এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বিপাসনা রিট্রিটের গল্প

    Arin Basu লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ | ২৩০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বাহ | 237812.68.674512.115 | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:১৯729194
  • গুরুতেও এসব আসছে
  • কি হল? | 236712.158.9001212.4 | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২১729195
  • গল্পটা হারিয়ে গেল নাকি? @অরিন
  • অরিন | ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:০২729196
  • দেখতে দেখতে আরেকটা বিপাসানা retreat এর সময় চলে এলো। কাল বিকেল থেকে শুরু, দশ দিন থাকবো না। থাকবো না মানে গোটা চেনা দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার মতন ব্যাপার।

    এ জায়গাটা বাড়ি থেকে ঘন্টা খানেকের গাড়ির রাস্তা, ঘন জঙ্গলের মধ্যে একটা স্কাউট ক্যাম্পের মতন জায়গায়। জঙ্গল, নদী আর পাহাড় ঘেরা একটা নির্জন প্রান্ত। কাছাকাছির মধ্যে জনপদ তো দূরস্থান, পাঁচ কিলোমিটার দূরে একটা কাফে আছে, আর কিলোমিটার খানেক গেলে একটা জলপ্রপাত আর পাহাড় চড়ার পথ। সারাদিন হাঁটলে পাহাড়ের মাথায় একটা ট্রেকারদের hut , অতএব, কতটা নির্জন চিন্তা করে দেখুন।
    কালকে বিকেল ছটার মধ্যে পৌঁছে যেতে হবে।

    বিপাসনা শুরু হবে শুক্রবার রাত থেকে। তার আগে বিকেলবেলা খাবার বলতে হালকা নিরামিষ ডিনার, ফল, স্যালাড চা কফি। প্রত্যেক কে একটি করে বিছানা দেখিয়ে দেয়া হয়, যে যার জিনিসপত্র রেখে জমায়েত হয় কাজের লিস্ট বুঝে নিতে (হ্যা মশাই, প্রত্যেক কে নিজের কাজ আর সেন্টারের কাজ করতে হয়, সে রান্নাঘরের কাজ থেকে শুরু করে ঘর বাথরুম পরিষ্কার, কাঠ কাটা, আগুন জ্বালানো, যা কিছু হতে পারে। তবে, একটা নিয়ম সবাইকে মানতে হবে, কেউ কারোর সঙ্গে চোখাচোখি করতে পারবে না, মাটির দিকে তাকিয়ে চলতে হবে, কেউ টুঁ শব্দটি করতে পারবে না, যা কাজ কর্ম, খাওয়া দাওয়া যাবতীয় কাজ নিঃশব্দে করতে হবে।

    শুক্রবার রাতে, মানে যেদিন সন্ধ্যায় শিবিরের শুরু, খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে যে যার সেল ফোন, ইলেকট্রনিক ঘড়ি ইত্যাদি অফ করে দিয়ে বিপাসনা ধ্যান শিবির কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়ে দেবেন। অবিশ্যি সে সব শেষ দিনে শিবির শেষ হয়ে গেলে ফেরার আগে ফেরত পাওয়া যাবে। বই , খাতা, পেন্সিল, পেন এসব কিছু সঙ্গে রাখা চলবে না। কারোর নিজের কোন ঘর নেই, থাকার মধ্যে একটা ভারী শক্ত বিছানা, তাতেও কোনোদিনই প্রায় রাত দশটার আগে যাওয়া যাবে না। প্রথম সন্ধ্যেবেলা নিয়ম কানুন বুঝিয়ে বলা হয়, কারো কোন প্রশ্ন থাকলে করা যেতে পারে, কারন এর পর দশ দিন এক দু ঘন্টা ধ্যান শিবির যাঁরা পরিচালনা করেন তাঁদের সঙ্গে দশ পনেরো মিনিটের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ করা ছাড়া আর একটাও কথা বলা যাবে না। (বাড়ি চলে যেতে চাইলে এই সুযোগ, :-) ) । তারপর মিনিট দোষের বিরতি, সেই সুযোগে চা কফি পান করা যেতে পারে, তারপর ঘন্টা বাজবে, সবাই ধ্যানের ঘরে আসবেন। যে যার নিজের ধ্যান করার জায়গাটা দেখে নির্দিষ্ট করে নেবেন। প্রত্যেকে একটা করে কুশন একটা করে বালিশ নিয়ে জাকিয়ে বসে পড়বেন। কেউ কেউ চেয়ারে বসেন। গায়ে একটা চাদর থাকলে ভালো হয়, কারণ খান যদিও ঋতু অনুযায়ী গ্রীষ্মকাল, এ জায়গাটাতে সকাল আর রাতের দিকে ৫-৬ ডিগ্রী তাপমান থাকে, গা শিরশির করা ঠান্ডা। এর পর ধ্যান শুরু হবে।

    ধ্যান শিবির যিনি বা যাঁরা পরিচালনা করবেন (আমরা তাঁদের "রোশি" বলব), তাঁরা প্রথমে ভারী সুললিত কন্ঠে ধীরে ধীরে ধ্যান করার নির্দেশ দেন। খুব ধীরে প্রায় গানের মত মন্ত্র পাঠের ভঙ্গিতে বলতে থাকেন কক্ষ বন্ধ করে শিরদাঁড়া খাড়া রেখে অর্ধ পদ্মাসন যাতে করে দুই জানু ভুয়া স্পর্শ করে, দুহাতের বুড়ো আঙ্গুল একে অপরকে স্পর্শ করে, নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে নজর রাখুন। ঠিক কোথায় শ্বাস শরীরে প্রবেশ করছে, ঠিক কোথা থেকে সে নির্গত হচ্ছে, লক্ষ্য করতে থাকুন। বুকের পাঁজরের উত্থান পতন অনুভব করুন। মনে নানান চিন্তা আসবে,আসতে দিন, তাদের লক্ষ্য করুন, দেখুন তারা কিভাবে উদিত হয়, ক্ষণকাল স্থায়ী হয়, তারপর অস্ত যায়। কোথাও কোনো প্রকার জোর করবেন না, চিন্তায় ভেসে যাবেন না। ধীরে ধীরে প্রশ্বাসে আবার ফিরে আসুন। এইভাবে একাদিক্রমে আধ ঘন্টা যায়। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে পায়ের অবস্থান লক্ষ্য করা, পায়চারি করা, হাঁটার ধ্যান করা। হাঁটার ধ্যানে খুব ধীরে ধীরে দশ পা একদিকে দশ পা উল্টোদিকে করে হাঁটা, হাঁটার সময় পায়ের মুভমেন্ট এর দিকে লক্ষ্য রাখা ও তাকে শ্বাস প্রশ্বাসএর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা। করতে করতে রাত দশটা। ধ্যানের আজকের মতো ইতি। ঘরে যাওয়া, ততক্ষনে সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীর এলিয়ে যায়। চান, ঘুম।

    পরের দিন ভোর শেয়ার পাঁচটায় ঘুম ভাঙে, ঘরের বাইরে কে যেন খোঁজোনি বাজাচ্ছে। ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। মাথার ওপর আকাশ জুড়ে ছায়াপথ, তারার ঝিকিমিকি, ধীরে ধীরে ভোর হয়, আমরা কেউ কেউ পুশ আপ করি, চায়ের ঘর থেকে কেটলিতে জল গরম হওয়ার আওয়াজ আসে, গুটি গুটি পায়ে চায়ের ঘরে জোর হই। চোখে ঘুম, ঠান্ডায় চাদরটা গায়ে জড়িয়ে ফ্রেঞ্চ প্রেসের পাত্রটাতে কফি ঢালি , ফুটন্ত গরম জল ঢেলে পাঁচ মিনিটের অন্তহীন অপেক্ষা। এও এক ধ্যান বৈকি। বাড়িতে থাকতে যে কথাটা কখনো মনেই হয় না। তারপর কারো সাথে কোন কথা না বলে (সে যে কি অস্বস্তিকর, বিশেষ করে আমার মতন লোকের পক্ষে), প্লাঞ্জারটাকে নামাই আর ওঠাই বার দুতিনেক। কাপে গাঢ় কড়া কফি ঢেলে ফুঁ দিয়ে খেতে খেতে দিগন্তে দেখতে পাই চায়ের লিকার গাঢ় হবার মতন করে ভোর হচ্ছে। নীরবে। চারপাশে এতগুলো মানুষ, কেউ কারো সঙ্গে কথা বলে না, কেউ কারো দিকে তাকে না। চোখ পায়ের দিকে। মাটিতে নিবদ্ধ।

    মৃদু স্বরে কে যেন খঞ্জনি বাজায়। এবার উঠতে হবে। কাপ ধুয়ে আমার নির্দিষ্ট কাপ-প্লেট রাখার খোপে রাখি। চাদরটা গায়ে জড়িয়ে ধ্যান ঘরে গিয়ে বসি। আবার সেই সুললিত স্বরে ধ্যানের নির্দেশ, শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে , হেঁটে হেঁটে। এই করে ঘন্টা দুয়েক কথা দিয়ে কেটে যায়, কে জানে। এখন আর সময়ের হিসেবে রেখে লাভ নেই, কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই। সকালের জলখাবারের সময় হয়ে এলো। রোশি বলে চলেন, খাওয়াটাও একটা ধ্যানের অঙ্গ। ফলের টুকরো টুকু মুখে তুলুন, ঘ্রান নিন, টেক্সচার লক্ষ্য করুন, চিবোনোর ঠিক আগে দেখুন মনে কি ভাব এলো, স্বাদ পুরোপুরি অনুভব করুন। খুউউউব ধীরে একটু একটু করে পরিজ তুলুন প্লেটে, একটু একটু করে চামচে দিয়ে খেতে থাকুন। লক্ষ করুন দারচিনির, কিসমিসের মিষ্টি স্বাদ, সদ্য টোস্ট হওয়া পাঁউরুটির সেঁকা ময়দার গন্ধ, চা কফির বিন পোড়া সুঘ্রাণ। খেতে খেতে বাসন মাজতে মাজতে ধ্যানের ঘন্টা পড়ে যায়।

    দিন কেটে যায়। কুড়ি ঘন্টা হয়ে গেল, বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ নেই, বহির্জগতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন, আমি এবং আমার একাকিত্ব। চারপাশে এতগুলো মানুষ, এতগুলো শরীর চারপাশে, এতগুলো শরীর নিঃশ্বাস নিচ্ছে, জাগছে, পাশাপাশি হাঁটছে ।

    তৃতীয় তিনি রোশি বললেন আসুন মেত্তার ধ্যান করি।
  • রঞ্জন | 236712.158.786712.163 | ১২ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:০৮729197
  • অরিন কি ৯+১০+১= ২০ তারিখে পরের কিস্তি লিখবেন?
    বেশ, অপেক্ষায় রইলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন