এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ভ্রমণ  শনিবারবেলা

  • রাজারানি সংবাদ

    সুপর্ণা দেব
    ধারাবাহিক | ভ্রমণ | ১২ জুন ২০২১ | ২৩৪১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • প্রথম ধাপ ।। যবনিকা উত্তোলন

    আলমুস্তাফা একটু ঝুঁকে হাঁটেন। তাঁর পেছনে অরফালিসের মন্দিরে গম্ভীর লোবানধোঁয়ার ঊর্ধ্বমুখী কুণ্ডলী। সামনে সমুদ্রের ওপরে নেমে আসছে আনতমুখী সন্ধ্যা। নীল ছাই গোলাপি আকাশ ঝুঁকে পড়ছে সমুদ্রের বুকে। নোনা হাওয়ায় উড়ছে আল মুস্তাফার চুল, তাঁর আলখাল্লার মধ্যে ঢেউ খেলছে জোলো বাতাস। আলমিত্রাকে জিগ্যেস করলেন তিনি, সামনে কিছু স্পষ্ট দেখতে পাও, আলমিত্রা? সমুদ্রের বুকে? আমার জাহাজ এলো কি? আলমিত্রা উত্তর দিল, কই কিছু তো দেখি না। শুধু ধোঁয়া ধোঁয়া আর ধোঁয়া ।

    - সামনে সমুদ্রে ধোঁয়া, পেছনে মন্দিরে ধোঁয়া। ধোঁয়ায় কী জড়িয়ে থাকে আলমিত্রা?
    - রহস্য জড়িয়ে থাকে। কুয়াশার মত। কুহেলি। জট পাকানো।
    - তবে রহস্যেই ফিরে যাই। আমার জাহাজ না আসা পর্যন্ত এক রহস্যগাথা বুনি তোমার সঙ্গে। বল, তবে কোথা থেকে শুরু করি সেই কথা?
    - আপনিই বলুন, কোথা থেকে শুরু করবেন। কুয়াশার ভেতরে কী নিশানায় চলবেন? কী ভাবে জট ছাড়াবেন? আমি তো শ্রোতা মাত্র!
    - শ্রোতার মনোযোগ ও কৌতূহল ছাড়া কথকের কোন অস্তিত্বই নেই। বসো, ওই পাথরটার ওপর। এবারে বল, দারুচিনির গন্ধ পাও?

    এক

    আরব মরু থেকে রাতের হাওয়া বয়ে নিয়ে আসছে দারুচিনির সুগন্ধ। এক বিশাল কাফিলা ঢুকছে শহরে ধীরে ধীরে। শেবা শহরে। তারা পথক্লান্ত। কাফিলার সর্দার তামারিন। বাণিজ্য সেরে দেশে ফিরে আসছে তারা। তাদের সঙ্গে কি শুধু লেনদেনের হিশেব, মুদ্রা আর পণ্য? না, আরো কিছু! আরো কিছু নিয়ে এসেছে সেই বণিকের দল আর তাদের নেতা তামারিন। নিয়ে এসেছে খবর, সংবাদ। সেকালে, খ্রিস্টপূর্ব দশম শতাব্দীতে সারথবহ বণিকের দল ছিল সংবাদ বহনের খুব উল্লেখযোগ্য মাধ্যম!



    রানির কক্ষ দীপালোকে স্নিগ্ধ ও দীপ্ত। সেই মন্দ্র সন্ধ্যা বিবশ হয়েছে ফ্রাঙ্কিনসেন্স রজনের সৌরভে। বণিক নেতা মাথা নিচু করে অভিবাদন করল রানিকে। অস্ফুট স্বরে বলে উঠল, কী এক রাজা দেখে এলাম রানি! আমাদের প্রত্যেকের মুখে মুখে এখন কেবল একটিই নাম, সলোমন সলোমন, সলোমন। রানির মুখে একটি বড় বিস্ময়চিহ্ন! কী এমন আছে সেই রাজার মধ্যে যাঁকে নিয়ে সদ্য দেশে ফেরা বণিকদের উত্তেজনার শেষ নেই! বণিকনেতা তামারিন, রানির নির্দেশ পেয়ে বলতে থাকে, রাজা কী ভীষণ প্রাজ্ঞ! কী বিপুল জ্ঞান তাঁর! তরবারি নয়, কথার ধারে দেশ শাসন করেন ইস্রায়েলের রাজা সলোমন! তাঁর একেকটা কথা, এক একেকটা বিচার আর নির্দেশ, যেন স্বয়ং ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর, রানি! তিনি কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই নরম মাটির ফলকে তা লিখে নেওয়া হয়। তারপর আগুনে পুড়িয়ে সেই পোড়ামাটির ফলকে গাঁথা হয়ে থাকে তাঁর কথা। তিনি চলে যাবেন একদিন কিন্তু তাঁর কথা রয়ে যাবে। এতো জ্ঞান! এতো মনীষা! রানি অসম্ভব কৌতূহলী হয়ে পড়েন । জ্ঞান নয় রানি, জ্ঞানসমুদ্র! সমুদ্র? রানি মনে মনে ভাবেন, তবে সেই জ্ঞান সমুদ্রের কূলে আমার তরী ভিড়িয়ে দিয়ে আসি। একবার চোখে দেখে আসি সেই বিখ্যাত মানুষটিকে যার নাম লোকের মুখে মুখে ফেরে। আমার ইচ্ছে ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠছে এমন এক রাজাকে একটিবার দেখার জন্য। এই সুদূর শেবা থেকে ইস্রায়েল, এতোখানি সুদীর্ঘ কঠিন পথ শুধু একটিবারের দেখাতেই শেষ হয়ে যাবে? আমারও জ্ঞানস্পৃহা কিছু কম নয়। প্রজ্ঞার দ্যুতি আমাকে আলোকিত করুক, এতো আমারই হৃদয়ের প্রার্থনা! তবে শুধুই কি দেখবো তাঁকে? শেবার রানি আমি! পরখ করব না সেই জ্ঞান! রাজার জন্য নিয়ে যাব আমি হেঁয়ালি। নিয়ে যাব ধাঁধা। সেই হেঁয়ালির জট ছাড়ানোর অছিলায় যাচাই করে নেব তাঁর প্রজ্ঞার দ্যুতি! আমি ইস্রায়েল যেতে চাই !

    - তামারিন, রানির এই দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে দিয়ে জিগ্যেস করল, কী আদেশ, রানি?
    - রানি বললেন, এখন আপনারা বিশ্রাম করুন। নিজেদের বাড়ি ফিরে যান। আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলব খুব তাড়াতাড়ি। রানি এই বলে উঠে দাঁড়ালেন।
    - শুধুই কি জ্ঞান পিপাসা? এই দীর্ঘ পথযাত্রার আর কি অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল আলমিত্রা? তোমার কী মনে হয়?
    - আপনিই বলুন আলমুস্তাফা। পৃথিবী তোমাকে তার সম্পদ দেবার জন্য মুখিয়ে আছে। কিন্তু তোমাকেও জানতে হবে কীভাবে দুহাত ভরে সেই ফল তুমি নিতে পারো?
    - এ তো রীতিমত হেঁয়ালি বলছেন আপনি!
    - শেবার রানির হেঁয়ালি! শুনে যাও। শুনে যাও, ধরতে পারবে কুয়াশার ভেতরে কেমন করে পথ চলছি আমি!

    দুই

    প্রিয়তম আমার, আমি প্রিয়তমের। আমি নিদ্রামগ্ন ছিলাম কিন্তু হৃদয় জেগেছিল একা। তুমি এলে আমার কাছে। আমি তোমাতে আত্মহারা! আহ, প্রেম! কী গভীর আকর্ষণ এই প্রেমের! সলোমনের গানে প্রেম আর প্রেম। প্রেমের মাধুরী, প্রেমের আকর্ষণ মন আত্মা এবং শরীর জুড়ে! কত সঙ্গিনী আছে তোমার প্রাসাদে? এক হাজার! সাতশো বিভিন্ন রাজবংশের, দেশি বিদেশি। বাকি তিনশো উপপত্নী জেরুজালেমের এখান ওখান থেকে! তবে রাজা, আপনার গুণের শেষ নেই। আপনি আর আপনার মা বাথশেবা যথেষ্ট ঘাম ঝরিয়েছেন রাজা হবার জন্য। কারণ আপনি রাজা ডেভিডের বড় ছেলে কখনওই ছিলেন না। বস্তুত এক কামনার উদ্দীপন আপনাকে জন্ম দিয়েছে, আপনার মায়ের প্রকৃত স্বামী সেনাপতি উরিয়াহ তখন মারা যাচ্ছিলেন, রাজা ডেভিডের কূট চালে, যুদ্ধভূমিতে। আপনি গুণনিধি! ওই দেখুন সুউচ্চ মন্দিরচূড়া! জেরুজালেমে ঢোকার আগে থেকেই সে আপনার বিজয়গাথা গাইতে থাকে।

    — না, থামো, আরেকটু বলতে চাই আমি। আমি সলোমন। ডেভিডপুত্র সলোমন। ইস্রায়েলের ইহুদি রাজা সলোমন। মোরিয়া পাহাড়ের ওপরে বানিয়েছি আমাদের দেবতার প্রভু জিহোভার মন্দির। আমার প্রাসাদের পাশেই। পবিত্র জেরুজালেমের মজবুত প্রাচীর! দেখেছ, কত সুরক্ষিত নগর আমার!

    সেদিন সবাইকে আমি এক জায়গায় জড়ো করলাম, আকাসিয়া কাঠে বানানো আর্ক অফ কভেনাণ্ট, মোজেসের বাণী খোদিত সেই পবিত্র ফলক যার মধ্যে রাখা আছে। পুরোহিতরা বয়ে নিয়ে চলল দেবতার মন্দিরের দিকে সেই আর্ক অফ কভেনান্ট। ওহ, কী উত্তেজনাময় সেই মুহূর্ত! সাত বছর লেগে গেল এই মন্দির বানাতে। ফিনিশিয় কারিগররা কী দক্ষতায় প্রতিটি পাথর কেটেছে, দেবদারু আর সাইপ্রাসে গাছের কাঠে কুঁদে কুঁদে বানিয়েছে হাতির দাঁত, রুপো আর সোনা দিয়ে অপরূপ সব নকশা।

    টায়ার সাগরের বন্দর থেকে বোঝাই হয়ে এসেছিল সব সরঞ্জাম। আমি লোহিত সাগরে ইলাথ বন্দর বানিয়েছি। ইহুদি বাণিজ্যের পালে হাওয়া লাগিয়ে দিয়েছি। ফিনিশের নাবিকেরা খুব পারদর্শী। খুব। নৌবহর বাণিজ্যপোত ভাসিয়ে দিলাম লোহিত সাগরের জলে। বাণিজ্য এবং যে কোনো অর্থকরী কাজে ইহুদিদের জুড়ি মেলা ভার। আফ্রিকা এশিয়ার দেশে দেশে আমাদের বাণিজ্যের মূলধনে আমার বাবার ডেভিডের অসমাপ্ত কাজ জিহোভার মন্দির শেষ করলাম আমি, সলোমন। আমার রাজ্য বেড়েছে। ধন বেড়েছে। বেড়েছে আমার হারেমের আয়তন। আর তার সঙ্গে বেড়েছে আমার জ্ঞান। বেড়েছে জেরুজালেমে প্রাচ্যের সম্পদ। কত রকমের বিচিত্র সম্ভার!

    - রাজা সলোমন, আপনি চড়া হারে রাজস্ব আদায় করতেন, আমরা জানি। আচ্ছা লোহিত সাগরে এই বাণিজ্যপথ সেই সময়ের অন্যান্য বাণিজ্যকে মুশকিলে ফেলেছিল কি?
    - হ্যাঁ, হতেই পারে। দূর দূরান্তে ক্যারাভান নিয়ে যেসব দেশ বাণিজ্য করে তাদের সামনে এলো এক প্রতিযোগিতা! আসতেই পারে। অধিকাংশ বাণিজ্যপথ আমারই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল তখন!
    - কিন্তু দেখুন রাজা! ইতিহাস আপনাকে মনে রেখেছে আপনার জ্ঞানের জন্য! আপনার বিচারবুদ্ধি, বিবেচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য!
    - ও তাই! হয়তো হবে! আমি স্বপ্নে দেখেছি ঈশ্বরকে। তাঁর কাছে প্রার্থনা করেছি প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা। বলেছি ভালো মন্দর তফাত যেন করতে পারি, আমার প্রজাদের সুশাসন যেন দিতে পারি। প্রভু দয়া করে বললেন, তা ছাড়াও তোমাকে দেব দীর্ঘ জীবন, সম্পদ ও সম্মান!
    - আপনি পশু পাখি গাছপালা এমনকি অশরীরী জিনদের ভাষাও নাকি বুঝতেন? সত্যি?
    - হ্যাঁ, বিলক্ষণ বুঝতাম। আমরা তো প্রকৃতিরই অংশ। নোয়াহ প্লাবন থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য সাগরে ভেসে পড়ার আগে সব প্রজাতির প্রাণীর একজোড়া নারী পুরুষ নিয়ে জলে নেমেছিলেন। আমাদের মধ্যে তো সেই অদৃশ্য যোগ রয়ে গেছে! প্রখর সংবেদনে ধরা দেয় সেই সব তরঙ্গ! সেদিনের ঘটনাটাই বা ভুলি কী করে?
    - কী হয়েছিল সেদিন? রাজা সলোমন?
    - একদিন আমার ঝুঁটিওয়ালা পাখিটা কোথায় উধাও হয়ে গেল। সব পাখিগুলো ছিল শুধু সে ছিল না। আমি সবার সঙ্গেই কথা বলতাম। কোথায় গেল আমার ঝুঁটি? দাঁড়াও, আসুক সে একবার! এমন সময় ঝুঁটি এলো, বলল, সে অনেক অনেক দূরে উড়ে গেছিল। শেবার দেশে গিয়েছিল সেখানে একজন নারী দেশ শাসন করে। তার বিয়ে হয়নি। কী বিশাল তার সিংহাসন! কী প্রাচুর্য সে দেশে! সে দেশে নাকি সোনা রুপো পথে এলোমেলো পড়ে থাকে। কিছুরই অভাব নেই! তারা সূর্য দেবতাকে পুজো করে রাজা, জিহোবাকে নয়। আমি ঝুঁটি পাখিকে বললাম, যা যা দাঁড়ে গিয়ে বস। দানাপানি খা। তারপর সে বিশ্রাম নেবার পরে তার পায়ে বেঁধে দিলাম একটি চিঠি। সে দেশের রানিকে আমার দেশে নিমন্ত্রণ জানালাম। রানি এলো না। পাঠিয়ে দিল তার দূত আর উপঢৌকন। আমি বললাম হবে না। তাকেই আসতে হবে। ঝুঁটি পাখি বলেছিল রানির জমকালো সিংহাসনের কথা! যে যত বড় রাজা, তার তত জাঁকালো সিংহাসন। ওটা আমার চাই। কে এনে দেবে আমাকে, এক রাতের মধ্যে? আমার অনুগত অশরীরী জিন উড়িয়ে নিয়ে এলো সেই সিংহাসন। কী বুঝলে আলমিত্রা?
    - কিছুই না। হেঁয়ালির মত লাগছে আলমুস্তাফা। একটি বিশুদ্ধ হেঁয়ালি!
    - যা রহস্যময় তা শুধু কুয়াশার চাদরে মোড়া থাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী।
    - মানে?
    - এই যে ভূমি ইস্রায়েল, এই যে প্রাচীন জেরুজালেম, ইহুদি মুসলিম খ্রিস্টান তিন ধর্মের তিন স্রোতের জলে ভেসে গেছে বারবার। এ দেশের যা কিছু গাথা আর আখ্যান তিন ধর্মের তিন আধারে ধরা আছে। ইচ্ছেমত অলঙ্কার ও সুগন্ধ তারাই যোগ করে এসেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। আলাদা করতে পারবে না তুমি। তাই আমার এই আখ্যানেও এমন ধোঁয়াশাই তুমি পাবে , আলমিত্রা!
    - জট আপনিই ছেড়ে যাবে চলতে চলতে, আলমুস্তাফা। আপনি বলে চলুন।



    সমুদ্রের বুকে নেমেছে অন্ধকার। ভূমধ্যসাগরের ঢেউ এর ফসফরাস ফেনা। আকাশের নক্ষত্রমালা। সবাই একজোটে বলে ওঠে, বল আলমুস্তাফা বল।

    তিন

    শেবার রানি। তিনি ইথিওপিয়ার না ইয়েমেনের? আফ্রিকার না এশিয়ার? দুই দেশের মাঝখানে এক ফালি জল বয়ে যায়। প্রাচীন প্রস্তর ফলক বলে সে দক্ষিণের রানি। ইয়েমেন, ইয়েমেন।কেন? সে কথা পরে বলব। শেবার রানির দেশে দুধের মত উথলে ওঠে সম্ভার। এ দেশে কমলালেবু, অ্যাপ্রিকট লেবু থরে থরে সাজানো থাকে। কফির সুঘ্রাণে মিশে যায় মশলার জোরালো গন্ধ। মাঢ়, বালসাম, ফ্রাঙ্কইন্সেন্স, কাসিয়া, দারুচিনি। এদেশের বাতাস সুগন্ধবহ। লোহিতসাগরের নাবিকেরা তীরে আসার আগেই সেই সুরভিতে মাতাল হয়ে যেত।

    এদিকে শেবার রানির মন উথাল পাথাল। সে আগ্রহী। সে ভয়ানক কৌতূহলী। সে শান্তি পায় না। সে জানতে চায় সেই রাজাকে। প্রজ্ঞা তো হৃদয়ের অলঙ্কার! এও তো একরকমের যুদ্ধ যাত্রা। মননের যুদ্ধ। মেধার যুদ্ধ। চাতুর্যের কৌশলী তির। জ্ঞানের শাণিত তরবারি। মগজাস্ত্র! রানি ভাবে, এই যাত্রা কি খুব সহজ? মোটেই নয়। ইতিহাসে এমন যুদ্ধযাত্রার হদিশ কি পেয়েছ কখনো আলমিত্রা? পনেরশ মাইলের এক দীর্ঘ মরুপথ। সে পথ এঁকে বেঁকে গেছে আরব মরুভূমির গভীর প্রদেশ দিয়ে, নোনা সাগরের তীর ঘেঁষে মোআব, জর্ডন, কানানের ফসলের খেত আর আঙুর বাগানের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে গেছে জেরুজালেমের পাহাড়ে। দুইমাসেরও বেশি সময় চাই।

    বণিকনেতা তামারিন দিন কয়েক পরে হাজির হল রানির দরবারে। রানি বলল, আমি রওনা হব। কোথায় যাবেন রানি? জেরুজালেম।

    সেজে ওঠ মরুজাহাজের দল। রানি বেরুবেন দীর্ঘ পথ ভ্রমণে। ওঠ, সেজে ওঠ। প্রস্তুত হও। সময় হয়ে এলো।



    সূর্যমন্দিরে পুজোর আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। প্রখর খরতাপ। ঘুলঘুলির মত গবাক্ষ দিয়ে রানি বিলকিস, শেবার রানি বিলকিস মাথা বাড়িয়ে চোখ কুঁচকে সামনের দিকে ঝুঁকে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছে। দূরে বালির ঘূর্ণি। তার প্রিয় দেশ, তার স্বদেশ। তার রাজ্য। তার প্রজা। এদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হবে তাকে কতদিন! কিন্তু না গিয়েও তার শান্তি নেই। নিচে নেমে মন্দিরের দিকে এগিয়ে চলল রানি। রাজসেবক তার মাথায় ধরল একটা মস্ত খেজুর পাতা।




    আলমুস্তাফা এবং আলমিত্রা চরিত্রদুটি খলিল জিব্রানের "দ্য প্রোফেট" থেকে নেওয়া ।
    ছবি - ইন্টারনেট

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১২ জুন ২০২১ | ২৩৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১২ জুন ২০২১ ১৮:৫৩494885
  • অপুর্ব। 


    আর একটা নতুন সিরিজ। দারুন। 

  • kk | 97.91.195.43 | ১২ জুন ২০২১ ২১:৪১494887
  • বাঃ, খুব ভালো লাগছে।

  • ঐত্রেয়ী সরকার | 2401:4900:110c:f3f3:2592:9de3:5ea:3fcf | ১৩ জুন ২০২১ ০৯:৩৬494899
  • অসামান্য লেখা

  • সুনেত্রা সাধু | 2409:4060:2e98:33f1:9cfd:9b34:6867:6652 | ১৩ জুন ২০২১ ১০:১০494900
  • খুব ভাল লাগছে পড়তে, এগিয়ে চলুক।

  • Debanjan Banerjee | ১৪ জুন ২০২১ ১৯:৩৭494942
  • জাদুকরী লেখা l প্রতিটি কথায় জাদু আছে l এগিয়ে যান লেখক l

  • moulik majumder | ৩০ জুন ২০২১ ২৩:৪০495493
  • পড়লাম

  • Ranjan Roy | ০৭ আগস্ট ২০২১ ১৯:৪৬496534
  • এটা চটি হবে না?

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন