এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চলো এগিয়ে চলি

    Sumon Bhattacharyya লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩১ আগস্ট ২০২১ | ৮৭৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • #চলোএগিয়েচলি (126)
    #সুমনগাঙ্গুলীভট্টাচার্য

    ক্লাস টিচার একবার ছবি তুলেছিলেন। রুকুর স্কুলে বসা নিয়ে আমাকে জানাতে। হাই বেঞ্চে বসে থাকতো। পায়ে মোজা নেই, মোজা ফেলে আসতো রোজ। আমি ১০ টাকা জোড়া মোজা কিনেছিলাম প্রচুর, ফেলে আসতো, আমিও পরাতাম আর প্রতিদিন বলতাম আজ মোজা নিয়ে ফিরবে কিন্তু ----- জুতো অর্ধেক পরে ফটো উঠেছিল। পুরো পা ঢোকাতো না, বুটের ফিতে খোলা থাকতো তাই হোঁচট খেতো খুব। একটু বড় হলে ভেলকো বুট ব্যবস্থা হয়। বেল্ট থাকতো না কোনদিন, ডজন খানেক বেল্ট কিনতাম স্কুল থেকে সাথে রাবার, পেন্সিল, স্কেল।

    স্কুলের পড়া নয় --- খাতাতে লেখা থাকতো "রুকু খাবে", রুকু মজা, রুকু বল, রুকু টিফিন, কেক কেক ইত্যাদি ভাঙা ভাঙা শব্দ, আমার কাজ ছিলো শব্দগুলোকে বাক্য তৈরি করার চেষ্টা, রুকু লিখছে তাতেই আনন্দ -- মনের ভাব প্রকাশ করছে এটাতেই ভালো লাগতো। রুকু কি বলতে চায় সেটা বোঝার চেষ্টা করা। রুকু আড্রেস করে, রুকু আজও কথা বলতে লিখতে পছন্দ করে। লাল ব্যাগ রুকুর। ব্যাগ আগের বেঞ্চে। পাশে ড্রইং খাতা। একবার টিচাররা বলেন ও টিফিনের সময় ছবি আঁকে, ক্লাসে অন্যমনস্ক থাকে। অন্য বাচ্চাদের নকল করে, শেষ বেঞ্চিতে ঘুমিয়ে পড়ে। ----- একটা বাচ্চা স্কুলে যেতো আর আসতো, তার মা-পাপার মনের শান্তি শুধুমাত্র এইটুকুই ছিলো। আমরা ভাবতাম যতটুকু এগিয়ে যায় যাক। কিছু ভালো তো শিখবে --- নকল করে যখন ভালো কিছুও নকল করবে।

    স্কুলের দারোয়ান খুব ভালো চিনতেন আমাকে। আমার ছেলে তার কাছে ইচ্ছাকৃত বা স্কুলের ইচ্ছেতে যেভাবেই হোক বসে থাকতো। আমিও যেতাম প্রতি সপ্তাহে, সজল চোখে ফিরতাম বাড়ি -- কখনো মার খেয়ে রক্তাক্ত রুকুকে নিয়ে বা স্কুলের টিচারদের হাজারো অভিযোগ মাথায় নিয়ে।

    সব যে দুঃখ তা নয়। রুকুর কিছু প্রিয় টিচার ছিলেন যারা ছেলেটার ক্রিয়েটিভ দিকটার কথা বলতেন, রুকুর "রোগ" -- বোঝার চেষ্টা করতেন। কিছু ভালো অভিভাবক পেয়েছি, যারা তাঁদের বাচ্চাদের খাতা দিতেন আমাকে যাতে ছেলেকে বাড়িতে তৈরি করি।

    আসলে ভালো খারাপ সবই আপেক্ষিক। আর সোশ্যাল মিডিয়াতে নেগেটিভ কিছু ছড়ানো আমার লক্ষ্য নয়।

    কয়েকটা পয়েন্ট লিখছি যদি এই স্পেকট্রাম বাচ্চার অভিভাবকদের উপকারে আসে।

    ১) বাচ্চা স্কুলে ভর্তির আগে বাচ্চার ডিসিবিলিটি কার্ড করিয়ে রাখলে ভালো।
    ২) স্কুলে লিখিত চিঠি দিয়ে বাচ্চার অসুবিধে জানিয়ে রাখা, যাতে পরবর্তী কালে অসুবিধে না হয়।
    ৩) বাচ্চার কোন কিছুতে সেনসরি ইস্যু/অভ্যেস যদি থাকে তাহলে জানিয়ে রাখা। ( আলো, আওয়াজ, পেন্সিল কাটার শব্দ, প্রচন্ড চিৎকার, গরম, ঠান্ডা, কাগজ ছেঁড়া, নিজের মনে চিৎকার অথবা অন্যমনস্ক থাকা )
    ৪) প্রপার টয়লেট ট্রেনিং।
    ৫) কো-এড স্কুল হলে ছেলে ও মেয়েদের বাথরুম চেনানো।
    ৬) টিফিন খাওয়া, জল খাওয়া।
    ৭) প্রেয়ার রুম, ক্লাস রুম, ক্লাস টিচার - প্রথম দিন থেকে নিজ দায়িত্বে চিনিয়ে দেওয়া।
    ৮) এক জায়গায় বসে থাকার অভ্যেস করানো।
    ৯) প্যান্টের চেন / মেয়েদের ক্ষেত্রে জামার হুক, ইত্যাদি সম্পর্কে সজাগ থাকা, বা, বাচ্চাকে সজাগ করা প্রতিনিয়ত। কিছুটা হলেও ছোট থেকেই গুড টাচ, ব্যাড টাচ শেখানো। তার সাথে "তুমিও কাউকে জড়িয়ে ধরবে না, কেউ কাছে এলে সরে বোস বলবে বা নিজে সরে বসবে। চুমু খাওয়া একদম একদম No No ( বাড়িতে একটা বয়সের পর বাবামা-রা প্লিজ সচেতনভাবে বাচ্চাকে আদর করবেন, আপনার আদর বাচ্চার ক্ষতি কিনা বিচার করুন)"
    ১০) মায়েরা প্রতিদিন বাচ্চার শরীর চেক করলে হয়তো ভালো, ছেলে হোক বা মেয়ে।

    দিন বদলেছে ছেলে বা মেয়ে কেউ যৌন হেনস্থার উর্ধ্বে নয়। সজাগ থাকা একমাত্র পথ। আমাদের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাজার গুণ বেশি সজাগ থাকা উচিৎ।

    বাচ্চা স্কুলের কথা, স্কুলের লেখা হয়তো লিখবে না। মা/বাবা/গার্জেন কাউকে না কাউকে স্কুলের শেষে স্কুলের টিচার বা অন্য বাচ্চাদের থেকে সেটা জেনে বাড়িতে পড়াতে হবে। সম্ভব হলে সিলেবাস জেনে স্কুলের আগে একটু এগিয়ে রাখা গল্পের ছলে।

    সঠিক স্কুল নির্বাচন একটি অবশ্য কর্তব্য বিষয়। সাধারণ স্কুলে পড়াবেন সরকার আমাদের এই অধিকার দিয়েছেন, তবুও খুব ভালো করে দেখে বোর্ড এবং স্কুল নির্বাচন করবেন। ভাষার ক্ষেত্রে প্রথম ভাষা, দ্বিতীয় ভাষা কি দেবেন ভেবে নিলে হয়তো ভালো।

    ----- নালিশ, ভালোবাসা, অনেকটা লড়াই ---- একজন অটিজিম স্পেকট্রামে থাকা বাচ্চাকে সাধারণদের স্কুলে পড়ানো খুব সহজ হয়তো নয় ----। এই ছিলো স্কুল জীবন। পথ কোনদিন সহজ থাকে না, তবু দৌড় শেষ করলেই জিৎ। এখনো অনেকটা যেতে হবে, আশীর্বাদ করুন।

    রুকু কয়েকদিন আগে লিখেছে তার স্কুলের দিন। আমি জানি না কোন স্কুল, কোন ক্লাস কারণ রুকু অসংখ্যবার স্কুল চেঞ্জ করেছে, আমাদের কাজ ছিলো স্কুল খোঁজা আর নতুন স্কুলে ভর্তি করা, যদি ছেলেটা সাধারণ বাচ্চাদের সাথে থাকতে পারে এই ছিল লক্ষ্য। -- কিন্তু ঘটনা গুলো ঘটেছে

    #স্কুলরুকু ---- রুকুর লেখা ----

    "আমাকে কোনো বন্ধু ইস্কুলে খাতা দেখাতো না। আমার পিঠে স্কেলের আওয়াজ ভালো হতো। আমাকে দেখে ভয় পেতো। গাড়িতে ভীড়। হাঁটু আমার গাড়ির দরজাতে ঠেলতে থাকে। চেনারা রুকুর বন্ধু হয় না। স্কুলে স্কেলটা বন্ধু ছিল। হাতে নিয়ে ঠুকতাম। লাইব্রেরী রুমে রুকু আঁকে মশা ভাবে। স্কুলের দিন ভয়ানক ছিল মশারা বন্ধু। একটা ঘরে একা রুকু, সবাই মাঠে। রুকুর বুট জুতো দেওয়ালে ঋবুট। ডাইনলোড কষ্ট ফষ্ট।"

    পুনঃ --- "তারে জামিন পার" সিনেমার ঈশান অবস্থি বা নিকুম্ভ স্যার দুটোই সিনেমার দেখি আমরা, তারা সিনেমার চরিত্র। সিনেমার শেষে ঈশান জিতে যায়, যেমন সব সিনেমার শেষে নায়ক জিতে যায়। বাস্তব হয়তো অন্য কথা বলে আমাদের দেশে। তবু তো আশা রাখা তবু এগিয়ে চলা।

    #সুমন
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:১৮497437
  • আমি তো এই রুকু কে খুব চিনি, 
    সে এখন দারুণ আঁকে, দারুণ লেখে, আমার প্রিয় শিল্পী, ফেসবুকে ওর কাজ দেখে ভক্ত হয়েছি। 
     
    তিন বছর আগে কলকাতা বইমেলায় গুরুচন্ডালির স্টলে গিয়ে রুকুর সঙ্গে সেলফি তোলার আশায় গিয়ে বসে থাকতাম, সে তখন কোথায় যেন বেড়াতে গিয়েছিল, দেখা হয়নি! 
     
    বাসনা রাখি, মহামারী পেরিয়ে আবার যখন কলকাতা বইমেলা যাব, তখন রুকুর সাথে সেলফি তুলবো, ওর আঁকা একটা ছবিও চেয়ে নেব! ❤️
     
    রুকুর বেলা আরও লিখুন, সেল্যুট সুমন, সুপার মাম! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন