এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সদ্য নোবেলজয়ী লুইস গ্লুক ও তাঁর  কবিতা।

    Lipikaa Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ অক্টোবর ২০২০ | ৮৫৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)


  • সুইডিশ একাডেমি ঘোষণা করছে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম। ২০২০ সালে নোবেল জয় করলেন মার্কিন কবি লুইস গ্লুক। এই কবি তাঁর কবিতার সাবলীল আর ব্যতিক্রমী ভাষাশৈলী দিয়ে নিজেকে এমনভাবে প্রকাশ করেন, যা একাধারে হয়ে ওঠে ব্যাক্তিগত ও সার্বজনীন।

    ১৭৮৬ সালে একটি স্বাধীন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দ্য সুইডিশ একাডেমির সৃষ্টি হয়েছিল। এই একাডেমি ১৯০১ সাল থেকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ১১২ বার এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। বিজয়ী হয়েছেন ১১৬ জন কবি ও সাহিত্যিক।

    ৮ অক্টোবরে আয়োজিত হলো ১১৩তম সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার অনুষ্ঠান। অক্টোবর মাস কাছে এগিয়ে এলে প্রতিবছরই এ পুরস্কার নিয়ে সারা পৃথিবীর সাহিত্যামোদীদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে, এমন একটি নামের ঘোষণায় যে খানিকটা অবাকই হতে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। কে পাচ্ছেন এবারের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার, এই প্রশ্নে যে সাহিত্যিকদের নাম এবার বিভিন্নভাবে আলোচনায় এসেছে অথবা যাঁদের নামে বাজি ধরা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে লুইস গ্লুকের নামটি ছিল না।

    ১৯৪৩ সালের ২২ এপ্রিল নিউইয়র্কে লুইস গ্লুকের জন্ম। বেড়ে উঠেছেন লং আইল্যান্ডে। বাবা ড্যানিয়েল গ্লুক আর মা বিয়েট্রেস গ্লুকের দুই মেয়ের মধ্যে তিনি বড়। শৈশবে অ্যানারেক্সিয়া নার্ভালসা রোগে ভুগেছিলেন অনেক দিন। এ জন্য বছর সাতেক থেরাপি নিতে হয়েছে তাঁকে। গর্ডার্ড কলেজে কিছুদিন কবিতা বিষয়ে শিক্ষকতা করার পর গ্লুক বর্তমানে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। মাত্র আঠেরো বছর বয়সে কবিতায় হাত খড়ি। ২৫ বছর বয়সে প্রথম কবিতার বই ‘ফার্স্টবর্ন’(১৯৬৮) লুইস গ্লুক। তাঁর  প্রথম কাব্যগ্রন্থই সাড়া ফেলে দিয়েছিল সাহিত্যের জগতে। তারপর আস্তে আস্তে বেড়েছে পরিধি। মেলভিন কানে, পুলিৎজার পুরস্কার জুটেছে আগেই। এবার পেলেন নোবেল।

    লুইস গ্লুক তাঁর রচনায় যন্ত্রণা, আকাঙ্ক্ষা আর প্রকৃতি নিয়ে লিখেছেন। বিশেষ করে বিষণ্নতা আর একাকিত্ব নিয়ে প্রচুর কবিতা লিখেছেন তিনি। নাইন-ইলেভেনের মর্মান্তিক ঘটনা গ্লুককে খুবই প্রভাবিত করেছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনা তাঁকে জীবন গুটিয়ে ফেলার পরিবর্তে জীবনকে উদ্‌যাপন করতেই বেশি উৎসাহী করেছে। তাঁর রচনা ও ভাবনায় অনেক সময় পৌরাণিক ঘটনা আর ইতিহাসের ছোঁয়া পাওয়া যায়। পুলিৎজার ছাড়াও লুইস গ্লুকের প্রাপ্তির ঝুলিতে আছে ন্যাশনাল হিউম্যানিটিজ মেডেল, ন্যাশনাল বুক পুরস্কার। ২০০৩-০৪ সালে গ্লুক ছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রীয় কবি। এখানে থাকল অন্তর্জাল থেকে পাওয়া তাঁর কবিতার সহ দুটি কবিতার অনুবাদ ।

    -------
    সুখ
    -------
    দুজন শুয়ে আছে রাত্রির কোলে
    সাদা বিছানার চাদরে শুয়ে আছে দুজন মানুষ।
    ভোর খুব কাছে,
    এইবার ওদের ঘুম ভাঙবে
    মাথার কাছে লিলি জাগছে ফুলদানিতে
    সূর্যের আলো ওদের পানপাত্রে তৈরি—
    এখনই চুমুক দেবে।

    পুরুষটি পাশ ফিরল, কোমল স্বরে ডাকল সঙ্গীকে
    পর্দাটা দুলে উঠল, গেয়ে উঠল পাখিদল
    নারীটি এবার পাশ ফিরল, আর তার সর্বাঙ্গ
    তপ্ত হলো সঙ্গীর নিশ্বাসে।
    চোখ খুললাম আমি...

    সূর্যেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরময়
    আমি তোমার মুখের দিকে তাকালাম,
    আয়নায় দেখতে পেলাম আমাকেই।
    আমরা স্থির; শুধু সূর্যটা আমাদের
    যেতে থাকল পেরিয়ে, আলো ছড়াতে ছড়াতে।

    -------
    মা ও শিশু
    -------
    আমরা সবাই স্বপ্নদ্রষ্টা, আমরা জানি না আমরা কারা
    কোনো মেশিন আমাদের তৈরি করেছিল, এই দুনিয়ার মেশিন, বেঁধে রাখা পরিবার।
    নরম চাবুকে ঘষামাজা হয়ে, তারপর দুনিয়ায় ফেরৎ যাওয়া।
    আমরা স্বপ্ন দেখি; আমরা মনে রাখি না।

    পরিবারের মেশিনঃ অন্ধকার লোমশ ফার, মাতৃদেহের অরণ্য
    মায়ের মেশিনঃ মায়ের ভেতরে সাদা শহর।
    এবং তার আগেঃ মাটি আর জল।
    পাথরের মাঝে মস, পাতা আর ঘাসের টুকরো।
    আরও আগেঃ বিরাট অন্ধকারের মধ্যে কোষগুচ্ছ
    এবং তারও আগেঃ পর্দাঢাকা পৃথিবী।
    এই কারণেই তোমার জন্মঃ আমাকে চুপ করিয়ে দেবার জন্য।

    আমার মায়ের আর বাবার কোষ, এখন তোমার পালা
    মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠার, মাস্টারপিস হয়ে ওঠার।
    আমি সহসা উদ্ভূত, আমি কক্ষনও মনে রাখিনি।
    এখন তোমার চালিত হওয়ার পালা;
    তুমিই সে যার জানবার দাবি আছে
    আমি কেন কষ্ট পাই? আমি কেন কিছু জানি না?
    বিরাট অন্ধকারে স্থিত কোষগুচ্ছ। কোনো মেশিন আমাদের তৈরি করেছিল।

    এবার তোমার ডাক দেবার পালা, জিজ্ঞেস করার পালা
    কীসের জন্য আমি? কীসের জন্য?
    -------
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন