এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শান্তনীড় রহস্য - ৪

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ এপ্রিল ২০২২ | ১০১৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • নীলেশ একছুটে ঘরে ফিরে এল। দেখল তার মা কি একটা সব্জী রান্না করছে। তার আগে নিশ্চয়ই চাপাটি বানানো হয়ে গেছে। সব্জী পাকানো হয়ে গেলে মাম্মি তাকে খেতে দেবে। জোর ভুখ লেগেছে।  এই সময়টা নীলেশের খুব ভুখ লাগে । সেই রাত্তিরে খেয়েছে । ভুখ  লাগলেও নীলেশ কিছু বলে না। বেলা সাড়ে দশটা বাজে। পাপা সকাল নটার মধ্যে কাজে বেরিয়ে যায়। এখন পাপা নেই। ঈশানজি অন্য কোথায় তাকে কাজে পাঠিয়েছে ।  থাকলে এই সময়ে একবার দশ মিনিটের জন্য আসত নাস্তা করতে । 
    ------- ' বেটা ..... কাঁহা ঘুম রহা থা ..... ইতনা গরমিমে । ' খুন্তি নাড়তে নাড়তে কথা বলে উমা। 
    ------- ' উও ..... উধার পিছে ..... বহুৎ মজ্জা আতা হ্যায় ..... '
    ------- ' মগর ইধার উধার মাত জানা .... সামহালকে হাঁ ..... '
    ------- ' হুঁ ... '
    নীলেশ দরজার মুখে একপাশে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিল্ডিং- এর ছাদের দিকে তাকিয়ে রইল। ওখানে ছাদে কি সব কাজ চলছে । ধপ্ ধপ্ ধপ্ ধপ্ করে আওয়াজ হচ্ছে। 
    বিল্ডিং-এর বাঁ পাশে একটা ডোবা রয়েছে। মনে  হয় শিগ্গির বোজানো হবে । মাপজোক চলে মাঝেমাঝেই । ওখানেও একটা বাড়ি উঠবে মনে হয় নীলেশের। ডোবাটার চারদিক আগাছায় ভরে আছে। সাপখোপও বাসা বেঁধেছে নিশ্চিত।ডোবাটার পাশে পাঁজা পাঁজা বস্তা জমা করা হয়েছে । নাট বল্টু কব্জা পেরেক এইসব । সব একেবারে নতুন ঝকঝকে চকচকে । নতুন গয়নার মতো ।  পাশে একটা পুরনো বেশ বড়সড় বটগাছ আছে। এটা মনে হয় কাটা পড়বে যে কোনদিন , এই ডোবা বুজিয়ে  কন্স্ট্রাকশানের কাজ শুরু হলেই । এখন দুপুরের দিকে  ঈশানলাল  ঝিরিঝিরি হাওয়ায় গাছের তলায় একটা খাটিয়া পেতে ঘুমোয় মাঝেমাঝে ।

       সেদিন বিকেল চারটে নাগাদ নীলেশ  ডোবাটার ধারে গিয়ে হাজির হল ।  তার সাপ দেখার খুব কৌতূহল। মাম্মির কাছে শুনেছে এখানে নাকি সাপ আছে। বেলা পড়ে আসছে। কিন্তু রোদ্দুর এখনও বেশ তেজি। নীলেশ দেখতে পেল পাঁচ ছটা  চার ইঞ্চি সাইজের পেরেক পড়ে আছে বস্তার পাঁজার পাশে। বোধহয় বস্তার একপাশ ছিঁড়ে গিয়ে বাইরে পড়ে গেছে। শেষ বেলার সূয্যির আলো পড়ে ঝিকমিক করছে পেরেকগুলো ।  আশেপাশে  কেউ নেই। নীলেশ দুটো ঝকঝকে পেরেক তুলে নিয়ে মাটি থেকে একটা সিনথেটিক বস্তার  ছেঁড়া টুকরো কুড়িয়ে, তাতে মুড়ে রাখল । এগুলো তার নতুন কোন খেলার কাজে লাগতে পারে। 

        সোলাঙ্কি সকাল এগারোটা নাগাদ একটু বেরোল মুদির দোকান থেকে টুকটাক কিছু জিনিস কিনতে। প্রণবেশকে আর কতবার দোকানে পাঠানো যায় । 
    দোকানটা একদম অ্যপার্টমেন্টের মুখোমুখি । রাস্তার উল্টোদিকে । কাজেই দূ্রত্ব কিছুই না। কিন্তু ব্যাগটা এত ভারি হয়ে গেল একটার পর একটা জিনিস কিনতে কিনতে যে সোলাঙ্কির 
    রীতিমতো কষ্ট হতে লাগল থলেটা বয়ে নিয়ে যেতে । সে কোনরকমে ব্যাগটা বয়ে নিয়ে অ্যপার্টমেন্টে ঢুকে সিঁড়ির তলা পর্যন্ত পৌঁছল। কিন্তু সে বুঝতে পারল, সে বোকার মতো কাজ করেছে । এটা বয়ে তিনতলায় তোলা তার পক্ষে অসম্ভব ।  দোকানের কোন লোককে বলা উচিত ছিল এটা তার ঘরে তুলে দেবার জন্য। 
        সে কি করা যায় ভাবছে , এমন সময়ে পাশ থেকে কে যেন বলল,  ' ভাবীজি ..... হেল্প করব কি ..... '
    চমকে উঠে বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখল তার সামনের ঘর ডি থ্রির লম্বা মতো লোকটা দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছে। সোলাঙ্কির বুক ধড়ফড় করতে আরম্ভ করল ।  এদিকে ওদিকে অনেকে ঘোরাফেরা করছে । কিন্তু লোকটাকে ঘাঁটাবার সাহস কারো নেই বোধহয় । 
    সোলাঙ্কি এত নার্ভাস হয়ে গেল যে মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোল না । শুধু বলল ..... ' ন্ ... ন্না .... ' 
    -------- ' ও আচ্ছা ..... সরি .... ' বলে প্যান্টের দু পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেলেদুলে ওপাশে চলে গেল। ঠিক সেই সময়ে বাইরের চায়ের দোকানের নান্টু গোটা দশেক চায়ের গ্লাস সাজিয়ে নিয়ে ছাদের দিকে যাচ্ছিল। বলল, ' চলুন বৌদি .... আমি তুলে দিচ্ছি .... সেকেন্ড ফ্লোরে ডি ফোর তো ....  ' 
    ------ ' হ্যা ..... ওই .... '
    নান্টু ব্যাগটা ডান হাতে তুলে নিয়ে বলল , ' চলুন..... দাদা আমাকে খুব ভালভাবে চেনে .... দোকানে আসে মাঝেমাঝে '  
    নান্টু এক হাতে চায়ের ঝাঁঝরি আর এক হাতে জিনিস ভর্তি  থলে নিয়ে ওপরে উঠতে লাগল । সোলাঙ্কি যেতে লাগল পিছন পিছন ।ঘোরাল অশান্তিতে তার মন ছেয়ে আছে । 
    ওপরে উঠে দরজা খুলতেই এক ঝলকে ভেসে এল স্নায়ুবিবশকারি চন্দনের সুগন্ধ ।  
    নান্টু ব্যাগ নামিয়ে রেখে চোখ বুজে বুকভরা শ্বাস টেনে বলল , ' আ.... আ: ..... কি দারুণ ! চন্দনকাঠ বুঝি ..... খুব দামি নিশ্চই ..... দা ...রুণ !  আচ্ছা এখন আসি বৌদি ..... দাদাকে আমার কথা বলবেন ..... '
    নান্টু ওপরে উঠে গেল ।
    সোলাঙ্কি মোবাইল তুলে বৈশাখীর নম্বর ছুঁল । 
    ------ ' হ্যা সোলাঙ্কি বল ..... কি খবর ? '
    ------- আ...র ....  খবর আর কি ! ঝামেলার কি শেষ আছে ! সর্বক্ষণ প্রচন্ড টেনশানে জেরবার হচ্ছি ' 
    ------ ' কেন আবার কি হল ? '
    ------ ' লোকটা একটু আগে সরাসরি অ্যপ্রোচ করেছিল । দিন কে দিন সাহস বেড়েই চলেছে । আমি কিছু গ্রোসারি আইটেম কিনে ফ্ল্যাটে ঢুকছিলাম ..... '
    বৈশাখী মাঝপথে সোলাঙ্কির কথা থামায় ।
    ------ ' শোন ..... সোলাঙ্কি ..... আমি এখন অফিসে আছি .... একটু বিজি .... বাড়ি ফিরে তোকে কল ব্যাক করব । চিন্তা করিস না । ক'দিন পরেই তো  কলতান গুপ্তর সঙ্গে মিটিং 
    হচ্ছে। আমার ফোনে তো নানারকম রঞ্চি মেসেজ এসেই যাচ্ছে। কি করব ..... পুলিশকে
    ইনফর্ম করতে চাইছি না । তাতে কমপ্লিকেশান এবং হ্যারাসমেন্ট দুটোই বাড়বে । এনকোয়্যারির কোন শেষ থাকবে না .... কথায় বলে পুলিশের ছুঁলে ..... যাক সে কথা .... এখন তা'লে রাখছি ..... রাত্রে ফোন করব ।
    ***********  ************ **********
    কুলচা ফোন করল রাত এগারোটার সময় । তার মামা কাম বসকে ফোন করার এটাই তার  স্বাভাবিক সময় । 
    ------ ' কিরে ....  বল ..... সব ঠিক আছে তো ?'
    কলতান ফোন তুলেই বলে তার ভাগ্নী কাম অ্যসিস্ট্যান্ট কুলচাকে। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে পিওর কেমিস্ট্রিতে এম এস সি পড়ে কুলচা । ভাল নাম সম্পৃক্তা ।  
    ------- ' আমার সব ঠিক আছে । তোমার কি খবর বল । ওখানকার কেসটা ইন্টারেস্টিং ছিল তো ? ' 
    ------- ' ইয়েস .... ইয়েস ইন্টারেস্টিং অ্যন্ড এক্সাইটিং .... ফিরে বলব সব । মঙ্গলবারে ফিরছি । অলরেডি কলকাতার একটা কেস এসেছে হাতে । যদি সময় পাস তো আসিস । তোকে নিয়েই ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলতে বসব। আমি কলকাতায় ফিরে ডেট আর টাইমটা কনফার্ম করব তোকে । '  
    ------ ' ওক্কে স‌্যর ..... সো কাইন্ড অফ ইউ .....আওয়েটিং ইয়োর রিটার্ন । বায় ...... গুড নাইট । ' 
     ( ক্রমশঃ : )
    ******************************************..................................................................

     
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ২৬ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৪২506925
  • কলতান/কুলচা…ভাগ্নি কাম অ্যাসিস্টেন্ট। এই পর্বেও ওয়াটসনে চমক আছে দেখছি। … yes
     
  • Mousumi Banerjee | ২৬ এপ্রিল ২০২২ ২০:৩৬506930
  • ভালো ই এগোচ্ছে। একসঙ্গেই পরপর পড়ে যাচ্ছি পর্বগুলো। 
     
    'ভাভী' জী হবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন