এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  খেলা

  • ভারতের অপারেশন টোকিও: বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের প্রয়াস (প্রথম পর্ব)

    সৌরাংশু
    ধারাবাহিক | খেলা | ২০ আগস্ট ২০২১ | ২৫৪৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • শুরু হল নতুন সিরিজ, চতুর্বর্ষীয় হুজুগে দেশ থেকে যাঁরা এবারের অলিম্পিকে গেলেন তাঁদের মধ্যে সত্যিকারের মেডেলের সম্ভাবনা কাদের ছিল এবং বাকিদের, মেডেল না পেলেও, সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স কোথায় দাঁড়াত, সেই নিয়ে কাটাছেঁড়া। ধীরে ধীরে আসবে বিভিন্ন ডিসিপ্লিন-ভিত্তিক একটা বীক্ষণ ।


    তাহাদের কথা


    অতিরিক্ত গৌরচন্দ্রিকা না করে একটা সিরিজ শুরু করছি। চতুর্বর্ষীয় হুজুগে দেশ থেকে যাঁরা এবারের অলিম্পিকে গেলেন তাঁদের মধ্যে সত্যিকারের মেডেলের সম্ভাবনা কাদের ছিল এবং বাকিদের, মেডেল না পেলেও, সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স কোথায় দাঁড়াত। তারপর হয়তো বিভিন্ন ডিসিপ্লিন-ভিত্তিক একটা বীক্ষণ করা যাবে।

    অতিমারীর কারণে এক বছরের জন্য অলিম্পিক প্রতিযোগিতা পিছিয়ে যাওয়ায় কিছু সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা দেখা দেয়, যা অভূতপূর্ব। সবথেকে বড় সমস্যা হল, অলিম্পিকের কথা ভেবে যে সমস্ত প্রতিযোগী প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন – যাতে ২০২০র অগাস্ট নাগাদ তাঁদের শারীরিক এবং মানসিক সক্ষমতা শিখরে পৌঁছয় – তাঁদের জন্য আবার সমস্যা তৈরি হয়ে গেল। আর এক বছর বয়স বেড়ে যাওয়াটা তো রইলই।

    আমাদের শুরুতেই দেখতে হবে, মেডেলের আশা আমাদের ঠিক কোন কোন খেলাগুলিতে ছিল। আসলে অলিম্পিক স্পোর্টসগুলি সম্পর্কে আমাদের ধারণা এতটাই কম থাকে, যে চার বছর ধরে খবরের কাগজের পাতায় তাদের দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়, উন্মাদনার কথা ছেড়েই দিলাম। অধিকাংশ ক্রীড়ামোদীই জানেন না – কোন খেলায় কে অলিম্পিকের যোগ্যতা মান পেরোচ্ছেন এবং কারা কারা অংশ নিচ্ছেন। এটা তো আর শুধুমাত্র ক্রিকেটকে আর মিডিয়াকে দোষারোপ করে কাটিয়ে দিলে চলে না। পাবলিক যা খায় মিডিয়া তাই-ই খাওয়ায়।

    সে যাক। আমরা এই পর্বে দেখে নেব, যে কারা কারা পদক পাবার সম্ভাবনা নিয়ে টোকিও গিয়েছিলেন। এবং তারপর একে একে ভিন্ন ভিন্ন খেলায় আমাদের পারফরম্যান্সের বিচার করার চেষ্টা করব, প্রস্তুতি সহ।
    আসলে গত তিন-চার বছরের পারফরম্যান্স ও প্রস্তুতির নিরিখে কুস্তি, বক্সিং, ভারোত্তোলন, শ্যুটিং, তীরন্দাজি, হকি ও অ্যাথলেটিক্স থেকে পদক আসার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। বাকিগুলোতে ব্যক্তিগত সেরা পারফরম্যান্স যদি কেউ করে দেয়, তাহলে তো মাশাল্লাহ।
    এক এক করে দেখার আগে আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। প্রতিটি খেলার পরিবেশ, অর্থাৎ আবহাওয়া, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা সমেত, মাঠ, অর্থাৎ যে মাঠে বা ম্যাটে বা কোর্টে বা রিং-এ খেলাটা হচ্ছে সেটি এবং কেমন ড্র পড়ে। আর মানসিক দিক ও ঐ বিশেষ দিনের ফর্ম তো রইলই।

    তাহলে শুরু করি? এখানে পদকের সম্ভাবনাকে তিনভাবে দেখব। আশাবাদী পন্থা, নিরাশাবাদী পন্থা এবং বাস্তববাদী পন্থা।

    শ্যুটিং দিয়েই শুরু করি। রাজ্যবর্ধন রাঠৌর ২০০৪-এর অলিম্পিকে রৌপ্যপদক জিতে ভারতে এক শ্যুটিং সংস্কৃতির শুরু করেন। যদিও তাঁর আগে বাংলার সোমা দত্ত, ভাগীরথ সামুই, সমরেশ জং, অঞ্জলি ভাগবতরা নিয়মিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছিলেন। অবশ্য প্রথম ভারতীয় হিসাবে মেয়েদের ১০ মিটার পিস্তলের ফাইনালে পৌঁছন অঞ্জলি ভাগবত, ২০০০এর সিডনি অলিম্পিকে।
    যশপাল রাণা খুব কম বয়সেই পিস্তল শ্যুটিং-এ কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস কাঁপাচ্ছিলেন। কিন্তু যশপাল রাণার ইভেন্ট, অলিম্পিক ইভেন্ট ছিল না। যশপাল মূলত অংশ নিতেন ২৫ মিটার সেন্টার-ফায়ার পিস্তল ইভেন্টে। অপর দিকে অলিম্পিকে ছিল স্ট্যান্ডার্ড পিস্তল এবং র‍্যাপিড-ফায়ার পিস্তল ইভেন্ট দুটি। সেন্টার-ফায়ারের ক্ষেত্রে .৩০ থেকে .৩৬ ক্যালিবারের কার্তুজ ব্যবহৃত হত এবং মূলত শুরুর দিকে মিলিটারি সার্ভিস রিভলভার ব্যবহার করা হত। অপর দিকে স্ট্যান্ডার্ড পিস্তল বা র‍্যাপিড-ফায়ার পিস্তলের ক্ষেত্রে .২২ ব্যাসের বা ক্যালিবারের গুলি সহ স্পোর্টস পিস্তল ব্যবহার করা হয়। এখন, যশপাল রাণা কেন এই রিভলভার তুলে নিলেন বা স্পোর্টস রিভলভার ইভেন্টে অংশ নিলেন না – সে অন্য প্রশ্ন। যাই হোক, প্রসঙ্গে ফিরে আসি। রাজ্যবর্ধন রাঠৌর প্রথম আমাদের বিশ্বাস যোগালেন, যে ভারতও অলিম্পিকে পদক জিততে পারে। তাও শ্যুটিং-এ।
    সে বছরই, আরেকজন, ১০ মিটার রাইফেল ইভেন্টে কোয়ালিফাইং-এ তৃতীয় হয়ে ফাইনালে ওঠেন। ২০০০-এর সিডনি অলিম্পিকে তিনি ১১শ হয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৪এর এথেন্সে, ফাইনালে প্রত্যাশার চাপ সহ্য করতে না পেরে ৭ম হন। তিনি অভিনব বিন্দ্রা। ২০১২র লন্ডনে ১৬তম এবং ২০১৬র রিওতে পয়েন্টের .১ ভগ্নাংশের পার্থক্যে চতুর্থ হওয়ার মাঝে ২০০৮-এর বেজিং-এ ভারতের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তিগত ইভেন্টে অলিম্পিকের সোনার পদক জেতেন।
    তারপরে, ২০১২-তে বিন্দ্রারই সতীর্থ গগন নারং ১০ মিটার এয়ার-রাইফেলে ব্রোঞ্জ জেতেন। এবং একই অলিম্পিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডোগরা রেজিমেন্টের সুবেদার মেজর বিজয় কুমার ২৫ মিটার র‍্যাপিড-ফায়ার ইভেন্টে রূপো জেতেন।
    শ্যুটিং ইভেন্টে, কাছে এসেও স্বপ্ন অধরা থেকে গেছে আমাদের জয়দীপ কর্মকারের। ৫০ মিটার হাঁটু-মুড়ে প্রোন পজিশনের রাইফেল শ্যুটিং-এ অল্পের জন্য চতুর্থ হন।
    ২০২১-এ টোকিওতে ভারতীয় শ্যুটিং দল ছিল ১৫ জনের। যার মধ্যে ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে ২০১৮র এশিয়ান গেমস এবং ২০২১-এ দিল্লি বিশ্বকাপে সোনাজয়ী সৌরভ চৌধুরী প্রধান আশা। সৌরভ এবং মনু বাকরের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলের মিক্সড ইভেন্টেও পদকের সম্ভাবনা ছিল। সঙ্গে অভিষেক বর্মা ও যশস্বী দেশওয়ালেরও। অভিষেক ও মনুর ব্যক্তিগত ইভেন্টেও যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে দিব্যাংশ পাঁওয়ার ও এলাভনিল ভলারিভনের সম্ভাবনা ছিল মিশ্র ইভেন্টে।
    অদ্ভুতভাবে, ডবল-ট্র্যাপ ইভেন্টে ভারতের কেউ ছিল না। অতীতে যেখানে রাজ্যবর্ধন রাঠৌর বা রঞ্জন সোধির মতো বিশ্বের প্রথম সারির শ্যুটার এই ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন।

    পরের খেলা, বক্সিং। বক্সিং-এ ২০০৮এ বিজেন্দর সিংএর পরে একমাত্র মেডেল ২০১২-র মেরি কমের ব্রোঞ্জ। যদিও মেরি কমের সোনার সময়ে মেয়েদের বক্সিং অলিম্পিক-স্পোর্টসই ছিল না, না হলে হয়তো এক বা একাধিক সোনাও তিনি দিতে পারতেন। এবারে বক্সিং-এ ছেলেদের মধ্যে বিশ্বের এক নম্বর অমিত পাঙ্ঘাল ছাড়াও ছিলেন বিকাশ কৃষ্ণন, মনীশ কৌশিক। মেয়েদের মধ্যে মেরি কম ছাড়া লভলিনা বড়গোহৈঁ, পূজা রাণি ছিলেন। ভারতের বক্সিং-এ পদকের সম্ভাবনা ছিলেন এঁরা প্রত্যেকেই। তবে বক্সিং-এর ক্ষেত্রে ড্র-টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত এ বছর, যখন পয়েন্ট সিস্টেম নতুনভাবে এসেছে।

    এরপর দেখি ভারোত্তোলন – সেখানে একমাত্র ভারতীয় হিসাবে অলিম্পিকের ছাড়পত্র পেয়েছিলেন মণিপুরের মীরাবাঈ চানু। এবং সত্যি বলতে কি, চোখ বন্ধ করে যদি একটা মেডেলের কথা ভাবা যায়, তা ছিল মীরাবাঈ চানুরই। চানু, ৪৯ কিলোগ্রাম ওজন বিভাগে বিশ্বের ২ নম্বর এবং সত্যি সত্যিই তিন নম্বরের সঙ্গে ফারাক বিশাল। এর সঙ্গে ক্লিন ও জার্কে চানুর বিশ্ব রেকর্ডও রয়েছে।

    কুস্তিতে ‘দঙ্গল’ সিনেমার ফোগট বোনদের আরেক বোন বিনেশ ফোগট, যিনি গত অলিম্পিকে কোয়ার্টার ফাইনালে চোট পেয়ে ছিটকে গেছিলেন। অথচ সাক্ষী মালিকের নয়, বিনেশেরই পদক পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। বিনেশ এখন বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং-এর মাথায় বসে, ২০১৯-এ প্রথম ভারতীয় অ্যাথলিট হিসাবে লর‍্যাঁ স্পোর্টস পুরষ্কারের নমিনেশন পেয়েছিলেন তিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সে বছরই ব্রোঞ্জ পান তিনি ৫৩ কিলোগ্রাম বিভাগে। এবছরেও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা পেয়েছেন ফেব্রুয়ারিতে।
    রবি দাহিয়া আবার ৫৮ কেজি বিভাগে বিশ্বের ৩ নম্বর। সঙ্গে বজরং পুনিয়া বা দীপক পুনিয়ারাও রয়েছেন মেডেল পেতে পারেন। অংশু রাণি বা সোনম মালিকেরও ভালো ড্র পেলে মেডেল পাবার সম্ভাবনা ছিলই।

    তীরন্দাজিতে বরাবর র‍্যাঙ্কিং-এ উপরের দিকে থেকেও দীপিকা কুমারী হতাশাই এনেছেন। তবে ২০২১-এ তাঁর কনসিস্টেন্সি অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে স্বামী অতনু দাসের সঙ্গে মিক্সড ইভেন্টে একটা পদক ভারত আশা করতেই পারে।

    অ্যাথলেটিক্সে ভারত সেই নর্মান প্রিচার্ডের পরে কোনও পদকই পায়নি। একটা মিলখা সিং, একটা পি টি ঊষার নাকের তলা দিয়ে মেডেল বেরিয়ে গেছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতে এসে এথেন্সে অঞ্জু ববি জর্জ লঙ জাম্পে ফাইনালে ষষ্ঠ হয়েছেন। এবারে কিন্তু নীরজ চোপড়ার বেশ ভালো সম্ভাবনা ছিল। নীরজ ২০১৬-য় যুব বিশ্ব রেকর্ড করার পর থেকেই জ্যাভেলিনে এশিয়ান গেমসে সোনা এবং ডায়মন্ড লিগে ৪র্থ স্থানও অধিকার করেছেন। ডায়মন্ড লিগ সেরা চারটি গ্রাঁপ্রির পয়েন্ট ধরে নির্ধারণ করা হয়। বিশ্বের চার নম্বর জ্যাভেলিন থ্রোয়ার হিসাবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে পদক অবধি পৌঁছনোর পথ যথেষ্ট সুগম তাঁর।

    এছাড়া, ডিসকাসে কমলদীপ কৌরের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। ডিসকাসে, বিশেষত মহিলা ডিসকাসে ভারতের একটা ছোটখাটো ঐতিহ্য রয়েছে। বিকাশ গৌড়া ২০১২-র লন্ডনে ফাইনালে অষ্টম হয়েছিলেন। মহিলাদের মধ্যে কৃষ্ণা পুনিয়া ২০১০-এর কমনওয়েলথ গেমসে সোনা পেয়েছিলেন। এবং ২০১২-য় ফাইনালে অষ্টম হয়েছিলেন। এবারে সীমা পুনিয়া এবং কমলদীপ কৌর ডিসকাসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। কমলদীপ জাতীয় রেকর্ডধারী, ৬৫.০৪ মিটার ছুঁড়ে।

    ব্যাডমিন্টনে পিভি সিন্ধুর কথা আর নতুন করে বলার কিছুই নেই। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম তাঁর খুব একটা দারুণ যাচ্ছিল না অতিমারির পর থেকে। তবে পুরুষদের ডাবলসে সাত্বিক রাঙ্কিরেড্ডি এবং চিরাগ শেট্টির জুড়ি ইউরোপীয় সার্কিটে বেশ ভালো ফল করেছিলেন এবং ড্র যদি অনুকূল হয় তাহলে হয়তো দু’টো মেডেল আসতে পারে।

    পুরুষদের হকির ক্ষেত্রে সেই ১৯৮০-র পর থেকে আর কিচ্ছু নেই। কিন্তু গত ২০১৪-র পর থেকেই ভারতীয় হকিতে পুনর্জাগরণ দেখা যাচ্ছে। হকির পর্বে আমরা এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাব। ২০১৪-য় ভারত এশিয়ান গেমস জেতে। তারপর হকি ওয়র্ল্ড লিগের ব্রোঞ্জ জেতে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে। ২০১৬ এবং ২০১৮, শেষ দু’টি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে রূপো জেতে ভারত। আবার ২০১৮-র এশিয়ান গেমসে সেমিফাইনালে মালয়েশিয়ার কাছে হেরে তারপর পাকিস্তানকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জেতে ভারত এবং ওই বছরেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের কাছে হারে ভারত।
    সব মিলিয়ে কেমন যেন ‘হইলেও হইল না’ মার্কা গতিবিধি। বিশ্ব হকিতে ৪ নম্বর দেশ হিসাবে এবারের অলিম্পিক থেকে মেডেলের আশা তো ছিলই।
    মহিলাদের ক্ষেত্রে কিন্তু সেই আশাটা ছিল না। সাম্প্রতিক কালে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে রানার্স, এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স চ্যালেঞ্জে রানার্স আর ২০১৮ বিশ্বকাপে অষ্টম হওয়া ছাড়া রাণি রামপালদের ঝুলিতে সেরকম কোনই সাফল্য ছিল না। তবু, শক্ত গ্রুপ ডিঙিয়ে যাবার একটা আশা ছিল। জার্মানি, ব্রিটেন আর নেদারল্যান্ডস ছাড়া বাকি দুই দলকে হারাবার ক্ষমতা রয়েছে, এইটাই যা আশার খবর।

    তাহলে হিসাবমতো ক’টা মেডেল হবার সম্ভাবনা ছিল? আশাবাদী পন্থা ধরলে শ্যুটিং-এর পিস্তল ইভেন্টে সৌরভ চৌধুরী, সৌরভ চৌধুরী- মনু বাকর, মনু বাকরের আরও দু’টি, অভিষেক বর্মা, আর অভিষেক বর্মা- যশস্বী দেশওয়ালের জুড়ি। রাইফেলে দিব্যাংশ পাঁওয়ার এবং এলাভরিন ভেলারিভনের জুড়ির মেডেল পাবার সম্ভাবনা। অর্থাৎ সাতটি।
    ভারত্তোলনে চানু, তীরন্দাজিতে দীপিকা কুমারি এবং দীপিকা কুমারি-অতনু দাস, অ্যাথলেটিক্সে নীরজ চোপড়া, কমলজিত কৌর, বক্সিং-এ মেরি কম, অমিত পাঙ্ঘাল, বিকাশ কৃষ্ণান, লভলিনা বড়গোহৈঁ, পূজা রাণি, কুস্তিতে বিনেশ ফোগট, রবি দাহিয়া, বজরং পুনিয়া ও দীপক পুনিয়া, ব্যাডমিন্টনে সিন্ধু, এবং পুরুষদের ডাবলসে আর হকিতে পুরুষদের বিভাগে।
    অর্থাৎ সব মিলিয়ে, চব্বিশটি।

    এবারে যদি নিরাশাবাদী পন্থায় হিসাব করি, তাহলে বেঁচে থাকছেন শুধুমাত্র চানু, বিনেশ ফোগট ও রবি দাহিয়া। পিভি সিন্ধু বিশ্বের ৫ নম্বর, হকিতেও ৫ নম্বর। নীরজ বিশ্বের ৪ নম্বর। তাহলে এই মেডেলগুলো আসছে না সেই হিসাবে। চব্বিশ থেকে একেবারে তিন।

    তাহলে বাকি রইল বাস্তববাদী পন্থা। সেই হিসাবে, সৌরভ চৌধুরীর পারফরম্যান্স অনুযায়ী পদক আসা উচিত, মিক্সড পিস্তলেও। ভারত্তোলনে চানু তো রইলই, নীরজ চোপড়া, মেরি কম, অমিত পাঙ্ঘাল বক্সিং-এ, বিনেশ ফোগট ও রবি দাহিয়া কুস্তিতে আর সিন্ধুর অভিজ্ঞতা আর হকির ক্ষেত্রে ৫০-৫০। তাহলে? দাঁড়াচ্ছে ন’টি, হকি ছাড়া। এই নিয়েই চলুন পরের পর্ব থেকে একে একে প্রতিটি খেলায় ভারতের সম্ভাবনার ভিত্তিতে পারফরম্যান্স নিয়ে কাটাছেঁড়া করা যাবে।
    এবং তারপর হয়তো সেই ইভেন্টগুলো নিয়েও আলোচনা করব, যেগুলোতে মেডেলের সম্ভাবনা ছিল না আর হয়ওনি। তারপর লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেছে। একটা ছাড়া। গলফ। গলফ নিয়েও হয়তো দু’-চার অনুচ্ছেদ কষ্ট করে পড়তে হবে আপনাদের। সে না হয় দেখা যাবে।

    শুরুতে গৌরচন্দ্রিকা করিনি, শেষে তো দু’কলি গান গাইতেই পারি! আসলে এই পরিশ্রমটার মানে হয় না কোনও। এদ্দিন তো হয়নি। ক্রিকেট, ইউরোপীয় ফুটবলের চাপে বাকি খেলাগুলো ভুলেই যাই। আর চার বছর অন্তর একবার করে বিফল হবার জন্য ক্রীড়াবিদদের গাল পাড়ি, সফল হলে মাথায় তুলে নাচি, প্রতিশ্রুতির তুষারপাতের নিচে। আসলে এভাবে হয় না, পরিশ্রম করে এই সিরিজটা চালু করার কারণ, যদি সামান্য সংখ্যক মানুষের মধ্যে একটু অন্যান্য খেলাগুলো নিয়ে আগ্রহ জাগানো সম্ভব হয়, অন্তত অলিম্পিক স্পোর্টসগুলিতে। বাকিটা পরের পর্বে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২০ আগস্ট ২০২১ | ২৫৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২০ আগস্ট ২০২১ ১৫:০৪496907
  • আহা এইটে বড় ভাল হয়েছে। এই খেলা ব্যপারটা স্রেফ ব্যবহারকারিদের খোলা টইতেই সীমাবদ্ধ ছিল এতকাল। 


    খুবই খুশী হলাম এই বিভাগটা পেয়ে। 

  • aranya | 2601:84:4600:5410:5175:ba72:6f79:117a | ২০ আগস্ট ২০২১ ২১:৩৬496923
  • খুবই আনন্দ পেলাম, লেখাটা পড়ে। কোন খেলায় ভারতে কেমন ইনফ্রাস্ট্রাকচার  আছে, সরকার কী করছে, সেগুলো ও লিখবেন। 


    নীরজ সোনা জেতার পর একটা আর্টিকলে দেখলাম বাংলায় জ্যাভেলিন থ্রোয়ার - রা অনেকে এখনও বাঁশের বর্শায় ট্রেনিং করে 

  • রাঙতা | 223.191.3.239 | ২১ আগস্ট ২০২১ ০২:৪০496927
  • খুবই ভালো লাগলো। আগামী পর্বের অপেক্ষায়।     

  • 4z | 2606:40:490:3423::861:e1bb | ২১ আগস্ট ২০২১ ০৫:৫১496929
  • চলুক, পড়ছি।

  • সুকি | 49.207.205.90 | ২১ আগস্ট ২০২১ ০৭:০১496930
  • এটা খুব ভালো হল। সৌরাংশুর কলম নিয়মিত আসুক। 

  • Rajat Subhra Banerjee | 115.187.35.112 | ২১ আগস্ট ২০২১ ০৯:৪৯496943
  • দারুণ লেখা, যথারীতি। 

  • Ranjan Roy | ২১ আগস্ট ২০২১ ১৩:২৮496957
  • পরের পর্বের অপেক্ষায়।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন