এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অপার বাংলা

  • বাংলাদেশে উইমেন মার্চ -- ইতিহাসের সাক্ষী হলাম?

    মারজিয়া প্রভা লেখকের গ্রাহক হোন
    অপার বাংলা | ১০ মার্চ ২০১৭ | ৭৯৩ বার পঠিত
  • ফেমিনিজমের এখন থার্ড ওয়েভ যাচ্ছে! অনেকের মতে দ্বিতীয় তরঙ্গেই নারীবাদের সব চাওয়া মিটে গেছে। নতুন করে নারীবাদ মানে র্যা ডিক্যাল মুভমেন্ট বৈ বেশি কিছু হবে না। ভোটাধিকার, সমপারিশ্রমিক তথা লৈঙ্গিক সমতা দ্বিতীয় ওয়েভেই হয়ে গেছে। এখন যারা নারীবাদী হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করতে চায় তাদেরকে একপক্ষ “কিটিবাদী” আখ্যা দেয়। এবং মজার বিষয়, বিগত সময়ে নারীবাদের উপর একচ্ছত্র জনসমর্থন থাকলেও থার্ড ওয়েভে সেটা কমছে। 

    সেই অনুযায়ী বাড়ছে নারীবাদীদের সংখ্যা। বাড়ছে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী নারীদের সংখ্যা। অপরদিকে যারা বলে লৈঙ্গিক সমতা এসেছে, তারাই রাতের বেলার জবে ছেলেদের অগ্রাধিকার দেয় বেশি। এখনও রাত ১২ টার পরে মেয়েদের সেফটি নিয়ে তারাই দোনোমনো করে। কোন মেয়ে ধর্ষণ হবার পর শালীন না অশালীন ড্রেস পরেছিল তা নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলে। 

    দুই দুইটি ওয়েভ মেয়েদের শরীরের জমিদারী থেকে পিতৃতন্ত্রকে হটাতে পারেনি। পারছে না এখনো। তৃতীয় ফেমিনিজম ওয়েভের এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। 

    আমাদের ছোটবেলায় ৮ই মার্চ উইমেন’স ডে নিয়ে আমাদের অত মাথাব্যথা  ছিল না। আমরা ৯০ দশকের স্কুল পড়ুয়া বাচ্চা কেবল জেনারেল নলেজে ভালো নম্বর পেতে ৮ই মার্চ নারী দিবস তা জানতাম। 

    সময় বদলেছে। এখন বিশ্বে ঘটা করে নারী দিবস পালন করা হয়। র্যাালি, সেমিনার করা হয়। নতুন নতুন নাটক সিনেমা বিজ্ঞাপন বানানো হয় এই দিনকে সেলিব্রেশন করার জন্য। 

    নারী দিবস জিনিষটা আমার কাছে হিপোক্রেসি মনে হয়। একদিন নারী নারী করে পালন করে পরদিন আবার সেই নারীর উপর হিংসা, জোচ্চুরি নয়? 

    তবে সদর্থকভাবে দেখতে গেলে যেহেতু একটা দিন পেয়েছি, সেদিন একুল ওকুল ভুলে একটু রাস্তায় নামতে পারি মেয়েরা মিলে! বলতেই পারি নিজেদের কথা! ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে জীবনের চাপে সবসময় বলতেও পারি না মনের কথা। সেই কথাই যদি একদিন রাস্তায় নেমে সকলকে বলি ক্ষতি কোথায়!

    তাই এইবার ২০১৭ সালে ৮ই মার্চ বাংলাদেশে উইমেন মার্চ করলাম আমরা। উইমেন চ্যাপ্টার, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম নারীদের জন্য অনলাইন পোর্টাল। উইমেন চ্যাপ্টারের এডিটর সুপ্রিতি দি পুরো মার্চটির আয়োজন করেছিলেন। পাশে ছিলেন জাকিয়া আপা, সঙ্গীতা আপু, লীনা আপু এবং আরও অনেকে। এই অধমকেও রাখা হয়েছিল অর্গানাইজিং কমিটিতে । যদিও এই অধম র্যাটলির আগে ফেস্টুন বিলানো ছাড়া আর কোন কাজ করে নি। 

    এবছর জানুয়ারিতে ইউএসএ মেয়েদের উইমেন মার্চ নাড়া দিয়েছিল বাংলাদেশী নারীদের মনেও। আর তাই সুযোগ পেয়ে বিশাল মানুষের জমায়েত হয়েছিল এবার বাংলাদেশের উইমেন মার্চে। 

    তবে মজার কথা হচ্ছে পুরুষের সংখ্যা বেশি ছিল এই উইমেন মার্চে। এটা একটা ভালো দিকও। নারী সাইক্লিস্ট এবং বাইকারদের মনোহর মার্চ, সময়টাকে আরও উদ্দীপ্ত করে দেয়। 

    বুধবার বেলা তিনটায় শুরু হবার কথা ছিল উইমেন মার্চ। কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক ঈশ্বর (না প্রকৃতি !)  বারোটা বাজিয়ে দেয়। বৃষ্টি শুরু হলে সাময়িক পন্ড হয়  মার্চের সময়। এরপরেও জমায়েত হতে থাকে মানুষের। সবশেষে বিকাল পাঁচটায় মার্চ শুরু হয় প্রজন্ম চত্বর থেকে শেষ হয় শহীদ মিনারে। 

    অনেক টিভি সাংবাদিক এলেও, সংবাদে এক দুই সেকেন্ডের বেশি উইমেন মার্চের ক্লিপ দেখানো হয় নি। কারণ কোন সেলিব্রেটি ছিল না সেখানে। ছিলাম কামলা খাটা মেয়েরা যারা আদতে উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট ক্রিয়েট করে জিডিপি বাড়াই। 

    “মেয়ে প্রতিবাদ করো”, “মেয়ে তোমার শরীর ট্যাবু নয়”, “সাহস করে ঘুরে দাঁড়াও” এরকম অসংখ্য ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়েছিল মেয়েরা। আর পাঁচ বছর আগেও এটা দেখা যেত না। 

    সম্প্রতি বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে বিশেষ আইনে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। এতে নারীর উন্নতি আরও কয়েক ধাপ পিছিয়ে যাবে, সঙ্গে অল্প বয়সে মা হওয়া মেয়ের সংখ্যা বাড়বে। নারীর জরায়ু বরাবরের মতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ফেস্টুনে ছিল এই নিয়েও প্রতিবাদ।

    আর পাঁচ বছর আগে  একত্রে এত মেয়ে নিজের প্রতিবাদের কথা বলছে এটা ভাবা যেত না। 

    তাই পত্রিকায় আসুক আর না আসুক, টিভিতে কেউ দেখুক না দেখুক, সেলিব্রেটি সমাগম হোক আর না হোক বাংলাদেশের প্রথম এই উইমেন মার্চ ইতিহাস হয়ে  থাকবে। 

    স্পষ্ট বলছি, আর একশ' বছর পর যখন বাংলাদেশের নারীবাদ নিয়ে কেউ আলোচনা করবে, সেদিন উইমেন মার্চ কে তারা উল্লেখিত করবে এক দুর্দান্ত  বিপ্লব হিসেবে। 

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অপার বাংলা | ১০ মার্চ ২০১৭ | ৭৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মৌসুমী চক্রব্ররতী | 127.194.218.63 (*) | ১১ মার্চ ২০১৭ ০৯:০৯82672
  • লেখাটি পড়ে , বড়ই ভাল লাগল । অনেক ধন্যবাদ , এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য , আলোচনার জন্য
  • সোহেলআলম | 190.211.195.175 (*) | ০৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:২৫82673
  • ফাউল কথাবার্তা
  • Biplob Rahman | 340112.231.126712.75 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৯ ০৪:৩৫82675
  • অনেক দেরীতে লেখাটি পড়লাম, আরেক ৮ মার্চ আসন্ন প্রায়।

    " আর একশ' বছর পর যখন বাংলাদেশের নারীবাদ নিয়ে কেউ আলোচনা করবে, সেদিন উইমেন মার্চ কে তারা উল্লেখিত করবে এক দুর্দান্ত বিপ্লব হিসেবে। "

    প্র চ ণ্ড দ্বি ম ত।

    কারণ বাংলাদেশে নারীবাদ প্রধানত বিদেশি অর্থায়ন নির্ভর এনজিওগুলোর খপ্পরে পড়েছে। এই নারীবাদ মধ্যবিত্ত সমাজ সচেতনতায় কিছু ভূমিকা রাখলেও তা দিয়ে নারী মুক্তি বা সমাজের আমূল পরিবর্তন কোনটিই সম্ভব নয়। কারণ নারী মুক্তি ও সমাজ বিপ্লব হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচি, এটি রাজনৈতিক পার্টির কাজ।

    একারণে দেশি-বিদেশি এনজিও গুলো নারীমুক্তি নিয়ে সোচ্চার হলেও গার্মেন্টস নারী শ্রমিকের অধিকারের প্রশ্নে আশ্চর্যজনকভাবে নিরব। নাকি তারা গার্মেন্টস নারী শ্রমিক জনতার বিশাল অংশ বাদ দিয়েই নারী মুক্তি চায়।

    কাজেই বিদেশি তহবিল এসেছে, নারী মুক্তির জিম্মাদার এনজিওরা ভাল ভাল কথা লিখে নারী সমাবেশ করেছেন, এ নিয়ে এতো গদ গদ হওয়ার কিছু দেখি না। নারী দিবসের এসব কর্মসূচির সংগে " পণ্ডস নারী দিবস" বা "ফেয়ার এন্ড লাভলি নারী দিবস" কর্মসূচির কোনো পার্থক্য নাই।
  • Ekak | 90045.207.2356.193 (*) | ০৫ মার্চ ২০১৯ ১০:১৩82676
  • তা, রাজনৈতিক পার্টির নারীরা কি কর্তে আছেন ? তান্রা পার্ছেন না গার্মেন্ট শ্রমিক নারীদের কথা তুলে আনতে ? নাকি, পার্টির হায়রার্কিতে নারীদের জায়্গা নাই, ভয়েস ও নাই। তাই পন্ড্স নারী দিবসের নারীদের এসে সেই কাজ করে দিতে হবে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন