এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  সমোস্কিতি

  • আরও বেঁধে বেঁধে থাকতে ভাল মঞ্চ চায় শ্রীরামপুর/সমীর ঘোষ

    Samir Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    সমোস্কিতি | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২৯৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)

  • তখনও করোনা ভাইরাসের কালো মেঘ এসে গ্রাস করে নেয় নি এই পৃথিবীটাকে। হুগলি জেলার বিখ্যাত শহর শ্রীরামপুরের বুকে টিকে থাকা প্রায় একমাত্র মঞ্চ রবীন্দ্র ভবনে বসেছে শ্রীরামপুর চাইল্ড গাইডেন্স সেন্টারের বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আসর। বিশেষভাবে সক্ষম ছেলেমেয়েদের পড়াশুনো,গান-বাজনা,নাচ,শারীরিক কসরত শেখানোর উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র এই শ্রীরামপুর চাইল্ড গাইডেন্স সেন্টার। শ্রীরামপুর রবীন্দ্রভবনে এক হইহই ব্যাপার।কেউ নাতি বা নাতনির, কেউ পাশের বাড়ির ছেলেটির,কেউ বা ‘একবার আসবেন’ এই অনুরোধ ফেলতে না পেরে চলে এসেছেন সেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে। একটা সেন্টার সারা বছর কী করে, আজ তা তুলে ধরার দিন। শিক্ষার্থীরা বছরভর কী শিখতে পারল, তা আজ মেলে ধরার দিন।বাইরে হাতের কাজের যখন প্রদর্শনী ও বিক্রি চলছে তখন মঞ্চে একে অপরের গায়ের উপর উঠে পিরামিড বানিয়ে ফেলেছে শিক্ষার্থীরা।গানের দিদিমনির সঙ্গে গলা মিলিয়ে তারাই দিব্যি গেয়ে উঠেছে রবীন্দ্র-নজরুল অথবা অতুলপ্রসাদ।গানে-আলোয় মাখামাখি হয়ে একের পর নাচে জমিয়ে দিয়েছে গোটা হল।অন্ধকারে বসে থাকা বাবা-মায়ের চোখে তখন অবিরাম জলের ধারা।কে বলে ওরা কিছু পারে না? প্রতিদিনের সাংসারিক লড়াই সামলাতে সামলাতে হয়ত একটু কটু কথাই বরাদ্দ থাকে ওদের জন্য।কিন্তু আজ! রাজার সাজ সেজে এতগুলো লোকের মাঝে ওরা যা করে দেখাল তার তুলনা কোথায়? উদ্যোক্তাদের প্রশান্তি,দিদিমণি- শিক্ষকদের হাসিমুখ,দর্শকদের বিস্ময়,অবিভাবকদের আবেগের সাক্ষী হয়ে থাকল রবীন্দ্রভবনের এক সন্ধ্যা। কিন্তু দুঃখের কথা সেদিনের সেই হাসিমুখ উপহার দেওয়া রবীন্দ্রভবন আজ আর ভাল নেই।বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন গভীর অসুখ তার।বহিরঙ্গে নানা রঙিন পোশাক পরালেও সচল থাকার ক্ষমতাটাই সে যেন হারিয়ে ফেলেছে।

    কেমন আছে শ্রীরামপুরের মঞ্চগুলো?

    পঞ্চানন কর্মকারের তৈরি বাংলা হরফের কথা মনে রেখে শ্রীরামপুরকে বলা হয় অক্ষর শহর।এ শহর অনেক ইতিহাসের সাক্ষী।এ জনপদ দেখিয়েছে আন্দোলনের পথ, এ জনপদ শিখিয়েছে প্রতিবাদের ভাষা।এ শহর কবির,নাট্যকারের,গল্পকারের।এ শহর শিল্পীর,এ শহর শিল্পেরও। শ্রীরামপুরের গড়ে ওঠা শুরু হয়েছিল দিনেমারদের হাতে।এরপর ইংরেজদের নগরায়নের কর্মসূচির পথ ধরে কলকাতার সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ ঘটেছিল এই ফেড্রারিক নগরের। কলকাতার বাবু সংস্কৃতি থেকে গান-বাজনার চর্চার বড় প্রভাব পড়েছিল এই নগরে। শ্রীরামপুরের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনের ইতিহাস অনেক দিনের।এই নগরের শিরিষতলার ঘটকবাড়ি (লালবাড়ি),শ্রীরামপুর টকিজের সারারাতের কনফারেন্স, গোলকধামের অনুষ্ঠান,শ্রীরামপুর কোর্টের মাঠের অনুষ্ঠান ইত্যাদি ছিল নজরকাড়া।

    শ্রীরামপুর সংস্কৃতির শহর হলেও কোনওকালেই ভাল অনুষ্ঠান মঞ্চ জোটে নি তার কুশীলবদের জন্য। ষাটের দশকে(১৯৬১ সাল) শ্রীরামপুর আদালতের পাশে  এলাকার  সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজনের  সহযোগিতায় ও সাহায্যে  গড়ে ওঠে রবীন্দ্রভবন। তার অনেক আগেই অবশ্য ১৯২৭ সালে তৈরি হয়েছে আকারে আয়তনে খুবই ছোট মঞ্চের টাউন হল। এর পর সম্ভবত নব্বইএর দশকে মাহেশের শঙ্কর সিনেমা হলকে নতুন করে গড়ে শ্রীরামপুর নেতাজি ভবন মঞ্চ তৈরি করা হয়। কিন্তু কোনও প্রেক্ষাগৃহের মান নিয়েই সন্তুষ্ট হতে পারেন নি শহরের সাংস্কৃতিক কর্মী বা সাধারণ মানুষ।



    মূল কথা হল কোনও হলেই মানা হয় নি মঞ্চ তৈরির বিজ্ঞান। যাঁরা অনুষ্ঠান দেখেন তাঁরা যেমন গরমে ঘামে, বিশ্রী আওয়াজ-আলোয় অস্বস্তি বোধ করেন তেমনই চরম অসুবিধেয় কাজ করেন শিল্পীরাও।কারন একটা অনুষ্ঠান করতে যতটা মঞ্চ, মঞ্চের পেছনে মুক্ত এলাকা, ভাল মেকআপের জায়গা,ভাল বাথরুম ইত্যাদির প্রয়োজন তা নেই কোনও হলেই। কিছু বছর আগে রবীন্দ্রভবনকে বাতানুকুল করা হলেও আসল সমস্যা মেটে নি।

    এবার অভিনব উদ্যোগে শ্রীরামপুর

    শ্রীরামপুর রবীন্দ্রভবনের অবস্থা এমনই খারাপ যে কিছুদিন আগে একটি নাট্যদলের রিহার্সাল চলাকালীন ভবনের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। হলের মান নিয়ে অসন্তোষ তো ছিলই,এর সঙ্গে যুক্ত হয় সাম্প্রতিক এই দুর্ঘটনা। দীর্ঘ অযত্ন আর উপেক্ষার ফলাফলই এই দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করেন এই শহরের সংস্কৃতিমনস্ক মানুষজন।



    তাঁদের দাবি এই দুর্ঘটনার কারণে তাঁদেরই কোনও সহশিল্পীর প্রাণ সংশয় হতে পারত। হয়নি এটাই বড় আশার কথা। একই হাল টাউন হলেরও। যাঁরা শ্রীরামপুরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, থিয়েটার বা সাহিত্য চর্চা বা সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের এই দুটি প্রেক্ষাগৃহের ওপরই নির্ভর করতে হয়। অনেকে,অনেক সংগঠন নিজেদের সামর্থ্য মত বারবার এই দুর্দশার কথা প্রশাসনকে জানালেও অসুখ কিন্তু সারেনি।



    তাই এবার একজোট হয়েছেন শহরের সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্যকর্মী থেকে কবি, সাহিত্যিক, সমাজকর্মী সকলেই। লক্ষ্য একটা অভিন্ন মত নির্মাণ করে শ্রীরামপুরের সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রগুলোর আধুনিকীকরণ এবং মুক্তমঞ্চ ও আধুনিক মঞ্চ তৈরির উদ্যোগে প্রশাসনকে সামিল করা। এমনতর উদ্যোগ এর আগে কোনও শহরে হয়েছে বলে শোনা যায় নি।



    শ্রীরামপুর প্রাচীন শহর। তবে আজকের সোশ্যাল মিডিয়া,ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম,ভার্চুয়াল দুনিয়া,অনলাইন ব্যবস্থাপনায় নিজেদের তুলে ধরতে পিছিয়ে নেই এই জনপদের মানুষজনও। কিন্তু এ শহর জানে সারারাত জেগে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনে ডুব দেওয়ার মানে,এ শহর জানে মাসের পর মাস রিহার্সাল করে একদিন কয়েকশো মানুষের মাঝে তা অভিনয় করার অর্থ,এ শহর অনুভব করে রবীন্দ্রভবনে এক আলো ঝলমল সন্ধ্যায় শিশুদের ডানামেলা নৃত্য পরিবেশনার বিপুল গভীরতা।তাই একা একা,বিচ্ছিন্নভাবে কোনও ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম নয়,আরও বেঁধে বেঁধে থাকতে বাস্তবের ভাল মঞ্চ চায় শ্রীরামপুর।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • সমোস্কিতি | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২৯৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • santosh banerjee | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:১৩498446
  • সম্পুর্ন সহযোগিতা আর সমর্থন থাকবে এই প্রচেষ্টা'র প্রতি।একজন প্রাক্তন নাট্যকরমী হিসেবে আমার অনুভূতি আর অভিগ্যতা সাহায্য করবে আপনাদের। এগিয়ে যান, বন্ধু।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন