এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • "আমিত্বের  উন্মেষ"

    TOUZIA NASRIN লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৩৪৯ বার পঠিত
  •  "আমিত্বের উন্মেষ"
    কলমে:- তৌজিয়া নাসরিন
     
    বাবা,
            সবার সঙ্গেই কথা হয়, তোমার সঙ্গে খুব একটা হয় না। আজ শুধু তোমাকেই বলবো ভাবলাম। জানো বাবা, মনে হচ্ছে হটাৎ করেই আমি বেশ বড়ো হয়ে উঠেছি। সেই সেদিন তুমি আমায় রেখে গেলে ঠিক তার পরমুহুর্ত থেকেই হচ্ছিল এখন আমি বড়ো হয়েছি। এখন বাড়ির কথা মনে করে কান্না পাওয়া আমায় শোভা পায় না। পরের দিন সকালে আমার বুক ব্যথা করে উঠেছিল, গলা ধরে এসেছিল কিন্তু তাও আমি কাঁদিনি। 
     
    নতুন জায়গায় নতুন সংসার গোছানোর আমার এত তাড়া ছিল যে তুমি বললে "মা আমি আসছি" কিন্তু আমি ঘুরে দেখলাম না। আমি দেখিনি, যদি চোখে জল গড়িয়ে আসে ! তুমি যে ভেবে বসতে মেয়ে আমার ভালো নেই। কিন্তু আমি ভালো আছি বাবা....ওটা দুঃখ নয়, ওগুলো একটু মায়া। 
     
    জানো বাবা, আমি যেদিন প্রথম টিউশন গেলাম সঙ্গে আমার পাঁচটি বান্ধবী, আমরা কেও এর আগে উত্তরপঞ্চনন গ্রামে যায় নি। শুধু বাসে জায়গার নাম লেখা দেখে উঠে পড়েছিলাম। দুচোখে ছিল ভয়, আনন্দ আর বিস্ময়। ভীড় বাসে দাড়িয়ে ছিলাম। আমিতো আবার উচ্চতায় একটু ছোট তাই বাসের ওপরে ধরার জায়গায় হাত পাচ্ছিলাম না, ঝুলে ঝুলে পড়ছিলাম। তারপর থেকে অবশ্য আমি 'high hill' জুতো পরা শুরু করেছি। প্রথম দুদিন পায়ে খুব ব্যাথা ছিল, এখন অভ্যেস হয়ে গেছে। 
     
    বাবা তোমাকে বলিনি, কিন্তু আমি একদিন কেঁদেছিলাম। আন্টির তেতো রুটি দেওয়ার সেদিন তৃতীয় দিন ছিল। প্রথম দুদিন ফেলে দিয়েছিলাম কিন্তু সেদিন খিদে পেয়েছিল, আমি রুটি দুটো ফেলে দিয়ে বাথরুম গিয়ে একটু কেঁদেছিলাম। তারপর তেতো রুটি খেতে পারছিনা বলে কাঁদছি মনে পড়ায় লজ্জা করেছিল, তাই বেশিক্ষণ কাঁদিনি। রাতে শুয়ে মনে পড়ছিল তুমিও গল্প করতে তুমি যখন ডানকুনিতে থাকতে তখন তোমাদের আন্টিও ডাল শেষ হয়ে গেলে জল ঢেলে পরিমাণ ঠিক করে দিত। কথাটা মনে করে খুব হাসলাম। বাবা, কি অদ্ভুতভাবে আমরা এক হয়ে গেলাম ! 
     
    তোমার মনে আছে শীতকালে যখন আমি লেপ কম্বল মুড়িয়ে পড়তে বসতাম তুমি মাঝে মাঝে একটা আপেল, একটা কলা খাতায় ওপর দিয়ে যেতে,ভারী গলায় বলতে "পড়তে পড়তে খেয়ে নাও" মাঝে মাঝে এক গ্লাস জলও দিয়ে যেতে। তিনদিন পর ঘরের এক কোন থেকে পচা ফল আবিষ্কার হতো।আর জলটা আমি জানালা দিয়ে ফেলে দিতাম। শীতকালে বেশি জল খেতে নেই, খুব শীত করে। এখন আমি বিকেলে কোনোদিন জল আনতে ভুলে গেলে রাত পর্যন্ত নিংড়ে চালালেও মাঝরাতে বড়ো জলকষ্ট হয়। মাঝে মাঝে গলা শুকিয়ে ওঠে, ঘুম ভেঙে যায়। আমি এদিক ওদিক করে পাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে যাই। 
    বাবা, জিনিসপত্রের খুব দাম বেড়েছে বলো ? এইতো সেদিন আমি বাজার করলাম। মুড়ি, চানাচুর,বাদাম, ওষুধ, আবার জানোতো দেড়শো টাকায় মাত্র চারটে আপেল দিল কাকুটা। 
     
    ছোটবেলায় সবাই আমায় বলতো "বাপকা বেটি", তোমার মতই আমি নাকি বেশি কথা বলি। বড়ো হয়ে আমি অবশ্য মা-র মত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু তোমার ক্রোমোজোমের কিছু গুন রয়েই গেছে। এখন আমিও আমার রুমমেট দের মাঝে মাঝে মজা করে তোমার বলা মনোলগ গুলোই ঝেঁপে দি "এখন পারবি না, যেদিন ঠেলায় পড়বি সেদিন ঠিক পারবি।"
     
    আমিও পারছি বাবা, অনেক কিছু পারছি। পাশের ঘরে খেতে যেতে মাঝে মাঝে কুড়েমি করতাম। এখন সাড়ে তিন কিলোমিটার হেঁটে মাঝেমাঝে মোমো খেতে যাই। এখন আর আমার স্নান করতেও পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগে না। আমি এখন বড়ো হয়ে গেছি। এখন আমিও আমার জুনিয়র কে কুড়ি মিনিট ধরে প্রেরণাদায়ী বাণী শোনায়। 
     
    আমি ভালো আছি বাবা। আমি এখন জীবনযুদ্ধে "যুদ্ধ" টুকু শিখছি। মা-র মতো বলি তবে...."এইতো সবে শুরু, এখনও বহু পথ বাকি, সব পেরোতে হবে সাবধানে....."
     
    তোমরা ভালো থেকো। ছুটি হলে আসবো। 
     
                                                      - ইতি
                                                        আমি

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন