এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দেওয়ালে টাঙানো তোমার ছবি (কবিতা)

    অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ মে ২০২৩ | ১৮০ বার পঠিত
  • সেদিন লিখতে বসেছিলাম কবিতা,
    "যদি দেখো দেওয়ালে টাঙানো আমার ছবি"।
    সময়টা ছিল সকাল ৯টার কাছাকাছি।
    লিখতে লিখতে হঠাৎই বুকের বাঁদিকে তীব্র ব্যথা ওঠে সেই সাথে অসহ্য মাথার যন্ত্রনা।
    আমি চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে টেবিলে পড়েছিলাম-
    আর মনে ছিলনা কিছু।

    আমি দেওয়ালে সুমিতার ফটোটা টাঙালাম,
    আর তাতে দিলাম একটা রজনীগন্ধার মালা।
    আমার স্ত্রী।
    কিন্তু ওর মুখে যেন কেমন একটা ভাব দেখেছিলাম,
    ঠিক কাউকে মনের কথা বলতে না পারলে যেমন হয় তেমন।

    পরে যখন জ্ঞান ফিরেছিল তখন দেখি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি,
    পাশে বসে আছেন একজন নার্স।
    আমায় দেখে বললেন, কেমন আছেন এখন?
    আমি ধীরে ধীরে বললাম, ভালো আছি।
    কিন্তু, আমার কী হয়েছিল একটু বলবেন?
    নার্স বললেন, একটা মাইল্ড হার্ট এ্যাটাক-
    তাই বেঁচে গেলেন।
    ঈশ্বর রক্ষা করেছেন।
    আরও বললেন, আজই আপনার ছুটি হয়ে যাবে।
    আমি ডক্টরকে ডেকে নিয়ে আসি,
    উনি উঠে চলে গেলেন।

    আমার হাতঘড়িটা বালিশের পাশেই ছিল,
    সময় দেখেছিলাম রাত ৮টা।
    বুঝতে বাকি ছিলনা, এই দশ এগারো ঘন্টা ধরে হাসপাতালে রয়েছি।

    হঠাৎ খেয়াল হয়েছিল সেই দৃশ্যটার কথা।
    আচ্ছা, জ্ঞানহীন হওয়া অবস্থাতেও কি মানুষ স্বপ্ন দেখে-
    কিন্তু আমি যে দেখলাম?
    সুমিতার ছবি দেওয়ালে টাঙিয়ে মালা দিচ্ছি!
    উফ, এমন অবাস্তব স্বপ্ন যেন আর কোনদিন না দেখি!
    ওর কি কিছু বিপদ হল?
    ঈশ্বর ওকে ভালো রেখো।
    মনটা যেন কেমন হয়ে গেল,
    স্বপ্নে তো অনেককিছুই দেখা যায়-
    তাই বলে এইরকম?
    মনকে বোঝাই স্বপ্নের কোনো প্রকারভেদ থাকে না।
    পরে ডাক্তার এসে কিছু ওষুধ লিখে দিলেন আর ছুটি দিলেন।

    আমি হাসপাতালের বাইরে এসে দেখেছিলাম-
    এক ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
    ধীরে ধীরে গাড়িতে উঠলাম।
    গাড়ি চালু করে সে বলেছিল, আজ সকালে আপনার প্রতিবেশীরাই আমার এ গাড়ি ঠিক করে আপনাকে এখানে আনে।
    আপনাকে ভর্তি করিয়ে তারা চলে যায়,
    সেই থেকে এখানেই আছি।

    আধঘন্টা পরে বাড়ি পৌঁছলাম।
    একে রাত অনেক হয়েছে,
    তার উপর গোটা পাড়াটা যেন আরও থমথম করছে।
    এক গভীর শোকের ছায়া যেন নেমে এসেছে।
    বাইরে থেকে ডাক দিলাম-
    সুমিতা সুমিতা।
    দেখো আমি এসেছি।
    কেউ সারা দিলনা।
    সদর দরজাটায় দেখলাম ভিতর থেকে কোনো ছিটকিনি দেওয়া নেই,
    ঠেলতেই খুলে গেল।
    আবার ডাকলাম, সুমিতা সুমিতা
    দেখো আমি এসেছি, সুমিতা।
    এ ঘর ও ঘর খুঁজে চললাম-
    কোথায় নেই ও।
    কী ব্যাপার?
    বাড়ি নেই সুমিতা?
    কোথায় গেছে ও?

    হটাৎ শুনলাম বাইরে থেকে কে আমার নাম ধরে ডাকছে-
    অর্ঘ্যদা অর্ঘ্যদা।
    এসে দেখি সুজয়।
    বল রে।
    বৌদি আর নেই,
    বৌদি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে চিরকালের জন্য।
    কথাটা শোনা মাত্র আমার মাথায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য বোধহয় আকাশ ভেঙে পড়েছিল।
    বললাম, কী কথা বলছিস তুই জানিস?
    দাদা শোনো তোমাকে পুরো ঘটনাটা বলি।

    তুমি সকালে তোমার লেখালিখির কাজে যখন ব্যস্ত ছিলে-
    তখন হঠাৎ নাকি একটা জোর চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ো।
    বৌদি পাশের ঘর থেকে এসে দেখে তুমি টেবিলে মাথা নিচু করে পড়ে আছ,
    কান্নাকাটি করে সারা পাড়া এক করে দিয়েছিল,
    তারপর আমরাই তোমায় হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে এসেছিলাম।
    ইতিমধ্যেই তোমার বাড়িতে ঘটে গেছে এক ভয়াবহ ঘটনা।
    ঠাকুর পূজা করার সময় কীভাবে বৌদির আঁচলে আগুন লেগে যায়-
    যখন ঘটনাটা ঘটেছিল তখন পাড়ায় কেউ ছিলনা,
    সবাই গিয়েছিল তোমার সাথে।
    এসে দেখেছিলাম বৌদির দেহটা আগুনে পুড়ে গেছে একেবারে,
    মুখ আর বোঝাই যাচ্ছিল না।
    সৎকার করে ফিরেছিলাম সন্ধ্যা ৬টায়।

    আমি কয়েক মিনিটের জন্য বোবা হয়ে গিয়েছিলাম।
    সুজয়ের সামনেই হাউহাউ করে কেঁদেছিলাম-
    ও আর কী বা করবে?
    আমায় ধরে ধরে বিছানায় শুয়ে দিয়েছিল।
    সে রাতে আর ঘুমোতে পারিনি,
    সারা রাত কেঁদেছিলাম।
    ক্রমশ সব বুঝতে পেরেছিলাম-
    দেওয়ালে ছবি টাঙিয়ে মালা পড়াচ্ছি আমার সুমিতাকে।
    ভেবেছিলাম, কী কল্পনা আমার মাথায় এসেছিল, আর কী হয়ে গেল!
    যদি কল্পনাটাই না আসতো তাহলে কি এমনটা হতো?
    নিজেকে নিজেই খুনী মনে হয়েছিল।

    আর ভগবান,
    তিনি বাঁচাতে পারলেন না?
    তাঁর সামনেই ঘটে গেল এমন ঘটনা!

    আজও আমি ভিতর ভিতর শেষ হয়ে যাই এই কথাটা চিন্তা করলে।

    ---- অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
    ২৪মে, ২০২৩, বিকাল, বারুইপুর

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন