। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মূল প্রভেদ হচ্ছে পঞ্চ-ম কারের প্রচলন আছে, পশ্বাচারে তা নেই। কুলার্ণবতন্ত্রে এই দু' প্রকার আচারকে আবার সাত ভাগ করা হয়েছে। বেদাচারের থেকে বৈষ্ণবাচার উত্তম, বৈষ্ণবাচার থেকে শৈবাচার উত্তম, শৈবাচার থেকে দক্ষিণাচার উত্তম, দক্ষিণাচার থেকে বামাচার উত্তম, বামাচার থেকে সিদ্ধান্তাচার উত্তম, সিদ্ধান্তাচারের চেয়ে কৌলাচার উত্তম। কৌলাচারের চেয়ে উত্তম ।বিভিন্ন দেবতা এবং বজ্রবৈরেচনীর বীজ একাদশাক্ষর। যোগিনীতন্ত্রে এই কথা শিবের উক্তিতে দেওয়া হয়েছে। দেবীর এই তিন রূপের মধ্যে তারা ও বজ্রবৈরেচনী বৌদ্ধ তন্ত্রের দেবী। পূর্ণাভিষেকের সময় স্বয়ম্ভূ-কুসুমাদির প্রতি যে শুদ্ধিমন্ত্র উচ্চারিত হয় তা এরকম আবার ব্রহ্মশাপ বিমোচন মন্ত্র, শুক্রশাপ বিমোচন মন্ত্র বা কৃষ্ণশাপ বিমোচন মন্ত্র মদ্যের প্রতি উৎসর্গিত হয়। এই সব শুদ্ধি মন্ত্র বা উৎসর্গ মন্ত্রে যেসব প্রতীক ব্যবহার করা হয়, তা এরকম। রজস্বলা স্ত্রীলোকের রজ, স্বয়ম্ভূ পুষ্প বা স্বয়ম্ভূ কুসুম মানে স্ত্রীলোকের প্রথম রজ , কুন্ডপুষ্প মানে সধবা স্ত্রীলোকের রজ, গোলকপুষ্প মানে বিধবা স্ত্রীলোকের রজ এবং বজ্রপুষ্প মানে চন্ড এই লক্ষণটি তন্ত্রচর্চায় ইতরযানী স্বীকৃতির নিদর্শন। এই সব 'পুষ্প' বামাচারী তন্ত্র সাধনার জরুরি উপকরণ। বাউলচর্যাতেও আমরা এজাতীয় পদ্ধতির প্রচলন দেখতে পাই।

    একনাগাড়ে পিসেমশাই বকে গেলেন। তারপর বললেন, মাংসকা গন্ধ আতা হ্যায়। আজ হামকো মাংস রুটি দেগা তুমলোগ। সুক্রিয়া...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন