এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  খেলা  শনিবারবেলা

  • ভারতের অপারেশন টোকিওঃ পর্ব ৫

    সৌরাংশু
    ধারাবাহিক | খেলা | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৭৯৭ বার পঠিত

  • ভারোত্তোলন

    কুস্তির মতোই ভারোত্তোলনও সেই প্রথম আধুনিক অলিম্পিক থেকেই অলিম্পিক মুভমেন্টের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এমনকি, প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছিল ভারোত্তোলনের তারও আগে। ১৮৯১তে।

    অপর দিকে, ভারতবর্ষে, বর্ধমানের বিজয় চন্দ্র মহতাবের সভাপতিত্বে এবং প্রসিদ্ধ আইনজীবী এন. এন. বোসকে সম্পাদক করে ভারোত্তোলন ফেডারেশন যাত্রা শুরু করে সেই ১৯৩৫ সালে। আর তার পরের বছরেই, বার্লিন অলিম্পিকে, ভারতের হয়ে ভারোত্তোলনে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করা হয়। কিন্তু অংশগ্রহণ করেন বার্মিজ বংশোদ্ভূত ইউ. জ. উইক। তবে প্রথম ভারতীয় অলিম্পিক ভারোত্তোলক হলেন ডি. রাজাগোপাল, যিনি ১৯৪৮ থেকে পরপর তিনবার অলিম্পিকে অংশ নেন।
    বাঙালিদের মধ্যে লক্ষ্মীকান্ত দাস এবং মোহন লাল ঘোষ পাঁচ এবং ছয়ের দশকে অলিম্পিকে অংশ নেন। অনিল মণ্ডল সাতের দশকে। তবে ভারতীয় ভারোত্তোলন বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে, যখন মহিলাদের ভারোত্তোলন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয় এবং অলিম্পিকে যুক্ত হয়।

    ১৯৮৯-এর মহিলাদের তৃতীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ভারত অংশ নেওয়া শুরু করল। ম্যানচেস্টারের তৃতীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এন. কুঞ্জুরানি দেবী রুপো পেলেন ফ্লাইওয়েট বিভাগে। যে বিভাগে এই অলিম্পিকের পদক-বিজয়ী মীরাবাঈ চানু অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া, ললিতা পোল্লে লাইটওয়েট বিভাগে ব্রোঞ্জ পেলেন। যদিও ফেদারওয়েটের স্ন্যাচে ছায়া আদক ব্রোঞ্জ এবং ব্যান্টমওয়েটের স্ন্যাচে ললিতা পোল্লে ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে শ্যামলা সেট্টি রুপো পেলেন।
    কুঞ্জুরানি দেবী মোট সাতটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো পান। অলিম্পিকে যখন মহিলাদের ভারোত্তোলন একটি ইভেন্ট হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হল তখন কুঞ্জুরানি দেবী সেরা সময় পেরিয়ে এসেছেন।

    কুঞ্জুরানি দেবীর পরেপরেই ভারতীয় ভারোত্তোলনের সুপারস্টার হলেন কর্ণম মালেশ্বরী। অন্ধ্রর একটা ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা মালেশ্বরী ১৯৯৪ ও ১৯৯৫-তে দু’-দু’বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতলেন। দু’বার ব্রোঞ্জও। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যে ১৯৯৬ নয়, মহিলাদের ভারোত্তোলন অলিম্পিক ইভেন্টের অন্তর্ভূক্ত হল ২০০০-এর সিডনি অলিম্পিকে এসে। তদ্দিনে সোনার সময় পিছনে ফেলে এসেছেন মালেশ্বরী। তবু সিডনি অলিম্পিকে অনেক বেশি ওজনের বিভাগে (লাইট হেভিওয়েট) স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে যথাক্রমে ১১০ কিগ্রা ও ১৩০ কিগ্রা তুলে ব্রোঞ্জ জেতেন। তবে সোনা জেতার তাগিদে আগ বাড়িয়ে ১৩৭.৫ কিগ্রা তুলতে না গেলে, হয়তো ভারতের প্রথম মহিলা পদক বিজয়িনীর পদকের রঙ অন্যরকম হতেই পারত।

    এইখানেই গুরুত্ব হচ্ছে, কোচ এবং ফিজিওর। ফিজিও যেমন ভারোত্তোলকের শরীরের পেশি-ঘনত্বের বিষয়টি ভালো করে বোঝেন, ফলে ভারোত্তোলক স্ন্যাচে ভালো করবেন, নাকি ক্লিন অ্যান্ড জার্কে – সে বিষয়ে কোচের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করেন। আর কোচ এখানে ক্রীড়াবিদের সঙ্গে মিলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনবার তোলার সুযোগ আসে প্রতিটি বিভাগে। স্ন্যাচের ক্ষেত্রে বারবেলটি সরাসরি মাথার উপর তুলে, স্কোয়াট করে বসে, তারপর উঠে দাঁড়াতে হয়। ক্লিন অ্যান্ড জার্কের ক্ষেত্রে প্রথমে তা কাঁধ এবং বুকের উপরে রেখে, দাঁড়িয়ে, তারপর ঝটকার মাধ্যমে উঠে দাঁড়াতে হয়। এবারে দেখা যায়, যে যাঁদের শরীরের ঊর্ধ্বাংশের পেশি-ঘনত্ব বেশি, তাঁরা স্ন্যাচে বেশি ভালো ফল করেন, আর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে হাঁটুর জোর এবং জঙ্ঘার জোর বেশি থাকার প্রয়োজন। টেকনিকেও মসৃণভাব, নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমেই আসে।

    কিন্তু পেশি-ঘনত্ব বেশি রাখতে গেলে আরও অনেক কিছু করা যায়। যদিও বিংশ শতাব্দীর শেষ দশক থেকে এই বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে এবং ঠিক কী ব্যবহার করলে কৃত্রিমভাবে পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করা যায় অথবা যায় না – সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা হতে শুরু করেছে। তবুও, তার বেশ কিছু আগে থেকে, মূলত ইস্ট ইউরোপীয় ব্লক এবং চিনের এই পারফরম্যান্স বৃদ্ধিকারী ওষুধ ও অন্যান্য সাপ্লিমেন্টারির অপব্যবহার নিয়ে আরও গভীরে কাজ চলে আসছে।

    ২০১৫-তেই ভারতের জাতীয় ডোপিং বিরোধী এজেন্সি বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিযোগিতা থেকে প্রায় ২১ জনকে ডোপিং-এর অভিযোগে নির্বাসিত করেছে। চারটি রাজ্যের ভারোত্তোলন সংস্থাকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে। ২০১৯-এ কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে ১০ জনকে জাতীয় ক্যাম্প থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে ২০০৪, ২০০৬ এবং ২০০৯-এ ভারতীয় ভারোত্তোলন ফেডারেশন ব্যান হয়েছিল এবং ২০১০-এর কমনওয়েলথ গেমসে নিজের মাটিতে অংশ নেবার জন্য দু’ কোটি টাকা ফাইন দিতে হয়।
    এর শুরুটা হয়েছিল সেই ২০০৪-এ। এথেন্স অলিম্পিকের ডোপ পরীক্ষায় ভারোত্তোলক সানমাচা চানু এবং প্রতিমা কুমারী ব্যর্থ হন। ভারতকে এক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া থেকে বহিষ্কার করা হয়। বস্তুতঃ একটা সময় পাতিয়ালার সাই ক্যাম্প সম্পর্কে অভিযোগ ছিল, যে তার নর্দমায় ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ যত্রতত্র পাওয়া যেত। সে সব পেরিয়ে মীরাবাঈ চানু।

    মীরাবাঈ চানু হল কী করে? অর্থাৎ এমন একটা খেলা, যেখানে ভারত ডোপিং-এর জন্য বদনাম, সে খেলায় একজন মাত্র প্রতিযোগী অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন এবং তিনিই মেডেল জিতছেন। বাকিরা কোথায় গেল?

    সাইখোম মীরাবাঈ চানুর জন্ম ইফল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রামে। আসলে ভারতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পছন্দের ক্রীড়া বেছে নেওয়ার মধ্যে কোনও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি থাকে না। জঙ্গল থেকে কাঠ কুড়িয়ে আনার সময় মীরাবাঈ তাঁর বড় দাদা বা দিদিদের থেকে অনেক বেশি তুলতে সক্ষম হতেন। হয়তো বেঁটেখাটো, কিন্তু শক্তপোক্ত ছিলেন বলে ভরকেন্দ্র কম থাকত।
    মণিপুরে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে যে কোনও খেলার প্রতি একটা সহজাত টান থাকে। মীরাবাঈ হয়তো তীরন্দাজ হতেন। কিন্তু ছোটবেলায় কুঞ্জুরানি দেবীকে দেখে তাঁরও ইচ্ছা হয় ভারোত্তোলনের। ইম্ফলের সাইয়ের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলনের জন্য যাবার সময় তিনি ইম্ফল হাইওয়ের ট্রাকড্রাইভারদের সাহায্য নিতেন, অধিকাংশই চেনা হয়ে গিয়েছিল এবং অলিম্পিক পদকের পর তাঁদের ডেকে বাড়িতে খাইয়েছিলেনও তিনি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ।

    ভারতীয় ভারোত্তোলন তখন ধ্বংসস্তূপে। এরই মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ভারোত্তোলন দলের সাফল্যের জন্য তাদের কোচ বিজয় শর্মাকে লন্ডন অলিম্পিকের জন্য সহকারী কোচ নিযুক্ত করা হয়। বিজয় শর্মা, নিজে ভারোত্তোলক ছিলেন এবং বেশ কিছুদিন ইউরোপেও কাটিয়েছেন। ২০১৪-য় পাতিয়ালায় ট্রেনিং-এর ভার নেবার পরে, কর্তাদের অনুরোধ করে ভারোত্তোলকদের জন্য আলাদা রান্নাঘরের ব্যবস্থা করেন। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট থেকে ভারোত্তোলকদের সরিয়ে নিয়ে প্রাকৃতিক প্রোটিনের দিকে জোর দেন বেশি। ২০১৪-তেই মীরাবাঈ গ্লাসগোয় ৪৮ কেজি বিভাগে কমনওয়েলথ গেমসে রূপো জেতেন। ওদিকে ২০১৫-য় যখন ডোপিং-এর কাদায় ভারতীয় ভারোত্তোলন আবার ডুবছে, তখন বিজয় শর্মা মীরাবাঈ, সতীশ সহ কয়েকজনকে বটগাছের মতো আগলে রাখছেন। ২০১৪-র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পারফরম্যান্স অনুযায়ী ভারত ২০১৬-র রিও অলিম্পিকে দু’জনের কোটা পায়। সেই অনুযায়ী ট্রায়ালও হয় এবং তামিলনাড়ুর সতীশ কুমার শিভলিঙ্গম এবং মীরাবাঈ যোগ্যতা অনুযায়ী পারফর্ম করে অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু মীরাবাঈ চোট এবং ভুল ওজন নির্বাচনের কারণে রিওতে ওজন তোলার খাতাতেই নাম লেখাতে পারেননি। আসলে একবার বেশি ওজন দিয়ে শুরু করলে ফিরে যাওয়া যায় না কম ওজনে। ফলস্বরূপ ব্যর্থতা।

    সে যাই হোক, সেখান থেকে ফিরে এসে অ্যামেরিকার আনাহেইমের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা আনা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু কোচ বিজয় শর্মার টেকনিক এখানে কাজে লাগে। এমনিতেই মীরাবাঈয়ের শারীরিক ভরকেন্দ্র কম, ফলস্বরূপ ক্লিন অ্যান্ড জার্কে বেশি ওজন তোলার সম্ভাবনা। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে বেশি মনোযোগ দিয়ে এবং স্ন্যাচে মোটামুটি ভালো পারফর্ম করে সফল হওয়া শুরু। ২০২০-র শুরুতে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে যদিও বা তিনি ব্রোঞ্জ পেলেন, কিন্তু ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১১৯ কিলোগ্রাম তুলে বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করলেন। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের পারফরম্যান্স সার্বিকভাবে খুব ভালো হল না বটে, কিন্তু মীরাবাঈ বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং-এ দ্বিতীয় হয়ে একমাত্র ভারোত্তোলক হিসাবে টোকিও গেমসের জন্য যোগ্যতা অর্জন করলেন। যদিও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ৪৪ কিলোগ্রাম বিভাগে ওড়িশার উপজাতি মেয়ে ঝিল্লি দালাবেহরা সোনা জিতেছিলেন, কিন্তু ৪৪ কিলো বিভাগটি তো অলিম্পিকেই নেই। আশা করছি, পরবর্তীকালে এই মেয়েটিও ৪৯ কিলো বিভাগে নিজের অবস্থান পাকা করবে।

    এরপর এল লকডাউন এবং টোকিও গেমস পিছিয়ে গেল। গৃহবন্দী মীরাবাঈয়ের ডায়েটে যাতে কোনও সমস্যা তৈরি না হয়, তা দেখার দায়িত্ব বর্তাল প্রাক্তন বায়ুসৈনিক এ. পি. ডাথানের উপর। ডাথান ডায়েটেশিয়ান, চাকরিতে থাকাকালীন সার্ভিসের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০১৫-তে অবসর নেবার সঙ্গে সঙ্গেই বিজয় শর্মার অনুরোধে ভারতীয় ভারোত্তোলক কোচিং টিমের সঙ্গে যুক্ত হলেন। সেই তিনিই, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মীরাবাঈ চানুর ডায়েট বেঁধে দিলেন। বাড়িতে থাকাকালীন অনুশীলনের সময়ও বাঁধা থাকল। প্রথম লকডাউন উঠলে প্রথমে ইম্ফল এবং পরে পাতিয়ালা ক্যাম্পে জৈববলয় তৈরি করা হয় অ্যাথলিটদের নিয়ে। শুরুতে কোচরা ভিডিও কনফারেন্সিঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছিলেন। আর পাতিয়ালায় তো সকলেই যোগ দিলেন। চলল নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন। কিন্তু পিঠের চোট মাথাচাড়া দিতে তাঁকে পাঠানো হল অ্যামেরিকায়, চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসার শেষে ফিজিওথেরাপির সবক’টা সেশন সম্পূর্ণ করে ফিট মীরাবাঈ সরাসরি টোকিও পৌঁছলেন, সঙ্গে অ্যামেরিকার স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ ড. আরন হরচিং। ভারত থেকে পৌঁছলেন বিজয় শর্মা।

    এই হরচিং মীরাবাঈয়ের কাঁধ ও পিঠের মাংসপেশির জোর বাড়াবার জন্য শিডিয়ুলিং করে দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী অনুশীলনে ফাঁকি পড়েনি। এর সঙ্গে সুবিধা হয়েছিল উত্তর কোরিয়া অংশ না নেওয়ায়। রি সিং গামের কাছে মেডেল হারিয়েছিলেন মীরাবাঈ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। তার উপর চিন থেকে একমাত্র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হউ ঝিহুই অলিম্পিক কোটায় সুযোগ পেয়েছেন, রুপো বিজয়িনী জিয়াং হুইওয়া পাননি, একটি দেশ থেকে একটি বিভাগে একজনই অংশ নিতে পারবেন বলে।
    মীরাবাঈ অবশ্য এমনিতেই বিশ্বের দু’নম্বর ছিলেন। তবে অলিম্পিকে ঝিহুই যেখানে স্ন্যাচে শুরুই করেছিলেন ৮৮ কিলোগ্রাম দিয়ে সেখানে, মীরাবাঈ দ্বিতীয় লিফটে তোলেন ৮৭ কিলো। আর পরের ৮৯ কিলোগ্রাম তুলতে ব্যর্থ হন। তার উপরে ক্লিন অ্যান্ড জার্কে নিজের সেরাটাও দিতে পারেননি। ফলস্বরূপ বিশ্বরেকর্ড বেঁচে গেলেও অলিম্পিক রেকর্ড করবন্দী করেন ঝিহুই।
    তবে চানুর সঙ্গে যে পার্থক্য ঝিহুইয়ের, সেই পার্থক্য বাকিদের সঙ্গেও ছিল অতএব রুপোর পদক অবশ্যম্ভাবী ছিলই।
    টোকিওর প্রথম ভারতীয় মেডেলজয়ী হিসাবে নাম উঠল মীরাবাঈ চানুর। এরপর কী?

    এই এর পরের গল্পটাই খুব পরিষ্কার নয়। মীরাবাঈয়ের নিজস্ব টেকনিক এবং দক্ষতায় যতটা সম্ভব করে ফেলেছেন বোধহয়, ঝিহুইয়ের বয়স কম, তাঁকে ধরাটা খুব সহজ নয়, বিশেষত যে বয়স থেকে ঝিহুই ট্রেনিং শুরু করে শারীরিক ভরকেন্দ্রকে পোক্ত বানিয়েছেন, সেই বয়সে মীরাবাঈ ওয়েটলিফটিং-এর নামই শোনেননি।
    তবে সিস্টেমের একটা সম্পূর্ণ পূনর্নবীকরণ দরকার। না হলে এই ডোপের খাঁড়া মাথার উপর ঝুলবেই। ডোপের কথা উঠলই যখন, তখন আরেকটি আশঙ্কার কথা – কুস্তি এবং ওয়েটলিফটিং-এ ভারতের একটা সাম্প্রতিক সাফল্যের গল্প তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু উভয় খেলাতেই ডোপিং নিয়ে বিশ্বসংস্থার মুখ বারবার পোড়ার জন্য অলিম্পিকে পরের বার এই দু’টি খেলা থাকবে কি না – তাই নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। কুস্তি এবং ভারোত্তোলন, উভয় ক্ষেত্রেই নিয়ামক সংস্থার দায়িত্বের মধ্যে সার্বিকভাবে খেলাটিকে মেঘমুক্ত করার দায়িত্ব থাকে। সেটায় উভয় বিশ্ব-সংস্থাই চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ। তবু দেখা যাক, লবি করে কী হয়। এর আগে রিওর সময় কুস্তি নিয়ে একই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। এখন ‘ফিঙ্গারস ক্রস’ করে রাখা ছাড়া উপায়ও নেই।

    আর ভারতের কথা? কুঞ্জুরানি দেবী মণিপুরের কোচ ছিলেন যখন মণিপুরকে বহিষ্কার করা হয় ২০১৫তে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া তো হয়ইনি, বরং তাঁকেই অনুসন্ধান কমিটিতে রাখা হয়। এটুকুই যথেষ্ট, আশঙ্কার মেঘের আয়তন বিচার করতে। বাকিটা পরে কখনও দেখা যাবে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৭৯৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন