এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ক্রিমিনালদের সভায় !

    Debabrata Chakrabarty লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ৩১ জুলাই ২০১৬ | ২৫৪৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debabrata Chakrabarty | ৩১ জুলাই ২০১৬ ২১:২১716790
  • আজকে (৩০শে জুলাই ) মধ্য কলকাতার ‘ ভারতসভা ‘ হল কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। অধিকাংশ শ্রোতা ৬০ ঊর্ধ্ব মহিলা এবং পুরুষ , কেউ পশ্চিম মেদিনীপুর , কেউ কাকদ্বীপ কেউবা উত্তরবঙ্গ থেকে এসেছেন , কলকাতা এবং দুই চব্বিশ পরগনার বাসিন্দারা তো ছিলেনই । সভা পরিচালক ৭০ঊর্ধ্ব হতে পারেন বক্তারাও প্রায় সকলেই অতি বৃদ্ধ না হলেও বৃদ্ধ বটে । অনেকে কেই বয়েসের ভারে থেমে থেমে কথা বলতে হয় , মলিন পোশাক, ছেঁড়া চপ্পল -কিন্তু সকলেরই চোখে কেমন যেন একটা অপমান জনিত চাপা রাগ এবং হতাশা মিশ্রিত দুঃখ ছিল ।

    আসলে এনারা সবাই দাগী ‘ক্রিমিনাল ‘ । আমাদের বর্তমান শাসকের হাইকোর্টে দেওয়া এফিডেবিট অনুসার এই বৃদ্ধ বৃদ্ধার দলের সকলেই ‘ক্রিমিনাল ‘ । কেউ তেভাগার আন্দোলনে ভাগ নিয়েছেন সেই অর্থে ক্রিমিনাল , কেউ নকশাল আন্দোলনে ভাগ নিয়েছিলেন তাই ক্রিমিনাল কেউ কেউ জরুরী অবস্থায় সিদ্ধার্থ বাবুর এবং ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরাচারের প্রতিবাদে জেল খেটেছেন তাই ক্রিমিনাল , ,শিক্ষক আন্দোলনে জেল খাটার দায়ে ক্রিমিনাল এমনকি এখানে দু এক জন খাদ্য আন্দোলনে জেল খাটার দায়ে ক্রিমিনালও ছিলেন । ১৯৪৭ সালের পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গে সে সমস্ত গন আন্দোলন হয়েছে এবং সেই গন আন্দোলনে যে সমস্ত মানুষ ভাগ নিয়েছিলেন , পুলিশের অত্যাচার সহ্য করেছিলেন , জেল খেটেছিলেন রাষ্ট্রের চোখ রাঙ্গানি অগ্রাহ্য করে পথে নেমেছিলেন, এককথায় রাজনৈতিক নির্যাতিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন সেই সমস্ত মানুষ কে কিছুটা সরকারী সাহায্য দেওয়ার উদ্দ্যশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে ১৯৮৮ সালে তৎকালীন সরকার তাঁদের মধ্যে যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় তাঁদের জন্য একটি পেনশন স্কিম চালু করেন - রাজ্য জুড়ে ভাতা প্রাপকের সংখ্যা নগণ্য ,৩৮০০জনের মত , ভাতার পরিমাণ নগণ্য ছিল মাসে মাত্র ৮০০ টাকা , পরবর্তীতে তা বেড়ে দাঁড়ায় মাত্র ৩২০০ টাকা ।

    তা আমাদের মা মাটি ফানুসের সরকারের চোলাই খেয়ে মৃতের পরিবার থেকে ক্লাবে খেলাধুলার উন্নতিতে অকাতরে অর্থ বিতরণে কার্পণ্য না থাকলেও ,গ্রামীণ শিল্পীদের অনুদান বা বিভিন্ন ‘ শ্রী ‘ বিতরণে খরচের পরিমাণ বাহুল্য বলে মনে না করলেও এই সামান্য কয়েকজন মানুষের সামান্য পেনশন দিতে বিস্তর অসুবিধা আছে , টাকা নেই কিনা ! ক্ষমতায় এসেই ২০১৩ সালে জানুয়ারি মাসে তৃনমূল সরকার এই সমস্ত পেনশন এক কলমের খোঁচায় রদ করে দেন - এই সমস্ত নাকি বাজে খরচ । ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই পেনশন প্রাপকদের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি সরকারের এই তুঘলকি নির্দেশনামার প্রতিবাদে এদিক ওদিক বিচ্ছিন্ন কিছু ধর্না , আন্দোলন সংগঠিত করার অবশেষে কেউ বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করাতে হাইকোর্টের স্মরনাপন্ন হন এবং অবশেষে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে হাইকোর্ট সরকারী আদেশনামা খারিজ করে পুনরায় পেনশন চালু করবার আদেশ দেন । তা সরকার দমবেন কেন ? এতো ঘোর অন্যায় , সরকারী আদেশ কে চ্যালেঞ্জ - তাই পেনশন দেওয়া তো দূরের কথা সরকারী আইনজ্ঞ গনের ব্যাটারি এই কতিপয় বৃদ্ধের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আদেশের বিরুদ্ধে অ্যাপিল করেছেন । এই আবেদনে রাজ্য সরকার দাবী করেছেন এইসব বৃদ্ধ , দরিদ্র পেনশন প্রাপকেরা কেউই রাজনৈতিক নির্যাতিত নন তারা হচ্ছেন ‘ ক্রিমিনাল ‘ কারন এনারা সবাই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রাইম করেছিল । অপরাধমূলক নানবিধ ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল ।

    আজকের সভায় যারা জমা হয়েছিলেন সেই এককালের বিভিন্ন গন আন্দোলনের কর্মী , জেল খাটা ,অত্যাচারিত , সমাজ বদলানোর স্বপ্নে বিভোর যুবকেরা ইতিমধ্যে বৃদ্ধ হয়েছেন । তাঁদের ক্ষোভ পেনশন পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে নয় । তারা সমবেত হয়েছিলেন এই অপমানের , তাঁদেরকে ‘ক্রিমিনাল ‘ আখ্যায় ভূষিত করবার মত নির্লজ্জতার প্রতিবাদ জানাতে । তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় , রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং বিভিন্ন গন আন্দোলনে তাঁদের অংশগ্রহণের কারনে তাঁদের বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের জন্য রাষ্ট্রীয় অত্যাচার তাদের সহ্য করতে হয়েছে । ভুলে যান তাদের রাজনৈতিক পরিচয় অথবা পেনশানের সামান্য অর্থ -কিন্তু তারা কি দেশদ্রোহী ? জরুরী অবস্থায় জেল খাটা , খাদ্য আন্দোলনে ভাগ নেওয়া ,নকশাল আন্দোলনের এই সমস্ত ব্যক্তি কি ক্রিমিনাল যে রাষ্ট্র কে তাঁদের সামান্য পেনশন আটকাতে ক্রমে ডিভিশন বেঞ্চ থেকে সুপ্রিম কোর্ট অবধি যেতে হবে ?

    আপনাদের মনে আছে গত বছর ২১শে জুলাইয়ের সভায় খাদ্য আন্দোলনের শহিদ নুরুল ইসলামের মাকে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে বসিয়েছিলেন, তিনিও একজন পেনশন প্রাপিকা ছিলেন সেই খাদ্য আন্দোলনের শহিদ নুরুল ইসলাম যেহেতু মমতা দেবীর সরকারের মতে ক্রিমিনাল ছিল তাই তার মায়ের পেনশন ২০১৩ সালে কেটে দেওয়া হয়েছে ।

    ধন্য দ্বিচারিতা ! ধন্য নির্লজ্জ শাসক !https://postimg.org/image/54i8tnxdd/d98ed8f9/
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০১ আগস্ট ২০১৬ ১৪:০৪716792
  • এটা কীরকম ব্যাপার? একটু বুঝিয়ে বলুন। যাঁরা অলরেডি সাজা ভোগ করেছেন, তাঁদের ক্রিমিনাল রেকর্ড কতবছর ধরে ভ্যালিড থাকে? কিছু বছর পরে ক্রিমিনাল রেজিস্টার থেকে রেকর্ড মুছে দেবার নিয়ম নেই কি? এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা তাই জানতে চাইছি। এ নিয়ম কি কেবল পশ্চিমবঙ্গে না সারা ভারতে? শুনেছি ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকলে পাসপোর্ট পেতে সমস্যা হয়, কিন্তু পেনশন না পাওয়াটা আরো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এবং "ক্রিমিনাল" তকমা আঁটা থাকলে তো চাকরি বাকরি পাবার ক্ষেত্রেও সমস্যা হবার কথা। এই নিয়ম কি সমস্ত সাজাভুক্ত মানুষদের জন্যই চালু আছে?
  • দেবব্রত | 212.142.91.115 | ০১ আগস্ট ২০১৬ ২১:২৩716793
  • এই পেনশন টি তাদের দেওয়া হচ্ছিল যারা বিভিন্ন গণআন্দোলনে ভাগ নিয়েছেন এবং ন্যূনতম ৬ মাস জেল খেটেছেন - অবশ্যই বিভিন্ন ফৌজদারি ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল , এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত দের পরিবার দেরও দেও হচ্ছিল যেমন খাদ্য আন্দোলনের শহীদ নুরুল ইসলামের মা এই পেনশন প্রাপিকা ছিলেন । এখন সরকার এই পেনশন রদ করেছেন , পেনশন প্রাপকরা কোর্টে গেছেন , কোর্ট তাদের পক্ষে রায় দিতে গিয়ে বলেছেন " Nov. 26: Calcutta High Court today set aside a 2013 order through which the state government had stopped paying pension to post-Independence political sufferers.

    Justice Arijit Banerjee mentioned in his verdict that since the scheme was introduced in keeping with a central suggestion, the state government would have to continue it." এখন রাজ্য সরকার এই খরচ বাহুল্য বলে মনে করে তাই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গেছে এবং সেখানে পেনশন না দেওয়ার কারন হিসাবে তাদের পিটিশনের বক্তব্য " এইসব বৃদ্ধ , দরিদ্র পেনশন প্রাপকেরা কেউই রাজনৈতিক নির্যাতিত নন তারা হচ্ছেন ‘ ক্রিমিনাল ‘ কারন এনারা সবাই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রাইম করেছিল । অপরাধমূলক নানবিধ ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল ।" আর প্রতিবাদ টি এইখানেই পেনশনের পরিমাণ অত গুরুত্বপূর্ণ নয় । post-Independence political sufferers রা কেউই গন আন্দোলনের কর্মী কিছু নন সবাই ক্রিমিনাল । মামলার পরবর্তী শুনানির দিন এখনো স্থির হয়নি ।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০১ আগস্ট ২০১৬ ২৩:০৯716794
  • তবেতো খুবই বাজে ব্যাপার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন