এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • গ্রহান্তরের আগন্তুক

    Pradhanna Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ মার্চ ২০২৩ | ৩৮৭ বার পঠিত
  •  
    অনেক সময় এমন হয়, কিছু কিছু বই আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে। যেন সে বলতে চায়, পড়ে দেখা দেখি, কেমন দম আছে। এই সমস্ত বইয়ের ক্ষেত্রে দুটো পথ। এক, বইটাকে না পড়া; এবং দুই, বইটাকে ঠেলে গুঁতিয়ে শেষ করে বলে ওঠা, হিপ্‌ হিপ্‌ হুররে...

    তৃতীয় আরেকটা পথ আছে। বইটাকে পড়ার জন্য পড়াশোনা করা। ইংরাজীতে যাকে বলে ‘প্রিপারেশান’। সেই সাথে পড়ার মাঝে মাঝেও পড়াশোনা করা। এবং আস্তে ধীরে, সময় নিয়ে, বইটাকে শেষ করা। তৃতীয় ক্ষেত্রে আপনি পরিশ্রমী, কারণ, বিশেষ করে, যে পর্যায়ে আপনাকে পৌছতে হচ্ছে, সে পর্যায়ে পৌছনোর একটা মানসিকতা থাকা চাই। সেই মানসিকতা না থাকলে এ বই শেষ করতে আপনি অপারগ। আর অপারগ হলেই, আপনি জ্ঞানের কিয়দংশ খোয়ালেন, সেই জ্ঞানের সূত্র ধরে আরোও যে সমস্ত জ্ঞান অর্জন করতে চান, সেগুলোর পথও বন্ধ হয়ে গেল।

    এসমস্ত কথা আমার নয়। আমি শুনেছিলাম আমার স্যারের কাছ থেকে। আজ ‘গ্রহান্তরের আগন্তুক’ গল্পগুচ্ছটা পড়তে গিয়ে আবার সে কথাগুলো মনে পড়ল। ননী ভৌমিকের বেশ কয়েকটি অনুবাদ আমার পড়া। তার অনুবাদ পড়তে আমার ভালোই লাগে। কিন্তু এই অনুবাদটা পড়তে পড়তে আমি বারবার অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। কীভাবে অনুবাদ করলেন তিনি? অনুবাদ করার আগে কিরকম প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? দুর্ভাগ্য, জানার উপায় নেই।
     
    এই বইটিতে পাঁচটি গল্পের সমাহার---
     
    ১। আলেক্সান্দর কাজানৎসেভের ‘গ্রহান্তরের আগন্তুক’
     
    ২। আলেক্সান্দর বেলিয়ায়েভের ‘হৈটী হৈটি’
     
    ৩। আনাতলি দ্‌নেপ্রভের ‘ম্যাকসওয়েল সমীকরণ’ এবং ‘আইভা’
     
    ৪। ভ্‌লাদিমির সাভ্‌চেঙ্কোর ‘প্রফেসর বার্নের নিদ্রাভঙ্গ’
     
    এর মধ্যে আনাতলি দ্‌নেপ্রভের গল্পদুটো যদি ভাল করে পড়া যায়, তাহলে বোঝা যাবে, কি পরিমাণ বিজ্ঞানে, বিশেষত ফিজিক্স, ইলেকট্রনিক্স এবং টেকনোলজিতে দখল থাকলে এমন দুটো ছোটগল্প লেখা সম্ভব! এই গল্পদুটোর মধ্যে একটা vision আছে, যা সাই-ফাই সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গতত্ত্ব সারা বিশ্বের পদার্থবিদ্যার মূল চার তত্ত্বের একটি, সেই তত্ত্বের জটিলতাকে সন্মান দিয়ে তার প্রভাবকে উপায় বানানোর এমন একটা গল্প হওয়া সম্ভব ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। একই কথা ‘আইভা’ সম্পর্কেও। রোবোটের প্রতাপ নিয়ে কত উপন্যাস তো পড়েছি, রোবটকে ক্ষমতা দিলে কি হতে পারে তা নিয়ে তো কত গল্প পড়েছি, কিন্তু সেই রোবটকে তৈরী করা এবং আস্তে আস্তে তার বিকাশকে বিজ্ঞান ও আঙ্কিক আঙ্গিকে প্রতিষ্ঠা করা এবং অবশেষে তার বিকাশের ধারাকে প্রতিষ্ঠা করা ও আশঙ্কাকে দর্শানো, তাও একটা ছোটগল্পে, চাট্টিখানি কথা নয়। সেটাই করেছেন দ্‌নেপ্রভ।
     
    মূলত দ্‌নেপ্রভের গল্পদুটিই আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে। কিন্তু তা বলে এমন নয় যে, বাকি গল্পগুলো ভাল নয়। বেলিয়ায়েভ, যিনি ‘উভচর মানব’ লিখে বিখ্যাত, তার লেখায় রয়েছে মানুষের সাথে মনুষ্যেতর জীবের একটা সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা। একটা হাতিকে কেন্দ্র করে এই রচনার প্রক্রিয়াটা অভিনব।
     
    শেষ গল্পটা সাভচেঙ্কোর। এখানে বিবর্তনবাদ নিয়েই মূলত চর্চা হয়েছে, এবং এই চর্চায় প্রায় আঠেরো হাজার বছর পর মানব প্রজাতির ভবিষ্যৎ কি হতে পারে তার একটা দৃষ্টিভঙ্গী দেওয়া হয়েছে। গল্পটার টুইস্ট আমাকে সবচেয়ে বেশি চমকে দিয়েছে।
     
    তুলনামূলক প্রথম গল্পটা একটু ম্যাড়ম্যাড়ে লেগেছে। মঙ্গলগ্রহে জীবনের অস্তিত্বের প্রতিষ্ঠা নিয়ে একটা বন্ধ ঘরের কথোপকথন নিয়ে লেখাটা কোথাও একটু হলেও পীড়া দেয়। পুরো গল্পটা খোলার আগেই কেমন যেন বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি, আলোচনার মধ্যেকার লজিকগুলোতেও গভীরতার অভাব পাওয়া যায়। অথচ এই গল্পটাকেই সবার শুরুতে রাখা হয়েছে। যদিও পাঠক মনকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা অনেক বেশি রাখে ‘হৈটী টৈটী’।
     
    বইয়ে লেখা আছে, প্রগতি থেকে প্রথম বইটির বঙ্গানুবাদ প্রকাশ পায় ১৯৬৪ সালে। আর ১৯৬০ থেকে ১৯৬২-র মধ্যে বিভিন্ন সময়ে গল্পগুলো প্রকাশ পায়। সেই সময়ে মঙ্গল গ্রহ, কম্পিউটারের আগ্রাসন, বিবর্তনের পথনির্দশ ইত্যাদি নিয়ে বিজ্ঞানীমহল মাথা ঘামালেও তা ছিল অনেকটাই প্রাথমিক পর্যায়ে। ফলে গল্পগুলো পড়ার সময়ে সময়কালটাকে মনে রাখলে পড়াটা সহজ হয়ে যায়। এবং এটাও দেখে আশ্চর্য হতে হয়, সেই সময়ে এই অগ্রগতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে লেখকেরা কতটা সতর্ক ছিলেন, কতটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, এবং সেখান থেকে সমস্যাগুলোকে আমাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
     
    প্রচ্ছদ বড়ো সুন্দর। মনকাড়া। যদিও, ছবির পার্থিব এবং গল্পের অপার্থিব রকেটের মধ্যেকার কোন পার্থক্যই চোখে পড়ল না। কিন্তু তাতে কি? প্রকাশনা বিভাগের লক্ষ্যই যদি হয় মনকাড়া সুদৃশ্য ছবিযুক্ত প্রচ্ছদ, তাহলে গল্পের সাথে মিল হল কি হল না, তাতে কি আর এসে গেল? প্রচ্ছদ সুদৃশ্য হয়েছে, এতটাই বলার আছে।

    ===============================
    গ্রহান্তরের আগন্তুক
    লেখকঃ আ কাজানৎসেভ, আ বেলিয়ায়েভ, আ দ্‌নেপ্রভ, ভ সাভ্‌চেঙ্কো
    অনুবাদকঃ ননী ভৌমিক
    কল্পবিশ্ব পাবলিকেশান
    মুদ্রিত মূল্যঃ ২৭৫ টাকা

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2601:14a:500:e780:3477:8d85:e56c:4ddf | ২৪ মার্চ ২০২৩ ০১:০২517792
  • আমার কাছে যে বইটা ছিলো তার প্রচ্ছদ অন্য ছিলো। কতগুলো কনস্টেলেশনের ছবি, গাঢ় নীল আর সাদা দিয়ে আঁকা।
  • গ্রহান্তরের আগন্তুক (প্রগতি) | 223.29.193.1 | ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৪:১৬517797
  • https://sovietbooksinbengali.blogspot.com/2016/04/blog-post.html
     
    এখানে যেটা পাবেন না সেটা হল নতুন বইটার ভূমিকা আর শেষের দেওয়া বিভিন্ন এডিশনের গল্পগুলোর কভার আর ইলাসট্রেশনগুলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন