এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ত্রিকাল ও মনোরঞ্জন

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ মার্চ ২০২০ | ১৮১৩ বার পঠিত
  • মনোরঞ্জন সরকার ট্রেনের হকার। শিয়ালদা বনগাঁ লাইনে নিয়মিত খেলনা ফেরি করে । বাচ্চাদের খেলনা। তার বাড়ি হল গুমায়।
    বিক্রি বাটা এখন নেই বললেই চলে।সারাদিনে পঞ্চাশ টাকা লাভ হয় কিনা সন্দেহ। ট্রেনের কামরার ভিড়ের মধ্যে দিয়ে সাঁতার কাটতে কাটতে প্রতিদিন বাঁধা সুরের সানাই শোনায়। এইভাবে পঁচিশ বছর কাটল। পনেরতে শুরু করেছিল বাবা মারা যাবার পর। এখন চল্লিশ ছুঁয়েছে। তার মা সরস্বতীর বয়স এখন সত্তর। ভাল চোখে দেখে না। দুচোখেই ছানি কাটানো হয়েছে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে। তবু চোখের সামনে কেমন যেন সুতো দোলে। অম্বলে বুক গলা জ্বলে যায় অষ্টপ্রহর। মুখ বুজে সহ্য করে চুপচাপ আরো লক্ষ লক্ষ মায়েদের মতো, পাছে ছেলে বিরক্ত হয়। মনোরঞ্জন যে খারাপ মানুষ তা নয়, কিন্তু তিনটে ছেলেমেয়ে সহ সংসারের জোয়াল টানতে গিয়ে লবেজান হচ্ছে একেবারে । মেজাজ সর্বদা তিরিক্ষে হয়ে থাকে। কবে থেকে ভাবছে এভাবে ট্রেনের কামরায় হকারি না করে স্টেশনের পাশে একটা ছোট দোকান দেবে। সে স্বপ্ন আজও অধরা থেকে গেছে। ভাগ্যলক্ষ্মী এ দুনিয়ার বহু মানুষের সঙ্গেই এমন ছলনাময় লুকোচুরি খেলেন অম্লানচিত্তে— জীবনভর । প্রায় পনের বছর ধরে নানা পরিকল্পনা, বিবিধ প্রকারের লোক ধরাধরি, সব বারেবারে ঘোঁট পাকিয়ে গেছে মনোরঞ্জনের জীবনে। তাই মেজাজ চটকে থাকে সদাই। তার তিন ছেলেমেয়েই কিন্তু একেবারে রত্ন । একজন ক্লাস সেভেনে, একজন ফাইভে, ছোটটা ক্লাস ফোর-এ পড়ে । তিনজনই ক্লাসে ফার্স্ট হয়। এমন সন্তান ভাগ্য সচরাচর দেখা যায় না। তার সন্তানেরা তার জীবন মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই বোধহয় এমন একটা মরুদ্যান থাকে, যা তাদের বেঁচে থাকার সঞ্জীবনী রস সরবরাহ করে।
    কার্তিক পালের সঙ্গে মনোরঞ্জনের আলাপ গোবরডাঙা স্টেশনে। ওখানে তার বড় শালীর বাড়ি। রাত আটটা বিয়াল্লিশের ডাউন বনগাঁ লোকাল ধরবে বলে দাঁডিয়ে ছিল। একাই ছিল। এ কথা সে কথার পর জানা গেল শিয়ালদা কোলে মারকেটের পাইকিরি বাজারে তার সব্জীর দোকান আছে। একদিন আসতে বলল সেখানে। বড় ভাল লোক। এক দেখাতেই কেমন আপন মনে হল। তা পঞ্চাশ বাহান্ন বছর বয়েস হবে। মনোরঞ্জন ভাবে, দেখি গিয়ে কোন পথ পাওয়া যায় কিনা।বাড়িটাতেও একটু হাত দেওয়া দরকার।প্রায় তিরিশ বছর হল হাত পড়েনি বাড়িতে।ভাগ্যিস বাবা বাড়িটা তুলে দিয়ে গিয়েছিল।
    সরস্বতীর অম্বলটা কদিন ধরে খুব চাগাড় দিয়েছে।মুখ সবসময়ে তেঁতো। খাবার পরে একটা করে পান চিবোলে একটু ভাল লাগে।কিন্তু কেই বা এনে দেয়। বড় নাতনিটার প্রাণে অবশ্য খুব দয়ামায়া।তিন নাতি নাতনিই সরস্বতীর খুব ন্যাওটা। ঠাম্মিকে খুব ভালবাসে। কিন্তু তারাই বা পয়সা পায় কোথায়।আর ছেলে মনাকে এসব বলতে সংকোচ হয়। সারাদিন খেটেখুটে আসে ছেলেটা..... । গর্ভধারিনী তাই সহ্য করেন। সহ্য করার জন্যই তারা পৃথিবীতে এসেছেন।
    মনোরঞ্জন সেদিন রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখল তার বৌ মৌসুমির খুব জ্বর এসেছে। সরস্বতী বড় নাতনিকে দিয়ে তার কাছে কুড়িয়ে বাড়িয়ে যে কটা খুচরো পয়সা ছিল তা দিয়ে চারটে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট আনিয়েছেন। এই আধঘন্টা খানেক হল মৌসুমী একটা ট্যাবলেট খেয়েছে। জ্বর অবশ্য এখনও তেমন নামেনি।কার্তিক পালের সঙ্গে আলাপ হবার পর থেকে মনোরঞ্জনের মেজাজ বেশ ফুরফুরে ছিল। মাথায় নানারকম স্বপ্নীল পরিকল্পনা ঘর বাঁধছিল।সে খুব ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতিটা গ্রহণ করল।মাকে অনেকদিন বাদে জড়িয়ে ধরে অস্ফূট গভীর কৃতজ্ঞতা জানাল। মৌসুমির একটু একটু ঘাম দিতে শুরু করেছে। ওষুধের কাজ আরম্ভ হল বুঝি।
    ‘আর একদিন দেখি। না কমলে পরশুদিন মৈত্রর কাছে নিয়ে যাব।’ মৈত্র হল পাড়ার এম বি বি এস ডাক্তার।
    তা ডাক্তারের কাছে আর যেতে হয়নি। পরের দিনই মৌসুমীর জ্বর ছেড়ে যায়। গরীব মানুষের রোগ ভোগ দীর্ঘায়িত হলে বড় জ্বালা। পয়সার চিন্তা কামড়ে ধরে থাকে দিবারাত্র। যাক বাঁচল ওরা। ভাইরাল ফিভার হলেও সাত আট দিনের ধাক্কা। আকাশ ছোঁয়া দাম অ্যান্টিবায়োটিকের....
    সরকারি হাসপাতালে অবশ্য বিনা পয়সায় ওষুধ পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে লাইন লাগাবার সময় কোথায় মনোরঞ্জনের। রোগ বালাই হলে বড় জ্বালা।
    সরস্বতীর মনে যেন দোখনে হাওয়া লেগেছে। ছেলে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল কালকে। বাৎসল্য সুধায় এখনও মাখামাখি
    হয়ে আছে তার ভেতরটা। দু:খ কষ্টের প্রবল শৈত্যময় আয়ুষ্কালে এই যৎসামান্য উষ্ণতাটুকু সরস্বতীদের জীবনে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
    মনোরঞ্জন, কার্তিক পালের কোলে মার্কেটের সব্জীর পাটায় গিয়ে দেখা করল একদিন। আশ্বিন মাস পডেনি এখনও।এর মধ্যেই শিশু ফুলকপিতে ভরে গেছে বাজার। মনোরঞ্জনের মনে হল, কার্তিক বড় ভাল লোক বটে, তবে ধুরন্ধর ব্যবসায়ী। তাকে কি করে এত মনে ধরল কে জানে।
    — ‘ দেখ ভাই মনোরঞ্জন । তুমিও তো একরকম কারবার কর, তা সে যে রকম কারবারই হোক।তুমি তো এখুনি পাটা নিতে পারবে না এখানে। অনেক টাকার ধাক্কা।
    তুমি বরং এখন তলায় মাল ফেল। মাল আমি দেব। কিছু দিতে হবে না এক্ষুণি।পরে লাভ উঠলে দিও। ঠিক মতো খদ্দের ধরতে পারলে ভাল লাভ আছে।’
    একটু চুপ করে থেকে কার্তিক বলল, ‘ আমরা আর কটা টাকা লাভ করি...... গুড় তো খেয়ে যাচ্ছে ফড়েরা। দেখ যদি লাইনটা ধরতে পার। লাল হয়ে যাবে।লাইনে অবশ্য খারাখারি খুব।’
    — ‘ মানে ?’
    — ‘ মানে ওরা ওদের লাইনে কাউকে ঢুকতে দিতে চায় না।সব নিজেরাই খাবে আর কি .... হ্যা: হ্যা: হ্যা: ....... ‘
    — ‘ তাই নাকি ? ‘
    — ‘ তবে আর বলছি কি ! ব্যাটারা পাঁচ টাকা কেজি দরে চাষীদের কাছ থেকে বেগুন কিনে হোলসেলারদের কাছে বিক্রি করে তিরিশ টাকা কেজিতে। আবার ওই হোলসেলাররা পাইকিরি দোকানিদের সাপ্লাই দেয় পঞ্চাশ টাকা কেজি দরে। পাইকিরি বিক্রেতারা খদ্দেরদের বিক্রি করে পঞ্চান্ন থেকে ষাট টাকা দরে। চিন্তা কর.... পাঁচ টাকা কেজির বেগুন খদ্দেররা কিনছে ষাট টাকায়। সব মালেই এই একই সিস্টেম বুঝলে কিনা.... যত বেশি হাত ঘুরবে তত দাম বাড়বে। সারা দুনিয়া চলছে এইভাবে। তালে বুঝতেই পারছ সবচেয়ে বেশি লাভ করতে পারবে যদি একেবারে সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে মাল তুলতে পার ।কিন্তু রাস্তাটা তৈরি করাই শক্ত, বুঝলে সরকার.... একটা বনগাঁয়, একটা মসলন্দপুরে, দুটো বড় আবাদ আছে এ সাইডে.... তারপরে ধর দত্তপুকুর আর বামুনগাছিতেও ক্ষেতি আছে অনেক.... ‘
    কার্তিক পাল লাগাতার বকবক করে যেতে লাগল। এত মনোযোগী ছাত্র বোধহয় কোনদিন পায়নি সে। মনোরঞ্জন নিপাট ভালমানুষ বলেই বোধহয় তাকে এত পছন্দ কার্তিকের।সে আরও বলতে লাগল , ‘ আমার বাড়ি অবশ্য এ লাইনে না। আমি থাকি পানিহাটিতে— ওই ব্যারাকপুর লাইনে।এস না একদিন বৌ বাচ্চা নিয়ে।’
    মনোরঞ্জন অধৈর্য হয়ে উঠেছে। সে কোন কথা না বলে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ে শুধু।কার্তিক পাল বলছে রাস্তাটা তৈরি করাই শক্ত। কিন্তু রাস্তা তাকে তৈরি করতেই হবে। তার বৌ বাচ্চারা তো আছেই। কিন্তু তার মায়ের জীবন তো ফুরিয়ে আসছে।জীবনে কখনও সুখ পায়নি। বড় কষ্ট হয় মাঝেমাঝে মনোরঞ্জনের মনে।খুব চাপা স্বভাবের মানুষ সে। বুঝতে দেয় না কাউকে মনের ব্যথা। বাবা তো সেই কবে মারা গেছে। মায়ের মনে বড় আশা ছিল মনোরঞ্জন লেখাপড়া শিখে মানুষ হবে । কিন্তু কিছুই হল না সেসব। শেষে ট্রেনের হকার হয়ে গেল। যন্ত্রনা কুরে কুরে খায় বুকের ভেতর। এখন দুটো পয়সা যদি করতে পারে তা’লেও খানিকটা হয়.....

    ়়়়়়়়়়়়়়়়়়়

    মহাদেববাবু নিজের শোওয়ার ঘরে বসে একটা বই পড়ছিলেন। এটা অবশ্য কোন বিজ্ঞান সম্পর্কিত কোন বই নয়। জর্জ অরওয়েলের লেখা উপন্যাস ‘নাইন্টিন এইট্টি ফোর’ । এখন রাত প্রায় বারোটা।এতে আছে একচ্ছত্রবাদী ও দমনমূলক শাসনযন্ত্রে কিভাবে প্রতিটি নাগরিকের ওপর নজর রাখা হয়। পড়তে পড়তে তার হঠাৎ মনে পড়ল গত সপ্তাহে একটা বিদেশী ম্যাগাজিনে রোবট চরপক্ষী বা ড্রোন-এর কথা পড়েছিলেন। চিন সরকার এদের নাম দিয়েছে ‘ডাভ ‘। এই ঝাঁক ঝাঁক ড্রোনের কাজ আকাশ থেকে চিনের উত্তর পশ্চিম প্রান্ত শিনজিয়াং-এ বসবাসকারী তুর্কিজাত জনগোষ্ঠী উইঘুরদের ওপর নজরদারি করা।
    মহাদেববাবুর চিন্তাটা অবশ্য রাষ্ট্রিয় নজরদারি সংক্রান্ত বিষয়ে নয় । ভাবানাটা ড্রোনের প্রযুক্তি নিয়ে।ড্রোন সিস্টেমের মেরুদন্ড হল ‘ওয়াইফাই স্নিফার’ বা এক ধরণের যান্ত্রিক কুকুর।এই প্রযুক্তি কে কোন ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া দেখছে, কাকে ই-মেল বা অন্য কোন মেসেজ পাঠানো হচ্ছে, কোন ই-কমার্স সাইটে কি কেনা হচ্ছে, তার সুলুকসন্ধান দেয়। একে বলে ‘ ইন্টিগ্রেটেড জয়েন্ট অপারেশনস প্ল্যাটফর্ম ‘ বা আইজপ। এটা একটা ‘আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স’।
    এই ‘আইজপ’ ব্যাপারটা মহাদেববাবুর মাথা ঘামানোর বিষয়বস্তু নয়। তাঁর ভাবনা পাক খেতে লাগল ড্রোন প্রযুক্তিতত্ত্বের কেন্দ্রীয় প্রয়োগকৌশল নিয়ে এবং ভাবনার মূলকেন্দ্রে অবশ্যই—ত্রিকাল।
    পরদিন সকালে তেঁতুলতলায় বসে চা খেতে খেতে দীনবন্ধুর কাছে কথাটা পেড়ে ফেললেন।ব্যাপারটা শোনামাত্র দীনবন্ধুর চোখমুখ আগ্রহ ও উৎসাহে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
    — ‘ যদি সাকসেসফুল হই দারুণ ব্যাপার হবে। ত্রিকালের অ্যাকটিভিটি তাহলে লোকাল এরিয়া বাউন্ড হয়ে থাকবে না।’ দীনবন্ধু মতামত প্রকাশ করেন।
    মহাদেববাবুর উৎসাহ আরো বেড়ে যায়— ‘ ঠি ক বলেছ ।ডিভাইসটা শেপ দিতে পারলে একটা কাজের কাজ হয়। কিন্তু খরচের ধাক্কা সামলানো যাবে ? অনেক টাকার ব্যাপার....’
    দীনবন্ধু এতটুকু দমে না।
    — ‘ কিচ্ছু খরচ হবে না।এসব পার্টস এখন ইন্ডিয়াতেই অ্যাভেলেবল। অামার এক ছাত্র আছে শ্রীহরিকোটায়। ওকে বলব স্ক্র্যাপ ফ্র্যাগমেন্টস পাঠাতে। অ্যাসেম্বলিং আমাদের করে নিতে হবে। আগে তো টেস্ট করে দেখি।ত্রিকাল যদি অ্যাসিমিলেট করে নেয় তাহলে সহজে হয়ে যাবে ব্যাপারটা।তখন নয় নতুন টি ট বিটের কথা ভাবা যাবে। আর ওগুলো দিয়ে প্রোগ্রামিং যদি সেট ইন না করে তাহলে তো আর এগোনই যাবে না।’
    মহাদেব মাথা নেড়ে বলেন,
    ‘ঠি ক ঠি ক.... ‘

    সৌভাগ্যক্রমে টেস্টিং স্ক্র্যাপ ত্রিকাল হজম করে নিল মাসখানেক ধরে দীনবন্ধু এবং মহাদেবের দিবারাত্র পাগলের মতো পরিশ্রমের পর।অনুপমা ব্যতিব্যস্ত । তার নাওয়া খাওয়া মাথায় উঠেছে দুই ক্ষ্যাপাকে সামলাতে সামলাতে।স্কুলে হাজিরা দেওয়াটা কোনরকমে বজায় রেখেছে।
    মহাদেববাবুরা সিদ্ধান্ত নিলেন আপাতত এতেই কাজ চালাক ত্রিকাল।পরে ত্রিকালের কোন অতিরিক্ত ধকল বা সমস্যা দেখা দিলে বিদেশ থেকে নতুন ডিভাইস সেগমেন্ট আনা হবে।টাকা জোগাড়ের চিন্তা ভাবনা করা হবে তখন।
    মহাদেব আর দীনবন্ধু মিলে নতুন কি ঢোকালেন ত্রিকালের শরীরে ?
    সে এখন ড্রোনের মতো পাহারা দিতে পারবে মাটি থেকে অনেক ওপরে উঠে গিয়ে। ঠি ক পায়রার মতো। সে বাতাসে ভাসবে প্রয়োজন বুঝলেই। অপ্রয়োজনে নয়। ঘটনার অকুস্থলে নেমে যেতে পারবে সে পরিস্থিতি সামলাবার জন্য। কুড়ি কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সীমিত তার গতিবিধি।
    বর্ষা এখনও ঘুরে ফিরে আসছে। গতকাল জন্মাষ্টমী গেল।মফস্বলের দিকে শেষ রাত্তিরে গা বেশ শিরশির করে শরীরে কিছু না জড়ালে। বেলা গুটিয়ে খাটো হয়ে গেছে। বিকেলটা তেমন চোখে দেখা যায় না। তড়িঘড়ি ধূসর হয়ে যায় বেলা।

    সরস্বতী চিরকাল যা বলে এসেছেন তাই বলেন ছেলেকে—‘ওরে মনা, জোলো হাওয়া দিচ্ছে.... গায়ে কিছু দে...খালি গায়ে থাকিস না ‘। মনোরঞ্জন অন্য সময়ে হলে সরস্বতীর কথায় কর্ণপাত করত না। নি:সহায় বুড়ির কথার আর কি দাম আছে ! বলছে বলুক । সরস্বতীরা তবু নাছোড় বেড়ালের মতো বলেই যেতে থাকে জনমভর। তবে, আজকে তার কথা হেলায় হেলায় ফেলা গেল না। কারণ, মনোরঞ্জনের মেজাজ এখন প্রসন্ন আছে। মায়ের কথা অমান্য করল না।সে বিনা বাক্যব্যয়ে একটা জামা গলিয়ে নিল।
    গুমা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিল মনোরঞ্জন। দশটা তেত্রিশের ডাউন বনগাঁ লোকাল ধরবে। অফিস টাইম।সাঙ্ঘাতিক ভিড় হয় এই সময়ে।চায়ের দোকানে একজন অফিসযাত্রী বলল—দক্ষিন আমেরিকায় অ্যামাজন ফরেস্টে আগুন লেগেছে। পুড়ে যাচ্ছে সাতদিন ধরে।গাছপালা পুড়ছে, হাজার হাজার পশুপাখি পুড়ে মরছে। সারা পৃথিবীকে অক্সিজেন জোগায় অ্যামাজন। আমাদের সবাইয়ের বিরাট বিপদ । অক্সিজেন না পেলে আমরা বাঁচব কি করে ? সবাই শেষ হয়ে যাব....’। আরো তিনজন অফিসবাবু তার কথায় সায় দিল।একজন বলল, ‘ সংকট, বড় সংকট আমাদের সামনে।সবই জি-সেভেনের পাওয়ারফুলদের খেলা। নাটের গুরু তারাই । ব্রেজিল ট্রেজিল কোন ব্যাপার নয়... ‘
    আর এক বাবু বললেন, ‘ কিন্তু ব্রেজিলের প্রেসিডেন্ট তো দক্ষিণপন্থী স্বৈরাচারী.....অনেকদিন ধরেই তো অ্যামাজন ধ্বংস চলছে.... ‘।
    মনোরঞ্জন কোনদিন অ্যামাজন বা জি-সেভেন-এর নাম শোনেনি।ফুটবলের খবর রাখে বলে ব্রেজিলের নাম জানে। কলম্বিয়া, বলিভিয়া,আর্জেন্টিনার নামও শুনেছে। ফুটবলের জন্য। সে ভাবল, কার্তিক পাল কি অ্যামাজনের নাম শুনেছে ? গোবরডাঙার ফড়েদের খবর তার নখদর্পনে।কোলে মার্কেটে সে কবে পাটার ব্যবস্থা করতে পারবে কে জানে।
    অাগের বাবু বললেন, ‘ ...চক্রবর্তীদা.... সিগন্যাল হয়ে গেছে....গাড়ি ঢুকছে।’
    ওরা কাঁধের ব্যাগ সামলে প্যাসেন্জারে টইটুম্বুর বনগাঁ লোকাল-এর কামরায় ঝাঁপ মারার জন্য পজিশন নিল।
    মনোরঞ্জন এই টাইমের গাড়িটা ধরে শিয়ালদায় পৌঁছবার জন্য। রিটার্ন ট্রেনে বেচাকেনা হয় তার মালের। যাবার সময়ে এই ঠাসা ভিড়ে কে আর খেলনা কিনবে। আরো তিনটে ট্রি প দেয় সে আপ ডাউন মিলিয়ে। বিক্রিবাটা দেখে সে ভালই বুঝতে পারে যে এসব জিনিস এখন আর গ্রামেও চলে না। তার পরিবারের কথা ভেবে তার খুব খারাপ লাগে। চারপাশে এত টাকা ছড়ানো রয়েছে... সে ধরতে পারছে না। তার মায়ের জীবন তো শেষ হয়ে আসছে। একটা ভাল খাট বানাবার খুব শখ ছিল মায়ের । মনোরঞ্জন আজও তা করে উঠতে পারেনি। বড় গ্লানি আসে তার মনে।

    এর মধ্যে একদিন কোলে মার্কেটে গিয়ে কার্তিক পালের সঙ্গে দেখা করল। কার্তিক বলল, ‘ তুমি এক কাজ কর। পুজোর তো আর কদিন বাকি। মহালয়ার দিন কাজ শুরু কর। শুভ দিন....। আমার পাটার নীচে বেগুন আর মুলো ফেল এখন। কদিন বাদে কপি উঠলে কপি ফেলবে। টাকার জন্য ভেব না এখন। বউনি লপ্তের মাল আমি দেব। পরে কারবার জমলে আস্তে আস্তে দিয়ে দিও আমাকে।’
    কৃতজ্ঞতায় জল এসে গেল মনোরঞ্জনের চোখে। সে কোনরকমে বলল, ‘ আপনার উপকার আমি কোনদিন ভুলব না... ‘
    — ‘ না না,এতে উপকারের কি আছে ? তোমার কারবার তোমার খাটনিতে দাঁড়াবে । আমি কে ? হ্যাঁ, প্রথম দিকটা একটু ধরিয়ে দিচ্ছি শুধু , কেন জানি না তোমাকে দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে প্রথম দিন থেকেই তাই .... সে যাক,তোমরা পরিবারের সবাই এস একদিন আমার বাড়িতে । ওই পেনেটিতে ...।’

    রাত্তিরে খাওয়ার সময়ে পরিবারের সব সদস্যদের কাছে কার্তিক পাল সম্পর্কিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা খুলে বলল মনোরঞ্জন। মৌসুমী এবং সরস্বতীর মুখে সুদূর শূন্য থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে অনুপম এক খুশির আলো মাখামাখি হয়ে দেল। সরস্বতী দুহাত জড়ো করে কপালে ঠেকালেন। গভীর আবেগের সঙ্গে তার মুখ থেকে উৎসারিত হল— ‘জানিস মনা আমি জানতাম ভগবান ঠি ক একদিন আমাদের দিকে মুখ তুলে চাইবেন। আমরা তো কোনদিন কাউকে ঠকাইনি.... ‘
    অাবার একবার মনোরঞ্জনের চোখ ভারী হয়ে উঠল। কাউকে বুঝতে না দিয়ে সে তাড়াতাড়ি উঠে গেল অাঁচাতে। সাংসারিক যাঁতাকলের চাপে সে যতই রুক্ষ শুষ্ক দুর্মুখ হয়ে উঠুক তার আপনজনেদের খুশিমাখা মুখগুলো দেখার স্বপ্ন অবিশ্রাম্ত বয়ে বেড়ায় মনের অতল কোনে।
    মায়ের শোবার জন্য একটা খাট বানাবার চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরেফিরে আসতে লাগল। অগ্রদূত পল্লীতে সুকুমারের দোকানে কথা বলে খরচার হিসেবটা নিতে হবে দু একদিনের মধ্যে।
    ়়়়়়়়়়়়়়়়়়়

    কার্তিক পালের শত্রু অনেক। শুধু বনগাঁ লাইনের ক্ষেতি আবাদে নয়, পানিহাটিতেও। পাকাপোক্ত ব্যবসায়ী হলেও মাঝে মাঝে বড্ড মাথাগরম করে ফেলে। এত স্পষ্টবক্তারা নিজেদের বিপদ আমন্ত্রণ করে আনে। সে বেশ কিছু ফড়ের ভীষণ রকম চক্ষুশূল। তাদের অনেকেই রাজনৈতিক কম্বলে মোড়া এবং বিষধর। কাকে কখন ছোবল মারে কে জানে। ‘আমার না আছে বিবি ছাওয়াল, না আছে কেউ। আমি মরে গেলে কাঁদবার কেউ নেই। আমি হক কথা বলবই। দিনেমানে চোখের সামনে, নাকের ডগায় পুকুর চুরি হচ্ছে। বলব না মানে !’ কার্তিক রাগে ফুঁসতে থাকে প্রায়শই।

    রাত্রিবেলা প্রাইমারি স্কুলের বারান্দায় আবছা আলোয় বসে নেশা করে ওরা। মদ গাঁজা সব চলে। ওদের ভয়ে সন্ধের পরে কেউ যাতায়াত করে না স্কুলের সামনের রাস্তাটা দিয়ে, মেয়েদের কথা তো বাদই দেওয়া গেল( বয়সের কোন বাছবিচার নেই ) ।ওপরতলায় এদের ঈশ্বর আছে কেউ। মনে হয় তার ভরসাতেই যা খুশি তাই করে।’পুকুর চুরি’ এদের হক। ধান বিক্রি হোক বা ফড়েগিরি হোক এদের ডিঙিয়ে কোন কিছু হবার যো নেই। কার্তিক পালের ওপর এদের প্রচুর রাগ। গত মাসে পঞ্চায়েতের মিটিং-এ বহুৎ ঘোঁট পাকিয়েছিল সরকারি দামে ধান কেনার হিসেব দাখিল নিয়ে। শালা থাকে পেনেটিতে এ লাইনে এসে বাওয়াল করছে। শঙ্কর কাবাসি প্রতাপ ঘোষকে বলে, ‘মালটাকে দে না উড়িয়ে..... আমাদের করে খেতে দেবে না দেখছি..... ছেলেধরা বলে একদিন...কেউ কিছু সন্দেহ করবে না....’
    প্রতাপ দাড়ি চুলকোতে চুলকোতে বলে, ‘হ্যাঁ, সেটাই ভাবছি.... সঙ্গে আর একটা মাল জুটেছে দেখলাম সেদিন.... খবর পেলাম গুমায় থাকে....ওটাকেও ভাবছি একদিন....’
    শুনে শিউরে ওঠে বাসুদেব পাল। সে এদের মধ্যে একটু নরম ধাঁচের। সে ওখান থেকে উঠে আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে চলে যায়।
    ়়়়়়়়়়়়়়়়়়

    স্কুলের পাশের রাস্তায় জোড়া কদম গাছ। কদম গাছের তলা দিয়ে হেঁটে স্কুলের সামনের মাঠটায় পড়ল মনোরঞ্জন । মাঠটা পার হয়ে আরো মিনিট দশেক হাঁটলে আবাদে গিয়ে পৌঁছন যাবে। কার্তিক পাল ওখানে তার জন্য অপেক্ষা করবে বলেছে। সে চাষীদের থেকে সরাসরি মাল তোলার লাইনটা ধরিয়ে দিতে চায় মনোরঞ্জনকে। দুপুর প্রায় দেড়টা এখন। আকাশ মেঘলা। রোদ্দুরের তেমন তেজ নেই। মনোরঞ্জন কিন্তু একটানা হাঁটতে হাঁটতে গলদঘর্ম হতে লাগল। প্রাইমারি স্কুল থেকে বাচ্চাদের কলকাকলি শোনা যাচ্ছে। জানলা দিয়ে একজন মাস্টারমশায়কে দেখা যাচ্ছে । কি একটা খাতা জমা নিচ্ছেন। স্কুলের আর একটা ঘর থেকে এক ভদ্রলোক তড়িঘড়ি বেরিয়ে এসে মাঠ পেরিয়ে কদমতলায় গিয়ে প্যান্টের চেন খুলে দাঁড়ালেন। স্কুলে বোধহয় কোন প্রস্রাবাগার নেই। এমন সময় তিন চারটে লোক স্কুল ঘরের পেছন দিক থেকে হইহই করতে করতে বেরিয়ে এল।
    শোনা গেল, ‘ এ..ই ধর ধর ....ধর শালাকে...ছেলেধরা...ছেলেধরা..’
    মনোরঞ্জন চমকে গিয়ে ঘুরে তাকাল। দেখল তিন চারটে লোক ছুটে আসছে তার দিকে। সে কিছুই বুঝতে পারল না ব্যাপারটা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। তার মাথায় এতক্ষণ ঘুরছিল মায়ের জন্য একটা খাট বানাবার চিন্তা। পুজো আসছে। ছেলেমেয়েগুলো.... মৌসুমির জন্য কিছু কেনাকাটা...ভাবনা ঘুরছিল ঘুরেফিরে।
    গনগনে আগুনে চোখ নিয়ে ছুটে এল লোকগুলো। একজন মনোরঞ্জনের বুকে ধাক্কা মারল।হতচকিত ভয়ার্ত মনোরঞ্জন পড়ে গেল মাটিতে। আর একজন চুলের মুঠি ধরে তাকে দাঁড় করিয়ে মাথা ঝাঁকাতে লাগল— ‘বল শালা কতদিন ধরে এসব করছিস... বল শালা বল....’
    ভয়ংকর বিষ্ময়ে ভয়ে মনোরঞ্জনের জিভ জড়িয়ে গেল।কোন আওয়াজ বেরল না তার মুখ দিয়ে। প্রচন্ড গোলমাল শুনে স্কুলের বাচ্চারা তাদের শিক্ষকসমেত হুড়মুড় করে বেরিয়ে এসেছে।ভিড়ের মধ্যে কে যেন বলল, ‘ মেরে দে শালাকে .... ফিনিশ করে দে... একেবারে ফিনিশ....’
    একজন বলল, ‘ বাঁধ বাঁধ ... ওই কদম গাছটার সঙ্গে বাঁধ আগে...তারপর খেলা দেখাচ্ছি...একটা লোহার রড নিয়ে আয় ক্লাবঘর থেকে।’
    বলিপ্রদত্ত ভয়ার্ত অজশিশুর মতো মনোরঞ্জনের মুখ থেকে মৃদুস্বরে দুটো শব্দ বেরল— ‘আমি তো কার্তিক পালের সঙ্গে....’
    প্রবল হট্টগোলে তার মৃদুস্বর চাপা পড়ে গেল। প্রতাপ ঘোষ মনোরঞ্জনের দু হাত পেছন দিকে করে বেঁধে ফেলল। তাকে ধাক্কা মারতে মারতে টেনে নিয়ে যেতে লাগল জোড়াকদম গাছের দিকে।মনোরঞ্জনের চোখের ওপর ভেসে উঠল তার মা সরস্বতীর প্রত্যাশাভরা সংসারের জোয়াল টানা মুখ। ইঁট বার করা রাস্তায় ঘসটাতে লাগল তার পা। মনোরঞ্জনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তিনজনে মিলে স্থির বধ্যভূমির দিকে। বাকি লোকজন দর্শক। তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভয়ংকর রোমাঞ্চক দৃশ্যের লাইভ শো উপভোগ করতে লাগল।

    ঠিক এই সময়ে ধাক্কা খেল ত্রিকালের ড্রোন সার্কিট। দুপুর দুটো বেজে সাত মিনিটে। কুড়ি কিলোমিটার ব্যাসার্ধ তার আয়ত্ত্বাধীন। স্পার্ক লাগল সেনসরি কনডুইটে।
    কদমগাছের গুঁড়ির কাছে যখন মনোরঞ্জনকে বাঁধা হচ্ছে ( দড়ি দড়া সব তৈরি ছিল ) আকাশের পশ্চিম কোনে বহুদূরে একটা পিঙ্গল বিন্দু দেখা দিল। ঘন্টায় একশো কিলোমিটার গতিতে সঠিক নিশানায় ঠি ক বাজপাখির মতো উজ্জ্বল বাতাস কেটে উড়ে আসতে লাগল মহাদেববাবুর ত্রিকাল।কেউ খেয়ালই করল না।
    চারফুট ওপর থেকে প্রবল ঝাপটা মারল। ছিটকে গেল জোয়ান মরদেরা। মনোরঞ্জনকে ঘিরে বৃত্তাকারে পাক খেতে লাগল ড্রোনরূপী ত্রিকাল। প্রতাপ ঘোষেরা মাটিতে পড়ে আছে ঝাপটের অভিঘাতে দলা পাকিয়ে গিয়ে। স্কুলের ছেলেপুলে, শিক্ষকদ্বয় এবং জমায়েতের বীরপুরুষ লোকজন অজানা আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে ছুটে পালাতে লাগল।
    ত্রিকাল মাটিতে নেমে মনোরঞ্জনকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে
    আবার উড়ে গেল আকাশে—আবাদের দিকে যেখানে কার্তিক পাল অপেক্ষা করে আছে আড়ায় বসে।
    সরস্বতী এবং মৌসুমী তখন ঘরদোরের কাজ সেরে মধ্যাহ্নভোজনে বসেছে।
    মহাদেব এখন তার আর্মচেয়ারে বসে। একটু ঝিমুনি লেগেছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ১০ মার্চ ২০২০ ২৩:০৮91380
  • আপনার কোনো লেখাই আর পড়বো না, হোক সে মহাকাব্য, ইত্যাদি।

    কপি-পেস্ট লেখা দিয়ে আবারো ব্লগিং করেন কোন মুখে? সাইবার স্পেসের কী গুচ্ছের অপচয়!

    মাফ করবেন।

    এপারে আমাদের সিরাজগঞ্জের গ্রাম্য ভাষা, নেহাতই ইতরজনের কথায় বলে, “বেহায়ার পাছা দিয়া গাছ হইলে নাকি খুশী হয়, বলে, আমার ছায়া হইছে!“  

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন