এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্বেচ্ছামৃত্যু

    Soudamini Shampa লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ২৭৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • সারাজীবন মানুষ যাকে শোষণ করতে চায় তাকে তোল্লা দিয়ে এসেছে। এবং তোল্লা খেয়ে সে যখন খেজুর গাছে উঠে বসে আছে, বেচারা না পারছে নামতে, না পারছে পালাতে, তাকে নিচ থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আদায় করা হয়েছে সবকিছু। সেই প্রথা আজও চলছে।
    মেয়েদের মা বানিয়ে, দেবী বানিয়ে, সতীত্বের খুড়োর কল তার সামনে ঝুলিয়ে, তাকে নিজের দখলে রেখেছে পুরুষ আজীবন। না, ঠিক আজীবন বললে ভুল হবে, যবে থেকে পরিবার কনসেপ্ট এসেছে। তার আগে নারী ছিল স্বাধীন। যেহেতু সে উর্বরা,সন্তান উৎপাদনকারী, তাই প্রতি দল বা গোষ্ঠীতে তার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সব গোষ্ঠী চাইতো সবচেয়ে উর্বরা নারী তাদের গোষ্ঠীতেই থাক। তাই তাদের খুশি রাখার জন্য গোষ্ঠীপতিদের চেষ্টার ত্রুটি থাকতো না।  তারা সন্তুষ্ট না থাকলে, গোষ্ঠী বদল করে সহজেই চলে যেতে পারতো অন্য গোষ্ঠীতে। নারী মানে উৎপাদন, নারী মানে সংখ্যা বৃদ্ধি, নারী মানে ওই গোষ্ঠীর ক্ষমতা বৃদ্ধি। 
     এরপর এলো সম্পদ। সম্পদ ও সন্তান দুই দখলে রাখতে গেলে সেখানেও মুঠোয় রাখতে হবে নারীকে। অথচ প্রকৃতির ইচ্ছেয় যা তার সবচেয়ে বেশি শক্তি, তাই তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, গর্ভ! সন্তান ধারণের নয় মাস সে অসহায়, পরনির্ভরশীল! আর এই সুযোগ নিয়ে পুরুষ তাকে ধীরে ধীরে নির্ভরশীল বানিয়ে ফেললো! তাকে সব যোগান দিয়ে, পরিণত করে ফেললো শুধু সন্তান উৎপাদনকারী যন্ত্রে। আর সেও বহুদিনের অনভ্যাসে না শিকারে যায়, না কৃষিতে! সেও বুঝে ফেললো, এই বসে বেশ আয়েস! ধীরে ধীরে সে চলে এলো পুরুষের আয়ত্বে, নিয়ন্ত্রনাধীন। হারালো স্বাধীনতা, হারালো স্বাতন্ত্র্য।
      এরপর তাকে সতীত্বের তকমা দিয়ে, বোঝানো হলো একগামীতার সুফল। একগামী হলে তার জন্য আছে স্বর্গ, আছে সম্মান, আছে দেবীত্ব। সৃষ্টি হলো এক সবচেয়ে বোকা বানানোর শব্দ,"সতী"! যার কোনো পুংলিঙ্গ বাচক শব্দ আমার জানা বাংলা অভিধানে নেই! অর্থাৎ বহুগামীতার দরজা পুরুষের জন্য খোলাই রইলো! এটা কিন্তু প্রায় সব ধর্মেরই গল্প! তাই সীতা সতী কিনা পরীক্ষা দিতে হবে, আগুনে পুড়ে! কিন্তু রাম আর কোনো নারীতে উপগত হয়েছে কিনা, কারণ তার সুযোগ ছিল অনেক বেশি,তিনি তো প্রাসাদে সুন্দরী সুসজ্জিতা নারীপরিবেষ্টিতই থাকতেন! কিন্তু কেউ এনিয়ে তাকে কোনো প্রশ্ন করলো না! এমনকি সীতাও না! আজও নারীর কুমারিত্ব ম্যাটার করে, পুরুষের নয়! আর নিজে ভার্জিন হয়ে, কোনো পুরুষ কোনোদিন কোনো নারীকে নিজের জীবনে স্বাগত জানায় না সামাজিক ভাবে! ব্যতিক্রম হয়তো আছে, কিন্তু তা নিয়ম নয়!
      যে নারী নিজে স্বাধীন ছিল,যাকে আদপে পুরুষেরই দরকার ছিল দল বাড়াতে,কবে যেন চিত্রটা উল্টে গেলো আর নারী হয়ে গেল ভিকটিম! এই সত্যিটা যতদিন না নারী বুঝবে, যতদিন আড়াল খুঁজবে, যতদিন সতীত্বের জারক রসে নিজেকে চুবিয়ে, ডুবিয়ে দম বন্ধ না হয়ে আসা পর্যন্ত বা তারপরেও শুধু সামাজিক গুড গার্ল হয়ে থাকতে চাইবে, ততদিন এভাবেই পড়ে পড়ে মার খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বৈব দোষ কিন্তু তারই । পুরুষ সুযোগ নিয়েছে মাত্র। তাকে দোষ দেওয়া চলে না মোটেও। 
      আজও যেসব মেয়েরা বর মেরেছে বলে কান্নাকাটি করে, তাদের মা*র খাওয়াই উচিত, যদি না ঘুরিয়ে দিতে পারে। শেষে একটা গল্প বলে যাই।  গতকাল ট্রেনে ফিরছি, এক মহিলা বিরাট বোঝা নিয়ে উঠলেন, বালিগঞ্জ বাজারে যাবেন সবজি বিক্রি করতে। আমি রোজ যাকে ওই দরজার কাছে পাই, টুকটাক গল্প করতে করতেই আসি, বেশ অন্য স্বাদ। মজা করেই বললাম,
    -কী মাসী, দুপুরে কী খেলে? 
    -মাছের ঝোল, ভাত।
    শুনে বেশ ভালোই লাগলো।
    - বাঃ! তুমি রেঁধেছো বুঝি?
    - না না, যে বাড়ি কাজ করি, ওই বাড়িতে দিয়েছে।
    - মানে?
    একটু অবাক হলাম। মাসী সকালে উঠে দুবাড়ি কাজ করে, এখন খেয়েদেয়ে এই সবজি বেচবে।  তারপর রাতে বাড়ি ফিরে, রান্নাবান্না সেরে, খেয়ে খাইয়ে, বাকি কাজ সেরে, তবে তার ছুটি! আমি হাসতে হাসতে বললাম,
    - দেখো, লোকে বলে মেয়েরা নাকি দুর্বল! এতো খাটনি কোনো ছেলে খাটতে গেলে কেৎরে পড়বে। শেষে একটু মজার ছলেই বললাম,
    - তা রাতের রান্নাটা বরকে করতে বলতো পারো না?
    তার মাথায় সিঁদুর, হাতে  প্লাস্টিকের শাঁখা পলা তার সে সৌভাগ্যের প্রমাণ দিচ্ছে! আমার উত্তরে বেশ বিরস বদনে বলে,
    - ধুউউর, ও ওসব পারে নাকি?
    - তা রান্না না পারুক, বাসন কোসন তো মাজতে পারে।
    - ও ব্যাট্টাচ্ছেলে মানুষ, ওর দ্বারা কি আর ওসব হয়? 
    বলে আর কথা না বাড়িয়ে উদাস চোখে চেয়ে রইলো বাইরের আকাশের দিকে। যেন হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। অথচ এই মাসীকেই দেখি, ঠেলে বস্তা তোলার সময় মুখে তরোয়াল আর গায়ে হাতির বল!
     এরপর আর কী বলবো? স্বেচ্ছামৃত্যুর দায় কার?

    ©® শম্পা সাহা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন