এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পরলোক দর্শনে বিভূতিভূষণ

    Rajkumar Mahato লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ মার্চ ২০২১ | ১২৯৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • আমার কলম আমাকে দিয়ে কখন যে কি লেখায় আমি নিজেই তার ব্যাখ্যা দিতে পারিনা। অদ্ভুত ভাবে মাথায় শব্দগুলো কিলবিল করে, আর আমি সেগুলোকে ল্যাপি অথবা ফোনের স্ক্রিনে ঘষতে থাকি‌ । সাধারণত কোন মহৎ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লিখতে গেলে একটু দিনক্ষণ দেখতে হয়। যেমন তাঁর জন্মদিন অথবা মৃত্যুদিন। আমার পাগল শব্দেরা আমায় দিনক্ষণ নিয়ে ভাবার সুযোগ দেয়না। তারা মাথায় এসে ভিড় করে, আর উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে যতক্ষন পর্যন্ত আমি তাদের মগজ থেকে কালো কালিতে রুপান্তরিত না করছি। আজ আবার হল এরুপ। তার‌ই ফলস্বরূপ এই লেখা।


    জানিনা তাঁকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার আছে কিনা। তবুও তাঁর অন্ধ ভক্ত হিসেবে আমি সবসময় তাঁকে নিয়ে লিখে যাই‌। ওই যে বললাম দিনক্ষণ না দেখেই। আমার মনে হত আমি তাকে অনেক কাছ থেকে জানি‌। কিন্তু সত্যি একটা মানুষের মনের মধ্যে একসমুদ্র রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে, এটা হয়ত আজ স্পষ্ট হল। প্রত্যেকটা মন যেন এক একটা মহাসমুদ্র। আমরা ভাবি আমাদের প্রিয় মানুষটার সব রহস্য আমরা জেনে গেছি। আর সেই ভেবেই খুব খুশিও হ‌ই, কিন্তু আসলেই আমরা তার সিকিভাগও জানি না হয়ত।


    "পথের পাঁচালী" উপন্যাস ছোটবেলা থেকে নিয়ে আজ অবধি পাঁচ বার শেষ করেছি। গ্রাম বাংলার ওই রুপ আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। এছাড়াও অনেক ছোটগল্প পড়েছি তাঁর। বেশ কয়েকদিন থেকেই এপার ওপার, এদিক সেদিক থেকে জোগাড় করে করে তার জীবনী পড়ছি।নেট ঘেঁটে নানা অজানা তথ্য পড়ছি তাঁর ব্যাপারে। আজ তাঁর জীবনী ঘাঁটতে গিয়ে দেখলাম আসলেই সে এক মহাসমুদ্র রহস্য বুকে নিয়ে বেঁচে ছিল বছরের পর বছর।


    প্রথম স্ত্রী "গৌরি" আর ছোট বোনের মৃত্যু বিভূতিভূষণ এর জীবনে এনে দিয়েছিল আমূল পরিবর্তন। তিনি প্রায় বলতেন তিনি তাঁর বোন আর স্ত্রীকে একসাথে দেখেছেন। তারা এসে প্রায় তাকে ডাক দিত। তিনি নাকি তাঁর স্ত্রীর সাথে কথাও বলতেন মাঝে মাঝে। ধীরে ধীরে তিনি ডুবে যাচ্ছিলেন ওই মৃত্যুর ওপারের জীবনে। পরলোকে। তার নিঃসঙ্গতা তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল সেই অলৌকিক, পরলৌকিক জীবনে। 


    খানিক তন্ত্র মন্ত্রের দিকেও আগ্রহ বাড়ে তাঁর সেই সময়। যে মানুষটি গ্রাম বাংলার বর্ষাকে নিজের কলমের মাধ্যমে আলাদা একটা রুপ দিয়েছিল, তার জীবনে কালবৈশাখীর মত হঠাৎ আছড়ে পড়েছিল বিষন্নতা, একাকীত্ব। আর এই একাকীত্ব‌ই তাকে পরলোক চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে। তাঁর এই মানসিক অবস্থার কথা স্পষ্ট বোঝা যায় "দেবযান" উপন্যাসটিতে।


    দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী জীবনে এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু তাঁর সঙ্গে তিনি বিভূতিভূষনকে তন্ত্র মন্ত্রের আর‌ও কাছে নিয়ে যায়। তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের শ্বশুর মশাই ষোড়শীকান্ত ছিলেন একজন গুনী তান্ত্রিক। যার জীবনী অবলম্বনে লেখা " তারানাথ তান্ত্রিক"। আসলে তারানাথ তার দ্বিতীয় পক্ষের শ্বশুর মশাই। 


    তিনি এসব পরলৌকিক চিন্তায় এতটাই মগ্ন হয়ে যান যে, স্কুলে চাকরি করাকালীন কয়েকজনের সাথে প্লানচেট পর্যন্ত করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ধরা পড়ে যান। তাঁর চাকরিটা চলে যায়। 


    সবথেকে বড় এবং অলৌকিক ঘটনা হল। তিনি একদিন ফুলডুংরিতে ঘুরতে গিয়ে নিজের মৃতদেহ আবিষ্কার করেন। যদিও তাঁর কয়েকমাসের মধ্যেই তিনি মারা যায়।


    জানিনা আরও কতশত রহস্য চাপা ছিল ওই বুকটাতে। তার ঘাটশিলার বাড়িতে প্রায় দশ-এগারো বার গেছি। কাটিয়েছি ঘন্টার পর ঘন্টা।আজ তাঁর সম্পর্কে এসব জেনে এটাই বলার ইচ্ছা হল " সত্যি একজন একাকীত্বে ভোগা মানুষ বেঁচে থেকেও আসলে মারাই যায়।"


    ©Rajkumar Mahato


    rajkumarauthor.blogspot.com


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন