এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • হিংসার গেরস্থালি ডালপালা মেলছেঃ তবু আমাদের নির্লজ্জ নীরবতা পক্ষাঘাতে অসার!!

    সৈকত মিস্ত্রী
    অন্যান্য | ০৩ মার্চ ২০২০ | ১৩৪৩ বার পঠিত
  • হিংসার গেরস্থালি ডালপালা মেলছেঃ তবু আমাদের নির্লজ্জ নীরবতা পক্ষাঘাতে অসার!!
    খুব বিস্মিত হয়েছিলাম।অসহায় লাগছিল।আমারই এক প্রাক্তন সহকর্মী, ভদ্রলোক মুসলিম, ইংরেজি পড়ান।সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন - নরেন্দ্র মোদীর দপ্তরে তথ্যের অধিকার আইনে প্রশ্ন করেছিলেন শুভকর সরকার।দপ্তর সূত্রে উত্তর ছিল ১৯৫৫ সালের নাগরিক আইনের ৩ নম্বর ধারায় বলা আছে জন্মসূত্রে মোদী ভারতীয়।আলাদা কাগজ দরকার নেই। তার পরই আমার পূর্ব বর্তী একটি প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্র অমোঘ প্রশ্ন করে -"স্যার রাতে ঘুম হচ্ছে না? " বিস্মিত হলাম।তার চেয়েও ভিতরে ভিতরে রক্তক্ষরণ বোধ করেছি।কোথায় পৌঁছে গেছি আমরা? এক ছাত্র তার ভিন্নধর্মের শিক্ষকের প্রতি ছুঁড়ে দিতে পারে এমন শ্লেষ আর বিদ্রুপাত্মক প্রশ্ন। এর জবাবে বেশি কিছু বলতে পারিনি,চুপ করে থেকেছি। শুধু এটুকু প্রার্থনা করেছি,অনুরোধ করেছি -" সব বিদ্বেষ ঘুচে যাক, তোমার অন্তর নির্মল হোক।"
    আচার্য দেব ভবঃ। এই পথ আমরা পার করেছি বহুকাল।দলতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে শিক্ষকও একদিন দলের কান কাটা, হাত কাটাদের সারণীতে ঠাঁই পেয়েছে।তার শিক্ষক পরিচিতি ঘুচে বড় হয়েছে -" দলের লোক"। এই চর্চা স্বাধীনতার পর দশকের পর দশক ধরে দেশের প্রান্তে প্রান্তে চলেছে।আমার এক মাস্টারমশাই এক খ্যাতনামা অধ্যাপককে খুব ব্যাথার সাথে বলতে শুনেছি -" আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল, যার গ্রামে মোড়ল বৃত্তি করার কথা,তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াতে ঢুকিয়েছি।" তার বিষময় ফল ফলতে শুরু করেছিল, আজও ফলছে।
    তবে এগুলো অন্যতর মাত্রা।শিক্ষা মান তলানিতে গেছে।তবে বৃহত্তর সামাজিক পরিসরে জাত- পাতের বিদ্বেষ ছড়ায়নি।অন্তত এরাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্দরে একেবারে জাতিবিদ্বেষ ছিল না তা নয়।বিক্ষিপ্ত ভাবে অনুশীলন চলেছে,কোন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। তার এমন সংক্রমণ ব্যধি আমার চোখে পড়েনি।
    হয়ত চুনি কোটালের কথা কেউ বলতেই পারেন।বলাটাও স্বাভাবিক। নিম্নবর্গের শিক্ষকের প্রতি বৈষম্য, কটুক্তি সবই ছিল।তবে তার বাইরে আরও একটা ছবি সদা উজ্জ্বল থেকেছে।যার আলোয় আমরা এতদিন পথ হেঁটেছিলাম।সৌভ্রাতৃত্বের,বন্ধুত্বরের,সহযোগিতার সম্পর্ক।শিক্ষার নিচু স্তরে বিদ্বেষটা চোখে পড়েনি খুব একটা।তবে বর্তমানে উচ্চশিক্ষার স্তর থেকে হিংসা, বিদ্বেষ নেমেছে নিচু স্তরে।ছড়িয়ে যাচ্ছে।
    কয়েকদিন আগে আমার শহরের একটি নামকরা স্কুলের দুটি ছাত্রের সাথে কথা বলছিলাম।তারা ফাইভে পড়ে।১৪ তারিখ, পুলওয়ামায় গত বছর যে হামলা হয়েছিল,যার তদন্ত কেন্দ্রীয় সরকার আজও করল না, তাই নিয়ে ওরা বলছিল।একজন সাবলীলভাবে জবাব দিল -" জানো আজ পুলওয়ামা দিন।পাকিস্তান সেনাদের মেরেছে।পাকিস্তানে মুসলিম।ওরা ভালো না।" পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম - ওখানে সবাই খারাপ? যে ছাত্রটি ওখানের কোন স্কুলে ফাইভে পড়ছে সেও খারাপ? বাচ্চাটির দাদু একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল ও জানিয়েছিল।যখন বলেছিলাম, ওখানে যে দাদু হাসপাতালে, অসুস্থ সেও কি খারাপ? কোন উত্তর সে খুঁজে পায়নি।চুপ করেছিল।জানি কথাটার উত্তর না দিতে পারলেও মেনে নিতে পারেনি।
    আজ যখন বহুকাল আগের ছাত্রটি বিদ্বেষের বিষ নিয়ে উঠে এসে আক্রমণ করে তারই ভিন্ন ধর্মের শিক্ষককে তখন অবাক লাগে।
    ভদ্রলোক মুসলিম।নিয়মিত নামাজ পড়েন।কুসংস্কার থেকে বের হতে পারেননি।তার বাড়ি গিয়েছি,খেয়েছি,কারণ খাদ্যে আমার বাছবিচার নেই।তিনি মুসলিম হয়েই হয়ত থাকতে চান।আমার ব্যক্তিগত ভাবে আপত্তি আছে।হিন্দু মুসলিম না হয়ে আমরা মানুষ হলে বড় ভালো হতো। সে একান্ত নিজস্ব ভাবনা। তিনি থাকুন তার মতো। বিশ্বাসী,না বিশ্বাসী থাকুন তার তার পরিসরে।কিন্তু সকলকে এক হতে হবে, উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদীরা যে বিষের সাগর মন্থন করে বিষ তুলে আনছে - তাতে দরকার সহিষ্ণু, সতর্ক ভালোবাসা,বিশ্বাসের পরিসর।তা গড়তে না পারলে আগামি সময় আরও কুৎসিত দৃশ্য জন্ম হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।ঘৃণার কারবারিরা অনেক সফল।একথা সত্য।তবে শেষ সত্য নয়।ঘৃণার বাইরেও পরষ্পরের প্রতি হাত বাড়ানো আছে, ভরসা,ভালোবাসা ও বিশ্বাসের পরিসর টিকে আছে।এই বোধ অনর্নিশ জাড়িত করার সময় এসেছে।সন্ধ্যে হতে চলল।অন্ধকার ঢেকে দেবে চরাচর।সকালে সলতে না পাকলে বিকেলে আলো জ্বালবো কি ভাবে? দেরি হয়ে গেচে।এখনও সলতে না পাকানো শুরু করলে আলো নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপের শিখাটি জ্বালিয়ে দিতে পারব।তবে বেলা বেশি বাকি নেই।জলকে চল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • quark | 162.158.159.49 | ০৩ মার্চ ২০২০ ১০:১৭729820
  • আত্মীয়সমাগমে, অফিসে, বন্ধুদের আড্ডায় সর্বত্র, প্রতিনিয়ত এই বিদ্বেষের গনগনে আঁচ। নিজের মত ক'রে নেভানোর চেষ্টা ক'রি। আগত দিনের কথা আর পরের প্রজন্মের কথা ভেবে শঙ্কা হয়।
  • ঃ( | 162.158.159.89 | ০৩ মার্চ ২০২০ ১৭:২৬729823
  • আর ভাই ঃঃ( যেদিকপানে চাই, এই একই দশা!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন