এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ক্যাভালকেড'স

    Binary
    অন্যান্য | ২৮ মে ২০১৫ | ২৯৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • | 77.98.72.126 | ০৬ জুলাই ২০১৫ ১৫:১৪679522
  • বাইনারী দা, ভালো লাগালো।
  • de | 69.185.236.54 | ০৬ জুলাই ২০১৫ ১৭:১৪679523
  • আহা! স্বপ্নের মতো লেখা!
  • Binary | ১৭ জুলাই ২০১৫ ২২:১২679524
  • রক্তকরবী ...

    মজ্জায় সজ্জায় রবীন্দ্রনাথ ছেলেবেলায় ত্যামন ভাবে ছিলেন না। সে অর্থে বঙ্কিম শরৎ বাবুও-ও ছিলেন না। ছেলেবেলার বাংলা সাহিত্যের প্যাঁচটা আমার বেশ গোলমেলে। প্রবল ভাবে ছিলেন বিভূতিভূষণ , সুকুমার রায় , লীলা মজুমদার। 'আম আঠির ভেঁপু' , পড়তে গিয়ে খুব কান্না পেত্। আশ্চর্য্য ভাবে সেটা দূর্গা মারা যাওয়ার প্রসঙ্গে নয়। বরং দুর্গার , চুরি করে আনা পুঁতির মালা-র জন্য। বা , সেই ছড়াটা-র জন্য , 'হলুদ বনে বনে , নাকছাবি টা হারিয়ে গ্যাছে , সুখ নাইকো মনে'। আরো একটা অবাক করা চরিত্র ছিল সুকুমার রায়-এর পাগলা দাশু। নিজের সাথে সরাসরি সমাপতন। সে অর্থে , 'আম আঠির ভেঁপু' -র অপু কেও আরেকটু ছোটবেলার আমি মনে হত। তো , আমাদের বইয়ের আলমারিতে বঙ্কিম শরৎবাবু তখন ছিলেন না , এখনো নেই। খোলসা করে বলেই ফেলি , বঙ্কিম আমি পড়িনি। সেই পাঠ্যবই-এর কপালকুন্ডলা-র দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ছাড়া। আমার শরৎবাবু -ও পড়া , ওই 'বিন্দুর ছেলে' আর 'শ্রীকান্ত' পর্য্যন্ত । 'বিন্দুর ছেলে', ছিল নবম শ্রেণী-র রেপিড রিডিং , আর 'শ্রীকান্ত' -র খানিকটা খানিকটা বাংলা পাঠ্যবইতে ছিল সেই সময়। এই যে না পড়া , এটা আমার বেশ চোরা হীনমন্যতা। এখনো আছে।

    সে যাই হোক। রবি ঠাকুর অবশ্য ছেলেবেলা থেকে কিছু কিছু শিরায় শিরায় প্রবেশ করতে সুরু করেছিল। কিন্তু খুব ধীরে ধীরে। হুরদ্দুম করে নয়। ছোটবেলায় বাড়িতে কাউকেই দেখিনি হারমোনিয়াম নিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইছেন। মা , কাকিমা , কোনো দিদিরা , কোনো দাদারা , কেউ না। বা দেওয়ালে , পূর্ণ সাইজের রবি ঠাকুরের আলোকচিত্রে ফুলের মালা পরানো আছে , বা রিচুয়ালিস্টিক ভাবে , ২৫-সে বৈশাখ পালন হচ্ছে, এরকম-ও কোনদিন দেখিনি । যেটা ছিল , সেটা বিশ্বভারতী প্রকাশিত রচনাবলী , সঞ্চয়িতা , গল্পগুচ্ছের হার্ডবাঁধাই সংস্করণ, এইসব প্রচুর । কিন্তু বড়রা কেউ চোখ পাকিয়ে বলেন নি যে , বাঙালি মাত্র-ই এগুলো পড়তে হয়। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম ছিল , 'ইচ্ছে হলে রবি ঠাকুর পড় বা ইচ্ছে হলে লীলা মজুমদার'। তবে , রবীন্দ্র রচনাবলীর সেলাই খসে যাওয়া পাতা , বা সঞ্চয়িতার জীর্ণতার কথা মনে রেখে এখন মনে হয় রবিঠাকুর বাড়ির সবাই পড়তেন , ভীষণভাবে পড়তেন। দাদা-কে ইস্কুলের কবিতা আবৃত্তির জন্য সত্যেন দত্ত-ও সাজেস্ট করা হত বা সুকান্ত। একই সঙ্গে রবি ঠাকুরের 'নির্ঝরের সপ্নভঙ্গ' -ও।

    তো এই সবটাই বাছাবাছি বা ভালোলাগালাগির স্প:স্ফুর্ততা। আমার ছোটবেলায় ডাকঘর পড়ে সপ্নালু দুবলা অমল-কে কল্পলোকের কেউ মনে হয়েছিল , পাগলা দাশু-র মত নিজের রেপ্লিকা মনে হয় নি। সতের আঠার বছরে , যখন রবিঠাকুরের, প্রবন্ধ ছাড়া, গল্প উপন্যাস আর নাটকের প্রায় পুরোটাই পড়া হয়ে গ্যাছে , তখন , সেইসব মনের খুব খুব গভীরে প্রবেশ করা গল্পমালাতেও ,মনে হত , ওখানে অ-নি:শেষ ভালো লাগা আছে , একাত্মতা হয়তো নেই। রবি ঠাকুর সাত মহলা সপ্নপুরীর মত , ঠিক সৃষ্টিছাড়া সুকুমার রায় নন কিছুতেই। বিভূতিভূষন-ও নন।

    আমার মাঝে মাঝে বাই ওঠে , পুরনো , অনেকবার পড়া ক্লাসিক , চটি , সুপাঠ্য , অপাঠ্য বই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দ্যাখা। সে তালিকায় নীহাররঞ্জন গুপ্ত , রুশ দেশের উপকথা বা মানিকবাবুর 'পুতুল নাচের ইতিকথা' , সব-ই আছে অবশ্য। হঠাত সেদিন মাথায় ঢুকে গ্যালো 'রক্ত করবী'। 'রেড অলিয়ান্ডের'। 'রক্ত করবী' পড়ার আগে , আকাশবাণীতে শম্ভু মিত্রের নাট্যরূপ শুনেছিলাম , নিতান্ত-ই কৈশোরে. তাও তখন আর সে নাটক মঞ্চে অভিনীত হত না। আরো অনেক পরে রক্তকরবী পড়ে নন্দিনী -কে ভালকরে চিনেছিলাম। বা ঠিক চিনি নি , ওই একটা কল্পনার ফ্রেমে বসিয়েছিলাম। রক্তকরবী-তে য্যামন ছিল ত্যামন রূপকঅর্থে সমাজ বিপ্লব-এ আমার একাত্ম বোধ হয় না। রূপকার্থে বন্ধন ভেঙ্গেফেলা ভালবাসা-তেও হয় না ।

    কিন্তু কেন-ই বা হঠাত 'রক্তকরবী' নাড়া দেয় মাঝে মাঝে। কারণ মনে হয় , ওই সেই নন্দিনী-র কল্পরুপ। বা হয়ত ওই কল্পরূপে-র কোনো পার্সনিফিকেশন-এ ।

    রুপকথারা মরে না .......
  • | 212.62.77.82 | ১৮ জুলাই ২০১৫ ১২:২০679525
  • ভাগ্যিস রূপকথারা মরে না। তাই তো বেঁচে থাকাটা একেবারে অসহনীয় হয়ে যায় না।

    আমি কেন যেন ভোম্বল সর্দারের সাথে ভারী একাত্ম বোধ করতাম। মানে ভোম্বোলের সাথে আর কি। এখনও করি। আর ঐ গন্ডালুদের সাথে।
  • Binary | ২৪ আগস্ট ২০১৫ ২০:১৮679526
  • সলিচিউট ....

    আমার প্রতিবেশী , ইয়ান এলারম্যান , হাসিখুসি টাকমাথা জোয়ান বুড়ো। জোয়ান বুড়ো-র মাপকাঠিটা এরকম করে দেওয়াটা অবশ্যি ঠিক-ও নয়। সদ্য রিটায়ার করেছে। বয়স ষাট-ও হতে পারে আর পয়ষট্টি-ও হতে পারে। এই বছরেই হাঁটুর মালাইচাকি অপারেশন করেছে , সে নাকি রিটায়ারমেন্টের আগে শরীরে-র কলকব্জা মেরামত করার ইচ্ছায় , আরো যাতে লংটার্ম সার্ভিস দিতে পারে । তায় আবার দুই হাঁটু একসাথে। কিন্তু সারাদিন চরকিবাজি-র কমতি নেই। কখনো লন মো করছে , কখনো ছাতে উঠে রেইন পাইপ ঠিক করছে , কখনো নিজেদের ঢাউস দুটো পিকাপ ট্রাক ধোয়াপাকলা করছে। হাঁটু অপারেশনের পর কেমন আছে জানতে চাইলে , এলুমিনিয়াম লিকপিকে সিঁড়ি বেয়ে ছাত থেকে নেমে এসে বলল , একদম ঠিকঠাক , কেবল উবু হয়ে বসতে পারে না। ওর দুই ছেলে বউ , পাঁচ নাতি নাতনি , দু ভাই , এক বোন্ , তাদের ছেলে পিলে , তাদের নাতি নাতনি হরদম আসে ওদের কাছে। প্রায়ই সরগরম ওদের ব্যাক ইয়ার্ড , ড্রাইভওয়ে। রোম্যান্স মানে কি জানি না , কিন্তু ওদের জোয়ান বুড়ো-বুড়ির প্রেম-টেম সব পরিবার নিয়ে-ই। আমাদের যৌথ পরিবারের মতই।

    সেদিন দেখি একটা ধুদ্ধুরে ফোল্ডিং ট্রেলার টেন্ট নিয়ে এসেছে কোথা থেকে। ট্রেলার টেন্ট মানে গাড়ির পেছনে , টো করে নিয়ে যাওয়া যায় , কথাও ডক করে পুরো খুললে , বড়সড় তাঁবু , সঙ্গে প্রোপেন গ্যাস স্টোভ , মিনি রেফরিজারেটরও থাকে। বলল ওর কোন বন্ধু-র ব্যাক ইয়ার্ডে পরে ছিল নিয়ে এসেছে কিনে। ১৯৮২ -র মডেল নাকি , গত ১০ বছরে ব্যবহার-ই হয় নি। তো পরের সাতদিন যখন-ই বাইরে বেরোই দেখি , ওটার পেছনে লেগেই আছে , খুটুর খুটুর করছে , নষ্ট হয়ে যাওয়া কাঠ মেরামত করছে , অল্প ছিঁড়ে যাওয়া তাঁবুর কাপড় বদল করছে। একদিন বিকেলে আমায় ডেকে ইন্সপেকশন করালো। বলল , 'ইটস নাউ এস গুড এস নিউ'। আমি জিগ্গেস করলাম , হঠাত এটা কিনলে কেন ?

    বলে , ওর সাথে ইনিড এর আলাপ হয়েছিল, আজথেকে ৪৫ বছর আগে কলেজ ক্যাম্পিং-এ গিয়ে। ইনিড ওর হাসিখুসি বউ। দেখলেই একগাল হেসে 'হাই' বলে। আমাদের নেমন্তন্ন করে চিকেন বারবি-কিউ খাইয়েছিল। তো , সেই ক্যাম্পিং-এই ওদের আলাপ , সেখান থেকে প্রেম। এরপরে চাকরি করার আগে পর্যন্ত ওরা , সামারে ক্যাম্পিং করেই প্রেম করেছে। ব্রিটিশকলম্বিয়া রকি মাউনটেন , উত্তরে ওয়াস্কেসু লেক , আরো দক্ষিনের , আমেরিকার 'জিয়ন ন্যাশনাল পার্ক', আরো অনেক। তারপর গত ৪০ বছরে , 'ইউ উইল নট গেট দ্যাট মাচ , লিবার্টি হোএন ইউ আর ইন জব , ইউ নো'। তো , ইনিড -ও রিটায়ার করবে সামারের আগে , তাই ওরা আবার ক্যাম্পিং -এ যাবে।
    তো , নতুন আঁচ ধরানো রোম্যান্সের, প্ল্যান কোথায় জিগ্গেস করাতে বলল , 'ক্যালিফোর্নিয়া কোস্টাল'। শুনে আমার বেশ রোমাঞ্চ হলো। প্যাসিফিক কোস্টের ভেঙ্গে আসা চর। সাদা বালিয়াড়ি। কখনো সবুজ , কখনো না হেমন্তের বাদামী হলুদ বনভূমি। দিগন্তে প্রশান্ত মহাসাগরের হলদেটে লাল অস্তগামি সূর্য। প্যাসিফিক কোস্ট , বিধ্বংসী সুন্দর। খুব হিংসা হলো , ইয়ানের ওপর। জিগ্গেস করলাম , ওরা খালি দুজন-ই যাচ্ছে কিনা , নাকি নাতিনাতনি নিয়ে। উত্তরে খালি হে হে করে হেসে বলে , 'নো , অনলি উই টু'।

    সেদিন , সকালে অফিস যাওয়ার পথে ইয়ানের বহতা জীবনের , ক্যাম্পিং রোমান্সের কথা মনে করে একটা গণগনে রাগ হলো , কলকাতার ভালোবাসাবাসির জায়গার অভাবের জন্য। পুলিশ , খোচর , মাস্তান-এর পাল্লায় কলকাতার ভালোবাসাবাসির গোপনীয়তা শরসয্যায়। পকেটে-র একটু জোর থাকলে , চুপিচুপি অপরাধীর মত ভাড়া করা হোটেলের ঘর। যদিও , হোটেলের ঘুপচি ঘরের ভালবাসায় সূর্যাস্ত তো দ্যাখা যায়-ই না , আর প্রতিমুহুর্তে দালালের উপদ্রপের ভয় থেকে-ই যায়। ব্যান্ডেল চার্চের গঙ্গায়, নৌকায় ভালবাসা যাবে মাঝির তত্বাবধানে , ছইয়ের ভেতর , পাশ দিয়ে বড় নৌকা গেলে , মাঝি হাঁক দেবে 'সামালকে' , যেন কোনো পাপকার্য্য চলছে । ফেরার সময় ঘাটের কাছে , হাফ প্যান্ট পরা বিড়িফোঁকা ছেলে আর লুঙ্গি পরা শুকনো বুড়োদের অকথ্য খেউর হজম করতে হবে কান খোলা রেখেই।

    কলকাতা অশ্লীল , কলকাতা অমিত-লাবন্য-র নয় , ইয়ানের-ও নয় ....
  • | ২৫ আগস্ট ২০১৫ ০৯:৫৩679527
  • একদম।
  • Binary | ১৭ অক্টোবর ২০১৫ ১০:৫৮679528
  • স্যামসন .....

    ইস্টবেঙ্গল , ব্রাজিল আর যখন ক্রিকেট-এ উত্সাহ ছিল , তখনকার ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দল ছাড়া , কোনো খেলোয়াড়ি যুদ্ধে , আমি সব সময় দুর্বল দলের পক্ষে। ইস্টবেঙ্গল ছাড়া আমি সব সময় মহমেডান স্পোর্টিং কে সাপোর্ট করে এসেছি , কলকাতার ফুটবল -এ , বা টালিগঞ্জ অগ্রগামী , বা খিদিরপুর স্পোর্টিং। কোনো এক ফিফা বিশ্বকাপে , ক্যামেরুন কে খুব সাপোর্ট দিয়েছিলাম। নাদাল বা ফেডেরার কোনো অনামী দুর্বল , র্যাঙ্কিং -এ যোজন দুরে-র কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কোর্টে নামলে , মনে প্রাণে চাই দুর্বল অনামী খেলুড়ে-ই জিতুক। এই ব্যাপারটা সুধু খেলাধুলোয় নয় , পাড়ারদাদাগিরিতে বা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বাজিতে কিংবা অর্থনৈতিক মাসলপুলিং এও সমানভাবে উপস্থিত। আমি দুর্বলের দলে।

    তো , মহিষাসুর-কে দুর্বল বলা আমার ধম্মে সইবে না। আশৈশব জেনে এসেছি , অসুরকুল অত্যাচারের পার্সনিফিকেশন। অনাচার-এর আতুরঘর । কিন্তু সত্যি বলতে কি , সেই অত্যাচারের সম্যক বিবরণ কিছুই তখন জানা ছিল না , আজও নেই , কেবল দেবতাদের স্বর্গপুরী আক্রমন করা ছাড়া। স্বর্গপুরী থেকে দেবতাদের বিতারন ছাড়া। কিন্তু তাতেই বা কি গেল বা এলো ? স্বর্গপুরী যে দেবতাদের মনোপলি , স্বর্গ সুখের নাগরিক অধিকার যে খালি দেবতাদের , এরকম যুক্তি আমার অপরিণত মনে বেশ ধোঁযাটে লাগত। তো মহিষাসুর-কে দুর্বল না বললেও , এই অধিকার - অনাধিকার , প্রিভিলেজেড , মার্জিনাল ক্লাসচেতনা এটা আমার দূর্গাপুজোয় এক্সট্রাপোলেট করতে সুবিধাই হয় এখন।

    ছোট বেলায় , বেশির ভাগ দূর্গাঠাকুর দেখতে দেখতে , কথাও যেন একটা অসামঞ্জস্য মনে হত। একটা দশহাতি বিশাল দূর্গা প্রতিমা , তার তলায় পুচকে একটা পুতুল সাইজের অসুর , তার এক পা একটা গলাকাটা মোষের ধরের মধ্যে , আর তার বুকে ত্রিশুল। খালি মনে হত , একটা পুচকে অসুর কে খতম করতে দশহাতওয়ালা তিনগুনা সাইজের দূর্গা-র কি দরকার। সেদিক থেকে অবশ্য কলেজস্কয়ার বা উত্তর কলিকাতার কোনো কোনো প্রতিমা আমায় বেশি অনুভূতি যোগাত। মোহনবাশি রুদ্রপাল-এর তৈরী ম্যাচো অসুর। শিরা-উপশিরা সহ খোদাই করা বাইসেপস ট্রিয়াসেপ্স। সরুকটি , ঝাঁকড়াচুল , মোহময় সিক্সপ্যাক। দৈর্ঘে প্রায় দূর্গা প্রতিমার সমান। বীর হো তো আয়সা। আমি তো চিরকাল-ই নন-প্রিভিলেজেড-এর পক্ষে

    সেদিক থেকে বিচার করলে , দূর্গা প্রতিমার মধ্যে , একটা হিন্দি সিনেমা মার্কা ভায়োলেন্স আছে। ভূলুন্ঠিত মাথা রক্তাক্ত একটা মোষ। সিংহের থাবায় আর ত্রিশুলের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত অসুর। তিনচোখওয়ালা , ভীষনসুন্দর দুর্গার মুখে পৈশাচিক ক্রোধ। কথাও প্রেম নেই , ভালবাসা নেই , শরতের কবোষ্ণ ভালোলাগা নেই।

    আমার স্বপ্নের দূর্গাঠাকুর অন্যরকম। মননে ঋজু। চেতনায় দৃঢ়। চোখে মায়া , মুখে হাসি। আর চওড়া কাঁধের , গভীর বুকের অসুর পৌরুষের প্রতিচ্ছায়া। তার হাতে মানুষকাটার খড়গ নেই। মুখে বন্যপ্রেমের হাসি আছে।

    হতেই পারে , অসুর আর দূর্গা , স্যামসন আর ডালাইলা, যাদের হাতে অস্ত্র নেই , গোলাপ আছে .....
  • সে | 94.75.173.148 | ১৭ অক্টোবর ২০১৫ ১২:৩১679529
  • ভাল লাগল।
  • sosen | 184.64.4.97 | ১৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৯:২২679530
  • আরো!
  • Binary | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৮:২৫679532
  • সমান্তরাল
    -----------
    মানুষের অস্মিতা আর মনের কিংখাব , দেশ কাল পাত্র আর পারিপার্শিকতার সমানুপাতিক। আমার মত এই পশ্চিমী দেশে জীবন কাটানো তেএঁটে বাঙালিরা , যারা জুতো সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ , সমস্ত বৈয়ক্তিক কাজ বাধ্যতা মূলক ভাবে নিজে করতে শিখে গেছি , তারাই দেশে বাত্সরিক ঘুরতে গিয়ে নিজেদের রাজা বাদশার ছোটখাটো সংস্করণ মনে করি। সিগারেট কিনেত -ও বাড়ির বাচ্চা চাকরের 'দৌড়ে গিয়ে ছুটে আসার' ওপর ত্তয়াস্তা রাখি। ২০০ মিটার যেতে রিক্সা চালকের পেশীর ওপরে চড়ে বসি। দেশে গেলে আমরা অবশম্ভাবী সোফার ড্রিভেন।

    তো , নিজের দেশ বা যেখানে আমাদের জন্ম আর বেড়ে ওঠা , আর যে দেশে আমরা থাকি , এই দুটো হলো প্যরালাল উনিভার্স। যেখানে থাকি , সেখানে , দিনের শেষে অফিস ছাড়ার সময় , শেষ বেলায় সাফসুতরো করতে আসা জেনিটার কে , 'বাই, গুড নাইট , হ্যাভ আ নাইস উইক এন্ড' বলে মিষ্টি ভাষণ করে আসি। কারণ জেনেই গেছি , যে এই মিস্টার জেনিটার হয়ত আমার পাড়ার আমার-ই মিষ্টভাষী প্রতিবেশী , যে পরিবার নিয়ে হয়ত আমার মতই গ্রীষ্মে , ডিসনীল্যান্ড বেড়াতে যায়। বা ওর ছেলে বা মেয়ে , হয়ত আমাদের ছেলে বা মেয়ের মত একই ইস্কুলে একই অঙ্ক স্যরের কাছে অঙ্ক শেখে। আর দেশে জমাদার , গোসলখানা পরিস্কার করাতে এলে পেছনের দরজা খুলে পাঁচ হাত পেছনে সিটিয়ে দাঁড়া-ই যাতে তার ঝাড়ু ধোয়া জল গায়ে না লাগে। এখানে কাজের মাসি আছে , যার পোষাকি নাম 'মেইড সার্ভিস' , তারা কমলা রঙের জাম্পার সুট পরে ঘর সাফ করতে আসে , মেইন্টেনেনস ভ্যানে , হরেক রকেমের ভ্যাকুমক্লিনার চাপিয়ে। তাদের মজুরি দেওয়ার মত লাক্সারী আমাদের খুব কম-ই আছে , আর সেই 'মেইড সার্ভিস'-এর মেয়ে বিকেলে, আরো সবার সাথে ছেলে মেয়ে কে নিয়ে পাবলিক পার্কে সাইকেল চালায় স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য, গায়ে থাকে বাইকিং গিয়ার। দেশে কাজের মাসি ময়লা কাপড়ে উবু হয়ে ঘর মোছে , মাস গেলে হাজার টাকা মাইনে পায় আর ছেলের অসুখে হাত পেতে ধার চায় ওষুধ কেনার সংস্থান নেই বলে।

    তো কথা হচ্ছিল প্যরালাল উনিভার্স -এর। প্যরালাল উনিভার্স - এই জন্য নয় যে , আমাদের পৃথিবী দু জায়গায় দুরকম। প্যরালাল উনিভার্স , এই জন্য , যে দেশে আমরা দুটো স্তরীভূত মাচা তৈরী করে রেখেছি জীবনযাত্রার। একটা আমাদের। আরেকটা ঝাড়ুদার , কাজেরমাসি , ড্রাইভার , রিক্সাওয়ালে দের। হয়তো বাধ্য হয়ে। হয়ত সামাজিক বা অর্থনৈতিক জিমন্যাস্টিকের বাধ্য বাধকতায়। কিন্তু দুই ধাপের মাচা , সেটাতো , আছেই।

    সে যাই হোক , কোনো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ক্লাস নেওয়ার উদ্দেশ্য আমার নেই। সিঁথির কাছে আটা পাড়ার গলিতে আমার এক কলেজ বন্ধু থাকত। ওদের বাড়ির সামনে দুই রিক্সা সমান চওড়া গলির ডানদিকে তিনটে বাড়ির পরে একটা টিনের দরজা ওয়ালা গ্যারেজে তেলেভাজা বিক্রি করতে বসত , বিহারী। কি নাম জানি না , তবে সবাই ডাকত বিহারী বলে , সম্ভবত বিহার থেকে আমদানি বলেই। গাট্টাগোট্টা খোট্টা মত চেহারা। এলুমিনিয়ামের বিরাট গামলায় বেসন গুলত , এলুমিনিয়ামের গামলায় পচা আলু সেদ্ধ মাখত , আর ন্যাকরা বাঁধা হাতলের চকচকে ছুরিতে দরকচা মার্কা বেগুন কাটত বেগুনির জন্য। উত্তর কলকাতার ধোঁয়া গন্ধ মাখা গলির সন্ধ্যে বেলা বিহারীর তেলেভাজার দোকানে উপচে পরত ভিড়। দমদম স্টেশনের রিক্সাওঠা কেরানি আর রকবাজ ছেলে ছোকরার প্রবল ক্লায়েন্টায়ল-এ বিক্রি বাটার কমতি দেখিনি একদিন -ও। আমরাই বন্ধুর বাড়ির ছাদে ওল্ডমঁক রামের সাথে চাট হিসাবে বিহারীর তেলেভাজা খেয়েছি অনেক বার। তো বিহারীর ১২/১৩ বছরের ছেলেটা পড়াশুনা করত। কোন ইস্কুলে , কোন ক্লাসে জানি না , তবে সিরিঙ্গী হাতে ব্যসন গুলতে দেখেছি , আবার দোকানের কালীঝুলি মাখা দেওয়ালের তাকে সহজপাঠ আর বিজ্ঞান বই চোখে পরেছে মাঝে মাঝে।

    প্রায় দশক/এগারো পরে , বা আরো কিছু পরে , ততদিনে কলেজ শেষ করে আমরা যে যার নিজের চাকুরী জীবনে , একদিন হঠাত সেই বন্ধুর সাথে দ্যাখা শ্যামবাজারে। আমায় টেনে নিয়ে গ্যালো আটাপাড়া-র বাড়িতে। গেলাম সেই ছাদের ঘরে , এবারে-ও হাতে ওল্ডমঁক রামের বোতল আগের মত। তারপর আবার সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলাম দুই রিক্সা সমান গলির তিনটে বাড়ি পরে বিহারীর দোকানে তেলেভাজা কিনতে। সেই রকম ভিড়। তবে দোকানে বিহারী আর বসে না আজকাল , বাড়ি থাকে , শরীর খারাপ তাই । দোকানে বসে বিহারীর ছেলে রমাপদ। চশমা পরা। কলার দেওয়া টি-সার্ট আর নিল জিন্স পরা। আর সবচেয়ে যেটা চোখে পড়ল বা মননে ধাক্কা লাগলো , সেটা সেই ১২/১৩ বছর আগে খদ্দেররা ডাকত 'বিহারী তুই' আর ওর ছেলে-কে সবাই বলছে 'রমাপদ আপনি ' .

    আমার বন্ধু-র কাছে শুনলাম বিহারীর ছেলে রমাপদ লেখা পড়ায় , খুব-ই ভালো ছিল , এম এ পাশ করেছে , সার্কুলার রোডে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কে সহকারী ম্যানেজার -এর চাকরি করে। এরপরে একদিন , আমার বন্ধু-র -ই কোনো কাজে গেছিলাম সেই ব্যাঙ্কে। চশমা পরা ভদ্রহাসির রমাপদকে দেখলাম , সামনে কম্পিউটার , আর তার-ও সামনে চেয়ারে বসে দু জন সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোক , ব্যাঙ্কিং পরামর্শের আশায়।

    রমাপদ , তেলেভাজার ব্যবসাটা চালিয়ে যাচ্ছে , ধরে রেখেছে ওর প্যরালাল উনিভার্স ....
  • Abhyu | 85.137.13.237 | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৮:৩০679533
  • সত্যি ঘটনা বাইনারিদা? ভালো লাগল।
  • | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৯:২২679534
  • আরিব্বাস!!
  • .. | 193.82.207.156 | ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:০৮679535
  • বাইনারীর লেখা পড়লাম হায়েদ্রাবাদের উত্তরায়ণ ক্লাবের কালীপূজার ম্যাগাজিনে। কানেক্শানটা বুঝতে পারলাম না।
  • Binary | ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ২১:০৪679536
  • ঐ কালিপুজোর জনৈক অর্গানাইজার আমার বন্ধু , সেই লেখা চেয়েছিলো । ঃ)
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন