এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণ

    অর্পণ চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৬৭৪ বার পঠিত
  • পুনর্নির্মাণ -১
    -------------
    ধ্বংসের মাঝেই লুকিয়ে থাকে পুনর্নির্মাণের বীজ। অন্ধকার যত লম্বা হয় ভোরের আলোর পথ ততই ত্বরান্বিত হয়। আর বসন্ত হল পুনর্নির্মাণের ঋতু। প্রবল শীতের দাপটের পরে বসন্তে রিক্ত শুষ্ক গাছের ডাল সবুজ পাতায় ভরে ওঠে। রঙীন ফুলের ভারে আনত বৃক্ষশাখার দৃশ্য সভ্যতার পুনর্নির্মাণেরই চিরন্তন জয়যাত্রা ঘোষণা করে। ধ্বংস দেখেছে অনেক আমাদের এই প্রিয় বাসভূমি। কিন্তু বার বার আমরা, এই অমৃতের সন্তানেরা আমাদের সব সৃজন, মেধা ও শ্রম দিয়ে সেই ধ্বংসস্তূপের উপর গড়ে তুলেছি নতুন সভ্যতার ইমারত। প্রতিবার আমাদের সাধনার ফল হয়েছে আগের থেকে মহৎ, আগের থেকে সুমিষ্ট। আগের থেকে উন্নত। উন্নততর।

    এই বসন্তে যখন গলতে শুরু করেছে হিন্দুকুশ পাহাড়ের বরফ, মধ্য আফগানিস্তানের বামিয়ান শহরের যাবার রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে আবার, দেশবিদেশের স্থপতিবিদ পুরাতাত্ত্বিকেরা শীঘ্রই মিলিত হবেন সেখানে। এতদিন সেখানে চলছিল সেখানে বর্বর তালিবানি শাসন, তাদের হাতে এই শহরেই ধূলিসাৎ হয়েছিল দুটি সুবিশাল বুদ্ধমূর্তি, বিশ্বজনমতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই। সুখের কথা পিছনের দিকে এগিয়ে যাবার সেই প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, হতে দেওয়া হয়নি। আলোকদিশারী মানুষদের সম্মিলিত যুদ্ধক্রীড়ায় দুর্যোগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে বেশ কিছুদিন, গণতন্ত্রের আলো দেখেছে আপামর আফগান জনগণ, স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছে যুক্তি,স্বাধীনতা আর প্রগতির পথে বিশ্বাস রাখা বাকি পৃথিবী। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে অবশেষে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ওই মূর্তিদুটি পুনর্নির্মাণের, এই বসন্তেই,যা কিছু ধুলো করে দিয়েছে ওই পামরেরা, গুঁড়িয়ে দিয়েছে, যা রয়েছে অবশেষ ওই অপকীর্তির তাই ছেঁকে-কুড়িয়ে-ছেনে বানানো হবে নতুন করে বামিয়ানের বুদ্ধকে। বামিয়ান হয়ে উঠবে ওই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র, পর্যটকদের অর্থে নতুন রক্ত সঞ্চালিত হবে ধুঁকতে থাকা আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে। নবকলেবরে নতুন বুদ্ধ হবেন নতুন আফগানিস্তানের প্রতীক।

    আশ্চর্য নয় ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণের কাহিনী কখনো একটি ভৌগোলিক সীমার মধ্যে আটকে থাকে না। এই বঙ্গদেশেও চলছে এখন পুনর্নির্মাণের রেটোরিক। কিছু স্বার্থান্বেষী নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী গাম্বাট মাঝে ঘোর চক্রান্তে রাস্তাঘাট কেটে ফেলে মুক্ত দুনিয়ার ঝান্ডা উঁচিয়ে ধরার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, বৃহত্তর স্বার্থে তাদের পুলিশ আর সরকার নিযুক্ত কর্মীদল দিয়ে সাবড়ে দিতে গিয়ে ঘটল উল্টো বিপদ, চারিদিকে প্রতিবাদ-পদত্যাগ-সম্মান প্রত্যাখ্যান-পুরস্কার প্রত্যাবর্তনের মেলা আর তাকে ঘিরে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ শুরু হল। এমনকি আমাদের স্বপ্ন দেখানোর যিনি কান্ডারী, যাঁর শুভ্র কেশ, শুভ্র বেশ ও শুভ্র নির্মল হৃদয়ের অবয়বে বিগলিত হত গোটা জাতি, ভরসা পেত দূরদূরান্তের অগণিত পুঁজিপতি বিনিয়োগকারীর অস্থির চিত্ত, তাঁকেও টেনে নামিয়ে অসংস্কৃত উন্মত্ত প্রলাপ বকে লাগিয়ে দেওয়া হল খুনী বীরেন্দ্র লোদীর তকমা। সবাই জানি এ এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র, আমাদের শিল্পোন্নত সভ্য সাবলম্বী জাতি হয়ে উঠতে না দেবার, যিনি শুধু নাটকের জন্যই জীবন বিসর্জন দিতে পারেন, ওই মর্মান্তিক ঘটনা শোনার পরেই যিনি দু:খে বেদনায় একের পর এক গীতবিতানের গান আউড়ে রক্তাক্ত হতে থাকেন একাকী নিভৃতে, তাঁর প্রতি এ হেন কদর্য আচরণ কি চোখে দেখা যায়? আসুন আমরা চিনে রাখি ডুবন্ত গাদাবোট থেকে পলায়মান এই প্রতিবাদী ইঁদুরের পালকে, যে পালের গোদারা অদূর ভবিষ্যতে বিকল্প নোবেল নিয়ে হাওয়া হয়ে যাবেন, পড়ে থাকব এই আমরা ও আপনারা, আমরাই প্রাণপাত করে আমাদের আরাধ্য দেবতার মূর্তির দেহখানি থেকে ইঁদুরবাহিনীর বর্জ্য পরিষ্কার করে যাব। আমরা দালাল এই প্ররোচনামূলক বাক্যবন্ধ হবে আমাদের মাথায় কাঁটার মুকুট, আমরাই যারা কোন একসময় হাডুডু প্রতিযোগিতায় সোনা এনেছি বা মুখে রং মেখে মঞ্চে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সেজে বিড়ি ধরিয়েছি তারাই গড়ব বিকল্প নগর সংকীর্তনের দল।

    আমরাই ডুবুরির মতো তুলে আনব অখণ্ড সব মণিমুক্তো, জানাবো কেমন করে তিনি দুনিয়ার লেখক-শিল্পীদের কবিতার পর কবিতা শুনিয়ে জয় করেছেন, জানাবো কেমন ধীরস্থিরভাবে তিনি ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা পেতে নিয়েছেন সবার সব দায়ের বোঝা, পরতের পর পরত জুড়ে বানাবো এমনি করে আমাদের বামিয়ান বুদ্ধ। আগের থেকে বৃহৎ। আগের থেকে উন্নত। উন্নততর। ততদিন আমাদের সঙ্গে থাকুন প্লিজ।

    পুনর্নির্মাণ -২
    -------------
    এই বসন্তে উত্তর ভারতের হৃদয়পুর উত্তরপ্রদেশে বসেছে ভোট নামক কার্নিভালের আসর। নন্দীগ্রামের দু:খজনক ও ক্যারিবিয়ানের শোচনীয় ঘটনার পরে মিডিয়ায় মিডিয়ায় পণ্ডিতেরা মাথার চুল ছিঁড়ে গবেষণা করছেন কোন দল কতটুকু এগোল বা পিছোল। জনগণের সেই তত্ত্ব-তথ্যের কূটকাচালিতে আগ্রহ নেই, বরং এই বাজারে প্রচারের সবটুকু সার্চলাইট নিয়ে আলোকিত বিভায় উজ্জ্বল হয়েছেন রাজীবতনয় রাহুল। উত্তরপ্রদেশে গান্ধী পরিবারের সেই সাবেকি রমরমা আর নেই, খাতাকলমে কংগ্রেস দলের শক্তি মাত্র পঁচিশটি বিধায়কে এসে ঠেকেছে। কিন্তু নীল রক্তের প্রতি আমাদের কিঞ্চিৎ ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা ও বিমুগ্ধ ভালোবাসা চিরন্তন, মেঘে মেঘে রাহুল গান্ধীও আজ লায়েক হয়ে উঠেছেন আর খেলতে নেমেই এই তরুণ তুর্কী সব বল ফ্রন্টফুটে চালাতে শুরু করেছেন। যাঁরা একে আলপটকা মন্তব্য বলে বিশেষ পাত্তা দিতে প্রস্তুত নন, তাঁরা বহুদিনের অনবধানে ঈশেন কোণের রক্তবর্ণ মেঘ দেখতে পান না। তাঁদের অবগতির জন্য স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে রাহুল গান্ধী বিনয় কোঙার বা সুভাষ চক্কোত্তির মত প্রগলভ নন, অতি ভেবেচিন্তেই তিনি ব্রতী হয়েছেন সুমহান এক পরিবারের প্রাপ্য সম্মান ও নিজস্ব রোয়াব পুনরুদ্ধারের কাজে আর সেইসূত্রেই আমরা, অতি সৌভাগ্যবানেরা, জানতে পারছি দেশ ও দশের পুনর্নির্মিত ইতিহাস ও তাতে গান্ধী পরিবারের গৌরবোজ্জ্বল অবদান।

    আমাদের দেশে ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ সব রাজনৈতিক দলেরই পুণ্য কর্তব্য, পুনর্নির্মাণের ঠেলায় সুভাষ বোসের নাম জাতীয় মহাফেজখানা থেকে হারিয়ে গিয়েছে কবেই, সেই খেলায় নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে রাহুল গান্ধী পুনরায় প্রমাণ করলেন গোখরোর ছানা গোখরোই হয়, ছাগল হয় না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৬৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন