এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ঈদের রঙ

    রুখসানা কাজল লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০২ জুলাই ২০১৭ | ১৯৩১ বার পঠিত
  • তখনো আমাদের বাড়িতে ঈদ মানে খুশি ছিল। ঘরের মেইন দরোজাগুলোতে কাগজের ফুলে সাজানো হত। টেবিলে থাকত আসল ফুল। বড় পর্দার উপর ঝুলিয়ে দেওয়া হত  বেতের তৈরি শিকল। দু একটা জরিরমালা। বাপি তার সর্বোচ্চ শিল্পপ্রীতি থেকে ঘর   সাজাত আমাদের সবাইকে নিয়ে। মা রান্নার বই হাতে ঈদের আগে থেকেই বাছাই করতে বসত কোন রান্নাটা করবে । মাঝে মাঝে বাপিও যোগ দিয়ে মাকে জানাত,  একটু ব্যতিক্রমি করো রাবি। একই রান্না সবার বাসায়। মা দীর্ঘ আলোচনায় বসে নতুন কিছু রান্নার রেসিপি খুঁজে বের করে ফেলত। আর সেই রান্না খেতে আমরা স্বপ্নের ভেতরেও জিভ চেটে নিতাম।  

    ঈদের জামা জুতো নিয়ে আমি কখনো ভাবিই নি। জানতাম ওগুলো হয়েই আছে।  মাথার উপর দু দুটো  মহা ইস্টাইলিশ দিদি। দিভাই একটা বানালে আপুলি আরেকটা বানিয়ে রাখবে।  আর মা তো আছেই। মার দেওয়া জামা হবে, লাল, লালচে, না হয় কমলা, হলুদ মানে সবসময় এই রঙ। তার কালো মেয়েটা যেনো সবার ভেতর হারিয়ে না যায় । আরো ছোট থাকতে দিভাই আপুলির বান্ধবিরা এলে  আমি নতুন জামা উচু করে মাঝে মাঝেই হাঁটতাম ।  আমার লেস লাগানো নতুন প্যান্ট গেস্টদের দেখানোর জন্যে। উঁচু না করলে দেখবে কি করে !  

    সে বয়সে আমি শুধু ঈদটাই বুঝতাম । ধর্ম   নিয়ে আমাদের বাসায় কখনো কোনদিন বাড়াবাড়ি হয়নি। না মা , না আমার বাপি। বাসায় যেকোনো সময় যেকোন হিন্দু খৃস্টান ছেলেমেয়েরা এসে খেয়ে যেত। থাকার জায়গা নেই এমন কেউ কেউ সামনের ঘরে দু একদিনের জন্যে থেকেও যেত। ভেতর বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে আসত রেনুদি  বা হেমদি। কতদিন জানালা বেয়ে উঠে দেখেছি বিছানার উপর আসনপিঁড়ি  হয়ে বসে পইতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মন্ত্র পড়ছে কেউ কেউ। শুধু আমাদের বাড়ি নয়। শহরের কয়েকটি বাড়ি ছাড়া অধিকাংশ বাড়িতে এরকম দৃশ্য ছিল। পুজোয় জামা শাড়ি  পাঠাত। ঈদে মাও শাড়ি কিনত আত্মীয়দের সাথে বান্ধবী বৌদিদের জন্যে। আমাদের শহর এক আশ্চর্য মায়াবী শহর ছিল। ঈদ কুরাবানীতে হিন্দু বন্ধু, প্রতিবেশীদের কথা ভেবে খাসি জবাই করা হত। শহরের প্রায় সবাই এই অলিখিত নিয়ম মেনে চলত। থাকত আলাদা হাড়ি কড়াই। সামান্য সন্দেহ বা অবিশ্বাস ছিল না কারো ভেতর। আর খাওয়া দাওয়া শেষে গল্প, আড্ডা, গান কবিতা এমনকি অনায়াস গল্পের মত উঠে আসত ইসলাম ধর্মের কোনো কোনো মানুষের কথার পাশে সনাতন হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন দেবদেবীর কাহিনী বা প্রিয় যীশু খ্রিস্টের কথা।       

    বাড়িতে বটি ছিল তিনটা। ফল কাটার বটির কাঠ ছিল রঙিন। তরকারী কাটাকুটি আর   মাছের বটি একদম আলাদা ছিল। মাকে দেখেছি মাঝে মাঝেই বটি দুটোকে নিয়ে ইঁদারার পাড়ে ফেলে ভালো করে ধুয়ে নিতে । অন্যের ধোয়া কিছুতেই পছন্দ হত না মহিলার। ঈদ এলে এগুলো দ্বিজবর কাকুর কামারশালায় পাঠিয়ে ঝকঝকে করে আনা হত। দ্বিজবরকাকু নাটক করত। নিজেই বটি দিয়ে যেত আর যাওয়ার সময় হাঁক দিত, কয়ডা নারকেল পাড়ি নি গেলাম ও বউদি। তোমাদের বউমা বলি দিয়েছে।  

    ঈদের সকালে লালটালি আর এসব্যাস্টাস টিনের রান্না ঘরের বারান্দায় হইচই লেগে যেত। আমি আর ভাইয়া পেস্তা, কাজু, কিসমিশ, দারচিনি খাওয়ার লোভে ঘুরঘুর করতাম। এগুলো কাঁচা খেতেই যত মজা। রান্নার পর থুথু। কয়েক রকমের সুবাসিত রঙিন সেমাই  জর্দা আর নানা রকম ফল কেটে বড় থালায় বিরাট বিরাট পাতার জালি দিয়ে ঢেকে রাখা হত। মাছি ছিল আমার মা বাপির ঘোষিত শত্রু। ট্রে ভর্তি খাবার ড্রয়িং রুমে যেত আর খাওয়া শেষে সাথে সাথে এঁটো ধুয়ে ফেলা হত।  

    সকালের দিকে বাপির বন্ধুরা চলে আসত নামাজ পড়ে।  তাদের সাথে আসত নিতাই  কাকু, কেশব কাকু, বরুন চাচা, বাংলার প্রফেসর মহেন্দ্রকাকু, কাকিমা, কাশিশ্বর  কাকু। সোনার চশমা চোখে, ধোপদুরস্ত পরিপাটী  পোশাক, মৃদুভাষী, ক্ষীরোদ সাহা  আমার মা বাপির প্রিয় মানুষ ছিলেন। পরবর্তি সময়ে এই কাকুর ছেলে আর আমার   আপুলি বিয়ে করায় শহরে প্রায় দাঙ্গা লেগে গেছিল। সে  অন্য গল্প। বাপির বন্ধুরা এলে মাকে একবার তখন  রান্না ছেড়ে আসতেই হত।  পাতলা কাঁচের গ্লাসে  নতুন রেসিপির কোনো  শরবত নিয়ে মা আসত । তখন অন্য মার মত লাগত মাকে। কি মিষ্টি, সুন্দর। 

    তবে সব চে মজা হত দূর্যোধনদাদু যখন আসতেন তখন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দাদুর  পায়ে গুলি লেগেছিল। লাঠি নিয়ে হাঁটতেন। দাদু ছিলেন বাপির বাবার বন্ধু। বাপিকে সন্তানের মত ভালোবাসতেন। দাদুর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে মা সেমাই আর ক্ষীরের পায়েস খুব যত্ন করে দাদুর সামনে নিচু টেবিলে রেখে দিত। দাদু ক্ষীর সরিয়ে রেখে সেমাই খেতে খেতে চাটাম চাটাম শব্দ করত আনন্দে। ততক্ষনে মা জোড়া পান বানিয়ে পিরিচে রেখে দিত। একসাথে দুটো পান মুখে দিয়ে দাদু আমাদের সাথে নিয়ে বাপির বাগান দেখতে উঠে যেত।      

    দলবেঁধে আসত দিভাই আপুলি দাদুর বন্ধুরা । কে হিন্দু কে মুসলিম এরকম অনেককেই আমি সত্যি জানতাম না। ওদিকে রান্নাঘরে তখন মা ক্ষেপে গেছে। অসম্ভব। আমি কারো জাত নষ্ট করতে দিতে পারব না। টিকিয়া কিছুতেই মা দেবে না। আর এরা খাবেই। শেষ পর্যন্ত মিথ্যে বলে তবে টিকিয়া বের করা হত। আমি আর ভাইয়া ঘুরঘুর করতাম সেলামি নেওয়ার জন্যে। ব্যাগ ভরে টাকা পয়সা নিয়ে আমরা ছুটে যেতাম আইসক্রিমের দোকানে। তখন নতুন নতুন আইসক্রিম আসছে মার্কেটে। বিরতিহীন খেয়ে যেতাম আমরা ছোটরা। জিভ ভারি হয়ে কথা আটকে যেত। অইদিন গরিবদের ছেলেমেয়েরাও আইসক্রিম কিনতে আসত। তারাও সস্তা কাপড়ের  নতুন জামাকাপড় পরে আনন্দ করত। কিন্তু এত আনন্দের ভেতরেও খারাপ লাগত যখন দেখতাম এই ঈদের দিনেও কেউ ভিক্ষে করছে বা ছেঁড়াফাটা পুরান জামা পরে মুখ কালো করে এক কোণে   দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের শহরে হামবড়ামি করত যারা তাদের কেউ কেউ এদের তাড়িয়ে দিত। কেউ কেউ আবার দুষ্টুমি করে আমাদের বাড়ি দেখিয়ে দিত। মা যতটা পারত দিত। বাপি মাকে শিখিয়েছিল, দিও কিঞ্চিত না করে বঞ্চিত। আমরা তো অই হামবড়ামি টাইপের ধনীলোক ছিলাম না। ওদের গেট বন্ধ থাকত, শবে বরাত, ঈদ , কুরবানির দিনগুলোতে। গরীবরা কিছু না পেয়ে কত কি যে অভিশাপ দিত। শেষবারের মত বলত, আল্লাহ বিচার করবিনে, একদিন আমাগের মত ভিক্ষে করতি হবিনে ওগের। এই ধনসম্পদ কিছুই থাকপি নানে তহন। আল্লাহ কিন্তু ওদের  ছাপ্পড় ফুঁড়ে দিয়েছে,  দিয়েই গেছে। গরীব আরো গরীব হয়েছে। আমি আর ভাইয়া এগুলো ভালো করে দেখে টেখে ঠিক করেছিলাম, কাউকে মুখে কিছু বলব না। সুযোগ পেলে মেরে দেবো।  

    অনেক বছর পরে সেই শহরে গিয়ে আমি পুরনো সেই আমেজ সেই ভালোবাসাকে কিছুটা হলেও খুঁজে পেয়েছি। যদিও হিন্দু পাড়াগুলো ফাঁকা। বেশিরভাগ হিন্দুরাই চলে গেছে দেশ ছেড়ে। যারা আছে ভাইবোনের মত , বন্ধুর মত ঈদের সকালে ফোন করেছে, উইশ করেছে হ্যাপি ঈদ। কিন্তু এই কি নিয়তি ? একটি স্বাধীন সার্বভৌম  ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে নিরাপত্তাহীনতার সমূহ সম্ভাবনায় শঙ্কিত হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে রাষ্ট্রের বৈধ নাগরিক হিন্দু সম্প্রদায়।   

    আমি এসেছি জেনে সাত মাইল বাস, টেম্পু চড়ে দেখতে এসেছিলেন আমার স্যার। স্যারের ছেলেমেয়ে সবাই ইন্ডিয়া থাকে। এবার উনিও চলে যাচ্ছেন। বার বার  বলছিলেন দিন ভালো নয়। আসছে দিন ভালো নয়। ওপারে মুসলিম মার খাচ্ছে, এপারে হিন্দু। দিন খারাপ, বড় খারাপ দিন আসছে রে কাজল। ঠিক এরকম কথা বলেই আমাদের খুব কাছের এক বন্ধু পরিবারসহ চলে গেছে কানাডা। প্রতি ঈদে  সুভাষদার জন্যে টিকিয়া বানিয়ে বক্স করে দিতে হত। আর ছোট্ট পাপ্পু ডাইনিং টেবিল ছেড়ে উঠতেই চাইত না। পোলাউয়ের গন্ধে ওর নাকি খালি ক্ষুধা পেয়ে যেত। কি যে মিষ্টি করে বলত, মামি মামি আর একটা রোষ্ট কি হবে? পাপ্পু খুব ঈদ মিস করে। ঈদ এলে আমার ছেলেকে কানাডা থেকেই হুমকি দেয়, আমি নেই তাই খুব খাচ্ছিস  তাই না ? 

    রঘুনাথপুরের বুড়িরথানে বসে মনে হচ্ছিল আমরা ক্রমশ মুসলিম আর হিন্দু হয়ে যাচ্ছি। মানুষ থাকছি না।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০২ জুলাই ২০১৭ | ১৯৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 116.193.250.131 (*) | ০২ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩৮82906
  • কাজল, বড্ড ভাল লাগল।
  • বিপ্লব রহমান | 129.30.39.73 (*) | ০২ জুলাই ২০১৭ ০৬:৩৬82907
  • মানুষ নাই রে দেশে!
  • Reshmi | 129.226.173.2 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৭ ০১:০৮82909
  • লেখাটা খুব ভাল।

    কিন্তু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে এখনো মানুষ আছেন, হিন্দু-মুসলিমের বাইরে, শুধুই মানুষ!
  • প্রতিভা | 37.5.129.21 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৭ ০১:৫২82910
  • সত্যি, সবাই হিন্দু মুসলমান হয়ে যাচ্ছে। মানুষ পাব কই !!
  • Zoya basu | 132.163.84.176 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৭ ০২:২২82911
  • I have almost lost my voice.. loosing my abilities to fight back agaist all the worngs going on.. as if my back is against the wall.. i feel lot of stress.. with all the current incidents .. politics of religions .. as an atheist i am not also safe .. Indian sub-continent in a serious turmoil .. this post brought tears in my eyes.. would i get to see a peaceful world before i die..!!!!!
  • মুহাম্মাদ সাদেকুজ্জামান শরীফ | 129.30.47.240 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৬82912
  • বাংলাদেশের কোন এলাকার গল্প এটা আমি জানি না। আসলে জানার দরকারও নাই। সম্ভবত সব জায়গারই গল্প এটা। ঈদের খুসি সব জায়গায় যেন একই রকম। একটা সময় পর্যন্ত হিন্দু মুসলিম ভাগ করে ঈদের কথা আমাদের কারও মাথায়ই থাকত না। খেয়ালই করতাম না কখন কোন বন্ধু আসছে, সে হিন্দু না মুসলিম! খাবারের সময় আম্মা ব্যাপারটা ম্যানেজ করতেন। তিনি জানতেন কার পাতে কি দিতে হবে। উল্টোও হত, দুর্গা পুজার সময়। হিন্দু বন্ধুদের বাড়ি আমার জন্য অবারিত দুয়ার ছিল। খেতাম তো অবশ্যই আন্টিরা বাড়ির জন্য দিয়ে দিত কত কি!!
    আস্তে আস্তে পরিস্থিতি কেমন জানি হয়ে গেলো। চেনা বন্ধুদের চেহারা কেমন জানি অচেনা লাগে। হঠাৎ খেয়াল করলাম একদিন যে আমাদের বিশাল বন্ধু বৃত্তের মাঝে আমাদের হিন্দু বন্ধুদের আরেকটা বৃত্ত। সেখানে আমাদের প্রবেশাধিকার নেই। এবং তাদের এই বৃত্ত তৈরি করে দিয়েছি আমরাই!! হঠাৎ করে আমাদের মাঝে কেউ কেউ কট্টর ধর্ম পালন শুরু করে দিল। বন্ধুদের মাঝে এসে হাজির হলো জান্নাত আর জাহান্নাম। সগৌরবে ঘোষণা করা হলো একদিন যে দুর্গা পুজার মন্ডবে যাওয়া যাবে না, গেলে সরাসরি জাহান্নাম! কে আর চায় ৭২ হুর ছেড়ে জাহান্নমের আগুনে পুড়তে। ফলাফল এখন পূজা হয় কিন্তু আমার হিন্দু বন্ধুরা তাদের ছোটবেলার বন্ধুদের কে খুঁজে পায় না আর তাদের পাসে।
    আমি কর্ম সুত্রে এলাকার বাহিরে ছিলাম। দুর্গা পুজায় ছুটি পেতাম না তাই যাওয়া হত না। কিন্তু এবার যখন যাওয়ার সুযোগ পেলাম এবং গেলাম তখন দেখতে পেলাম এই ভয়াবহ চিত্র। আমি মন্ডবে যাওয়াতে ওরা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল আর মন্ডব থেকে ফিরে যখন অন্য বন্ধুরা যেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে সেখানে এসে বললাম আমি মন্ডব থেকে আসছি তখন দেখলাম আরেক চিত্র! বেশ কয়েকজনের মুখ থমথমে হয়ে গেলো আবার তারা আমার মুখের উপর কিছু বলতেও পারছিল না।

    এই চিত্র পরিবর্তন হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। কয়েক বছরের মাঝেই এমন হয়ে গেলো পরিস্থিতি। দশমির দিন সবাই বলত কে মুসলমান কে হিন্দু আলাদা করা যেত না। সবাই সমান ভাবে মিশে যেত ওইদিন। কিন্তু এখ্ন এ দৃশ্য কল্পনাতীত।
    জানি না সামনে কি আছে! আমার শুধু বৃত্তের মাঝের বৃত্তের জন্য কষ্ট হয়। দিনদিন ওদের কে দূরে ঠেলে দিচ্ছি আমরা। এর ফলাফল শুভ হওয়ার কোন কারনই তো নেই।
  • Sushobhan Bhattacharya | 70.243.65.114 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪০82913
  • Emon lekha bhishan darkar du dekhei. ..khub bhalo laglo
  • Sushobhan Bhattacharya | 70.243.65.114 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৩82914
  • Dui deshei darkar emon lekha. ..anabadya
  • অভিষেক | 52.110.143.114 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫২82915
  • কী সুন্দর লিখেছেন কাজল যে কী বলবো!! মিহির সেনগুপ্তের কিছু স্মৃতিচারণের কথা মনে করিয়ে দিলেন!! বিশেষত সিদ্ধিগঞ্জের মোকামের কিছু অংশ!
  • দীপেন ভট্টাচার্য | 114.175.154.178 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৫:৩৪82916
  • কি মায়াময় লেখা, রুখসানা কাজল! যখন সবকিছু চলে যাবে, আলাদা হয়ে যাবে, বিস্মরণ হবে তখন এরকম লেখাই আমাদের নিয়ে যাবে সেই সম্মোহনী সময়ে, আমাদের শান্ত করবে, মুক্ত করবে।
  • utpal | 212.191.212.178 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৮:০১82908
  • অসাধারণ
  • জিজি | 127.194.216.177 (*) | ২৪ জুলাই ২০১৭ ০৫:২০82917
  • কী যে ভালো লাগলো এই স্মৃতিচারণ! এই সময়ে এমন লেখা বারে বারে মনে শান্তিসুধা দেয়। ধন্যবাদ এমন লেখার জন্য।
  • π | 7845.29.014523.203 (*) | ১৫ জুন ২০১৮ ০৬:২৩82918
  • এটাও।
  • Sumit Roy | 340112.244.3412.59 (*) | ১৭ জুন ২০১৮ ১১:৪৯82919
  • বাংলাদেশের আদমশুমারি থেকে দেখা যায়, ১৯৫১-২০১১ সময়কালে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা মাত্র ৩৭ লাখ বেড়েছে, পক্ষান্তরে এই সময়ে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ১১ কোটি ১৩ লাখ ৷ হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রজনন হার মুসলমান জনগোষ্ঠীর তুলনায় (প্রায় ১৫%) কম ৷ আলী রীয়াজ সাহেব ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটিস্টিক্স নিয়ে একটি অসাধারণ গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এর নাম হল "ভয়ের সংস্কৃতি"। তার হিসাব অনুসারে, ২০১১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা হওয়া উচিত ছিল প্রায় ২.৭৯ কোটি ৷ বান্ডবে রয়েছে ১.২১ কোটি ৷ অর্থাৎ প্রায় দেড় কোটি হিন্দু বাংলাদেশের জনসংখ্যা থেকে নিরুদ্দিষ্ট। এই নিরুদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী ভারতে অভিবাসী হয়েছে। আকবর আলী খানের "অবাক বাংলাদেশ"-এও এসব নিয়ে একটি চিত্র উঠে এসেছে। তিনি বলেন, বিশ্বায়নের যুগে অর্থনৈতিক উন্নতির মোহে বিশ্বব্যাপী অভিবাসনের হার দ্রুত বাড়ছে ৷ তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অভিবাসনের মূল প্রণোদনা আর্থিক নয় ৷ বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্যসমূহের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত নয় |

    আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিমাণ ভারতের চেয়ে কম ৷ বেসরকারি সংস্থা 'অধিকার'-এর হিসাব অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০১৩--এই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে হিন্দুদের বাস্তুভিটা আক্রমণের ঘটনা ঘটে ৫৬৮টি; মন্দিরের ওপর হামলা হয় ২৪৭টি ৷ বছরে গড়ে ১৬৩টি সহিংস ঘটনা ঘটে ৷ এই হিসাবে বাংলাদেশে গড়ে ২.২ দিনে একটি দাঙ্গা হয় আর ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি দাঙ্গা ঘটেছে ৷ তবে দাঙ্গার পরিসংখ্যান দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুদের প্রকৃত পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা যাবে না; প্রকৃত পরিস্থিতি হলো যে বাংলাদেশে দাঙ্গাকারীদের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য দাঙ্গার প্রয়োজন নেই, এখানে হিন্দুদের মধ্যে প্রতিনিয়ত 'তয়ের সংস্কৃতি" বিরাজ করছে৷ এ প্রসঙ্গে আবার আলী রীয়াজ সাহেবের কাছে যাওয়া যাক। তিনি লিখেছেন, "অনিশ্চয়তা, ভীতি ও শঙ্কা ধর্মীয়ভাবে বাংলাদেশের "সংখ্যালঘু" হিন্দু জনগোষ্ঠীকে জন্মভূমিতেই পরবাসী করে তুলতে সক্ষম হয়েছে ৷ আর এই যে অনিশ্চয়তার ভীতি ও শঙ্কা. এটা তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে কেবল প্রত্যক্ষ সন্তাস থেকেই নয়, বিরাজমান অদৃশ্য, অপ্রত্যক্ষ কিন্তু সদা উপস্থিত একধরনের সন্ত্রাস থেকে ৷ এই সন্ত্রাসকে আমরা বলতে পারি কাঠামোগত সন্ত্রাস৷'

    বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৪ হাজার ৮৯ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার ধর্মীয় পরিচয় বিশ্লেষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রায় ৭.৯২ ভাগ সরকারি কর্মকর্তা হিন্দু | ২০১১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৮.৫ ভাগ ছিল হিন্দু ৷ আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে জনসংখ্যার অনুপাতে সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগে হিন্দুদের হার খুব অসন্তোষজনক নয় ৷ তবে এ কথা মনে রাখতে হবে যে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা নিরাপত্তার অভাবে ভারতে চলে যাওয়ায় হিন্দু জনসংখ্যার অনুপাত বর্তমানে ৮.৫-এ নেমে এসেছে ৷ ২০০১ সালে হিন্দুরা মোট জনসংখ্যার ৯.৬ শতাংশ ছিল। এই হিসাবে হিন্দুরা জনসংখ্যার অনুপাতে সরকারি চাকরি পায়নি ৷ তবে আকবর আলী খান বলেন, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য কম।

    ধর্মনিরপেক্ষতার সাংবিধানিক নিশ্চয়তা সত্ত্বেও ভারত ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি ৷ এরা এখনো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ৷ মানুষের জীবনে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যাচ্ছে না ৷ এর জন্য প্রয়োজন সুশাসন ও সরকারের জবাবদিহি ৷

    আমরা ক্রমশ মুসলিম আর হিন্দু হয়ে যাচ্ছি, মানুষ থাকছি না। এই কথাটা হৃদয়ে কোথায় যেন আঘাত করল। কবিগুরুর লেখা একটি কবিতার অংশ বলে যাই...

    যারে তুমি নিচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে,
    পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।
    অজ্ঞানের অন্ধকারে আড়ালে ঢাকিছ যারে
    তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান ৷
    অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন