এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • উজবুক

    Sobuj Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩১ আগস্ট ২০২২ | ৫২৮ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • ১৯৯০ সালের গ্ৰীষ্ম কালের কোনো এক রবিবারের বিকেল।  কর্ম সূত্রে একটি বেসরকারি ইঞ্জিনীয়ারিং সংস্থার নির্মাণ বিভাগের হয়ে ভাইজাগে পোস্টেড।প্রায় সাড়ে তিন বছর সেখানে ছিলাম। অনেক সহকর্মীর মতো আমারও কর্ম জীবনের এবং বোধকরি ব্যাক্তি জীবনেরও সেরা সময়( গিন্নী সেরকমই বলেন)। নানা কারণে বঙ্গোপসাগরের উপকুলীয় এই শহর স্বাস্থ্যকর, শান্ত ও মনোরম।স্টীল প্লান্টের গা ঘেঁষে সমূদ্রের পাড়ে গঙ্গাভরম বলে জায়গাটা আজো মনের ক্যানভাসে ছবি হয়ে আছে! সমূদ্রের ধারে একটা পাথর আর একটা পাথরের ওপর ভারি বিপজ্জনক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। 'হম বনে তুম বনে...'।  'এক দুঁজে কে লিয়ের' Shooting হয়েছিল এখানে! পাহাড়ের উপরে একটা মন্দির আছে। সিঁড়ি বেয়ে ওঠা যায়!প্রায় শ'দেড়েকের মতো স্টেপ হবে বোধহয়! যাই হোক বিশদ বিবরণে না গিয়েই বলছি সেই সময়টা যথার্থই আমাদের জীবনের নানা রঙের দিন! আরাকু ভ্যালীর কথা না হয় বাদই দিলাম! সে আরও এক অধ্যায়! Inexplicable!

    তখন সমসাময়িক এবং সমবয়সী সহকর্মীদের অনেকেই সদ্য বিবাহিত! বাদবাকিদের প্রায় বিয়ের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল । Senior দের বাড়িতে 'বুড়ো ভাত'(এই নামটা সিনিয়র বৌদিদের আবিষ্কার) খাওয়ার এক সোচ্চার আনন্দ অনুষ্ঠান বরাদ্দ ছিল। সেখানে অনেকেই উপস্থিত থাকতো, যাদের হচ্ছে বা হবো হবো করছে,সবাই ! সে এক মস্ত হৈ হুল্লোড়!

    আমিও মাস চার পাঁচ হলো বিয়ের পরে গিন্নী নিয়ে ফিরেছি। এসময়ে একটা রবিবার পাওয়া মানে ছ'দিন খোঁড়া খুঁড়ি করে একটা মোহর খুঁজে পাওয়ার মতো চমক!  নিরবিচ্ছিন্ন, আমাদেরই সময়! ভেসে যাক তরী , ডুবে যাক প্রান!

    এমনই এক রবিবারে কাবাব মে হাড্ডির মতো আপদ এসে হাজির! আপদ বলছি এই কারণে যে তাকে ডাকতে হয়না, নিজেই এসে হাজির হয়ে পড়ে! আর বিপদ হলো আপনাকে গিয়ে পড়তে হয় বা দশচক্রে পড়ে যেতে হয়!  এ হলো নিতান্তই আমার ব্যাক্তিগত বিশ্লেষণ। আপাতত আপদের সুধাক্ষরণ করি! বিপদের উদাহরণ পরে দেওয়া যাবে। 

    সেদিন যিনি অতিথি হয়ে এসেছিলেন তার সঙ্গে আমার পরিচয় জামসেদপুরে।  সেও এর আগের সংস্থার হয়ে কাজে যাওয়ার সূত্রে।এড়িয়ে যাওয়ার উপায়ও ছিল না! পরবর্তীকালে একই সংস্থার কর্মী হিসাবে আমরা হলাম সহকর্মী ।জামসেদপুর থেকে কোম্পানির কাজের নাম করে যখন তিনি ভাইজাগে  আবির্ভূত হলেন,তখন তিনি জানতে পারেন আমি সদ্য বিয়ে করে এখানেই স্বচ্ছন্দে আছি ! সুতরাং তার নাছোড়বান্দা আগ্ৰহ বেড়ে দ্বিগুণ।যদিও দীর্ঘ দিন কোনো যোগাযোগ ছিলনা, মুলত আমারই আগ্ৰহের অভাবে। তিনি নিজেই গেস্ট হাউস থেকে খবর নিয়ে চলে এলেন।ভাইজাগ Steel Plant এর Residential Complex এর নাম ছিলো উক্বু নগরম। সেখানেই আমাদের এই ছোট্ট বাসস্থানে ( আমাদের client রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগমএর দেওয়া) তার পদধুলি অত্যাবশক হয়ে পড়লো এবং পড়বি তো পড় মালীর ঘাড়েই!

    প্রাথমিক পরিচয়ের পর আমার স্ত্রী যৎসামান্য চা ও জলযোগের আয়োজন করলেন। সেই পর্ব সমাপ্তির পর দু এক পশলা কথা হতে না হতেই আমার সহকর্মী একটি প্যাকেট বের করে  ছোট টেবিলের ওপরে রাখলেন।
    প্রসঙ্গত বলি আমাদের  যে A-type quarter দেওয়া হয়েছিল সেটা খুবই ছোট এবং জায়গার অভাবে কোম্পানির দেওয়া অনেক আসবাবের জায়গা হয়েছিল কংক্রীটের বাঙ্কারের ওপরে। তাই বসার ঘরে মাঝখানে একটা ছোট্ট টেবিল ,একটা চেয়ার আর অতিরিক্ত কেউ এলে তার রাতে শোবার জন্য একটা single bed এর ছোট খাট ছাড়া  আর কিছুই প্রায় রাখা যায় না। তাতেই ঘর ভর্তি, নড়া চড়ার তেমন জায়গা ছিল না!

    আমার স্ত্রী আর আমি প্রায় পালাক্রমেই ওঠা বসা করছিলাম। আমার সহকর্মী হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে প্যাকেট থেকে  নাইটি বা ম্যাক্সি গোছের কিছু একটা বের করেই সেটার দু'হাতা নিজের দু'হাতে ধরে,প্রসারিত করে আমার স্ত্রীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কাঁধ বরাবর মাপার চেষ্টা করতে লাগলেন।মজা হলো, যতবার সে মাপতে যায়, আমার স্ত্রী সরে সরে গিয়ে টেবিলটাকে সেন্টার করে ঘুরতে থাকে আর বলতে থাকে,  ফ্রি-সাইজ, ফ্রি-সাইজ, সবার হবে!সে কিন্তু ছাড়বার পাত্র নয়।এই ঘটনাটা এত দ্রুত এবং চকিতে হলো যে আমি ভ্যাবাচ্যাকা! এইভাবে যখন মিনিট খানেক সার্কাস চলছে, আমি তখন থাকতে না পেরে, repeatedly বলতে শুরু করেছি, আরে এসবের তো কোনো দরকার ছিল না! এসবের কি কোনো দরকার ছিল বলুন তো... ? আপনি এসেছেন ব্যাস! ক্রমাগত বলেই চলেছি।ওদিক আমার স্ত্রী আমাকে সমানে চুপ করতে ইশারা করেই চলেছে ,অথচ আমার ভ্রূক্ষেপ নেই,আমি বলেই চলেছি! শেষ পর্যন্ত ভদ্রলোক মাপ না নিতে পেরে হতাশ হয়ে কিঞ্চিৎ অধৈর্য্যের সাথে  বোমা ফাটালেন,- দরকার  ছিলো না মানে? দরকার ছিলো না মানে কি? আমি যেখানেই যাই আমার স্ত্রীর জন্য কিছু একটা নিয়ে যাই! 

    ও হরি... !!! ঘরে তখন pin drop silence!!! আমি নিজেকে কোথায় লুকাবো ভাবছি! ওই তো ছোট ঘর! লোকটা নির্বিকার ভাবে এবং অত্যন্ত যত্ন সহকারে সেই অমূল্য কে ভাঁজ করলেন, প্যাকেটস্থ করলেন, বগলদাবা করলেন এবং শেষ পর্যন্ত বিদায় নিলেন।যতক্ষন ও ঘরে ছিল আমি আমার ধুকপুকানি শুনতে পাচ্ছিলাম আর গলার কাছে সুদর্শন চক্র-বর্তী মশাই বোঁ বোঁ করে মাথা কাটার জন্য ঘুর ঘুর করছে,তাও টের পাচ্ছিলাম!

     আমাদের তথাকথিত ভালোবাসার বিয়ে নয়! ভালো করে কেউ কাউকে বোঝার আগেই এতবড়ো ধাক্কা আমাকে কাহিল করেছিল। কিছুক্ষন নীরবতার পর, দুজনে মিলে  বোকার মতো অনেক ক্ষন হাসলাম! আজো গিন্নী সুযোগ পেলেই আমার অবিস্মরণীয় ধোঁকা খাওয়ার কথা বলে মস্করা করে ! সেই সময়ে নাকি আমার মুখের expression টা বাজপড়া তাল গাছের মতো লাগছিল!! 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন