এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অন্য যৌনতা

  • যে জন আছে মাঝখানে

    কৃষ্ণকলি রায় ও অন্বেষা ভট্টাচার্য লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্য যৌনতা | ৩০ আগস্ট ২০১০ | ১৭০২ বার পঠিত

  • উত্তর ভারতে যাঁদের পরিচয় হয় "লউণ্ডা' হিসেবে , দেশের অন্যত্র তাঁদের জীবনধারণ করতে হয় "কোঠি' বা হিজড়া হয়ে। দ: ভারতের এই কোঠি আর হিজড়েদের নিয়ে এই প্রতিবেদন, রইলো কিছু আত্মকথনও ।

    "জানেন ,আমার নাম শচীন। বয়েস তেইশ বছর। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চার দিদির পরে সবচেয়ে ছোট এই আমি। আমার বাবা মা আমাকে ছোট থেকেই মেয়ের মত দেখতেন। আর আমিও ছোটবেলা থেকে দিদিদের মত সাজগোজ করতে ভালোবাসতাম। মুখে পাউডার লাগাতাম, টিপ পরতাম। রান্নাঘরের কাজে মাকে সাহায্যও করতাম। আস্তে আস্তে দিদিদের সবার বিয়ে হয়ে গেলো। বাবা-মারও বয়েস বাড়লো। ঘরের সব কাজই তখন আমিই করতাম। পড়শীরা খ্যাপাতো। ডেকে বলতো "হ্যাঁ রে, তুই পুরুষমানুষের মত বাইরের কাজ করিসনা কেন রে?' কিম্বা "কিরে? তুই তো দেখি মেয়েদের মত সবসময় ঘরের কাজই করছিস!' কিন্তু "মেয়েদের মত' থাকতেই আমার ভালো লাগতো। বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করতে কেমন যেন লজ্জা লজা করতো। আত্মীয়স্বজনরাও কম কথা শোনায়নি। আমাকে বাড়ির বাইরে থেকে জল আনতে হত। জল নিয়ে রোজই ফেরার সময় নানা টিপ্পনি শুনতে হতো। কি খারাপ যে লাগতো! মনে হত লজ্জায় মাটিতে মিশে যাই। কখনো কখনো মনে হতো এর থেকে মরে যাওয়া ভালো। কিন্তু আমার বাবা মা কোনোদিন এ নিয়ে কিছু বলেননি। আমি ছাড়া কে আর কাজগুলো করবে, বলুন?

    শেষে এই লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য একদিন বাবা বললেন, বরং "গাঁয়ের বাইরে অন্য কোথাও গিয়ে কাজ খুঁজে নে'। কিন্তু কে আমাকে কাজ দেবে! আমি লিখতে পড়তে জানিনা, কোনোদিন ইশকুলে যাইনি। কে কাজ দেবে? সেই রাত্রে খুব কেঁদেছিলাম। মনে হয়েছিলো নিজের ছেলের থেকেও তাহলে বাবা মা-র কাছে লোকজন কী বললো সেটাই বড়? আর থাকতে না পেরে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু তাতে এমন বমি হতে লাগলো যে বাবা মা জেগে উঠলেন। আমাকে সেই রাত্রেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। ডাক্তারবাবুরা মরতে দিলেন না।

    তারপরে একদিন বাড়ি ছেড়ে চলেই যাবো ঠিক করলাম। একটা সুটকেসে গোটা পাঁচেক জামা কাপড়, আর জমানো পাঁচশোটা টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। চলে গেলাম তিরুপতি। সেখানে মন্দিরের বাইরে বসে সারা রাত কেঁদেছিলাম। পরদিন একজন ভদ্রলোক এসে জিগ্যেস করলেন ওখানে ওভাবে বসে আমি কাঁদছি কেন। তখন উনি আমাকে হিজড়াদের কথা বললেন। বললেন ওদের কাছে গিয়ে ওদের সঙ্গে থাকতে। এর আগে আমি হিজড়াদের কথা শুনিইনি।

    পরে আরেকদিন আমি মন্দিরের বাইরে বসেছিলাম, মুখে মেয়েদের মত সাজ। সেই দেখে একজন ভদ্রলোক আমায় ডেকে একটা হোটেলে নিয়ে গেলেন। শুয়েছিলাম ওঁর সাথে। ভদ্রলোক খুব ভালো ছিলেন। সেই বিকেলেই ওঁর বাড়ি ফিরে যাবার কথা। কিন্তু উনি পরদিন সকাল অব্দি হোটেলের ভাড়া দিয়ে আমায় বললেন রাতটা ওখানেই থেকে যেতে। আমাকে দু'শো টাকাও দিয়েছিলেন।

    ঘরটা সারা রাতের জন্য আমার নামেই ছিলো। তাই তখন বেরিয়ে গিয়ে পার্ক থেকে আরো দুজন ছেলেকে নিয়ে এসেছিলাম। তারাও আমার সাথে শুলো। ওরাও একশো টাকা করে দিয়েছিলো। সেই রাতে আমার মনে হয়েছিলো তাহলে আমি একেবারে অকেজো নই। এই করে অন্তত নিজেরটা নিজে তো চালিয়ে নিতে পারব?

    তিরুপতি থেকে ব্যাঙ্গালোরে চলে এলাম। ততদিনে কয়েকজন হিজড়ার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। ওদেরই একজন আমাকে হোসার রোডে একটা ডেয়ারীতে চাকরি জোগাড় করে দিলো। আট আট ঘন্টার তিনটে শিফট্‌ হয় সেখানে। আমার ছিলো রাত্রের শিফটের কাজ। কাজের সময়ে খুব পুরুষালী সেজে থাকার চেষ্টা করতাম। ছেলেদের মত করে হাঁটার, কথা বলার চেষ্টা করতাম। তবু কী করে যেন সবাই টের পেয়ে গেছিলো যে আমি আসলে মেয়েলী ধরণের। ডেয়ারীতে মাত্র একজনের সাথেই আমার বন্ধুত্ব হয়েছিলো। অবশ্য এমনি বন্ধুত্ব, কোনো শারীরিক ব্যাপার ছিলোনা। রাত্রের শিফটে অনেক সময়েই সবাই সার দিয়ে ছাদে শুয়ে ঘুমোতো। আমার বন্ধু একদিন আমাকে ওর পাশে শুতে ডাকলো। আমি প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ দেখি তিন চারজন মিলে আমার হাত দুটো মাটির সঙ্গে চেপে ধরেছো! তারপর একে একে ওরা সবাই আমার পেছন দিয়ে সেক্স করেছিলো। জোর জবরদস্তি। পরে জানতে পেরেছিলাম যে আমার ঐ বন্ধুটিই টাকা নিয়ে এসব করিয়েছে। পরের দিন ঘটনাটা জানাজানি হয়ে গেলো। কিন্তু ওদের কেউ কিছু বললোনা। মালিক উল্টে আমাকেই গালাগাল দিয়ে চাকরী থেকে ছাঁটাই করে দিলেন।

    আমাদের গাঁয়ের একজনের সাথে দেখা হয়ে গেছিলো। তিনিই আমাকে থাকতে দিলেন। কিন্তু একটা কাজ আর জোটাতে পারছিলামনা কিছুতেই। যেখানেই যাই লোকে হয় পড়াশোনা জানা লোক চায়, নয়তো দেখে কথাবার্তায় চৌকস কিনা। এর কোনোটাই তো আমার নেই। শেষে একটা অফিসে কাজ পেলাম। মালিকের একজন বেয়ারার দরকার ছিলো। এমন বেয়ারা যে ওঁর সাথে শুতে রাজী আছে। কাজটা নিলাম। কিন্তু ভালো লাগতোনা। এত কিছু করেও খুব কম মাইনে পেতাম। তখন ভাবলাম সেই লোকের সাথে শুতেই যখন হচ্ছে তখন ঐ পথেই পুরোপুরি যাই না কেন? তাই শুরু করলাম। যৌনকর্মীর কাজ। কিন্তু কাজটা খুব সহজ নয়। মেয়েদের মতো সেজেগুজে রাত্রে পার্কে কিম্বা রাস্তায় ঘুরতে দেখলেই পুলিশ লাঠির বাড়ি মারত। শেষে তো রাস্তায় হাঁটাতেই ভয় ধরে গেছিল। পরে আস্তে আস্তে অনেক কিছু শিখলাম। বুঝতে পারলাম যে রাস্তায়ঘাটে এমনি করে কাজ চালাতে গেলে হবে না। এমন কোনো জায়গায় যেতে হবে যেখানে কেউ দেখতে পাবে না।

    দিন কাটছিল। একদিন বাড়িতে ফোন করলাম। এতদিন পরে আমার গলা শুনে বাবা মা-র কী কান্না! বারবার করে আমায় দেখতে চাইছিলেন। কিন্তু আমি কী করে যাব! বাবা মা-র লজ্জার কারণেই তো বাড়ি ছেড়েছি। বাবা বলছিলেন দিনের বেলা না গিয়ে যদি রাত্রের অন্ধকারে বাড়ি যাই? তাই গেলাম। বহুদিন পরে বাবা মা-র সাথে দেখা। কি ভালো যে লাগছিল!

    পরের বার বাড়ি গিয়ে জানতে পারলাম যে বাবাদের কানে কেউ তুলেছে যে ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে আমি হিজড়া হয়ে গেছি। মা তো রীতিমতো জোরজার করতে লাগলেন যে আমায় দেখাতেই হবে যে কেউ খোজা করে দিয়েছে কিনা। শেষে মা-র সামনে আমায় প্যান্ট খুলতে হলো। কী লজ্জার ব্যপার! দেখে পরে মায়ের শান্তি হলো!

    আস্তে আস্তে দেখতে লাগলাম যে আমার সাথে বাড়ির লোকের ব্যবহার পাল্টে যাচ্ছে। আমি এখন রোজগার করি বলে সবাই অন্য চোখে দেখে। মা প্রায়ই আব্দার করেন "ফ্যান কিনে দে', "টেপরেকর্ডার কিনে দিবি?', "ওরে, এইবার একটা নতুন গ্যাস উনুন কেন না'। সব কেনার টাকা দিই আমি। দিদির বাচ্চাদের জন্যও গয়না নিয়ে যাই, খেলনাপাতি নিয়ে যাই।

    কিন্তু এই দেহব্যবসার কাজটা খুব সোজা নয়। খদ্দেররা অনেক সময় শোয়, সব করে, কিন্তু নিজেদের চাহিদা মিটে গেলেই পয়সাকড়ি না দিয়ে পালায়। একদিন পার্কে গেছি, একজন পুলিশের লোক এসে বললো ওর সাথে যেতে। আমি প'¡শ টাকা চেয়েছিলাম। কিন্তু সে কুড়ির বেশি দেবেনা। পুলিশের লোক তো, তাই ওতেই রাজী হলাম। কিন্তু যেই না তার মজা লোটা হয়ে গেল, সে উল্টোবাগে হাঁটা দিলো। কুড়ি টাকারও দেখা পেলামনা। আমি দৌড়ে তাকে ধরে বললাম যে টাকা না দিলে পুলিশে রিপোর্ট করবো। সে তো হেসেই অস্থির। প্রমাণ কোথায় যে এমনি হয়েছে? আমি কন্ডোমটা দেখলাম, গিঁট দিয়ে বাঁধা, ভেতরে ওরই বীর্য্য রয়েছে। কিন্তু সে নির্বিকার মুখে বললো যে এটা যে ওরই তা কে বিশ্বাস করবে?

    আরেকবার খুব খারাপ ব্যপার হয়েছিলো। একজন আমায় গাড়িতে করে রিং রোডে নিয়ে গেছিলো। সেখানে গাড়ি থামিয়ে একটা ঝোপের আড়ালে গেলাম। লোকটি দিব্যি ফুর্তি করে নিলো, নিয়ে বললো যে ও গাড়িতে গিয়ে বসছে। আমি যেন পাঁচ মিনিট পরে আসি, নাহলে লোকের সন্দেহ হবে। ওমা! আমি ঝোপ থেকে বেরোবার অগেই সে গাড়ি নিয়ে বেপাত্তা। টাকা তো গেলই, তারচেয়েও খারাপ হলো এই যে আমার শার্ট-প্যান্ট সব ঐ গাড়িতেই ছিলো। রোজ শরীর-ব্যবসা শেষ হলে আমি পোশাক পাল্টে ঐ পরে মেসে ফিরি। এখন এই রাত দশটায় রিং রোডের মধ্যিখানে এই মেয়েলী পোশাকে আমি কী করি! তারপর একজন পুলিশ কনস্টেবল কোথা থেকে এসে জুটল। আমি তো খুব ভয় পেয়েছিলাম এমনিতেই। এ লোকটা আমাকে টেনে আবার ঝোপের পেছনে নিয়ে গেছিলো। নিয়ে বলে "সব জামা কাপড় খোল।' আমি খুলতে না চাইলে কী হবে, লাঠির বাড়ি মেরে মেরে টেনে হিঁচড়ে খুলে ফেললো সব।ও দেখতে চাইছিলো আমার পুরুষাঙ্গ সোজা হতে পারে কিনা। আমি থরথর করে কাঁপছিলাম। আমার কাপড় চোপড় সব তার কাছে। আর মারের চোটে চোখেও অন্ধকার দেখছি। ওর পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলাম অনেক। একশো টাকা ঘুষও দিলাম যাতে আমায় ছেড়ে দেয়। কিন্তু তখন ওর শরীর জেগে উঠেছে। ও জোর করে আমার সাথে সেক্স করবেই। আমার কাছে আর একটাও কন্ডোম ছিলোনা, তাছাড়া পেছন দিক দিয়ে সেক্স করতে আমি কক্ষনো চাইনা। কিন্তু লোকটা এক হাতে আমার মুখ চেপে ধরলো যাতে চিৎকার করতে না পারি, তারপর জোর করে আমার পেছনে ওর পুরুষাঙ্গ ঢুকিয়ে দিলো। খুব বড়, আমার ভীষণ লাগছিলো। লোকটা বলছিলো "আরো কাঁদবি? আরো কাঁদবি? তাহলে আরো লাঠির বাড়ি খা'। মারছিলো আমাকে। তাতেও ওর মন ভরেনি, আমাকে এবারে বললো ঝুঁকে দাঁড়াতে, নিয়ে আবারো শুরু করলো। ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছিলাম। আমার পেছন দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিলো। শেষে আমার ওপর কাপড়চোপড় গুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, আমাকে ঝোপের মধ্যেই ফেলে রেখে ও চলে গেলো। তাও রক্ষে যে অন্তত কাপড়গুলো নিয়েই চলে যায়নি।

    আমি কোনমতে জামাকাপড় পরে রাস্তায় এলাম। খুব কষ্ট করে হাঁটছিলাম। কিন্তু কষ্টের তখনও আরো বাকি ছিলো। একটা টুরিস্ট ভ্যান হঠাৎ আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। তাতে জনা সাতেক লোক। দুজন ঘুমোচ্ছে। বাকিরা মদ খাচ্ছে,সিগারেট টানছে। ওরা জোর করে আমাকে গাড়িতে তুলে নিলো। একজন চেপে ধরে আমার মুখের মধ্যে মদ ঢেলে দিলো। একজন সিগারেট গুঁজে দিলো। আমার খানিকটা নেশা হয়ে গেছিলো। বাধা দেবো কী! একজন একটা খালি বোতল গাড়ির দরজায় ঠুকে ভেঙে ফেললো। এবার ঐ ভাঙা বোতল দিয়ে আমার হাতটা ঠেসে ধরলো। উ: সে যে কী ব্যথা, কী ব্যথা! রক্তে আমার হাত ভেসে যাচ্ছিলো। এখনও আমার হাতে ঐ দাগ রয়েছে।

    লোকগুলো এবার আমার সাথে সেক্স করতে চাইছিল। আমার শরীরে তখন আর এক ফোঁটাও শক্তি নেই। বাধা দিতেও পারছিলাম না। তার ওপর ওরা এতগুলো লোক। আমি রাগে, ব্যথায় চিৎকার করে বললাম "তাই করো, তোমাদের যা ইচ্ছে করো। আমি আর পারছি না'। ওরা একটা মাঠে গাড়ি থামিয়ে আমায় টেনে নামাল। কেউ আমার মুখে পুরুষাঙ্গ পুরে দিচ্ছিল, কেউ পেছনে। ওরা সব্বাই একে একে সেক্স করল। কখনো কখনো এক সাথে দুজন করে করছিল। আমার তখন আর বাধা দেবারও শক্তি নেই। আমি আচ্ছন্নের মত পড়ে ছিলাম। কখন যে জানোয়ারগুলো ছেঁড়াছেঁড়ি শেষ করে আমাকে ফেলে দিয়ে চলে গেছে বুঝতেও পারিনি। যখন "¡ন এল, দেখি ভোর হয়ে এসেছে। মনে হয় পাঁচটা বাজে। কোনমতে নিজেকে টেনে, কাছেই একজন চেনা হিজড়া থাকত তার বাড়ি গেলাম। সে তাড়াতাড়ি আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল। কাটাছেঁড়াগুলো পরিষ্কার করে ওষুধ লাগাল। ও-ই পরে আমায় হাসপাতালেও নিয়ে গেছিল।

    এই এক রাত্রের ঘটনায় আমার খুব শিক্ষা হয়েছিলো।এরপর থেকে আমি এমনি সময়ে কক্ষণো আর মেয়েদের সাজপোশাক করি না। শুধু হিজড়াদের কোনো অনুষ্ঠান হলে সাজি।

    তারপরেও অনেক দিন কাটিয়ে ফেলেছি। কোঠিদের,অন্য হিজড়া যৌনকর্মীদের যখন সাহায্য করি, এই যেসব শিক্ষা আমি নিজে পেয়েছি তা ওদেরও শিখিয়ে দিই। এখন আর কোনো ভগবানে আমার বিশ্বাস নেই। হিন্দুও না ,মুসলমানও না। কোন ভগবান আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বলুন? আমার তো নিজের এই দুটো হাত আর এই শরীর দিয়েই করে খেতে হবে। তাহলে ভগবানে বিশ্বাস করে আর কী লাভ,বলুন তো?'

    এই শচীনের মতই রয়েছে আরো অনেক কোঠি, হিজড়েদের কথা, PUCL এর Human Rights Violations against the Transgende Community বইটিতে । যেমন, রুমা (২৫) ,সে একজন কোঠি। প্রথমে সে হিজড়া বা কোঠি দলের বাইরেই ছিল। কিন্তু এই বাইরের সমাজে তাকে দিনের পর দিন সহ্য করতে হতো নানা অপমান ও তিরস্কার। তাই জীবন ও জীবিকার দরকারে সে এসে একদিন ভিড়ল যৌন কর্মীদের দলে, অন্তত নিজের মত করে বাঁচার স্বাধীনতাটা সে পেল। রুমা কে দেখে রূপা অনুপ্রাণিত হলো। প্যান্ট শার্ট পরিত্যাগ করে শাড়ি ধরল। আর ভুলেও সে পরতে পারল না পুরোনো পোশাক। চলে গেল নিষিদ্ধপল্লীতে। যেখানে সে থাকতে পারল নারীর বেশে নিশ্চিন্তে। তার স্বীকারোক্তি, সে এটাকে আর ছাড়তে পারছে না শুধু এই বেঁচে থাকার লোভে।

    রানী কাজ করত একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। সে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। অপারেশন করিয়ে সে হিজড়া হয়। তারপর নিজের কর্মস্থলে সে আর যেতে পারেনি। রোজগারের ধান্দায় যৌন কর্ম শিখে এখন তাই দিয়ে জীবন ধারণ করে। এ কাজটাকে সে অন্য সাধারণ জীবিকার মতই দেখে।

    চাঁদনিকে তার স্বামী কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলে হিজড়া হবার অপরাধে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামেন ব্যাঙ্গালোরের হিজড়ারা। মিছিল কিছুটা এগোনোর পর তারা মুখ থেকে খুলে ফেলে তাদের মুখোশ। তার ভাষা ছিলো একটাই- হ্যাঁ আমরা হিজড়া, আমরা কোঠি, আমরা এই পরিচয় উন্মুক্ত করতে চাই, আমরা বাঁচতে চাই আর পাঁচটা মানুষের মতই।

    কারা এই হিজড়া , কারা এই কোঠি ?

    যবে থেকে পৃথিবীতে নারী-পুরুষ আছে,তবে থেকেই আছে হিজড়া। উঠে এসেছে শিল্পে,সাহিত্যে, স্থাপত্যে। ফিলিপাইনসে এরা "baklas',আমেরিক্যান ইন্ডিয়ানদের কাছে "berdaches', আফ্রিকায় "sesrers' এবং দক্ষিণ এশিয়ায় "হিজড়া' নামে পরিচিত। ভারতের হিজড়া গোষ্ঠীর চার হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস পাওয়া যায়। এদের কথা বার বার উঠে এসেছে রামায়ণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন পৌরাণিক উপাখ্যানে। প্রাচীন হিন্দু ধর্মে এদেরকে পবিত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উত্তর ভারতে এদের মূল কাজ ছিলো "বাধাই'তে অংশগ্রহণ করে নাচ, গান করা ও আশীর্বাদ প্রদান করা। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের (হায়দ্রাবাদ ব্যতীত) হিজড়াদের এই ধরনের কোনো সাংস্কৃতিক জগৎ গড়ে ওঠেনি। তারা বেশিরভাগই জীবনধারণের জন্য স্থান নিয়েছে নিষিদ্ধপল্লিতে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এর সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন পৃথক গোষ্ঠী কেন? একটি বাচ্চা জন্ম গ্রহণের পর ধীরে ধীরে বড় হয়। কিন্তু ঠিক কোন সময়,কী কারণে সে এসে পড়ে এই বিচ্ছিন্ন জগতে? হ্যাঁ অবশ্যই আসতে হয় পরিবার, পরিজন ও প্রতিবেশিদের অবহেলায়। যখন বোঝা যায় যে সে দৈহিক ও মানসিকভাবে আর পাঁচটা আশেপাশের মানুষের থেকে আলাদা, তখনই শুরু হয় অত্যাচার। কখনো কখনো বাবা-মা নিজের ইচ্ছেয় অত্যাচার না করতে চাইলেও করে ফেলেন প্রতিবেশিদের কাছে তথাকথিত লজ্জা ঢাকতে। আর এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেড়ে কিশোর বা কিশোরীটি চলে আসে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীটিতে; বা কখনো কখনো আত্মহত্যা করে জীবনের জ্বালা জুড়োয়। ভীষ্মের শিখণ্ডীকে ভর্ৎসনার সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে।

    হিজড়া হতে হয় আনুষ্ঠানিক ভাবে। প্রথম মানুষটিকে ঠিক করতে হয় যে সে হিজড়া হবে, তারপর সাতলা পরিধান করে একবছর থাকতে হয় হিজড়া-গোষ্ঠীতে। এরপরও যদি সে মনে করে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে চলতে পারবে তখন তাকে নির্বাণ (খোজা) করা হয়, এবং সে হিজড়া হয়। এই গোষ্ঠীতে এদের প্রত্যেকের একজন মা থাকেন। চ্যালা বা কন্যাকে তার গুরু বা মায়ের দেখভাল করতে হয়। এই ভাবেই পরিবারের বাঁধন কাটানো মানুষগুলি আবদ্ধ হয় নতুন বাঁধনে। এই মুহূর্তে ভারতে হিজড়েদের সাতটি ঘরানা আছে- মূলত হায়দ্রাবাদ,মুম্বাই ও পুনে কেন্দ্রিক।

    আনুষ্ঠানিক দিকগুলো বাদ দিয়ে যদি বি'¡নের দিক থেকে এই হিজড়া হওয়ার পদ্ধতিটা দেখি তাহলে দেখে একটু অবাকই লাগে যে বহুকাল ধরে নিতান্ত অশিক্ষিত অপটু হাতে এই যে প্রক্রিয়াটা চলে আসছে তার সাথে আধুনিক সেক্সচে' সার্জারীর খুব বেশি তফাৎ নেই। বোঝানোর সুবিধার জন্য এই যে মনে নারী-শরীরে পুরুষ লোকজন যাঁরা শেষ অব্দি হিজড়ায় রূপান্তরিত হচ্ছেন তাঁদের আমরা এক কথায় কিন্নর বলে ডাকবো। দেখা যাচ্ছে যে যাঁরা এই "হিজড়াকরণ' করেন, আধুনিক এন্ডোক্রিনোলজি না পড়েও তাঁদের জানা আছে যে কোনো কিন্নরের বয়সকালে পুরুষত্বপ্রাপ্তির আগেই যদি পুরুষাঙ্গ বাদ দিয়ে দেওয়া যায় তো তার শরীরে পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্যগুলো আর এসে হাজির হয়না। কৈশোর যখন সবে এসেছে সেই সময়ে কিন্নরদের পুরুষাঙ্গ,শুক্রাশয় আর তার পর্দা যাকে ইংরেজীতে আমরা বলি স্ক্রোটাম, কেটে বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে কিছুটা সেকেন্ডারী মেল হর্মোনের ঘাটতি পড়ে শরীরে। তাই তার শরীর মেয়েদের মত নরমই থেকে যায়, পুরুষ সুলভ কর্কশ আর হয়না। বয়:সন্ধিজনিত গলা ভাঙা কিম্বা কিছুটা গম্ভীর গলার স্বরটা অবশ্য আর বদলানো যায়না।

    আনাড়ী হাতে,ঠিকঠাক স্টেরিলাইজেশনের অভাবে করা এই অপারেশনে অনেক সময়ই ক্ষত বিষিয়ে গিয়েই রোগী মারা যায়। কিন্তু যদি সাবধানতা নিয়ে করা যায় তাহলে পরে সেই হিজড়ায় রূপান্তরিত কিন্নরের শরীর যৌনতায় সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়না।

    ওঁদের কোনো ভ্যাজাইনা থাকেনা ঠিকই, কিন্তু পেনিস না থাকার ফলে অনেক খানিই মেয়েলী দেখায় ঐ জায়গাটা। যিনি মনে মনে মেয়ে, তাঁর কাছে এটা একটা বড় প্রাপ্তি বৈ কি? তাছাড়াও সেকেন্ডারী মেল সেক্স হর্মোনের অভাবে ওঁদের মধ্যে পুরুষের মত যৌন উত্তেজনাও হয়না। তার মানে এ নয় যে ওঁরা যৌনতায় অক্ষম। ওঁদের শরীর ভেতরে তখনো প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটা থাকে,কর্পোরা ক্যাভার্নোসার (যা পুরুষাঙ্গের সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য দায়ী) ভেতরের অংশটাও থাকে। কাজেই যৌন উত্তেজনা ওঁরা পুরোটাই অনুভব করতে পারেন। এমনকি অ্যানাল সেক্সের মধ্যে দিয়ে ওঁরা পুরোপুরি তৃপ্তিও পেতে পারেন। এখন দিনকাল অনেক বদলে গেছে। হিজড়ারা কেউ কেউ মেয়েলী সেক্স হর্মোন নেবার সুযোগ পাচ্ছেন। এই হর্মোন নিলে আস্তে আস্তে ওঁদের শরীরে আরো বদল আসে। লোমের আধিক্য কমে যায়, বুকের গড়ন পাল্টে মেয়েদের মত হতে থাকে। সত্যি বলতে কি ঠিকঠাক সময় ধরে মেয়েলী হর্মোন নিয়ে যেতে পারলে অনেক হিজড়াই খুব সুন্দরী হয়ে উঠতে পারেন। দু:খের বিষয় এটাই যে এসব কিছুর পরেও কিন্তু সমাজ তাঁদের নারীত্বকে সন্মান দেয়না।

    এখন সার্জারীর অনেক উন্নতি হয়েছে। সেক্সচে' অপারেশন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে পুরুষ শরীর পুরোপুরি পাল্টে নারী শরীরে নিয়ে যাওয়া যায়। অপারেশনে শুধু যে পুরুষাঙ্গ, শুক্রাশয়, স্ক্রোটাম কেটে বাদ দেওয়া হয় তাই নয়। ঐ বাদ দেওয়া অংশ থেকে স্কিন গ্র্যাফটিং করে স্ত্রী-অঙ্গ তৈরীও করা হয়। ডাক্তাররা নিপুণ হাতে ভ্যাজাইনা,তার বাইরের লেবিয়া আর ক্লিটোরিস তৈরী করে দেন। কর্পোরা ক্যাভার্নোসার অংশ কেটে ঠিকঠাক জায়গা মত বসিয়ে দেন। কিছু কিছু সংবেদনশীল নার্ভও আগের জায়গা থেকে কেটে এমন ভাবে বসিয়ে দেন, যাতে স্বাভাবিক নারীর শরীরের মতই এঁদেরও যৌন উত্তেজনা আর তৃপ্তি দুইই সম্ভব হয়। তাঁর শুধু তাইই নয়, রোগীকে নির্দিষ্ট সময় ধরে ইস্ট্রোজেন আর অন্যান্য ফিমেল সেক্স হর্মোন ই®'কশন দেওয়া হয় যার ফলে স্তন তৈরী হয়,ত্বক মসৃণ হয়, শরীরের গঠনও আরো বেশি মেয়েলী হয়ে ওঠে।

    কিন্তু সমস্যা এটাই যে এই অপারেশন করিয়ে সঠিক ভাবে সম্পূর্ণ নারী হয়ে ওঠার মত আর্থিক অবস্থা আমাদের দেশের বেশির ভাগ কিন্নরেরই নেই। যার ফলে মরিয়া হয়ে ওঁদের অপটু হাতের "হিজড়াকরণ'এরই মুখ চেয়ে থাকতে হয়। যিনি সেই কাজটা করেন তাঁর সঠিক শিক্ষার অভাবে, সঠিক অস্ত্রের অভাবে, পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত পরিবেশের অভাবে, সার্জারীর পরেকার উপযুক্ত যত্নের অভাবে অনেক সময়েই ক্ষত বিষিয়ে যায়, বা অন্যান্য অঙ্গের কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। নিদারুণ যন্ত্রণার পরে স্বপ্নের নারী শরীরের বদলে আসে বিকলাঙ্গতা, কিম্বা হয়তো মৃত্যু। স্বপ্ন বড় দুর্মূল্য জিনিস! বিশেষ করে এই সমাজে।

    এবার একটু কোঠিদের কথায় আসা যাক। ইংরেজি জানা মানুষদের কাছে যা হলো ট্রান্সসেক্সুয়াল, ইংরেজি না জানা মানুষের কাছে তারাই কোঠি। তাই তাদের জানা থাকেনা নিজেদের দাবি, নিজেদের অধিকার এবং সমাজের কাছ থেকে তাদের কী আচরণ পাওয়া উচিত। সমাজ এবং পরিবারের চাপে এরা কখনো কখনো বিবাহ করেন, সন্তানের জন্ম দেন কিন্তু শরীরের ক্ষুধা মেটাতে বাইরে সমকামী সম্পর্ক তৈরি করেন। তদের তথাকথিত মেয়েলি আচরণের জন্য এরা প্রায়ই বহিষ্কৃত হয় পরিবার থেকে, কখনো কখনো যৌন-হেনস্থার জন্য বহিষ্কৃত হয় কর্মস্থল থেকে। শেষ অবধি এই সব কারণ একত্রিত হয়ে তাদেরকে ঠেলে দেয় নিষিদ্ধপল্লির দিকে। যৌনকর্মী হিসেবে ইম্মরাল ট্র্যাফিকিং প্রিভেনশন অ্যাক্ট অনুযায়ী এনাদের উপর নজরদারি তো আছেই, আছে একাধিক সম্পর্ক বাবদ বিভিন্ন যৌনরোগের শিকার হওয়াও। ঘরচ্যুত নিরাশ্রয় মানুষগুলিকে অনেক সময়েই দেখা যায় খোলা জায়গায় সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হতে। মজার ব্যাপার হলো কোঠিরা যে ব্যবহার সমাজের কাছে পায় তাদের পুরুষ সঙ্গী (পান্থী নামে পরিচিত) কিন্তু একেবারেই সে ব্যবহার পায়না। পান্থীরা উভকামী বা সমকামী পুরুষ কিন্তু কোনো রকম মেয়েলি আচরণ তাদের থাকেনা। ভারতীয় সমাজ জাত-ধর্ম-শ্রেণীর মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত । আর হিজড়াদের জন্যও একটা পৃথক স্থান আছে সেখানে। কিন্তু তারা এতটাই বÏ'ত ও উপেক্ষিত শিক্ষাক্ষেত্রে,কর্মক্ষেত্রে, যে যৌনকর্মী হওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো গতি থাকেনা। কারণ নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয়, আর পরিবার থেকে নির্বাসিত হবার পরেও সেই পরিবারের প্রতি একটা দায়িত্ব তো থেকেই যায়। কিন্তু "সেক্‌শুয়াল মাইনরিটি'দের জীবনযাত্রা, অধিকার সম্পর্কে যা লেখালিখি হয় তা বেশিরভাগ-ই ইংরেজিতে, তাই কোঠি বা হিজড়াদের পক্ষে তা পড়ে উদ্ধার করে ওঠা হয় না। যৌন সংসর্গের একটা সুযোগের লোভেও অনেকে এই কাজে লিপ্ত হন যেটা সম্পূর্ণ মেয়েদের ক্ষেত্রে বিরল ঘটনা । নিষিদ্ধ পল্লীতে সমকামী, বিষমকামী, উভকামী তিন রকম পুরুষই এদের সাথে যৌনক্রিয়া করেন।

    তবে, চোখে লাগে একটি ব্যাপার। এই হিজড়া, কোঠি, সমকামী, উভকামী পুরুষের মিলে মিশে যাওয়া দুনিয়াটায় সমকামী মহিলা অর্থাৎ লেসবিয়ানদের অনুপস্থিতি। কৃষ্টি এক লেসবিয়ান মহিলা। তাকে একে একে ছাড়তে হয়েছে স্কুল, ঘর, মা ও ভাই -বোন। যদিও ওর পালিকা মা একজন হিজড়া। নিজে হিজড়া হয়েও, পুরুষ শরীরে নারীর মনের অস্তিত্ব নিজের অভি'তা থেকে জেনেও মেনে নিতে পারেননি মেয়ে হয়ে মেয়ের আরেকটি মেয়েকে কামনাকে। যত নিকৃষ্টই হোক না কেন হিজড়াদের জন্য ভারতীয় সমাজে তাও একটা স্থান আছে কিন্তু সমকামী মহিলাদের জন্য কিছুই নেই, সেইজন্যই কি ?

    সামাজিক অত্যাচার , অবমাননা ই নয়,কোঠি ও হিজড়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বললে বারেবারে একটি কথা উঠে আসে, পুলিশের দ্বারা বারেবারে ধর্ষিত ও আক্রান্ত হবার এই ঘটনাগুলি।

    গৌতম নামের এক প্রতিবন্ধী ২১ বছরের কোঠি যুবক বাসস্ট্যন্ডে বসেছিলো তার বন্ধুর প্রতীক্ষায়। দুজন সাদা পোষাক পরা পুলিশ এগিয়ে এসে তার সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করে। পরে তাকে মারধোরও করা হয়।

    স্বাতী নামে এক হিজড়া ও তার হিজড়া বান্ধবীদের বাড়িতে এসে অপমান করে যায় পুলিশ। তাদের স্তনকে স্পর্শ করে পর্যন্ত দেখা হয় যে সেগুলো আসল না নকল। কোকিলা (হিজড়া যৌনকর্মী ) একটি পার্কে দাঁড়িয়ে ছিলো খদ্দেরের প্রত্যাশায়। পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায় থানায়। তাকে ধর্ষণ করা হয়, তার স্তন এবং যোনিতে সিগারেটের ছ্যাঁকা লাগানো হয়। তার বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়। এর প্রতিবাদে ব্যঙ্গালোরে এক বিশাল মিছিল হয়েছিলো সঙ্গমা নামক একটি এনজিওর নেতৃত্বে। হিজড়েরা ১০ দিনের অনশন করেছিলো।

    পুলিশি রিফর্ম নিয়ে তাই সঙ্গন্মা ও PUCL এর বহুদিনের দাবী রয়েছে কিছু :

    ১. পুলিশের উচিত মানব অধিকার কর্মী ও সমাজ কর্মীদের সঙ্গে মিলিত ভাবে একটি কমিটি নিয়োগ করা, যে কমিটি পুলিশের দ্বারা পাবলিক প্লেসে এবং থানায় কথি এবং হিজড়ার আক্রান্ত হওয়া নিয়ে অনুসন্ধান করবে এবং অভিযুক্ত পুলিশকে অবিলম্বে শাস্তি দিতে হবে।

    ২. হিজড়া এবং কোঠিদের প্রতি সঙ্গে আচরণ ও সম্পর্কের ব্যাপারে পুলিশ কতৃপক্ষকে একটা স্বচ্ছতা রাখতে হবে; পাবলিক প্লেসে হিজড়ে এবং কোঠিদের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত শাস্তি ও জরিমানা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্যকে জমা রাখতে হবে যাতে তা সহজলভ্য হয়।

    ৩. কোঠি এবং হিজড়ারা যাতে পুলিশ কাস্টডি এবং জেলে ধর্ষিত না হন তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এবং এই ধর্ষণ বা শারীরিক নিগ্রহর হাত থেকে বাঁচাতেই হিজড়াদেরকে অন্য পুরুষদের সাথে পুরুষের সেলে পাঠানো যাবে না।

    ৪. মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং সমকামিতা নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠীগুলিকে কিছু ওয়ার্কশপের আয়োজন করতে হবে যাতে সমস্ত স্তরের পুলিশের মানসিকতাকে কিছুটা পরিবর্তিত করা যায়, সমাজ সম্পর্কে তাদের ভ্রান্ত ধারনাকে ভেঙ্গে দেওয়া যায়, তাদের বোঝানো যায় হিজড়া ও কোঠিরাও আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতই মানুষ এবং তাদের সঙ্গে সেরমই আচরণ করতে হবে।

    আশা করা যায়, হয়তো আস্তে আস্তে কার্যকর হবে এই সমস্ত দাবী। যেমন ধীরে ধীরে হলেও হচ্ছে আর ও কিছু পরিবর্তন।

    ভারতীয় আইন বিধি অনুযায়ী যেকোনো সরকারি কাগজ পত্রে নিজেকে দুভাবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকে : হয় নারী, নয় পুরুষ। তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্তিত্ব এখানে নেই। তাই একজন হিজড়াকে রেশন কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট জোগাড় করতে হয় নিজেকে নারী দেখিয়ে। কিন্তু শুনতে আশ্চর্য লাগলেও, সেটাকে আবার অস্বীকার করতে পারে আমাদেরই আইনি ব্যবস্থা। এই উদাহরণগুলিই ধরা যাক না। উত্তর ভারতের এক হিজড়া ভোটে দাঁড়িয়ে একবার এমএলএ আসনে জয়লাভ করেন। কিন্তু পুরুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করা এই মহিলার জয় কে আইনী চ্যালে®'র মুখে পড়তে হয়। মধ্যপ্রদেশের কাটনির মেয়র নির্বাচনের অসনটি ছিলো মহিলা সংরক্ষিত। তাই কমলা যান নামক এক হিজড়াকে সেই আসনে লড়তে দেওয়া হয়না। একই ভাবে জন্মসূত্রে নারী না হওয়ায় গোরখপুরের মেয়র নির্বাচনে আশারানী দাঁড়ানোর সুযোগ পান না কোর্টের নির্দেশে। তবে, আশার খবর, ব্যাঙ্গালোরের পুরসভা নির্বার্চনে ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডে এবার প্রতিনিধিত্ব করছেন একজন হিজড়া। নাম বীণা, যিনি সারা জীবন মহিলাদের অধিকার নিয়ে লড়াই করেছেন।

    হয়ত এইভাবেই নিজেদের অধিকার অর্জনের লড়াই করতে করতে এই প্রান্তিক মানুষগুলো আমাদের সমাজের মূলস্রোতে এসে পড়বেন।

    সূত্র : Human Rights Violations against the Transgende Community: PUCL, Karnataka.

    http://ai.eecs.umich.edu/people/conway/TS/TS-II.html

    http://ai.eecs.umich.edu/people/conway/TS/SRSlink.html

    কর্ণাটকের এই সেক্সুয়াল মাইনরিটি দের নিয়ে বহুদিন ধরে কাজ করে চলেছেন "সঙ্গমা'।

    যোগাযোগের ঠিকানা :

    Plot No. 41, KEB Extension Road

    RMV 2nd Stage, Ashwathnagar

    1st Cross, Bangalore – 560 094.

    Phone No - 08023416940.

    [email protected]


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অন্য যৌনতা | ৩০ আগস্ট ২০১০ | ১৭০২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    উৎসব - Sobuj Chatterjee
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 78.48.231.217 (*) | ১২ এপ্রিল ২০১৩ ০৪:০৬89255
  • আজ ভাটের আলোচনা প্রসঙ্গে তুল্লাম।
  • π | 172.129.44.87 (*) | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:৩৮89256
  • বাংলাদেশে হিজড়ারা তৃতীয় লিঙ্গের সরকারি স্বীকৃতি পেলেন। তাঁরা শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিছু সুযোগসুবিধাও পাবেন।
    http://www.dhakatribune.com/bangladesh/2013/nov/11/hijras-now-separate-gender#sthash.8IkLoG3h.dpuf

    এই প্রসংগে ফেসবুক গ্রুপে কিছু আলোচনা হচ্ছিল। সেক্স, জেণ্ডার ও তার বায়োলজিক্যাল বেসিস নিয়ে তর্কও।https://www.facebook.com/groups/guruchandali/683497821668167/?notif_t=group_comment_reply

    অনিরুদ্ধ দত্ত নিজেকে ট্রান্স-কোঠি-হিজরা কম্যুনিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। এবিষয়ে ওঁর পোস্টটা এখানে তুললাম।

    Ekjon trans-koti-hijra community member hishebe Khub shonkhepe kichhu kotha: 1) Gender identity ba lingo porichoy atmo-porichoy ba self-identity-r byapar. Shetar kono biological basis achhe ki nei, shei proshno obantor ebong byektir manobadhikar birodhi. Kono Hijre ba transgender manusher du payer fanke ki achhe ba ki nei, sheta ottonto opomanjonok proshno ebong shei bhitti te tar identity onno keu nirdharon kore dite pare na - shei shadhinota-ta shompurno taNri. 2) Lingo ba jouno porichoy-er biological karon khunje ber kore sheta 'fix' korar cheshta ke biological reductionism ba essentialism (Bangla torjomay literally 'moulobad') bola hoye thake. Ei dhoroner 'essentialism' onek shomaj bigyani ebong darshonik ra nakoch korechhe, Judith Butler-er kaaj ei khetre lokkhonio ebong pore dekhte paren. 'Pourush' ebong 'naritwo' jehetu dutoi shamajik lingo nirman, dhrubo shotyo noy, tai kono biological shutro (jemon hormones ba genes ba jai hok kichhu) dhore kauke 'mohila' ba 'purush' ba 'tritiyo lingo' proman korar cheshta shudhu britha noy, ultimately taNr nijonshyo byekti porichoy ebong adhikar birodhi. Kono manush nijeke ek shomoy 'purush' mone kore thakleo poroborti kaale nijeke 'nari' ba 'Hijre' mone kortei paren - egulo ekebare jonmo theke fixed ebong stheetisheel nao hote pare; ba bola jay, karur khetre tar lingo ba jouno porichoy stheetisheel (constant, fixed), abar karur khetre fluid - dui khetrei tanr identity valid, ebong sheta valid ki na, shey 'ashole' purush na nari na tritiyo, shei proshner finally kono uttor nei ebong sheta dhore onno keu tar porichoy tar jonne nirdharon kore dite pare na. 3) Ei bishoye Banglay bhalo lekhar jonne Taslima Nasreen-er Lingo Sutra pore dekhte paren, jotodur mone pore ei group-e age ekbar post kora hoyechhilo.
  • Aniruddha Dutta | 85.167.207.25 (*) | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:৫৫89257
  • Ei probondho ebong tar niche post niye kichhu shonshodhon achhe - 1) kothata কতি ba কোতি , কোঠি noy - ingriji te 'kothi' lekha hoy karon South India theke kotha ta eshchhe, shekhane jemon Seeta Seetha ba Gayatri Gayathri hoye jay, temni koti-o kothi hishebe lekha hoy. 2) Hijre-ra jemon akua (non-castrated) ba nirvan (castrated) hote pare, koti-o onek rokom hoy, ebong koti theke oneke hijre-o hoye jay mane Hijre shomprodaye formally jogdan kore. Koti-ra meyeder jama kapor porteo pare, abar meyeli shomokami purush hishebeo porichoy dite pare, abar paka-paki bhabe Hijredero join korte pare - otoyeb, thik 'Hijra'-r moton, etio ekta 'umbrella term', ekmatrik porichoy noy, jar Ingriji onubad shudhumatro 'transsexual' hote pare na, borong bola jay je eta ekta transgender spectrum, meyeli shomokami 'purush' theke shuru kore rupantorkami nari obdhi onekei koti jonogoshthi na community-r ontorgoto hote paren. Ei bishoye Gayatri Reddy-r boi 'With Respect to Sex: Negotiating Hijra Identity in South India' dekhte paren, ba Bangla-te Ajoy Majumdar ebong Niloy Basu'r 'Shomoprem' ebong 'Bharoter Hijre Shomaj' dekhte paren; amar nijer lekha ekti Bangla probondho-o chaile dekhte paren: http://www.academia.edu/3105162/Trans_of_which_gender_Transgender_and_Rupantarkami_Identity-categories_and_the_Self-Expression_of_Some_Gender-Marginalised_Persons_Kon_Ruper_Ontor_Transgender_o_Rupantorkami_Porichoy-borgo_o_Kichhu_Lingo_Prantik_Manushder_Atmoprokasher_Bhasha_Bengali_Bangla_
  • masud | 212.134.8.131 (*) | ১০ আগস্ট ২০১৪ ১০:৫৮89258
  • এই ছেলে থেকে মেয়ে হওয়া এই অপারেশন কোথা গিয়ে করতে হবে আর কত টাকা লাগে ম
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন