এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পর্ব ৩ বালী রাজ্য ঃ রামায়ণের সঙ্কেত রহস্য ঃ রাম, রাবণ নাকি বালী রাজ্য? আদর্শ রাজ্য কোনটি? 

    Nilanjan Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ নভেম্বর ২০২২ | ৬০৮ বার পঠিত
  • ব্রহ্মার অশ্রু থেকে জন্ম হলো এক বানরের। ঋক্ষরাজ। বনের ভেতরে আনন্দেই ছিলো সে। একবার মানস সরোবরের তীরে শরীরচর্চা করছিলো ঋক্ষরাজ। সরোবরের জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে উঠলো সে। এ কে? শত্রু না মিত্র? ঝাঁপিয়ে পড়লো জলে। জল থেকে যখন সে উঠলো তখন সে আর বানর নয়। সে তখন সুন্দরী এক নারী। এতো সুন্দরী সে যে দেবরাজ ইন্দ্র আর সূর্য কামনায় পাগল হয়ে উঠলো। ইন্দ্রের বীর্য গিয়ে পড়লো সুন্দরীর চুলে বা বালে। জন্ম নিলো বালী। আর সূর্যের বীর্য পড়লো সুন্দরীর গ্রীবায়। জন্ম নিলো সুগ্রীব। 

    ঋক্ষরাজ কে? ঋক্ষ মানে ভল্লুক। ঋক্ষ মানে সপ্তর্ষি। দক্ষের ছিলো বহু কন্যা। দক্ষ নানা গোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছিলো। তারা এক একজন এক এক বিষয়ে বিখ্যাত হয়েছিলো। তাদের সবচেয়ে বেশী বিয়ে হয়েছিলো চাঁদের সাথে। অর্থাৎ চাঁদি বা টাকা-পয়সা বা ব্যবসায়ে আসক্ত ছিলো তারা বা তাদের গোষ্ঠী। ঋক্ষও হলো দক্ষের সৃষ্ট কোন এক গোষ্ঠী কিন্তু যারা পুরোপুরি দক্ষকে অনুসরণ করেনি বলে বনে পরিত্যক্ত হয়েছিলো। নর মানে ন কে যে রক্ষা করে। বঙ্গীয় শব্দকোষ অনুসারে ন-এর একটি মানে বিত্ত। বিত্তকে রক্ষা করে নর। আর সেই রক্ষা করার অবয়বকে বহন করে বানর। অর্থাৎ বানরকে দেখতে নরের মতো হলেও সে নরের মতো সব কাজ করে না। দক্ষের ছাত্র হয়েও ঋক্ষরজা দক্ষকে অনুসরণ করেনি। তাই তার জন্ম ব্রহ্মার অশ্রু থেকে বা বেদনা থেকে। ব্রহ্মা হলো স্কুল বা কলেজ, যেখানে শিক্ষা দেওয়া হয় শিব-দক্ষের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানকে। ব্রহ্ম হলো তত্ত্ব। না শিব না দক্ষ, ঋক্ষরাজ নতুন এক তত্ত্ব নিয়ে এলো যা পুরোনো কোন তত্ত্বের অনুসারী নয়। আর তাই সে সমাজে পরিত্যক্ত হয়ে হলো বনবাসী। 

    তাহলে সে কোন পথ নিয়েছিলো? এবার দেখি তার দুই সন্তানকে। সন্তানরা হলো নব তত্ত্বের ধারক-বাহক। এই সন্তানদের পিতা দুই বিপরীত মতাদর্শ। বালী হলো ইন্দ্রজাত। ইন্দ্র হলো ইন্দ্রিয় অনুসারী। পুঁজিপতি, বণিক, ব্যক্তি মালিকানার সমর্থক। আর সুগ্রীব হলো সূর্য জাত। সূর্য হলো প্রাচীন যৌথপরিবারের প্রতীক। সূর্য যখন আলো বন্টন করে তখন সমান ভাবে করে। যৌথপরিবারের সম্পদ বন্টনের মতো। ঋক্ষরাজ তাহলে ধনতন্ত্র আর সমাজতন্ত্রের যৌথ পথ নিয়েছিলো। দুই পুত্রের মধ্যে পরবর্তী রাজা হবে কে। ঋক্ষরাজ বলে গেলেন দুজনেই হবে। সরকারী আর বেসরকারী দুই ব্যবস্থাই একসাথে চলবে। স্বাধীনতার পর ভারতের অর্থনীতির মতো মাঝামাঝি এক পথ। 

    ঋক্ষরাজের উত্তরসূরী হলো বালী আর সুগ্রীব দুজনে। ধনতন্ত্র আর সমাজতন্ত্র একসাথে কাজ করতে লাগলো। কিন্তু সে ব্যবস্থা বেশীদিন টিঁকলো না। প্রথমে সমাজতন্ত্র (সুগ্রীব) ধনতন্ত্রকে (বালী) সরিয়ে রাজাসনে বসলো পরে ধনতন্ত্র সরালো সমাজতন্ত্রকে। সুগ্রীব তখন বিদেশি সাহায্যে (রামের) বালীকে হত্যা করে সিংহাসনে বসলো। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলো। কিন্তু রাম শর্ত দিলো সুগ্রীবের পর বালীর পুত্র অঙ্গদকে রাজা করতে হবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে যাতে ধনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় তার ব্যবস্থা করে নিলেন রাম। 

    কেমন ছিলো ঋক্ষরাজের দেশ? ঋক্ষরাজ পর্বতে বাস করতেন। পর্বে পর্বে গঠিত বলে পর্বত। আমলাতান্ত্রিক অর্থনীতিতে যেমন না না পর্বে আমলা থাকে, নীচু থেকে উপর পর্যন্ত তেমনি আমলা ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা। আমলা প্রধান হবার কারণ দুটো পরষ্পর বিরোধী মতবাদকে একমূখী করতে আমলাদের দরকার। 
     
    রাম, রাবণ আর বালি ছাড়াও আরো নানা রাজ্য ছিলো। ছোট ছোট জনপদ ছিলো। যেমন জনক রাজ্য, জটায়ু রাজ্য ইত্যাদি। এদের নিয়ে একসাথে উপসংহারে আসবো আগামী পর্বে।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন