এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  অর্থনীতি

  • নিতুই নব পর্ব ৪ ক্রেদি সুইস

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | অর্থনীতি | ২১ মার্চ ২০২৩ | ৯৩৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • নিতুই নব পর্ব ৪


    ডাইনে ক্রেদি সুইস বাঁয়ে ইউ বি এস পারাদেপ্লাতস জুরিখ 

    ক্রেদি সুইসকে যেমন দেখছি
     
    অভিযোগ করো না যখন মূর্খেরা বানায় মৌচাক
    উপভোগ করে জীবনের সকল সুখ, কিছুদিনের জন্যে
    অন্যায় অধর্ম জোচ্চুরি বিলাসিতা অহংকার মিলে মিশে বাঁচে
    জেনো কেবল সৎগুনে ধনী হয় না কোনও সমাজ
     
    বারনারড ম্যানডেভিল (১৬৭০-১৭৩৩ ) @

    চার দশক আগে ফ্রাঙ্কফুর্টে যখন ব্যাঙ্কিং  জীবন শুরু করেছি, সেখানে কোন সুইস ব্যাঙ্কের পূর্ণ শাখা ছিল না। রেজিস্টার্ড ব্যাঙ্কের তালিকা ধরলে সুইজারল্যান্ডের সেই রূপ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, যদিও তাদের বিরাট অংশ ছোটো মাপের প্রাইভেট ব্যাঙ্ক, সেটা আমার জ্ঞানের পরিধির বাইরে। এছাড়া শুনতাম জুরিখের পাঁচটি পরাক্রমী ব্যাঙ্কের গল্প যারা অন্য কিছুর সঙ্গে বাণিজ্যিক বা ধার দেওয়া নেওয়ার ব্যবসা করতেন যেমন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে দেখে এসেছি। এখানে অবশ্য আরেকটি মাত্রা যোগ হতো যার নাম গোপনীয়তার শপথ। আপনার ধন কোথায় লুক্কায়িত আছে কেহ জানিবে না -  প্রাণ জায়ে পর খাতা কা নাম না বাতায়ে।

    এক নম্বরে ছিল ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ সুইজারল্যান্ড (শোয়াইতজারিশে বাঙ্ক গেজেলশাফট), তারপর সুইস ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন (শোয়াইতজারিশে বাঙ্ক ফেরাইন), ক্রেদি সুইস (শোয়াইতজারিশে ক্রেডিটআনসটালট), সুইস ফোলকসবাঙ্ক (শোয়াইতজারিশে ফোলকসবাঙ্ক)।

    তারপর একদিন (১৯৯৩) চার নম্বরের সুইস ফোলকসবাঙ্ককে কিনে নিলো ক্রেদি সুইস, ১৯৯৮ সালে সুইস ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন  ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের করায়ত্ত হয়েছে, আর গতরাতে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ সুইজারল্যান্ড তাদের হেড অফিসের মাত্র ছ শো মিটার দূরের ক্রেদি সুইসের অধিগ্রহণ করে দেশের সবেধন নীলমণি ব্যাঙ্করূপে পরিচিত হলো।

    হারাধনের বাকি রইল একটি ছেলে।

    জুরিখার কানটনাল ব্যাংক অন্য লিগের ! 

    কেন ক্রেদি সুইস বিক্রি হল তার সম্যক তথ্য খবরের কাগজ, ইন্টারনেট, টেলিভিশনের ডিবেট (যাকে নাকি বলে নুক্কড় বহস বা নেশন ওয়ানটস টু নো) এবং লোকমুখে চেনা শোনা জানা যায়। সেটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। আগের পর্বে বলেছি ক্রেদি সুইসের চারটে মূল কর্মধারা – আপনার আমার চির পরিচিত কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কিঙ্গে তারা কখনো লোকসান করে নি, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও প্রাইভেট ব্যাঙ্কিং লাভ জনক - দুনিয়ার ধনী ব্যক্তিরা তাঁদের টাকা ভরা সুটকেস ৭০ নম্বর পারাদেপ্লাতসে গচ্ছিত রেখেছেন। সুদ পেয়েছেন দবাকে। তাহলে সমস্যাটা কোথা হতে এলো? ব্যাঙ্কের অলিখিত মূলধনের নাম বিশ্বাস – সেটি যদি হারায়, দুনিয়ার কোন ব্যাঙ্ক নিরাপদ নয়। এক সময় রান অন দি ব্যাঙ্ক হতো মুখের কথায়, গুজবে, কথা হয়েছে কানে কানে।  আজ সামাজিক মাধ্যমের দ্বারা সেই ব্যাঙ্ক রানের  কাজ সুচারু রূপে সাধিত হয় - সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের পঞ্চত্ব প্রাপ্তির কাহিনি সকলে অবগত আছেন।

    ক্রেদি সুইস তার খদ্দেরের বিশ্বাস কবে হারাল? ব্যাঙ্কের প্রতি আস্থা একদিনে বিনষ্ট হয় না, একটি ঘটনায় হয়তো নয়। ঠিক কি কারণে ক্রেদি সুইস একদিন তার কাছে গচ্ছিত ধন হারাতে শুরু করল তার তালিকা শিগগির কোথাও দেখা যাবে। একদিন তা নিয়ে নিশ্চিত পুস্তক রচনা, এমবিএ ক্লাসে পড়ানো হবে।  ইউটিউবে দেখা যাবে ঘণ্টা ব্যাপী ক্লিপ। সে বহু মনিষীর কাজ।

    আমরা একই ডালের পাখি একই খদ্দেরের খোঁজে ঘুরি। তবে ক্রেদি সুইস বালজ ব্র্যাকেটের (পড়ুন বড়ো ট্যাঁক ওলা) ব্যাঙ্ক, চ্যাম্পিয়নস লিগের খিলাড়ি। খদ্দের তাদের আসতে আজ্ঞে হোক বলে দুয়োর খুলে পাখা চালিয়ে দেয়। আমাদের ব্যাঙ্ক (স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) অলসো র‍্যান, বড় জোড় বড়িশা বারাসতে ফুটবল খেলে। কিন্তু ধান্দা তো এক – তারা এমন কিছু আবিষ্কার করে নি যা আমাদের একান্ত অজ্ঞাত। তাই কিছু ঘটনা খুব কাছ থেকে দেখেছি। তখন সংশয় হয়েছিল। তবে গরিবের কথা বাসী হলে সত্য প্রমাণিত হতেও দেখলাম।

    সাল ২০০৮। মোজাম্বিকের মাপুতো শহরে আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের বার্ষিক সমারোহ। সে মহাযজ্ঞে আফ্রিকার প্রায় সব দেশের অর্থমন্ত্রী হতে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক গভর্নর হাজির। মিটিঙে যা গল্প হচ্ছে হোক, এই সুযোগে সেথায় আগত নানান দেশের ও মোজাম্বিকের ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে বৈঠক করে নতুন ব্যবসা খুঁজি। আমাদের কোন ব্রাঞ্চ নেই সে দেশে, তাই মক্কেল ধরার এমন সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। একদিন গেলাম সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর আরনেস্টো গভের সঙ্গে দেখা করতে। এই মউকায় সে দেশের বিদেশি মুদ্রার হালচাল বুঝে নেবার চেষ্টা করা হয়-  আপনার ভাঁড়ারে কত ডলার আছে এমন প্রশ্ন করা যায় না। তবে আরনেস্টো নিজেই বললেন মাস পাঁচেকের আমদানি মেটানোর মতন সম্পদ তাঁর আছে। এটাও জানালেন মোজাম্বিকের কোন বিদেশি ঋণের জন্য তাঁর বা সরকারের গ্যারান্টি দেওয়ার হাত আইএমএফ বেঁধে রেখেছে ।

    এখানে ওখানে বারে গল্প গুজব শুনছি কোনো সুইস ব্যাঙ্ক মোজাম্বিকে একটা বিরাট ডিল করছে বা ম্যানডেট পেতে যাচ্ছে। তবে সেটা সরাসরি লোন নয়, মোজাম্বিকের কোন প্রকারের রপ্তানি দ্বারা সুরক্ষিত হবে। সে দেশের তেল নেই, কিছু কাঠ রপ্তানি হয় ইউরোপে, তাইওয়ানে। তাতে আর কত জোটে? খটকা লাগলো।

    ফিরে আসার পরে আমার চেনা একটি জার্মান ছেলে ধরুন, ডানিয়েল, ফোন করলে ক্রেদি সুইস লন্ডন থেকে – তার একটি ঋণের অংশ আমরা নিতে চাই কি না জানবার জন্য। তাকে আমি চিনতাম পূর্বসূত্রে। তার বউ জাম্বিয়ার মেয়ে। সে দেশে আবার আমাদের খামার আছে - তাই আলাপ পরিচয় সহজেই ঘনীভূত হয়। জানলাম রটনাটি সত্য বটে।  ক্রেদি সুইস মোজাম্বিক সরকারের জন্য একটি বিশাল ঋণের আয়োজন করছে। মোজাম্বিকের সমুদ্রে টুনা মাছ মেলে – ক্রেদি সুইস একটি লেবানিজ জাহাজ নির্মাতাকে (সাফা) অর্থ সরবরাহ করবে। তাদের তৈরি নৌকা যোগে টুনা মাছ ধরা ও বিদেশে বিক্রি - তা থেকে অর্জিত বিদেশি মুদ্রা দিয়ে মোজাম্বিকের ঋণ শোধ হবে। মোজাম্বিকের বার্ষিক অর্থনীতিক উন্নয়নের হার তখন আফ্রিকার শীর্ষে –ইকনমিসট পত্রিকা সেই ঢোল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে আটশো মিটার দৌড়ে হয়তো সর্বকালের সেরা মহিলা অ্যাথলিট মারিয়া মুতোলা (ছটি অলিম্পকে অংশ নেন) এবং ফুটবলার ইউসেবিওর (১৯৬৬ ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট) নামটাও করতে ভোলেন না – মোজাম্বিক তেমনি ছুটছে অগ্রগতির দিকে। ডানিয়েল আরও জানালে এই ঋণটির জন্য মোজাম্বিক সরকার গ্যারান্টি দেবে।

    আমার স্টেট ব্যাঙ্ক, সিঁথি বরানগরের শিক্ষায় অঙ্কটা মেলে না – গভর্নর আরনেস্টো গভ যে আমাকে বললেন তাঁরা কোন প্রকারের গ্যারান্টি দিতে অপারগ? ক্রেদি সুইস এমন কিছু জানে যা আমরা জানি না? ডানিয়েলকে বলতে হল, আমায় ক্ষম হে ক্ষম, আমার ক্রেডিট গুরুরা মত দিচ্ছেন না। সে বললে ঠিক আছে (লাস ডাস জাইন) কি ডিল যে তোমরা হারালে জানো না। যে ডিল নিজেরা করি না সেটা বাজারে কেমন চলছে তার খোঁজ খবর রাখি। তৎকালীন এ বি এন আমরো ব্যাঙ্কের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিঙের হেড রোনালড লিউ আমাকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি তখন বাজারে নতুন, স্নেহভরে বলেছিলেন - খানিকটা ইনডাসট্রিয়াল এসপিওনাজ করা ভালো! আফ্রিকার জন্য  লগ্নিকারক খুঁজছি নাইজেরিয়াতে – লাগোসে ব্রেকফাস্টে এক ব্যাঙ্কের বড়ো কর্তা বললেন তাঁরা এক ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণে যোগ দিচ্ছেন আফ্রিকার কোথাও, আর কিছু দেখছেন না। মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল- মোজাম্বিক? তিনি মৌনতা অবলম্বন করলেন।

    খেলার স্কোর: ২০২১ সালে সরকারি ভাবে জানা গেলো ২০১২-১৬ সালে ক্রেদি সুইস দু বিলিয়ন ডলারের যে টুনা বন্ড ডিল করে সেটি সম্পূর্ণ বেআইনি ছিল। ক্রেদি সুইসের ব্যাঙ্কাররা দুশো মিলিয়ন ডলার পকেটস্থ করেছে। প্রায় চারশ মিলিয়ন ডলারের ফাইন রুজু হল ক্রেদি সুইসের ওপরে। মোজাম্বিকে আইএমএফ তার অর্থ সাহায্য ও সরবরাহ স্থগিত রাখে। মোজাম্বিকের মুদ্রা মেতিকাল এবং তার অর্থনীতি দুইই সম্পূর্ণ  বিপর্যস্ত।

    প্রায় বিশ বছর আগে (সেপ্টেম্বর ২০০৩) হামবুর্গে একটি সেমিনারে ক্রেদি সুইসের এক বন্ড সেলসম্যান (শেফার) আমাদের বোঝালেন আমদানি রপ্তানির ব্যবসা অথবা একই দেশের ভেতরে ইনভয়েস অথবা চালান স্বল্প মেয়াদি হলেও তার ঝুঁকিকে একত্র করে বন্ড হিসেবে বেচা যেতে পারে।  হল ভর্তি ট্রেড ফাইনান্সের হাতুড়ের সামগ্রিক প্রশ্ন : ধরুন শেল তেল বেচল ১৮০ দিনের কড়ারে, কেনিয়ান ক্রেতা হুন্ডিতে সই করে জানাল সে যথা সময়ে দাম চুকিয়ে দেবে কিংবা ফ্রাঙ্কফুর্টের কোন তামাক ক্রেতা এই হামবুর্গের বিক্রেতাকে ঠিক একই ভাবে হুন্ডিতে সই করতে ও আপন প্রতিশ্রুতি দিতে  পারে - এই ঝুঁকি একান্ত ভাবেই স্বল্প মেয়াদি। ছ মাসের মধ্যেই খেল খতম। আপনার বন্ড ইনভেসটর চায় দীর্ঘ মেয়াদি কিছু। এ কাগজ সে কিনবে কেন? ডক্টর শেফার বললেন সেটা ঠিক। কিন্তু মনে করুন আমরা একটা সুটকেস ভর্তি করেছি বিভিন্ন রপ্তানি কারকের হুন্ডি বা আপনাদের হামবুর্গ উদাহরণের ইনভয়েস/চালান দিয়ে। সেটাকে সেই সুটকেসকে যদি সর্বদা ভরে রাখা যায় অর্থাৎ একটা হুন্ডি /চালানের দাম চুকে গেলে আরেকটা হুন্ডি সেখানে গুঁজে দেওয়া যায় তাহলে সুটকেসটি খালি হয় না – সেটি বেচা যায় লগ্নিকারককে। ভাষণের পরে আমাদের সঙ্গে জানলায় দাঁড়িয়ে বিনেন আলস্তারের শোভা দেখতে দেখতে কফি পান করে ডক্টর শেফার ক্ষুণ্ণ মনে জুরিখে ফিরলেন। আমাদের স্বল্প মেয়াদি ট্রেড ফাইনান্স চলল তার নিজের মতো।  

    চার বছর আগে ওয়ারশতে একটি বাণিজ্যিক কনফারেন্সে মিখাইল (মিশা) মাইলাকের সঙ্গে আলাপ হয় – অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত যুবক, বাবা রাশিয়ান, মা ফরাসি। গোটা পাঁচেক ভাষায় স্বচ্ছন্দ।  গরকির চেলকাশ নিয়ে চুলচেরা আলোচনা হয়েছিল একাধিক জিভিঞ্চ বিয়ার সেবন সহ।  মিশা লন্ডনের একটি ইন্সিউরেন্স কোম্পানিতে  কাজ করে তবে সত্বর সে একটি ইনভয়েস ডিসকাউনটিং কোম্পানিতে যোগ দেবে – তার সি ই ওকে আমি আমি চিনতেও পারি - লেকস গ্রিনসিল এক সময়ে সিটি ব্যাঙ্কে কাজ করেছে। এখন সে একটি সংস্থা খুলেছে - তার বিশেষত্ব হল সাপ্লায়ার ফাইনান্স। বিক্রেতা ৯০ দিনের কড়ারে মাল বেচল – তাকে মূল্য চুকিয়ে দেওয়া হল আজকে। এবার তার ইনভয়েস বা চালানটি নিয়ে আমরা নির্ধারিত দিনে ক্রেতার দরোজায় হাজির হয়ে টাকা আদায় করব। আমাদের মজুরি জুটবে বিক্রেতার কাছে ফি আদায় করে। কাকতালীয়বৎ তার বছর খানেক  বাদে শন হানাফিন আমাকে ফোন করল - স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্কের কর্পোরেট রিলেশনশিপের কাজ ছেড়ে সে একটি নতুন কাজে  যোগ দিয়েছে। তার নাম গ্রিনসিল – চেয়ারিং ক্রসের কাছেই স্ট্র্যানডে তার পেল্লায় অফিস। একদিক থেকে অন্যদিকে যেতে বাই সাইকেল লাগে!  জবরদস্ত আপ্যায়িত হলাম।

    লেকস গ্রিনসিল অস্ট্রেলিয়ান – তার বাবা কুইনসল্যান্ডের বুনডাবেরগের তরমুজ চাষি। লেকস তার বাল্যকালে দেখেন সময়মত তরমুজের দাম না পেলে তার বাবার সংসার চালানো কঠিন হতো। সিটি ব্যাঙ্কে তিনি ট্রেড ডিপার্টমেনটে কাজ করে সাপ্লাই চেন ফাইনান্সের বিষয়টি শেখেন। ইতিমধ্যে তাঁর আলাপ হয়েছে জেরেমি হেউড নামক এক সিনিয়র ব্রিটিশ আমলার সঙ্গে। হেউড প্রধান মন্ত্রী ক্যামেরনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন লেকসের – ছেলেটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান, তার মাথায় অনেক আইডিয়া যা ব্রিটিশ সরকার কাজে লাগাতে পারেন যেমন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এন এইচ এস) যে ওষুধ কেনে তার দাম গ্রিনসিল তৎক্ষণাৎ ওষুধ বিক্রেতাকে দিয়ে দিতে পারে।  ক্যামেরন লেকসকে একটা দফতর দিলেন দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে, লেকস নতুন কার্ড ছাপালেন – প্রধান মন্ত্রীর পরামর্শদাতা (অ্যাডভাইসর)। কড়া নাড়ার আগেই দরজা খুলে যাচ্ছে লেকস গ্রিনসিলের সামনে। 

    এনটার ক্রেদি সুইস !

    তথ্যের ভার না বাড়িয়ে অতি সংক্ষেপে বলি – বিশ বছর আগে ডক্টর শেফার যে আইডিয়া আমাদের মতন ব্যাঙ্ককে বিক্রি করতে এসেছিলেন, লেকস গ্রিনসিল সেটাই বেচলেন এবার ক্রেদি সুইসকে! খুব সহজেই – গ্রিনসিল ক্যাপিটাল সব সময়ে একটা বিশাল পরিমাণের  চালান/হুন্ডি জমা রাখবে যা ক্রেদি সুইসের বন্ডহোল্ডার কিনবেন। অতি দ্রুত ক্রেদি সুইস ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক তাদের মক্কেলদের বেচল দশ বিলিয়ন ডলারের চালান! সত্যি এই সুটকেসের ভেতরে কি ছিল সেটা আবিষ্কৃত হল এই দু বছর আগে।  এটি যে এক জঞ্জালের সম্ভার সেটি জানার পরে ক্রেদি সুইস বাধ্য হল একটি প্রকাণ্ড লোকসান নিয়ে সাপ্লাই চেন ফাইনান্সের বন্ড বিক্রি বন্ধ করতে।

    খেলার স্কোর :  গ্রিনসিল ব্যাঙ্ক দেউলে হয়েছে  প্রভূত লোকসানের বোঝা নিয়ে। ক্রেদি সুইসের ক্ষতির হিসেব নিকেশ চলছে।  তাদের বন্ডহোল্ডাররা সেই ব্যাঙ্কের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের খদ্দের – তাঁরা দলে দলে আপন অর্থ তুলে নিয়ে ক্রেদি সুইসকে আউফ উইডারসেহেন বলেছেন। ডেভিড ক্যামেরনকে লেকস  গ্রিনসিল ষাট লক্ষ পাউনডের শেয়ার অপশনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গ্রিনসিলের সাহায্যের জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনেক দরবার করে ব্যর্থ হয়েছেন সেটা আরেক গল্প – দ্যাটস অ্যানাদার স্টোরি।  

    পুঃ  @ ১৭০৫ সালে প্রকাশিত গ্রাম্বলিং হাইভস কবিতার অংশ বিশেষ। বারনারড ম্যানডেভিল (১৬৭০-১৭৩৩) :  জন্মে ডাচ, ইংল্যান্ডে শিক্ষা প্রাপ্ত ডাক্তার। কিছু ক্ষিপ্ত মানুষ তাঁকে শয়তান আখ্যা দিয়ে মামলা ঠোকেন। ডক্টর স্যামুয়েল জনসন পড়ে প্রভূত আমোদ অনুভব করেছিলেন। ফলে অতি দ্রুত এটি অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে পড়ে।

    * মোজাম্বিক টুনা বন্ডের সংক্ষিপ্ত উল্লেখ আছে মৎ প্রণীত “আমার আফ্রিকা” বইয়ে (২০২১)  

    ** ডানিয়েলের নামটি কল্পিত, চরিত্রটি নয়। আর কোন স্থান কাল পাত্র কাল্পনিক নয়।  
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২১ মার্চ ২০২৩ | ৯৩৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Asish kumar Sinharay | ২১ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫১517708
  • সারমর্ম বুঝলাম, অতি লোভে তানতি ডোবে।সত পথে স্বর্গ বাস।
  • Amit | 121.200.237.26 | ২১ মার্চ ২০২৩ ০৮:৩২517709
  • একটু বেলাইনে হয় যাবে সাবজেক্ট থেকে। তবে মোজাম্বিকের কেসটা সত্যি অদ্ভুত। দেশ টায় বিরাট ন্যাচারাল গ্যাস রিজার্ভ আছে। সাউথ আফ্রিকায় গ্যাস এক্সপোর্ট করে পাইপ লাইন দিয়ে। ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে আজকে দেশটা মিডল ইস্ট অয়েল নেশনগুলোর মত ইনকাম করতে পারতো। কিন্তু কোরাপশন আর পলিটিকাল ইনস্টেবিলিটি র জন্যে সব তথৈবচ  অবস্থা। 
     
    আপনি জানবেন নিশ্চয় একটা রীতিমতো বড় এলএনজি প্রজেক্ট এর কাজ শুরু হয়ে গেছিলো পুরোদমে- অফ্রিকার ওয়ান অফ বিগেস্ট প্রজেক্ট। ফ্রান্সের টোটাল ছিল মেজর ইনভেস্টর। কনস্ট্রাকশন চলার সময়  কিছু লোকাল মের্সেনারি অনেক প্রজেক্ট ওয়ার্কার্স  কে  কিডন্যাপ করে দু-তিন বছর আগে। বাকিদের তাড়িয়ে দেয়। কিডন্যাপড দের মধ্যে কয়েকজন ইন্ডিয়ান ও ছিল। তাদের কি ​​​​​​​হাল ​​​​​​​হলো ​​​​​​​জানিনা। ​​​​​​​তারপর পুরো প্রজেক্ট টা ক্যানসেল করে দেওয়া হয়। এখন সব মরচে পড়ছে। 
  • Ranjan Roy | ২১ মার্চ ২০২৩ ০৯:১৯517713
  • আমি যা বুঝলাম-- গ্রিনসিল এবং ক্রেদি সুইসের 'জঞ্জাল' ভর্তি স্যুটকেসে কোল্যাটারাল নিয়ে লোন যদি আমাদের কোন ব্যাংক দিত এবং অ্যামাউন্ট যদি বিলিয়ন ডলার না হয়ে এক কোটি টাকা হত -- তাহলে তাকে বলা হত 'ডাকাত'!
      কিন্তু ওই বিলিয়ন ডলার  হলে সে হবে আলেকজেন্ডার।
  • হীরেন সিংহরায় | ২১ মার্চ ২০২৩ ১১:৩০517717
  • অমিত 
    অজস্র ধন্যবাদ  মোটে বে লাইন নয় - আপনার এই এল এন জি প্রসংগ তোলা অত্যন্ত জরুরী - আমি পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখার বাসনায় লেখাটা বিস্তরিত করি নি।  দেশটা কোথায় যাচ্ছিল ( fastest growing African Country ) প্রকৃতির অকৃপণ দান সত্বেও কোথায় নেমে গেল এ দেশ- মোজামবিকের আপন দুর্নীতির কথা নিয়ে অনেক বিতন্ডা হয়েছে - তাঁরা এটি ভুলে যান সভ্য সুইস ব্যাংকার সুসজ্জিত লন্ডন লইয়ার পুরো ব্যাপারটি কি চমতকার সাজিয়েছিলেন। মোজামবিক সরকারের লুটেরাদের টাকা সযত্নে গচ্ছিত আছে এই ব্যাংকেরই ঘরে। 
    গ্রিনসিল তেমনি - সনজিব গুপ্তা সেখানে নাটের আরেক গুরু। ডেভিড ক্যামেরন নাদান শিশু। গল্পের কোন শেষ নেই। তবে এ গল্প নয় শুধু - অনেক চোখের জল মিশে আছে। পরে কখনো । আবারও একান্ত ধন্যবাদ অমিত । 
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | 202.134.10.131 | ২৯ মার্চ ২০২৩ ০৮:৫২517996
  • সমস্যা হচ্ছে স্যুটকেসটি যে জঞ্জালে ভর্তি হয়ে যাবে তা গোড়াতে কেউই বুঝতে পারে না। বাড়বাড়ন্ত ব্যবসার নেশা মাতোয়ারা করে রাখে মানুষকে, খেলার স্বীকৃত সব নিয়ম-কানুন গংংগাজলে ভাসিয়ে দিয়ে সময়ের আগে আগে ছুটতে থাকে সে! অসাধারণ এক সিরিজ হীরেনদা, এরকুল পোয়ারো বা হোমসের কোন ত্রিলার পড়লাম যেনো! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন