এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পুজোর আমি , আমার পুজো

    Parolin
    অন্যান্য | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ৫০৩৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • maitri | 203.197.89.222 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ২১:৩৭672075
  • s_r আমার ও একই দশা , কাজে আর মন লাগছে না। তাই আজ থেকে ই দোকানে ঝাপ ফেলেছি।হোস্টেল এর বাঙ্গালী রাও যেতে শুরু করেছে।তবে বাড়ি গিয়ে পুরোপুরি ladh খাবো।ঘর থেকে না বেরোলে ও পুজোতে বাড়ি না গেলে নিজের শিকড় টাকে মিস করি
  • Samik | 125.23.124.62 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০০:০৯672076
  • পুজোর মার্কেটে ভাবলাম আম্মো কিছু লিখি। তো, লেখা কিছু বেরলো না, অনেক কালের পুরনো একটা লেখা, ওপাড়ায় বেরিয়েছিল, সেটাই ঝেড়েঝুড়ে দিতে গেলুম। তো দেখি, ফন্টের গন্ডগোলে কনভার্ট হচ্ছে না। এখানে সরাসরি দেওয়া গেল না।

    আমার ন্যাকা ন্যাকা সেন্টি পাওয়া যাবে এইখানে http://download.yousendit.com/0A31EB5C06B0E848
    ... জনতা কষ্ট করে ডাউনলোড করে পড়ে নাও।
  • Samik | 125.23.111.22 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ১৮:২৯672077
  • মামু বঙ্গানুবাদ করে দিয়েছে। জয় মামু।

    *******************************************

    ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ
    ছোটবেলায়, এসেছে শরৎ হিমের পরশ কবিতাটার দ্বিতীয় লাইনটা বলতে গিয়ে কিছুতেই হাওয়া বেরোত না আমার মুখ দিয়ে -- হয়ে যেত "এসেছে হাবার পরে"। সবাই তাই নিয়ে অল্পবিস্তর হাসাহাসি করত বটে, কিন্তু বাড়িতে কেউ বেড়াতে এলেই আমার ডাক পড়ত "এসেছে শরৎ" শোনানোর জন্য; আর আমি একটুও নার্ভাস না হয়ে এদিক ওদিক দুলতে দুলতে গড়গড় করে আবৃত্তি করে যেতাম পুরো কবিতাটা। আমার মুখস্থবিদ্যে ছিল বেজায়, ইস্কুলে ভর্তি হবার অনেক আগেই আড়াই পাতা লম্বা "বীরপুরুষ" পুরো কণ্ঠস্থ করে ফেলে পাড়ার ক্লাবে একটা আস্ত চকোলেটের বাক্স পেয়ে গেছিছিলম। সেবারে ক্লাবে ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যেবেলা আমাদের নিয়ে জ্যান্ত দুর্গা করা হয়েছিল। আমি হয়েছিলাম সরস্বতী ঠাকুর।
    তারপর আস্তে আস্তে এতটা বড় হয়ে উঠলাম কবে, "হাবা"কে হাওয়া বলতে শিখে গেছি কবেই, সহজ পাঠ ছেড়ে আয়ত্ত করেছি জীবনের অনেক কঠিনতর পাঠ, কিন্তু সেই কবিতাটা ভুলতে পারি নি আজও। কলকাতা থেকে প্রায় সতেরোশো কিলোমিটার দূরে চেন্নাই শহরের এই ভাড়া করা ফ্ল্যাটে অবশ্য শরৎকালটা টের পাওয়া যায় না। ভোরবেলাকার বাতাসে না আছে ঠান্ডা হিমেল আমেজ, ঘাসের আগায় নেই শিশিরের রেখা, কাশফুল বা শিউলির গন্ধের কল্পনা করাও এখানে দূর অস্ত।
    আমি অবশ্য কাশফুল দেখে বড় হই নি। পুরোদস্তুর শহুরে না হলেও শহরতলির মেয়ে, সরু রাস্তা-বাক্সবাড়ি-রিক্সাওলা-মিষ্টান্ন ভান্ডার -- এইসবের মধ্যেই বড় হয়ে ওঠা। আমার কাছে পুজো মানেই সেই ভোরবেলাকার ঝিমুনি চোখে নিয়ে কেমন একটা ঘোরের মধ্যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া শোনা, পাড়ায় পাড়ায় অটোরিক্সা বুক করে সানাইয়ের সুর ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে তন্তুজ শাড়ি কিংবা বাটার জুতোর চলমান বিজ্ঞাপন, পাড়ার বারোয়ারি পুজোর প্যান্ডেলটা হাড়গোড় বের করা বাঁশের খাঁচার ভোল পাল্টে হঠাৎ একদিন রঙীন কাপড়ের প্রজাপতি হয়ে দাঁড়ানো --- আর সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত সায়ন-শৌভিক-ঋতা-সৌমি-অদ্রিজা-কুমকুম আর বিরাজের সাথে চুটিয়ে আঠা মারা, ঘুরে বেড়ানো, পাল্লা দিয়ে ফুচকা খাওয়া। কিভাবে যে দশমীর দিনটা এসে যেত, টের পেতাম না। টের পেতাম তখন, যখন তাল তাল সিদ্ধির নাড়ু খেয়ে বাবাই-ভোম্বলের উদ্দাম নাচ আর শেষবারের মত ঢাকের কানফাটানো আওয়াজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, কেমন একটা কষ্টে গলার কাছটায় কিছু একটা যেন দলা পাকিয়ে উঠত, জ্বালা করে উঠত দু-চোখ। বাবাইটা পরে অবশ্য খুব অসভ্য হয়ে গেছিল, কুসংসর্গে পড়েছিল; আমার যখন ষোল বছর বয়েস, সে বার দশমীর দিন নাচতে নাচতে ও ইছে করে আমার পাশে দাঁড়ানো শম্পার গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল।
    সেই প্রথম আমি বাংলা মদের গন্ধ চিনতে শিখেছিলাম।
    মাধ্যমিক দিলাম। পরিবর্তন অনুভব করলাম ভেতরে, বাইরে। বড় হয়ে ওঠার জন্য একটা অদম্য আকাঙ্খা। মনের মধ্যে অনেক সাহসী স্বপ্নের গোপনে চলে-ফিরে বেড়ানো। সায়ন-শৌভিক-সৌমি ওরা কলেজে ভর্তি হল। আমাদেরটা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, আমি স্কুলেই রয়ে গেলাম। আমাকে "বাচ্চা মেয়ে" বলে খ্যাপানোর একটা সুযোগ পেয়ে গেল সায়ন। সায়নের স্বভাবই ছিল খালি আমার পেছনে লাগা। আর তেমনি হাসাতেও পারত, বাবা:!
    সুচেতনা আলাদা হয়ে গেল, আর্ট্‌স নেবার জন্য। বাকি আমরা রয়ে গেলাম সেই একই টিম। সারাবছর কোচিংয়ের আঠায় আর সাইকেলের ভিড়ে খুনসুটি, আর পুজোর সময় দল বেঁধে চষে বেড়ানো। মাধ্যমিক দিয়েছি, অতএব অবশ্যই বড় হয়েছি, সুতরাং এ বার পুজোয় হুগলি ছেড়ে চলো কলকাতা। নিকোপার্কে বেড়াতে গেলাম সবাই মিলে। মা-বাপি ছাড়া, বন্ধুদের সঙ্গে সেই আমার প্রথম হাওড়া স্টেশন। কী আশ্চর্য, এ বার কিন্তু আর হাওড়া স্টেশনটাকে সে রকম গোলকধাঁধা মনে হল না। বড় হবার মুখে, অনেক অচেনাই বোধ হয় চেনা হয়ে যায়।
    নিকোপার্ক থেকে ফেরার পথে, প্রায় ফাঁকা একটা সরকারি বাসে সবাই যখন নবমীর দিন শ্রীরামপুরের দিকে আক্রমণ করা হবে কিনা, সেই আলোচনায় মশগুল, সেই সময় পেছনের সিটে কুমকুম আমাকে পুরো ঠেসে ধরল একলা আমাকে -- "এবার একটু ঝেড়ে কাশ তো স্বাগতা, আর কতদিন ডুবে ডুবে জল খাবি?"
    কাশবো কি, আমি তো আকাশ থেকে ধপ্‌! কী বলছে কুমকুম? ভাষাটা বাংলা না হিব্রু? আমি ডুবে ডুবে জল খাছি? কীভাবে?
    "ঈশ্‌শ্‌, আবার ন্যাকা সাজা হচ্ছে," কুমকুম বলল, "বল্‌ না বাবা, বল্‌ না বল্‌ না, আরে আমরা তো তোকে হেল্পও করতে পারি, -- সায়নের সাথে ব্যাপারটা কতদূর এগলো?"
    স্বীকার করতেই হল যে ব্যাপারটা একটুও এগোয়নি কারণ আমি এর বিন্দুবিসর্গও কিছু জানি না। কখনও সায়নকে নিয়ে সে রকম কিছু ভাবিই নি। ও মজার মজার কথা বলে হাসায়, আমার পেছনে লেগে খ্যাপায়, সে তো দেবলীনার পেছনেও লাগে ও, -
    - তাই বলে সায়ন? -- ঝট্‌ করে ঘাড় বাড়িয়ে তাকালাম সায়নের দিকে, ও তখন হাবলেশহীন মুখে সামনের দিকের সিটে বসে শৌভিকের সাথে গল্পে মশগুল। চাপা গলায় কুমকুমকে প্রশ করলাম, "কেন, সায়ন তোকে কিছু বলেছে নাকি? কী বলেছে রে?"
    আচমকা আক্রমণে কুমকুম থতমত, "ন্‌না, কিছু বলে নি, বলতে হবে কেন, আমরা কি কিছু বুঝি না নাকি? ও যেভাবে সবাইকে ফেলে তোর পিছু পিছু ঘুরে বেড়ায়, তোর দিকে যে ভাবে তাকায়, বুঝতে কি বাকি থাকে কিছু? আমাদের ব্যাচের সবাইই তো ধরে নিয়েছে সায়নের তোর ওপর টাল আছে।"
    আমার মাথা ঘুরে গেছিল। সবাইই ধরে নিয়েছে? শুধু আমিই কিছু ধরতে পারি নি? আমি এত বোকা? ... শেষমেশ সায়ন? ওকে তো আমি বন্ধুর বাইরে কিছু ভাবিই নি কখনও, ভাবিও না, বরং শাহরুক খানের সঙ্গে রোমান্স করার স্বপ্ন দেখা যায় -- কিন্তু সেই জায়গায় সায়ন? য্‌য্যা:, সায়নটা তোর সাথেও ইয়ার্কি মেরেছে। ওসব টাল-ফাল কিছু নেই আমার। ওর যদি হিম্মৎ থাকে, বলবি আমার সামনে এসে টাল খেতে, তারপর আমি দেখব।
    সারাটা রাস্তা অবিশ্বাসীর মতো আড়চোখে বারে বারে চেয়েছিলাম সায়নের দিকে। সায়ন হয়তো লক্ষ্যও করে নি। ওর গালে তখন অল্প অল্প দাড়ির আভাস। হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে যখন সদ্য-ধরানো সিগারেট খাছিল, কী হাস্যকর লাগছিল ওকে। বড় হবার কী অদম্য প্রচেষ্টা!
    বড় হবার সাথে সাথে, অনেক চেনাও কি অচেনা হয়ে যায়? সেই প্রথম বোধ হয় বিসর্জনের বাজনা মন দিয়ে শুনেছিলাম। ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন। অমন মহাপরাক্রমী যুদ্ধংদেহি মা-দুর্গার মুখটা সেবারে দশমীর দিনে কেমন যেন করুণ আর অসহায় ঠেকেছিল। দমচাপা কান্নার একটা আবেগ সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে চলে গেছিলাম ঘরের মধ্যে। সেবার আর বাবাই ভোম্বলের নাচ দেখা হয় নি। শম্পা ডাকতে এসেছিল, শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে ওদের ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।
    এখন ভাবলে হাসি পায়, সত্যিই কী সাংঘাতিক ইমোশনালই হয়ে পড়েছিলাম সেই পুজোর কটা দিন, ঐটুকু একটা ধাক্কায়। অথচ সেই ব্যাপারে কুমকুম ছাড়া আর কেউ কখনো কোনও কথাই বলে নি, এমনকি, যাকে ঘিরে এত কথা, সেই সায়নও তো তখনও পর্যন্ত কিছুই বলে নি আমাকে, অথচ মনে মনে কত বিতৃষ্ণাই না জমিয়ে ফেলেছিলাম সায়নের বিরুদ্ধে।
    সায়ন কোনওদিনই কিছু বলে নি আমায়। আমি ওর চোখের কোণে অজস্রবার চোরা দৃষ্টি হেনেও, আমার প্রতি ওর কোনও বিশেষ অনুভূতি আবিষ্কার করতে পারি নি। কুমকুম বোধ হয় ইয়ার্কিই মেরেছিল।
    হায়ার সেকেন্ডারির পর আমাদের দলটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। কুমকুম অঙ্কে অস্বাভাবিক কম নম্বর পাওয়ায় ইংরেজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হল লেডি ব্রেবোর্নে, অদ্রিজা চলে গেল ব্যাঙ্গালোর, ইলেক্‌ট্রনিক্স ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে। আমি আর শৌভিক জয়েন্টে চান্স পেয়ে ভর্তি হলাম দুর্গাপুর আরইসিতে, আর সেই সায়ন, বায়োলজিতে অত ভাল দখল থাকা সঙ্কেÄও, আশুতোষবাবুর হাজার পীড়াপীড়ি-অনুরোধে কান না দিয়ে, কিছুতেই জয়েন্ট দিতে বসল না। নিজের মনের মধ্যে ও যে কবে থেকে স্বপ্ন পুষে রেখেছিল অন্যরকম, জানতে পারলাম সে দিন, যে দিন প্রেসিডেন্সিতে কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে ভর্তি হল ও। নিজের স্বপ্ন বিফলে যাওয়ায় আশুতোষবাবু নিস্পৃহ স্বরে কেবল বলেছিলেন, ছেলেটা নিজের ভবিষ্যৎকে জলাঞ্জলি দিল, খুঁটির জোর না থাকলে কেউ প্রেসিডেন্সি থেকে ফার্স্ট ক্লাস পায় নাকি?
    ফার্স্ট ইয়ারের পুজোর ছুটিতেও সবাই জড়ো হয়েছিলাম একসাথে, কেবল অদ্রিজা আসতে পারে নি অতদূত থেকে। কিন্তু এ বারের ঘোরা, ঠাকুর দেখা -- আর যেন আগেকার মত লাগল না। একরকমের চেনা পরিবেশ ছেড়ে বাইরে গিয়ে নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধুবান্ধব, নতুন কলেজের সংস্পর্শে এসে, টের পাছিলাম, আমরা প্রত্যেকেই, কেমন যেন, একটু একটু পাল্টে গেছি, অন্যরকম হয়ে গেছি চিন্তায়, কথোপকথনে, এমনকি আকারেও।
    অষ্টমীর দিন জানা গেল শৌভিক ইতিমধ্যেই প্রেমে পড়েছে তার সহপাঠিনী, সিভিল ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের শিশিরস্নাতা গোস্বামীর।
    নবমীর দিন দুম্‌ করে কাউকে কিছু না জানিয়েই শৌভিক চলে গেল রিষড়ায়, শিশিরস্নাতার সাথে ঘুরবে বলে। একমাষন সায়নকে দেখেই মনে হল, সে এতটুকুও পাল্টায় নি। দিনরাত্তির এক করে সে আপ্রাণ খেটেছে রসায়নের ক্লাসে, ল্যাবে, প্রথম
    সেমিস্টারের জন্য, মনের মধ্যে তার দুর্মর আশা, বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে সে রিসার্চ করবে, কে বলবে ওকে দেখে? এখনও কীরকম বাচা বাচা দেখতে, কথায় কথায় ইয়ার্কি আর রাস্তায় মোটামুটি সুন্দরী মেয়ে দেখলেই "মাইরি এরকম একটা বউ পেলে আর কেমিস্ট্রি না পড়ে বায়োলজিই পড়তাম" জাতীয় উক্তি, সব্বাইকার অল্পবিস্তর পাল্টে যাবার অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিত।
    সেবার পুজোয় ঠাকুর দেখার চেয়েও গভীর ভাবে লক্ষ্য করেছিলাম সায়নের হাবভাব, খুঁজতে চেয়েছিলাম আমার প্রতি ওর কোনো বিশেষ দুর্বলতা আছে কিনা, দৃশ্যমান আগ্রহ নিয়ে নয়, বুঝতে চেয়েছিলাম নৈর্ব্যক্তিক উদাসীনতা নিয়েই। ... না, কিছুই খুঁজে পাই নি সেদিন।
    সায়ন কোনোদিনই কিছু বলে নি আমাকে। সবাইকে নিয়ে ও ইয়ার্কি করত, কেউ কারুর প্রেমে পড়লে ও তাদের নিয়ে ছড়া বাঁধত, কিন্তু নিজের অনুভবের ব্যাপারে ও ছিল একেবারে নীরব। মনের কথা ও বলে নি কাউকে, কোনওদিনও।
    আস্তে আস্তে বছর গড়ালো। পরের বছর আরো অনেকেই নানা প্রয়োজনে এবং অপ্রয়োজনে এসে জুটতে পারল না আমাদের পুজোর আঠায়, সেভাবে ঘোরা হল না, পুজোর জমাটি আঠা পরিমাণে কম হলো, তার পরের বছর হল আরো কম, কমতে কমতে একসময়ে বন্ধই হয়ে গেল, প্রত্যেকের নিজের নিজের আলাদা আলাদা বন্ধুবর্গ গড়ে উঠল, আর আমিও আস্তে আস্তে একসময়ে আবিষ্কার করলাম, সায়নের চোখের ভাষার কোনো গুঢ় অর্থ খুঁজে বের করতে করতে, প্রতি পুজোয় সায়নের কাছ থেকে বিশেষ কোনো কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে, একদিন কখন যেন সায়নকে প্রায় ভুলেই গেছি। চেন্নাইয়ের এই ভাড়া করা ফ্ল্যাটে আমি ছাড়াও থাকে আরও দুজন মেয়ে, আমারই অফিসে কাজ করে; একজন কেরালার, একজন মণিপুরের। দুজন ভারতের দুই প্রান্তের সংস্কৃতির বাহক। তারা কোনোদিন কলকাতা শহর দেখে নি, তারা খুব ভালো বোঝে না, কেবল আমার কাছ থেকে শুনেছে দুর্গাপুজোয় বাঙালিরা কীরকম আনন্দে ভাসে কয়েকটা দিনের জন্য, সারা জীবনের শত দূ:খের বানভাসি সঙ্কেÄও। অবশ্য আমার আজও জানা হয়ে ওঠে নি মণিপুরের প্রধান উৎসব কী, কিংবা ওনামের সময়ে কেমন করে উৎসবে মাতে কেরলিয়ানরা। আমি কেবল জানি, যা ওরা জানে না, আজ মহালয়া।

    শনিবার, তাই অফিস ছুটি। ওরা দুজন গতকালের ট্রেনে ব্যাঙ্গালোর গেছে, তিনদিনের অফিসিয়াল ট্রেনিং নিতে। ফিরবে সেই মঙ্গলবার। এই ক'দিন, এই বিশাল ফ্ল্যাটে, আমি তাই একা।
    নিজের মতন রান্না করা হয়ে গেছে। সিডি প্লেয়ারে লো ভল্যুমে মহিষাসুরমর্দিনী চালিয়ে আমি এখন এসে বসেছি বারান্দায়। মহালয়া শুনছি, আর দু-হাতে আন্‌মনে নাড়াচাড়া করছি একটা কার্ড। কাল দুপুরের ডাকে এসেছে কার্ডটা।
    এবারও পুজোয় বাড়ি যাওয়া হল না। এই নিয়ে তিনবার, এখন আর তেমন কষ্ট হয় না প্রথমবারের মত। আসলে, সব মানুষই বোধ হয় অভ্যেসের দাস। গিয়েও তো আর বিশেষ আনন্দ হত না, নিজের বাবা-মা আত্মীয় ছাড়া বাকি সব চেনামুখগুলো তো আজ ছড়িয়ে ছিঠিয়ে গেছে, কজনই বা আর এখন পুজোয় জড়ো হয় হুগলিতে, সেই হারিয়ে-যাওয়া, পুরনো আঠার খোঁজে? ... বোধ হয়, প্রায় কেউই না।
    বাইরে বেরোলেই দেখা যায়, এ দূ:খ একা আমার নয়, আমার মত হাজার হাজার বাঙালি ঘর ছেড়ে প্রবাসে পড়ে আছেন
    জীবিকার সন্ধানে, উচতর জ্ঞানের সন্ধানে, বছরের পর বছর পুজোয় তাঁদের ঘরে ফেরা হয় না, সেই দূ:খ ভুলতেনিজেরাই
    জড়ো হয়ে উদ্যোগী হন দুর্গাপুজোয়, সারাবছরের শ্রান্তি দূরে ঠেলে প্রবাসেই কেমন মেতে ওঠেন বছরকার আনন্দের দিনে।
    এখন আমি তাদেরই একজন। আর ঠিক সাতদিনের মাথায়, সামনের শনিবার সপ্তমী। নবমীর দিনটা সোমবার পড়ায় অফিস
    করতেই হবে, কিন্তু সে তো অনেক পরের কথা, আপাতত আমি একলা, হুগলি কলকাতা থেকে সতেরোশো কিলোমিটার দূরে, একটা ভাড়া করা ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে বসে, পুরনো দিনের আঠাগুলোর কথা ভাবছি। আনমনে। আমার হাতে খোলা রয়েছে একটা কার্ড। কাল দুপুরের ডাকে এসেছে।
    কার্ডটা সায়ন পাঠিয়েছে। ওর বিয়ের কার্ড। পোস্ট ডক্টরেট করছে ও, ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইন্‌স্টিট্যুট অফ্‌ সায়েন্সে।
    মেয়েটি মারাঠি, রিসার্চের ল্যাবে ওরই সহকর্মিনী।
    গত ছর বছরে ওর সাথে যোগাযোগ প্রায় হয়ই নি। প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম ওকে। ভুলেই গেছিলাম, বেশ ছিলাম, কেন ও
    এতদিন বাদে বিস্মৃতির অতল খুঁড়ে আমার ঠিকানা জোগাড় করে আমাকে কার্ড পাঠালো ওর বিয়ের নেমন্তন্নের? সাথে একটা
    চিঠি পর্যন্ত নেই! কেন ও এভাবে মনে পড়িয়ে দিল আমাকে, সেই পুরনো পুজোর দিনগুলোর কথা? ।।। অনেকদিন ধরে, ওর মুখ থেকে যে কথা শোনার জন্য আমি অন্তহীন প্রতীক্ষা করেছি, সে-কথা কি আজ, ও এভাবে বোঝালো আমাকে, নিজের বিয়ের কার্ড পাঠিয়ে?
    কার্ডের এক কোণায় সায়নের মোবাইল নম্বর লেখা আছে। ছাপা নয়, পেনের কালিতে। এতদিন বাদে, ফোন করা কি উচিৎ হবে? ... না, থাক। কী দরকার শুধু শুধু --
    মহিষাসুরমর্দিনী প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ,কে যেন গাইছেন, শান্তি দিলে ভরি।। মহালয়ার দুপুর। অনেকদিন আগে, এরকম মহালয়ার দুপুরে আমরা পিকনিক করতাম। প্রতি বছর। কারুর না কারুর বাড়িতে।
    নিজের অজান্তেই হাত বাড়িয়ে দিলাম টেলিফোনের দিকে। আজ মহালয়া। দেবীপক্ষের শুরু। পুরনো বন্ধুকে শারদীয়ার আগাম শুভেচ্ছা জানানো তো যেতেই পারে।
    পুরো ফ্ল্যাটে আমি তো একা। আর তো কেউ শুনতেও পাবে না।
  • shrabani | 124.30.233.101 | ২৮ আগস্ট ২০০৮ ১৫:৩৭672078
  • আবার একটা পুজো দুয়ারে, পাল্লিনের লেখাটা এত ভাল লাগে যে সবার পড়ার জন্য সুতোটাকে তুললুম।

    পূজা স্পেশাল বন্ধ হল কেন? এবারও চালু হোকনা।
  • Blank | 170.153.62.251 | ২৮ আগস্ট ২০০৮ ২১:২৬672079
  • আমার তো রথের দিন থেকে পুজো শুরু হয়। সেই কত্ত আগে থেকে
  • Samik | 8.4.8.12 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ১০:২৩672080
  • আরেকবার হয়ে যাক???
  • sana | 58.106.143.110 | ০৪ জুন ২০১০ ১৩:০২672081
  • এখন পুজো নয়,আকাশে সাদা মেঘের ভেলা নেই,বাতাসে শিউলির গন্ধও নেই,তবু, পুরনো টই খুঁজতে গিয়ে এই টই-এ এসে,পরোলিনের লেখা পড়ে,চোখ ভেসে যায়,চোখ ভেসে যায়------
  • Lama | 203.99.212.54 | ০৪ জুন ২০১০ ১৩:৫৮672082
  • প্রতি বছর তিনি আসেন।

    আমি কোনদিন লোকটিকে দেখি নি। শুধু তাঁর ঢাকের আওয়াজ শুনি প্রতি বছর, পূজোর মাসখনেক আগে থেকে। ঢাক বাজাতে বাজাতে আমাদের পাড়ার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান, বোধ হয় কোনো ক্লাবে পূজোর চারদিন একটা কাজ পাবার আশায়। আমি ঘরে বসে শুনি, অফিস যেতে যেতে শুনি, বাজার যেতে যেতে শুনি, কিন্তু কোনদিন দেখতে পাই না। তারপর পূজো এসে যায়, আরো অনেক ঢাকের বাজনার আওয়াজের মাঝখনে সেই একটা একলা ঢাকের আওয়াজ ডুবে যায়- সেই লোকটি কাজ পেলেন কিনা আর জানা হয়ে ওঠে না।

    গত বছর তাঁকে দেখলাম।

    অফিস যাচ্ছিলাম। গলির মোড়ে, যেখানে একটা নব্বই ডিগ্রী বাঁক আছে, উল্টো দিক থেকে ঢাকের আওয়াজটা এগিয়ে আসছিল। হঠাৎ কেমন যেন তাল কেটে গেল আর বাজনাটা থেমে গেল। গলির বাঁক ঘুরে দেখি ফাটা ঢাকের দিকে তাকিয়ে তিনি রাস্তায় বসে আছেন।

    যত বয়েস বাড়ছে, লক্ষ্য করছি কেবলই তাল কেটে যাচ্ছে- কখনো ঢাকের, কখনো কথার, কখনো ভাবনার।

    ভাল্লাগেনা
  • sana | 58.106.143.110 | ০৪ জুন ২০১০ ১৪:১৮672083
  • *পারোলিন।
    *পূজো
  • titir | 128.210.80.42 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ০০:২৬672085
  • পারমিতা,

    কত্তোদিন আগে এই লেখাটা পড়েছিলাম। ভালোলাগাটা জানানো হয় নি, মানে তখন কি করে মতামত দেওয়া যায় তা জানা ছিল না। আজ হঠাৎ পুজোর লেখা খুঁজতে খুঁজতে আবার পেয়ে পেলাম।
    এতো সুন্দর, সাবলীল লেখা খুব কম জনই লিখতে পারে।
    নতুন লেখার প্রতীক্ষায় থাকলাম।
  • সিকি | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৮:৫৩672086
  • পুজো এলে আমার পাল্লিনের এই লেখাটা মনে পড়ে যায়। প্রতি বছর একবার করে পড়ি।

    গুরুর সম্পদ এই লেখাটা।
  • অভীক | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ২৩:৩৩672087
  • মামাবাড়ী মনোহরতলায়, তাই ছোটবেলায় ষষ্ঠী তে স্কুল ছুটি পড়লেই ছুট। সোনামুখীর পুজো বলে কথা! একটু বড় হওয়ার পর ষষ্ঠী নবমী হয়ে গেল আর একমাসের মামাবাড়ী ভ্রমণ চারদিনের। তবু মঙ্গলাকালী থানের পাশে একাদশীর অর্কেষ্ট্রা (জলসা বলা যায় কি? ওই আমেজটা আসে না) আর সুভাষ চক্রবর্ত্তীর "গুঁতাই দিল কানাকাড়াটা" না শুনলে মনে হত না, পুজোটা ঠিকঠাক জমল। ২০১৭ নিয়ে এই পাঁচ বছর হল, আর যাওয়া হয়না। মা কে অনেক দিন রাগানো হয় নি, তোমাদের সোনামুখীতে লোকে বলে "এই সোরো"। এটা ২০০৬ এ লেখা ভেবেই মনে হচ্ছে, যখন এটা লেখা হচ্ছিল, তখন হয়তো আমি রাজার পুকুরের ধারে বুড়িমার চকলেট বোম এর সলতে তে আগুন দিচ্ছিলাম কিম্বা সেতোর দোকান থেকে (বুড়োর দোকান তখনও খুলেছিল কি? ) লজেন্স কিনছিলাম। পরের বছরের জন্য ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখছি "মনোহরতলা সার্বজনীন দুর্গোত্‌সব এর জন্য, আবার যাব শালী নদী, আবার দেখব চৌধুরীপাড়ার খ্যান আর আবার শুনবো একাদশীর অর্কেষ্ট্রা।
  • সিকি | 158.168.40.123 | ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৯:০৯672088
  • এই টইটি গুরুর একটা রত্নবিশেষ। যতবার পড়ি, পুরনো হয় না, সেই একই রকমের ভালো লাগে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন