এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • গরবিনী - পর্ব ৮

    Supriya Debroy লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ নভেম্বর ২০২২ | ২৮১ বার পঠিত
  • এর মধ্যে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে লোক মারফৎ খবর এলো, মানিক এখন আগরতলায় আছেন। উনি কুসুমদের ওখানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। কুসুমের এখন কেরানীগঞ্জে থাকা ঠিক নয়, যে কোনো সময় হামলা হতে পারে কুসুমের ওপর - মানিকের হদিশ পাওয়ার জন্য। খবর পান বরিশালের বানারীপাড়া অঞ্চলে অবস্থান নেয় শ্রমিক আন্দোলন এবং গঠন করে জাতীয় মুক্তিবাহিনী। যা দখলমুক্ত করে পেয়ারা বাগানের খানিকটা। সেই মুক্তিবাহিনী পরিচালনা করতে সিরাজ সিকদারকে প্রধান করে সর্বোচ্চ সামরিক পরিচালনামণ্ডলী গঠন করা হয়।  
    বরিশালের যেসব ঠিকাদার পাক সেনানিবাসে তাজা রসদ অর্থাৎ মাছ, মাংস, সবজি ইত্যাদি সরবরাহ করে থাকে, তারা মানিকের পরামর্শে এক বৈঠকে বসে সেনানিবাসে তাজা রসদ সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সরবরাহ বন্ধের কারণে ধীরে ধীরে সেনানিবাসে খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে অফিসার এবং সৈনিকদের শুধু ডাল, রুটি ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিলো না। একদিন সেনানিবাসের লেফটেন্যান্ট আব্বাস জিপ নিয়ে বানারীপাড়া অঞ্চলের উদ্দেশে দল নিয়ে বেরোয় খাদ্য সংগ্রহের উদ্দেশে । বিভিন্ন লোক মারফৎ খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং সিরাজ সিকদারের দলের কাছে খবর এসে পৌঁছয়। পরিকল্পনামাফিক, মানিক তার চারজন সঙ্গী নিয়ে বানারীপাড়া গ্রামের প্রবেশমুখে ঝোপজঙ্গলে লুকিয়ে থাকেন। জিপটি যখন একটা উঁচু মাটির ঢিবির কাছে আসে, মানিক এক লাফে জিপের বনেটের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন, বাম হাতে এক ঝটকায় জিপের ওপর স্থাপিত মেশিনগানটি ছিনিয়ে নেন এবং ক্ষিপ্রগতিতে ডান হাতের খপ্পর দিয়ে জিপের বাম পাশে বসা অফিসার লেফটেন্যান্ট আব্বাসকে আক্রমণ করেন। আব্বাস মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, মানিক কুপিয়ে এরপর আব্বাসকে ধরাশায়ী করে ফেলে। এবং একইসঙ্গে অন্যান্য সঙ্গীরা দ্রুত জিপের পেছনের আসনধারী সৈনিকদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালান এবং তাদের হত্যা করে সমস্ত অস্ত্র ছিনিয়ে নেন। সেনাসদস্যদের ওপর আক্রমণের খবর চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।  বরিশাল অঞ্চলের সেক্টর কমান্ডার মনজুর সাহেবের আদেশানুসারে তখন মানিক এবং চারজন সঙ্গীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আগরতলায় কিছুদিনের জন্য। এবং ফয়সালা হয় মানিকের নেতৃত্বে ওনারা কিছুদিন পর আশুগঞ্জ এবং নাটাই অঞ্চল থেকে অপারেশন করবেন। সিরাজ সিকদার বরিশাল থেকে মুক্তিযুদ্ধের অপারেশন করবেন। সিরাজ সিকদারের কাছে খবর আসে, মানিক এবং তার সঙ্গীদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে ঐ সেনানিবাসের কর্নেল। মানিকদের সম্বন্ধে খবর জোগাড় করেছে বিভিন্ন গ্রামবাসীর থেকে। সিরাজ সিকদারও তার সঙ্গীদের নিয়ে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এবং আগরতলাতে খবর পাঠান, কিছুদিন আগরতলাতে থেকে তারপর আশুগঞ্জ এবং নাটাই অঞ্চলে আসতে।

    (নয়)

    মে মাসের তপ্ত বাতাস। ঝলসানো আগুনের মতো রোদ। সবকিছু যেন পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। এই গরমের মধ্যে মেয়ে বকুলকে নিয়ে নাজেহাল কুসুম। একদম ঘুমোতে চায় না। পুতুলও কাহিল হয়ে পড়েছে বকুলকে সামলাতে, ঘুম পাড়াতে। রতন'দার অনেকদিন কোনো খোঁজখবর নেই। প্রায় একমাস আগে রতন'দা গিয়েছেন গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে, কিন্তু কোথায় - কাউকে বলে যাননি। কুসুম ভেবেছিলেন, রতন'দা থাকলে একটা ব্যবস্থা করা যেত আগরতলা যাওয়ার ব্যাপারে। একবার মা আর পুতুল প্রস্তাব দিয়েছিল, কুসুমকে আগরতলা নিয়ে যাওয়ার। কুসুম নাকচ করে দিয়েছেন। বাড়িতে বয়স্ক বাবা, কাকা, কাকিমা আছেন। দেশের এই টালমাটাল অবস্থায় মা ও পুতুলকে নিয়ে আগরতলা যাওয়াটা ঠিক সাব্যস্ত মনে করলেন না। এদিকে অস্থিরও হয়ে উঠেছেন মেয়ের মুখটি মানিককে দেখানোর জন্য।
    মে মাসের মাঝামাঝি। ভোর রাতের দিকে মেয়ে বকুল একটু ঘুমোলে, কুসুম এসে বসেন বাইরের বারান্দার উঁচু লাল রঙের সিমেন্টের চাতালে। সামনের উঠোনে আমগাছটি কচি কচি সবুজ আমের ভারে ভারাক্রান্ত। প্রবেশদ্বারের পাশে জুঁই গাছে সদ্য ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এখান থেকে বসেই পাচ্ছেন মিষ্টি সুবাস। জুঁই গাছের দিকে চোখ যেতেই কুসুম দেখতে পান গাছটির আড়ালে দু'জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে। কে ওখানে ? হাঁক দিতেই দুইজন গেট খুলে ভিতরে প্রবেশ করে জানান, মানিক'দা পাঠিয়েছেন আগরতলা থেকে কুসুমকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
    পরেরদিন ভোররাতে কুসুম বেরিয়ে পড়েন আগরতলার উদ্দেশে। মানিকের পাঠানো দুই সহকর্মীর সাথে, বকুলকে কোলে নিয়ে। ১৫০ কিলোমিটার রাস্তা। তবে কিছুটা ঘুরপথে যেতে হবে, যাতে পাকসেনাদের ক্যাম্পের সামনে না পড়েন। দুপুরে যখন সূর্য মধ্যগগনে, মাথার ভিতরটা চিড়বিড় করছে রোদের তাপে - কুসুমরা তখন নারায়ণগঞ্জ ছাড়িয়ে মুন্সিগঞ্জের কাছে এসে পড়েছেন। ওখানে একজন সহকর্মীর পরিচিত একটি বাড়িতে বিশ্রামের জন্য প্রবেশ করেন। বউটি কুসুমেরই সমবয়সী। নাম ঝিনিক। কুমিল্লাতে বাপের বাড়ি। শ্বশুর এবং শাশুড়ি মাকে নিয়ে আছে। স্বামী একমাসের উপর হলো কুমিল্লা অঞ্চলের মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেছে। এখন গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ চলছে। দেওর রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। ছাত্রলিগের মেম্বার। শেষ খবর অনুযায়ী এখন বগুড়া অঞ্চলের কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রামে আছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঝিনিক সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে ফেলে। বকুলকেও বুকের দুধ খাইয়ে কুসুম ঘুম পাড়িয়ে দেন। ঝিনিক খুব মিষ্টি মেয়ে। অল্প সময়ের মধ্যেই কুসুমের সাথে মিলমিশ হয়ে যায়।   ( ক্রমশ )
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন