এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  টাটকা খবর

  • বহিরাবরণের অন্তরালে

    শাহেরীন আরাফত লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | টাটকা খবর | ১২ নভেম্বর ২০১০ | ৫৪৩ বার পঠিত
  • কিছু দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ঢাকার তেজগাঁও থানা এলাকার নাখালপাড়ায় অবস্থিত ৫ নম্বর ন্যাম ভবনের অষ্টম তলার ৭/বি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এসএসএফের সহকারী পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামের বাসায় এক গৃহপরিচারিকা গত ৫ই নভেম্বর নিহত হয়েছেন। ঐ গৃহপরিচারিকার নাম মিনা (১৫)। মিনার গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছার লাউড়িতে। তাঁর বাবার নাম আবদুল হামিদ। এই ঘটনার সহকারী পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম নিজে বাদী হয়ে তেজগাও থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের কাছে তরিকুল ইসলাম দাবি করেছেন, মিনা মানসিক রোগী ছিলেন। রাত ১২ টা থেকে ৩ টার মধ্যে যে কোন সময়ে কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। এজাহারে বলা হয়, গতকাল রাত দেড়টার দিকে তরিকুল ইসলাম কর্মস্থলে ছিলেন। এ সময় তাঁর স্ত্রী তাঁকে ফোন করে প্রথমে জানান মিনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাকে একটি কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় পান।
    ন্যাম ফ্ল্যাটের ঐ বাসায় পুলিশ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী থাকেন। তেজগাঁও থানা সূত্র জানায়, ৫ তারিখ দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়ালিয়ার রহমানের নেতৃত্বে তেজগাঁও থানার এক দল পুলিশ নাখালপাড়ার ৫ নম্বর ন্যাম ভবনের অষ্টম তলার ৭/বি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এসএসএফের সহকারী পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামের বাসায় যান। পুলিশ ঐ বাসার দক্ষিণ-পূর্ব দিকের একটি কক্ষ থেকে গলায় সবুজ রঙের ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মিনাকে খুঁজে পায়। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, মিনার গলায় কালো দাগ দেখা যায়। তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, প্রাথমিক তদন্ত ও লাশের আলামত দেখে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে।
    ...................................................................................................

    উপরের ঘটনাটি থেকে কিছু অসঙ্গতি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, আর তা হল-

    (১) জনাব তরিকুল ইসলাম, যিনি নিজেই এসএসএফের সহকারী পুলিশ সুপার, তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, মিনা মানসিক রোগী ছিলেন। কিন্তু কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কি কোন মানসিক রোগীকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে রাখবে? তাহলে কি আইনের ধ্বজাধারী তরিকুল নিজেও বিকারগ্রস্ত? আর কোন মানসিক রোগীকে দিয়ে কাজ করানোটাও বেআইনী, তা তো এসএসএফের সহকারী পুলিশ সুপারের জ্ঞাত না থাকার কথা নয়। এখানে উল্লেখ্য যে, তরিকুলের প্রতিবেশীদের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিনা আদতে কখনোই মানসিক রোগী ছিল না। তবে তার উপর চলত ঐ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর অমানুষিক নির্যাতন।

    (২) জনাব তরিকুল এজাহারে বলেছেন, রাত দেড়টার দিকে তরিকুল ইসলাম কর্মস্থলে ছিলেন। এ সময় তাঁর স্ত্রী তাঁকে ফোন করে প্রথমে জানান মিনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাঁকে একটি কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় পান। এহেন অসঙ্গতিপূর্ণ কথায় প্রশ্ন জাগতেই পারে, "ন্যাম ভবনের ঐ ফ্ল্যাটটি কি এতোটাই বিশাল, যে একজন মানুষের ঝুলন্ত লাশ খুঁজে পাওয়া যায় না???

    (৩) লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, মিনার গলায় কালো দাগ দেখা যায়। উপরন্তু, তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, প্রাথমিক তদন্ত ও লাশের আলামত দেখে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের দাগ ঐ পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখে পড়েনি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক ডিউটি অফিসারের ভাষ্যমতে, "তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখেছি ক্ষতের চিহ্ন।' এমতাবস্থায় পুলিশের মিথ্যাচার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয় না।

    (৪) দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত পুলিশের ভাষ্যমতে, পুলিশ ন্যাম ভবনের ঐ ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে লাশ মেঝেতে দেখতে পায়। অথচ দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত পুলিশের ভাষ্যমতে, তখনো লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলানো ছিল। এখানে পত্রিকাভেদে তথ্য ভিন্ন, কিন্তু পুলিশ সেই একই।

    (৫) প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, মিনাকে যখন তখন গালাগালি, মারধর করত ঐ দম্পতি। তাকে বাড়িতে, বা ফ্ল্যাটের বাইরে যেতে দেওয়া হতো না। তাদের এহেন আচরণে মিনার জীবন হয়ে উঠেছিল বিষময়।

    আর যদি এটি আদতেও আত্মহত্যার ঘটনা হয়ে থাকে তবে আমাদের ভেবে দেখতে হবে, মাত্র ১৫ বছর বয়সী একটা মেয়ে কেন আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। মানুষ তখনই নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে, যখন সে জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ। তাই আমরা ধরে নিতে পারি, মিনার সাথে এমন কোন ঘটনা ঘটেছে যা তার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব ছিল না। সম্প্রতি বখাটেদের উৎপাতে অনেক কিশোরী-তরুণী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়, এ নিয়ে অনেকেই সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু যদি ঘরের মাঝে থাকে যৌন সন্ত্রাসীদের বাস, তবে তা থেকে মুক্তির উপায় কী!

    এই ঘটনাটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সমাজে চলমান নির্মমতা, নির্যাতন ও উর্দি পরা সন্ত্রাসীরা ক্রসফায়ারের নামে সাধারণের আওয়াজ রোধের যে অকথিত অপারেশন পরিচালনা করছে, এ তারই প্রতিফলন মাত্র। আমার বাবা ছোটবেলায় একটা কথা বলতেন, "চোর বুইড়া হইলেও চুরির অভ্যাস ছাড়ে না। সে চুরি করতে না পারলে ঘরের মধ্যেই নানান জিনিষ নাড়া-চাড়া করবেই।' এই কথার রেশ ধরেই বলছি, তারা পুলিশ হেফাজতে, জেলখানায়, মাঠে-ঘাটে কথিত ক্রস-ফায়ারের নামে নির্যাতন, হত্যা করতে করতে তাদের অবস্থা হয়ে গেছে সেই চোরের মত। এখন তারা বাইরের মানুষকে হত্যা, নির্যাতনের সুযোগ না পেয়ে ঘরেই তার চচ্চায় রত হয়েছে, যার সর্বশেষ শিকার মিনা নামের নিষ্পাপ মেয়েটা।

    এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় একটাই, আর তা এই উর্দি পরা সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনার মাধ্যমেই। তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। কিন্তু তা করাটা মোটেও সহজ নয়। কারণ, তারা যে নিজেরাই আইনের ধ্বজাধারী সরকারী সন্ত্রাসী, সরকারী দলের বদল হলেও, তাদের অবস্থান অনড়। আর এক্ষেত্রে যারা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারত, সেই মিডিয়াও অজ্ঞাত কারণে বড়ই নীরব। মিডিয়াকে এই আড়মোড়া ভেঙ্গে জাগতে হবে, জাগাতে হবে জেগে জেগে ঘুমানো সমাজের মানুষগুলোকে। আমাদের সবাইকে নিজেদের জায়গা থেকে মানবতাবোধ জাগ্রত করার কাজটি করে যেতে হবে। সামাজিক আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই। আর এভাবে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই হয়ত আমরা একদিন পৌছাতে পারব সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে, যে সমাজ হবে সাম্যের, যেখানে থাকবে সকল মানুষের সমানাধিকার ...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ১২ নভেম্বর ২০১০ | ৫৪৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চিরুনি - Rashmita Das
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন