এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্বাদ বদল

    ঝর্না বিশ্বাস লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | ২৫৩ বার পঠিত


  • বাচ্চারা অল্প বড় হতেই যখন বুলি ফুটতে শুরু করে মা বাবারা একভাবে তাকিয়ে শুনতে চায় ওর প্রথম বলা শব্দটা... কোনো কোনো বাচ্চা শুরুতেই কাঁদতে কাঁদতে ‘মা’ বলে ফেলে... কেউ আম্মা... তবে কঙ্কাবতীর ছেলে চেঁচিয়ে উঠল ‘খানসামা’ বলে...!

    অল্প পড়াশুনা জানা কঙ্কাবতী প্রথমে ওটার মানে বোঝে নি, তবে কানে শব্দটা বার কয়েক গেলে জিজ্ঞেস করেই বসল হাবুলকে...

    ছেলে এসব কী বলে গো...
    খানসামা...?
    এ কোন ভাষা?

    হাবুলও ধমক দেয়।
    ও সব তোমার ধারা পাবে। তুমি যা নাটুকে, ছেলে আরো এক কাঠি এগোবে দেখে নিও।

    আঁচলের খুঁটিটা দুঃখে চুষতে গিয়েও হাত নামিয়ে দেয় কঙ্কাবতী। তারপর ফোঁস ফোঁস করে এগোতে থাকে রান্নাঘরের দিকে।

    হাবুল একটা দোকানে কাজ করে... ক্যাটারিং-এর। পাড়ায় এ দোকানটা বেশ রমরমিয়ে চলে। রবিকান্ত ঘোষ এখন পদ্মবাবুর পার্টি ছেড়ে এই ব্যবসায় মন দিয়েছে... আর হাবুল তাঁর প্রিয় কর্মচারী।

    শুরুতেই বড়সড় অর্ডার পায় ওরা। তবে বছরের শুরুটা সেবার একটু স্পেশাল, মানে চিনি রায়ের বিয়ে।
    চিনি এ পাড়ায় ক্যাটরিনা, কত ছেলে ওর নাম নিয়ে কাঠের ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে সিগারেট খায় আর বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে। চিনি টিউশন শেষে ও পথেই বাড়ি ফেরে। ওর এক ঝলক দেখতে পেলেই এই ছন্নছাড়া পোলাপানগুলোর মন ভালো হয়ে যায়। হাবুলও কদিন আগে পর্যন্ত ঐ দলেই ছিল, কিন্তু যবে থেকে কঙ্কাবতীর সাথে পালা পড়েছে সে এখন বাবুটি সেজে কাজে যায়। 
    ওদিকে তাকায়ও না।

    কঙ্কাবতীও বিয়ের আগে রান্নার কাজ করত। চিনিদের সাদা বাড়িটাকে সবাই ভাইবোনদের বাড়ি নামেই ডাকে। সেখানেই প্রথম কাজ পায় কঙ্কাবতী। আর সেই চিনির বিয়ের রান্নাতেই হাবুল ও কঙ্কার বিরিয়ানির ডেকচিতে শুভদৃষ্টি হয়। প্রথম দর্শনেই প্রেম হয়ে যায়। ওদের রান্না করা বিরিয়ানি সেদিন বহু প্রশংসা পায়।

    বাসি বিয়ের দিন চিনির মা কঙ্কাকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে বলে,
    - কাল তোদের বিরিয়ানিতে এত স্বাদ! হাবুল আর তুই মিলে যা রান্না করলি!।.. বর-কনে দুই পক্ষই পাত চেটে খেয়েছে।

    কঙ্কা হাসে শুধু, উত্তর দেয় না কিছুর... তবে হাবুলের নামটা শুনে চিনচিনে একটা ব্যথা হয় বুকের বাঁ দিকে... অনুষ্ঠান বাড়িতে পরিবেশনের সময় নায়ক দেব-এর মত ও বেশ কায়দা করে পাশে এসে বলেছিল,
    কঙ্কা তোকে আমি রাজরানী করে রাখব।

    কলপাড় থেকে এই মুহুর্তে জোরে একটা হাঁচির শব্দ আসে। সাইকেল খুঁটির গায়ে দাঁড় করিয়ে হাবুল ঘরে ঢোকে। আজ হাতে একটা গাঁদা ফুলের মালা। প্রথম বিবাহবার্ষিকী ও ভোলেনি। কঙ্কাও ভোলে নি সে সব কথা। তাই বেশ কায়দা করে রেঁধেছে হাবুলের প্রিয় পদ, যেটায় দুজনের এক হওয়া...
    সেই বিরিয়ানি...

    ছেলে আজ খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে অথবা কঙ্কাই করেছে কিছু একটা। তারপর ফুলকাটা আসনটা মেঝেতে পেতে একটা বড় থালায় উপুড় উপুড় বিরিয়ানি আর এক গ্লাস জল সাজিয়ে দেয় হাবুলের সামনে। হাবুলও গাঁদা ফুলের মালাটা কঙ্কার হাতে দিয়ে বলে,
    - সেজে আয় তো, দেখি কেমন লাগে।

    কঙ্কা যেই মুহুর্তে রান্নাঘর থেকে বেরিয়েছে, এক গরাস বিরিয়ানি তুলে নেয় হাবুল... তারপর নাকের সামনে এনে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে...
    দরজার আড়াল থেকে কঙ্কা তা দেখে খুব জোরে হেসে ফেলে...

    হাবুলেরও মনে পড়ে যায়... বিয়েবাড়িতে সেদিনের জোরাজুরিতে কঙ্কার লিপস্টিক মাখা রুমালখানা ঝুপ করে পড়ে গেছিল বিরিয়ানির কড়াইটায়...
    আর তার যা স্বাদ, সে এক গল্প হলো বটে।..
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন