এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আ পারফেক্ট প্যাসিফায়ার

    Aniruddha Goswami লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ এপ্রিল ২০২২ | ৭১৪ বার পঠিত
  • দ্য ক্যাট এন্ড মি সিরিজ 
     
     পারফেক্ট প্যাসিফায়ার
    অনিরুদ্ধ গোস্বামী
     
    -----------------------------------
    বিড়াল অবাক হয়ে বললো তুমি হটাৎ সন্ধান পেয়ে গেছো এক অমূল্য রতন ,মন শান্ত করার  সুলুক -এ পারফেক্ট ট্রাংকুলাইজার আমি বললাম না না ঠিক হলো না ট্রাংকুলাইজার বললে মনে পড়ে  আলপ্রাজোলাম ট্যাবলেট,  ভালো হয় বললে প্যাসিফায়ার।
    পন্ডিচেরি আমার খুবই পছন্দের জায়গা। এইতো সেদিন দুদিন এর ছুটি তে সেখান থেকে ফিরে এসে ডি এস এল আর ক্যামেরা তে তোলা ছবি গুলো দেখছিলাম।  সন্ধ্যেবেলা ,একটু আগেই ফিরেছি। সন্ধ্যে তে বিড়াল ও উদয় হয়েছে। সিক্সটি সেভেন্টি র ইন্সট্রুমেন্টাল  মিউজিক চলছিল সোনি মিউজিক সিস্টেম  এ। ডিসপ্লে তে ঢেউ খেলানো  সোনালী চুলের এক সুন্দরীর ছবি ছিল। অবাক কান্ড   রেম্প এ হেটে আসার মতো বিড়াল নেমে এলো ডিসপ্লে থেকে লেসার রে বেয়ে। সোজা মুখোমুখি বসে পড়ল  ডান  দিকে হেলান দিয়ে। পা ছড়ানো রইলো আমার এল আকৃতির সোফা তে।  লাল রঙের গাউন পায়ের  শেষ অব্দি পৌঁছায় নি। সাদা পায়ে চেরি লাল রঙের পেন্সিল হিল এর জুতো পরেই অর্ধ শায়িত |ক্যামেরার ফোকাস ঠিক  আছে কিনা দেখছিলাম। তাতে দেখি বিড়াল এসে বিরাজমান। সেই মোহময়ী আবেদন এ চেয়ে আছে। সোনালী চুল সুবিন্যস্ত হয়ে পাটে পাটে  নেমে এসেছে কাঁধ অব্দি। মতি গতি ভালো নয় ,যদিও বলল গল্প করতে এসেছে। যখন তখন উদীয়মান হওয়া তার একটা স্বভাব।
    হাত থেকে ক্যামেরা টি জোর করে নিয়ে ফটো গুলো দেখতে লাগলো। প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলো এইতো কদিন আগে পন্ডিচেরী থেকে ঘুরে এলে না? বার বার যাও কোনো নীল। একবার ও তো নিয়ে গেলে না কপট রাগ করে বললো বিড়াল।
    আমি বললাম বাম  দিকে সমুদ্র কে রেখে ই.সি.আর  রোড  ধরে ড্রাইভ করার মজাই আলাদা। তার সাথে আছে পন্ডিচেরির স্টোন বিচ। সন্ধ্যে তে ঘুরে বেড়ানো সাথে গেল্যাটেরিয়া মন্টেকাতিনি টের্রমে র আইসক্রিম আর সেলিনাস কিচেনের হাতে তৈরী পিজ্জা। প্রতিটার অনুভূতি স্বৰ্গীয়। আর তার জন্য বার বার যাওয়া  যায়।
    বিড়াল বললো আমার তো মনে হয় হাই রোডে স্পীড তোলার উত্তেজনা আলাদা | আমি বললাম  সেটা হয় রোডের ভাষা বুঝে চালালে। আর সেই ভাষা বোঝা যায়  রাস্তাতে  নামলেই। বিড়াল বললো একবার ও তো নিয়ে যাওনি  তো বুজবো কি করে ?
    -দেখো গাড়ি চালানো আর ধ্যান করার মধ্যে বিশেষ তফাৎ নেই।
    বিড়াল বললো ,ধ্যান ভেঙে যায়  যখন  বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে কেউ সামনে এসে পরে।
    আমি বললাম তখন মনে হয় ওরে আমাকে হারিয়ে দিলি ,দাঁড়া  দেখাচ্ছি বলে এক্সেলেরেটর এ পুরো জোর দি। এই রেষারেষি মনের  ভারসাম্য নষ্ট করে ,এইসময় যে এড্রেনালিন পাম্প হয় সেটাই থ্রিল।
    তবে আরেকটা সোজা উপায় আছে,জিজ্ঞাসা  করলাম কি সেটা ?বিড়াল বললো যেতে দাও ,আমি বললাম না না শুনি না। বিড়াল বললো বললাম তো "যেতে  দাও " যে যাচ্ছে যেতে দাও। আমি কম্পেটিশন এর মধ্যে নেই। স্বভাবতই তাড়াহুড়ো আর থাকবে না। আর না হলে আমাকে নিয়ে চলো।
    আমি বললাম লাগবে না ,এবার আমি পেয়ে গেছি এক ব্রম্হাস্ত্র-একটি অবর্থ্য মন শান্ত করার টোটকা।
    বিড়াল সোনালী চুলগুলোর মধ্যে একবার  বাম হাত চালিয়ে নিলো আর  ঘাড় ঈষৎ হেলিয়ে আদুরে স্বরে জিজ্ঞাসা করল  কি ভাবে পেলে নীল ?
    আমি বললাম এ পাওয়া হটাৎ করে হয় ধরো কন্যাকুমারী গেছ , উদ্দেশ সমুদ্রতটে যাবে। অলি গলি দোকানপাট এর মধ্যে দিয়ে হাটছো। ঠিক একটা বাঁক ঘুরলে আর দেখলে বিশাল জলরাশি।মন আপনা থেকেই অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে কারণ মন আর তখন এই বিশালতার সামনে আর দৌড়াতে পারে না। সে এমনি তখন ঠান্ডা হয়ে যায়।
    বিড়াল বললো ধুর ,কন্যাকুমারী ছেড়ে পন্ডিচেরী র কথা বল নীল। আমি বল্লাম  হে যেটা বলছিলাম হাইরোডে গাড়ি চালানোর সময় মন ঠান্ডা রাখা দুস্কর ব্যাপার। পন্ডিচেরি তে ফোর  ওয়ে লেন এক ডিভাইডার  দিয়ে ভাগ করা থাকে।যেকোন হাই রোডেই এটা দেখা যায় আর ডিভাইডার এর মাঝে রাস্তা এপার ওপর করার জন্য জায়গা করা  থাকে যাতে স্থানীয় লোকের সুবিধা হয়। অধৈর্য বিড়াল জানতে চাইলো কি এমন দেখলে যে এতো বিশদ করে বলছো।
    সেটা শুনলেই বোঝা যাবে। আমার গাড়ির স্পিড তখন ৮০র ওপর। সামনে একটি জনপদ আছে। পিছনে থেকে এক “ ইনোভা “বেপরোয়া ভাবে বেরিয়ে গেল। মনে মনে তার চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছি। এমন এক ব্যস্ততম রোডে র ওপর ডিভাইডার এর মধ্যে এ দেখলাম এক কিশোরী কে। চকিত সে দেখা। এক পা তার লাল  লেডিস সাইকেলের  পেডেলে আর এক পা মাটির ওপর। গোলাপি সালোয়ার চুল গুলো হাওয়ায় উড়ছে। বাম  দিকে চেয়ে গাড়ি  গুলো  আসা লক্ষ্য করে যাচ্ছে আর অপেক্ষা করছে রাস্তা পেরোবার জন্য উপযুক্ত সময়ের।কিন্তু তার মুখে কোনো ব্যাস্ততার ছাপ নেই নেই কোনো তাড়া  রাস্তা পেরোনোর। সে যেন যুগ  যুগ ধরে একই ভাবে অপেক্ষা করতে পারে কাঙ্খিত মুহূর্তের জন্য। তারপর রাস্তার ব্যস্ততা কমে গেলে হয়তো ধীরে সুস্থে পেরোবে রাস্তা টা।  আর সে সময় হয়তো গাড়ি গুলো থেমে যাবে।
    বিড়াল জিজ্ঞাসা করলো এতো কিছু দেখে ফেললে ওই কয়েক মুহূর্তে ?
    জায়গাটা পেরোতে হয়তো পাঁচ সাত সেকেন্ড লেগেছিলো ,আর তার দিকে দেখে মনে হয়েছিল কি আশ্চর্য  এক মন শান্ত করার দৃশ্য !
    নীল ইটস এ পারফেক্ট প্যাসিফাইয়ার। আমি বললাম ঠিক বলেছো | এরপর থেকে গাড়িতে স্পিড তুললেও সেই দৃশ্য ভাসে আমার মনে " দুটো হাত সাইকেলের হ্যান্ডেলে ,ঋজু ভাবে বসা ,হাওয়ায় ঢেউ খেলা চুল ,এক পা পেডেল এ আর এক পা  মাটিতে  আদি অনন্ত কাল অপেক্ষারত একটি   রাস্তা পেরোবার জন্য উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষারত এক কিশোরী ।বিড়াল গুটি গুটি পায়ে আমার কোলে চলে এলো। আমি তার গলায় হাত বুলিয়ে দিতে আবেশে কিছু একটা শব্দ করতে লাগলো |কিন্তু আমি যেন শুনলাম  " উঃ আন্টাবা মামা , উঃ উঃ আন্টাবা মামা "
    গানের দৃশ্যটা মনে  প্রতিটা করে রোম কূপে আগুন ধরানোর আগেই মনে মনে ভাবলাম এই রাস্তাটাও পেরোতে হবে আর  সাথে থাকবে স্মৃতি- সেই  সকালের "এ পারফেক্ট প্যাসিফায়ার ".
     
    ------------------
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন