এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পুজো, জ্বর ও জন্মদিন 

    Mahuya Sengupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ অক্টোবর ২০২২ | ৪৩২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • মোটাসোটা হলে কী হবে, ছোটবেলায় সারা বছরে অজস্রবার জ্বর হতো আমার। তার মধ্যে দুটি দিন অবশ‍্যম্ভাবী ছিল। একবার এই ষষ্ঠীর দিনে, আর একবার আমার জন্মদিনে। বোধহয় এতবেশি প্ল‍্যান করতাম বন্ধুরা আসবে, সবাই মিলে কী কী মজা করবো, সেই জন্যই। নিজেরই নজর লেগে যেতো! বাবা বলতেন, সিজ়ন চেঞ্জ। সর্বপল্লীর পুজোমন্ডপের বাঁশের কাঠামো চোখে পড়তেই আর পড়াশুনোয় মন বসতোনা তেমন। অঙ্কের বইখাতা খুলে উদাস হয়ে বসে থাকতাম। বাইরে নীল আকাশ, সবুজ গাছপালা কে যেন সোনার জলে ধুয়ে দিয়েছে। কার কটা জামা হলো পাড়ায় বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা। আমাদের কাপড় কিনে দর্জি দিয়ে জামা বানানো হতো, রাঙা টেলার্সে। কখনোই সেগুলি ষষ্ঠীর আগে হাতে আসতো না। কবে কোনটা পরবো ঠিক করা, সঙ্গে একটিই ম‍্যাচিং হেয়ার ব‍্যান্ড কেনা যা সব জামার সঙ্গে যাবে, একটু বড় হয়ে সামান্য ঝোলা দুল, নতুন জুতো, একটু হিলতোলা, এগুলো করতে করতেই চতুর্থী শেষ। কাজল পারমিটেড হলেও,  লিপস্টিক লাগানো নিষেধ ছিল। বাবার মুখে সর্বদা "সোবার সাজবে" শুনতে শুনতে কবে জানি ঝকঝকে রং ছেড়ে ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে আর্থ কালার নয়তো অফ হোয়াইট বা কালো পরা শুরু করেছি। বোনের লালটুকটুকে জামা হবে, আমার খয়েরি, এমনকি নিজে পছন্দ করলেও, কী করে যে বর্ণবৈষম্যের বীজ অনেক গভীরে প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল!
    যাই হোক, পঞ্চমী থেকেই ধুম জ্বর। ডাক্তার জেঠুর নিদান, জ্বরে স্নান নিষেধ, শুধু মাথা ধুয়ে গা হাল্কা গরম জলে স্পঞ্জ করা। চোখ জ্বালা, মুখের ভেতরে শুকনো রুক্ষ তাপ, গরম নিঃশ্বাস, কোনমতে হাল্কা সুতির সাদা টেপফ্রক গায়ে দেওয়া। তাতে রঙিন সুতোর নক্সাতোলা, ফুল, পাতা, হাঁস। জ্বরে ভাত বন্ধ, রুটি আর আলু মরিচ, মাছের ঝোল ফিরিয়ে দিয়েছি। রুটি দিয়ে মাছের ঝোল চিরকালের বিষ। ডলোপারের বড়ি গিলে ভারী চাদরের নীচে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মেয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়া। বিকেলে রাঙা টেলার্সের কাকুর কাছ থেকে বাবা জামা নিয়ে এলেন। বাড়তি পাওনা দুই বোনের জন্য এক জোড়া ক‍্যাপ বন্দুক, আমার গল্পের বই, বোনের জন্মদিনের কেক আর ডলপুতুল। ক‍্যাপ বন্দুক ভয়ে ফাটাইনি যদিও কখনো। 
    সপ্তমী তিথিতে বোনের জন্মদিন পালন করা হতো। ঐদিন ঋত্বিক আর অন্য বন্ধুরা এসে ক্যাপ ফাটাতো। আগের চেয়ে জ্বর একটু কমেছে। বাবা অনেক বাজার করতেন, মা জেঠী অনেক রান্না করতেন। অপূর্ব পায়েশ হতো। ঋত্বিক, অপরা, বুবু, মামন দুপুরে নিমন্ত্রিত থাকতো। বিকেলে কেক কাটা। পাড়ায় মাইকে বাজছে, হয়তো আমাকে কারো মনে নেই! সপ্তমীর দিনটি জন্মদিনের আবহেই কেটে যেতো। 
    অষ্টমীর দিন জ্বর ছেড়েছে। মাথাটা টলছে একটু একটু কিন্তু কিছুতেই সেটা জানানো যাবেনা। স্নান করেছি কুসুম কুসুম গরমজলে। কোমরে একগাছা দড়ি দিয়ে মা নিজের সিল্কের একটা শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন, কপালে কুঙ্কুমের টিপ। বাঁহাতের কড়ে আঙুল কামড়ে, "থু থু" বলে, দাদুর সঙ্গে মন্ডপে পাঠিয়ে দিলেন। মাইকে অঞ্জলি দিতে ডাকছে। আমি আর দাদু ফার্স্ট। বাবা, মা, বোন আর জেঠী পরের দফায় দেবে। রাস্তায় ঋত্বিক, ওর দাদা, বাবা, মার সঙ্গে দেখা হতো। জেঠু (ঋত্বিকের বাবা) আমার শাড়ি পরা নিয়ে মজা করতেন প্রতিবার। প্রতিবারই দুগ্গাঠাকুরের মুখটা দেখে মনে হতো জীবন্ত, যেন জ্বলজ্বল করছে। বর চাইবার সময় কী চাইবো মনে পড়তো না। শুধু মনে মনে বলতাম, আমি যাদের ভালোবাসি, তারা যেন কেউ আমার আগে মরে না যায়। তুমি দেখো ঠাকুর! 
    আজও তাই বলি। তুমি দেখো!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Nandini Sen | 92.21.147.202 | ১১ অক্টোবর ২০২২ ২০:০৭512727
  • ভালো লাগলো মহুয়া। চেনা চেনা আবার অপরিচিত ও বটে। মনটা নষ্টালজিয়াতে ভরে উঠলো। আরো আরো লেখো। 
  • তারকনাথ সেন। | 202.142.65.93 | ১১ অক্টোবর ২০২২ ২০:১৩512728
  • ঠাকুরকে তুমিই দেখ, তোমার দৃষ্টি গুনে তিনি ঠাকুর ,
    নচেৎ খড়মাটি, আসল হচ্ছে সময়, সে কারো ভালোয়
    সুখী নয়, মন্দে দুঃখিও নয়, সব‌ই মহাকালের খেলা,
    এবং পূ্র্বনির্ধারিত।
  • চন্দ্রমল্লী সেনগুপ্ত | 2402:3a80:198d:849b:c237:a005:e517:a7f3 | ১১ অক্টোবর ২০২২ ২০:৪০512731
  • নরম মন কেমন করা লেখা
  • মহুয়া সেনগুপ্ত | 2405:201:a803:827e:89dd:87:2d4:5694 | ১১ অক্টোবর ২০২২ ২০:৫৭512732
  • অসংখ্য ধন্যবাদ।
  • Sara Ray | 2409:4060:84:307e::14cb:38ac | ১২ অক্টোবর ২০২২ ০৮:২৩512746
  • খুব ভালো লাগলো 
  • রীনা দত্ত | 2409:4060:416:8b3b:f4c1:d8cd:bfa3:3e67 | ১২ অক্টোবর ২০২২ ১২:১৬512752
  • নস্টালজিক। ছুঁয়ে গেল।❤️
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন