এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  স্বাস্থ্য

  • ভ্যাকসিনের নীতি ও রাজনীতি : একটি বক্তৃতা

    ডঃ অচিন চক্রবর্তী
    আলোচনা | স্বাস্থ্য | ০৪ জুন ২০২১ | ২২৪৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • সোসাইটি ফর রিসার্চ অল্টারনেটিভ এ ১৩ই মে তারিখে প্রদত্ত বক্তৃতা

    রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে কুড়ি হাজার অতিক্রম করেছে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই রোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার এক ও একমাত্র উপায় রাজ্য তথা দেশব্যাপী সফল টিকাকরণ। কিন্তু, ইতিমধ্যে করোনার প্রতিষেধকের যোগানে ব্যাপক ঘাটতি নিয়ে সরব হয়েছে দেশের একাধিক রাজ্য এবং তা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যগুলির এইপ্রকার রাজনৈতিক তর্জা শুরু হয়েছে। কেন্দ্র সরকারের টিকা বণ্টন নীতি বৈষম্যমূলক ও রাজনৈতিক পক্ষপাত-দুষ্ট বলে অভিযোগ এসেছে। এই প্রসঙ্গে আমাদের আজকের সন্ধ্যার বিষয় ভ্যাকসিন নীতি ও রাজনীতি। আর এই বিষয়ে আজ তাঁর বক্তব্য রাখবেন প্রফেসর অচিন চক্রবর্তী।

    অচিন চক্রবর্তী:
    আজকে যে বিষয়টি নিয়ে বলবো ঠিক হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আমি সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় একটা লেখা লিখেছি। সেখানে কয়েকটা দিক আমি উল্লেখ করতে চেয়েছিলাম। কাগজের লেখার পরিসরে সবকথা আলোচনা করা যায় না, আরো কিছু কথা থেকে যায়। আমাদের মনে অনেক প্রশ্নও থাকতে পারে,আমরা যারা একত্রিত হয়েছি আজকে, অনেকের হয়ত অনেক বক্তব্য থাকতে পারে এ বিষয়ে - সেইজন্যই আজকের আলোচনা। এখানে যে শুধু আমি আমার বক্তব্য রাখবো তা নয়, আমি শুনতেও চাই তাঁদের থেকে যাঁরা অংশগ্রহণ করছেন। তাহলে আলোচনাটা আরেকটু অর্থবহ হয়। প্রথমে শুরু করি যেটা আমি বলতে চেয়েছিলাম সেই লেখাতে -

    এই টিকাকরণ নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত কতকগুলো নীতির পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং সেগুলো ঘিরে প্রচুর আলোচনা-হৈচৈ হচ্ছে। সরকারও সমালোচিত হচ্ছে তাদের নীতিহীনতা বা ভ্রান্ত নীতির কারণে। এর মধ্যে অনেকে স্বভাবতই রাজনৈতিক সুবিধাবাদও দেখছেন। এইসব মিলিয়ে ব্যাপারটা খুবই ঘোলাটে। এই বিভ্রান্তির মধ্যে ভাবার চেষ্টা করা যাক, ঠিক কোন কোন যুক্তিগুলো প্রাসঙ্গিক হতে পারে। যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে--- আচ্ছা, ভারতবর্ষের মত একটা দেশ যেখানে বর্তমানে প্রায় ১৩৮ কোটি মানুষ, তাদের সকলের টিকার জন্য কী ধরনের নীতি হওয়া উচিত বা কী ধরনের নীতি বাস্তবে সম্ভব হতে পারে? এটা কোনো একজন বিশেষজ্ঞের ব্যাপার নয়, নানা যুক্তি ও তথ্য উল্টেপাল্টে দেখতে হবে। এ বিষয়ে প্রচুর মানুষ লেখালেখিও করছেন বিভিন্ন জায়গাতে। শুধু ভারতবর্ষে নয়, সারা পৃথিবী জু়ড়েই এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এখানে মূল যে বিষয়গুলি উঠে আসছে তা হল, টিকাকরণের সর্বজনীনতা, যার দুটো দিক আছে। একটা হল, তার যথেষ্ট জোগান থাকতে হবে, এবং এই জোগানের সঙ্গে এটাও নিশ্চিত হওয়া যে সর্ব স্তরের মানুষ টিকাটি নিতে চাইছেন। এই দুইয়ে মিলিয়েই টিকার সর্বজনীনতা সম্ভব।

    ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে কী হল? প্রথমেই আমরা দেখলাম, জানুয়ারি মাস নাগাদ প্রধানমন্ত্রী বললেন যে, আমরা টিকাকরণ রূপায়ণের দিকে চলেছি, এবং আশা করি সবাইকে টিকা দিতে পারব। বলা হল, ভারতবর্ষ যেহেতু ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানিতে খুবই অগ্রসর হয়েছে, এটা আমাদের পক্ষে কোনো সমস্যার নয়। গ্লোবাল ফার্মাসিউটিকাল হাব হিসেবে ভারতের নামডাক হয়েছে, অতএব ভ্যাক্সিনের জোগানে সমস্যা হবে না। এই ভাবনার মধ্যে অনেক সরলীকরণ থেকে যাচ্ছে। জানুয়ারি মাসে যখন এমন কথা বলা হচ্ছে, সেই সময়ে কোন অংকের ভিত্তিতে যে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পরামর্শদাতারা নিশ্চিত হলেন যে এত দ্রুত টিকাকরণ করা যেতে পারে তা একেবারেই পরিষ্কার নয়। অংকটা খুব কিছু জটিলও ছিল না। সম্ভবত আত্মনির্ভরতায় আত্মহারা হয়ে ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদও এমার্জেন্সি অ্যাপ্রুভ্যালের জন্যে ফাইজার যখন আবেদন করল, ভারত সরকার তা ফিরিয়ে দিল।

    এই যে দ্রুত অল্পসময়ের মধ্যে চিত্রটা পুরো বদলে গেছে, এটা অর্থনীতির জায়গা থেকে বুঝতে পারলে ভালো হয়। এর অর্থনীতি কী, কীরকম হওয়া উচিত টিকার বন্টনব্যবস্থা ইত্যাদি, ইত্যাদি...। প্রথমত, টিকার উৎপাদনের গল্পটা আপনারা অনেকেই মোটামুটি জানেন। প্রথমে গবেষকরা এটা নিয়ে গবেষণা করেন, টিকা প্রস্তুত হয়, তার ট্রায়াল চলে। ট্রায়ালের তিনটে ফেজ আছে, সেটা সম্পূর্ণ হলে তারপর সেটা গ্রহণযোগ্য হয়। কিন্তু, এখানে একটা প্রশ্ন হচ্ছে, টিকা আবিষ্কার ও তার গ্রহণযোগ্যতায় আসতে গেলে একটা বড় বিনিয়োগ দরকার হয়। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনেকায় যে বিনিয়োগটা হয়েছিল, সেটি একটিমাত্র কোম্পানির বিনিয়োগ ছিল না, তার ভিতর অনেকেই ছিল। এই বিনিয়োগের অনেকটা ছিল যেটাকে বলা হয় অ্যাডভান্সড কমিটমেন্ট টু পারচেজ। এটা টিকার অর্থনীতির মধ্যেই পড়ে। অর্থাৎ, একটা টিকার যখন ডেভেলপমেন্ট করা হচ্ছে, তখন উৎপাদকরা চান ক্রেতাদের থেকে আগাম প্রতিশ্রুতি। কতটা এই প্রতিশ্রুতি আসছে তার ওপর নির্ভর করে কতটা উৎপাদন হবে। উন্নত দেশগুলো অতিমারীর গোড়ার দিকেই এই অ্যাডভান্সড কমিটমেন্টের ওপর নির্ভর করে টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়েছে। ভারত সরকার কিন্তু তখনো ঘুম ভেঙে জেগে ওঠেনি। এই গোটা সময়ে ভারত সরকারের খুব একটা ভূমিকা দেখা যায় নি। কিন্তু ভারতের একটি কোম্পানি, সিরাম ইন্সটিটিউট, যারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ভ্যাক্সিনের নির্মাতা হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিত, তারা আগে থেকেই একটা কন্ট্রাক্টে চলে গেল অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনেকারের সঙ্গে। অ্যাস্ট্রোজেনেকা লাইসেন্স দিল, ভারতবর্ষে ভ্যাক্সিন তৈরি করতে পারে সিরাম ইন্সটিটিউট। এটা ভুলে গেলে চলবে না, এই চুক্তির কিন্তু কিছু শর্ত ছিল। বিশ্বজনীন প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে WHO কয়েকটা উদ্যোগ নিচ্ছিল এপ্রিল মাস থেকে, যেমন কোভ্যাক্স। কোভ্যাক্স হল নলেজ শেয়ারিং থেকে ভ্যাক্সিন শেয়ারিং পর্যন্ত নানা উদ্যোগের মাধ্যমে সারাবিশ্বের মানুষের মধ্যে সুবিধাগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রকল্প । সেই উদ্যোগের অংশ হিসাবেই কিছু দেশ বা সংগঠন, যেমন গেটস ফাউন্ডেশন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা উন্নয়নশীল বিশ্বে টিকা পৌঁছনোর লক্ষ্যে অনুদান দেবে, এবং এ বাবদে সিরাম ইন্সটিটিউটও কিছু পেয়েছিল। এটার শর্ত হিসাবে ছিল যে সিরাম যতটা উৎপাদন করতে পারবে তার সবটা সে ভারতকে দিতে পারবে না, তাকে বেশ কিছুটা ভারতের বাইরেও পাঠাতে হবে। এরকম ভাগাভাগি কোভ্যাক্সের উদ্দেশ্যের মধ্যেই ছিল, যদিও সবাই যে একে খুব মর্যাদা দিয়েছে তা নয়,। আমেরিকা তো নিজের ভাঁড়ারে উদ্বৃত্ত টিকা আগলে বসে থাকল। কিন্তু, সিরামকে যেহেতু লাইসেন্সটা পেতে হচ্ছে তাই তাকে এই কমিটমেন্টটা করতেই হচ্ছে। সেইজন্য ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই সময়টা আমরা দেখলাম সিরাম বেশ কিছু ডোজ এক্সপোর্ট করলো এবং এই এক্সপোর্ট করার খবরটা যখনই আমাদের কাছে এল, তখন কিন্তু হৈচৈ ঘটে গেল যে দেশের মানুষ যেখানে ভ্যাক্সিন পাচ্ছে না সেখানে সিরাম কীভাবে রপ্তানি করতে পারে! এটা কী করে সম্ভব! যেই হৈচৈ উঠলো, রপ্তানিটা বন্ধ করে দিতে হল। এক্ষেত্রে সিরাম শর্তে খেলাপ করলো। যে শর্তের ফলে এই ভ্যাক্সিনগুলো বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা ছিল, সেটা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হল । এরকম একের পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যে ঘটনাগুলো আগেভাগেই কিছুটা আন্দাজ করে ফেলা অসম্ভব নয়। কেন নয়? যখন বিভিন্ন দেশ বুঝতে পারছে ভ্যাক্সিনের যা যোগান হবে সেখানে আমার ভাগ কতটা হবে সেটা আমাকে বুঝে নিতে হবে। যদিও WHO এর ভাবনাটা ছিল অন্যরকম। সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিতে হবে এরকম একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু কোনো দেশ সেটাতে সেইভাবে কমিটমেন্ট দেখাতে পারে নি, বিশেষত উন্নত দেশগুলো। সেখানে ভ্যাক্সিন ন্যাশনালিজম ভীষণ ভাবে এসে পড়ল।

    আমেরিকার মত দেশ এই ভ্যাক্সিন ন্যাশনালিজমের প্রভাবে তাদের প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি ভ্যাক্সিন জমা করে রাখতে শুরু করে। এই ঘটনাগুলো যখন ঘটছে, তখনই ভারতের মত একটা দেশ সবমিলিয়ে সাড়ে ৬ কোটি ভ্যাক্সিন এক্সপোর্ট করেছে, যার কিছুটা এক্সপোর্ট করেছে সিরাম, বাকিটা ভারত সরকার অনুদান দিয়েছে। এটা কিছুটা হলেও সরকারের দেখনদারির ব্যাপারও ছিল, যাতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে, কিছুটা চিনকেও, দেখানো হল যে, দ্যাখো আমরা এইসমস্ত দেশকে ভ্যাক্সিন দিয়েছি। এই যে দেখানোর ব্যাপারটা হল, এই খুশির আবহটা বেশিক্ষণ চলল না যখন দেশের মানুষ হৈচৈ করতে শুরু করলো এই বলে যে, আমাদের ভ্যাক্সিন অন্যদেশে পাঠানো হচ্ছে কেন! বস্তুত এখানে ভারত সরকারেরও তেমন গর্বিত বোধ করার কিছু নেই, কারণ যে ভ্যাক্সিনটা বিদেশে পাঠাতে হল সেটা সিরাম তার কমিটমেন্ট অনুসারেই পাঠিয়েছিল। তার কমিটমেন্ট ছিল যে ৬ কোটি থেকে সাড়ে ৬ কোটি ডোজ সে বিদেশে এক্সপোর্ট করবে। তাকে বলা ছিল পঞ্চাশ শতাংশের কাছাকাছি সে ভারতে দিতে পারে, বাকিটা তাকে ভারতের বাইরে পাঠাতে হবে। এইসব মিলিয়ে, উৎপাদনটা কার হাতে থাকবে এবং বণ্টনটা কীভাবে হবে এটা নিয়ে জটিলতা কমার বদলে বেড়েই চলেছে। ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে এই জটিলতা আরো বেশি কারণ এটা আর পাঁচটা জিনিসের মত নয়। আর পাঁচটা জিনিস যখন উৎপাদন ও বন্টনের কথা ভাবি সেটা মোটামুটিভাবে একধরণের বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় অথবা সামলেসুমলে নিয়ন্ত্রণ করা হয় অথবা রাষ্ট্র অনেকটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। তাহলে টিকার ক্ষেত্রে বন্টনব্যবস্থাটা কীরকম হতে পারে? আমি যদি অর্থনীতির যুক্তি অনুসারে বলি তাহলে বলতেই হবে, এক্ষেত্রে যে রোগ প্রতিরোধের জন্য আমরা টিকার ব্যবস্থা করছি বা নিচ্ছি সেই রোগটা কিন্তু সংক্রমক। ধরে নিচ্ছি এই রোগের ক্ষেত্রে টিকা নেওয়া এবং না নেওয়ার মধ্যে একটা পার্থক্য থাকে (এটা বিজ্ঞান বলতে পারে কতটা পার্থক্য, আমি বিজ্ঞানে ঢুকছি না)। টিকাবিরোধী মানুষ অনেকেই আছেন, আমাদের দেশেও বেশকিছু টিকাবিরোধী মানুষ আছেন, বিদেশে তো আছেনই। মনে রাখতে হবে আমেরিকাতে টিকার যোগান প্রচুর আছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। হতে পারে অনেকে সেটাতে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। সম্প্রতি খবরে এসেছে, ইজরায়েলে সবচেয়ে বেশি টিকাকরণ হয়েছে সেটা কিন্তু ৫৫ শতাংশ, তারবেশি হতে গেলে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে, কারণ অনেকে নিতে চাইবেন না। আমাদের দেশে ১৫ কোটি মত মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। যদি ৪৫ বছরের উর্দ্ধে এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা হিসাব করে দেখি সেটা প্রায় ৪০ কোটি। অর্থাৎ ৪০ কোটি মানুষের জন্য ৮০ কোটি ডোজ আমাদের লাগবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কিন্তু আমাদের যেরকম উৎপাদনব্যবস্থা আছে, রাতারাতি ৮০ কোটি ডোজের যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। ছ মাসের মধ্যেও সম্ভব কি না সন্দেহ আছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে জোগানের একটা বিপুল ঘাটতি আছে। এই ঘাটতি উৎপাদন দিয়ে পূরণ করা যায় কিনা অর্থাৎ কতটা সময়ে কতটা ভ্যাক্সিন উৎপাদন করা যেতে পারে এই নিয়ে কি কোনো হিসেব নেই? আমি ভারতবর্ষের ব্যাপারটা ছেড়ে দিচ্ছি কারণ সিরামের লাইসেন্সের শর্তাবলী আছে, তার উৎপাদন ক্ষমতার সীমা আছে - সে কতটা উৎপাদন করতে পারে কি পারে না। সিরাম ইন্সটিউট ম্যাক্সিমাম যেটা করতে পারে বলেছে সেটা হচ্ছে মাসে প্রায় দশ কোটি ডোজ, যার মধ্যে আবার চার কোটি কমিটমেন্ট অনুসারে বাইরে পাঠাতে হবে। এটা হচ্ছে তাদের ক্যাপাসিটি, যা বাড়াতে গেলে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। এছাড়া কি তাদের আর কোনো অসুবিধা আছে? আর একটা অসুবিধা বিরাটরকম ভাবে আছে যা হচ্ছে অর্থনীতি বা রাজনীতির আরেকটা দিক। দু-তিনমাসের মধ্যে প্রচুর উৎপাদন বাড়িয়ে তোলা সম্ভব যদি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিগুলো যাদের হাতে পেটেন্ট আছে তারা অনুমতি দেয়, অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে। ফাইজার, মডার্না, জনসন এন্ড জনসন, তারা যদি ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইট, যা WTO-এর নিয়ম মেনেই তাদের সাময়িক একচেটিয়া ক্ষমতা দেয়, সেইটাকে যদি আরেকটু শিথিল করত, তাহলে প্রচুর উৎপাদক বিভিন্নদেশে সেটা উৎপাদন করতে পারতো নানারকম লাইসেন্সের এগ্রিমেন্টের মধ্য দিয়ে। এটা এমন নয় যে, কোনোরকম প্রপার্টি রাইট থাকলোই না, সবটাই যে যেমন পারছে তৈরি করছে। যেটা দরকার ছিল, কিছুটা শিথিল করে লাইসেন্স এগ্রিমেন্ট করে নেওয়া। তাহলে কিন্তু এই দুমাসে উৎপাদনের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যেত। এটা হল না কেন? কোম্পানিগুলো চায় না বলে। ভারতের ব্যাপারে আবার ফিরে আসছি আমি। তাহলে গ্লোবাল জোগানের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা বলা যেতে পারে এই গুটি কয়েক ফার্মা কোম্পানি। তাহলে এটা নিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না কেন? অনেকের মনে থাকতে পারে বিভিন্ন সময় এই ফার্মা কোম্পানিগুলো কিন্তু আমেরিকান সরকারকে লবি করে যাচ্ছে। এগুলো সবই মূলত আমেরিকা-বেসড কোম্পানি। এগুলোর বিরুদ্ধে নানা চাপ এসেছে। প্রায় ২০০ নোবেল লরিয়েট বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা সমবেতভাবে পিটিশন করে প্রেসিডেন্টের কাছে, এবং এইরকম নানা চাপের ফলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন শেষপর্যন্ত মেনে নিলেন যে তাঁরা নিয়মটা আরো শিথিল করবেন, কিন্তু প্রক্রিয়াটি কীরকম হবে সেটা এখনো পরিষ্কার হয় নি। এখানে ফার্মাগুলোর মূল যুক্তি ছিল, আমরা যদি সবাইকে উৎপাদন করতে দিই, অনেকের সেই ক্যাপাসিটি নেই, সেই নলেজ নেই, সেই টেকনোলজি নেই যাতে করে তারা এটা উৎপাদন করতে পারে। সুতরাং, এক অর্থে এটা ইনএফেক্টিভ, ফলে এটা শিথিল করা না করায় কিছু যায় আসে না, উৎপাদন বাড়বে না। প্রশ্ন হল, ইনএফেক্টিভই যদি হবে তাহলে আটকে রাখার এত চেষ্টা কেন?

    ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি বা পেটেন্ট রাইট তাদের হাতে থাকলে তারা একচেটিয়া মুনাফা করতে পারবে। মুনাফা আর একচেটিয়া মুনাফার মধ্যে পার্থক্য আছে, যেটা সাধারণ আলোচনায় মনে রাখি না। একচেটিয়া ক্ষমতা না থাকলে মুনাফা হবে না তা তো নয়। প্রফিটটা যাতে থাকে তারো নানা উপায় আছে, যেমন যারা এটা ডেভেলপ করেছে তাদের ওয়ানটাইম কমপেনসেশন দিয়ে লাইসেন্সটা হতে পারে। অর্থাৎ কোনোভাবে যাতে ক্ষতি না হতে পারে, বা ক্ষতি হলেও সেটা পূরণ করে দিয়েও যাতে মুনাফা পেতে পারে সেটা কিন্তু ছিল বা করা যেত। কিন্তু তারা ক্রমাগত বাধা দিয়ে গেছে। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তাদের বাধা দেওয়ার কারণটা শুধু ঐ একচেটিয়া মুনাফার কারণে, আর কোনো প্রয়োজনে নয়। এই কারণে জোগানটা বাড়তে পারেনি। একচেটিয়া ধরনের বাজারে জোগানটা বাড়ে না, কারণ জোগানটা পুরোপুরি তাদের হাতে নিয়ন্ত্রিত থাকে। আমরা যেটাকে বলি প্রতিযোগিতার বাজার, সেই প্রতিযোগিতার বাজারে যেহেতু অনেক উৎপাদক থাকে, একজন দামটা খুব বেশি রাখলে বাজার থেকে হঠে যেতে হবে। একচেটিয়া বাজারে একচেটিয়া মুনাফা করার জন্যই তারা পেটেন্ট রাইটটাকে আকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করে। যতরকমভাবে সম্ভব লবিং করে সরকারের কাছে। তাহলে এখানে নীতির প্রশ্নে দেখছি, অর্থনীতিতে পেটেন্ট সংরক্ষণের পক্ষে যে যুক্তিগুলো সাধারণভাবে বিভিন্ন আবিস্কারের ক্ষেত্রে আছে, তাকেই যেন আঁকড়ে থাকার চেষ্টা হচ্ছে। ফলে, অনেক ভ্যাক্সিন ও ওষুধ, যাদের বলে জীবনদায়ী, তাদের বণ্টনে যে নীতি ও ন্যায্যতার প্রশ্নগুলো থাকা উচিত সেগুলো একদম চাপা পড়ে যাচ্ছে। আমি যদি কোনো জিনিস আবিষ্কার করি এবং তার জন্য যদি প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয় আমাকে, তাহলে সেই বিনিয়োগটা করার জন্য আমার উৎসাহের দরকার। তার জন্য পেটেন্ট আমাকে পনেরো বা কুড়ি বছরের জন্য একচেটিয়া অধিকার দিল লাভ রাখার জন্যে। এই সময়ের পরে পেটেন্টটা আর থাকবে না, তখন যে কেউ এটা তৈরি বা বিক্রি করতে পারে। এর অর্থনীতির প্রধান যুক্তিটা হচ্ছে, নাহলে তার বিনিয়োগ করার উৎসাহটা থাকবে না। কিন্তু একটা ভ্যাকসিনে বিনিয়োগ ব্যাপারটা ওরকম সোজাসাপটা নয়। কেন? এই যে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ যেগুলো আছে, ক্রমাগত তারা গবেষণা করে চলেছে, সেই গবেষণাগুলোর কোনো ফল নেই এই ভ্যাক্সিন ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে? যেকোনো গবেষণায় আমরা জানি যে আবিষ্কারটি একটা পূঞ্জীভূত জ্ঞানের ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই, অনেক কোম্পানি নানারকমের জিনিস ডেভেলপ করে গেছে এবং মূলত সেটা সরকারি সহায়তায় বিভিন্ন গবেষণাগারে হয়েছে সরকারি সহায়তায়। সেইগুলো ব্যবহার করেই কোনও প্রতিষ্ঠান যখন আরেকটা নতুন কিছু করছে, তাহলে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটটা শুধুমাত্র সেই প্রতিষ্ঠানেরই একচেটিয়া হবে কেন, এই প্রশ্নটা তোলা যায়। অর্থাৎ এটা একটা নীতির প্রশ্ন, নলেজ তাহলে কার প্রপার্টি, বিশেষত যে নলেজের ওপর সরাসরি নির্ভর করছে মানুষের জীবন? এই প্রশ্নটা নিয়ে অনেকে লেখালিখি করেছেন। অর্থনীতির পেটেন্ট রাইটের যুক্তি ধরে বেশিরভাগ ফার্মা কোম্পানিগুলো যে সুপার নর্মাল প্রফিট করে থাকে সেইটাকে কিন্তু বারবার আঘাত করে ভাঙ্গবার চেষ্টা বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে অনেকে চালিয়ে যাচ্ছেন, অনেকরকম আন্তর্জাতিক সংগঠনও এ নিয়ে কাজ করে। আপনারা হয়ত জানেন এর আগে HIV এইডস এর ওষুধের পেটেন্ট নিয়ে লড়াই হয়েছে, যার ফলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সে ওষুধ পৌঁছনো গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, টিকাগুলো যখন তৈরি হচ্ছে সেগুলো কিন্তু প্রথমে উন্নত দেশগুলো নিয়ে নিচ্ছে, ব্যবহার করছে। টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যত বেশি টিকা উৎপাদন করা হবে, প্রতি টিকার গড় উৎপাদন ব্যয় কমতে থাকবে। তাহলে যত বেশি উৎপাদন হবে ততই টিকা সস্তা হওয়ার কথা। কিন্তু যখনই একচেটিয়া অধিকারটা থেকে যাচ্ছে, গড় ব্যয় কমে যাওয়ার যে সুযোগটা, সেই সুযোগটা তারা আর কাউকে দিচ্ছে না এবং উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রেখে দামটা বাড়িয়ে রাখছে। ভ্যাক্সিন যদি অনেক বেশি উৎপাদন করা যায় গড় ব্যয়টা ক্রমশই কমবে এবং গড় ব্যয় যখন ক্রমশই কমতে থাকবে তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও ভ্যাক্সিন পাঠাতে পারবে। যেকোনো ভ্যাক্সিনের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে ভ্যাক্সিনগুলো প্রথমে উন্নত দেশগুলোর জন্যই ছিল, আস্তে আস্তে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গেছে, যে ভ্যাক্সিনগুলো সবরকম দেশে দরকার। আর যে ভ্যাক্সিনগুলো উন্নত দেশগুলোর আর দরকার নেই বরং শুধু উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই দরকার সেগুলো তো তৈরিই হয় না। কারণ কে বিনিয়োগ করবে আর কেই বা উৎপাদন করবে! এই হল মূলত ভ্যাক্সিনের অর্থনীতি বা রাজনৈতিক অর্থনীতি।

    আমাদের দেশে গত কয়েক মাসের মধ্যে যা হল সেটা একটু আজব ধরনের ব্যাপার। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেখছি একটা অসম্ভব সন্তুষ্টি যে, আমরা ভ্যাক্সিনে শুধু আত্মনির্ভর নয়, আমরা অন্যদেশকেও পাঠাচ্ছি। এই আত্মসন্তুষ্টি খুবই আশ্চর্যের, কারণ তখনো পর্যন্ত এ দেশে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে এককোটিরও কম মানুষকে। তখনই আমরা ঘোষণা করে দিলাম যে, আমরা আত্মনির্ভর এবং শুধুমাত্র আত্মনির্ভর নয়, আমরা অন্যদেশকেও ভ্যাক্সিন পাঠাতে পারি এবং পাঠিয়েওছি। কিন্তু তারপর যখন কোভিডের গ্রাফটা ঊর্ধ্বমুখী, অনেকেই ভ্যাক্সিনের প্রয়োজনটা বেশি বেশি করে অনুভব করতে শুরু করলো, এবং ভ্যাক্সিন নিতে চাওয়ায় বিরাট এক চাহিদা তৈরি হল যে চাহিদা যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। এখন আমাদের যা উৎপাদন ক্ষমতা আছে সিরাম বা ভারত বায়োটেকের, তারা কোনোভাবেই এটা পেরে উঠবে না। তার ফলে এখন প্রায় অন্ধকারে হাতড়ানোর মত ব্যাপার হচ্ছে। অতি সম্প্রতি, স্পুটনিক-ভি যেটা রাশিয়ান ভ্যাক্সিন, তাকে অনুমোদন দেওয়া হল এবং ডক্টর রেড্ডিজ ল্যাব-এর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তা এদেশে ওরা তৈরি করবে। কিন্তু তাদের উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম, ফলে চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। সাধারণভাবে চাইনিজ বা রাশিয়ান ভ্যাক্সিন নিয়ে মানুষের আস্থার ব্যাপারটাও ভাবতে হবে। আমি যদি মনে করি সিরাম বা ভারত বায়োটেক অতটা ভ্যাক্সিন উৎপাদন করতে পারছে না, বাকিটা চাইনিজ বা রাশিয়ান ভ্যাক্সিন দিয়ে পূরণ করা যাবে, এটাও কিন্তু হবে না। হবে না এই কারণে যে, বেশিরভাগ মানুষের মনে চাইনিজ বা রাশিয়ান ভ্যাক্সিন সম্পর্কে আস্থার অভাব আছে হয়ত। ভ্যাক্সিনের অনুমোদন প্রক্রিয়াটা পশ্চিমি দেশে অনেক স্বচ্ছ এমন একটা ধারনা আছে আমাদের। চিন বা রাশিয়ার ক্ষেত্রে মনে হয় যেন অন্ধকারে ঢাকা। এরকম একটা পার্সেপসন আমাদের আছে এবং সেই পার্সেপসনের কারনে সম্ভবত চাইনিজ বা রাশিয়ান ভ্যাক্সিন খুব বেশি লোক নেবেন বলে আমার মনে হয় না। যাইহোক, সরকার এখন প্রায় ডেসপ্যারেটলি এই চেষ্টাটা করে যাচ্ছে। অথচ পয়লা মে থেকে আচমকা যে নীতি বদল হল তার পেছনে যে যুক্তি তা নেওয়া মুস্কিল। এপ্রিলের থার্ড উইক পর্যন্ত যখন দেখা গেল যে রেটে ভ্যাক্সিন এগোচ্ছে এবং কোভিশিল্ড, বা কোভ্যাক্সিনের যে জোগান সেভাবে বেশিদূর এগোনো যাবে না। তাহলে উপায়? একটা ধারণা আছে যে সরকার যখনই পারছে না, তখন অসরকারি করে দেওয়া হোক। এই ধারণাটা বরাবরই আছে। সরকার সেটা সবাইকে যখন দিতে পারছে না, এটা যদি বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় সবাই কিনে নিতে পারবে। অর্থাৎ বাজার এবং রাষ্ট্র দুটো মিলিয়ে জুলিয়ে একরকম হয়ে যাবে। কীরকম? রাজ্যগুলিকে বলা হল তোমরা উৎপাদকদের সঙ্গে দর কষাকষি করে কিনে নাও, নিয়ে এবার বিনাপয়সায় বা পয়সার বিনিময়ে যেভাবে ইচ্ছা দিতে পার। অন্যদিকে, প্রাইভেট হাসপাতালগুলো সরাসরি বেচতে পারে তাদের দামে। অনেকে বলছে, এটার মধ্যে খারাপ কী আছে? যারা দাম দিতে ইচ্ছুক বা দাম দিতে পারে তারা প্রাইভেট থেকে নিয়ে নেবে সুতরাং সরকারকে অনেকটা কম ভাবতে হবে সেক্ষেত্রে। এটা কিন্তু অন্য অনেক রোগের ক্ষেত্রে আমরা ভাবতে পারি কিছুটা। এই যেমন আমরা কিউরেটিভ কেয়ারের ক্ষেত্রে দেখছি সরকারি প্রতিষ্ঠানও আছে আবার অসরকারি প্রতিষ্ঠানও। যাঁরা টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন তাঁরা অসরকারি প্রতিষ্ঠানে যান আর যাঁরা পারেন না তাঁরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে যান। কিন্তু সংক্রমক রোগের ক্ষেত্রে তা খাটে না। সংক্রমক রোগের ক্ষেত্রে একদম বুনিয়াদি যে অর্থনীতির নিয়মটা, এইটা কিন্তু অনেকসময় নীতি নির্ধারকদের মাথায় থাকে না। একটি ঘটনার কথা বলি। চিনে ১৯৭৮ এর সংস্কারের পর থেকে আস্তে আস্তে স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও অনেকটা সংস্কার শুরু হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য তারা ইউজার ফি চালু করলো । তারা এটা করলো রোগ নির্বিশেষে। এমনকি যক্ষ্মারোগের জন্যও তারা এটা চালু করলো। ফলে যা হবার তা হল। টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে বলে অনেকে চিকিৎসার দিকে গেল না। ফলে ভীষণভাবে বেড়ে গেল যক্ষ্মা রোগ, কারণ সংক্রমণ বাড়তে থাকলো। এটা উপলব্ধি করতে চিনের সরকারের একটু সময় লেগেছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা আবার তারা তুলে নিল। আমাদের দেশেও যক্ষ্মার ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুধুমাত্র বিনামূল্যে হয় তাই নয়, এখন এটা নিয়েও ভাবা হচ্ছে যে যক্ষ্মা রোগীদের আরো কিছু ইনসেন্টিভ দেওয়া যায় কিনা যাতে তাঁরা চিকিৎসা বন্ধ না করেন। কিন্তু তা সত্বেও যক্ষ্মা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে নি। সরকারকে নানারকম নতুন নতুন ভাবনা আনতে হবে যাতে সংক্রমক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তার মধ্যে বিহেভিয়ারাল সায়েন্সের যথেষ্ট ভূমিকা আছে।

    আজকে ১৩৮ কোটি মানুষ প্রত্যেকেই মনে করবে টিকা নেওয়া দরকার যত টাকাই লাগুক না কেন, সেটা অসম্ভব। হাজার বারোশ টাকা খরচ করে টিকা নিতে যাবে ভারতের কত শতাংশ মানুষ? অনেকের ক্ষমতা নেই, কিন্তু এটা পুরোপুরি ক্রয় ক্ষমতার প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা হল আমি এতে খরচ করব কি করব না এটা অর্থনীতির নিয়ম। এর সঙ্গে ন্যায্যতার প্রশ্ন। অর্থনীতির প্রশ্ন আর ন্যায্যতার প্রশ্ন আলাদা করে বলতে চাইছি এই কারণে যে, আমেরিকাতে শোনা যাচ্ছে আমি ততক্ষণ সুরক্ষিত নই যতক্ষন না সবাই সুরক্ষিত। এটার মানে হচ্ছে আমার নিজের সুরক্ষার জন্য অন্যদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু এটা সংক্রমক রোগ, অতএব যতক্ষণ সেটা ঠেকাতে না পারছি আমি সুরক্ষিত নই। এখানে কিন্তু একটা সেল্ফ ইন্টারেস্ট-ই আমাকে এই কথা বলাচ্ছে। সরকারও একরকম ভাবে এই সেল্ফ ইন্টারেস্টটা মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তোমার প্রয়োজনেই দরকার অন্যদের ফ্রিতে টিকা দেওয়ার। এটা আমরা অর্থনীতির যুক্তি দিয়ে বলতে পারি। এখানে প্রশ্ন হল, যদি রোগটা সংক্রমক না হয় তাহলে কি আমি প্রতিবেশীর থেকে সেই ইন্টারেস্টটা দেখতে পাব না? আমার যদি হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে আমি তো সংক্রমণ করছি না কাউকে, তাহলে কি পাশের বাড়ির মানুষটির কিছু এসে যাবে না? সেল্ফ ইন্টারেস্ট ছাড়া সমাজে আর কিছু আমাদের প্রণোদিত করবে না? তাহলে টিকার বন্টনের ক্ষেত্রে সব যুক্তিগুলোকে যদি শুধু সেল্ফ ইন্টারেস্টে নিয়ে আসি, যেটা এক্সটার্নিলিটির আর্গুমেন্ট, তাহলে ন্যায্যতার বা সমানুভুতির কোনও পরিসর থাকবে না? এই এক্সটার্নিলিটির জন্য অবশ্যই সরকারের ভূমিকা আছে। একজনও যদি সংক্রমিত থাকে তাহলে বাকিদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। ফলে সরকার এই ভাবে বোঝাচ্ছে যে, যতক্ষণ না সবাই সুরক্ষিত হচ্ছে তুমিও সুরক্ষিত নও। এটা আমি আমার সেল্ফ ইন্টারেস্ট থেকেই চাইব সবাই সুরক্ষিত হোক। এমনকি দরকার হলে পাশের বাড়ির লোকের যদি পয়সা না থাকে, আমি তাকে পয়সা দিয়ে বলব টিকাটা নিতে। কারণ আমি নিজে সুরক্ষিত থাকতে চাই। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের অন্য মোটিভেশন নিয়েও ভাবতে হবে। সেটা হল আমাদের সবসময় সেল্ফ ইন্টারেস্ট দিয়েই সঠিক নীতিকে যুক্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে? আজকে যুক্তিগুলোকে ওইভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে একটা সেল্ফ ইন্টারেস্টের জায়গায় নিয়ে আসতে হচ্ছে কেননা ধরে নেওয়া হচ্ছে মানুষ শুধু এই লজিকটাকেই বুঝতে সক্ষম। সেইজন্যই সম্ভবত আমেরিকাতে এই লজিকটা অনেক বেশি পপুলার। যার ফলে আমেরিকার মতো দেশ প্রয়োজনের পাঁচগুণ বেশি ভ্যাক্সিন সঞ্চয় করে রেখে দেয়। যদিও সেটা তাদের কাজে লাগছে না। আমেরিকান ভ্যাক্সিনের জোগান শুধু আমেরিকানদের জন্য এই যে ভাবনাকেই ন্যাশনালিজম বলা হয়েছে, যা খুব প্রশংসার যোগ্য নয়। এই ভ্যাক্সিন ন্যাশনালিজম জিনিসটা যে ন্যয্যতার দিক থেকে অত্যন্ত অন্যায় কাজ, এইটা নিয়ে বারবার বলার দরকার আছে। সিরাম যখন রফতানি করেছিল, সিরামের শর্ত ছিল অন্য দেশে পাঠানোর। কিন্তু আমি তো এভাবেও ভাবতে পারি, আমি যখন ভ্যাক্সিন পাচ্ছি আমি চাই নেপালের মানুষও পাক, বাংলাদেশের মানুষও পাক। অর্থাৎ নেপাল ও বাংলাদেশের মানুষকে বঞ্চিত করে আমাদের দেশের মানুষই শুধু পেতে পারে এটা নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। আমরা যদি এরকম ভাবি আমেরিকানরাও এরকম করে ভাবছে, আমরা তার দিকে আঙুল তুলব কীভাবে? প্রশ্ন হতে পারে আমেরিকা তার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি সঞ্চয় করে রেখেছে যেটা অবশ্যই অপরাধ। এবং আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের সেই জোগানটাই নেই। সুতরাং এখানে বাস্তব অবস্থার বিরাট তফাত আছে। কিন্তু, আমি বলবো যে, আমরা যেন ভুলে না যাই আমাদের কাজটা ভারতবর্ষের সবাইকে টিকাকরণ করে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে গেলাম তা নয়। WHO যে কারণে COVAX সংগঠিত করার চেষ্টা করেছিল তার উদ্যোগটা মনে রাখলে দেখব এখানে একটা ভলান্টারি ব্যাপার ছিল এবং সেই ভলান্টারিজমটা কোনো ক্ষমতাশালী দেশগুলো থেকে সেভাবে পাওয়া গেল না। সুতরাং এই ধরনের গ্লোবাল যে উদ্যোগগুলো WHO এর মত একটা নখদন্তহীন সংস্থা করতে চায়, তারা চাপিয়ে দিতে পারে না। COVAX টা হল সবাই মিলেমিশে ভাগাভাগি করে নেওয়ার উদ্যোগ, প্রায় ১৮০ টা দেশ তাতে রাজি ছিল, কিন্তু কেউ তার কমিটমেন্ট করছে না। এখানে আমাদের দেশের যেরকম একটা নীতিহীনতা ও কতকগুলো বোকা বোকা বিষয়ে গর্ববোধ করার প্রবণতা তার ফলে আমরা যেমন ভুগছি এ দেশে, গোটা বিশ্বেও এ সমস্যার থেকে মুক্তি নেই। গোটা বিশ্বে এখনো ভ্যাক্সিন ন্যাশনালিজম ব্যাপারটা গেঁড়ে বসে আছে। ভ্যাক্সিন ন্যাশনালিজমটা কন্ট্রোল করার জন্য, তার যুক্তি ও বিরোধী যুক্তি তুলে ধরার জন্য বারবার এটা নিয়ে সোচ্চার হওয়ার দরকার আছে এবং সেটা হচ্ছেও। প্রচুর নোবেল লরিয়েটরাও এ বিষয়ে সোচ্চার হচ্ছেন। সুতরাং কোনো সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এটাকে সমর্থন করবেন না। কোন জায়গাটা আমাদের চিহ্নিত করার দরকার আছে ন্যায্যতার দিক থেকে, সেটা পরিষ্কার করা জরুরি। সবশেষে বলি, আমাদের এখানে নীতিহীনতার সঙ্গে একটা সুবিধাবাদও আছে। পয়লা মে থেকে বলা হল রাজ্যগুলো এবার দায়িত্ব নেবে অথচ রাজ্যগুলোর যোগানের ওপর কোনো হাত নেই। জোগানটা দিচ্ছে দুটো কোম্পানি এবং সমস্ত রাজ্যগুলো ঠেলাঠেলি করে বরাত দিতে শুরু করল এই দুটো কোম্পানিকে। এবার সেটা কীভাবে বন্টন হবে, কোন রাজ্যগুলো বেশি পাবে বা কোন রাজ্যগুলো কম পাবে, এই নিয়ে কিন্তু স্পষ্ট কিছু বলে দেওয়া হয় নি। এখানে কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণও থাকল না, পুরোটাই ছেড়ে দেওয়া হল সেই কোম্পানিগুলো কী করবে না করবে তার ওপর। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কিন্তু রাজ্যগুলোর উপায় নেই বলে ইতিমধ্যেই সবাই দুটো কোম্পানির কাছে বরাত দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিহার-উড়িষ্যা-মহারাষ্ট্র সবাই এখন গ্লোবাল টেন্ডার ডাকছে। তারা আশা করছে, ফাইজার, মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন সবাই সেই গ্লোবাল টেন্ডারে সাড়া দেবে এবং তারা মার্কেট থেকে কিনে নিয়ে বিনাপয়সায় মানুষকে দেবে। এইভাবে রাজ্যগুলোকে ভাবতে হচ্ছে। এবার কথা হচ্ছে ফাইজারের যে ভ্যাক্সিন, সেটা অন্যধরনের, কোভিশিল্ডের মত নয়। টেকনোলজিটাই আলাদা এবং সেটা প্রায় মাইনাস ফর্টি ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখতে হয়। ফলে ফাইজারের ব্যাপারটা কিছুটা অনিশ্চিত। এইভাবে গ্লোবাল টেন্ডারের পরিণতি যেখানে এসে দাঁড়াবে, সেটাও আবার একধরনের একচেটিয়া ব্যাপারেই এসে দাঁড়াবে। অর্থাৎ, একটা বা দুটো কোম্পানির বাইরে এমন টার্মস হবে, যে টার্মসগুলো আমার পক্ষে অসুবিধাজনক।

    এই সমস্যার মুখে রাজ্যগুলোকে ঠেলে দেওয়া, যেখানে রাজ্যগুলোর নিজস্ব আয়ের সংস্থান নেই, যেখানে রাজ্যগুলোকে বিশেষত কোভিডের সময় ধার করে তাদের প্রয়োজনীয় খরচ চালাতে হচ্ছে, সেখানে এই চরম অসুবিধার মুখে ঠেলে দেওয়ার মধ্যে আমি মনে করি সাংঘাতিক অপরাধ রয়েছে। অপরাধের জায়গাটা হচ্ছে, কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রয়েছে, সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে আমরা কোভিডের প্রথম দিকে দেখলাম সব সিদ্ধান্ত কেন্দ্র সরকারই নিচ্ছিল। কবে লকডাউন হবে, কবে থালা বাজাতে হবে, এসব ব্যাপারে কোনো রাজ্যের সঙ্গে তারা কিন্তু কোনোভাবেই আলোচনায় যায় নি। পয়লা মে থেকে এই যে নতুন টিকা নীতি এটাও কোনো রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে করা হয় নি। কেন্দ্র সরকার একতরফা ভাবে ঠিক করল যে, রাজ্যসরকারগুলোকে কোম্পানির থেকে ভ্যাক্সিন কিনে নিতে হবে। এটা করা যায় একটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয়?



    বক্তৃতার লিঙ্কঃ

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৪ জুন ২০২১ | ২২৪৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন