এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • সুভাষ, গান্ধি ও ত্রিপুরী অধিবেশন

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ | ১০২৮২ বার পঠিত
  • ১।
    ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্র বসু প্রথমবারের জন্য ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ওই বছরই গান্ধির সঙ্গে তাঁর বিবাদের শুরু। কোনো আশ্চর্য কারণে অনেক মহল থেকেই এই বিবাদকে ব্যক্তিগত, আবেগজাত, ইত্যাদি নানারকম ঢাকনা দিয়ে পরিবেশন করতে ভালবাসেন, কিন্তু আদতে বিষয়টি ছিল তীব্রভাবে রাজনৈতিক, ভীষণভাবে তিক্ত, ভারতীয় রাজনৈতিককে মহলকে আড়াআড়িভাবে দুই ভাগে ভেঙে ফেলার উপক্রম করেছিল। প্রায় জয় হয়ে আসা যুদ্ধটি সুভাষ নিজের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন। সেটি তাঁর মহত্ব না ব্যর্থতা সে নিয়ে আলোচনা চলতে পারে, চালানো উচিতও, কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে এই বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় আসেইনা, যদিও অবিভক্ত ভারত, বিশেষ করে বাংলার ভবিষ্যতের জন্য গান্ধি-সুভাষ বিতর্ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সম্ভবত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল।

    এই বিতর্কটিতে ঢোকার আগে ১৯৩৭-৩৮ সালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর একবার নজর বুলিয়ে নেওয়া দরকার। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘনিয়ে এসেছে, শুরু হবে বছর খানেকের মধ্যে, কিন্তু তার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এর পাঁচ-ছয় বছর আগে ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসকের উদ্যোগে প্রাতিষ্ঠানিক সাম্প্রদায়িকতার সূচনা হয়েছে, ১৯৩২ সালের ম্যাকডোনাল্ডস সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা ঘোষণার মাধ্যমে। ওই বছরই গান্ধি-আম্বেদকরের মধ্যে সাক্ষরিত হয়েছে পুনা চুক্তি। ১৯৩৫ সালে বাঁটোয়ারার পরের ধাপ হিসেবে পাশ হয়েছে ভারত সরকার আইন, যাতে ভারতীয়দের দ্বারা কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনসভা কংগ্রেস বা লিগ কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি, কিন্তু প্রাদেশিক নির্বাচনে তারা উভয়েই অংশগ্রহণ করেছে। ১৯৩৭ সালেই হয়েছে এই নির্বাচন এবং বাংলা সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কৃষক প্রজা পার্টির নেতা ফজলুল হক।

    সুভাষ-গান্ধি বিতর্কে এই নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই জন্য সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা/ভারত সরকার আইন অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যাপারটি এখানে ছোটো করে দেখে নেওয়া দরকার। নির্বাচন এবং সরকার বলতেই আমরা এখন সার্বজনীন ভোটাধিকারের কথা ভাবি। কিন্তু ১৯৩৭ এর নির্বাচনে সার্বজনীন ভোটাধিকার তো ছিলই না, এমনকি বেশিরভাগ ভারতবাসীরই ভোট দেবার অধিকার ছিলনা। ভোটদানের অধিকার ছিল মূলত অবস্থাপন্ন এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীরই এবং সংখ্যার বিচারে সেটা সামগ্রিক জনসংখ্যার ১৩%র মতো। এবং বৃটিশ ধর্মীয় বিভাজনের পদ্ধতি অনুযায়ী মুসলমান, হিন্দু এবং ইউরোপিয়ান জনগোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট সংরক্ষিত আসন ছিল। অবিভক্ত বাংলার ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাত কমবেশি আধাআধি হলেও ২৫০ টি আসনের আইনসভায় ১১৫ টি আসন বরাদ্দ ছিল মুসলমানদের জন্য, হিন্দুদের জন্য ছিল ৮০ টি। ইউরোপিয়ানরা সংখ্যায় নগণ্য হলেও তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৫ টি আসন। এই বাঁটোয়ারার কথা প্রথম ঘোষণা হয় ১৯৩২ সালে, এবং ওই বছরই আম্বেদকরের সঙ্গে তফশিলী জাতিদের সংরক্ষণ নিয়ে গান্ধি পুনা-চুক্তি করেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী এই ৮০ টির মধ্যে মাত্র ৫০ টি বরাদ্দ হয় বাংলার বর্ণহিন্দুদের জন্য। বলাবাহুল্য পুনা-চুক্তির সবচেয়ে বেশি প্রভাব বাংলায় পড়লেও চুক্তির আলোচনায় কোনো বাঙালি নেতাকে ডাকা হয়নি।

    স্বভাবতই বাঙলার ভদ্রলোক সমাজে এই নিয়ে তীব্র আলোড়ন ওঠে। সেটি অন্যায্যও ছিলনা। এই ভাগাভাগি একেবারেই সংখ্যানুপাতিক ছিলনা। তার কিয়দংশ ম্যাকডোনাল্ডসের অবদান, কিছুটা গান্ধির। কিছুটা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উপরে টেনে তোলার শুভাকাঙ্খার ফসল, কিছুটা রাজনীতি-সক্রিয় বাঙালি ভদ্রলোককে সমঝে দেবার চেষ্টা, বাকিটুকু দ্বিজাতিতত্ত্বের ফলিত প্রয়োগ। কোনটি কত শতাংশ বলা মুশকিল, তবে অন্য সবকিছুর সঙ্গে এর যে একটি তীব্র সাম্প্রদায়িক অভিমুখ ছিল, তা অনস্বীকার্য। সেই সাম্প্রদায়িক অভিমুখ বেশ কিছুটা সাফল্যলাভও করে। ভদ্রলোক প্রতিবাদের এর একটি অংশ সরাসরি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গীতে চলে যান। উল্টোদিকে মুসলমান বুদ্ধিজীবিদের একটি অংশও একই ভাবে সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নেন। বর্ণহিন্দুদের কাছে এই ভাগাভাগি ছিল ইচ্ছাকৃত বঞ্চনা। মুসলমান এবং তফশিলীদের কাছে যা আত্মপরিচয় ঘোষণার সুযোগ। ফলে ভাগাভাগি গভীরতর হয়। স্পষ্টতই বৃটিশের একটি লক্ষ্য তাইই ছিল। অদ্ভুতভাবে দলগুলিও এই বিভাজনে ইন্ধন দেয়। নির্বাচনে মুসলিম লিগ কেবল মুসলমান আসনে অংশগ্রহণ করে। বিভাজন আরও বাড়িয়ে গান্ধির নেতৃত্বে কংগ্রেস অংশগ্রহণ করে কেবলমাত্র হিন্দু আসনগুলিতে। প্রাতিষ্ঠানিক সাম্প্রদায়িকতার দরজা হাট করে খুলে দেওয়া হয়।

    আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এত বিরাট উদ্যমের পরেও বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা জয়ী হয়নি। বর্ণহিন্দু আসনগুলিতে কংগ্রেস বিপুলভাবে জিতলেও, মুসলমান আসনে মুসলিম লিগ একেবারেই ভালো করেনি। বেশিরভাগ আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টি হয় মূলত মুসলমান চালিত কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ দল, ফজলুল হকের কৃষক-প্রজা পার্টি ( মুফাফফর আহমেদ এবং নজরুল ইসলাম উভয়েই এই পার্টির ঘনিষ্ঠ ছিলেন)। ফজলুল হক কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকারের প্রস্তাব দেন। ১৯০৫ সালের ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম উভয়ের প্রতিনিধিত্বে ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এবং শুনতে আশ্চর্য লাগলেও গান্ধির নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ দল কংগ্রেস দ্বিতীয়বার ধর্মনিরপেক্ষতার পিঠে ছুরি মারে (প্রথমটি ছিল কেবলমাত্র হিন্দু আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত)। কংগ্রেস জানায়, তারা জোট সরকারে অংশগ্রহণ করবেনা, সমর্থনও দেবেনা। ফজলুল হক বাধ্য হন মুসলিম লিগের সঙ্গে জোটে যেতে।

    ২।
    সাম্প্রদায়িকতার এই অবাধ চাষবাসের মধ্যে দীর্ধ নির্বাসন/অসুস্থতার পর্ব কাটিয়ে সুভাষ দেশে ফেরেন। ১৯৩৮ এর শুরুর দিকে নির্বাচিত হন সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে। লক্ষ্য হিসেবে তিনি ঘোষণা করেন সম্পূর্ণ স্বরাজ। তাঁর সামনে ছিল এই লক্ষ্যে জনসমষ্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ। ভারতবর্ষে, বিশেষ করে বাংলায় যে সাম্প্রদায়িক গোলযোগ ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নিজ দায়িত্বে পাকিয়ে তুলেছিল, সেই গোলমালের সমাধান করার বিপুল কাজও তাঁর কাঁধে চেপেছিল। কংগ্রেসের পূর্বতন ভুল সংশোধনের কাজটি সহজ ছিলনা। ১৯৩৮ সালে সুভাষ ও তাঁরা দাদা শরৎ বাংলায় কংগ্রেসের সমর্থনে কৃষক প্রজা পার্টির সরকার গঠনের একটি পরিকল্পনা করেন। সরকার থেকে মুসলিম লিগকে সরিয়ে সেখানে কংগ্রেস আসবে, এবং হিন্দু-মুসলমান যৌথ নেতৃত্বে তৈরি হবে নতুন সরকার -- এটাই ছিল লক্ষ্য। কৃষক-প্রজা পার্টির ভিত্তি ছিল গরীব এবং মধ্য কৃষকরা। কংগ্রেসের হিন্দু জমিদার ও 'সর্বভারতীয়' ভিত্তির সঙ্গে সেটা ছিল স্পষ্টই আলাদা। সুভাষ চিত্তরঞ্জন দাশের শিষ্য হিসেবে মুসলমান জনগোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। একই সঙ্গে তাঁর একটি র‌্যাডিকাল বাম ঘরানার আদর্শও ছিল, যেটা কৃষক-প্রজা পার্টির লক্ষ্যের সঙ্গে সুসমঞ্জস । সুভাষ বাম ও র‌্যাডিকাল গোষ্ঠীকে সঙ্ঘবদ্ধ করতেও সক্ষম হয়েছিলেন। এবং পরিকল্পনায় বহুদূর এগিয়েও গিয়েছিলেন। পরিকল্পনার শেষ ধাপে তিনি ওয়ার্ধায় গিয়ে (গান্ধি তখন ওয়ার্ধায় ছিলেন) গান্ধির সঙ্গে আলোচনা করে অনুমোদনও নিয়েছিলেন। ব্যাপারটা জরুরি ছিল, কারণ সুভাষ সভাপতি হলেও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে তখন গান্ধি-প্যাটেলের একাধিপত্ব।

    এরপরই ঘটে অদ্ভুত সেই ঘটনা, যা, অসাম্প্রদায়িক বোঝাপড়ার সম্ভাবনাকে আবারও সম্পূর্ণ উল্টোদিকে ঠেলে দেয়। আলোচনা করে কলকাতায় ফিরে আসার পরই, কলকাতার একচেটিয়া ব্যবসায়ী মহলে সুভাষের অ্যাজেন্ডা নিয়ে বিরূপতা দেখা যায়। কীকরে এই পরিকল্পনা ফাঁস হল তার বিশদ বিবরণ পাওয়া না গেলেও, যা জানা যায়, যে, এর পরই হক মন্ত্রীসভার সদস্য নলিনীরঞ্জন সরকার (পরবর্তীতে এই শিল্পপতি হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের মধ্যে যাতায়াত করবেন), যিনি তখনও কংগ্রেসের কেউ নন, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ও এক বিশিষ্ট সর্বভারতীয় শিল্পপতিকে নিয়ে গান্ধির সঙ্গে দেখা করেন। সেই শিল্পপতির নাম ঘনশ্যামদাস বিড়লা। এবং অবিলম্বে গান্ধি মত বদলে সুভাষকে চিঠি লেখেনঃ "নলিনীরঞ্জন সরকার, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এবং ঘনশ্যামদাস বিড়লার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা আমাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, যে, বাংলার বর্তমান মন্ত্রীসভা ( মুসলিম লিগ এবং কেপিপির আঁতাত) বদলানো উচিত নয়"। চিঠিটি সুভাষের হাতে পাঠানো হয় ঘনশ্যামদাস বিড়লার হাত দিয়েই। বজ্রাহত (বজ্রাহত শব্দটি আলঙ্কারিক নয়, সুভাষ স্বয়ং ইংরিজিতে 'শক' শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তারই বাংলা) সুভাষ উত্তরে যা লেখেন, তা মূলত এই, যে, আপনার সঙ্গে এত আলোচনার পর আপনি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত বদলালেন, এই তিনজনের কথায়? বোঝাই যাচ্ছে বাংলায় যারা কংগ্রেস চালায়, তাদের চেয়ে এই তিনজনেরই গুরুত্ব আপনার কাছে বেশি।

    এই চিঠিটিতে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে সুভাষের দৃষ্টিভঙ্গী এবং চিরাচরিত কংগ্রেসি ঘরানার সঙ্গে তীব্র মতপার্থক্যের সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। চিঠিতে সুভাষ লিখছেনঃ
    "সিন্ধের ব্যাপারে মৌলানা সাহেবের সঙ্গে অমি সহ ওয়ার্কিং কমিটির আরও কিছু সদস্যের মতপার্থক্য হয়। এবং এখন বাংলার ক্ষেত্রে আমাদের মতামত সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে।
    মৌলানা সাহেবের মত, যা মনে হয়, বাংলার মতো মুসলমান প্রধান প্রদেশগুলিতে সাম্প্রদায়িক মুসলমান মন্ত্রীসভাগুলিকে বিব্রত করা উচিত নয়.... আমি উল্টোদিকে মনে করি যথা শীঘ্র সম্ভব জাতীয় স্বার্থে হক মন্ত্রীসভাকে ফেলে দেওয়া উচিত। এই প্রতিক্রিয়াশীল সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে বাংলায় পরিবেশ তত সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠবে।"

    এখানে অবশ্যই হক মন্ত্রীসভা বলতে কেপিপি বা ফজলুল হকের কথা বলা হচ্ছেনা, বরং সামগ্রিক মন্ত্রীসভাটির কথা বলা হচ্ছে, যেখানে কিছু সাম্প্রদায়িক শক্তিও ঢুকে বসে ছিল। স্পষ্টতই সুভাষ অসাম্প্রদায়িক একটি সরকার গড়তে চেয়েছিলেন, হিন্দু-মুসলমানের প্রতিনিধিত্বই যার ভিত্তি, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা যেখানে বর্জনীয়। এবং স্পষ্টই মৌলানা বা গান্ধির এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা ছিলনা, যদি না উল্টো দিকে যাওয়াটাই তাঁদের অঘোষিত লক্ষ্যের অন্তর্গত হয়ে থাকে।

    এই চিঠিতে সুভাষের আক্রমণের কেন্দ্রে ছিলেন গান্ধি এবং মৌলানা। মৌলানার সঙ্গে তাঁর বিরোধের কথা সুভাষ চিঠিতে স্পষ্ট ভাবেই লিখেছেন, যদিও গান্ধির আকস্মিক মত বদল সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। সে সম্পর্কে একটি কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় শরৎ বসুর তৎকালীন সচিব নীরদচন্দ্র চৌধুরির বয়ানে, যিনি সেই সময় সুভাষেরও চিঠিপত্রের দায়িত্ব বহন করতেন। নীরদের বক্তব্য অনুযায়ী, সুভাষ বিশ্বাস করতেন, যে কেবল মৌলানা নয়, গান্ধির মত পরিবর্তনের জন্য ঘনশ্যামদাস বিড়লাও দায়ি। তার কারণ একটিই। ঘনশ্যামদাসের ধারণা ছিল, যে, যদি হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য স্থাপিত হয়, তৈরি হয় কংগ্রেস এবং কেপিপির যৌথ সরকার, তাহলে কলকাতার অর্থনীতি এবং ব্যবসায় মারোয়াড়ি প্রাধান্য বিপদের মুখে পড়বে।

    সুভাষের লিখিত চিঠিপত্রে এই সন্দেহের কোনো উল্লেখ অবশ্যই পাওয়া যায়না। তবে বিশ্লেষণের বিচারে নীরদের পর্যবেক্ষণটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রথমত, গান্ধির উপর 'ঘনশ্যামদাসের প্রভাব অনস্বীকার্য ছিল। তিনি ছিলেন গান্ধির প্রধান অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক। এবং তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মনে করার কোনো কারণ নেই। দেখা যাচ্ছে, এর চার বছর পর ১৯৪২ সালে তিনি মহাদেব দেশাইকে বলছেন "আমি (বাঙলা বিভাগের পক্ষে"। মনে রাখতে হবে এটি বলা হচ্ছে, ১৯৪২ এ। তখন ভারত ছাড় আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে এবং বাংলার বিভাজন তখনও রাজনৈতিক ভাবে আলোচ্যও নয়। দ্বিতীয়ত, গোষ্ঠীগতভাবে অবাঙালি শিল্পপতিরা পরবর্তীতে(৪৫-৪৬) বাংলা ভাগের উদ্যোগের পুরোভাগে ছিলেন। বিড়লা, জালান, গোয়েঙ্কা এবং বহুআলোচিত নলিনীরঞ্জন সরকার উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে থেকে আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করতেন। প্রদেশের সব এলাকা থেকে মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীরা সংগঠিতভাবে কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানানও যে তাঁরা বাংলা বিভাজনের সমর্থক।

    সুভাষের চিঠিতে এই সব প্রসঙ্গের কোনো উল্লেখ নেই। এর অনেককিছুই ঘটবে ভবিষ্যতে, ফলে জানার কোনো উপায়ও ছিলনা তাঁর। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে তাঁর উচ্চারিত বাক্যগুলি পরবর্তীতে অমোঘ ভবিষ্যৎবাণী হিসেবেই দেখা দেয়। তীব্র ভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানোর বিরুদ্ধেও তিনি সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু এই আবেগী উচ্চারণের কোনো ফল, বলাবাহুল্য হয়নি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে বসু ভ্রাতৃদ্বয়ের কার্যকরী পরিকল্পনাকে বাতিল করা হয়। কংগ্রেস-কেপিপি সরকারের সম্ভাবনায় তৃতীয়বারের মতো ছুরি মারা হয়। বাংলার সাম্প্রদাহিকতার উত্থানে যাকে, এক কথায় কংগ্রেস কথা গান্ধির সক্রিয় উদ্যোগ বলা যায়। এবং সুভাষ ও গান্ধির তিক্ততার ভিত্তিভূমি প্রস্তুত হয়।

    ৩।
    বিরোধের পরবর্তী এবং তিক্ততম অধ্যায়টি শুরু হয় এর অব্যবহিত পরেই। আগেই বলা হয়েছে সুভাষের র‌্যাডিকাল এবং বাম ঘরানার একটি অ্যাজেন্ডা ছিল। তার মূল কথা ছিল পূর্ণ স্বরাজের দাবী। কৃষকের অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, এই পরিপূর্ণ বাম অ্যাজেন্ডাগুলিও তাঁর বৃহত্তর লক্ষ্যে ছিল। কংগ্রেসের নেতৃত্বে একটি 'পরিকল্পনা কমিটি'ও তিনি তৈরি করেন, যে ধারণাকে পরে নেহেরু ব্যবহার করবেন তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বে। কৌতুকজনক ব্যাপার এই, যে, সেই ৩৭-৩৮ সালে সুভাষ ও নেহেরুকে একই সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর ধরা হত। সেই কারণেই নেহেরুকে সুভাষ এই পরিকল্পনা কমিটির দায়িত্ব দেন। মেঘনাদ সাহাও এর সগে যুক্ত ছিলেন। হরিবিষ্ণু কামাথের মতো ব্যক্তিকেও কমিটির গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখেছিলেন সুভাষ। মজা হয় এরপর। ডিটেলের প্রতি, সত্যিকারের পরিকল্পনার প্রতি বিমুখতা দেখিয়ে নেহেরু বিষয়টির পতনের সূচনা করেন এবং কামাথ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। এই ডিটেলহীন আলগা আদর্শবাদ পরবর্তীতে নেহেরুর প্রধানমন্ত্রীত্বের সম্পদ হয়ে উঠবে, পরিকল্পনার আড়ালে কংগ্রেসঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের দেওয়া হবে লাইসেন্সরাজের অভয়ারণ্য, যা প্যাটেলের দক্ষিণপন্থার সঙ্গে চমৎকার খাপ খেয়ে যাবে। শিল্পপতিরাও এতদিনের পৃষ্ঠপোষকতার বিনিময়ে পাবেন বিভক্ত কিন্তু রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জহীন অখন্ড একটি বাজার, যা তাঁদের কাম্য ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর সেই ঘটনা এখানে আলোচ্য নয়, আপাতত বিষয়টা এই, যে, সুভাষ চিরাচরিত দক্ষিণপন্থী কংগ্রেসি পৃষ্ঠপোষকতার বদলে একটি র‌্যাডিকাল বাম ঘরানার মুখ হয়ে উঠতে সক্ষম হন। তাঁর দাবী ছিল আসন্ন ইউরোপিয়ান সংকটকে কাজে লাগিয়ে পূর্ণ স্বরাজের দিকে এগিয়ে যাওয়া। ফলে গান্ধির সঙ্গে তীব্রতম সংঘাত অনিবার্যই ছিল।

    বৃটিশের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের প্রশ্নে এই তিক্ত বিরোধ শুরু হয় ১৯৩৮ এর শেষের দিকেই। আসন্ন ইউরোপীয় সংকটের প্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বরের এআইসিসি অধিবেশনে রাজাগোপালাচারি একটি ধোঁয়াটে প্রস্তাব আনেন, যেখানে ব্রিটিশের শুভবুদ্ধির প্রতি একটি আবেদন জানানো হয়, যে, যদি যুদ্ধ আসে, তবে ব্রিটেন যেন ভারতের প্রতি যথার্থ ব্যবহার করে। এই প্রস্তাব নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই বাম ও দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে দ্বৈরথ শুরু হয়। এক অর্থে এটি বৃটিশের সঙ্গে আপোষের উদ্যোগ, স্পষ্টতই সুভাষ বা র‌্যাডিকালরা, বিষয়টিকে সেইভাবেই দেখেন। তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা নীহারেন্দু দত্ত মজুমদারের ভাষ্য অনুযায়ী, বামরা এই প্রস্তাবের একটি সংশোধনী আনেন, কিন্তু তা ওয়ার্কিং কমিটিতে গৃহীত হয়নি। সোমনাথ লাহিড়ি ও পিসি যোশি সহ ৭৩ জন প্রতিনিধি ওয়াক আউট করেন। সুভাষ তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। সেই দিনই তাঁরা সুভাষের কাছে প্রস্তাব দেন, যে আশু কংগ্রেসের মধ্যে একটি যথার্থ মেরুকরণের প্রয়োজন।

    গান্ধি এই পুরো ব্যাপারটিতেই অত্যন্ত ক্ষিপ্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁর চোখের সামনেই এইভাবে একটি বৃহৎ বাম জোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। স্পষ্টতই সুভাষ নিজেও এই ঘরানার চিন্তা পোষণ করতেন। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আপোষহীন সংগ্রামের স্বার্থে একজন বাম ঘরানার নেতার ক্ংগ্রেস সভাপতি হওয়া উচিত, সুভাষের এই চিন্তার সঙ্গে জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো নেতারা একমত হন, এবং বাম জোট ক্রমশ বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যায়। সুভাষ কংগ্রেস সভাপতি পদে নিজের প্রার্থীপদ ঘোষণা করেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি জানান "বহু লোকে বিশ্বাস করেন, যে, আসন্ন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সামনের বছর কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী এবং ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে একটি আপোষের সম্ভাবনা আছে। স্বভবতই দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী কংগ্রেস সভাপতি পদে এমন কোনো বামপন্থীকে চায়না, যে আপোষ এবং দরকষাকষিতে পথের কাঁটা হতে পারে।"

    এর চেয়ে স্পষ্ট কথা আর হওয়া সম্ভব নয়। এবং এরপর যা হয়, তা ইতিহাস। গান্ধী আপোষহীন বাম ঘরানার কোনো র‌্যাডিকালকে সভাপতি পদে মেনে নিতে রাজি হননা। পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিতেও না। পূর্ণ স্বরাজপন্থী কাউকে সভাপতি করতেও তাঁর তীব্র অনীহা দেখা দেয়। আচার্য নরেন্দ্র দেবের মতো একজন আপোষে অরাজি মধ্যপন্থীর নামও প্রস্তাব করা হয়, কিন্তু গান্ধিশিবির অনড় থাকে। গান্ধি পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিজের (এবং অবশ্যই প্যাটেলের) পক্ষের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। স্পষ্টতই দক্ষিণপন্থী শিবির গান্ধি ম্যাজিকের উপরেই সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছিল। স্বাভাবিক অবস্থায় গান্ধির আশীর্বাদধন্য সীতারামাইয়ার জয়লাভ অনিবার্য ছিল। কিন্তু ১৯৩৮ সাল ঠিক স্বাভাবিক সময় ছিলনা। ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথমবার র‌্যাডিকাল এবং বামপন্থীদের জোটকে সুভাষ ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হন সেই বছর। সঙ্গে ছিল তাঁর নিজের ক্যারিশমা ও র‌্যাডিকাল অ্যাজেন্ডা। ফলে ভোটাভুটিতে কংগ্রেস সোশালিস্ট পার্টি এবং কমিউনিস্টরা একযোগে সুভাষের পক্ষে ভোট দেন। এবং গান্ধির প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রথমবার র‌্যাডিকাল অ্যাজেন্ডার একজন নেতা কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। এই জয় কোনো ব্যক্তিগত লড়াই ছিলনা, ছিল ডান ও বামের রাজনৈতিক যুদ্ধের ফলাফল।

    ৪।
    কিন্তু এই আখ্যান, সকলেই জানেন, সুভাষের জয়ের কাহিনী নয়। বরং সুভাষ ও তাঁর অ্যাজেন্ডার হেরে যাবার গল্প। গান্ধির নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থী প্রত্যাঘাতের কাছে সেই চূড়ান্ত পরাজয়ের গল্পের সূচনা হয় এর পরেই। আপাতদৃষ্টিতে সভাপতিত্বে জয়লাভের পর সুভাষের সামনে আর বড় কোনো বাধা থাকার কথা নয়। গণতান্ত্রিক পথে জয়লাভের পরে র‌্যাডিকাল অ্যাজেন্ডার অগ্রগতির রাস্তা খুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু স্বভাবতই গান্ধি ও প্যাটেল এত সহজে জমি ছেড়ে দিতে রাজি হননি। গান্ধি সুভাষের জয়কে নিজের ব্যক্তিগত পরাজয় বলে ঘোষণা করেন। জবাবে সুভাষ আবার আবেগী হয়ে পড়েন ('যদি অন্য জনতার আস্থা অর্জন করেও আমি ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির আস্থা অর্জন না করতে পারি, তবে তা আমার পক্ষে খুবই বেদনাদায়ক') এর পর খুব তুচ্ছ একটি টেলিগ্রামকে কেন্দ্র করে সুভাষ এবং শরৎ বাদ দিয়ে গোটা ওয়ার্কিং কমিটি পদত্যাগ করে। এই জটিল পরিস্থিতিতে সুভাষের পুরোনো অসুস্থতাও আবার মাথা চাড়া দেয়। একেবারে অসময়ে। কিন্তু এইসব চাপে সুভাষের ব্যক্তিগত অসুস্থতা বেড়ে যাওয়া ছাড়া আর রাজনৈতিক কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ কংগ্রেস সভাপতিকে পদচ্যুত করার কোনো বন্দোবস্তো কংগ্রেস সংবিধানে ছিলনা। এবং পদ্ত্যাগীদের বাদ দিয়ে সভাপতি নিজের মতো ওয়ার্কিং কমিটি গড়ে নেবারও অধিকারী।

    এই ভাবে ১৯৩৯ সাল চলতে থাকে। সুভাষ যে ইউরোপীয় সঙ্কটের পূর্বানুমান করেছিলেন, তা আর মাত্র কয়েক মাস দূরে। মার্চ মাসে ত্রিপুরীতে কংগ্রেস অধিবেশন স্থিরীকৃত হয়। সুভাষ তখনও অসুস্থ। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তিক্ততা, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, অবিশ্বাস চরম জায়গায় পৌঁছেছে। এতটাই, যে, অসুস্থ সুভাষকে স্ট্রেচারে করে সভাস্থলে আনলে বিপক্ষশিবিরের কেউকেউ কটাক্ষ করেন, যে, তিনি বগলে রসুন নিয়ে জ্বর বাধিয়েছেন। আর এই অধিবেশনেই দক্ষিণপন্থী শিবির তাদের অভাবনীয় চালটি চালে। ত্রিপুরী অধিবেশনে গোবিন্দবল্লভ পন্থ আসন্ন ওয়ার্কিং কমিটি গঠন সম্পর্কে একটি অভূতপূর্ব প্রস্তাব আনেন। আসন্ন ওয়ার্কিং কমিটি কীভাবে গঠিত হবে? পন্থ প্রস্তাব অনুযায়ী, সভাপতি নিজে নিজে করবেননা, "গান্ধিজির ইচ্ছানুসারে সভাপতি তাঁর ওয়ার্কিং কমিটি তৈরি করবেন"। অর্থাৎ, নির্বাচিত সভাপতি নয়, আসল কথাটি হল গান্ধির ইচ্ছা। এই অদ্ভুত ব্যাপারটির মানে বোঝাতে, লেনিন, মুসোলিনি, হিটলারের সঙ্গে গান্ধিকে তুলনা করে বলেন, "আমাদের গান্ধি আছেন", তো সেই সুবিধে নেওয়া হবেনা কেন? রাজাজি প্রস্তাবের পক্ষে বলতে গিয়ে বলেন, যে, সুভাষের ভরসায় কংগ্রেসকে অর্পণ করার অর্থ হল ফুটো নৌকোয় নর্মদা নদী পার হওয়া। বিতর্ক চলাকালীনই, গান্ধীজি যে এই প্রস্তাবের পক্ষে রাজকোট থেকে টেলিফোনে সম্মতি দিয়েছেন, সেই মর্মে স্থানীয় খবরের কাগজে একটি রিপোর্টও বার হয়। ফলে গান্ধির অনুগামীরা সকলেই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন।

    উল্টোদিকে সুভাষের ছিল বৃহৎ র‌্যাডিকাল জোট। তার একটি বড় অংশ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও, কোনো অজ্ঞাত কারণে কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি তাদের বিরোধিতার সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে বাতিল করে এবং ভোটদানে বিরত থাকে। ফলে পন্থ প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়। এবং সুভাষের হাত থেকে ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের অধিকার বস্তুত কেড়ে নেওয়া হয়। এক ধাক্কায় বামপন্থীদের জয়কে পরিণত করা হয় পরাজয়ে। প্রসঙ্গত সুভাষ সন্দেহ করেন, আরেক সমাজতন্ত্রী নেহেরু তাঁর পিঠে ছুরি মেরেছেন, এবং এরপরই তাঁদের বহুমাত্রিক তীব্র তিক্ততার শুরু।

    এর পরে বাকিটুকু বাম অ্যাজেন্ডার পরাজয়ের শেষাংশ মাত্র। সুভাষ নেহেরুর সঙ্গে তীব্র পত্রবিতর্কে জড়ান। গান্ধির সঙ্গে ওয়ার্কিং কমিটি নিয়ে বাদানুবাদে জড়ান। সবই তাঁর চিঠিপত্রে পাওয়া যায়। সে অতি চিত্তাকর্ষক উপন্যাসোপম ব্যাপার। সুভাষ জেদি যুবকের মতো গান্ধিকে অভিযোগ করছেন, জবাবে গান্ধির কাটাকাটা আবেগহীন স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান, এবং সঙ্গে অব্যর্থভাবেই সুভাষের শুভকামনা। সুভাষ লিখছেন পন্থ প্রস্তাবের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই, তিনি সভাপতি হিসেবে পুরোটাকেই চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন, কিন্তু করেননি, কারণ তীব্র ভেদাভেদ তাহলে দুনিয়ার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। একই কারণে তিনি পদত্যাগ করতে চাননা, কারণ সেটা খুব খারাপ একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। গান্ধি জবাবে প্রায় ঋষির মতই নিস্পৃহ। বাকি যা হয় হোক, তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থানে অটল থাকছেন । ফলে কোনো আপোষ হয়না। পরবর্তীতে কলকাতা অধিবেশনে সুভাষ পদত্যাগ করেন, কংগ্রেসের ইতিহাসে যা খুব খারাপ উদাহরণ হিসেবেই থেকে যায়, যতদিন না খারাপতর উদাহরণরা এসে ব্যাপারটি ভুলিয়ে দিতে পারে। বৃহৎ বাম নেতৃত্বের বদলে গান্ধী-প্যাটেল রাজত্বের রাস্তা নিষ্কন্টক হয়। নেহেরু পোশাকি সমাজতন্ত্রী হিসেবে এই জোটের অংশ হিসেবে থেকে যান, যা কংগ্রেসের ভাবমূর্তির পক্ষে খুবই ভাল হয়েছিল পরবর্তীতে। দক্ষিণপন্থী জোটের নেতৃত্বে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস ইউরোপীয় সংকটে নিষ্ক্রিয় থাকে। সুভাষের ভবিষ্যৎবাণীকে যথার্থ প্রমাণ করে তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী প্রতিরোধই গড়ে তোলেনি ওই তিন বছর। একমাত্র সুভাষ জার্মানি থেকে ফ্রি ইন্ডিয়া রেডিও সম্প্রচার শুরু করার পরই ভারত-ছাড় আন্দোলন শুরু হয়। হয়তো ঘটনাচক্র, হয়তো নয়। কংগ্রেস এবং লিগ রাজনীতির ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে সাম্প্রদায়িকতা বাংলা তথা গোটা উপমহাদেশে তার কালো ছায়া বিস্তার করে, যে ঘরানাকে সুভাষ ভাঙতে চেয়েও পারেননি। বা কংগ্রেসের ভাঙন এড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবেই ভাঙেননি। কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে পন্থ প্রস্তাবকে পদাধিকারবলে অসাংবিধানিক হিসেবে নাকচ করে দিলে কী হতে পারত, তা নিয়ে বড়জোর এখন জল্পনা হতে পারে। ইতিহাস তাতে বদলাবেনা।


    ১. Bengal Devided The unmaking of a Nation -- Nitish Sengupta p 61-62
    ২. Congress President: Speeches, Articles, and Letters January 1938-May 1939 Subhas Chandra Bose (Author), Sisir Kumar Bose & Sugata Bose (Eds) p. 123 (নীতীশ সেনগুপ্তর পূর্বোক্ত বইয়েও এই চিঠির উল্লেখ আছে, কিন্তু অর্থগত ভাবে এক হলেও চিঠির বয়ান সামান্য আলাদা , এই লেখায় এই বইয়ের বয়ানটির অনুবাদই ব্যবহার করা হয়েছে)
    ৩. Nitish Sengupta p. 63
    ৪. Raj, Secrets, Revolution: A Life of Subhas Chandra Bose -- Mihir Bose p. 151
    ৫. Bengal Divided: Hindu Communalism and Partition -- Joya Chatterji p. 291
    ৬. Joya Chatterji p. 291
    ৭. Mihir Bose p. 153
    ৮. Mihir Bose p. 154
    ৯. Mihir Bose p. 158 (পন্থ এবং রাজাজির বক্তৃতাংশ দুটিই এখান থেকে নেওয়া)।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ | ১০২৮২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • b | 562312.20.2389.164 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:৪৬79454
  • খনুবাবু বলেছেন
    "সুভাষ বাবু বাঙালি ন্যাশনালিস্ট ছিলেন না, সর্বভারতীয় অর্থেই দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ছিলেন, এবং সেটাই তাঁকে অন্য সর্বভারতীয় নেতাদের ভয় পাবার মূল কারণ।"
    দুটো পয়েন্ট লিখি। ফুট কাটাও বলতে পারেন।
    ১। মণীন্দ্র গুপ্ত যখন আর্মিতে ছিলেন, লাহোরে, ১৯৪৪-৪৬-এ, দুজন বাঙালীকে নিয়ে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির সাধারণ জওয়ানরা উলুৎপুলুৎ ছিলো। ডোগরা রেজিমেন্ট থেকে ম্যাড্রাস রেজিমেন্ট অবদি। তাদের মধ্যে একজন সুভাষ বোস।
    ২। ত্রিপুরী কংগ্রেসে একজন দক্ষিণ ভারতীয়, নাম ভুলে যাচ্ছি, পরে ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা হয়েছিলেন, সুভাষের জন্যে প্রচুর ভোট জোগাড় করে এনেছিলেন। ওনার জন্যেই, দক্ষিণী হয়েও সীতারামাইয়া হেরে যান।
  • PM | 9001212.30.90034.46 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:১৩79455
  • ঐ ডেট ট্র্যাপ এ এখন পাকিস্তান আছে--- ম্যান পাওয়ার আর এগ্রি প্রোডাক্ট ছাড়া কিছু এক্সপোর্ট করার নেই
  • | 340123.99.121223.133 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৩৯79456
  • পাকিস্তান বা বাংলাদেশের ইকোনোমির যাঁরা খবর রাখেন, তাঁরা বলতে পারবেন, পাকিস্তান এ প্রোটেকশনিজম চালু হয়ে ছিল কিনা ১৯৪৭ এর পরে।
  • | 340123.99.121223.133 (*) | ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০০79464
  • এই 'আলেখ্য' ধাঁচের বইটির কয়েকটা ইন্টারেস্টিং দিক উল্লেখ না করে পারছি না, পপুলার কনজাম্পশনের জন্য যাঁরা ইতিহাস লেখার কথা ভাবছেন তাঁদের পক্ষে একেবারে ফেলে দেবার মত না।

    প্রথমত বাজেট। বাজেট কম হলেও, ডকুমেন্ট ছাপার দিকে একটা আগ্রহ, মূলতঃ স্থায়ী প্রদর্শনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে।
    লাজপত রাই এর উপরে ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচারের খবর আর ভগত সিং দের কার্যক্রম কে সম্ভবত একই পাতায় একই ধরণের গুরুত্ত্ব দিয়ে ছাপা, ইনটারপ্রেটিভ মন্তব্য ছাড়া। এটা আজকের ফেসবুক ঐতিহাসিক দের প্রতিযোগিতার আমলে কল্পনাতীত।

    যেটি আলেখ্য মাত্র, যার মূল উদ্যোগ সরকারের, এমন একটা সরকারের যার ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্ক মূলতঃ ঐতিহাসিক ভুলের ক্ষেত্রে ঃ-)) , এবং ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট দের ক্রেডিবিলিটি একা হাতে স্তালিন ই শেষ করে দিয়ে গেছেন যেখানে বহুদিনের জন্য ঃ-)) সেই পরিস্থিতিতে স্রেফ দুটি প্যাঁক, এক কমিউনিস্ট রা দেশ কে ভালো বাসে না , ৪২ এ ভারত ছাড়ো তে যোগ দেয় নি, আর দুই সুভাষ কে কমিউনিস্ট রা ভালো বাসে না, মোটামুটি এই গোত্রের ই সোপ অপেরার ন্যায় অভিযোগ, সেই প্যাঁক দুটিকে ম্যানেজ করতে গিয়ে বামেরা পরিশ্রম করে বই অব্দি নামিয়েছেন এমনকি বলা যায় না, হয়তো বই কে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক দের সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠতাও করেছিলেন, অথচ বইটা যদি ৮৬ সালে বেরিয়ে থাকে তখন রাজনৈতিক সখ্যতার জায়গা কম ই ছিল। এই মজা গুলো উল্লেখ না করে জাস্ট পারা গেল না। ঃ-))) খ
  • de | 238912.57.2356.10 (*) | ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৬79465
  • বা’হ! পড়ছি!
  • | 340123.99.121223.135 (*) | ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩২79466
  • রুদ্রাংশু বাবুর প্রবন্ধের জে স্টোর লিংক। এটা আমার বুক রিভিউ সংক্রান্ত খুঁত খুঁতে টই তেও যেতে পারে। একটা বই এর রিভিউ করতে গিয়ে সেই বিষয় টার বিতর্কে সরাসরি অংশগ্রহণ। আমাদের আমলে একেই রিভিউ বলা হত মাইরি, এতে রেটিং নাই।

    https://www.jstor.org/stable/4286000?seq=1#page_scan_tab_contents

    ক্রিস বেইলি র ওবিচুয়ারি - যেটা আবার একটা ছোটো রিভিউ। ইভ্যালুয়েশন তো হবে, অবিচুয়ারি তেও হবে।

    গার্ডিয়ান https://www.theguardian.com/education/2015/apr/23/sir-christopher-bayly
  • | 340123.99.121223.134 (*) | ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১০79467
  • আমার মনে হয় একটা জিনিস একটু ক্লিয়ার করার দরকার আছে। 'সোশাল হিস্টরি' ক্যাটিগোরি টা অনেক ক্ষেত্রেই বামপন্থী ঐতিহাসিক দের সঙ্গে জড়িয়ে দেখা টা আমাদের অভ্যেস হয়ে গেছে। এটা সব সময়ে সত্যি না। ভারতের ইতিহাস রচনার ট্র্যাডিশনে এটা বামপন্থীদের হাত ধরে এলেও, সোশাল হিস্টরি যথার্থ ভাবে অ্যাকসেসিবল হয়েছে একটু কম। প্রচুর ভালো সোশাল হিস্টরি র , সাধারণ পাঠকের জন্য লেখা অসাধারণ বই আছে, যেগুলো বাম পন্থী ঐতিহাসিক দের লেখা না। রয় পোর্টার এর লন্ডন এর ইতিহাস এক্ষেত্রে আমার পড়া সেরা উদাহরণ।

    কেন অনেক পাঠকের জন্য লেখা ইতিহাস , বিশেষত সোশাল হিস্টরি, বাংলাতে হলেও, শুধু মাতৃভাষায় ইতিহাস বিষয়ে উচ্চতম স্তরের জ্ঞান চর্চা র থেকে উদ্দেশ্যে একটু আলাদা সেটা পরে সুযোগ পেলে আলোচনা করা যাবে।
  • | 340123.99.121223.132 (*) | ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:০৫79462
  • Comment from Ishan on 22 January 2019 01:51:43 IST 89900.222.34900.92 (*) #

    "...যেমন রামচন্দ্র গুহর ইতিহাস মূলত ভারতীয় জাতিয়তাবাদী ঘরানার। সেখানে দেশভাগের মূল কারণ জিন্না, স্পষ্ট করে না হলেও বক্তব্যের ধরণে সেটা পরিষ্কার। উল্টো দিকে জয়া চ্যাটার্জি কেম্ব্রিজ স্কুলের। দেশবিভাগে হিন্দু ভদ্রলোকের দায় তুলে ধরাই তাঁর অ্যাজেন্ডা। এর কোনোটিই যে মিথ্যে তা নয়, কিন্তু খন্ডচিত্র। প্রতিটি অ্যাজেন্ডায়ই কিছু জিনিস অপ্রয়োজনীয় বলে বাদ দিতে হয়। দেওয়া হয়। এই অনুল্লেখগুলিও তাই।

    এবার, এগুলি ইংরিজিতে লেখা। নানা স্কুল, স্বীকৃতি, ঘরানা এইসব মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আছে। যা আমার নেই। আমার ঘরানা অন্য। আমি বাংলা ভাষায় লিখি, মোটে তেরোটি লোক আমার লেখা পড়ে, পাবলিশ অর পেরিশের গল্প নেই। সেটাই আমার জোর। এখানে বাংলা শব্দটাও, ইংরিজির মতো জোর দিয়ে ব্যবহার করলাম, কারণ সেটাই আমার স্বঘোষিত ঘরানা। ত্রিপুরী অধিবেশন, সুভাষ বসুর দেশত্যাগ করা, বাংলার দু-টুকরো হয়ে গোল্লায় যাওয়া এসবে আমার গা কিরকির করে। ফলে এই বিষয়ে কোনো ডিটেলই আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গীটি ইংরিজিতে লেখা ডান-বাম-মধ্য কোনো ইতিহাসেই পাওয়া যাবেনা। ..."

    মূল প্রবন্ধে না লিখলেও, ইশান তার প্রবন্ধের ইনটেন্ট স্পষ্ট করেছে আলোচনার সময়ে। এটা আমার ভালো লেগেছে। দ্বিতীয় প্যারাটি বেশি ভালো লেগেছে। অবস্থানে আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু অবস্থান স্পষ্ট করার প্রচেষ্টা সব সময়েই স্বাগত, আর সত্যি কথা বলতে বাংলা ভাষার পাঠক হিসেবে, এই দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফ অংশটায় মতান্তরের কারণ যা পাচ্ছি তা মৃদুমন্দ।
    আপত্তি রয়েছে প্রথম প্যারাগ্রাফে। আমি যদি গোটা আলোচনা টায়, প্রবন্ধ সহ কোথাও চমকে থাকি সেটা এই প্যারাগ্রাফে। কারণ সাধারণতঃ সৈকত(প্রথম) এর প্রবন্ধে তথ্যের ইচ্ছাকৃত বিকৃতি দুরস্থান , ভ্রান্তি ও থাকে না, এটা খুব ই নিন্দনীয়, কারণ তাইলে আমরা যারা কাজ করি না, জাস্ট মন্তব্য করে বেড়াই, তারা গাল দেব কি করে ঃ-) কিন্তু এই খানে ভ্রান্তি রয়েছে। জয়া চ্যাটার্জি কেম্ব্রিজ স্কুল এর ঐতিহাসিক এটা আমার সিরিয়াস আজগুবি তথ্য বলে মনে হয়েছে। একজন লোক একটা জায়গায় থাকলে, বা পড়াশুনো করলে বা অধ্যপনাও করলে সে সেই জায়গার নামাংকিত স্কুল হয়ে যায় না এটা অবভিয়াস। কারণ রচিত ইতিহাসের দৃষ্টিভংগী টাই এই স্কুল গুলো কে আলাদা করে।

    আমাদের দেশ সম্পর্কে ইতিহাস রচনায়, কেম্ব্রিজ স্কুল বলে যেটা পরিচিত, সেটার উ`দগাতা মূলত কয়েকজন। জ্যাক গ্যালাঘার, এরিক স্টোক্স, জুডিথ ব্রাউন , এবং অনিল সিল। এদের শেষোক্ত দুজনের কাজ সম্পর্কে ইশানের করা মন্তব্যে যে সাধারণিকৃত মহানুভবতা রয়েছে সেটা রাখাও একটু কঠিন। তবে স্পেসিফিক সমালোচনায় যাবার আগে ছোটো কথা বলা দরকার। এই সব স্কুল টুল এর মেন বিষয় হল সোর্স। তথ্য সুত্র বাছাই পদ্ধতি। জুডিথ ব্রাউন এর গান্ধী সম্পর্কে একাধিক কাজ এর মধ্যে একটি 'প্রিজনার অফ হোপ' ইত্যাদি। ১৯৮৯ এ বেরোনো বই, ইয়েল ইউনিভারসিটি প্রেস, পরে আমাদের দেশের ডিসট্রিবিউশনের জন্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস এর বই। এই বইয়ের বস্তুতপক্ষে একটি ড্যামেশন লেখেন রুদ্রাংশু মুখার্জি, সোশাল হিস্টরি পত্রিকায় , ১৯৯০ এর প্রথম দিকে। তো যাঁরা রুদ্রাংশু বাবু কে শুধুই টেলিগ্রাফের একদা অন্যতম অধিকর্তা অথবা কলাম লেখক হিসেবে চেনেন, এবং তাঁর ক্রিকেটের ইতিহাসের সংক্রান্ত বইটি ছাড়া আর কিছু নেড়ে চেড়েও দেখেন নি, তাঁদের বাঙালি ঐতিহাসিক এখন আর তেমন কেউ বেঁচে নেই বলে মন খারাপ হলে এই নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ টি খুঁজে পেতে পড়ে দেখতে পারেন। এতে কেম্ব্রিজ স্কুল এর সীমাবদ্ধতা চিনতে সুবিধে হতে পারে। সীমাবদ্ধতা টা প্রধানত হিস্টরিকাল রেকর্ড দেখার ক্ষেত্রে। কেম্ব্রিজ স্কুলের লোকেরা মূলত 'সলিড কলোনিয়াল ডেটা' তেই ভারসা রাখতে শুরু করেন নতুন করে। তাঁরা ন্যাশনালিস্ট প্রেস এর কাগজ পত্র কে গুরুত্ত্ব কম দিতেন এবং শুধু কম দেওয়াই না স্বাধীনত পরবর্তী ভারতীয় ইতিহাস রচয়িতা দের কাজ নিজেদের বিবলিওগ্রাফি তে উল্লেখ পর্যন্ত করে উঠতেন না। ১৯৯০ এ প্রকাশিত বই টির বিবলিও গ্রাফি আর ধরুন সুমিত সরকার এর লেখা আধুনিক ভারতীয় ইতিহাস সম্পর্কে একেবারে টেক্সট বইটি র বিবলিওগ্রাফি যদি তুলনা করে দেখা যায়, কেমব্রিজ স্কুলের সীমাবদ্ধটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যাবে। এবার এই সীমাবদ্ধতা টা জয়া চ্যাটার্জির নেই। মানে তিনি কেমব্রিজের অধ্যাপিকা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ই গবেষক হওয়া সত্ত্বেও নেই। সেটা তাঁর উল্লিখিত বইটির বিবলিওগ্রাফি দেখলেই পরিষ্কার হবে। হিন্দু ভদ্রলোক কে পার্টিশনের ভাগীদার করা হয়েছে তাঁর বইয়ে এটা যেমন ঠিক একমাত্র দায় তাঁদের ই ঘাড়ে চড়ানো হয়েছে এই দাবী করা যায় কিনা আমি অন্তত নিশ্চিত নই। কিন্তু, বিষয় টা হল কেম্ব্রিজ স্কুল আর আমাদের দেশের ঐতিহাসিক দের মূল পার্থক্য টা কোন ধরণের সোর্স কে গুরুত্ত্ব দেওয়া উচিত সে সম্পর্কে ভাবনায়।চ্যাটার্জি শুধুই কলোনিয়াল রেকর্ড দেখেন নি।

    এবার আরো গুরুত্ত্ব পূর্ণ একটা দিক আছে। মূল বিষয়টা হল, একেবারেই শাসকের দৃষ্টিভঙ্গী, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন মতাদর্শগত , পদ্ধতিগত বিতর্ক বিভিন্ন ধারা, বিভিন্ন স্থানে তার বিভিন্ন প্রকাশ এগুলো কে কেম্ব্রিজ স্কুলের লোকেরা দেখেছেন, একেবারে স্থানীয় বিষয় হিসেবে, যেন সারাদেশের মানুষ এক যোগে কখনৈ দেশের স্বাধীনতা চান নি। যেন স্থানীয় সংঘাতের উর্ধে কখনো স্বাধীনতার জন্য ঐক্য গড়ে ওঠে নি। এটা সরাসরি শাসকের দৃষ্টি আর কিছুই না। এবং গ্যালাঘার এবং সিল এর সমালোচনা একা রুদ্রাংশু করেনি, অসংখ্য রেফারেন্স এর মধ্যে তপন রায়চৌধুরী, জ্ঞান পান্ডে, রাম গুহ, সুমিত সরকার সকলেই রয়েছেন। ন্যুনতম খবর যাঁরা রাখেন তাঁরা জানবেন, এঁদের নিজেদের মধ্যেও প্রচুর মতবিরোধ রয়েছে। অতএব কেম্ব্রিজ স্কুল এর আগেও প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়েছে।

    জয়া চ্যাটার্জি কে কেম্ব্রিজ স্কুল বলা যায় না, এবং শুধু তাই না, আমি এখানে ছাড়া কাউকে বলতে শুনি নি, গত ২০ - ২২ বছরে। এটা প্রায় কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে বই বেরোনোর জন্য যদি ইরফান হাবিব কে কেউ কেম্ব্রিজ স্কুল বলে যেমন শোনাবে তেমন ই বিচিত্র। আমি সত্যি ই অবাক হয়েছি।

    ক্রিস বেইলি ইত্যাদি দের নিউ কেম্ব্রিজ স্কুল বলা হয়, কারণ মোটামুটি ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি র বাইরের সোর্স দেখে , ইলাহাবাদ বেনারস ইত্যাদি র বাজারের , লোকাল কমার্সের রেকর্ড দেখা শুরু করেন, এবং স্টোক্স, গ্যালাঘার প্রভৃতি গুরুদের সযত্নে লালিত উচ্চ ইতিহাস আলোচনার বদ্ধ কামরাটি কিচ্চুটা উন্মুক্ত করেন।

    এবার আমাদের স্বাধীনত সংগ্রামের মোটামুটি ইতিহাস যা লেখা হয়েছে, তার মধ্যে দুটো তিনটে অন্যতম গুরুত্ত্বপূর্ণ ভাগ রয়েছে।
    একটা হল যাঁরা ব্যক্তিত্ত্ব এবং পারসোনাল পেপার্স দেখেছেন, আরেকটা হল এঁদের ই সঙ্গে যাঁরা চিঠি পত্র দেখেছেন, আর হল যাঁরা কংগ্রেস এর পেপার্স দেখেছেন। আর বড় হিস্টরিয়ান সাধারণত যেটা করেন সব ই দেখেন। এই যেমন ধরুন দীননাথ তেন্ডুলকর এর ৮ খন্ডের গান্ধী সংক্রান্ত কাজ কে, সিরিয়াস হিস্টরিয়ান রা হেজিওগ্রাফি ই বলবেন, মুগ্ধতা ছাড়া বিশেষ কিসু সেখানে খুজে পাওয়া মুশকিল, কিন্তু ব্যক্তিগত পেপার্স প্রচু পাবা যাবে। অন্যদিকে সম্ভবত প্রখ্যত ঐতিহাসিক তারা চাঁদ কে সামনে রেখে একটা উদ্যোগ সম্ভবত স্বাধীনতার পরে পরেই শুরু হয়েছিল। সেটা হল, একেক বছর বা থিম ধরে স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা পেপার্স এর সংকলন। এখন বোধ হয় বই ও হচ্ছে। ১৯৩৯ টা মুশিরুল হাসান এবং সব্যসাচী ভট্টাচার্য্যের সম্পাদনা, ১৯৪২ টা বিপান চন্দ্রের সমপাদনা, ১৯৩৮ টা বাসুদেভ চ্যাটার্জির সম্পাদনা ইত্যাদি , আমাজনে নাম পাবেন। আর লাইব্রেরি তে খুঁজতে হবে।
    আর ক্লিয়ারলি এটা ইন্দো র লেখার আলোচনা তেও বলেছিলাম, পাকিস্তান, বাংলাদেশের সোর্স এবং সেখানকার ঐতিহাসিক দের কাজ দেখা জরুরী।

    আর একটা গুরুত্ত্ব পূর্ণ দিক আছে, স্কুল টুল ইত্যাদি তো গেল, সাধারণ ভাবে বিদেশে ৯০ এর দশকের পর থেকে সাউথ এশিয়া স্টাডিজ বলে একটা ডিসিপ্লিন এর উদ্ভব হয়েছে। এর কৃতিত্ত্ব ঐতিহাসিক দের দেবেন না মনমোহন সিংহ কে দেবেন এটা বলা কঠিন ঃ-))) তবে একটা উপকার হয়েছে, নতুন করে কনসাইজ টেক্স্টবুক লিখে সায়েব আর এনারাই বা অভিবাসী ছানাদের ভারতের ইতিহাস পড়ানোর একটা প্রচলন হয়েছে। আয়েষ জালাল / সুগত বোস দের লেখা বই, শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই, সুমিত সরকারের বই এর নতুন এডিশন, এই গুলোর একটা সুবিধে হল, এঁরা 'স্কুল' সংক্রান্ত পুরোনো ভাবনা র এজেন্ডা গুলো কে নতুন পরিস্থিতিতে অবজ্ঞা করে চলতে খানিকটা বাধ্যই হয়েছেন। খুব সুন্দর ক্লিয়ার কনসাইজ , বিদেশী জেনেরাল হিস্টরি র মত আকর্ষনীয় ভাবে লেখা, শুধু ছাত্র রাই নন যাতে অনেকেই আগ্রহ পান এরকম বই টই হয়েছে। গত বিষ বছর ধরেই হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এই নতুন কনফিউশন এর জায়গা না রাখাই ভালো। কারণ একটু খোঁজ নিলে দেখা যাবে উন্নত মানের টেক্সট বুক বা অন্তত এসেনশিয়াল রিডিং একেবারে অলভ্য তাও না।

    এ যাত্রা ফাইনালি হিস্টরিওগ্রাফি প্রসঙ্গে একটা কথা আছে। কথাটি বিনয় লাল এর, (হিস্টরি অফ হিস্টরি, পলিটিক্স অ্যান্ড স্কলারশিপ ইন মডার্ন ইন্ডিয়া, অক্সফোর্ড ইন্ডিয়া পেপারব্যাক্স - যদি রসবোধে পরিপূর্ণ ইতিহাসের বই পড়তে ইচ্ছে করে নেড়ে চেড়ে দেখতে পারেন, কিছু কিছু জায়গা সত্যি ই হিলারিয়াস বিশ্লেষণ) , পাতাটা বাপু বাড়ি গিয়ে দেখতে হবে। স্কুল হিসেবে সাবলটার্ন স্টাডিজ হিস্টরিয়ান দের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলছেন , যে এঁদের বিরাট কন্ট্রিবিউশন সত্ত্বেও একটা বিপদ ঘটেছে। এঁরা মূলত মার্ক্স পরবর্তী মার্কসবাদী দের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা র সমালোচনা করে কাজ শুরু করেন, কিন্তু এঁদের বিশ্বজোড়া খ্যাতির কারণা টাও তাই। তাত্ত্বিক ফ্রেমওয়ার্ক এর সমালোচনাটায় যত লোক আগ্রহ পেয়েছেন সারা পৃথিবী জুড়ে, ভারতীয় ইতিহাস সম্পর্কে তত লোক আগ্রহ পেয়েছেন কিনা বোহ্জা যাচ্ছে না, এবং সে জন্য নানা মজার মন্তব্যের মাঝে ভদ্রলোক বলছেন, এই করতে গিয়ে স্কুল দিয়ে যাঁদের ঠিক ধরা যায় না, সব্যসাচি ভট্টাচার্য্য, মজিদ সিদ্দিকী, মুজফ্ফর আলম ইত্যাদি দের লেখার যত টা পরিচিতি হবার ছিল ততটা হয় নি। গল্পটা বলার মূল কারণ হল, স্কুলের আলোচনায় পুরো রচিত ইতিহাস কে ধরা যায় না বলেই, দুটো কন্ট্রাডিকটরি স্কুল থেকে পাঠ্য তুলে এনে মোটামুটি সাধারণ ভাবে নিরপেক্ষ থেকে কন্টেন্ট বেছে নিলেই যে বিশ্লেষণে সম্পূর্ণতা আসবে তা নাও হতে পারে।

    এই বিষয়ে এত কথা বলার এমনিতে কোন প্রয়োজন নেই। কারণ ঐতিহ্য অনুযায়ী এটাকে কেউ কেউ ইশানের সঙ্গে আমার পার্সোনাল ইসু বলে ধরবে, কেউ ভাববে খনু ইতিহাস নিয়ে কেউ লিখলেই অযথা সমালোচনা করে , সে ঐতিহাসিক গৃহ শিক্ষক পেয়ে ধরাকে কে সরা জ্ঞান করছে , ইন্দো কে অকারণ ডিসটার্ব করল ইত্যাদি। কিন্তু এই সম্ভাব্য বা প্রকৃত বা প্রকাশিতব্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রহিত সমালোচনা নিয়ে তো আর দুশ্চিন্তা করা যায় না ঃ-))))

    কিন্তু তবু ক্লিয়ারলি যে ইনটারভেনশন হচ্ছে, অ্যামঙ্গ আদার থিংস নেতাজির ভুল ভাল অয়আপ্রোপ্রিয়েশন আটকানোর জন্য, বাংলা ভাষায় সর্বোচ্চ স্তরের ইতিহাস রচনা কে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য, বাংলার ইতিহাসের বিতর্কিত অধ্যায় গুলো নতুন করে দেখার জন্য, তাতে আউটসাইডার'স অ্যাডভানটেজ নষ্ট দুভাবেই হতে পারে, নতুন বক্তব্য না থাকলে, বা নতুন বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রকাশিত লিটেরেচার এর আলোচনার সময় অসাবধনাত প্রকাশিত হলে। এটুকু বলতে গেলে, গালাগাল খেলে আপত্তি নেই।
  • | 340123.99.121223.132 (*) | ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫৬79463
  • মূল প্রবন্ধটা বিশেষতঃ তিরিশের দশকে সুভাষ , নেহরু ও বামপন্থী দের একটা কমন প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পাবার কথা ইত্যাদি, পড়তে গিয়ে, আমার বার বার মনে হচ্ছিল একটা একেবারেই ছাত্র আর আগ্রহী নন স্পেশালিস্ট দের জন্য একটা বইয়ের কথা। সেটা শান্তিনিকেতনে বাড়ি গিয়ে লাকিলি খুঁজে পেলাম। এবং মজার কথা হল, সেটা ৮০ র দশকে বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে বের করা বই। প্রচুর ছবি, ডকুমেন্ট র ছবি, বক্তৃতা বা নোটিস বা পত্রিকার কোটেশন বা ছবি সহ বের করা একটা বই। বইটার নাম ছিল, মুক্তির সংগ্রামে ভারত, (আলেখ্য গ্রন্থ), প্রকাশক ছিল তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ।

    মুখবন্ধ তে কয়েকটা কথা লেখা হয়েছিল, সেটা বেসিকালি কংগ্রেসের এবং স্বাধীনতা পরবর্তী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে ইতিহাস রচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তার একটা সমালোচনা র পক্ষে উচ্চারণ।

    "ভূমিকা হিসেবে স্থান পেয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন ধারা গুলি, ধারাগুলির মধ্যে প্রাধান্য পেয়েছেঃ

    ১ - সাবেকি মুঘল আমলের ক্ষমতাচ্যুত রাজন্যবর্গ এবং জায়গীরদার জমিদার দের প্রতিরোধ
    ২ - কৃষক , কারিগর ও প্রাক্তন সৈন্য বরকন্দাজ দের সংগ্রাম
    ৩ - আদিবাসী দের আন্দোলন
    ৪ - ওয়াহাবী ও ফারাজী বিদ্রোহ
    ৫- ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত্বের নবজাগরণ ও সমাজ সংস্কার মূলক আন্দোলন
    ৬- ইংরেজ সরকারের সেনাবাহিনী তে অভ্যুত্থান
    ৭- ভারতের জাতীয় কংগ্রেস পরিচালিত আন্দোলন
    ৮- সশস্ত্র বিপ্লববাদী অভ্যুথ্যান
    ৯-আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম
    ১০- দেশীয় রাজ্যের প্রজা বিদ্রোহ এবং
    ১১- সাম্যবাদী চিন্তাধারায় সংগঠিত শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্র আন্দোলন।

    তো ৮,৯ ও ১১ নং প্রসঙ্গে তিরিশের দশক জুড়ে ভগৎঅ সিং এর প্রভাব, সুভাষের সঙ্গে ছাত্র দের, কৃষক শ্রমিক দের সংগঠন গুলোর আত্মপ্রকাশ, তাতে নেহরুর ভূমিকা, চটকল সমস্যায় রবীন্দ্র নাথের চিঠি, সুভাষ এর মধ্যে বামপন্থী দের কংগ্রেস এর অভিমুখ পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া ইত্যাদি নিয়ে ডকুমেন্ট , ন্যারেশন ইত্যাদি আছে। কৃষক সভা, এই আই এস এফ, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন ইত্যাদির প্রতিষ্ঠার ডকুমেন্ট এর ছবি টবি ও আছে।

    রচয়িতা দের তালিকা লম্বা, ঐতিহাসিক যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতনামা বরুন দে, অমলেশ তৃপাঠি, নিশীথ রঞ্জন রায় , গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

    এই যে বাঙালি বামপন্থীরা ১৯৪২ এর প্রশ্নে সতীনাথ ভাদুড়ির কাছে আর অন্তর্ধান পরবর্তী সুভাষ প্রশ্নে ফরোয়ার্ড ব্লকের কাছে গালাগাল খাবার পরে , এবং দুটো সমালোচনায় স্বাধীনতা পরবর্তী বাংআলী জাতীয়তাবাদী দের দিক থেকে আসা তীব্রতম সমালোচনার মুখে পড়ে বিংশ শতকের বিশ ও তিরিশের দশকে বামপন্থী বিশ্লেষণের এক ধরণের ব্যাপকতর গ্রাহ্যতা যে স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে বড় মঞ্চ গুলির মধ্যেই হয়েছিল, সেটা বলার প্রয়্জন আগে অনুভব করেন নি, সাধারণ মানুষের জন্য আলেখ্য তৈরীর কোন তাগিদ অনুভব করেন নি, সেই অভিযোগ পুরোটা হয়তো সত্য না।

    ইনটারনেট এর রিসোর্স যদি, তার অল্প আগের মুদ্রিত রিসোর্স এর সঙ্গে কন্টিনিউটি না রাখতে চায়, তাহলে ঠিকাছে তবে এ জাতীয় উদ্যোগ আগে একেবারে হয় নি তা না।

    তবে উদ্যোগ গুলোর মধ্যে নিজেদের সময়ের একসিজেন্সী অনুযায়ী পার্থক্য থাকবে, সে আর বিচিত্র কি। বইটার কথা নিশচয়ী অনেকের মনে আছে, গুগল বুক্স এ আছে কিনা জানা নেই।
  • | 340123.99.121223.135 (*) | ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৫79470
  • সৈকত(প্রথম) মূল প্রবন্ধে পিসি যোশি র কথা বলেছিল না এল সি এম - র কমেন্টে ছিল খুঁজে পাচ্ছি না।

    পিসি যোশি র পেপার্স নিয়ে দুখান কথা বলার ছিল।

    ক- গার্গি চক্রবর্তী র লেখা পিসি যোশির একটা সরু মত জীবনী পাওয়া যায় সেটা হয়তো অনেকেই দেখেছেন।

    খ - গার্গি চক্রবর্তির ই সম্পাদনায়, পিসি জোশির পেপার্স এর একটা সিলেকশন তুলিকা বুকস থেকে বেরিয়েছে। ওনার পেপার্স জে এন ইউ এর অ্যাডজান্ক্ট একটা সংস্থা র সঙ্গে ছিল। সেটাই এই বই এর ভিত্তি। বইটার সম্পদ আছে অনেক গুলো। আগ্রহী রা ঘেঁটে দেখতে পারেন। এই ডিবেটে আলোকপাত করার মতন।
  • | 340123.99.121223.133 (*) | ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:০৫79468
  • একটা ভুল হয়ে গেছে, কেন আচমকা সোশাল হিস্টরি র কথা পাড়লাম, সেটা বলতে ভুলে গেছি। বিষয়টা এরকমঃ
    ইতিহাস কি ভাবে লেখা হবে, তার তত্ত্ব / দর্শন ইত্যাদি কে হিস্টোরিওগ্রাফি র আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই বিষয়ে নানা প্যাচাল আছে সকলেই জানেন, কিন্তু আমাদের আশু প্রয়োজনের জন্য মোদ্দা হল, ব্যক্তিত্ত্বের বদলে , সাধারণ (সংগঠিত বা অসংগঠিত, শ্রমিক বা কৃষক বা বস্তিবাসী বা কোন একটা বা একাধিক পেশার মানুষ, বা ধার্মিক গোষ্ঠী , স্থানীয় বা ব্যাপক, জাতিগোষ্ঠী, কোন ধরণের গণ সমষ্টি) মানুষের কথা বলে ইতিহাস রচনার একটা ধারার নাম সোশাল হিস্টরি। কে প্রকৃত সাধারণ মানুষ , সেই নিয়ে বিতর্কে না ঢুকেও ঃ-)))) বলা যায়, কখনো সংগঠিত , কখনো অসংগঠিত , কখনো শুধুই নানা জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক ভূমিকা কে খোঁজা ই সোশাল হিস্টরির পদ্ধতিগত বৈশিষ্ট। এই ধরুণ আমরা যদি ভগৎ সিং সুভাষ নেহরু পি সি যোশী দের ব্যক্তি হিসেবে না দেখে তাঁদের সময়কার নানা ধরণের মানুষের রাজনৈতিক চেতনার প্রতিফলন হিসেবে দেখি, তাহলে সোশাল হিস্টরির একটা প্রচেষ্টা হয়। এবার এটা এখানে বললাম কেন, সেটা অনেক বেশি অবভিয়াস। 'মুক্তির সংগ্রামে ভারত' বইটাতে ব্যক্তিত্ত্ব দের থেকে গণাঅন্দোলনের ইতিহাস কে বেশি গুরুত্ত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিক বলা না গেলেও, যেটা বলা যায়, ব্যক্তিত্ত্বের তালিকা উচ্চতম কংগ্রেস নেতৃত্ত্ব র থেকে অনেকটা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং একই সময়ের (১৯২০ ০ ৩০ এর দশক) নানা আনদোলন এর কথা বলা হচ্ছে, ঊনবিংশ শতকের বেলাতেও তাই করা হচ্ছে, যেটা শরৎ/সুভাষ বনাম গান্ধী/নেহরু/প্যাটেল এই ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে নিয়ে আসছে তর্কটাকে। যেটা শুধু চিঠি পত্রের অ্যানালিসিস পারতো না।

    এবার সময়ের একটা বিষয় আছে, আধুনিক ইতিহাসের বৈশিষ্টই হল ডকুমেন্টের কোন অভাব নাই, ইন ফ্যাক্ট ক্রিয়েটিভ ঐতিহাসিক রা অনেকেই আধুনিক যুগে আর উৎঅসাহ পান না, তার কারণ আর কিসুই না, ডকুমেন্ট ও ক্রোনোলজি জেহেতু একট বড় অংশ আরকাইভ্ড, নতুন সোর্স এবং এক ই সঙ্গে খুব নতুন ইনটারপ্রিটেশন এর সুযোগ কম। যাই হোক, তাইলে যেটা দাঁড়ালো, ইতিহাসের পরিবর্তনের মুহুর্ত গুলো তে, ব্যক্তিত্ত্ব এবং নামহীন মানুষের ভূমিকা দুটো কেই মোটামুটি ব্যালান্স করে দেখার কাজ আজকাল সিরিয়াস হিস্টরিয়ান রা করে থাকেন।

    এইবার আমাদের দেশে হয়েছে কি, এই সোশাল হিস্টরির নানা কাজ করেছেন বাম পন্থী ঐতিহাসিক রা, তাই অনেক মানুষের ধারণা হয়েছে, সোশাল হিস্টরি মানে বামপন্থী রাজনৈতিক চেতনা সম্বলিত ইতিহাস রচনা, যাঁদের বামপন্থায় অ্যালার্জি, তাঁরা এই আশংকায় অনেক ইতিহাসের বই পড়েন ই না, বা এক ধরণের উচ্চ বাচ্য বিশ্লেষণ হীন ঘটনাক্রম ছাড়া আর কোন ধরণের ব্যক্তিত্ত্বের সংঘাতের বাইরে বিশ্লেষণ প্রচেষ্টা কে বিশ্বাস করে উঠতে পারেন না। তাঁদের খানিকটা আশ্বস্ত করা জন্য বলছিলাম, সোশাল হিস্টরি খুঁজে পড়লে একটা যেটা হয়, শুধুই রাজনৈতিক বিতর্কে অংশগ্রহণ বা শুধুই পরীক্ষার পড়া, বা শুধুই ঘটনাক্রমের সামারি এই সব জিনিসের জন্য না পড়ে একটা থিম বা সময় ধরে ইতিহাস পড়া হয়। আর আমাকে বড় ঐতিহাসিক বলে ভুল হয় না ঃ-))) প্রচুর বই রয়েছে।
  • | 340123.99.121223.132 (*) | ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:২০79469
  • অবশ্য একটা কথা বলা দরকার, ১৯৮০ র দশকে প্রকাশিত 'আলেখ্য' গোছের বইটার রচয়িতা মন্ডলী তে আজকের বিখ্যাত সাব অলটার্ন স্টাডিজ গ্রুপের কেহ নাই। যদিও ৮২ সালে সাব অল্টার্ন স্টাডিজ গ্রুপ তৈরী হয়ে গেছে। যেটা বোঝা যায়, বাঙালি বামপন্থী ঐতিহাসিক দের সঙ্গে বাংআলি জাতীয়্তাবাদী ঐতিহাসিক দের ১৯২০-৩০ ব্যাখ্যার প্রশ্নে একটা কনসোলিডেশন হচ্ছে, ১৯৪০ পরবর্তী তে দেশের ঘটনাবলী প্রসঙ্গে মতামতের তীব্র পার্থক্যের কথা মনে রেখেও, কিন্তু অন্য দিকে ঊনবিংশ শতকের কলোনী এবং দেশের সমাজ বোঝার ক্ষেত্রে নতুন ফাটল দেখা দিচ্ছে ইত্যাদি। এ মানে খুব ই একসাইটিং ব্যাপার। নাথিং লেস দ্যান আ থ্রিলার।
  • দ্রি | 9003412.99.89900.191 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:২৫79472
  • জয়া চ্যাটার্জিতে হিন্দু ভদ্রলোকের দায়ের ডকুমেন্টেশান পেলাম। মুসলিম ইন্টারেস্টগুলোর কিছু ডকুমেন্টেশান রয়েছে। যদিও বেশী করে দায়ী করা হয়েছে হিন্দু ভদ্রলোকদের।

    যেটা একদম পেলাম না সেটা হল বৃটিশ মোটিভস। ক্লিয়ারলি দেয়ার ইজ পলিটিক্স অফ ওমিশান অফ ফ্যাক্টস। এটা কি কেম্ব্রিজ থেকে কাজটা ফাইনান্সড হয়েছে বলে?
  • দ্রি | 9003412.99.89900.191 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:২৭79473
  • খানুদা, কেম্ব্রিজ স্কুলের দু একটা ভালো বইপত্র সাজেস্ট করুন না।
  • দ্রি | 9003412.99.89900.191 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:২৯79474
  • কংগ্রেস পার্টির ফাইনান্সের সোর্স তো বোঝা গেল। নেতাজী ফাইনান্সটা ঠিক কোথা থেকে পেতেন তার কোন ডকুমেন্টেশান ঈশেন পেয়েছো কি? পেলে দিও তো।
  • | 2345.106.783423.110 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৩৬79475
  • ব্রিটিশ মোটিভ অব পার্টিশান? নরেন্দ্র সারিলা ঘেঁটে দেখতে পারেন। সোসেন আমাকে একটা ভারী চমৎকার ইপাব যোগাড় করে দিয়েছিল। ওয়ার্থ রিডিং।
  • অর্জুন অভিষেক | 340123.163.344523.152 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৪৩79476
  • নেতাজীর চিফ ফাইনান্সর ছিলেন, অন্তত '৪১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর আপন মেজদাদা শরৎচন্দ্র বসু।
  • দ্রি | 897812.17.676712.148 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:০৭79477
  • বিদেশে পড়তে গেছিলেন সেটা নিশ্চয়ই বাবার টাকায়। তখন অবশ্য তিনি খুবই ছোট। তারপর ... শরৎ বসুর টাকায়? ব্যাস? ওতে একটা আস্ত ইলেকশান জিতে গেলেন?

    আমার তো মনে হয় আরো কোন টাকার সোর্স ছিল। জার্মানী পালালেন, জাপান গেলেন। এতদিন থাকলেন খচ্চা নেই? নিশ্চয়ই পয়সার কোন সোর্স ছিল। তখনকার দিনে এনারাইরা পয়সা দিত?
  • অর্জুন অভিষেক | 340123.163.344523.152 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২০79478
  • ইংল্যান্ডে আই সি এস পড়তে পাঠিয়েছিলেন জানকীনাথ বসু, কাজেই অর্থ তাঁর। জানকীনাথ সত্যিই ভাল রোজগার করতেন বলেই মনে হয়। সাত পুত্রের চার- পাঁচ জনই বিলেত ফেরত।

    '২১ এ সুভাষচন্দ্রের আই সি এস ত্যাগে একমাত্র শরৎচন্দ্র ছাড়া পুরো পরিবার প্রচণ্ড আশাহত হয়েছিল। শরৎচন্দ্র স্বেচ্ছায় ভাইয়ের ভার গ্রহণ করেছিলেন বলেই জানা যায়।

    শিশিরকুমার বসু লিখেছেন '৩৪ এ মান্দালয় থেকে যখন মুক্তি পেলেন, একটা শর্তে যে ভারতের মাটি না ছুঁয়ে তাকে রেঙ্গুন থেকে ইউরোপ চলে যেতে হবে, তখন সেই যাত্রা, ভিয়েনায় থাকা, চিকিৎসা সন দায়িত্ব নিয়েছিলেন এই মেজদা। '৩৪- '৩৬ সুভাষচন্দ্র শুধু অষ্ট্রিয়া নয়, ইউরোপের ১১ টি দেশ ঘুরেছিলেন এবং প্রায় সব জায়গায় গিয়ে সেখানকার উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।

    সুইটজারল্যান্ডে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল বিঠলভাই প্যাটেলের যিনি বল্লভভাইয়ের দাদা। অকৃতদার এই মানুষটি সুভাষচন্দ্রকে খুব পছন্দ করে ফেলেছিলেন এবং মৃত্যুর আগে উইলে তার আজীবনের সঞ্চয় তাকে দিয়ে যান। কিন্তু সুভাষচন্দ্রের জীবনীকারদের মতে সে টাকা তিনি কোনোদিন পাননি। বল্লভভাই মামলা করে দাদার সব টাকা আত্মাসাৎ করে।

    বোম্বাইয়ে নেতাজীর আরেক পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এক পারসি হিরা ব্যবসায়ী ন্যাথানল পারেখ। May be he is one। Marine Drive র একটা অংশ এখন এর নামে।
  • অর্জুন অভিষেক | 340123.163.344523.152 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২৫79479
  • @দ্রি

    আপনি আর কদিন আগে জিজ্ঞেস করলে এই অতি ভাল প্রশ্নটির উত্তর পেতাম। এবার 'ব্রদারস অ্যাগেস্ট দ্য রাজ' র লেনি গর্ডনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ হয়েছে। ওকেই জিজ্ঞেস করতে পারতাম।

    উনি এই জাস্ট বেরিয়ে গেলেন।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩৭79480
  • প্যাটেলদের টাকা বাঙালির পক্ষে পাওয়া খুব কঠিন। ঃ-)
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪০79481
  • ভাইয়ের ব্যক্তিগত খরচ হয়তো শরৎ বসু দিতেন, কিন্তু ইলেক্শন ? সে তো দলগত ব্যাপার! অত খরচ কি সম্ভব দাদার একার পক্ষে দেওয়া?
    শরৎ বসু কী পেশায় ছিলেন?
  • অর্জুন অভিষেক | 340123.163.344523.152 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪২79482
  • ব্যারিস্টার ছিলেন। বাংলার 'বিখ্যাত পাঁচ' (ফেমাস ফাইভ) র একজন।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪৫79483
  • হুঁ, আমাদের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনও তো আইনজীবী ছিলেন। তবে এঁদের সম্ভবতঃ আইনজীবীর পেশা ছাড়াও অন্য আয়ের উৎস ছিল, জমিজমা ইত্যাদি নির্ঘাৎ ভালোরকম ছিলই। ছোটোখাটো জমিদারিও হয়তো ছিল কারুর কারুর।
  • অর্জুন অভিষেক | 340123.163.344523.152 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:০৬79484
  • ফেমাস নয় 'বিগ ফাইভ'।

    স্বদেশী ব্যবসায়ীরা ছিলেন। কলকাতায় তখন তো বাঙালীরাই জমিয়ে ব্যবসা করছে!
  • Ishan | 89900.222.34900.92 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৪৮79471
  • আরে কেমব্রিজ স্কুল কয়েনেজটা আমার নয়। কয়েনেজটা একটু লুজ, নিঃসন্দেহে, কিন্তু ব্যবহৃত হয়। হৈমন্তী রায় একেবারেই আমার লাইনেই সমালোচনা করেছেন। "Historians of both the so-called Nationalist and the Cambridge schools become an odd couple in sharing this binary." বিভাগটা একই। একদল যারা 'মুসলমান সাম্প্রদায়িকতা'র উপর জোর দেন, অন্যদল যাঁরা 'ভদ্রলোক রাজনীতি'কে দায়ী করেন দেশভাগের জন্য। তবে তার পরেও নামকরণটা লুজই। এবং কোন দলে কে পড়বেন, সেটাও কিছু নির্দিষ্ট নয়। যেমন আমি সুরঞ্জন দাসকে প্রথম দলে ফেলব, জয়া চ্যাটার্জিকে দ্বিতীয় দলে। হৈমন্তী রায় সেটা নাও করতে পারেন। এবং এই বিভাজনটা বোঝানোর জন্য ন্যাশানালিস্ট স্কুল - কেমব্রিজ স্কুল খুব ভালো কয়েনেজ নয়, ব্যবহার করলে কনফিউশন হতেই পারে, তাও ঠিক। কিন্তু আমার ডিফেন্স এইটুকুই যে কয়েনেজটা আমার নয়। :-)

    পুঃ কোটেশন সূত্র - A Partition of Contingency? Public Discourse in Bengal, 1946-1947
  • | 230123.142.670112.212 (*) | ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩২79485
  • জীবনের অন্তত ত্রিশ মিনিট নষ্ট করলাম এটা বোঝানোর জন্য যে কেম্ব্রিজ স্কুলে 'ভালো' কিসু নাই, এখন বলে ভালো বই বলো, এরা মানুষ না, অনেক টা ই এককের মত উন্নততর। ঃ-(((((((☺☺☺☺☺☺
  • | 340123.99.121223.132 (*) | ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫০79488
  • "Rেঃ সুভাষ, গান্ধি ও ত্রিপুরী অধিবেশন
    Comment from দ্রি on 30 January 2019 22:55:59 IST 9003412.99.89900.191 (*) #
    জয়া চ্যাটার্জিতে হিন্দু ভদ্রলোকের দায়ের ডকুমেন্টেশান পেলাম। মুসলিম ইন্টারেস্টগুলোর কিছু ডকুমেন্টেশান রয়েছে। যদিও বেশী করে দায়ী করা হয়েছে হিন্দু ভদ্রলোকদের।

    যেটা একদম পেলাম না সেটা হল বৃটিশ মোটিভস। ক্লিয়ারলি দেয়ার ইজ পলিটিক্স অফ ওমিশান অফ ফ্যাক্টস। এটা কি কেম্ব্রিজ থেকে কাজটা ফাইনান্সড হয়েছে বলে?
    আভতরঃ দ্রি
    Rেঃ সুভাষ, গান্ধি ও ত্রিপুরী অধিবেশন
    Comment from দ্রি on 30 January 2019 22:57:54 IST 9003412.99.89900.191 (*) #
    খানুদা, কেম্ব্রিজ স্কুলের দু একটা ভালো বইপত্র সাজেস্ট করুন না।"

    এতক্ষনে দ্রি এর কোশ্চেন টা বুজেছি। প্রশ্নের পারম্পর্য্য মোটামুটি এরকম তাহলে,
    ইশান (একটা বিশেষ অর্থে, পরে ক্ল্যারিফাই করেছে হৈমন্তি রায় কোট করে, এবং যেটা অ্যাকচুয়ালি বেশ ভালো বই) বলেছিল জয়া চ্যাটারজি কেম্ব্রিজ স্কুল, আমি বলেছিলাম এটা বোধহয় বলা যায় না আর বলেছিলাম কেম্ব্রিজ স্কুলের মূল সমালোচনা টা সোর্স সংক্রান্ত, দ্রি বলছ যে জয়া চ্যাটার্জি হিন্দু ভ্রদ্রলোক দের কন্জারভেটিজম কে আর মুসলমান ইনটারেস্ট কে দায়ী করেছেন বেশি। এবং ব্রিটিশ ইন্টারেস্ট কে ততটা দায়ী করেন নি। আর জানতে চাইছো কেম্ব্রিজ স্কুলের ভালো বই আছে কিনা।

    দ্বিতীয় প্রশ্ন টা বেশি সহজ, কেমব্রিজে স্কুল তখনি দেখা ভালো যখন ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরির কি কি দেখতে চাও তার তালিকা করার জন্য এই প্রসঙ্গে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন প্রসঙ্গে ইত্যাদি। আর কোন বিশেষ কাজে লাগার কথা না। ইংরেজি শেখা জেতে পারে। আর ঐ কিভাবে হিস্টরিয়ান রা বিশাল সোর্স হ্যান্ডল করে, কোন যুক্তি কখন ক্লিঞ্চিং আর্গুমেন্ট হিসেবে ইউজ করে ,বা তোমার ভাষায় অমিশনের কি প্যাটার্ন, সেটা খেয়াল করে নিজের ক্রাফ্ট শার্পেন করতে পারো। ইতিহাস জানার কাজে শুধু কলোনিয়াল পেপার্স তো দেখলে হয় না, আমাদের দেশের, প্রতিবেশি শেয়ার্ড দেশ গুলোর পেপার্স দেখতে হবে নানা দেশের নানা ভাষায় সোর্স দেখতে হবে। সোর্স সোর্স এবং সোর্স। এই কদিন আগে অব্দি প ব র রিফিউজি এক্সপেরিয়েন্স এর কম্পেয়ারেটিভ স্টাডি অন্য রাজ্যের রিফুজি এক্সপেরিয়েন্স এর সঙ্গে হয় নি, এখন সবে একেবারে অল্পবয়সীরা করছেন। আমি এমন ভাবে কথা বলছি যেন আমি ঐতিহাসিক, তা না, আমি বাল, আমি শুধু পর্যবেক্ষক মাত্র, কোন কোন বিশেষ বিষয়ে ফ্রম ক্লোজ কোয়ার্টার্স। শুধু পুঁটির মা নন আরো কয়েকজনের বাজার সরকারের কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। লেবার হিস্টরি, কমিউনিস্ট ইনসারজেন্সী হিস্টরি এবং কালচারাল আর আর্বান হিস্টরি তে, ভালো অভিজ্ঞতা ঃ-)))

    তবে কয়েকটা কথা আছে। একটা স্কুল অফ থট এর সঙ্গে সে দেশের ফরেন পলিসির বা স্টেট পলিসির সরাসরি যোগাযোগ সব সময় এক্সপ্লিসিট কিনা বলা মুশকিল। কারণ আর কিছু না, কারণ ব্যক্তি ঐতিহাসিক। তার ক্রাফ্ট, তার ট্রেড। সবটা পুরোটা কনট্রোল্ড হওয়া মুশকিল, যদি না অথরিটারিয়ান স্টেট হয়। এবার যেটা হয়, একটা অকাডেমিক স্কুলে ডন রা হয়তো সেই ডিপার্টমেন্ট কে ভীষন মহান রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য বা ঐ টাইপের ব এ হস্যি এক্সটেনসন মনে করেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও নানা ধরণের কাজ হয়। বিশেষত বেসিক ডেমোক্রাসি যদি সে দেশে থাকে। স্কুল অফ আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ, এটা হয়তো ব্রিটিশ কলোনিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর দের পড়াতো একটা সময়ে, পরে লেপ্ট লিবেরেল এ ভর্তি হয়ে যায়। একেক্টা ডিপারটমেন্ট একেক্টা গতিতে, ইকোনোমিক্স মার্কসিস্ট প্রোফেসর পেল কিন্তু তার ছাত্ররা তার চাপে সকলেই ওপেন মারকেট পন্থী হয়ে গেলঃ-)))) কিন্তু ইতিহাস হয়তো অক্স-কেম কনজারভেটিজম থেকে বেরোতে পারলো না কিন্তু লিবেরেল ছত্র দের ট্রাবল দিলেও একেবারে ফেল করিয়ে দিল এরকম হল না। ইত্যাদি।

    ধরো, কেম্ব্রিগে ইতিহাস বিভাগে তো ক্রিস্টোফার হিল পড়াতেন, মার্ক্সবাদী হিস্টরিয়ান , হতেই পারে, তিনি কলোনী বিষয়ে কাজ করতেন না বলেই চাকরি পেয়েছিলেন নইলে পেতেন না ঃ-))) কিন্তু এটা মনে করার কারণ নেই, ইংলিশ হিস্টরি যেটা মেন কাজ হিলের , সেখানে কন্টেস্ট কিছু কম ছিল। আবার ধরো ইউরোপিয়ান হিস্টরি র জায়ান্ট হবসবম কোনদিন অক্স কেম এ চাগরি ই পান নি, আউটসাইডার থেকে গেছেন , বার্কবেকে চাগরি করেছেন। একেবারে শেষ বয়সে এসে এস্টাবলিশমেন্ট ফিগার হয়েছেন, সেটা একেবারেই নিজের কল্পনাতীত স্কলারশিপের জন্য।

    মার্ক্সবাদীদের শুষ্কং কাষ্ঠং ইতিহাস লেখার দুর্নাম তো ওঁর এখা পড়লে কখনো কখনো মনে হবে কবিতা পড়ছ। ভারত প্রসঙ্গে ক্রিসটোফার বেলি, একেবারেই মার্ক্সবাদী নন, কিন্তু অসভব ভালো সোর্স, স্মল টাউনের কমারশিয়াল ডেটা দেখছেন।

    অতএব স্টেট পলিসি বা পজিশন এর ডিরেক্ট ইনফ্লুয়েন্স আকাডেমিক স্কুলে প্রথমে থাকতো না তা না, পরে মনে হয় বিষয় গুলো আলগা হয়েছে। যদিও ৬০স এর পর থেকে মারকিউজ, ইগলটন রা, (এবং আমাদের ট্রেনিং এ সেটা আছে অ্যাকচুয়ালি ) রা ইউনি মাত্রেই তাকে মিলিটারি ইনডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স এর একটা কখনো ইচ্ছুক কখনো অনিচ্ছুক অংশ হিসেবে দেখেছেন। এবং তার আভ্যন্তরীন ডেমোক্রাটাইজেশন প্রসেস টা কে জোর করার পক্ষে থেকেছেন, এবং এটা এখন আমাদের ও ডিবেট। হায়ার এডুকেশন প্রাইভেটাইজেশনের পরে তীব্রতর মাত্রা পেয়েছে। তবে বিষয়ের উপরে নির্ভর ও করে। নিয়ন্ত্র অথবা স্বেচ্ছা প্রতিনিধিত্ত্ব এবং ফান্ডিং, কখন কোনটায় রাষ্ট্রের ইন্টারেস্ট বেশি।

    ধরো কথার কথা বলছি, মডার্ন হিস্টরি, বা রিসেন্ট হিস্টরি বা জায়গা বিশেষে এরিয়া স্টাডিজ এখন স্টেট পলিসির দ্বারা বিশেষ যদি ইন্টারেস্ট এর জায়গায় থাকে, তাহলে এটা মোর দ্যান লাইকলি, যে হিস্টরিয়ান রা জিনিস্টা থেকে সরে আসবে, এবং আস্তে আস্তে পোলিটিকাল সাইন্টিস্ট রা বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ হিস্টোরিয়ান বা মিলিটারি মেমোয়ার্স বা ডোমেস্টিক হলে কনস্টিটুশনাল এক্সপার্ট রা, লিগাল এক্সপার্ট রা সেই জায়গা টা নিয়ে নেবে। ধরো এলফিনস্টোন যখন ইতিহাস লিখছেন, তখন সাম্রাজ্যের প্রয়োজনে লিখছেন, কিন্তু সেই কাজটা এখন হিস্টরিয়ান রা করার সুযোগ কতটা পাবেন বলা মুশকিল, রুলিং ক্লাস কনজারভেটিজম বা ওয়ার অ্যাপ্রোচ রিফ্লেকট করা আর ডিরেক্ট একটা পলিসি রিফ্লেক্ট করা কাজে শুধুই ফাইনান্সিং এর জন্য দুটোর মধ্যে তো পার্থক্য আছে, এটা অনেক ক্ষেত্রে হলেও একসেপশন থাকে।

    আর আছে সোর্স এবং সোর্স এবং সোর্স। নতুন হিস্টোরিয়ান (একেবারে বিজেপি মার্কা না হলে) রা যারা সরাসরি স্টেট ফান্ডিং এ কাজ করেন না, সোশাল সায়েন্সে কমেও এসেছে ফান্ডিং, তারা বিচিত্র সোর্স দেখবেন এটা মোটামুটি আশা করা যায়। এছাড়া যে কোন প্রফেসনেই নানা কনজারভেটিজম আর ট্রেড এর সমস্যা থাকে। দুটো উদা দেই, ধরো নেতাজি ভক্ত ন্যাশনালিস্ট হিস্টোরিয়ান কেম্ব্রিজে গিয়ে কেম্ব্রিজ স্কুলের কলোনিয়াল এনটারপ্রাইজের ডিফেন্ডার দের প্রিয় ছাত্র হয়ে কাজ করে এসে, আবার পুনরায় নেতাজি ভক্ত ন্যশনালিস্ট হ্যে গেলেন এবং কেম্ব্রিজের সার্টিফিকেট থাকায় তাড়াতাড়ি ইনফ্লুয়েন্শিয়াল প্রফেসর হয়ে অনেকের ইন্ডিপেন্ডেন্ট থিংকিং এ কাঠি করলেনঃ-))))। এতে ব্যক্তির দোষ বা পুয়োর জাজমেন্ট বা আইডিওলোজিকাল কম্প্রোমাইজ কতট জানি না, চাকরির ধরণ টা হল, বড় ওয়েল ফান্ডেড স্কল যেটা দিয়ে বড় আর্কাইভ্স দেখার সুযোগ আছে, সেখানে এনটারপ্রাইজিং ছাত্রকে যেতে হবে, তাতে তার দেশপ্রেম কমে গেছে অভিযোগ করাটা ঠিক না। বড়জোর রসিকতা করা যায়। এই ধরো সাব অলটার্ন স্টাডিজ, রণজিত গুহের সেই বজ্রনির্ঘোষে শুরু হল, তার পরে সকলেই সাম্রাজ্যবাদী দের চক্রান্ত ধরে ফেলতে বিদেশে প্রফেসর হয়ে গেলেন বা বড় ইউনি র বড় জায়গায় ডন গোছের হলেন। এটা গোটাটাই চক্রান্ত কিছু না, চাকরি তাঁদের ইনটেলেকচুয়াল ইন্টিগ্রিটি কে সব সময়ে চুড়ান্ত প্রভাবিত করেছে এটা পুরো জেনেরালাইজ করে বলতে পারবো না। আউটসাইডার দের অ্যাডভানটেজ আছে। কিন্তু আউটসাইডার মানে তো চাঁদে কেউ আছে এমন না। আবার এটাও ঘটনা, হিস্টরি ডিস্প্লিন থেকে না এসেও, অশোক সেন, আশীশ নন্দি, পার্থ চট্টোআধ্যায় রা অনেকেই অ্যামেজিং মাথ ঘুরিয়ে দেবার মত কাজ করেছেন, আউটসাইডার বলে প্রি একসিস্টিং লিটেরেচা কম দেখেছেন, বা তাতে নিজেকে শিক্ষিত করেন নি তা না। আমি তো এক ইঞ্জীনিয়ার এর কথা সেদিন ই শুনছিলাম উনি মেডিয়েভাল ইঞ্জীনিয়ারিং এ আপাতত গবেষণারত।

    আউটসাইডার ডিবেট টার আমার মতে আসল ডাইমেনসন টাও অ্যাকচ্যালি আমাদের পরাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। তুমি বল আমরা এক বেঁটে কালো ভারতীয় রা, আমরা এত পশ্চিমী স্কলার দের সাবজেক্ট, আমাদের কটা স্কলার বিলেতে গিয়ে বা আমেরিকায় গিয়ে সে দেশের ইতিহাস নিয়ে কাজ করে গ্লাস সিলিং ভাঙ্গে । খুব কম। সবে হচ্ছে।অভিবাসনের ফলেই অল্প স্বল্প হচ্ছে। আমি একজন কে জানি তিনি শুনেছি, একেবারে অল্প বয়স, জার্মানীতে গিয়ে গম্ভীর ভাবে জার্মান ফ্যাসিজম এর নানা দিক নিয়ে বই লিখেছেন, এটা গণতান্ত্রিক দেশে তাত্ত্বিক বাধা না থাকা সত্ত্বেও এত অল্প কেন, কারণ আমরা শুধুই নিজেদের বিষয় হিসেবে ভাবছি। সাবজেক্ট শব্দটার দুটো বিচিত্র মানে। আমি বলছি না, যাই গিয়ে সায়েব দিয়ে বুট পালিশ করাই বা বিদেশী গরীবের ছবি তুলে ফে বু তে দি, বোকা বোকা কথা, বা সমস্ত ভালো ছাত্র দের রাগবি আর টেনিস এর স্পোর্ট হিস্টরি করা উচিত, আমি বলছি, উই শুড নট ওনলি রিমেন অ্যাজ অ্যান এরিয়া অফ রিসার্চ। এটা ভাবার আছে একটু।

    জয়া চ্যাটার্জির এক্সপ্রেস্ড অপিনিয়ন প্রসঙ্গে যেটা বলা যেতে পারে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শুরু র সময়ে হিন্দু এলিট এর একটা বড় প্রতিক্রিয়া ছিল, মুসলমান এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া গেছে, এটা তো ফ্যাক্ট, এবং ভেবে দেখো, ইউরোপিয়ান পিরিয়ডাইজেশনের মডেলে আমাদের দেশের পিরিয়ডাইজেশন তৈরী কিন্তু কলোনিয়াল হিস্টোরিয়ান আর ন্যাশনালিস্ট হিস্টরিয়ান দের হাতে। গ্লোরিয়াস হিন্দু যুগ অন্ধকার ইসলামিক পিরিয়ড, অবশেষে আধুনিক ব্রিটিশ (খ্রীষ্টান না) পিরিয়ড , ইত্যাদি হাস্যকর। মানে এটার জন্য আর নতুন টই এ বক্তৃতার দর্কার নেই, পার্টিশনের ভাগ বাঁটোয়ারা র সময় এই অবস্থান টার পরিবর্তন জয়া চ্যাটার্জি বিশেহ্হ দেখেন নি। এই আর কি। তাই বলে বিলিতি শাসকের আমাদের সারা জীবনের জন্য সাবজুগেট করার শয়তানি র অপরাধ মুছে যায় না। ত্ছাড়া জয়া চ্যাটার্জির আর দুটো বক্তব্য হল এলিট অংশের মধ্যে বেঙ্গল প্ল্যান কতটা পপুলার তা নিয়ে প্রশ্ন আছে, তবে সব ধারণের মানুষের মধ্যে পার্টিশনের পক্ষে অদৌ মত ছিল কিনা সেটা নিয়েই প্রশ্ন করেছেন হৈমন্তী রায় একেক্জনের একেকটা এম্ফাসিস। আর ওঁর যেটা ওপেনিং স্টেটমেন্ট, সেটার বক্তব্যই ছিল পার্টিশন নিয়ে মুশলমান দের দায়ী করা হয় ন্যাশনালিস্ট ডিসকোর্সে, তাঁর কাজ টা ওটাকে সমালোচনা করাই নিজের স্কোপ হিসেবে ধরেছেন। জয়া চ্যাটার্জি কে ডিফেন্ড আমি কি মরতে করতে যাবো বুঝছি না, তাঁর বিবলিওগ্রাফি, সোর্সের বিভিন্নতা তার কিছুটা ডিফেন্স বাকি টা তিনি নিজে দেবেন বা দিয়েছেন, পরবর্তী পেপার্স পড়ে দেখতে পারো, আমার শুধু বক্তব্য ছিল স্কুল নিয়ে।
    কিন্তু আমরা মূল উত্থাপিত প্রসঙ্গ থেকে সরে গেছি, মানে আমি গেছি তুমি যাও নি, আবার পরে হবে ঃ-))))

    (আমার শুধু একটু ইন্দোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার ছিল, সে কি আমার জন্যই লেখা বন্ধ করলো, আমি একটু সিরিয়াস গোছের গাম্বাট এবং কম্পালসিভ ডিবেটার মাত্র , লেখায় বাধা তৈরি করা আমার আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল না)।
  • | 340123.99.121223.132 (*) | ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০১79489
  • স্টেট ফান্ডিং এর নানা মজা আছে, ধরো নেট পাওয়া জে আর এফ স্কলার কে এইচ আর ডিপারটমেন্ট পয়সা দেবা বন্ধ করে দেবে একেবারে তার মনাত কাজ না হলে সেটা অ্যাবাসার্ড, কিন্তু হয়তো সেরকম জায়্গায় শুধু সরকারী দালাল গোছের প্রফেসর দের চেনা গোছের লোকেরা সাবসিকোয়েন্ট পজিশন গুলো পেলো, কিন্তু সেট পজিশনাল কোরাপশন রাদার দ্যান প্রোপাগেশন অফ আইডিয়াজ। এটা আর এস এস আমলে বদলাবে অবশ্য। বিষয়টা ডেমোক্রাসি টা কত শক্ত পোক্ত তার উপরে। এই ধর প্রভাত পটনায়েকের সব বড় ছাত্র ই তাত্ত্বিক দিক থেকে তাঁর বিপরীতে, ইরফান হাবিবের ছাত্র/ঘনিষ্ঠ কোলাবরেটর রা রা সব সময়ে তাঁর মতের সংগে মিলে চলেন নি।
  • | 340123.99.121223.132 (*) | ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৮79490
  • তবে এই স্টেট পলিসির প্রোজেকশন নিয়ে একটা সিরিয়াস দুঃখের জায়্গা আছে আমর। স্যাম হান্টিংটন। এত পন্ডিত লোক, ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন হিসেবে ই কেন গোটা ইতিহাস টাকে দেখলেন, জানি না। এবং ইরাক যুদ্ধের আইডিওলোগ ওঁকে বলতে ইচ্ছে করে না, কিন্তু আইডিওলোগ রা ওনার দ্বারা যতটা প্রভাবিত, আলবার্ট হুরানি দ্বারা কি ততটা প্রভাবিত? এটা একটা সমস্যা, খুব দুঃখের।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন