এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  •  নজরদারি এবং আকাশপথের বোমায় নেই এর সমাধান?

    Bhattacharjyo Debjit লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১১০৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ভারত সরকারের “উন্নয়নে” আকাশবোমা ফ্রি:

    ২০২১, ২০২২, ২০২৩- পরপর তিন বছর দক্ষিণ বস্তারের বিস্তীর্ণ এলাকা গুলিতে আকাশ থেকে আপেল পড়ার মতন তাজা তাজা বোমা ফেলা হলো। বোমা গুলি কী ঈশ্বর ফেললেন? না! ফেললো স্বয়ং ভারত সরকার। তাঁর নিজের দেশের জনগণের উপরে। যার নাম হলো- “অপারেশন উন্নয়ন”। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহাশয় অমিত শাহ জ্বী গত সপ্তাহের ৭ই জানুয়ারী ছত্তিশগড়ের কোরবা অঞ্চলে ভাষণ দিতে গিয়ে এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ভাষণের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেছিলেন সেখানকার ৩৯০০ স্কোয়ার বর্গ এলাকা সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা মদতপুষ্ট দেশের বৃহৎ পুঁজিপতিদের হাতে ২০২৪-এর ভেতর তুলে দেবেনই। ঠিক তার ৬ দিনের মাথায় আমরা জানতে পারলাম, শুরু হলো সেই প্রস্তুতি। বস্তারের আইজি সুন্দররাজ সাংবাদিক’দের জানিয়েছিলেন, আগামী দু বছর খুবই ভয়ানক যাবে। কিন্তু এতদিনেও এই জমি ভারত সরকার সাম্রাজ্যবাদের মদতপুষ্ট বৃহৎ পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিতে তবে কেন পারে নি? বাধা কিসের ছিলো এতদিন?

    পাহাড়, ঘন-জঙ্গলে ঘেরা বস্তার, গত চার দশক ধরেই একটি সংঘর্ষ কবলিত এলাকা। যেখানে বাস ভারতের আদিবাসী মানুষের। যাদের পায়ের তলায় রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ। যা চাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ্ আরো বিভিন্ন বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির। এই অঞ্চলে ১৯৮০ সালের গোড়া থেকে সেই নিয়ে চলছে লড়াই, ভারতের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি সাথে। বর্তমানে সেখানে “আরপিসি“(বিপ্লবী জনগণের কমিটি) গঠনের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী পার্টির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বিকল্প সমাজব্যবস্থা- বিকল্প প্রশাসনিক- অর্থনীতি। যাদের লক্ষ্য- সমাজতান্ত্রিক ভারত গড়া। লেখিকা অরুন্ধতী রায়ের “পায়ে পায়ে কমরেড” বইটি থেকে জানা যায়- সেখানে আর কোন ভূমিহীন কৃষক নেই। তৈরি হয়েছে ৫০০-৫০০০ লোকসংখ্যা অধ্যুষিত একাধিক গ্রামের দ্বারা নির্বাচিত “জনতনা সরকার”। এই সরকারের অধীনে রয়েছে নয়টি বিভাগ, ১)কৃষি,২)বাণিজ্য ও শিল্প,৩)অর্থনৈতিক বিভাগ, ৪)বিচার বিভাগ,৫)প্রতিরক্ষা বিভাগ,৬)স্বাস্থ্য ৭)জনসংযোগ, ৮)শিক্ষা ও সংস্কৃতি,এবং ৯)বন বিভাগ। এরকম কয়েকটি জনতনা সরকার- নিয়ে গঠিত একটি এরিয়া কমিটি। তিনটি এরিয়া কমিটি নিয়ে একটি ডিভিশন। শুধু এই নয়, এর পাশাপাশি চলছে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা। তৈরি হয়েছে নতুন সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষা ক্ষেত্রের বইপত্র। গঠিত হয়েছে ছোট ছোট হাসপাতাল। যেখানে বাইরে থেকে ডাক্তার এসে প্রাথমিক চিকিৎসা-শাস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পেনিং করে সাধারণ আদিবাসীদের মধ্যে, স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করে তুলতে। এই সমাজব্যবস্থা কে টিকিয়ে রেখে সারা ভারতের বুকে ছড়িয়ে দিতেই, সাধারণ গ্রামবাসীদের স্বেচ্ছায় গঠিত হয়েছে “গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ”(PLGA)-যা পরিচিত জনগণের স্বশস্ত্র মুক্তিবাহিনী নামে। আর আসল সমস্যা টা তৈরি হয়েছে এখানেই! এই জনগণের মুক্তি বাহিনীতে যোগদান ৫০ থেকে ৬০% মহিলা সদস্যের। এই অঞ্চলের স্থানীয় আদিবাসীদের মতে, ভারতসরকার এত বছরেও তাদেরকে যা দেয়নি, তা দিয়েছে এই "জনতনা সরকার"। যা হলো, রাজনৈতিক স্বাধীনতা। নিজেদের আত্মমর্যাদা। এই সরকারের আছে আলাদা বিচারব্যবস্থা। যার নাম, “জনতনা আদালত“। যে আদালত থেকেই গত বছর জনগণের নির্দেশে, ছাড়া পেয়েছিল- বিপ্লবী কমিউনিস্টদের হাতে পাকড়াও হওয়া, ভারতীয় সেনাবাহিনীর, রাকেশ সিং। এর থেকেই বোঝা যায় এই বিকল্প সরকারে রয়েছে জনগণের কতখানি শক্তি। এই অঞ্চল এশিয়ার অন্যতম বাণিজ্যিক লেনদেনে প্রধান। বছরে ১০০০ কোটির বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য হয় খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গুলি থেকেই।

    আসল ম্যাচাকার হয়েছে এখানেই; ২০১৭ সাল থেকে ভারত সরকার এই অঞ্চল গুলি দখলে মরিয়া হয়ে চালাচ্ছে “অপারেশন সমাধান”। যার চূড়ান্ত পর্যায় শুরু হয়েছে, ২০২১ সাল থেকেই। যার পোশাকি নাম, “সমাধান-প্রহার“। ভারত সরকারের দাবি, এই অঞ্চল গুলিকে, নকশালবাড়ির ধারায় পরিচালিত- জনতনা সরকারের হাত থেকে মুক্ত করে তুলে দিতে হবে সাম্রাজ্যবাদের মদতপুষ্ট খনি মাফিয়া টাটা, বিড়লা, আম্বানী’দের হাতে। তেমন নাছোড়বান্দা বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি। তাদের দাবি এই অঞ্চল, কেবলমাত্র এই অঞ্চলের মানুষের আর কারোর নয়। তাঁরা প্রাণ দেবে তবুও জমি ছাড়বে না কখনোই। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তারাও আছে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সাথেই। কখনোই তারা তাদের জল-জঙ্গল-জমি লুট করতে দেবে না শেষ নিঃশ্বাস অব্দি। ফলত, চলছে সংঘর্ষ প্রতিদিন। গতবছর সেই সংঘর্ষে “শহীদ” হয়েছে ১৩৭ জন, গণমুক্তি গেরিলা ফৌজের যোদ্ধারা। অর্থাৎ বোঝাই যায় সেখানে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের পেছনে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কতটা প্রবল জন-সমর্থন? ফলত খুব সহজ করেই বোঝা যায়, আদিবাসীদের পায়ের তলা থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ লুটতে প্রধান বাঁধা কারা কিংবা কোন শক্তি!

    ভারত সরকার মাটিতে থাকা এই জনসমর্থনের কাছে হার মেনে দিক ভ্রষ্ট হয়ে পরপর তিন বছর আকাশ পথে বোমা বর্ষন চালালো। চালালো গণমুক্তি গেরিলা ফৌজের উপর ড্রোন দিয়ে নজরদারি। যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধপরাধের সমস্ত চুক্তি বিরোধী। এর আগে আমরা দেখেছিলাম, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির কাছে মানসিক ভাবেও ভারত সরকার তার হার মানা স্বীকার করেছিল, অধ্যাপক জিএন সাইবাবা কে মুক্তি না দেওয়ার যুক্তির মধ্য দিয়ে। তবে বিগত দুই বছরের থেকে এই বছর আকাশ থেকে বোমা ফেলা এবং তার কৌশল ও লক্ষ্য খানিক আলাদাই ছিল। আগের দুই বছর বছরের মাঝামাঝি সময় কেবলমাত্র ড্রোনের সাহায্যে বোমা ফেলা হয়েছিল। এবছরে বছরের শুরুতে- চার দিন আগে, অর্থাৎ ১১ই জানুয়ারি মধ্যরাত দিয়ে সিআরপিএফ এবং গ্রে হাউন্ড কোবরা জওয়ান যৌথ অভিযান চালায় দক্ষিণ বস্তারের সুকমা-বিজাপুর এর মাঝে ছত্তিশগড়-তেলেঙ্গানা সীমান্তবর্তী- মারকানগুরা, মেত্তাগুড়া, বোতেং, সাকিলার, মারপারুলেড, কান্নেমেরকম, পোত্তামাঙ্গুম, বোটালঙ্কা, রাসপল্লি, পামের এবং কিস্তারাম সহ প্রভৃতি অঞ্চল গুলিতে। এই অঞ্চলগুলিতে সেদিন সকাল এগারোটা থেকেই শুরু হয়, গণমুক্তি গেরিলা ফৌজের উপর ড্রোন দিয়ে নজরদারি এবং সেই অনুযায়ী লক্ষ্য করে আকাশ পথে বিমান থেকে বোমা বর্ষন। এই সংঘর্ষের লক্ষ্য ছিল, দক্ষিণ বস্তারের নেতৃত্বে থাকা গণমুক্তি গেরিলা ফৌজের পরিচালক, মাডভি হিডমা। এমনটাই জানা যাচ্ছে, সেখানকার আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম ও সিপিআই(মাওবাদী) পার্টির জারি করা স্টেটমেন্টের মধ্যে দিয়ে। যেটি প্রকাশ হয় ১২ই জানুয়ারি সকালে, তেলেঙ্গানা কমিটির পক্ষ থেকে। এর আগে ‘দক্ষিণ বস্তার ডিভিশন কমিটি‘র পক্ষ থেকে ১১ তারিখের স্টেটমেন্ট উল্লেখ করা হয়, কেন্দ্রের বিজেপি এবং ছত্তিশগড়ের কংগ্রেসের সরকার মিলিত প্রয়াসে ঘটানো আকাশ পথে হেলিকপ্টার দিয়ে বোমাবর্ষণের কথা। সংঘর্ষের পরে বস্তার আইজি কোন স্টেটমেন্ট জারি না করলেও, সরকার কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যৌথ অভিযানে মাডভি হিডমা'র মৃত্যুর খবর। কিন্তু পুরোপুরি চেপে দেওয়া হয় ন্যাক্কারজনক আকাশ পথে বোমা বর্ষণের ঘটনাটি। ফলত, ১২ তারিখ এই সংঘর্ষের কথা আরো ভালো ভাবে উল্লেখ করে কমরেড মাডভি হিডমা‘র জীবিত এবং সুরক্ষিত থাকার খবর তুলে ধরে সিপিআইএম(মাওবাদী)পার্টির, তেলেঙ্গানা কমিটির মুখপত্র আজাদ। এই স্টেটমেন্ট থেকে জানা যায় আরো, এই সংঘর্ষে “শহীদ” হয়েছেন একজন গেরিলা নারী কমরেড এবং ছয় জন জাওয়ান আহত ও যেই হেলিকপ্টারটি থেকে বোমাবর্ষন করা হচ্ছিল, পাল্টা প্রত্যাঘাতের ফলে সেটিও কুপোকাত করা হয়েছে। ভারত সরকারের এই হিংসাত্মক রূপে আকাশ বোমা নিক্ষেপের ফলে,সেখানকার স্থানীয় মানুষ ভয়ে সন্ত্রস্ত। রুজিরুটির কারণেও ঘর থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছে সব্বাই। আর ক্ষতি হয়েছে বহু গাছপালা, চাষের জমির। এই যৌথ অপারেশনের নেতৃত্ব পালন করেছিলেন ২০০৬ সালের “সালোয়া জুদুমের” কুখ্যাত এসপিও নেতৃত্ববৃন্দ। অর্থাৎ এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় ভারত সরকার তার নিজের দেশের জনগণের উপর কতটা হিংস্র রূপ ধারণ করেছে। বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির বিকল্প জনতনা সরকারের রাজনীতির কাছে সে কতটা ভীত। কেবলই মর্ডান ওয়ারফেয়ারের “সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার” অনুযায়ী প্রোপাগান্ডা বেজড মাডভি হিডমা'র মৃত্যুর খবর রটাতে ব্যস্ত। যাতে সাধারণ জনগন কে মানসিক ভাবে কাহিল করে দেওয়া যায় খুব সহজে। এমনিতেই এই অঞ্চল গুলিতে পুলিশ ক্যাম্প লাগানো নিয়ে জনগণের সাথে আধাসেনার লেগেই থাকে রুটিনমাফিক খন্ডযুদ্ধ। স্থানীয় নারী দের দাবি, আধাসেনারা তাদের সাথে নোংরা আচরণ করে। স্নানের ভিডিও তুলে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এর আগেও স্থানীয় আদিবাসী মহিলারা অভিযোগ জানিয়েছিল, সেনাক্যাম্পের বাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের, যা প্রমাণিত। তবে গত দুই বছর বছরের মাঝামাঝি সময় ভারত সরকার তাঁর আক্রমন তীব্র করলেও এবছরের শুরুতেই কেন করলো? এর প্রধান কারণ, গেরিলা যুদ্ধের ফরম্যাট অনুযায়ী তিনটে ধাপের বছরের(প্রকৃতি কাল ধরে) সময়ে-সময়ে ভাগ করা নিজস্ব ক্যালেন্ডার রয়েছে। সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগামী মাস মানে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে ‘ট্যাকটিক্যাল কাউন্টার অফেন্সিভ ক্যাম্পেনিং‘(TCOC)। যা চলবে জুন মাস অব্দি। এই ক্যাম্পেনিং এর মূল লক্ষ্য হলো, শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করে নিজেদের “ঘাঁটি” অঞ্চল বাড়ানোর। জনগণের বিপ্লবী কমিটি’র “মুক্তাচল” বাড়ানো। এইসময় গেরিলা যোদ্ধা রা সব থেকে বেশি সাফল্য পেয়েছে; তাই তাঁদের কে তাদের পোক্ত উপযুক্ত সময় আসার আগেই দিক ও লক্ষ্য ভ্রষ্ট করা। কারণ “TCOC” সময় জুড়ে গেরিলা যোদ্ধাদের সাথে পারা দুর্বিষহ তা জানে সিআরপিএফ এবং গ্রে হাউন্ড কোবরা বাহিনী ও “নকশাল অপারেশনে” থাকা সেখানকার নেতৃত্ববৃন্দ। এছাড়াও, রয়েছে আরো দুটি কারণ- (১) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেটের আগে “মাওবাদী” খতম করার খেতাব কুড়ানো, যাতে বাজেটে বাকি সরকারি সংস্থাগুলি বেসরকারিকরণ করে শহুরে মধ্যবিত্ত চোখে “উন্নয়ন” টা মাওবাদী খতমের উপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া যায় খুব চট করেই। (২) ২০২৪ ভেতর এই রকম আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক সমাজ কে পুরোপুরি সামরিকিকরণ করতে, বাজেটের সামরিক খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর চাটুকারি অজুহাত মাত্র। এবং সর্বাপেক্ষা ২০২৪ এর ভেতরে নয়া উদারবাদী অর্থনীতিতে অক্সিজেন দিতে ১৯৯১ এর চুক্তি অনুযায়ী কর্মসূচী’র পালন। যার মধ্যে রয়েছে ভারতের হিন্দু রাষ্ট্রের কর্মসূচি।

    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই অঞ্চল গুলিতে যে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা NSA কর্তৃক ’ডিফেন্স রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন‘(DRDO) দ্বারা নির্মিত। সম্ভবত ড্রোনটির নাম জানা যাচ্ছে ‘পাল্লার ড্রোন‘ যেটি ভারত সরকার তৈরির বরাদ্দ পেয়েছিল সীমানায় বিদেশী শত্রু শক্তির উপর নজরদারি চালানোর সূত্রেই। তবে কী ছত্তিশগড়ের আদিবাসীরা দেশের ভেতরে বিদেশী? গতবছর মার্কিন সংস্থা- জেনারেল অ্যাটমিক্সের সঙ্গে ভারত সরকারের(নৌ, সেনা, আকাশ) প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার বরাদ্দে চুক্তি হয় ত্রিশটি স্বশস্ত্র “প্রিডিয়েটির ড্রোন” কেনার। সেগুলোও কী তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মডেল ধারী- ভারত সরকার ব্যবহার করবে নিজের দেশের জনগণের উপরেই? স্বাভাবিক ভাবে এরপরে এই নিয়ে চিন্তা থেকে যাবে আমাদের মাথাতেই। 
    সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া বস্তারের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা হওয়া উচিৎ ছিল ন্যাশাল মিডিয়াগুলির সবচেয়ে বড় খবর। অন্ততঃ গণতন্ত্রের দুই কান না কাটাতে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে এর কোন প্রচার নেই। কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে এই খবর তুলে ধরা হলেও, সেখানে হেডলাইনে দেওয়া হয়েছে- ছত্তিশগড় সরকার এবং বস্তার পুলিশফোর্সের আকাশ থেকে বোমাবর্ষণের ঘটনা স্বীকার না করার কথা। এবং খবরের সারমর্ম “মাওবাদী”দের বিরুদ্ধে ধুরন্ধর অপারেশনের কথা। দুঃখের সাথে বলতে হয়, সাগর থেকে পাহাড় অব্দি বিজেপির বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধীর সাথে হাঁটার সময় পেলেও, এই নিয়ে ভারতের তাবড়-তাবড় তথাকথিত কমিউনিস্ট পার্টি গুলোরও কোন বিবৃতি নেই। ‘বিজেপি- ফ্যাসিবাদ বিরোধী‘ মঞ্চের কোন আওয়াজ নেই। তবে কী এদের কাছে এগুলোই গণতান্ত্রিক বিষয় হয়ে উঠলো? এটাই এদের কাছে গনতন্ত্রের মোক্ষম শিক্ষা হয়ে উঠলো, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে? নাকি এরা ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার নামে চুপিসারে আগলে রাখতে চাইছে ফ্যাসিবাদীদের কে’ই?

    বর্তমানে সারা বিশ্ব জুড়েই বাড়ছে ভুখা পেটের জ্বালা আর তার সাথে পাল্লা দেওয়া যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা। ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে একই অবস্থা। যার কারণ সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির হোঁচট খাওয়া। নয়াউদারবাদী অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থার কুপোকাত হওয়া। যার বাইরে দক্ষিণ এশিয়ার-  ভারত নয় কখনোই। তাই ভারতের রাজ্য-কেন্দ্র সরকার তাদের মাখোমাখো প্রেমে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশের খনিজ সম্পদ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা(জনগণের  সম্পদ)গুলি সাম্রাজ্যবাদের মদতপুষ্ট বৃহৎ পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়ায়। সংখ্যালঘু মানুষ কে “NIA” দিয়ে ভয় দেখিয়ে, জাত-ধর্মে নোংরা নেশায় মাতিয়ে, সাম্রাজ্যবাদের “উন্নয়নের মডেল”র মান রাখতে, আকাশ পথে নিজের দেশের জনগণের উপরে মোটা দামে কেনা ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালিয়ে ফ্রি তে আকাশপথে'র বোমা উপহার দেওয়ার।
     
     তবে এর শেষ কী হবে যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই?

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১১০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সন্তোষ কুমার রায় | 2401:4900:707b:e50e:632e:18f0:3621:b3c4 | ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:০২515409
  • হ্যা, যুদ্ধের বিরুদ্ধে ‌‌‌যুদ্ধ ‌‌‌‌‌ !! An Eye for an Eye!! রাষ্ট্র যেখানে ‌‌‌‌‌‌যুদ্ধ ঘোষনা করেছে দেশের প্রাচীনতম আদিবাসীদের ধ্বংস করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে, তখন নিশ্চয়ই ‌‌‌যুদ্ধ হবে। সেই সঙ্গে মুখোশ উন্মোচন করতে হবে সেই সব তথাকথিত শ্রমিক দরদী, তথাকথিত অহিংস এবঙ সেকুলারদের যারা পরোখ্য ভাবে সমর্থন জোগাচ্ছে ঐসব বদমাইশ কর্পোরেট গুন্ডা ‌‌‌দের । যারা বা যিনি কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর গনতন্ত্র 'র ধ্বজা উড়িয়ে চলছেন , তাদের ‌‌‌‌‌বলি সরকার , সরকার টা তো তোমাদের, কি ভুমিকা পালন করছো হে বীরপুঙ্গব ?? যুদ্ধ হবে। ওরা ভয় পেয়েছে কমরেড ! আমরা পাইনি। পাবোনা!!!
  • aranya | 2601:84:4600:5410:89ab:aeef:efbd:85d7 | ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৩০515429
  • জরুরী লেখা। মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে সত্যিই এ নিয়ে প্রায় কোন খবর নেই। নেট সার্চ করে দ্য হিন্দু আর  রিডিফ এ  দেখলাম - ড্রোন ব্যবহার, আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ ইঃ -কে মাওবাদীদের অপপ্রচার বলেছে - সরকারী ভাষ্য 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন