এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • স্বাধীনতাঃ সাইবার কহানি

    শুদ্ধসত্ব ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২১ আগস্ট ২০১১ | ৮৮৩ বার পঠিত
  • স্বাধীনতা একটি শর্তসাপেক্ষ বিষয় মাত্র। রুশো যে আদর্শ রষ্ট্রের ছবিটি সামনে রেখেছিলেন, যেখানে রাষ্ট্র নাগরিকের স্বাধীন ইচ্ছেতে তৈরী হয়, সেই রাষ্ট্র আজও হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো আদর্শ রাষ্ট্রের সন্ধান আমরা পাইনি যে রাষ্ট্র তার নাগরিকের বশ। বরং প্রায়শই এর উল্টোটাই ঘটতে দেখছি আমরা। নাগরিক ধীরে ধীরে বশ হয়ে পড়ে রাষ্ট্রের। এর সোজা সাপটা কারণ হচ্ছে রাষ্ট্র এখনো তাত্ত্বিকভাবে হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে সকল নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করেনা। একাংশ নাগরিক এখানে শাসক এবং অন্য অংশটি শাসিত। যে অংশটি শাসিত তার থেকে উন্নতি করে চলা অংশটি তার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় শাসক অংশের সঙ্গে। অন্য অংশটি হয় মেনে নেয়, নয় রাষ্ট্রের বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। ক্ষুদ্রাংশ থাকে, মানবতার যে কোনো সময়ের ইতিহাসের মতনই, যারা এই যুযুধান দুই পক্ষের মধ্যে দাঁড়িয়ে দ্রষ্টা এবং বক্তা। কারণ দেখা যায় ক্ষমতার হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গেই শাসকের নবতম সংস্করণটিও পুরোনো শাসকের মতই হয়ে উঠছে। স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতিকে একটা পর্যায়ের পরে তারা আর সন্মান করে না। করতে পারে না তাদের রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রনৈতিক বাধ্যবাধকতায়। আজকের দিনে এই সত্যটা এই সাইবারস্পেস-এও খুব প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনে আমরা চলুন দেখে নিই আরেক ক্ষমতা হস্তান্তরের বৃত্তান্তকে।

    যখন প্রথম ইন্টারনেট তৈরী হল তখন তা সীমাবদ্ধ ছিল স্বল্প কিছু মানুষের মধ্যেই। তার সম্বন্ধে ধারণাটা কেমন ছিল তা একটা ছোট্ট ঘটনাতেই পরিস্কার হবে। APRA (Advanced Research Projects Agency) ব্যবহার করে BBN, ম্যাসাচুসেটস্‌-এর পথপ্রদর্শক কোম্পানি, যারা ১৯৬৯-এ প্রথম দক্ষিণ-পশ্চিমের চারটি মূল কম্পিউটারের (UCLA, Stanford Research Institute, UCSB, and the University of Utah) মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার বরাত পায় তখন তারা মার্কিন সেনেটর টেড কেনেডির থেকে একটি অভিনন্দন বার্তা পেয়েছিলেন। BBN গড়েছিল Interface Message Processor বা IMP, আর টেড অভিনন্দন জানিয়েছিলেন এঁদের Interfaith Message Processor গড়ে তোলার বরাতের জন্য। এমন অবস্থা কিন্তু দীর্ঘ্যদিন থাকার কথা না, ছিলও না। যখন রাষ্ট্রের সামরিক এবং গবেষণামূলক কাজের বাইরে এর বাণিজ্যিকিকরণের সময় এল তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই এর প্রসারের যুগ এল। প্রথমত বাণিজ্য চাহিদা তৈরী করে এবং দ্বিতীয়ত তাকে বিক্রি করে। সেই কাজটা হতে হতে বেশ কিছুটা সময় গিয়েছে। আমাদের দেশেও একসময় এসেছে ইন্টারনেট। এই আসাটার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু সাধারণ নাগরিকের মধ্যে এর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়নি। প্রথমে ছিল Educational Research Network (ERNET)। তারপরে এল Videsh Sanchar Nigam Limited (VSNL) তাদের Gateway Internet Access Service (GIAS) নিয়ে ১৯৯৫ সালে। ধীরে ধীরে আজকে এ দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাটা শহরে বহুল বেড়ে গিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে এখনো তুলনায় অনেক কম হলেও ওই বাজার ছাড়া হবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। আজকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ধরা হচ্ছে ৮০ মিলিয়ন। ধারণা করা হচ্ছে যে ২০১৫ তে এটা বেড়ে দাঁড়াবে ২৩৭ মিলিয়নে। যদিও এখনো জনসংখ্যার অংশ হিসেবে এটা মাত্র ৫ থেকে ৮ শতাংশে ঘোরাঘুরি করছে, তবুও এটা বাড়বে যে তা বলাই যায়। সরকার আরো বেশী করে পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা ভাবছে, যাতে গ্রামাঞ্চলে এর আরও প্রসার ঘটে। শহরে সাইবার কাফের পাশাপাশিই বেড়ে গিয়েছে ব্যাক্তিগত স্তরে ব্যবহারকারীর সংখ্যাটা। সেটা এখন প্রায় ৫৭ শতাংশ। আরো বাড়বে বই কমবে না।

    ঠিক এখান থেকেই শুরু হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা সংক্রান্ত আলোচনাটা। ধরে নিন, আজকে ১৫ ই অগাস্ট কেউ ইন্টারনেট-এ পোস্ট করলেন বহু পুরোনো একটি কম্যুনিষ্ট শ্লোগান। "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়'! কি হবে? বা কি কি হতে পারে? ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। এই শ্লোগানটা তার কিছু চিহ্ন বহন করছে অবশ্যই। কেউ কেউ যেমন ভাবতে পারেন সাদা চামড়ার লোকেরা চলে গিয়েছে তেমনি কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে তার জায়গায় এসে বসেছে বাদামী সাহেবরা। এমন ভাবনান্তর থাকাটাই স্বাভাবিক। বিশেষত, আজকের এত বছর পরেও খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের কিই বা উন্নতি হয়েছে? শহরে হাস্যকর রকমের খরচ বাড়ানো বড়লোকের নার্সিংহোম, বেসরকারী হাসপাতাল বাড়া ছাড়া কি পেয়েছি আমরা স্বাস্থ্যে? আমলাশোলে বা খয়রাশোলে লোক মরলে আসে খবরে। এলে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু হয়ে যায় সেটাও। আর যদি ওইভাবে না মরে ধুঁকে ধুঁকে মরে, তাহলে খবরেও আসবে না। আমরা প্রজ্ঞাসম্পন্নরা সেমিনারে বা ভোটবাজারে মুখ গম্ভীর করে আলোচনা করবো অনেক। কেউ কেউ বলতেও পারেন (আমি শুনেছি খাদ্য সম্পর্কে হওয়া একটি সেমিনারে), যে আসলে দারিদ্রের কারণ হল লোকের অলসতা। এই কিছুদিন আগে যেমন বাংলাদেশের বন্ধুরা আলোচনা করছিলেন অনেক খাওয়াই নাকি খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ, এমন বলেছেন বাংলাদেশের কোনো এক মন্ত্রী। আমাদের এখানে প্রফুল্ল বাবু খাদ্য "কাঁচকলা খাক্‌' বলে কাঁচকলা প্রফুল্ল হয়ে গিয়েছিলেন। খাদ্য আন্দোলন হয়েছিল। শিক্ষা মানে এক বিভীষিকাময় ব্যবস্থা। বাকী সব প্রসঙ্গেই এমন কথা বলাই যায়। আর কথা বাড়াচ্ছিনা এ প্রসঙ্গে। বলার কথায় চলে আসছি। যদি এই সব দেখে কেউ লেখেন "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়' তাহলে?

    খুব ঝামেলা হয়ে যেতে পারে। কারণ ভারত রাষ্ট্রশাসকরা এখন ইন্টারনেটের মাহাত্ম্য বুঝেছেন। তাঁরা আইনের সংশোধন করেছেন। কোন আইন? যে আইন ব্রিটিশরা ১৮৮৫ সালে তৈরী করেছিল তাদের স্বররথ রক্ষার জন্য, সেই Indian Telegraph Act। সরকারী নজরদারী সম্পর্কে কি ছিল আগে এই আইনে? এই আইনের ৫(২) ধারায় দূরভাষে নজরদারী সম্পর্কে কি ছিল দেখুন!

    “On the occurrence of any public emergency, or in the interest of the public safety, the Government may, if satisfied that it is necessary or expedient so to do in the interests of the sovereignty and integrity of India, the security of the State, friendly relations with foreign States or public order or for preventing incitement to the commission of an offence, for reasons to be recorded in writing, by order, direct that any message or class of messages to or from any person or class of persons, or relating to any particular subject, brought for transmission by or transmitted or received by any telegraph, shall not be transmitted, or shall be intercepted or detained, or shall be disclosed to the Government making the order or an officer thereof mentioned in the order”.

    এই আইনের অন্য একটি অংশে আছে,

    “precautions to be taken for preventing the improper interception or disclosure of messages”.

    কোনো সরকার আজ অবধি নেয়নি এবং যা করেছে তা পরে বলছি।

    এখন সংশোধন কি হয়েছে তা বলার আগে বলে নিই, যে সুপ্রীম কোর্টে ১৯৯১-এ এই অংশটাকেও চ্যালেঞ্জ করেছিল People's Union for Civil Liberties (PUCL)। তাঁরা এর সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্ন তুলেছিলেন। তার রায়ে ১৯৯৬ তে সুপ্রীম কোর্ট বলেছিলেন, “unless a public emergency has occurred or the interest of public safety demands, the authorities have no jurisdiction to exercise the powers” যা ৫(২) ধারায় আছে। শব্দগুলোর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন বিচারালয়। পাবলিক ইমার্জেন্সী হল “prevailing of a sudden condition or state of affairs affecting the people at large calling for immediate action”, এবং পাবলিক সেফটি “means the state or condition of freedom from danger or risk for the people at large”. Without those two, however “necessary or expedient”, সরকার এটা করতে পারে না।

    কে বললো পারে না? ইচ্ছে করলেই পারে। সরকার চালায় যারা তারা ঠিক করবে তারা কী করবে! সংসদে করবে এ কাজ। করেওছে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি হলে করতে পারে না কিছু, লোককে স্বস্তি দেওয়া দূর অস্‌ত, বেশীরভাগ কোটিপতি যা পারে তা হল যাদের হাতে অর্থ তাদের ভাবনা ভেবে ফেলা। ২০০৮ এর সংশোধনীতে তাই করা হয়েছে। সামনে রাখা হয়েছে মুম্বাই-এ জঙ্গী হামলাকে। ২০০০ সালের সংশোধনীতেও কিন্তু সরকার চাইলেই যে কোনো ক্ষেত্রে নজরদারী করতে পারতো না। Message decrypt করতে পারতো, কিন্তু ইন্টারসেপ্ট করতে বা মনিটর করতে পারতো না। এবারে সব পারবে। কারণ ৬৯ তম সংশোধিত ধারায় তুলে দেওয়া হয়েছে পাব্লিক ইমার্জেন্সি আর পাব্লিক সেফটি বলে দুটি কথাকেই। মানে সরকাররে ক্ষমতা ক্রমশ অসীম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই সঙ্গে যোগ করুন CERT-IN কে। Computer Emergency Response Team এটা। এর হাতে অপরিসীম ক্ষমতা। ইচ্ছে মাফিক নির্দেশ দেবে যে কোনো ওয়েবসাইটকে বা সার্ভিস প্রোভাইডারকে। তা তারা মানতে বাধ্য। এবং কোথাও এর বিরুদ্ধে আবেদনের ব্যবস্থা নেই। সরকারের ইচ্ছেও নেই আবেদন হতে দেওয়ার। সুপ্রীম কোর্ট রাজনীতিবিদ থেকে সাংবাদিকদের ফোন ট্যাপিং-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার জন্য সতর্কতা হিসেবে কি কি করতে হবে তার সম্পর্কে যা যা নির্দেশ দিয়েছিলেন আজ এই সংশোধনীতে তার কোনো মানে নেই। অর্থাৎ এর ব্যবহারের রাস্তাটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর সরকার এখন Cognisable ba non-cognisgable offense নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না তা এই সংশোধনীতে পরিস্কার করে দিয়েছে। তার ইচ্ছে হলেই করবে সে নজরদারী, ব্যাহত করবে নাগরিক স্বাধীনতা যা সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ। সবই নিরাপত্তা এবং দেশের সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে বিপদের নামে হবে। যেমন বিনায়ক সেন-কে সিডিশান আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যার কোনো নির্দিষ্ট মানে নেই, তেমন সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে বিপদেরও কোনো নির্দিষ্ট মানে নেই। ইচ্ছে মাফিক ব্যাখ্যা দেওয়া যায় তার। এটাই খেলা। ঘটনাচক্রে না, আসলে বেশ বুঝেসুঝেই বিনায়ককে গ্রেপ্তার করে ছত্তিশগড় সরকার শাস্তি দিচ্ছিল, যার পিছনে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো নৈতিক সমর্থন নেই এমন বলাটার কোনো মানে হয় না। সরকারী কমিটিতে এখন ওনাকে বসিয়ে বোধহয় চোখে ধুলো দেবার খেলা হচ্ছে।

    আর কী হয়েছে? একটা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতায় ভারত এখন যে ৩৭ টি দেশের মধ্যে সার্ভে হয়েছিল তার মধ্যে ১৪ তম দেশ। তার থেকে কিছু কথা হুবহু তুলে দিচ্ছি এখানে।

    "ICT usage is governed primarily by the Telegraph Act, the penal code, the code of criminal procedure, and the ITA. The 2008 amendments to the ITA, which took effect in October 2009, 51 raised concerns about an expansion of state surveillance capacity, including interception of SMS and e-mail messages. Several provisions of the revised law entail possible restrictions on users’ rights. For example, the changes considerably broadened the scope of activities identified as criminal offenses under the act, which now include sending messages that are deemed offensive, dishonestly receiving stolen computer resources or communication devices, identity theft, impersonation, violation of bodily privacy, cyberterrorism, and the publication or transmission of sexually explicit material. The prescribed punishments vary, but many offenses carry up to three years in prison. Under the revised Section 80, lower-ranking police officers are permitted to conduct personal searches and arrests without a warrant in public spaces and private businesses that are accessible to the public, provided there is a reasonable suspicion that a crime covered under the act has been or is about to be committed.

    Section 69 expands the circumstances under which communications may be monitored, intercepted, and decrypted. Previously, such surveillance was governed by the 1885 Telegraph Act, which allowed it only during times of “public emergency” or in the “interests of the sovereignty and integrity of India.” The amended ITA drops these and other limitations. Section 69B, for instance, allows the central government to collect traffic data from any computer source without a warrant, whether the data are in transit or in storage."

    --- Freedom on the Net 2011

    কী হল তাহলে নাগরিক অধিকারের? ব্যাক্তি স্বাধীনতার? এমনকি সুপ্রীম কোর্ট-ও কিছু ক্ষেত্রে অন্য ভূমিকা নিচ্ছেন। যেমন একটা অংশ দিচ্ছি আবার।

    "In 2009, the Supreme Court ruled that both bloggers and moderators can face libel suits and even criminal prosecution for comments posted by other users on their websites. The case stemmed from several anonymous comments criticizing the right-wing party Shiv Sena that appeared on a web community moderated by a 19-year-old from Kerala, Ajith D. The party’s youth wing filed a criminal complaint against Ajith, who asked the Supreme Court to quash the case before it proceeded further, but the court rejected his request."

    একই কাজ কি হবে যদি কেউ কার্ল মার্ক্স বা মাও-জে-দং এর পিন্ডি চটকায় নেটে? বলা খুব মুশকিল। কারণটা আর লেখার দরকার আছে? প্রথমত বিদেশী, দ্বিতীয়ত কম্যুনিষ্ট। এর দ্বারা আমার বক্তব্য কম্যুনিষ্টদের প্রতি সমর্থন প্রকাশিত হল এমন না, আমার বক্তব্য হল একই মাপ সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, এমন হওয়ার আশঙ্কা বেশ আছে। কিছুদিন আগে একটি ইন্টারনেট সাইটে দেখছিলাম লেখিকা এবং অ্যাক্টিভিস্ট অরুন্ধতী রায় কে বেশ্যা থেকে যা খুশী তাই বলে গালি দেওয়া চলছে। কি আশ্চর্য্য তা কিন্তু এখনো CERT-IN এর নজরে আসেনি। কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায় গাওয়া ছাড়া আমার আর কাজ কি?

    এবারে আসি সাইবার কাফের কথায়। তার জন্য কিছু নির্দেশিকা আছে সরকারী। সেগুলোর মধ্যে সেদিন দেখলাম দিল্লীতে সাইবার কাফেগুলোকে বলা হচ্ছে নজরদারী ক্যামেরা লাগাতে, যাতে যারা যারা আসছে তাদের কাজের চলমান ছবি তুলে রাখা হয়। এ সম্পর্কেও এই রিপোর্টে কটি কথা আছে।

    "Although the situation may vary from state to state, user anonymity is restricted in many cybercafes, as the operators are required to record certain basic user details in registries. The record of each visitor has to be kept for six months, with details including name, address, identification card information, reason for use of the cafe, and contact numbers. Some cybercafes voluntarily exceed these requirements by requesting a passport photo for their records, demanding explanations if users are visiting a cybercafe outside their own localities, or retaining user files for as long as three years. Moreover, cybercafes are often subjected to intimidation by local police. There have been anecdotal reports of police instructing owners to retain information like Permanent Account Numbers (PANs)—tax-related numbers that the largely youthful clientele would probably lack. Pressure for more rigorous collection of user data has reportedly increased since September 2010, when an anonymous e-mail message took credit for a recent terrorist attack on Taiwanese tourists in New Delhi."

    --- Freedom on the Net 2011

    এই আইন সংশোধন প্রবল সমালোচিত হয়েছে। তার একটি সমালোচনার শেষ কয়েকটা কথা এখানে তুলে দিচ্ছি।

    "And what of the safeguards in the act? Well, when the Government has not formulated any safeguards to Section 5 of the Telegraph Act since Independence, it is unrealistic to expect it to formulate any safeguards under Section 69 (2) of the amended IT Act — especially in view of the prevailing terrorism situation.

    Until suitable safeguards are in place, Section 69 of the Information Technology (Amendment) Act of 2008 appears to be in violation of Article 21 of the Constitution — “no person shall be deprived of his life or personal liberty except according to procedure established by law.” It is unfortunate that a democratic and independent India has passed a law which is far more detrimental to personal liberty than the British Raj did."

    ---Indian Express, February 6, 2oo9

    (India: Section 69 of the Information Technology (Amendment) Act 2008 Violates The Constitution)

    সংবিধান আমাদের কিছু অধিকার দেয়। সেই সব অধিকারকে কাঁচকলা দেখিয়ে, এ সব চলছে। সন্ত্রাসের জন্ম শুধু সন্ত্রাসবাদ থেকে হয় না। রাষ্ট্রের দায় সেখানে নেই এমন কথা যাঁরা বলেন তাঁরা নির্দিষ্ট ভাবেই শাসকশ্রেনীর সঙ্গে নিজেদের গাঁটছড়া বেঁধে নিয়েছেন বলেই বলেন। রাষ্ট্র যদি মানবিক হত এতগুলো শতকে তাহলে নাগরিক তার রাষ্ট্রের জন্য উদ্বিগ্ন থাকতো, সেই হয়ে দাঁড়াতো রাষ্ট্রের আসল রক্ষক। কিন্তু এই পৃথিবীতেই তা হয়নি। রাষ্ট্র ক্রমশ চলে গিয়েছে উচ্চাকাঙ্খী শাসকদের হাতে, যাঁরা বড়লোকের দাসত্ব করাকেই রাষ্ট্রীইয় কর্ম জ্ঞান করেছেন। নইলে কি করে আজ স্বাধীনতার এত বছর পরেও মানুষ এতটুকু স্বস্তি পায়না দেশে? কেন শুধু একাংশই ফুলে ফেঁপে ওঠে আর বৃহদাংশ ডুবে যায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার অন্ধকারে? আধুনিক রাষ্ট্রে যখন পুলিশ-সামরিক বাহিনী দিয়ে, দমনমূলক আইন দিয়ে নাগরিকের অধিকার কেড়ে নিয়েই তার নিরাপত্তা বিধানের গল্প শোনাতে হয় তখন মনে পড়ে যায় অদূর অতীতের কথা। ১৯৩৩ সাল। ২৩ শে মার্চ জার্মান প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গ সই করেছিলেন Enabling Act- এ। হিটলারের হাতে তখন সব ক্ষমতা চলে গিয়েছে। তার আগেই রাইখস্ট্যাগে আগুণ নিজেরাই দিয়ে কম্যুনিষ্টদের নামে দোষ চাপিয়ে হিটলার Reichstag Fire Decree জারী করে প্লেনারী পাওয়ার নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। এই নতুন আইন সই করে অসুস্থ, প্রায় মানসিক ভারসাম্যহীন হিন্ডেনবুর্গ হিটলারের ক্যাবিনেটের হাতে তুলে দিলেন রাইখস্ট্যাগকে পাশ কাটিয়েই যে কোনো আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা। আইনটির মাধ্যমে Enable করা হয়েছিল বলে একে বলা হয় Enabling Act। কিন্তু এর পোষাকি নামটা ছিল ভারী চিত্তাকর্ষক, Gesetz zur Behebung der Not von Volk und Reich। যার ইংরেজী করলে দাঁড়ায় "Law to Remedy the Distress of People and Reich'। এই জনতার বিধান দিয়েই সকল নিদান হাঁকেন প্রভুসকল, আজ বোধহয় এটাই মনে রাখার সময়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২১ আগস্ট ২০১১ | ৮৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন