এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  পরিবেশ

  • সুন্দরবনের ঝড়লিপি

    জয়দীপ মিত্র
    আলোচনা | পরিবেশ | ৩০ আগস্ট ২০২১ | ১৭১১ বার পঠিত | রেটিং ৩.৫ (২ জন)
  • ২৫শে মে সকাল সাড়ে আটটায় সাইক্লোন ইয়াস-এর ঝাপটায় বুড়িগঙ্গার প্রবল জলপ্লাবন সুন্দরবনের পশ্চিমের দ্বীপগুলো কার্যত ডুবিয়ে দেওয়ার তিনদিন পরে ঝিনাই নদীতে আবার নৌকো নামে। সেই প্রথম খেয়ায় নদী পেরিয়ে ওপারে মৌসুনি দ্বীপের ফেরিঘাটে পা রাখছি যখন, তখনও ধ্বংসের দৃশ্যগত উলঙ্গ চেহারাটা কেমন হতে পারে আমার জানা ছিল না। প্রথম পদক্ষেপেই এক হাঁটু কাদায় গেঁথে গিয়ে বুঝতে পারি এই মাটি আমার আজন্ম চেনা নির্ভরযোগ্য, ধারণক্ষম মাটি নয়। এ মাটি সুন্দরবনের মাটি। ধারক। আবার ঘাতকও।

    তখনও দ্বীপের সমস্ত ধানজমি জলের তলায়। বিধ্বস্ত বাঁধের পিঠ, কংক্রিটে ঢালাই চারফুটের সড়ক, টিউবওয়েলের বাঁধানো পাড় কোনোক্রমে জলের ওপর জেগে আছে। বাঘডাঙা গ্রামের ১১টা টিউবওয়েলের ৮টাই ওগড়াচ্ছে নোনা জল। বাকি তিনটেতে বানভাসি মানুষের নিঃশব্দ ভিড়। প্লাস্টিকের ফাঁকা ড্রাম জলে ভাসিয়ে অসীম প্লাবন সাঁতরে গ্রামের ছেলেরা আসছে জল ভরতে। মিষ্টি জলের মাছেরা নোনা জলের ঢেউ-এ যুঝতে না পেরে মরে ভেসে আছে ঝাঁকে ঝাঁকে, তিনদিনের ভ্যাপসা গরমে পচে গিয়ে দ্বীপময় ছড়িয়ে দিচ্ছে চাপা দুর্গন্ধ। সুন্দরবনে ধ্বংসের পচনগন্ধও বড়ো তীব্র।


    ডিসেম্বরের গোড়ায় দেখেছিলাম এই সমস্ত দ্বীপ মাইলের পর মাইল সোনালি হয়ে আছে পাকা ধানে। অথচ পাঁচ মাস পরেই দেখছি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কোনও বোট গ্রামের ঘাটে ভিড়তে পারে সেই আশায় ভাঙা বাঁধের ওপর কাতারে কাতারে বুভুক্ষু মানুষের ভিড়। এটাই সুন্দরবনে জীবনের ব্যাকরণ--শক্ত বালির মাঝখানে হামেশাই চোরাবালি। সাইক্লোন আমফান থেকে সাইক্লোন ইয়াস-এর দুমাস পর পর্যন্ত বারে বারে সুন্দরবন টহল দিয়ে বুঝেছি জন্মের আদিলগ্ন থেকেই এই সমস্ত দ্বীপ তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এখানে মানুষের টিকে থাকার লড়াইটা ভবিতব্যের টাইমস্কেলে মেপেছি বলেই তা আমার এমন অলীক বলে মনে হয়েছে।

    আমফানের পর উঠোনে আছড়ে পড়া খড়ের চালের ভিতর থেকে বিভিন্ন সময়ে গুঁজে রাখা গেরস্থালির এটা-সেটা উদ্ধার করতে করতে দক্ষিণ কাশিয়াবাদ গ্রামের গীতারানি মন্ডল আমাকে অদ্ভুত নিষ্পৃহ গলায় বলেছিলেন--’ঝড় নিয়েই তো বাঁচি আমরা’। সুন্দরবনের ৪৫ লক্ষ মানুষের কাছে ঝড় দৈব নিয়মের মতো অমোঘ। আজ নয়, এখানে বাসা বাঁধার প্রথম দিনটা থেকেই ঝড়ের দাসত্ব মানুষের। একসময় কলকাতা বন্দরে জাহাজ চলাচলের খুঁটিনাটি দেখতেন হেনরি পিডিংটন। পরবর্তীকালে ‘সাইক্লোন’ (যার আক্ষরিক অর্থ কুণ্ডলী পাকানো সাপ) শব্দটা প্রথম ব্যবহার করে এবং তার কারণ সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য জুগিয়ে হেনরি পিডিংটন আবহাওয়াবিদ হিসেবে পৃথিবীবিখ্যাত হবেন। ১৮৫৩ সালে ক্যানিং-এ এক বিশাল বন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হলে এই হেনরি পিডিংটন তীব্র প্রতিবাদ করেন, এবং তার আপত্তিকে প্রায় একটা জন-আন্দোলনের রূপ দেন। লর্ড ডালহৌসি এই আপত্তিতে কান না দেওয়ায় ১৮৬৪ সালে ক্যানিং এক প্রকাণ্ড বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আর তার মাত্র তিন বছরের মধ্যে এক মামুলি সাইক্লোন জলতল ফুলিয়ে ক্যানিং বন্দরকে ডুবিয়ে দেয়। সেবার ক্যানিং ঘিরে থাকা মাতলা নদীর জলতল মাত্র ৬ ফুট বেড়েছিল বলে জানা যায়। আর সাইক্লোন ইয়াস-এ বুড়িগঙ্গার জল ফুলে উঠেছিল অন্তত ৪০ ফুট। গত দুশো বছরে পৃথিবীর উষ্ণায়নের হার বহুগুন বেড়ে যাওয়ায় জলস্ফীতি ও সাইক্লোন, যা কী না সুন্দরবনের ভাষায় কোটাল এবং ঝড়, সংখ্যায় এবং তীব্রতায় বহুগুন বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাঙ্কের আবহাওয়া ও জলসম্পদ নিয়ন্ত্রন শাখা ২০১৬ সালের এক রিপোর্টে বলেছেন যে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতি বছর গড়ে অন্তত আড়াইটে সাইক্লোন আছড়ে পড়বে বলে ধরে নেওয়াই যায়। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে উক্ত গড়--যথাক্রমে--০.৭ এবং ০.৫। ৫ই মে ২০১৯ থেকে ২৫শে মে ২০২১-- এই দুবছরে চার চারবার সুন্দরবন বিধ্বস্ত করে দিয়েছে সাইক্লোন ফণি, বুলবুল, আমফান, ইয়াস। বিশ্বব্যাঙ্কের চেতাবনি অভ্রান্ত। সমস্যা হল হেনরি পিডিংটনের সময়ে যত মানুষ সুন্দরবনের ঝড়ঝাপটা সামলাতেন তার প্রায় হাজার গুন বেশি মানুষ এখন সুন্দরবনের অধিকতর ও প্রচণ্ডতর ঝড়ঝাপটায় তাদের অস্তিত্বের এক্কেবারে প্রান্তে পৌঁছে গেছেন। আর কয়েক বছরের মধ্যেই ডুবে যেতে না চাওয়া ৪৫ লক্ষ মানুষ যদি সুন্দরবন ছেড়ে নির্ভরযোগ্য মাটির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন, তাহলে তা হবে দেশভাগের পর এদেশের বৃহত্তম শরণার্থী-মিছিল।

    ২০০৯ সালে আয়লার ধাক্কায় সুন্দরবন বিধ্বস্ত হয়ে যাবার পর থেকেই ভবিষ্যতের নৃশংস চেহারাটা এখানকার মানুষের কাছে প্রকট হয়। তখনই বোঝা যায় সুন্দরবনের বাইরে কোথাও বাঁচবার একটা বিকল্প ব্যবস্থা করে ফেলতে না পারলে অচিরে আক্ষরিক অর্থেই ডুবে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে, প্রায় আধ কোটি মূলত কৃষিজীবী মানুষ বেঁচে থাকার উপযুক্ত বিকল্প মাটি পাবেন এমন আশা করাটা নিছকই পাগলামি। তাই সুন্দরবনের ভাঙনমুখর মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা ছাড়া এখানে মানুষের সত্যিই কিছু করার নেই। সম্প্রতি PNAS--বা Proceedings of the National Academy of Sciences of the US--পরিষ্কার জানিয়েছেন যে ২১০০ সালের মধ্যে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের চতুর্দিকে সমুদ্রতল পাকাপাকিভাবে ১.৩ মিটার বাড়বে। আবহাওয়াবিদরা বলেন সমুদ্রতল ১ মিটার বেড়ে যাওয়া মানেই ভারতীয় উপকূলে ৫ কোটির বেশি মানুষের সর্বস্ব ডুবে যাওয়া। সেই হিসেব অনুযায়ী আগামী ৩০-৪০ বছরের মধ্যেই গোটা সুন্দরবনের সমুদ্রে ডুবে যাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত। অর্থাৎ, আর মাত্র একটা প্রজন্মের গল্প। অস্তিত্বের সংকট শিয়রে বলা যেতেই পারে। ভারতের অন্তর্গত সুন্দরবনে মোট দ্বীপের সংখ্যা ১০২, যার ৫৪ টায় মানুষের বাস। গত কুড়ি বছরে এর মধ্যে ডুবে গেছে ৪টে দ্বীপ--এর মধ্যে লোহাচারা, মনুষ্যবসতি ছিল পৃথিবীতে এমন প্রথম দ্বীপ, যা চিরতরে সমুদ্রে ডুবে গেছে। কয়েক দিন আগেই শুনছিলাম বালিয়াড়া গ্রামে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে অসীম ঘোলাটে জলরাশি দেখতে দেখতে গফুর মিঞা স্বগতোক্তি করছেন—‘সাগর এসে গেছে। বাঁচা মুশকিল’।


    গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র সহ এগারোটা বড়ো নদীর বয়ে আনা পলিমাটিতে আশ্চর্য উর্বর সুন্দরবনের মাটি। অথচ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে ভর করে সুন্দরবনের মানুষের বেঁচে থাকার শুরু এই সেদিন। ষোড়শ শতকের গোড়া পর্যন্ত সুন্দরবনে অর্থনীতির একমাত্র ভিত্তি ছিল বহির্বাণিজ্য-- খাঁড়ি-নদী-উপসাগর-মহাসাগর পেরিয়ে সুন্দরবনের বণিকরা মরিসাস হয়ে ভেসে যেতেন ভেনিস পর্যন্ত। কিন্তু মুঘলদের নৌশক্তি বলে আদতে কিছু না থাকার খেসারত দিতে হল এই ধনী বণিকদের। মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুরা সুন্দরবনের খাঁড়িগুলোর মুখ আটকে দেদার লুঠপাট করে এমন সোনার বাণিজ্যের বারোটা বাজিয়ে দিল। সুন্দরবনের অনিশ্চিত জমিতে কৃষিকেন্দ্রিক বিকল্প অর্থনীতি গড়ে তোলার কথা তখনকার মানুষেরা ভাবেন নি, তাই বাণিজ্য বন্ধ হওয়া মাত্র তারা এই মাটি ছেড়ে চলে গেলেন। প্রায় দুশো বছর সম্পূর্ণ জনশূন্য রইলো সুন্দরবন। ১৭৭১ সালে একজন বৃটিশ কালেক্টর, নাম ক্লড রাসেল, সুন্দরবনকে আবার খাজনা-ওগরানো ভূখন্ড হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। সেই ভাবনার খেই ধরে ১৭৮১ সালে যশোরের ম্যাজিস্ট্রেট টিলম্যান হিঙ্কল সুন্দরবনের জমি প্লটে প্লটে ভাগ করে বাংলার জমিদারদের ইজারা দেন। কয়েক বছরের মধ্যেই এই জমিদাররা হাজার হাজার ভূমিহীন কৃষককে আজকের পূর্ব মেদিনীপুর থেকে নিয়ে এসে সুন্দরবনে বসান। জঙ্গল সাফ করে সুন্দরবনের দ্বীপগুলোয় কৃষিজীবি মানুষের বসত গড়ে ওঠে। হোসেন মিঞার ময়নাদ্বীপের মতো ছমছমে রহস্যঘেরা প্রায় অচিন সেই দ্বীপগুলোয় বাঘ-সাপ-কুমিরের সাথে লড়াই করে বাঁচতে শেখে মানুষ, কোটাল ও ঝড়ের কাছে পর্যুদস্ত হয়েও টিকে থাকতে শেখে। গাঙ-এর নোনা জল থেকে চাষের জমি বাঁচাতে দ্বীপগুলো ঘিরে উঁচু মাটির বাঁধ দেওয়া শুরু হয়। এই কাজের জন্য তখন বাংলা-বিহার সীমানা থেকে বহু সাঁওতাল পরিবার চালান হয়ে আসেন সুন্দরবনে। সুন্দরবনের জনসংখ্যার অধিকাংশই এখনও এই পূর্ব মেদিনীপুর ও সাঁওতাল পরগনা থেকে বয়ে আসা অভিবাসী- কোটাল ও ঝড়ের ক্রমবর্ধমান মাতনে টলতে থাকলেও যাদের এতদিন পরে ফিরে যাওয়ার কোনও ঠিকানা নেই।

    সাইক্লোন ইয়াস ধাক্কা মারার সাতদিন পরে মৈপিঠ কোস্টাল গ্রামের রাস্তায় একতাল কাদার ওপর সাঁওতাল বৃদ্ধা পুতুল মুদিকে আমি আধার কার্ড হাতে নিয়ে বসে থাকতে দেখেছি। কাউকে তেমন তালেবর মনে হওয়া মাত্র তিনি আধার কার্ডটা এগিয়ে ধরে সরকারি সাহয্যের জন্য একটা ‘কাগজ’ চাইছিলেন। একটু দূরেই কাতারে কাতারে সব-খোয়ানো মানুষকে রাস্তায় বসিয়ে ত্রাণের ভাত খাওয়াচ্ছিলেন একদল স্বেচ্ছাসেবী। সোনা-ফলানো মাটির মানুষকে একমুঠো ভাতের জন্য প্রকাশ্য রাস্তায় বসতে দেখলে ধক্ করে ওঠে বুক। বাঘডাঙা গ্রামে ৯০% মাটির বাড়ি জলোচ্ছ্বাসে গলে গেছে। তিনদিনের চেষ্টায় পঁচাত্তর বছরের শেখ ওসমান ও তার স্ত্রী তাদের গৃহস্থালির উপর ধ্বসে পড়া খড়ের চালটা সরাতে পেরেছেন, কাদার ভিতর থেকে কাত হয়ে বেরিয়ে আছে কারুকার্য করা পালঙ্কের পিঠ। সুন্দরবনে মানুষকে তার তিনদিন আগের অতীতকেও কেমন প্রত্নতাত্ত্বিকের মতো খুঁড়ে বের করে আনতে হয়। কি দ্রুত এখানে ইতিহাস হয়ে যেতে পারে গতকালের দিনযাপন।


    সুন্দরবনের প্রায় সব কৃষিজমিই অন্তত দোফসলা- ফলন বিস্ময়কর। মাছের জোগানে সুন্দরবন বাংলায় একনম্বর বহুযুগ ধরেই। অথচ সুন্দরবনের যে কোনও গ্রামে ঢুকলেই পথের পাঁচালির সময়কালের স্নিগ্ধতায় আড়াল করা অভাবের দগদগে আঁচড়গুলো পরিষ্কার চোখে পড়ে। ঝড় ও কোটালের হাতে নিয়মমাফিক মার খাওয়া ছাড়াও সুন্দরবনের অভিশাপ গত কয়েক দশকে এখানে আমূল বদলে যাওয়া জনবিন্যাসের প্যাটার্ন। দেশভাগের পর ভারতের হাতে রইলো অবিভক্ত সুন্দরবনের মাত্র ৪০ শতাংশ--৪২৬২ বর্গ কিলোমিটার। মনে রাখতে হবে এই হিসেবে বেশিটাই জল। অথচ পূর্ব পাকিস্তান (মানে আজকের বাংলাদেশ) থেকে এপার বাংলার সুন্দরবনে শরণার্থী এলেন দলে দলে। ১৯৫১ সালের সেনসাসে দেখা গেল ভারতীয় সুন্দরবনের জনসংখ্যা হয়েছে ১১ লক্ষ। পাঁচের দশকের শেষ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক উৎপাত বাড়তে থাকায় কাতারে কাতারে মানুষ ভারতীয় সুন্দরবনে বাঁচতে আসেন, কারণ পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণে জনগোষ্ঠীগুলোর মূল অংশটাই ছিলেন হিন্দু নমঃশূদ্র । এভাবে সুন্দরবনের এপারের দ্বীপগুলোর জনসংখ্যা বেড়েই চলে। আবার ১৯৮৪ সালে সুন্দরবনের ১৩৩০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল ব্যাঘ্রপ্রকল্পের জন্য সংরক্ষিত হয়-- ১০২ দ্বীপের ৪৮টা ছেড়ে দেওয়া হয় বাঘেদের। সেই সমস্ত দ্বীপের মানুষজনও তাড়া খেয়ে বাকি ৫৪টা দ্বীপে এসে ওঠেন, ফলে এই দ্বীপগুলোতে ঘটে যায় জনপ্লাবন। ২০১১ সালের সেনসাস অনু্যায়ী সুন্দরবনে ২০০০ বর্গ কিলোমিটারের কিছু বেশি ডাঙ্গাজমিতে বাস করছিলেন প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ। যেখানে বেঁচে থাকার একমাত্র শর্ত জমির উপর নির্ভরশীলতা, সেখানে এত কম জমিতে এত বেশি মানুষ ঠিক কোন জাদুবলে বেঁচে থাকছেন তা বোধহয় একমাত্র মাতলা-বুড়িগঙ্গা-রায়মঙ্গলই জানেন।
    বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুন্দরবনেও ভূমিসংস্কার করেন। ততদিনে মরিচঝাঁপি ঘটে গেছে, বণ্টন করার মতো জমি তেমন হাতে নেই অথচ জমিপ্রার্থী পরিবার অসংখ্য। ফলে সংস্কারের পর প্রতি পরিবারের ভাগে পড়লো আক্ষরিক অর্থেই টুকরো একফালি জমি- চিনদেশে উক্ত সংস্কারের পর কৃষকের ভাগে পড়া যে জমিকে বলা হত noodle-strip farmland। এই জমি থেকে একটি পরিবার কোনোক্রমে নিজেদের খাওয়ার জন্য বছরে যেটুকু ধান দরকার সেটুকু ফলিয়ে নিতে পারেন, উদ্বৃ্ত্ত ফসল বেচে বাড়িঘর পাকা করার মতো নগদ অর্থ উপার্জনের খোয়াব তারা দেখেন না। নিয়মটা কতদূর সত্যি তা বোঝা যায় যখন শুনি গোটা সুন্দরবনে চাষির বাড়তি ফসল বেচার জন্য একটাও ‘মান্ডি’ তৈরি হয় নি। প্রায় প্রত্যেক বাড়ির লাগোয়া যে পুকুর আছে সেখানে মিষ্টি জলের মাছেরা বাড়ে দ্রুত। এই যতটুকু না হলে নয় ঠিক ততটুকুই ভাত ও মাছের যোগান সুন্দরবনের নিজস্ব ব্যষ্টিক অর্থনীতি-- microeconomic mechanism। পরিবারের কারও চিকিৎসার প্রয়োজনে জমি বেচতে হয়েছে যাদের তাদের কথা অবশ্য স্বতন্ত্র। অন্যের জমিতে রোজ খাটা ভূমিহীন কৃষিশ্রমিককে নিয়োগ করার মতো বাবুয়ানি সুন্দরবন দেখাতে পারে না, জমির মাপের নিরিখে পরিবারের সদস্যসংখ্যা মাপলে দেখা যায় প্রতিটি পরিবারেই শ্রম উদ্বৃত্ত। তাই জমি নেই এমন শ্রমিকের কাজের খোঁজে সুন্দরবন ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। ফোর্সড মাইগ্রেসনের সেই আবহমানকালের সূত্র।

    অনেকদিন ধরে কোনোক্রমে ঘষটে চলা অর্থনীতির এই ভিত্তি গত এক দশকে সম্পূর্ণ টলে গেল। একের পর এক প্রলয়ংকর ঝড় বাঁধ ভেঙে (বা উপচে, ইয়াস যেমন ঘটিয়েছে মৌসুনি দ্বীপে) নোনা জলে ডুবিয়ে দিয়েছে সুন্দরবনের মাটি। একবার নোনা জলে ডুবলে সেই মাটি অন্তত তিনটি বছরের জন্য বন্ধ্যা হয়ে যায়। মিষ্টি জলের পুকুরে নোনা জল এলে সব মাছ তো মরেই, সেই পুকুর ছেঁচে আবার মিষ্টি জল ভরতে পেরিয়ে যায় দুটো বর্ষা। বছরে গড়ে দুবার যদি নোনা জলে ভাসে মাটি, তাহলে বলা যেতেই পারে সুন্দরবনের তাবৎ আবাদভূমি শ্মশানের পোড়ো জমির মতো রুখু হয়ে এল বলে। সেই হেনরি পিডিংটনের ভবিষ্যতবাণী ফলে যাবার পর থেকেই সুন্দরবনে শিল্প স্থাপনের সম্ভাবনা শূন্য হয়ে গেছে। বাঁধের মাটি অকাতরে কেটে নিয়ে এখানে ধোঁয়া ওগরায় কিছু বেআইনি ইটভাটা। ‘ভ্যানো’ নামের বিকট শব্দ করে চলা একরকম প্রায় উভচর ত্রিচক্রযান ছাড়া সুন্দরবনের অধিকাংশ দ্বীপেই কোনও গাড়ি চলে না। গ্রোথসেন্ট্রিক কার্বন ইকনমির নেশায় মজে আগলমুক্ত বাণিজ্যনীতি যখন প্রতিদিন বাড়িয়ে চলেছে পৃথিবীর উষ্ণতা, ফাঁপিয়ে তুলছে সমুদ্র, তখন কোথাও একটিও কার্বন পদচিহ্ন না এঁকে ডুবে যেতে বসেছেন সুন্দরবনের ৪৫ লক্ষ মানুষ। এরা বুঝতে পারছেন বাঁচতে হলে এখনই এই হননক্ষেত্র ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু, যাবেনটা কোথায়??


    ২০০৯ সালে সাইক্লোন আয়লা গোটা সুন্দরবন তছনছ করে দেওয়ার পর থেকেই এখানকার মানুষ শেষের ডাক শুনে চলেছেন। তখনই বোঝা গিয়েছিল জমির ওপর নির্ভর করার দিন আর নেই। ঐ ২০০৯ সাল থেকেই পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে জীবিকার সন্ধান শুরু করেন সুন্দরবনের মানুষ। গ্রাম-সমাজের গঠনও অতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে। নাটকীয় লকডাউন ঘোষিত হওয়ার মুহূর্তে সুন্দরবনের অন্তত ৭৫ শতাংশ পরিবার অন্য রাজ্যে (মূলত কেরলে) কাজে যাওয়া সদস্যর প্রতি মাসে পাঠানো টাকায় দিনযাপন করছিলেন। এই রেমিটেন্স-নির্ভর অর্থব্যবস্থা যখন মাত্র চার ঘন্টার নোটিসে আছড়ে ভাঙা হল, তখন সত্যি করেই গোটা সুন্দরবনের পিঠ ঠেকে গেল বাঁধের মাটিতে। আর এই ভয়ংকর অভাবের মধ্যেই প্রথমে এল আমফান, তারপর ইয়াস। আকালের দিনে প্রাণপাত করে যেটুকু ধান তোলা গিয়েছিল ঘরে, নোনাজলে ভিজে আধঘন্টার মধ্যে পচে গেল তাও। সুন্দরবনে মানুষের জীবন চিরকালই বেআব্রু, বেসিক, বেতাল। কিন্তু এমন চূড়ান্ত রকমের আশাহীন তা আগে ছিল না কখনও।

    শাস্ত্রে বলে বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু ভূমিকা থাকা উচিৎ। সাইক্লোন ইয়াস-এর একমাস পরেও দেখেছি সুন্দরবনের গ্রামে গ্রামে সরকারের চিহ্ন মূলত তার অনুপস্থিতিজনিত। ইয়াস-এর ক্ষয়ক্ষতি যাচাই করতে কলাইকুন্ডা এয়ারবেসে প্রধানমন্ত্রী ও মূখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেই বৈঠকের নাট্যরূপ (কুনাট্য বলাই ভালো) বোধহয় সকলেরই জানা আছে। গতবছর ৬২৫০ কোটি টাকার আমফান রিলিফ প্যাকেজ কাকে বা কাহাদের রিলিফ দিয়েছে সেই কেচ্ছাও বোধহয় সকলেই জানেন। ব্যাপার চাউর হয়ে যেতে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মুখটুখ বেঁকিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ বর্ষিত হয়েছিল। এমনকি টাকা ফেরত নেবার জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মও ছাপানো হয়েছিল বলে কথিত আছে। তবে কারা টাকা ফেরত দিলেন, বা আদৌ কেউ দিলেন কিনা, তা অবশ্য অজানাই থেকে গেল। সাইক্লোন ইয়াস-এর পর দুর্নীতি ঠেকাতে সরকার সোজাসুজি ‘দুয়ারে ত্রাণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণ পাঠানোর পরিকল্পনা করেন। উদ্যোগটা সাধু, কিন্তু প্রকল্প রূপ পাওয়ার আগের দেড়-দু মাস সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মানুষ বেঁচে থেকেছেন নাগরিক সমাজের বিলি করা খাবারে। বেশ কয়েকটি গ্রামে মানুষকে খাওয়ানোর জন্য পঞ্চায়েতকেও উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে দেখেছি। ৬ই জুলাই পর্যন্ত দেখছি
    দুয়েরে ত্রাণ প্রকল্পে মোট ৩৮১৭৭৪ জন ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন, যার মধ্যে ২ লক্ষের কিছু বেশি আবেদনপত্রই বাতিল হয়ে গেছে। ঐ দিন পর্যন্ত টাকা পেয়েছেন ৩০৩৯৫ আবেদনকারী, আর এ বাবদ সরকারের খরচ হয়েছে ২৩ কোটি টাকা। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলহানির জন্য (অর্থাৎ যাদের জমিতে আগামী তিন বছর বিশেষ কিছু ফলবে না) সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ২৫০০ টাকা। যার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বসে গেছে তার জন্য সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের টাকাটা ২৫০০০। এছাড়া প্রতিটি ঝড়ের পরেই সুন্দরবনে কংক্রিটের উঁচু নদীবাঁধ প্রয়োজন না প্রয়োজন আশু ম্যানগ্রোভ রোপন- এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হয়, ও তাদের মতামত প্রকাশিত হবার আগেই পরবর্তী ঝড়টি আছড়ে পড়ে। বোঝাই যায় যে বাদাবনে মানুষকে থিতু করার মন্ত্র সরকারের ঠিক জানা নেই। লর্ড ডালহৌসির সময় থেকে আজ পর্যন্ত কোনওদিনই ছিল না বোধহয়।

    ২৫শে মে সকাল সাড়ে আটটায় বুড়িগঙ্গার বাঁধ উপচে পাঁচ ফুট উঁচু জলস্তম্ভ পয়লাঘেরি গ্রামে ঢুকে এল যখন, ঠিক সেই সময়ে মর্জিনা বিবি আসন্ন ঝড়ের কথা ভেবে ঘরের চালটা মাটিতে গভীর করে গাঁথা কয়েকটা খুঁটির সাথে শক্ত করে বাঁধছিলেন। কিন্ত ঝড় এল না। প্লাবন এল। মর্জিনা বিবি সেই প্লাবনে যথাসর্বস্ব নিয়ে তার নিজের ঘরটা ঝুপ করে ধ্বসে পড়তে দেখলেন। যেন নোঙর উপড়ে দরিয়ায় ভেসে গেল বহু প্রজন্মের নৌকো। অনেকটা দূরে একটা পাকা বাড়ির ছাদের দিকে মর্জিনা বিবি সাঁতরাচ্ছেন যখন, বেশ খানিকক্ষন তার পাশেই সাঁতরেছিল একটা বাস্তুহারা গোখরো সাপ। তিনদিন পরে তিনটে খুঁটিকে ভেজা চট আর কম্বল দিয়ে ঘিরে তৈরি তার বানভাসি আস্তানায় বসে মর্জিনা বিবি আমায় জানিয়েছিলেন গোখরোর সাথে সাঁতরাতে তার ভয় করে নি এতটুকু--’আমার মতো ওরও তো সব গ্যাছে, কিস্যু নেই’।

    বারে বারে সব হারাতে হারাতে সুন্দরবনের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ যে কোনও দিন ৫০ লক্ষ বিষাক্ত গোখরো হয়ে আবার বাস্তুর খোঁজে বেরিয়ে পড়তেই পারে। বিষে নীল হয়ে যাওয়া শবদেহকে পুনর্জন্ম দেবে এমন বেহুলার খোঁজ আগামী পৃথিবী যদি না পায়?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ৩০ আগস্ট ২০২১ | ১৭১১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • স্বাতী রায় | 117.194.43.162 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০০:৪৭497432
  • প্লানড  রিলোকেশন ছাড়া আর কোন উপায় আছে কি? বছর বছর ধ্বংস আর লোকের দয়ার ত্রাণ দিয়ে কতদিন টানা যাবে? আর প্রেডিকশন তো ভবিষ্যতেও  আরও জলস্তর বৃদ্ধির কথাই বলছে। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:544c:3b35:72ad:c103 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০১:০৫497433
  • কী ভয়াবহ :-(
    রিলোকেশন কোথায় হতে পারে, তা নিয়ে কি সরকার ভাবছে কিছু? 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:544c:3b35:72ad:c103 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০১:০৭497434
  • 'গতবছর ৬২৫০ কোটি টাকার আমফান রিলিফ প্যাকেজ কাকে বা কাহাদের রিলিফ দিয়েছে সেই কেচ্ছাও বোধহয় সকলেই জানেন'
    - টাকা লুটে ​​​​​​​খেয়েছে ​​​​​​​কিছু ​​​​​​​লোক ​​​​​​​জানতাম, ​​​​​​​কিন্তু ​​​​​​​পরিমাণ ​​​​​​​টা ​​​​​​​জানতাম ​​​​​​​না।  ৬২৫০ ​​​​​​​কোটি ​​​​​​​একটা ​​​​​​​বিশাল সংখ্যা ​​​​​​​
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন