এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বিস্ম্‌তপ্রায় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতাগুলি

    Rana
    অন্যান্য | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ৭৮০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Rana | 209.116.173.121 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৯723384
  • সে সময়ের কথারা যেন পুরোনো কলকাতার ভিতরে আরো কোনো মায়াবী রূপরেখা মেলে চলে যায়। কলকাতাই বা কবে হ'ল? এইতো সিদিনের কথা। আমার মফস্বল তো কলকাতার কাছেই।

    চোখ দিয়ে তো সবাই দেখে, তবু আরো কতো স্বাদ, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ যে জীবোনকে জড়িয়ে রাখে সেগুলির গল্পও তো বলা বাকি।

    বাড়ির পিছনের শিউলি গাছ। শরতের ভোরে নীচের মাটি সাদা করে দিত। আমরা যাকে বলতাম উঠোন, সেই মাটিতে ঝরা দল পেতে চুমু খেত শত শত শিউলি, কমলা রংয়ের বোঁটারা সগর্বে থাকতো মাথা উঁচিয়ে। আর বর্ষার ঠিক পরে, পাতার পিছন দিকে, ডিম পাড়্ত সূর্য্যমুখী প্রজাপতিরা। সেই ডিম ফুটে, পাতার গায়ে দোল খেত তাদের ছানা-পোনা। পাতার শিরাবিন্যাসের সাথে সাযুজ্যে, দেখা না দেখায় মিশে। গায়ে তাদের সরু সরু কাঁটার বর্ম।

    এরকম দিনগুলিতেই, বাড়ির সামনে দিয়ে দুই প্রৌঢ়া প্রায়ই আসতেন বেতের ধামা, ঝুড়ি, কুলো বিক্রি করতে। গায়ে সাদা থান, দেশ ভাগের সময়, নাকি ট্রেনে কাটা পড়ে, স্বামী মারা গেছে তাদের। ছেলে মেয়েদের কথা জানা হয়নি কখনো। ঠাকুমা, একবার দু-বার ঝুড়ি বা কুলোও নিয়েছে তাদের থেকে। তাদের ডাক আজো কানে বাজে - "ঝুড়ি কুলো রাআআখবে মাআআআআসীইইইই।"

    অথবা, ছোটবেলার প্রথম স্কুলের গন্ধ। অতোগুলি ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চার গায়ের গন্ধের সাথে, টিফিনে বাপুজী কেকের মিষ্টি গন্ধ মিলে গোটা ক্লাসরুম ম-ম করতো। এই গন্ধটা এখনো আছে। সেদিন ছেলের স্কুলের পিটি মিটিংয়ে গিয়ে পেলাম। ফুসফুস দিয়ে টেনে নেওয়া এক ঝাঁক ছেলেবেলা।
  • Rana | 209.116.173.121 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫২723385
  • কাঁসারিরা যেত কোন কথা না বলে। পিছনে মস্ত একটা ধামাতে এক গাদা কলসী, ঘটি, থালা ইত্যাদি মাথায় একটা সিড়িঙ্গে লোক হাঁপাতে হাঁপাতে যেত, আর তার সামনে সামনে এক দশাসই চেহারার লোক একটা ছোট্ট পিতলের কাঁসি ট্যাং ট্যাং করে বাজাতে বাজাতে যেত।

    এক ধুতি পাজ্ঞাবি পড়া ভদ্রলোক যেতেন। তাঁর গায়ের রং রজতশুভ্র, ধুতি পাজ্ঞাবি ধবধবে সাদা, সাদা তাঁর মাথার চুল। পথের ধুলো যেন তার সামনে থেকে ব্যস্ত হয়ে সরে যেত নিজে থেকেই। তাঁর হাতবাক্সে ভরা থাকত শাঁখার সারি। এয়োতির হাতে যা অক্ষয় পুণ্যে পরিবর্তিত হত দৈববলে।

    এভাবেই তো উল্কাপাত হয়, তারা খসে আর রূপকথাদের ম্‌ত্যু হতে থাকে।

    "in comes Romeo, he's moaning. "You Belong to Me I Believe"
    And someone says, "You're in the wrong place, my friend, you'd better leave"
    And the only sound that's left after the ambulances go
    Is Cinderella sweeping up on Desolation Row"
  • Rana | 209.116.173.121 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৪723386
  • আরেক ভদ্রমহিলার কথা আজকাল খুব মনে পড়ে। পড়ার কথা না, কিন্তু বিশেষ একদিনের জন্য মনে পড়ে বার বার। ভদ্রমহিলা ধূপকঠি বিক্রি করতেন। খালি পা, আর লাল পাড় সাদা শাড়ি। হিন্দি সিনেমার মতো লাল পেড়ে সাদা শাড়ি নয়, নয় লেখাটাকে অতিনাটকীয় করার জন্য। সাধারন সরু লাল পাড়, যে রকম আমাদের বয়স্ক মাসীমা, পিসিমারা পড়েন, সাধারন আটপৌরে।

    ভদ্রমহিলা এসে জিজ্ঞাসা করতেন, "ধূপ নেবে মা? ধূপ?" আমাদের যেহেতু মাসের মালের সাথেই ধূপ আসত, আমরা কোনদিনই নিতাম না। কিন্তু ভদ্রমহিলা রোজ জিজ্ঞাসা করতেন। আমরা নিতাম না, উনি চলেও যেতেন।

    একদিন গেলেন না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কেন জানি না ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললেন। শুধু বল্লেন, "মা, স্বামী অসুস্থ"। মা তো হতবাক। তাড়াতাড়ি ব্যস্ত হয়ে জল টল দেওয়া হল, সেবারে কিছু ধূপকাঠিও নেওয়া হল। বাড়তি নেওয়ার সামর্থ্য ছিলনা, বাবারই চাকরি তখন আজ আছে, কাল নেই।

    আর কোনোদিন আসেননি।

    "Ophelia, she's 'neath the window for her I feel so afraid
    On her twenty-second birthday she already is an old maid
    To her, death is quite romantic she wears an iron vest
    Her profession's her religion, her sin is her lifelessness
    And though her eyes are fixed upon Noah's great rainbow
    She spends her time peeking into Desolation Row"
  • Rana | 209.116.171.207 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:৪৩723387
  • এভাবেই দিনগুলি কেটে যেত। রঙ্গীন থেকে টেকনিকালার দিনগুলি সাদা কালো হয়ে গেছে চোখের সামনে।

    এক ভিখারি আসত প্রতি রবিবার। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে হাঁক দিত "ছোটবাবু"। তার জন্য এক সিধে চাল ছিল বরাদ্দ। সে নাকি আমাদের বাড়ি তৈরির সময় মিস্তিরি ছিল, ১৯৫৫-৫৬ সালে। পরে নাকি কোন অন্য কাজ করার সময় কোন দুর্ঘটনায় একটা চোখ চলে যায়।

    আর ছিল বুড়োরা। বাগানের আগাছা পরিষ্কার করে যেত মাসে একবার। সঙ্গে বাড়ির নর্দমা, উঠোন, সামনের রাস্তা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোক এই কাজ করেছে, কিন্তু তাদের সব্বাইকেই ডাকা হতো 'বুড়ো' বলে। প্রধান কারণ, সবাই ছিলো অন্তত ষাটোর্ধ। বুড়ো মানুষগুলি, সারাদিন ধরে, রোদের মধ্যে পিঠ বাঁকা করে বসে খুঁটে খুঁটে ঘাস তুলত, আগাছা উপড়ে তুলে দিত। ছেলেবেলার মায়া তাদের আজীবন ঘিরে থাকুক।
  • Sayantani | 11.39.56.76 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২০:৫১723389
  • বড্ডো মন কেমন করা। আমাদের বাড়িতে এক বৃদ্ধ বৈষ্ণব ভিখারি আসতেন, ভিক্ষা নিয়ে অনেক আশীর্বাদ করতেন। বহুদিন হয়ে গেলো আর আসেন না
  • Abhyu | 126.202.80.87 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২২:১৯723390
  • বেশিদিন আগের কথা নয়, বেশি দূরের কথাও নয়। আমার স্ত্রীর কাছে শুনেছি। একজন ভদ্রলোক ফল বেচতে আসতেন। অনেকদিন তাঁকে আর দেখা যায় না। বয়স বেশি হয়ে গেছে বলে নয়, ফলবাগানগুলো আর নেই বলে। কোথায় আছেন, কি করেন - কেউ জানে না। জায়গাটার নাম রাজারহাট।
  • avi | 113.217.234.88 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২২:৩৪723391
  • আমাদের পাড়ায় দশবছর আগে দুপুরবেলা শুনতাম "ছুরি কাটারি কাঁইচি নিবেন, শিল খুদাবেন"। এখন নতুন করে কেউ শিলনোড়া কেনে কি?
  • Rana | 209.19.251.43 | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৫723392
  • ভোরের গন্ধ নিয়ে শুরু হতো স্কুলের পথের সকাল। আমাদের স্কুলটা ছিল পাঁচশো রূপকথার রাজ্য। বিশাল আমবাগান ছাড়িয়ে, কুয়াশা লেগে থাকা মাঠের সীমান্ত নির্দেশ করত আট দশটা সুবিশাল দেবদারু। তার মাথায় ছিল শকুনের বাসা। তার সম্পুর্ণ উল্টোদিকে এক বিশাল রাধাচূড়া গাছ হলুদ ফুলে ফুলে মাটি দিতো ভরে। সে রাধাচূড়া ফুলের সামনে আমাদের প্রেয়ার শুরু হত ঠিক সকাল ৬-৪৫ এ। ধন ধান্য, জন গন মন অথবা হও ধরমেতে বীর, এই তিনটে গান হত এক এক দিন এক একটা করে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন