এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বিজেপি মানে ভারত নয় আর মহম্মদও এত ঠুনকো নন

    বন মানুষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ জুন ২০২২ | ৬৭৭ বার পঠিত
  • শুধুমাত্র একটি কথায় বাংলা জ্বলছে। জ্বলছে দেশের বিভিন্ন জায়গা। নিন্দার ঝড় বিশ্বজুড়ে। কথাটি হল হজরত মহম্মদকে নিয়ে। কুকথা। কে বলেছেন? নুপূর শর্মা। তাঁর পরিচয়? বিজেপি নেত্রী। আগুনে ঘি এখানেই। যে দলটি হিন্দুত্বের নামে, জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্নভাবে সম্প্রদায়িক কথা বলে থাকে, সেই দলের দুই-এক নেতা সরাসরি ইসলামের পয়গম্বরকে নিয়ে বিতর্কিত কথা বলেছেন। একে বিজেপি, দোসর পয়গম্বরের সমালোচনা! আর তাতেই গোটা আকাশ ভেঙে পড়েছে ভূ-ভারতে। নুপূর শর্মা কেন এ কথা বললেন? এটা কি শুধুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা? কেন বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়? কেন বাংলা জ্বলছে? 

    সন্ধেয় বেলায় একবার ন্যাশনাল টিভি চ্যানেলগুলির দিকে চোখ বোলান। তাহলেই প্রথম ও দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রতিদিন, যে কোনও ইস্যুতে হিন্দু-মুসলিম নিয়ে চর্চা। টিভি অ্যাঙ্কররা হিন্দুদের ঠিকাদার। সম্বিত পাত্র-গৌরব ভাটিয়ার মতো বিজেপির দু’এক মুখপাত্র। আর রোস্ট করার জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকজন মুখপাত্র। এই নিয়ে দিনের পর দিন কত সন্ধেয় সাম্প্রাদায়িক বিষের উদগীরণ হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। বাতাসে পঞ্জিভূত হয়েছে বিষের বাস্প। যাঁরা শ্বাস নিচ্ছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন, অমৃতই রয়েছে এ বাতাসে। তাই প্রতিদিন একটু একটু করে ভাষার প্রতি লাগাম খুলেছেন তাঁরা। সেই বিশ্বাসের উপর ভর করেই তো সেদিন নুপূর শর্মা বিতর্কিত কথাটি বলেছিলেন। সে দিনের বিতর্কে ঘি-টাই ঢেলেছেন নুপূর শর্মা, কিন্তু তার আগের থেকে ধিক ধিক করে জ্বলছিল ছাই চাপা আগুন। শুধুই নুপূর শর্মাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালে নুপূরের প্রতি অন্যায় করা হবে। প্রতিদিন একটু একটু করে যাঁরা বিষের বাস্প তৈরি করলেন, তাঁরা আজকের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী নয় কি?
    বিশ্ব কেন সমালোচনা করছে ভারতকে? বিশ্ব বলতে প্রধানত মুসলিম প্রধান দেশগুলি। যাদের কাছে ধর্মনিরপেক্ষর মানে দূর আকাশের তারা। ভারত যেহেতু শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ, ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখাই যার প্রধান ধর্ম, সে দেশে সংখ্যালঘুরদের পয়গম্বরকে নিয়ে এমন কথা বেমানান। সত্যিই তা বেমানান। কিন্তু সে সব দেশগুলোকে বুঝতে হবে ভারত পয়গম্বরকে অপমান করেনি। ভারত মানে বিজেপি নয়। ভারত মানে নুপূর শর্মা নয়। ভারতে একটি দল, সেই দলের অতি সাধারণ কর্মী এই মন্তব্য করেছেন। যার জন্য সেই দলও নুপূর শর্মাকে বরখাস্ত করেছে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মীর মন্তব্যে আন্তজার্তিক মঞ্চে একশো তিরিশ কোটির ভারতকে ঢোক গিলতে হচ্ছে, এই অপমানের দায় কার? আগামী দিন কি এই পরিস্থিতি থেকে বিজেপি শিক্ষা নেবে? শিক্ষা নেবে নুপূর শর্মার মতো হাজার হাজার বিজেপি সমর্থকরা, যাঁরা শুধু মাত্র রাজনৈতিক কারণে প্রতিদিন বিষের বাস্প তৈরি করেন। জানি, এ প্রতিশ্রুতি মেলা বড় কঠিন।
    বাংলা কেন জ্বলছে? এ এক অন্য প্রেক্ষাপট। সিএএ বিরোধী প্রতিবাদেও দেখা গিয়েছে বাংলাকে জ্বলতে। একের পর এক ট্রেন দাউ দাউ করে জ্বলেছে। টিকিট কাউন্টার ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগের তির ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশের দিকে। এবারও সেটাই দেখা গেল। চারদিকে দোকান পাট জ্বালিয়ে দেওয়া হল, রাস্তা অবরোধ করা হল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাজারে হাজারে গাড়ি দাঁড়িয়ে, অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে, অ্যাম্বুল্যান্সে অসুস্থ রোগী মৃত্যুর দুয়ারে অপেক্ষামান, ক্ষুধার্ত শিশুর চিল চিৎকার- তবুও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। এ কোন ধরনের প্রতিবাদ? বিজেপি বলতেই পারে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণের রাজনীতির কারণে আজ এই অবস্থা। কিন্তু সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী হাত জোর করে যে রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন, তা অত্যন্ত সঙ্গত। এ রাজ্যে তো বিজেপি শাসকের আসনে নেই। এ রাজ্যের কোনও বিজেপি নেতা তো এমন মন্তব্য করেনি। সব বিজেপি নেতাই তো আর নুপূর শর্মা নন। তাঁরা যে মতাদর্শের রাজনীতি করেন, তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবেই প্রতিবাদ করা যেতে পারত। কিন্তু কতিপয় স্বার্থেন্বেষী মানুষ, সাধারণ মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে, গোটা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে শুধুমাত্র বাংলাকে অপমান করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেন?
    এর উত্তর খুঁজতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানার কাজকর্ম দিয়ে দেখলে হবে না। এর উত্তর অনেক গভীরে। তার বিস্তৃত শাখা-প্রশাখা। হজরত মহম্মদ এত ঠুনকো নন, তাঁকে নিয়ে কেউ কিছু বললে আগুন জ্বালিয়ে দিতে হবে, রাস্তাঘাট অবরোধ করে আম জনতাকে অতিষ্ঠ করে তুলতে হবে। শান্তির প্রতীক হজরত মহম্মদ। আর যাঁরা তাঁর নাম নিয়ে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করেন, তাঁরা কি আদৌ মহম্মদের আদর্শে হাঁটছেন কিনা প্রশ্ন থাকছেই। ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে কতশত কুরুচিকর মন্তব্য ঘোরাঘুরি করে, তখন তো কারোর ভাবাবেগে লাগে না। এ সব কাণ্ড দেখে উপর থেকে আল্লাহ হাসেন। আসলে প্রকৃত শিক্ষা আর কর্ম সংস্থান মানুষকে না দিতে পারলে, শুধু মুসলিম নয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন খণ্ডচিত্র দেখা যায়, যা আমাদের সভ্যতাকেই পিছনে টেনে রাখে…
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ভুবন বাদ্যকর | 3.142.48.121 | ১১ জুন ২০২২ ১৭:৫৮508803
  • শান্তির প্রতীক ???
     
     
    কাঁচা বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম 
    আমার কাছে নাইকো বুবু ভাজা বাদাম 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন